তবু মনে রেখো ১৭,১৮

0
577

তবু মনে রেখো ১৭,১৮
লেখা: জবরুল ইসলাম
(১৭ পর্ব)

হায়দার সাহেবের হাতের মুঠোয় কালো ছাতা। পরনে পাঞ্জাবি। লুঙ্গির সামনের অংশ হাঁটুর কাছে, অথচ পেছনের দিক মাটি ছুঁই-ছুঁই। একা একা বিড়বিড় করে অদ্ভুত ভঙ্গিতে হাঁটছেন তিনি। প্রায়ই এখন হায়দার সাহেবকে বিড়বিড় করে কথা বলতে দেখা যায়। বেশিরভাগ কথাই বুঝা যায় না। মাস দুয়েক আগে এই সমস্যাটার শুরু। বিছনাকান্দি দূর্ঘটনার পর ইমাদের মাথার পেছনে বেশ কয়েকটা সেলাই লেগেছিল। কনুই দু’টাও ভালো হতে সপ্তাহ দুয়েক লেগে যায়। দূর্ঘটনার খবর শুনে হায়দার এবং মহসিন সাহেব দেখতে গিয়েছিলেন। দু’দিন পর ইমাকে নিয়ে তারা ফিরে আসেন।
মাস খানেক পুষ্পিতা, ইমাদ এবং সাবিনা বেগম বাসায়ই থেকে যান। সুস্থ হওয়ার পর আরও কিছুদিন নানান জায়গায় ঘুরাঘুরি করেছে তারা। ইমাদ চলে আসতে চাইলেও পুষ্পিতার জোরাজুরিতে থেকে যায়।
বাড়ি ফেরার কয়েকদিন পরই এক সন্ধ্যায় মহসিন সাহেব আসেন। হায়দার সাহেব ফ্যান ছেড়ে দিয়ে বললেন,

– ‘বসো খান ভাই।’

মহসিন সাহেব সামনের সোফায় বসে বললেন,

– ‘হায়দার জামাই বাবাজী না-কি বাসার বিষয়টা শুনে খুব রেগেছে। আমি তো চেয়েছিলাম ওরা এলেই কাজটা শুরু করবো।’

হায়দার সাহেব স্বাভাবিক গলায় বললেন,

– ‘আরে কি যে কও খান ভাই। ওই রাগারাগির জন্য কাজ বন্ধ থাকবে না-কি। ছেলেটা লাজুক। বুঝোই তো এসব।’

– ‘না হায়দার। সাবিনা নিজেই বাসা দিতে চেয়েছিল। জামাই বাবাজীর রাগারাগির কারণে সেইই বাদ দিয়ে দিছে। গতকাল পুষ্পিতাকেও কল দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম সেও বললো এগুলো আর মুখে না আনতে। জামাই বাবাজীর নিষেধ।’

হায়দার সাহেব পুত্রের এমন আহাম্মকির গল্প শুনে ভেতরে ভেতরে প্রচণ্ড রেগে গেলেন। কিন্তু বিষয়টা স্বাভাবিক করার জন্য অট্টহাসি দিয়ে বললেন,

– ‘তুমিও না খান ভাই। জামাই কি নিজে বলবে দিতে। ওর কথা এতো সিরিয়াসলি নেয়ার কিছু নাই। তুমি কাগজপত্র কিরকম কি করা যায় এসব ভাবো।’

– ‘আমি বুঝতে পারছি না কি করবো হায়দার। আচ্ছা জামাইকে ডাকো।’

– ‘ওরে এখন ডাকতে হবে না। আমি আছি তো।’

মহসিন সাহেব মাছি তাড়ানোর মতো হাত নেড়ে বললেন,

– ‘আরে ভাই ওর সঙ্গে লুকোচুরি করে হবে নাকি? এমনিতেই কাগজ করতে তাকে লাগবে। যাও ডাকো।’

