বসন্তের_রঙ_লাল #part_15

0
598

#বসন্তের_রঙ_লাল
#part_15
#ফাতেমা_তুজ

( ২৯)
বাংলাদেশে দশ টি জাতীয় উদ্যান ও সাত টি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের মাঝে লাউয়াছড়া অন্যতম। শীমঙ্গল শহর থেকে দশ কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান। পাহাড়ি রাস্তায় ড্রাইভ করার চর্চা থাকাতে অভিনব নিজেই ড্রাইভ করে চলেছে। ওর পাশে বসে জানালা দিয়ে মুখ বের করে সমীরন শুষে চলেছে ঝিল। এতো এতো ভালো লাগা আগে কখনোই কাজ করে নি। অভিনব যেন রোজ নিত্য নতুন ভাবে ভালো লাগায় ভরিয়ে দিচ্ছে ওকে। পুরো রাস্তার ধার বেয়ে নেমে চলেছে অজস্র চা বাগান। শীমঙ্গল কে চা বাগানের রাজধানী বোধ হয় এর জন্য ই বলা হয়। ছোট ছোট কোমল পাতা গুলো তে হালকা আলোক রশ্মি পরতেই কেমন প্রতিফলন সৃষ্টি করছে সেগুলো। চকচকে হয়ে হলদে এক আলো দেখা যাচ্ছে। মুগ্ধ নয়নে সেগুলো অবলেকন করছে ঝিল। মাঝে মাঝে সে দিকে তাকাচ্ছে অভিনব। ওর ইচ্ছে করছে মেয়ে টি কে আরো বেশি করে বিমোহিত করে দিতে।পুরো পৃথিবীর সমস্ত সৌন্দর্য্যে হাতে এনে দিতে। রিসোর্ট থেকে লাউয়াছড়া সাড়ে ছয় কিলোমিটারের পথ মাত্র। গাড়ি তে পনেরো মিনেটের মাঝেই পৌছে গেল। এতো সুন্দর বাতাবরনে চোখ জড়িয়ে আসছে ঝিলের। হাই তুলে অভিনবর গলা জড়িয়ে বলল
” আমার ঘুম পাচ্ছে অভিনব। ”

” ঘুমালে তো চলবে না ঝিল পাখি। এতো এতো সৌন্দর্য যে তোমার জন্য অপেক্ষা করে আছে। ওরা যে তোমার মতোই খুব অভিমানিনী। ”

” উম তুমি বেশি বেশি বলছো। ”

” বেশি নয় রে জান। ”

ছেলেটার বুকে নাক ঘষতে শুরু করেছে ঝিল। মেয়েটার নিশ্বাসের কবোষ্ণ হাওয়া এলো মেলো করে যাচ্ছে ওর অন্তঃস্থল। তবে কায়দা করে নিজেকে সামাল দিলো সে। পর পর দুটো গাড়ি এসে থামতেই হতাশা এসে আঁকড়ে নিলো। অভিনবর বুক থেকে মাথা উঁচিয়ে বলল
” ওরা আরেক টু পরে এলে কি হতো বলো তো। ”

অধিক উত্তেজনায় চেঁচানো শুরু করেছে ফারাবি। তবে ফারহান কে দেখেই দমে গেল। গত দুদিনে ভুলেই গিয়েছিলো মানুষ টা কে বাঘের মতোই ভয় পায় সে। ফারহান সকলের সাথে কথা বলে নিলো। সবাই কে যাঁর যাঁর মতো ছেড়ে দেওয়াই উত্তম বলে বিবেচনা হলো। ফারাবি কে নিয়ে আগে আগে হাঁটা লাগালো সে। এই মেয়ে কে একটু ও ভরসা করতে পারছে না। সরু রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলেছে ওরা। লাউয়াছড়ার প্রধান আকর্ষণ জীব বৈচিত্র্য। এই উদ্যানে দেখা মিলে নানান প্রজাতির বিড়াল আর পশুপাখি। জাতীয় তথ্যকোষের হিসেবে এ উদ্যানে ৪৬০ প্রজাতির উদ্ভিদ ও জীব রয়েছে। শোনা যায় এই উদ্যানে বসবাস রত রয়েছে অজগর সাপ। ফারহানের শার্ট খামচে হেটে চলেছে ফারাবি। চারপাশে লম্বা লম্বা গাছের সারি। নিজে কে ছোট্ট এক জীব মনে হয় কেবল। গাছ গুলো মাথা উঁচু করে নিজেদের আত্মগরিমা প্রকাশ করে। লাউয়াছড়া উদ্যান বিলুপ্ত প্রায় উল্লুকের সবচেয়ে বড় বিচরণ এলাকা। বনের সৌন্দর্য কে উপভোগ করার জন্য রয়েছে তিন টি টাইম ট্রেইল। প্রয়োজন অনুযায়ী সময় নির্বাচন করে ঘোরা যায় এই উদ্যানে। আধ ঘন্টা, এক ঘন্টা, দেড় ঘন্টা তিন টি ট্রেইল এর মাঝ থেকে এক ঘন্টার ট্রেইল কে বেছে নিলো ওরা। যদি ও ট্রেকিং এর অভ্যেস নেই ফারাবির। তবে নিজ মনোবলের উপর ভরসা রয়েছে। ফারাবির হাত টা মুঠো বন্দী করলো ফারহান। যেন ছেড়ে দিলেই হারিয়ে যাবে। এতো এতো ভালোবাসা গুলো স্বতস্ফূর্ত ভাবে বেরিয়ে পরেছে আজ। তবে নিজের উপর ইষৎ রাগ হলো। কেন এতো শত ভালোবাসা গুলো আগে অনুভব করা হয় নি। কতো টা সময় এই মুহূর্ত গুলো থেকে বঞ্চিত হতে হলো।
” সামনে তাকিয়ে চল। আমাকে দেখার জন্য অফুরন্ত সময় রয়েছে। ”

