আমি_তোমাতে_বিলীন #পর্ব_২২,২৩ শেষ

0
1330

#আমি_তোমাতে_বিলীন
#পর্ব_২২,২৩ শেষ
#সুমাইয়া মনি
২২

মার্চ মাসের আজ প্রথম দিন। শীতের আভাস কেঁটে গরমের ভাব তিরতির করে বাড়তে আরম্ভ করেছে। কলেজ থেকে মাত্র ফিরেছে তারা। মনি একটি হাত পাখা দ্বারা নিজেকে বাতাস করতে করতে বাহিরের দিকে এগিয়ে যায়। তখনই একজন অচেনা লোকের ওপর নজর পড়ে। তাকে ডেকে জিজ্ঞেস করার পর জানতে পারে তিনি এখানের নতুন পাহারাদার। তিনদিন হলো এ কাজে নিয়োজিত হয়েছে। আর তাকে নিয়োজিত করেছে নিলম। মনি বাক্যবিনিময় শেষ করে ভেতরে আসে। নিলম ড্রইংরুমে বসেছিল।
‘নতুন পাহারাদার ঠিক করতে তোকে জায়ান বলেছে?’
‘না তো! আমি নিজে থেকে করেছি। আগে যে ছিল তার কাজকর্ম আমার ভালোলাগেনি। তাই তাকে বের করে ওনাকে রেখেছি।’
‘এটা জায়ানকে বলিস নি কেন?’
‘নাজমুল ভাইয়া জানে তো।’
‘তাহলে ঠিক আছে।’
‘সে কবে আসবে?’
‘কি জানি।’
‘কথা হয় না?’
‘হয়, কম।’
‘ওহ! না হলেও হ..’
‘কী?’
‘কিছু বলি নি।’
মনি ওপরে চলে যেতে নিলে নিলম হাত ধরে। ঘুরে তাকিয়ে কাঠিন্য কণ্ঠে বলে,
‘হলো কি?’
‘যাস কেন বোস।’
‘সর! গোসলে যাব।’ হাত ছাড়িয়ে চলে গেল মনি।
নিলম ফোন ঘাঁটতে আরম্ভ করে। ভেতরে বসে জায়ান এসব দেখে দাঁতে দাঁত চেপে রাখে। অতিরিক্ত সীমালঙ্ঘন করছে নিলম। কখন কি করে বসে নিজেরও জানা নেই।
.
চারটার দিকে রাতুলের সঙ্গে দেখা করতে আসে নাজমুল। সকালে দেখা করার কথা থাকলে সময়ের অভাবে তা হয়ে উঠে নি। তাই এখন দেখা করতে এসেছে। তাকে একটি কালো রঙের ব্রিফকেস দেয়। সেটা নিয়ে নাজমুল বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। জায়ানের হাতে হস্তান্তর করা হয় ব্রিফকেসটি।
সেটি খোলার পর দেখা যায় দু’টি চকচকে কালো রঙের পিস্তল রাখা। তাদের সেফটির জন্য পিস্তল দু’টি আনা হয়েছে।
_
পরেরদিন সকালে যথাসময়ে ব্রেকফাস্ট করছে তারা। হঠাৎ করে মিনার নজর মনির ঘাড়ের ওপরে যায়। জিজ্ঞেস করে,
‘তোর ঘাড়ে ওটা কিসের দাগ?’
মনি থমথমে গলায় বলল,
‘কোথায়? কোন দিকে?’
‘বাঁ দিকে।’ তমা বলল।
মনি হাত রাখলেও দেখতে তো পারবে না। নিলম ক্ষীণ নজরে মনির ঘাড়ের দিকে তাকাল। সবার দৃষ্টি এখন মনির ওপর।
নাজমুল মৃদু হেসে দেয়। যেন মনে হচ্ছে তার এ বিষয়টিতে অবগত আছেন। মনির তার হাসি দেখে কুর্নিশ করে তাকায়। নাজমুল ঝেড়ে কেশে বলল,
‘সম্ভবত এই দাগ হয় সদ্য বিয়ে হওয়া মেয়েদের। ছেলেদেরও হয়, কিন্তু কম।’
কথাটি শুনে মনি লজ্জায় মুখ নামিয়ে ফেলে। লজ্জা বোধ তাকে ঘিরে ধরেছে। তবে রাগও হচ্ছে। জায়ান বাড়িতে নেই। তাই তার এ কথা বলা বেমানান, অহেতুক। মনি জোর গলায় শুধালো,
‘একদম আজাইরা কথা বলবেন। হয়তো গান্ধিপোকায় কামড় দিয়েছে। যত্তসব!’
