–তোমায় ভালোবেসে যাবো — –পর্ব চার এবং শেষ

0
5118

—-তোমায় ভালোবেসে যাবো —
–পর্ব চার এবং শেষ —
–লেখা অধরা জেরিন —

কোথায় ছিলি এতো দিন রিয়া ? আমরা তোকে পাগলের মতো খুঁজে বেরিয়েছি । আমি কথা টা শুনে চমকে উঠলাম । একি শুনছি আমি । আমি পাথরের মতো জমে আছি। এবার রিয়া কেঁদে কেঁদে যা বললো তা শুনে সবাই হতবাক হয়ে গেল। রিয়া বললো সে দিন সন্ত্রাসীরা রাতুল কে আঘাত করার পর আমাকে উঠিয়ে নিয়ে যায় । তারপর এক এক করে ওই জানোয়ারের দল আমাকে রেপ করে । আমি বেঁচে ও আজো মরে আছি। কি ভাবে এই কলঙ্কিত জীবন নিয়ে রাতুলের কাছে ফিরে যাবো । তাই আজো আমি এই ভাবে বেঁচে আছি। আত্মহত্যা করা মহাপাপ না হলে অনেক আগেই এই জীবন শেষ করে দিতাম । এই বলে রিয়া কান্নায় ভেঙে পড়লো। ওর কথা শুনে সবার চোখে পানি ছলছল করছে। কি হলো ওর জীবন টা ?
,,
এভাবে রিয়া কিছু সময় কান্না করার পর যখন স্বাভাবিক হলো তখন আমার দিকে চোখ গেল। আমাকে দেখে অবাক চোখে কিছু সময় তাকিয়ে থেকে বললো কে মেয়েটা ?? ওর কথা টা শুনে আমি একটু চমকে উঠলাম । আমার শাশুড়ি বললো ওর নাম অবন্তী। রাতুলের বউ। রিয়া কথা টা শুনে চমকে উঠেছিল। ওর চোখে পানি দেখা গেল । ওর চোখের পানি লুকাতে অন্য দিকে তাকিয়ে রইলো। একটু পর আমার হাত ধরে বললো কোনও চিন্তা করবেন না । আমি খুব শীঘ্রই রাতুল কে সুস্থ করে তুলবো। আমি ভাল করেই বুঝতে পারছিলাম কথা টা বলার সময় রিয়ার গলা টা কেঁপে কেঁপে উঠছিল । হয়তো আমাকে মেনে নেওয়া টা ওর জন্য অনেক কষ্টের বিষয় ছিল । মনে পড়ছিল রাতুলের সাথে কাটানো সময় গুলি । তারপর আবার বললো আমি এই হাসপাতালের নার্স । কাল রাতুল কে এই খানে ভর্তি করা হয়। ও অনেক মাথায় আঘাত পেয়েছে ।
,,
রাতুলের অপারেশন শেষ হয়ে গেছে । জ্ঞান ফিরতে অনেক দেরি হবে । আমাদের জোর করে রিয়া ওর বাসায় নিতে চাইলো। কিন্তু আমি রাতুল কে রেখে কিছুতেই যেতে চাইছি না। এদিকে শরীর খুব খারাপ লাগছে । মনে হচ্ছে এখনই মাথা ঘুরে পড়ে যাব। সারা দিনের জার্নি আর আগের রাতের নির্ঘুম আমার শরীর আরো খারাপ করে দিতে লাগলো। আমি ভাবতে লাগলাম কি হবে এখন । রাতুলের যদি এখন রিয়া কে দেখে সব আগের কথা মনে পড়ে যায় তখন কি হবে ? আমার কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছে ।কি হবে আমার গর্ভের সন্তানের । আমার শাশুড় হয়তো আমার মুখ দেখে বুঝতে পারছিল আমার মনের কথা । তিনি আমাকে বললো তুমি কোনও চিন্তা করো না। আমরা আছি তোমার পাশে। রাতুল কে সব বুঝিয়ে বলবো। সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে আগের মতো।
,,