চমকায়িত হয়ে অন্য দিকে তাকালো ফারাবি। ফারহানের নজর এতো প্রখর কেন! একটু প্রান ভরে দেখতে ও পারবে না নাকি।

উঁচু নিচু ও আলো আঁধারের চোখ ধাঁধানো খেলায় হারিয়ে গেছে ঝিল। পাশে থাকা মানুষ টি কে বিন্দু মাত্র তোয়াক্কা করছে না। এদিকে অভিনবর অন্তকর্নে জ্বালা পোড়া শুরু করেছে বহু পূর্বেই। প্রকৃতির থেকে এই মেয়ের প্রতি আকর্ষণ পাচ্ছে বেশি। লোম কূপ গুলো অবলীলায় একটু পর পর জেগে উঠছে কেমন। ঝিলের থেকে দুই ফুট দূরত্ব নিয়ে চলা শুরু করলো। মেয়েটির কাছাকাছি গেলেই লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় সমস্ত বিশ্বাস। তাই ভয় হয় যদি ভুল হয়ে যায়। পাখির কিচিরমিচির আর ঝি ঝি পোকার বে সুরা গানে কান বন্ধ হয়ে গেছে একদম। অদূর থেকে চেচালো ঝিল।
” অভিনব! অভিনব ! এই তুমি এতো পেছনে কেন। ”

তালা বদ্ধ কান যেন শ্রবণ শক্তি হারিয়েছে। ঝিলের কন্ঠ শুনতে পাচ্ছে না। মেয়েটি ছুটে এলো ওর কাছে। বাহু তে ঝাঁকিয়ে বলল
” কি হয়েছে তোমার। ”

” কই কিছু না তো। ”

” আসো না প্লিজ। কতো মনোরম পরিবেশ। ”

” ঝিল। ”

অভিনবর কন্ঠে ঘোর লাগা কাজ করছে। হৃদপিন্ডে লাব ডাব শব্দ হতে লাগলো। নিজের প্রতি ধ্যান ফিরিয়ে হাসলো অভিনব। বোকা বনে গেল ঝিল। হালকা হাতে মাথায় চাপর মেরে বলল তুই ও না সব সময় বেশি বুঝিস।

লাউয়াছড়া বনের মাঝ দিয়ে চলেছে ঢাকা টু সিলেট রেললাইন। এই স্থানে এসেই থেমে গেল মৌনতা আর রোহন। দুজনের মাঝে খুব বেশি কথা হয় নি। প্রয়োজন ছাড়া যেন কথা বলতেই ভুলে যায়। রিমি আর মনিকা এক সাথে ঘুরে চলেছে। আর ওদের পেছনে পেছনে গাইড এর মতো করে চলছে রিফাত। তাহার জীবন টাই বেদনার!