নাজমুলের প্রচুর হাসি পাচ্ছে। তবুও সে হাসি থামিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। পরিশেষে হাসি দমিয়ে বলল,
‘হতে পারে। সেরে যাবে।’
মনি স্থির হয়ে খেতে পারছে না। তার দেখা দরকার দাগটি কেমন বা কিসের। সকালে উঠে মাথা আঁচড়েছে ঠিকিই। কিন্তু একবারের জন্যও ঘাড়ের দিকে তার নজর পড়েনি। সবার আগে সে খাবার সেরে উঠে যায়। রুমের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ঘাড়ের দিকে নজর ফেলতেই স্পষ্ট লালচে-ধূসর রঙের দাগ দেখতে পায়। রক্ত জমাট বেঁধে রয়েছে। দাগটি কিছুটা গোলাকারও। কলেজে থাকাকালীন এক ক্লাস মেইট ফারজানার ঘটনা তার মনে পড়ে যায়। বিয়ের পরের দিন ফারজানা যখন কলেকে এসেছিল তার ঘাড়েও ঠিক এমনই দাগ দেখা যায়। সবাই তাকে তখন বিভিন্ন প্রশ্ন করেছে। ফারজানা লজ্জায় তৎক্ষনাৎ কিছু বলতে পারেনি। শুধু বলেছে এটা ভালোবাসার নিশানা। তবে এখন তার ঘাড়ে এমন দাগ হওয়ার কারণ সে বুঝতে পারছে না। জায়ান থাকলে হয়তো বিষয়টি এতটাও গুরুত্ব দিতো না। কিন্তু এখন ব্যাপারটি বেশ গুরুতর। আয়নার দিকে তাকিয়ে সে-ই স্থানে হাত রাখতেই কেঁপে উঠল তার সর্বাঙ্গ। অজানা অনুভূতিতে নাকি, ভয়ে বুঝতে পারছে না।

মনিটরে সব ঘটনা জায়ান দেখছে। মনির এখনকার রিয়াকশনও দেখে বড্ড মায়া লাগছে। ঠোঁটে মৃদু মুচকি হাসি দেখা যায়।
কাল রাতেও সে মনির বেডরুমে গিয়েছিল। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে শুধু ঘাড়ে গাঢ় চুম্বন করেছিল। আগের দিনের মতো মনি কিচ্ছু টের পায়নি। তবে সে বুঝতে পারেনি দাগ হয়ে যাবে। তদর মতে একদিক থেকে ভালোই হয়েছে। এটা তার ভালোবাসার প্রথম নিশানা হয়ে রয়ে যাক। ফোন হাতে নিয়ে কল দিলো মনিকে। জায়ানের কল পেয়ে ফোন রিসিভ করল মনি,
‘জি।’
‘কি করছো?’
‘কিছু না।’
‘খেয়েছো?’
‘হুম, আপনি?’
‘খেলাম।’
‘আম্মু-আব্বু ভালো আছে?’
‘হ্যাঁ! ভালো আছে।’
‘আপনি আসবেন কবে?’ দ্বিধাবোধ নিয়ে প্রশ্ন করল মনি।
‘বেশি মিস করছো? এখন বলবে তেমন কিছু না। কাছে থাকলে ইনগোর করো। দূরে থাকাটাই ভালো না?’