হায়দার সাহেব ইমাদকে ডেকে আনলেন।
মহসিন সাহেব খানিক ভেবে ইতস্তত করে বললেন,

– ‘বাবা বাসাটা তো তোমার নামে দিতে নিয়ত করেছিলাম। তুমি না-কি নিষেধ করেছো।’

– ‘হ্যাঁ, এগুলো আমি চাই না। আর আপনি জায়গা-জমি আমাদের থেকে যা কিনেছিলেন। সেগুলোর কাগজ করছেন না কেন? এসব শেষ করেন।’

হায়দার সাহেব বিস্মিত হয়ে দাঁত কটমট করে তাকিয়ে আছেন। চোখ দিয়ে ছেলেকে শাসাতে চেষ্টা করছেন। মহসিন সাহেবের সামনে কিছু বলতেও পারছেন না।

মহসিন সাহেব বললেন,

– ‘কেন বাবা? আমরা নিজ থেকেই তো দিতে চাচ্ছি। তুমি তো আর চেয়ে নিচ্ছ না।’

হায়দার সাহেব সঙ্গে সঙ্গে বললেন,

– ‘হ্যাঁ এটাই তো। তুমি তো চেয়ে নিচ্ছ না। খুশি হয়ে দিতে চাইলে নিবে না কেন।’

– ‘নগদ একটা বাসা আমার নামে লিখে দিবেন এটা কেমন কথা। হ্যাঁ আমি যদি আজ অসুস্থ হই, টাকা না থাকে৷ শ্বশুর চিকিৎসার টাকা দিলে নিতেই পারি। আজ যদি আপনার বাসা খালি থাকে। টাউনে আমার কাজ থাকে। আমি বাসায় গিয়ে থাকতে পারি। বিপদ-আপদ ভিন্ন বিষয়। কিন্তু এভাবে আমি বাসা নিব না।’

হায়দার সাহেব ভেতরে ক্ষোভ আর ধরে রাখতে পারছেন না৷ তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে পুনরায় তিনি বললেন,

– ‘ওরা তোমাকে খুশি হয়ে দিচ্ছে বাবা৷ এরকম দিতেই পারে। এগুলো স্বাভাবিক। আমি আছি তুমি চুপ থাকো, আমার উপরে ছেড়ে দাও।’

ইমাদ বিরক্ত হয়ে মহসিন সাহেবকে বললো,

– ‘শ্বশুর আব্বা শুনুন, একটা কথা মনে রাখবেন। আমাকে কোনোকিছু দিয়ে খুশি করতে হবে না। আমি পুষ্পিতাকে পেয়েই খুশি হয়েছি৷ জানি না কেন আপনাদের মনে হয়েছিল পুষ্পিতাকে আমি এগুলো না দিলে সুখে রাখবো না। আমাকে এত ছোটলোক ভাববেন না দয়া করে। আর এই বিষয়গুলো নিয়ে কথা বললে আমি লজ্জিত হই, অপমানবোধ করি। পুষ্পিতাকেও ছোট করা হয়। আমি এসব শুনতে চাই না।’

কথাগুলো বলেই সে চলে গেল। পুষ্পিতা বাইরেই দাঁড়িয়ে ছিল। ইমাদের ক্রোধান্বিত চেহারা দেখে সে কিছু না বলে পিছু পিছু গেল। ইমাদ রুমে গিয়ে বিছানায় বসে আছে৷ পুষ্পিতা রান্নাঘরে চলে গেল। ইমা বাবার রুমে নাশতা দিয়ে এসে বঁ*টি হাতে নিয়েছে। পুষ্পিতা বাসায় সাবিনা বেগমের কাছ থেকে রান্না-বান্না ভালোই আয়ত্ত করে নিয়েছে। সে হাত বাড়িয়ে বললো,

– ‘দাও মাছটা আমি কা’টি।’

ইমা ব্যঙ্গ করে বললো,

– ‘জি না, বঁ*টি ছাড়ো। তোমার এগুলো করা লাগবে না।’

পুষ্পিতাও বঁ*টি না ছেড়ে রসিকতা করে বললো,

– ‘কিন্তু আমার অপরাধটা কি?’