একটু আগে রাতুলের জ্ঞান ফিরেছে । ডাক্তার জানালো রাতুল আগের সব সৃতি ফিরে পেয়েছে । আমার কথা টা শুনে মনে হলো আমি আমার জীবন আবার ফিরে পেয়েছি । আমি আল্লাহ তায়ালার কাছে শুকরিয়া আদায় করলাম । আমার শশুড় বললো বৌমা আমি জানি তোমাকে সব কিছু বুঝিয়ে বলতে হবে না । তুমি পরিস্থিতি বুঝতে পারছো। কিন্তু তুমি এখন কিছুতেই ভেঙে পড়বে না। নিজেকে শক্ত করো। কিছু দিন রাতুল হয়তো তোমাকে মেনে নিতে পারবে না । কিন্তু যখন শুনতে পারবে ওর সন্তান তোমার গর্ভে তখন নিজেই তোমাকে মেনে নিবে। আমার কথা গুলি শুনে খুব কষ্ট হচ্ছিল । কিন্তু আমি বললাম বাবা আপনি কোনও চিন্তা করবেন না । আমি সব কিছু মেনে নিয়ে ধৈর্য ধরবো। সারাজীবন অপেক্ষা করবো রাতুলের জন্য ।
,,
আমার শশুড় শাশুড়ি ভিতরে গেল রাতুলের সাথে দেখা করতে । আমি বাইরে দাড়িয়ে দুর থেকে ওকে দেখতে পেলাম । ইচ্ছে করছিল ওকে খুব কাছ থেকে দেখতে । আমার শশুড় শাশুড়ি কে দেখে রাতুল বললো মা বাবা রিয়া কোথায় ? সন্ত্রাসীরা আমার মাথায় জোরে আঘাত করে ছিল । তারপর আর কিছু মনে নেই। আমার শশুড় বললো রিয়া ভাল আছে । ওকে কোনও ক্ষতি করতে পারিনি । তুমি সুস্থ হও তারপর ওর সাথে দেখা করো।
,,
আমি দুরে দাড়িয়ে সব কথা শুনতে পারছিলাম । আমার মনে হচ্ছিল কেউ মনে হয় আমার বুকে ছুরি দিয়ে আঘাত করছে । আমার কলিজা ছিড়ে ফেলছে । আমি আর নিজেকে সামলাতে পারছিলাম না । হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলাম । এমন সময় আমি কারো স্পর্শ টের পেলাম । দেখতে পেলাম রিয়া আমার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে । আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো আমি সব জানি। তুমি চিন্তা করো না। তোমার রাতুল তোমার থাকবে । আমি তোমাদের জীবনে আসবো না কোনও দিন বাধা দিতে । ওর কথা শুনে আমি আরও জোরে কাঁদতে লাগলাম ।

,,
মধ্যদুপুরের উজ্জ্বল রোদের মাঝেও একমুহূর্তের জন্য মৃদু একটা বাতাস খেলা করে যায় । ভীষণ শীতল সেই বাতাসের মাঝে মুখ ডুবিয়ে চাইলেই আমি হাজার বছর কাটিয়ে দিতে পারব । কিন্তু চোখধাধানো রোদের মাঝে সেই মিষ্টি বাতাস কখন এসে যে ক্লান্ত মুখটি ছুঁয়ে দেবে তা আগে থেকে বোঝার কোন উপায় নেই । আমি সেই মিষ্টি বাতাসটিকে এখন খুব করে চাইছি । খুব করে চাইছি রাতুলের হাত টা ধরে বলতে আমি তোমাকে মিস করছি দিনের পর দিন । তোমাকে ছাড়া আমার এই পৃথিবী বড্ড অসহায় লাগছে । মনে হচ্ছে আমার চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার ।
,,
রিয়া আমাদের ওর বাসায় জোর করে রেখে দিয়েছে । ওর এক কথা আমার এই শরীর নিয়ে হোটেলে থাকা যাবে না। কিন্তু একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম রিয়া নিজেকে আড়াল করে রেখেছে রাতুলের সামনে থেকে । আমি রোজ গভীর রাতে রিয়ার নিস্তব্ধ কান্নার আওয়াজ শুনেছি। হয়তো নিজের জীবনের এই ঘটনার জন্য গুমরে মরে প্রতি টা সময় । আমার খুব কষ্ট হয় রিয়ার জন্য । কেন এমন হলো ওর জীবন টা ? আচ্ছা পৃথিবীতে কে সব থেকে অসহায় আমি নাকি রিয়া?