নিরুত্তর থেকে যায় মনি। কীভাবে বোঝাবে তাকে সে নিজেও ভয়ংকর ভাবে মিস করে মাঝেমধ্যে। যাকে সে জমের মতো ভয় পেতো, ঘৃণাভরে ছিল মনের কোঠরে। এখন তাকে ভয়াবহ ভাবে মিস করে সে। তবে কি এটা প্রণয়ের সূচনা?
‘ভাবছো কী?’
‘নাহ!’
‘কিছু না?’
‘হুম।’
‘মেবি কিছু বলতে চাইছো তুমি, রাইট?’
মনির মনে অদম্য বার্তাটি বুঝতে পেরেছে জায়ান। এটা মনে করে মনি অস্বস্তি বোধ করে। তবে সে চুপ থাকে না। অকপটে কোমলভাবে বলল,
‘কাল রাতে কি…নাহ! এটা হতেই পারে না।’
‘কাল রাতে, হতে পারে না, এসব কি বলছো? যা বলতে চাও সরাসরি করে বলো।’ শান্ত রূপ ছেড়ে জোর গলায় বলল।
মনি আমতা আমতা কেটে বলে,
‘আসলে আমি বলতে চাইছি যে,,, কিছু না।’ বলেই ফোন কেটে গাল ঢেকে নেয় দু হাত দিয়ে। লজ্জাবনতা জড়িয়ে আছে তার চোখেমুখে। জায়ান এবার ফিক করে হেসে দেয়। মনির আদল এখন দেখার মতো। এমন ভাবে লজ্জায় মুড়িয়ে আছে, যেন কোনো লজ্জাবতী গোটা গাছ সে নিজেই। ছোঁয়ামাত্র সংকুচিত হয়ে গেছে গাছের মতো।
_
তিনটা ক্লাস শেষ করে এক সঙ্গে বের হয় তারা। পাশের একটি আইসক্রিমের দোকানের উদ্দেশ্যে হাঁটতে লাগলো । চেয়ারে বসলে সবাই নিলম আইসক্রিম কিনে নিয়ে আসে। নিলম আইসক্রিম সহ আলাদাভাবে বসে। ফোনে মাহিদের সঙ্গে কথা বলবে তাই। ক্লাসে থাকাকালীন কয়েকবার কল দিয়েছিল।
‘কোথায় তুই?’
‘পিছনে তাকা।’
নিলম কৌশলে পিছনে তাকিয়ে দেখে। মাহিদ ঠিক পিছনের টেবিলে বসে আছে। মুখে তার মাস্ক, মাথায় ক্যাপ। স্বাভাবিক হয়ে বসে বলল,
‘এখানে কেন তুই?’
‘তোর কাছে এসেছি।’
‘আমার? আগে বলিস নি কেন কল দিয়ে?’
‘কিছুক্ষণ আগেই সব জানতে পেরেছি। তোকে কল দিয়েছিলাম ধরিস নি।’
‘ক্লাসে ছিলাম। কি বলবি বল।’
‘আব..’ বাকিটা নিলম শুনতে পারে না। মনি তার আগেই নিলমের হাত ধরে টেনে দাঁড় করিয়ে বিনয়ী স্বরে বলে,
‘পাশের এড়িয়ায় মেলা হচ্ছে। চল না যাই।’
‘মোটেও না। জায়ান শুনলে রেগে যাবে।’
‘শুনবে না। দেখবেও না। তুই চল।’ বলে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো।
‘না বললাম তো।’
‘এমন করছিস কেন চল না নিলম।’ তারানা বলল।
চার বান্ধবীর জোরাজোরিতে নিলমের বাধ্য হয়ে যেতে হয়। মাহিদের কথা শেষ অব্ধি শুনতে পারে না। গাড়ি নিয়ে সোজা মেলাতে এসে থামে। আগে আগে নেমে মেলার ভেতরে প্রবেশ করে। নিলম গাড়ির কাছে দাঁড়িয়ে মাহিদকে কল দেয়। গাড়িতে থাকাকালীন কয়েকবার কল দিয়েছিল। সে পীক করেনি। মাহিদ কল রিসিভ করার সঙ্গে সঙ্গে উত্তেজিত কণ্ঠে বলল,
‘মনিকে বাঁচা নিলম। আব্বুর লোক ওঁকে মেরে ফেলবে…’