ইমা ওর পেটে হাত দিয়ে বললো,

– ‘বসে মাছ কা*টলে ময়নাটা ব্য*থা পাবে।’

পুষ্পিতা ফিক করে হেঁসে বললো,

– ‘বোকা না-কি, এখনও ব্যথা লাগার সময় আসেনি।’

– ‘তারপরও লাগবে না৷ তুমি বসো।’

পুষ্পিতা ওর পাগলামো দেখে মাথায় গাঁট্টা দিয়ে চেয়ারে বসলো।

ইমা মাছে ছাঁই লাগিয়ে বললো,

– ‘ছেলে না মেয়ে কবে জানা যাবে ভাবি?’

– ‘কিছুদিন পরেই টেস্ট করলে জানা যাবে।’

– ‘ও আচ্ছা।’

– ‘সামনে তোমার পরীক্ষা। এসব কাজ আমিই করতে পারবো। পড়তে বসো গিয়ে।’

– ‘এগুলো কে’টে-কু’টে তোমাকে দিয়ে চলে যাব।’

– ‘তোমার বিয়ের আলাপ চলছে জানো?’

– ‘ধ্যাৎ বা*জে কথা বলবে না তো।’

– ‘বাজে না সত্য। তোমাদের দোকানে শফিক নামে একটা ছেলে আছে না ওর সঙ্গে। সে না-কি দুবাই চলে যাবে। তাই ওর মা আগে বিয়ে করিয়ে নিতে চাচ্ছে।’

– ‘ওর মা বহুত ব*জ্জাত মহিলা। আমাদের বাড়িতে এসে ছয় মাসে আগেও বউ ডেকে গেছে।’

পুষ্পিতা হেঁসে বললো,

– ‘ছেলের না-কি এমনিতে পড়ালেখা আছে। আর জায়গা-জমি ভালোই।’

– ‘এসএসসি ফেইল৷ আর জায়গা-জমি ভালো হইলে আমাদের দোকানে কোন দুঃখে কাজ করে।’

– ‘শ্বশুর আব্বার না-কি ওরে পছন্দ। তিনি রাজি। তোমার ভাইও বললো ছেলে ভালো আছে। খুবই ভদ্র। তাদেরকে খুব মান্য করে চলাফেরা করে। বিড়ি-সিগারেট পর্যন্ত খায় না। আমি বললাম তুমি কি রাজি ওর কাছে বিয়ে দিতে। সে বললো, আমার সমস্যা নেই। ইমার ইচ্ছার উপর ডিপেন্ড করছে।’

ইমা রূঢ় গলায় বললো,

– ‘হাবলাকান্ত দেখছি আমাকে না পেরে আমার বাপ-ভাইকে পটিয়ে ফেলেছে৷ ওর আগে থেকেই ইচ্ছা ছিল আমাকে বিয়ে করবে তাই ওদের সাথে এত সুন্দর ব্যবহার করে। দোকানের দায়িত্ব সুন্দরভাবে পালন করে।’

পুষ্পিতা মুখে হাত দিয়ে হাসতে হাসতে নুইয়ে গেল।

– ‘হাবলাকান্ত আবার কিরে?’

– ‘আমাকে দেখলেই হাবলার মতো তাকিয়ে থাকে। আর ওর চোখ দেখো নাই তো, একদম মরা মাছের মতো।’

পুষ্পিতার হাসির তোড় আরও বেড়ে গেল। সে হাসতে হাসতে নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,

– ‘তবে একটা কথা ভুল বললে, সে আগে থেকেই বিয়ে করতে চাইলে দোকানে ঢুকতো না।’

– ‘সে দোকানে ঢোকার আগে আমারে দেখেইনি৷ আমাকে দেখেছে পরে।’

– ‘তাহলে প্রপোজ করেনি কেন?’