” মৌন একটু কাছে আসবে। ”

” হু বলো না। ”

” তোমার খারাপ লাগে তাই না? ”

” খারাপ লাগবে কেন। ”

” এই যে সবার মতো করে ভালোবাসতে পারি না আমি। ”

” এমন বলছো কেন রোহন? ”

” মনে হলো। ”

দুজনের মাঝে নীরবতার সৃষ্টি হলো। একে অপরের পাশাপাশি হাঁটা ধরলো ওরা। পাশ দিয়েই চলেছে রেললাইন এর বিশাল পথ। ইস্পাতের লাইনে টুকটাক শব্দ করে হাঁটছে ওরা। হঠাৎ ই রোহন এর হাত ধরে নিলো মৌনতা। চোখ দুটো জলে টুইটম্বুর। বুকের ভেতর র’ক্তক্ষরণ হচ্ছে খুব। কাঁপা হাতে মেয়েটির চোখ মুছিয়ে দিলো রোহন। হাউ মাউ করে কেঁদে উঠলো মৌনতা। আষ্ঠে পৃষ্টে জড়িয়ে ধরলো প্রিয় মানুষ টি কে। জীবনের প্রথম আলিঙ্গন। অদ্ভুত শিহরণ হলো দেহে। রোহনের বুকের ধুক পুক গুলো আজ শুনে নিলো মৌনতা। এই শব্দ গুলো বলে দেয় মৌনতার প্রতি কতো টা ভালোবাসা জমায়েত তাঁর।

(৩০)

রিসোর্ট এ ফিরেই সকলে বিশ্রাম নিতে ছুটেছে। কোথা থেকে যেন মৌনতা এসে চেচানো শুরু করলো। রিফাত গিয়ে চাপর মারলো মাথায়। তাঁতে কোনো পরিবর্তন নেই মেয়েটির। মনিকা সকলের সামনেই নাচ শুরু করেছে। ইজ্জতের ফালুদা হয়ে যাচ্ছে রিফাতের। মেকি হাসি ঝুলিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালালো।
” বান্দরের মতো লাফাচ্ছিস কেন মনিকা।”

” আরে ভাইয়া, তুমি জানলে তুমি ও লাফাবে। ”

” তো কি এমন জানাবি যে আমি ও লাফাবো। ”

” আরে ধুর ওর কথার পাত্তা দিবি না তো ফারহান। হলপ করে বলা যায় মাথা নষ্ট এটার। ”

” ঐ যাও তো তুমি। কোথাকার কে এসেছেন আমাকে জ্ঞান দিতে। ”

কপালে ভাঁজ মেলে দিয়ে দাঁড়ালো রিফাত। সবাই করিডোরে এসে দাঁড়িয়েছে মনিকার কন্ঠে।বেশ ভাব নিয়ে বলা শুরু করলো।
” রিসোর্টে স্পা এর ব্যবস্থা রয়েছে। থাই, ট্রাডিশনাল, সুইডিশ , স্পোর্টস, সহ আরো অনেক গুলো চয়েজ। আর বিডটি পার্লার সহ মেন’স স্যালুন ও রয়েছে। এই যে রিফাতের মতো বান্দর কার্ট যাদের চুল তাঁদের খুব কাজে লাগবে। ”

” মনিকর বাচ্চা! আজ তোর জলাঞ্জলি দিবো আমি। ”

ভৌ দৌড় দিলো মনিকা। আর ওর পেছনে ছুটলো রিফাত। সবাই এক যোগে হাসা শুরু করেছে। দশটায় মুভি দেখবে সবাই। নয় টায় ডিনার। সেই হিসেবে হাতে ঘন্টা দুয়েক সময় রয়েছে। একটু রিফ্রেস হলে মন্দ হয় না। তাছাড়া সব কিছুর চার্জ তো আগেই নিয়েই নিয়েছে অবহেলা করা মানে টাকা গুলো কে পানি তে ফেলা।

কাল সারারাত ঘুম হয় নি ফারাবির। প্রচন্ড জ্বালিয়েছে ফারহান। হুট হাট করেই মেয়েটির ঘরে এসে নক করা শুরু করেছে। যার ফলে ঝিলের ও ঘুম হয় নি। তবু ও খুব সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠতে হলো ওদের। কি যেন বিশেষ আয়োজন করবে সুইস ভ্যালি তে। সেই কারনে সুইস ভ্যালি তে ঘুরতে যাবে এখনি। নাস্তা করার ফুসরত অব্দি দিলো না। তাঁর আগেই টেনে উঠিয়ে দিলো গাড়ি তে। ঝিমুচ্ছে ঝিল, সব দোষ ই ফারহানের। এতো টাই অবুঝের মতো করেছে যা ভাষায় ব্যক্ত সম্ভব নয়। ঝিলের মাথা টা বুকে টেনে নিলো অভিনব। আরাম পেয়ে বেড়ালের ছানার মতো ঘুমিয়ে রইলো সে। পাশ থেকে সেসব দেখে ইষৎ রাগান্বিত হলো ফারাবি। দাঁতে দাঁত চেপে বলল ” কে বলেছে ঐ মানব কে ড্রাইভ করতে। কাল এতো জ্বালিয়েছে আবার সকাল সকাল টেনে নিয়ে এলো। অভিনব ভাইয়ার মতো করে কেয়ার করলে ও তো পারে। ”