বাক্যটি শেষ করার পূর্বেই লোকালয় জনসমাগমের মধ্যেই মনির পেটে ছুঁটি দিয়ে একটি মাস্ক পরিধান লোক আঘাত করে। আকস্মিক ঘটনা তিন বান্ধবীর দৃশ্যমান হতেই চিৎকার দিয়ে উঠে। লোকটি পেট থেকে ছুঁটি বের করে পালিয়ে যেতে নেয়। আশেপাশের মানুষজন ছুঁটতে আরম্ভ করেছে। একপ্রকার হৈ-হুল্লোড় পড়ে যায়। মনির ঢলে পড়ার আগেই ওরা ধরে ফেলে। গলগলিয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে মনির পেট থেকে। কাঁদতে শুরু করেছে তারা। নিলম ছুঁটে এসেও মনিকে শেষ রক্ষা করতে পারেনি। তবে সে দমে যায়নি। দ্রুত পাজরা কোলে নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। তীব্র যন্ত্রণা নিয়ে উত্তেজিত হয়ে মনির পানে বার বার তাকিয়ে দ্রুত বেগে গাড়ি চালাচ্ছে নিলম। চোখের পানিতে চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে তার। মনির নিগ্রহ জড়িত মুখশ্রী লাল হয়ে আছে। মুখ থেকে আওয়াজ না বেরোলেও আঁখিযুগল তার ভিজে আছে। যেন তার আজই শেষ আয়ু! চোখ তার ক্রমশে বুঁজে আসছে। সকলের কথা মনে পড়ে। পরিশেষে জায়ানের কথা মনে ভাবে। পৃষ্ঠা আঁকারে প্রথম দেখা থেকে শেষ অব্ধি চোখের সামনে ভাসন্তর তার। জায়ানের একটি বাক্য প্রখরভাবে মনে পড়ে যায় ‘তোমাতে বিলীন’।
.
.
#চলবে?

#আমি_তোমাতে_বিলীন
#পর্ব_২৩ (অন্তিম পর্ব)
#সুমাইয়া মনি

ওটির সামনে নিলম সহ বাকিরা দাঁড়িয়ে আছে। ভেতরে মনির অপারেশনের ব্যবস্থা চলছে। চোখেমুখে এক রাশ বিষাদময় ছাপ দেখা যাচ্ছে তাদের। খবরটি শোনা মাত্রই মনির বাবা-মা চলে এসেছে। জাহানারা বেগম পাগলের মতো কান্না করছেন। সান্ত্বনা দিতে গিয়ে মোফাজ্জল হোসেন নিজেও ডুকরে কেঁদে দিচ্ছে। বোনের জন্য মিদুলের আঁখিযুগল বেয়ে পানি ঝড়ছে। জায়ানের বাবা-মা রাজশাহী থেকে রওয়ানা হয়েছে ঢাকার উদ্দেশ্যে। মোফাজ্জল হোসেনকে কয়েকবার কল দিয়ে মাজিন এহসান মনির খবরা-খবর জানতে চাইছেন। এতকিছুর মধ্যে শুধু জায়ান লাপাত্তা ছিল। মনির এত বড়ো খবর জানা শর্তেও তাকে হাসপাতালে দেখা যায়নি। মোফাজ্জল হোসেন জায়ানকে কল দিয়েছিল। অনবরত ফোন বাজা শর্তেও ফোন রিসিভ করেনি জায়ান। পঞ্চম বার কল দেওয়ার জন্য উদ্যোত হতেই জায়ান ঝড়ের বেগে উপস্থিত হয়। থাইগ্লাসের নিকট এসে উঁকি দিয়ে মনির নিস্তেজ দেহখানা দেখে চোখ জোড়া ভয়ংকর ভাবে বন্ধ করে ফেলে। দু’হাত মুঠোবন্দি করে নিলো। এত সিকিউরিটি দেওয়ার পরও মনি আজ মৃত্যুশয্যায়! বিষয়টি ভাবা মাত্রই মাথার রগ ফুলে উঠে তার। নিলম অপরাধী বোধ নিয়ে এক কোণায় দাঁড়িয়ে ছিল। তেড়েফুঁড়ে জায়ান সেদিকে গিয়ে শার্টের কলার চেপে ধরে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
‘ভালোবাসার মানুষটিকে প্রটেক্ট করতে পারিস না, কেমন প্রেমিক তুই?’