– ‘হাবলাকান্তর এতো বড়ো সাহস কি করে হবে, আমাকে প্রপোজ করলে ওর নাক ফা*টিয়ে দিতাম।’

– ‘ওর সাহস আছে। একবার না-কি দোকান চু*রি শুরু হয়েছিল বাজারে। তাই সে একাই তোমাদের দোকানে থাকতো। সাহস না হলে কিভাবে দোকান পাহারা দেয়?’

– ‘ব্যাটা মানুষের সাহস ওইসবেই থাকে। মেয়েদের সামনে না।’

পুষ্পিতা ওর কথাবার্তা শুনে কোনোভাবেই নিজের হাসি সামলাতে পারছে না। সে হাসতে হাসতেই বললো,

– ‘তাহলে তুমি তাকে অপছন্দ করো?’

– ‘আমি অকারণ আরেক ব্যাটাকে অপছন্দ কেন করবো?’

– ‘তাহলে কি পছন্দ করো?’

– ‘তাও করি না।’

– ‘এটা কোনো কথা হলো?’

– ‘হ্যাঁ, হলো, আমার মাছ কা*টা শেষ হলো। এবার আমি পড়তে গেলাম।’

– ‘শোনো, তোমার বিয়ে মনে হয় ওর সঙ্গেই হবে। তুমি কি বিয়েতে রাজি?’

– ‘আমার পরীক্ষা সামনে। এসব বিয়ে-শাদিতে আমি নাই।’

– ‘ওরা শুধু আখত করে রাখবে। তুমি বাড়িতেই থাকবে। ঘরে তুলে পরে নিবে। পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবে তুমি।’

– ‘হাবলাকান্ত তোমাকেও পটিয়ে ফেলেছে দেখছি।’

পুষ্পিতা হেঁসে বললো,

– ‘তাহলে বুঝো সে হাবলাকান্ত না, হাবলা হলে সবাইকে পটায় কি করে?’

ইমা কিছু না বলে নিজের রুমে চলে গেল।

পুষ্পিতা হাসতে হাসতে উঠে বাইরের বাতি জ্বালিয়ে দিল। চাপাকল রান্নাঘরের লাগোয়া। মাছ নিয়ে কলতলায় গিয়ে মনে পড়ে গেল তাগাড়িটা আনেনি। আবার রান্নাঘরে এলো তাগাড়িটা নিতে। তখনই শুনতে পেল ইমাদ এবং হায়দার সাহেব কি নিয়ে যেন চিল্লাচিল্লি শুরু করেছে। পুষ্পিতা সেদিকে ছুটে গেল।

__ চলবে…
লেখা: জবরুল ইসলাম

তবু মনে রেখো (১৮ পর্ব)
.
ইমা বাবার হাত ধরা। হায়দার সাহেব প্রচণ্ড রেগে আছেন। পুষ্পিতা বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছে। কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না সে৷ হায়দার সাহেব পুনরায় ইমাদের দরজার দিকে ধেয়ে গিয়ে বললেন,

– ‘তুই মাতব্বরি শুরু করেছিস। মুখের উপর কথা বলিস। শু*য়ো/রের বাচ্চা…।’

ইমা আবার কোমরে টেনে ধরে নিতে নিতে বললো,

– ‘বাবা আসো তো, ভাবি সবকিছু শুনছে।’

ইমাকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে বললেন,

– ‘শুনুক, ব/ল*দের বাচ্চা কয় তার সোনামুখো বউ পাইয়াই সে সুখী, আর কিছুই লাগবে না৷ বল গিয়ে এই বাড়ি থেকে বের হয়ে যাক। এখনই ওরা বের হয়ে যাক।’