,,
এভাবে কেটে গেছে এক সপ্তাহ । আমি প্রতি দিন লুকিয়ে লুকিয়ে রাতুল কে দেখতে যেতাম । দুর থেকে দেখতে পেতাম ওর মুখ টা। রাতুলের সন্তান একটু একটু করে আমার ঔরসে বড়ো হচ্ছে । ও কি মেনে নিবে এই অনাগত সন্তান কে ? আজ আমাদের ফেরার পালা। রিয়া আমার হাত টা ধরে বলেছিল তুমি কোনও চিন্তা করো না আমি সব ঠিক করে ফেলবো। আর আমি কিছু দিন পরেই আমেরিকা চলে যাচ্ছি । হয়তো আর কোনও দিন তোমাদের সাথে দেখা হবে না । আমি রিয়া কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললাম । কেন যেন ওকে খুব আপন মনে হয়েছিল । মনে হয়েছিল এখনও এমন মেয়ে আছে যে কিনা অন্য একটা মেয়ের জন্য এতো বড়ো কষ্ট মেনে নেয়।
,,
আমরা সবাই এক সাথেই ফিরে যাচ্ছি । কিন্তু আমার পরিচয় কি দেব রাতুলের সামনে ! সবাই গাড়িতে আমার জন্য অপেক্ষা করছে । আমি কাছে যেতেই আমার শশুড় বললো এর নাম অবন্তী । আমার এক আত্মীয় । এখন থেকে আমাদের সাথেই থাকবে । এই কথা শুনে একবার রাতুল আমার দিকে তাকালো। তারপর চোখ ফিরিয়ে নিয়ে একটা গভীর চিন্তায় ডুবে গেল । আমার মনে হচ্ছে ও এখন রিয়া কে নিয়ে চিন্তা করছে । আমি অসহায় চোখে বার বার রাতুলের দিকে তাকাচ্ছি। আর ভেসে উঠছে আমার আর রাতুলের অনেক ভালবাসার কথা ।
,,
বাসায় ফিরার পর রাতুল ওর ঘরে চলে গেল । আগের থেকেই ওর ঘর থেকে আমার জিনিস পত্র সরিয়ে রাখা হয়েছিল । ঠিক আগে যেমন টা ছিল । ওর পাশের রুমে আমাকে থাকতে দেওয়া হলো। কিন্তু আমার কিছুতেই মন টিকছে না এই ঘরে । বার বার ইচ্ছে করছে রাতুলের বুকে মাথা রেখে অনেক দুরে হারিয়ে যেতে । রাতুল বাসায় এসে বার বার রিয়া কে খুঁজতে লাগলো। কিন্তু আমার শশুড় রাতুল কে বললো এখনও তুমি পুরোপুরি সুস্থ না। আগে সুস্থ হও তারপর তোমাকে রিয়ার কাছে নিয়ে যাব। কিন্তু রাতুল কিছু তেই মানতে নারাজ । ওর এক কথা আমি আগে রিয়ার সাথে দেখা করতে চাই।
,,
ওদিকে রিয়া আমার শশুড় কে আসার আগে বলেছিল আংকেল আমি কিছু কথা বলতে চাই। জানি এই কথা গুলি শুনে আপনি অনেক অবাক হবেন কিন্তু এ ছাড়া আমার আর কোনও পথ নেই। অবন্তী রাতুল কে সুস্থ করে তুলেছে । আজ আমি চাইনা ও রাতুল কে হারিয়ে ফেলুক। আমি ছিলাম রাতুলের এক মিথ্যে সপ্ন । কিন্তু আজ অবন্তী রাতুলের সব কিছু । ওদের ভালবাসার ফসল অবন্তীর গর্ভে। তাই রাতুল কে মেনে নিতে হবে সব কিছু । ভুলে যেতে হবে অতিত। আংকেল আপনি একটা মিথ্যা কথা বলবেন রাতুল কে । বলবেন আমি রাতুল কে নিয়ে আর চলতে চাইনা। আমি আমার এক বন্ধু কে বিয়ে করে আমেরিকা চলে গেছি। এতে করে রাতুল আমাকে ঘৃণা করবে। আর ভুলে যাবে আমাকে । এই বলে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো। আমরা সবাই চমকে উঠেছিলাম ওর কথা শুনে । কিন্তু ও জেদ করে বলেছিল এই কথা না বললে আমি আর কোনও দিন আপনাদের সাথে যোগাযোগ করবো না।
,,