এরূপ বাক্য সকলের কর্ণপাত হতেই আশ্চর্যসূচক দৃষ্টিতে তাকায় তাদের দিকে। নিলমের নিজেরও রাগ হচ্ছে প্রচণ্ডভাবে। নিলম সেই অবস্থায় ক্রোধ কণ্ঠে বলল,
‘যে মানুষটি নিজের ওয়াইফকে মারতে ট্রাক ভাড়া করতে পারে, তার মুখে এসব কথা বেমানান।’ জায়ান কিছুটা দমে গেলেও কলার ছাড়ে না। এক হাত দিয়ে কলার চেপে ধরে টানতে টানতে বাহিরে নিয়ে আসে। গাড়ির দরজা খুলে এক প্রকার ধাক্কা দিয়ে ভেতরে পাঠায় নিলমকে। নিজে ড্রাইভ করে বাড়ির উদ্দেশ্যে গাড়ি ছুঁটায়। নিলম সব কিছুর জন্য নিজেকে আগে থেকেই প্রস্তুত রেখেছে। মনিকে চাপা দিতে আসা সেদিনের ট্রাক ব্রীজ অতিক্রম করলেও, পাশের বড়ো সিগনাল অতিক্রম করার সময় সিসি ক্যামেরায় ট্রাকটির নাম্বার রেকর্ড হয়ে যায়। যার দরুণ নিলম খুব সহজেই ট্রাকের নাম্বার পেয়ে যায়। ট্রাকচালকে ঘনপিটানি দেওয়ার পর সে স্বীকারোক্তি দেয়। জায়ানের কথা জানতে পেরেও নিলম চুপ ছিল। শুধু বড়ো কোনো সময়ের অপেক্ষা করেছে। আজ সেই সময় এসেছে।
বাড়ির সামনে গাড়ি দাঁড় করিয়ে নিলমকে সঙ্গে নিয়ে ভেতরে আসে জায়ান। ড্রইংরুমে আগে থেকেই মাহিদ উপস্থিত ছিল। ভার্সিটি থেকেই তাকে ধরে আনে জায়ানের লোক। শুধু তাকে নয়। মনিকে ছু/রি দিয়ে আঘাত করা ব্যক্তিকে পুলিশের লোক দিয়ে ইনকাউন্টার করার নির্দেশ দেয় জায়ান। তাকে মে/রে ফেলা হয়। নিলম মাহিদকে দেখে অবাক হয় না। না জায়ানকে সে এখন ভয় পাচ্ছে। তার নিজের মধ্যেই প্রচণ্ড রাগ জমে আছে। কিছু সময় পর পরই সেখানে আগমন হয় মনির বাবা সহ ওর বন্ধুদের। তাদের নাজমুল এখানে নিয়ে এসেছে জায়ানের আদেশে। জাহানারা বেগমকে হাসপাতালে মনির কাছে রেখে আসা হয়েছে। মোফাজ্জল হোসেন সহ বাকিরা নির্বাক হয়ে চেয়ে রয়েছে। তাদের মনে প্রশ্নের জটিলতা গুলো ক্রমশে বৃদ্ধি পাচ্ছে। মোফাজ্জল হোসেন কিছুটা গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,
‘আমাকে সব খুলে বলো জায়ান। সব রহস্যের উন্মোচন করো এক্ষুনি!’