লুকিং গ্লাস দিয়ে ফারাবির মুখ দেখে হেসে কুটি কুটি ফারহান। খুব সহজেই যেন সব টা বুঝে গেল সে। তবে আজ আর যাবে না রাগ অভিমানের পাল্লা মেটাতে। সব কিছু শেষ হবে সন্ধ্যার আয়োজনে।

সুইস ভ্যালি রিসোর্ট এর দূরত্ব সুলতান টি রিসোর্ট এন্ড গলফ থেকে প্রায় ২১ কিলোমিটার। ওদের পৌছাতে চল্লিশ মিনিট লেগে গেল। ঝিলের ঘুম কেটেছে মাত্র। পানি এগিয়ে দিলো ফারহান। মৃদু হেসে ধন্যবাদ জানালো ঝিল। চোখে মুখে পানি দিয়ে সতেজ হলো খানিক টা। ফারাবি নেমে গেছে বহু পূর্বেই। মেয়েটা লাফায় খুব। কিছু টা চাতক পাখির মতো দৃষ্টি দিলো ফারহান। রিফাতের কন্ঠে ধ্যান থেকে ফিরে এলো। সুইস ভ্যালি রিসোর্ট এর রিসেপশনে অদ্ভুত সৌন্দর্য্যে বিদ্যমান। গাছের শিখর দ্বারা সজ্জিত এক মনোরম পরিবেশ যেন প্রকৃতির সকল গুন কে বাহবা দিচ্ছে। সেহেতু এখানে নাইট হোল্ড করা হবে না তাই সকলের জন্য এক টা কটেজ নেওয়া হলো। সবাই ভেতরে গিয়ে ফ্রেস হলো। তারপর ই বেরিয়ে গেল চার পাশ টা ঘুরতে। পুরো রিসোর্ট টা তৈরি গাছ গাছালির ভেতরে। চার পাশে সবুজ গাছে ঘেরাও করা। পাখির গুনগুন আওয়াজ ও শোনা যায়। পুরো রিসোর্ট ঘুরে বলা যায় গ্রামাঞ্চলের আধুনিক ছোঁয়া। শান্ত শিষ্ট পরিবেশ টা ঘুরে সবাই মিলে বসলো নাস্তার টেবিলে। নর্মাল কিছু বেসিক ফুড দিয়ে নাস্তা করলো ওরা। তারপর ই জমায়েত হলো আড্ডার আসরে। সবাই মিলে গান শুরু করলো

বিহুরে লগন মধুরে লগন
আকাশে বাতাসে লাগিল রে
চম্পা ফুটিছে চামিলী ফুটিছে
তার সুবাসে ময়না আমার ভাসিল রে

হলুদ বরন মেঘলা এ তার যৌবন উছলায়
লাল ওড়নার আড়াল দিয়া চক্ষু দুটি চায়
খোপায় টগর ময়না বুঝি আমায় খুঁজে হায়
বসন্তে এ বিহুর লগন উত্তাল হয়ি যায়

গান শেষে কিছু কড়তালি শোনা গেল। আওয়াজ লক্ষ্য করে পেছনে তাকালো সবাই। কিছু মানুষ ভীর করেছে। ভীষন আনন্দিত হলো ফারাবি। এক অনবদ্য আত্মগরিমা এলো তাঁর চোখ মুখে। জীবনে এক বার হলে ও সেলিব্রেটি ফিল পাচ্ছে সে।

লাঞ্চের সময় হয়ে গেছে। তবে পেটে ক্ষুধা নেই একদম। সকলেই হাবি জাবি খেয়ে পেট ভরিয়ে ফেলেছে। তবু ও কষ্ট করে লাঞ্চে বসলো। গত কয়েক দিন ধরে বিদেশী খাবার খেয়ে মুখের স্বাদ বদলে গিয়েছিলো। আজ বাঙালী খাবার খেয়ে তৃপ্তি পেলো সবাই। ভেবেছিলো খাবার মুখেই তুলতে পারবে না তবে ধারনা ভুল প্রমান হয়ে স্বাভাবিক খাবার ই গ্রহন করলো সকলে।
গত দিনেই ঠান্ডা লাগিয়ে ফেলেছে রিমি। সেই কারনে সে আগেই বারন করে দিলো সুইমিং পুলে নামবে না। ফারাবি কিছু টা আন্দাজ করেই ওর কাছে গেল। ফিস ফিস করে বলল
” শুধু কি পানি তে নেমে ঠান্ডা লেগেছে নাকি রাত ভর চোখের জল ফেলে ঠান্ডা লেগেছে? ”