সেদিনের কথা শুনে আমার শশুড় রাতুল কে সব জানালো।রাতুল সব কিছু শুনে বললো না না এটা কিছুতেই হতে পারে না। আমি কিছু তেই এই কথা বিশ্বাস করি না। রাতুল অনেক ভাবেই রিয়া কে খুঁজেছে কিন্তু বের করতে পারি নি। রাতুল কেমন যেন হয়ে গেল । কোনও কথা কারো সাথে বলতো না। সারাদিন চুপচাপ থাকতো। আমার শাশুড়ি বললো বউমা তুমি এখন রাতুলের কাছে কাছে থাকবে। ওর যখন যা লাগে তুমি এগিয়ে যাবে । আমি আমার শাশুড়ির কথা মতো চলতে লাগলাম । রাতুলের অনেক চা খাওয়ার অভ্যেস ছিল । আমি ওর টাইম মতো চা দিতাম । ও কোনও কথা না বলে আমার হাত থেকে চা নিত। চা খাওয়া শেষ হলে আবার চায়ের কাপ ফিরিয়ে দিত। আমার খুব কষ্ট হতো। আর কতো দিন এরকম থাকবো। আমি কি কখনও ওকে ফিরে পাবনা। একদিন সকালে রাতুলের গেলাম চা নিয়ে । দেখি ও ঘরে নেই। সারা ঘর এলোমেলো ।আমি যত্ন করে ওর ঘর গুছিয়ে রাখছি। হঠাৎ করে চোখ টা ভিজে গেল । এক সময় এই ঘরে আমি রাত কাটিয়েছি রাতুলের বুকে মাথা রেখে । অনেক সপ্ন দেখেছি আমরা দুজনে মিলে। আর এখন আমি রাত কাটাই নির্ঘুম । আমার ঘুম আসে না। জেগে জেগে রাত পার করি। এমন সময় কারো পায়ের আওয়াজ শুনতে পেলাম । রাতুল ফিরেছে । দেখতে দেখতে ও চলে এলো। আমার বুকটা দুরুদুরু করছে । এখন যদি বলে আমার ঘরে আপনার কি ? আমি কি বললো এর উত্তর ! রাতুল ঘরে ঢুকে আমাকে বললো আপনি কিছু বলবেন ? আমি কিছু সময় চুপ করে থেকে বললাম আপনার ঘর টা এলোমেলো তাই এসেছিলাম গুছিয়ে রাখতে । ও আর কিছু না বলে ওয়াশ রুমে চলে গেল । আমি ও ঘর থেকে বের হয়ে এলাম। মাঝে মাঝে ওর সাথে আমার টুকটাক কথা হতো। ও আমাকে দেখলে কিছু সময় তাকিয়ে থেকে বলতো আপনার শরীর তো দিন দিন খারাপ হচ্ছে । নিজের দিকে খেয়াল রাখবেন । আমি ওর এই টুকু কথা তেই অনেক খুশি ছিলাম । এই টাই ছিল আমার জন্য অনেক পাওয়া ।
,,
দেখতে দেখতে ডেলিভারির সময় হয়ে গেল । আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে । সবাই এসেছে শুধু রাতুল ছাড়া । আর ও বা কেনই আসবে আমি ওর কি বা হই। খুব কষ্ট হচ্ছিল । আমার শেষ বারের মতো ওকে বলতে ইচ্ছে করছিল আমি তোমার অনাগত সন্তান এর মা। একবার হাতটা শক্ত করে ধরো । কিন্তু না ও আসে নি। আমার একটা ফুটফুটে মেয়ে হলো। সবাই খুব খুশি । আমি আমার মেয়ের চেহারা দেখে সব কিছু ভুলে গেলাম । দু দিন পর রাতুল দেখতে এলো। হয়তো দায় সারতে । আমি বসে বসে দেখছি রাতুল কে । ও আসতে আমার শাশুড়ি মেয়ে কে ওর কোলে তুলে দিল। রাতুল মেয়ে কে কোলে নিয়ে এক দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে । ওর হাত কাঁপছে । চোখের দৃষ্টি তে একটা অন্য রকম অনুভূতি । এখন সময় এসেছে সব কিছু খুলে বলার । আমি চাই আমার সন্তান প্রথম থেকেই ওর বাবার আদর মমতা ভালবাসা সব কিছু নিক। আমার শাশুড়ি আমার দিকে তাকিয়ে আছে । তাঁর দৃষ্টি বলছে তুমি সব কিছু খুলে বলো। তিনি রুম থেকে বের হয়ে গেল । আমি রাতুল কে বললাম তোমাকে আমি কিছু বলতে চাই ? আমার মুখে তুমি কথা টা শুনে ও অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে । আমি আবার বললাম এই সন্তান তোমার । এই কথা টা শুনে ও চমকে উঠে বললো কি বলছেন এই সব আপনি ? আমি আবার বললাম আমি একটু ও মিথ্যা বলছি না রাতুল । তুমি আমাকে বিয়ে করেছিলে। এর পর এক এক করে সব কিছু খুলে বললাম । রাতুল সব কিছু শুনছে আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে । আমার মনে হচ্ছিল এখনই চিত্কার করে হয়তো বলবে আমি তোমাকে স্ত্রী হিসেবে মানি না। এই সন্তান আমার কিছু তেই হতে পারে না। কিন্তু না , ও কিছু না বলেই হনহন করে চলে গেল । ওর চলে যাওয়া দেখে আমার চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে ।