জায়ান তেজি কণ্ঠে শুধালো,
‘আমি সেদিন মনিকে মারার জন্য ট্রাক পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু মূল কারণ ছিল নিলম ও মাহিদ। আমি তোদের বন্ধুত্বের কথা জানতে পারি। এটাও জানতে পারি মনিকে তুই ভালোবাসিস।’ লাস্টের অংশটুকু নিলমের দিকে রক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে শেষ করল।
নিলমের বন্ধুরা দ্বিধান্বিত চোখে নিলমের পানে তাকায়। এতদিনের মনিকা নামের মেয়েটিকে নিয়ে সবটা নাটক তা এখন তারা বুঝতে পারে। তাদের সন্দেহ আজ জায়ান খোলাসা করল।
নিলম জায়ানকে বলার সুযোগ না দিয়ে বলল,
‘আমি মনিকে আগে থেকেই ভালোবাসি। সেদিন রিসোর্টে আমি ওঁকে বিয়ের প্রপোজাল দিতাম। কিন্তু…’
‘আমাদের জুটি ওপরওয়ালা লিখেছে। পরিবর্তন করার হাত কারো নেই।’
‘মিথ্যে! আপনি কেঁড়ো নিয়েছেন মনিকে।’ চেঁচিয়ে বলল।
‘এই জন্য আমাকে প্রতিনিয়ত মারতে চেয়েছিস, নিজের বন্ধু মাহিদের সাথে মিলে।’
‘হ্যাঁ!’ চিৎকার করে বলল নিলম।
জায়ান শুনে তাচ্ছিল্য হাসে। বলে,
‘ট্রাক পাঠানোটা ছিল বিছানো জাল মাত্র, তার মধ্যে তুই পা দিয়ে ফেঁসে গিয়েছিস।’
নিলম রাগে ফুঁসছে। প্রশ্নসূচক দৃষ্টি ফেলতেই জায়ান তীব্র ক্ষোভ নিয়ে নিজ থেকে বলল,
‘মাহিদ ঢাকা এসেছে আমি জানতাম। তুই মনিকে ভালোবাসিস এই বিষয়টি নিয়ে আমি কনফিউজড ছিলাম। প্রথমে মনিকে মারার নাটক সাজালাম। যাতে তুই ট্রাকের বিষয় খোঁজখবর নিস। দ্বিতীয় আমার বাড়িতে তুই সহ তোর বন্ধুদের আমার অবর্তমানে থাকতে বলি। আমার কথা ট্রাকচালকের কাছ থেকে জেনেও যখন চুপ ছিলি তখনই আমি তোদের নেক্সট প্লানের সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারি। মাহিদ তোর বাড়িতে ছিল সেটা আমি তার পরেদিনই জানতে পারি নাজমুলের মাধ্যমে। আমার লোককে সরিয়ে তুই তোর নিজের লোক পাহারাদার হিসাবে রেখে দিস। তোর তো এটাও জানা ছিল আমি ঐ সিক্রেট রুমে ছিলাম এত ক’দিন।’
নিলম নিরুত্তরে ক্ষোভিত চোখে তাকায়। তার নিরবতায় বলে দিচ্ছে সে এই বিষয়টি জানতো। তবুও চুপ ছিল।
‘খাবাবের সঙ্গে পৈশন মিশিয়ে আমাকে মারার প্লানিং টা ভালোই ছিল। কিন্তু মিস হয়ে গেল।’ আফসোস স্বরে তাচ্ছিল্য করে বলল জায়ান।
নিলম অবাক হলেও বুঝতে পারে এটা কোনোকিছুর মাধ্যমে জানতে পেরেছে। সবার অবস্থা স্তব্ধ হয়ে গেছে। কেউ কোনো কূলকিনারা খুঁজে পাচ্ছে না। অন্ধকার হাতড়ে পাড় খোঁজার অবলম্বন মতো অবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বান্ধবী’রা কুর্নিশ চোখে নিলমের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। মোফাজ্জল হোসেন তেড়ে এসে নিলমের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুঁড়তে নিলেই জায়ান তাকে থামিয়ে বলে,