ইমা করিডর দিয়ে বাবাকে টেনে বাইরে নিয়ে গেল। তিনি অশ্রাব্য ভাষায় গা*লাগা*ল করে ঘর থেকেই বের হয়ে গেলেন। ইমা এসে নিজের রুমের দরজা বন্ধ করে কেঁদে ফেললো। পুষ্পিতার লজ্জায় মুখ লাল হয়ে গেছে। বিষয়টা সে বুঝতে পারছে। হায়দার সাহেব বাসা এবং জায়গা জমি সবই চান। পুষ্পিতা রান্নাঘরে চলে গেল। হায়দার সাহেব পুকুর পাড় পেরিয়ে এসে রাস্তার কিনারে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লেন। মাথা ঘুরছে। পুরো পাঞ্জাবি ঘেমে ভিজে গেছে। ছেলের নির্বুদ্ধিতা দেখে তিনি বিস্মিত হয়ে গেছেন। এই কাজটা কিভাবে করলো ইমাদ। সে তো জোর করে নিচ্ছে না৷ কারও কাছ থেকে চেয়েও নিচ্ছে না৷ তবে কেন সরাসরি না করে দিল। এটা কি হয়ে গেল। ভাবতেই পারছেন না তিনি। বড়ো বড়ো নিঃশ্বাস ফেলে অস্ফুটে বারবার বলছেন, ‘ব*লদে/র বাচ্চা এইটা করলটা কি। এটা কি হইল। আমার সবকিছু শেষ… সবকিছু শেষ করে দিল..।’

পুষ্পিতা মা-বাবাকে এগুলো বলেনি। তাই মহসিন সাহেব ইমাদের কথা ভেবে দু’দিন পর হায়দার সাহেবকে ডাকলেন। জায়গা রেজিস্টারের বিষয়ে আলাপ করলেন। বিপাকে পড়ে হায়দার সাহেব নিজ হাতে ভূমির জমে থাকা খাজনা দিয়ে এলেন। তারপর রেজিস্টারি করে দিলেন জমিগুলো। এই ক্ষো*ভ, হতাশা ধীরে ধীরে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে ফেললো তাকে। তবুও কিছুদিন পর তিনি মহসিন সাহেবকে সরাসরি গিয়ে বললেন,

– ‘জমি তো দিয়ে দিলাম খান ভাই৷ বলছেন যখন বাসাটা দিয়ে দেন কাগজ করে। ছেলেটা এমনিই না করছে আরকি। এগুলো সিরিয়াসলি নেয়ার কিছু নাই।’

মহসিন সাহেব রেগে গেলেন। তিনি কড়া গলায় বললেন,

– ‘দেখো হায়দার। ছেলে না করছে। সিরিয়াসলিই না করেছে। তুমি এসব নিয়ে আমার সাথে আর আলাপ করতে আসবে না। তুমি তো মিয়া দেখছি লোভী মানুষ। পাগল হয়ে যাচ্ছ৷ জমি রেজিস্টারি করতেও কত গাঁইগুঁই করছিলে।’

হায়দার সাহেব সেদিন লজ্জায় অপমানে মুখ কালো করে বাড়ি ফিরেন। হতাশা তাকে ঘিরে ধরেছিল চারদিক থেকে। ভাবতেই পারেননি একেবারে হাতে আসা সবকিছু হঠাৎ এভাবে হারিয়ে যাবে। বাড়িতে ফিরেই তিনি বঁ*টি নিয়ে ধেয়ে গেলেন ইমাদের দিকে, ‘এই তুই আমার বাড়ি থেকে বের হয়ে যা৷ আজকেই বের যাবি। না হয় বঁ*টি দিয়ে জ*বাই করে ফেলবো। ন*ষ্টা বউ নিয়ে তুই বের হয়ে যা আমার বাড়ি থেকে।’

পুষ্পিতা দৌড়ে গিয়ে দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করে দেয়। ইমা বাবাকে টানাটানি করে আঁটকে রাখার চেষ্টা করে। হায়দার সাহেব দরজায় লা*ত্থি মারতে শুরু করেন। চিল্লাচিল্লি শুনে আশেপাশের মানুষও দৌড়ে আসে। বঁ*টি কেড়ে নেয়।

কিন্তু এরপর এরকম ছোটখাটো ঘটনা প্রায়ই ঘটতে শুরু করল। হায়দার সাহেব দিনকে দিন আরও বেপরোয়া হয়ে যেতে থাকলেন। ক্রমশই পুষ্পিতার দিকে তার ক্ষো*ভ বাড়তে লাগলো। ন*ষ্টা চ*রিত্রহীন গা/লি রোজই দেন।