সবার আগে আমার গল্প পড়তে চাইলে “নীল ক্যাফের ভালোবাসা” পেজে পাবেন।
,,
আর হাসপাতালে রাতুল আসেনি । আমার শাশুড়ির মুখে শুনেছিলাম এই নিয়ে রাতুল কারো সাথে কোনও কথা বলে নি। শুধু নিজের রুমে দরজা বন্ধ করে ছিল । আর সবাই কে জানিয়ে দিয়েছে ও কিছু দিনের ভিতরে আমেরিকা চলে যাচ্ছে । এই নিয়ে কেউ কোনও কথা বললে যে দিকে চোখ যায় চলে যাবে । ও এই কথা গুলি শুনে আমার মনে হচ্ছিল সমস্ত পৃথিবী ভেঙে চুড়ে পড়ছে । আমার খুব বেশি কষ্ট হচ্ছে । আমার তো কোনও দোষ ছিল না। তাঁর পর ও কেমন এমন হলো। এই নিয়ে কয়েক দিন চিন্তা ভাবনা করার পর ঠিক করলাম আমি চলে যাব ওর জীবন থেকে । আমি চাইনা আমার জন্য ও সবাই কে ছেড়ে চলে যাক। আমি আমার এই সিদ্ধান্ত শশুড় শাশুড়ি কে জানিয়ে দিলাম । তারা কিছু তেই মানতে রাজি না। তাদের এক কথা যে ছেলে সব কিছু জানার পর ও এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারে এমন ছেলে আমাদের দরকার নেই। কি করবো আমি এখন । আমার মাথায় কিছু আসছে না। এক দিকে রাতুলের এমন সিদ্ধান্ত অন্য দিকে শশুড় শাশুড়ি এমন কথা ।
,,
আমাকে বাড়িতে আনা হলো। আমি আসার আগে রাতুল বাড়ি থেকে চলে গেছে । কখন ফিরবে কেউ জানে না। এই সবের জন্য নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হচ্ছে । এখন অনেক রাত । ওর ফিরার কোনও নাম নেই। আমার শশুড় শাশুড়ি আমাকে বললো তুমি কোনও চিন্তা করো না। ঘুমিয়ে পড়ো। ও ঠিক চলে আসবে । কিন্তু আমার ঘুম আসছে না । কি হতে কি হয়ে গেল। আমি বাচ্চা টাকে রেখে ওয়াশ রুমে গেলাম । এমন সময় বাচ্চা টার চিৎকার আমার কানে এলো। ও খুব জোরে জোরে কাঁদছে । আমি বের হতেই দেখতে পেলাম রাতুল মেয়ে কে কোলে নিয়ে কান্না থামিয়ে যাচ্ছে । আমি ভুত দেখার মতো চমকে উঠলাম । আমি একি দেখছি !! রাতুল সত্যি আমার সামনে । একটু পর আমার দিকে তাকিয়ে বললো আমি চাইনা আমার মেয়ে আমি থাকতে এভাবে কেঁদে উঠুক। আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না । রাতুলের বুকে মাথা রেখে সে দিন অনেক কেঁদে ছিলাম । ও আমার মাথায় হাত বুলিতে দিয়ে শান্তনা দিচ্ছে । আমাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো তোমাকে না বুঝে অনেক কষ্ট দিয়েছি। আমি আর কোনও দিন তোমার চোখে পানি দেখতে চাই না। আমার ওর কথা শুনে আরো চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগলো । আমি আজ ভিষন সুখী । আমার আর কোনও দুঃখ নেই। আমি পেয়েছি আমার ঠিকানা । আমি আর কোনও কিছু চাইনা। জীবনে আমার আর কি থাকতে পারে। রাতুল এগিয়ে গেল ওর সন্তান এর দিকে । পরম মমতা নিয়ে ওকে বুকে টেনে নিল।

,,সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here