‘আব্বু, আমার কথা এখনো শেষ হয়নি।’ তারপর মাহিদের দিকে তাকায়। তীব্র রাখে গম্ভীর হয়ে গেছে জায়ান। তিনি নাজমুলের দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় কিছু একটা বোঝায়। নাজমুল পাশের রুমটির দিকে এগিয়ে যায়। সেকেন্ড কয়েক পর হুইলচেয়ারে বসা অবস্থায় রজত আলিকে নিয়ে উপস্থিত হয়। তাকে দেখে মাহিদ হুমড়ি খেয়ে এগিয়ে আসে। হাঁটু গেড়ে বসে উত্তেজিত হয়ে সর্বাঙ্গে হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করে,
‘আব্বু তোমার কি হয়েছে? তুমি এভাবে বসে আছো কেন? কথা বলো আব্বু।’
‘বলবে না। তার শরীর প্যারালাইজড জড়িত ইনজেকশন পুশ করা হয়েছে। তিনি সব কথা শুনতে পারবে, কিন্তু কোনো উত্তর দিতে পারবে না। আগামী এক বছর সে এভাবেই থাকবে।’ নাজমুল গুরুগম্ভীর কণ্ঠে শুধালো। তীব্র ক্রোধে নাজমুলের কলার চেপে ধরার আগেই সে হাত সরিয়ে নাক বরাবর ঘুষি দেয়। মাহিদ মুখ থুবড়ে ফ্লোরে পড়ে যায়। নিলম এগিয়ে আসতে নিলে লোকরা বাঁধা সৃষ্টি করে। নাজমুল মাহিদের নিকট এগিয়ে যাওয়া ধরলেই জায়ান ‘স্টপ’ উচ্চারণ করলে থেমে যায়। আকস্মিকভাবে এমন ঘটনা দেখে বাকরুদ্ধ সবাই! জায়ান চোখেমুখে এক রাশ জেদ নিয়ে বলল,
‘কী শত্রুতা আমাদের মধ্যখানে? কেন এত প্রতিদ্বন্দ্বী? আব্বু চাইছে সুষ্ঠু একটা সমাজ গড়তে। যেখানে অপরাধীর কোনো আস্তানা থাকবে না। নিরীহ, গরীব মানুষদের পাশে দাঁড়ানোই আমাদের মতো উচ্চবিত্ত লোকদের কর্তব্য, সেখানে অন্যায়ভাবে জোরপূর্বক তাদের কাছ থেকে ঘরবাড়ি, টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছে।’ জায়ান সেকেন্ড সময় চুপ থেকে পুনোরায় বলল,
‘রজত আঙ্কেল চাইছে সমাজকে রসাতলের দিকে এগিয়ে দিতে। এমপি হয়ে তিনি অসহায় মানুষের পাশ কাটিয়ে অবৈধ কাজকে সম্মোধন করছে। তার ও আব্বুর চিন্তাভাবনা একমদই ভিন্ন। এই জন্যই কি তাদের মধ্যে শত্রুতা তৈরী হয়েছে। এখন পর্যন্ত আব্বু এবং আমার উপর অনেক বার আক্রমণ হয়েছে, আমরা প্রতিবাদ করিনি। কিন্তু এবার আর ছেড়ে দিবো না। সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে আকাশ ছুঁয়েছে।’