পুষ্পিতা এসব দেখে একদিন ইমাদকে ধরলো। বললো,

– ‘চলো আমরা বাসায় চলে যাই।’

ইমাদ রেগে গিয়ে বললো,

– ‘এগুলোর জন্যই তো এতো ঝামেলা। আমার বাপ যখন মান-সম্মানের চিন্তা না করে এতকিছু করলো আমি কখনও আর বাসা নিতে রাজি হব না।’

পুষ্পিতা ওর কাঁধে হাত রেখে বললো,

– ‘তুমি তো বাসা নিবে না। খালি পড়ে আছে। আমরা গিয়ে থাকবো কিছুদিন। শ্বশুর আব্বা একটু স্বাভাবিক হলে চলে আসবো।’

তবুও ইমাদকে রাজি করানো গেল না। ক’দিন পর এক সন্ধ্যায় মহসিন সাহেবও তাকে কল দিয়ে বাড়িতে ডাকলেন। সে দোকান থেকে সোজা সেখানে চলে গেল। মহসিন সাহেব তাকে রূঢ় গলায় বললেন,

– ‘তোমার বাবা তো পাগল হওয়ার অবস্থা ইমাদ। সবই তো খবর পাই৷ না আছে আমার মেয়ের নিরাপত্তা, না আছে তোমার।’

– ‘এখন কি করবো বলুন। নিজের বাপকে আমার কি করার আছে।’

সাবিনা বেগম এসে পিঠে হাত দিয়ে কাতর গলায় বললেন,

– ‘তুমি বাসায় চলে যাও বাবা৷ আপাতত সেখানে যাও পরে যা হয় হবে৷ কথাটা রাখো বাবা।’

ইমাদও বিষয়টা নিয়ে ভাবে। পুষ্পিতা প্রে/গন্যা*ন্ট। হঠাৎ যদি তাকে আ*ঘাত করে বসে বাবা। তাহলে সমস্যা। ওরা তখন তাকেও দোষারোপ করবে। সবকিছু ভেবে কিছুদিন পরেই পুষ্পিতাকে নিয়ে সে বাসায় চলে যায়। হায়দার সাহেব ধীরে ধীরে মানসিক ভারসাম্য হারাতে শুরু করেন। সারাক্ষণ বিড়বিড় করে হাঁটেন। কিছুই বুঝা যায় না। এখন তপ্ত রোদে ছাতা না টানিয়ে হাতে নিয়ে হাঁটছেন। বাজারে ঢুকেই কয়েকটা কু*কু*র দেখে ছাতা হাতে তাড়া করে গলি থেকে বের করে দিয়ে এলেন। শফিক ছাড়া আশেপাশের সকল দোকানের মানুষই আজকাল উনার কর্মকাণ্ড নিয়ে হাসি-তামাশা করে। শফিক সালাম দিয়ে বললো,

– ‘চাচা আপনার আসতে হবে না৷ এত রোদে আসেন কেন। বাড়িতে চলে যান। আমি তো আছিই।’

– ‘হ্যাঁ হ্যাঁ তুমি তো আছো৷ তুমি ওই ব*লদ থেকে ভালো৷ করলোটা কি। হ্যাঁ অনেক রোদ। ঠিকই বলেছো। আর রাস্তাঘাটে খালি কু*কু/র আর কু/কু*র। বাজারে আর আসব না। তুমি তো আছোই।’

একা একা কথাগুলো বলতে বলতে তিনি বাজার থেকে বের হয়ে গেলেন। শফিক এভাবেই কৌশলে রোজ তাকে দোকান থেকে বিদায় করে দেয়। ইমাদের সঙ্গে তার সার্বক্ষণিক যোগাযোগ আছে।