” তেমন কিছুই না রে। ”

” বুঝি আমি। আচ্ছা খুব দ্রুত তোর খরগোশ মার্কা ভাই কে জানাবো আমি। ”

হাসি ফুটলো রিমির অধরে। ফারাবির কাঁধে মাথা রেখে সুইমিং পুলে পা ভেজাতে লাগলো। কেউ ই আর পানি তে নামলো না। সবাই আড্ডা দিলো ইচ্ছে মতো। গ্রামীন ছোঁয়া থাকাতে বেশ ভালো লাগছে।

রিসোর্টে অনেক গুলো দোলনা রয়েছে। দুপুর গড়াতেই সকলে দোলনার কাছে হানা দিলো। তবে সেখানে কতো গুলো মানুষ আগে থেকেই দোল খাচ্ছিলো। মনিকার ভীষণ রাগ হচ্ছে। তাঁর উপর এক টা ছেলে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে ছিলো ওদের দিকে। মুখ বাঁকিয়ে উত্তর করলো
” হাতের নখ গুলো কাঁটা ঠিক হয় নি রে ফারাবি। চার পাশের নোংরা চোখ গুলো গেলে দেওয়ার কাজে লাগতো। ”

” এই মনিকা আপু। কি হলো তোমার? ”

” আরে দেখ ঐ বদমাশ গুলো তাকিয়ে আছে কেমন। ”

” বাদ দাও তো। এই পৃথিবীর যেখানে যাও না কেন এমন মানুষের সান্নিধ্য পেতেই হবে। ”

” হু সেটাই। ”

হতাশা নিয়ে ফিরে এলো কটেজে। খানিক বাদেই এক টা স্টাফ এসে খবর দিলো দোলনা গুলো খালি করে দিয়েছেন তাঁরা। প্রচন্ড খুশি হলো ওরা। এসব কাদের কাজ তা ভালোই বুঝতে পারলো।

শরীর টানছে না যেন। সারা দিন লাফালাফি করে এসেছে। গাড়ি থেকে নামতেই ইচ্ছে করছে না। ঐ দিকে পরিবেশ নিরালা হয়ে আছে। রিসোর্ট টা ও আঁধারে নিমজ্জিত। এমন ভূতুড়ে পরিবেশ হওয়ার কথা না। অজানা ভয়ে আঁতকে উঠলো ঝিল। অভিনবর হাত খামচে বলল
” আমার মনে হচ্ছে এখানে কিছু একটা হচ্ছে। ”

” আমারো ও তাই মনে হচ্ছে। ”

মৌনতার সাথে ফারাবি আর রিমি ও সায় জানালো। সকলের ললাটে চিন্তার রেখা উদয় হয়েছে। কনফিডেন্স নিয়ে ফারহান বলল
” আরে কিছুই হবে না। আসো তো সবাই।”

” আমি যাবো না ভাইয়া। ”

” বসে থাক তাহলে। ”

আঁধারে কিছু টা ভয় রয়েছে রিমির। পারে তো কেঁদেই দেয়। সবাই ফোনের ফ্লাস অন করে ভেতরে প্রবেশ করলো। ফারাবি কে জড়িয়ে আছে রিমি। ফারহানের উপর ভরসা আছে ওর। তাই নির্বিঘ্নে চললো সামনের পথে। আর বার বার আশ্বস্ত করলো রিমি কে। সকলের মাঝ থেকে ও মনিকা চেচানো শুরু করেছে। রিফাত এবার গাট্টা মেরেই দিলো। সাথে সাথেই প্রতিবাদী মনিকা খামচে দিলো হাত। তবে বিন্দু মাত্র অপরাধবোধ নেই ওর। দীর্ঘশ্বাস লুকিয়ে ভেতরে এলো ওরা। সবাই রিসোর্ট এর মেইন ফটকে পা রেখেছে মাত্র তৎক্ষনাৎ পুরো রিসোর্ট আলো তে ভরে উঠলো। উপর থেকে একের পর এক বাজি ফোঁটার আওয়াজ হতে লাগলো। রিসোর্ট টা এমনিতেই সজ্জিত তবে এখন পুরো টাই কাঁচা ফুলে ভরপুর।নানা রঙের ফুলে ফুলের রাজ্যে পরিনত হয়েছে। সুবাসে মুখোরিত পরিবেশে ঝলমল করছে চারটে নামের সাথে শুভ বিবাহ ট্যাগ লাইন।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here