পুষ্পিতার প্রেগন্যান্ট এর তিনমাস। বাসায় ওরা দু’জনই শুধু থাকে। আছিয়া এসে রান্না-বান্নার কাজ করে দিয়ে যায়৷ সন্ধ্যায় দু’জন বসে টিভি দেখছে৷ পুষ্পিতা হঠাৎ বললো,

– ‘এভাবে বেকার বাসায় আর কতদিন থাকবে শুনি।’

ইমাদ চায়ে চুমুক দিয়ে বললো,

– ‘বেবি হওয়ার আগপর্যন্ত এখানেই থাকি। এরপর দেখা যাবে। বাড়িতেই চলে যাব না হয়। দোকান তো আছেই।’

– ‘বাবা ওইদিন কি বলেছেন জানো?’

– ‘কি?’

– ‘আমাদের বাসার নিচে যে দোকান আছে। ওইটা তো ভাড়া দেয়া। তুমি সেখানে দোকান দিলেই পারো। আমরা এখানেই থাকলাম। আর ইমাকে ইন্টার শেষে বাসায় এনে ভার্সিটিতে ভর্তি করে দিলে।’

– ‘আইডিয়াটা ভালোই। কিন্তু বাবাকে কি করবো?’

– ‘উনাকে বাসায় এনে পারবে? শুনছি মাথায় পুরাই সমস্যা এসে গেছে।’

– ‘সেজন্যই তো বাড়িতে একা রাখা যাবে না। ইমাকে থাকতে হবে।’

– ‘মজিদাকে বলবো গিয়ে রেঁধে দিতে। এমনিতে বাবা-মাও তো আছেন সেখানে।’

– ‘হুম বুঝেছি।’

পুষ্পিতা ফিক করে হেঁসে বললো,

– ‘বাবা তোমাকে বলতে ভয় পাচ্ছিলেন। কিন্তু উনি সিরিয়াস। আমাকে বললেন তোমাকে জিজ্ঞেস করে জানাতে। তাহলে ওই দোকানদারকে ছেড়ে দিতে বলবেন।’

– ‘থাক, এখনই এসব না। আগে বেবি হোক। এরপর বুঝা যাবে। তাছাড়া বাড়ি-ঘর রেখে শ্বশুরের বাসায় থাকার ইচ্ছা নেই।’

– ‘ঘাড়ত্যা*ড়ামি করবে না তো। এটা তো প্রয়োজনে থাকবে। তাছাড়া বাবারও স্বার্থ আছে। আমরা বাসায় থাকলে ওরা গ্রামে নিশ্চিন্তে থাকতে পারে।’

ইমাদ পেছনে হাত নিয়ে ওর কাঁধে রেখে বললো,

– ‘আচ্ছা ঠিক আছে। উনি দোকানদারকে না করুক। এরপর ভেবেচিন্তে যা করি করবো।’

পুষ্পিতা খুশি হয়ে ওর কাঁধে মাথা রাখলো।

– ‘আরও দু-এক মাস পর মা’কে বলবো চলে আসতে। তখন আমার অনেক হেল্প হবে।’

ইমাদ চ্যানেল পালটে বললো,

– ‘কেন আমার যত্নে পোষাবে না বুঝি ম্যাডামের?’

পুষ্পিতা মুচকি হেঁসে বললো,

– ‘তা না, তবুও ভয় লাগে। প্রথম তো। মা থাকলে ভরসা পাব।’

– ‘বুঝেছি আমার উপর ভরসা নেই।’

পুষ্পিতা ওর উরুতে চি*মটি দিয়ে বললো,

– ‘তোমার উপর ভরসা কেন থাকবে শুনি। তোমার কি এ বিষয়ে অভিজ্ঞতা আছে?’

ইমাদ টিভির দিকে তাকিয়ে আনমনেই জবাব দিল,

– ‘না থাকার কি আছে।’

পুষ্পিতা হাসতে হাসতে বললো,

– ‘তুমি বুঝি প্রে*গন্যা*ন্ট হয়ে কয়েকটা সন্তান জন্ম দিয়েছো?’

___চলবে….
লেখা: জবরুল ইসলাম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here