জায়ানের পুরো বাক্য শেষ হবার পরপরই পুলিশ ফোস হাজির হয়। মাহিদ অপরাধসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ফ্লোরের দিকে। এতদিনে তার বাবা তাকে ভুল পথটি দেখিয়েছে। যে পথ অবলম্বন করে সে আজ এত দূরে এসেছে। তার কৃতকর্মের জন্য অনুতাপ সে। নিলম নিজেও এখন অনুশোচনায় পড়ে যায়। মনস্তাপ জড়িত তার হৃদয় ক্ষমাপ্রার্থনা করছে! মনিকে পাওয়ার লোভে সে অন্যায় পথে পা বাড়িয়েছিল। তার ভুল ধারণা পাল্টে গেছে আজ। সে এতদিন জায়ানকে একজন নিষ্ঠুর, অহংকারী লোক হিসাবে গন্য করেছে। যার বাবা এত সৎবান, আদর্শ লোক, নিঃসন্দেহে তার ছেলের মধ্যেও সততার প্রভাব রয়েছে। আজ সে এটা বুঝতে পেরেছে। পুলিশ মাহিদের হাতে হ্যান্ডকাপ পড়ায়। জায়ান রজত আলির পায়ের কাছে বসে মুখের দিকে তাকালেন। তার চোখেমুখে উগ্রভাব দেখতে পাচ্ছে জায়ান।
স্থিরচিত্র নজরে রাগী রাগী ভাব ফুটে রয়েছে। জায়ান গম্ভীর ক্রোধ ভাব ছেড়ে শান্ত গলায় বলল,
‘আই এম স্যরি আঙ্কেল! আপনি আমার আব্বুর সমতুল্য। রাগের বশে আমি আপনাকে এই পৈশন দিয়েছি। প্রিয় মানুষটির কিছু হলে নিজেকে ঠিক রাখা বড্ড দায় হয়ে যায়। আঙ্কেল আমিও চাই, আপনি এমপি হবার আগে একজন সৎ চরিত্রবান, আদর্শ মানুষ হন। অন্যায়ের সঙ্গে নয় আপস নয়, বিরুদ্ধে লড়াই করুন। আপনি আমার গুরুজন। বড়দের যথেষ্ট রেসপেক্ট করি। আমি কথা দিচ্ছি, আপনি যখন সুস্থ হয়ে ফিরবেন। আমি আপনার এমপি হবার স্বপ্ন পুনোরায় পূরণ করব।’ লাস্টের বাক্যটুকু সম্পূর্ণ করে রজত আলির হাতে হাত রাখলো জায়ান। এক মুহূর্তে রজত আলির গর্ব করতে ইচ্ছে করছে তার নিকটে অবস্থিত দামাল যুবকটিকে নিয়ে।
কথাগুলো অল্পসংখ্যক হলেও রজত আলির মন ছুঁতে সক্ষম হয়েছে। জায়ান ওঠে দাঁড়ায়। মাহিদের কাছাকাছি দাঁড়িয়ে পকেটে এক হাত গুঁজে বলল,
‘আমাকে খু*ন করতে এসেছিলি। ব্যাপার না! তবে তুই মনির কোনো ক্ষতি করিসনি তাই আমি তোকে যেতে দিলাম।’
মাহিদ অনুশোচনায় দৃষ্টি সরিয়ে নেয়। পুলিশ মাহিদ ও রজত আলিকে সঙ্গে নিয়ে চলে যান। নিলম স্থির হয়ে মাথা নত রেখে দাঁড়িয়ে আছে। তারানা, তমা, মিনা নিলমের নিকট এগিয়ে আসে। শত হলেও তাদের বন্ধু। হয়তো ভুল করে ফেলেছে। তবে বন্ধুত্ব ঠিকঠাক ভাবে পালন করেছে সে। মোফাজ্জল হোসেন মেয়ের জামাইয়ের উপর গর্বিত! তিনি সঠিক পাত্রের হাতে মেয়েকে তুলে দিয়েছেন। যার একদিকে রাজনীতি, আরেকদিকে সঠিকভাবে পরিবার সামলানোর দায়িত্ব বোধ রয়েছে।
জায়ান চলে যাওয়া ধরলে নিলমের বলা বাক্য শুনে থেমে যায়।
‘স্যরি জায়ান ভাইয়া। ভালোবাসায় আমি অন্ধকারে পথে অগ্রসর হয়েছি। মনিকে পাওয়ার লোভে দিকবিদিকশুন্য হয়ে পড়েছিলাম। আমার ভুলগুলো ক্ষমা করে দিবেন।’
মিনিট পাঁচেক পর জায়ান মুখ খুলে,
‘ইট’স ওকে! আশা করি এখন থেকে তুমি তোমার বন্ধুত্ব সঠিকভাবে পালন করবে।’
‘অবশ্যই!’ ছোট করে জবাব দেয় নিলম।
আলতোভাবে মাথা নাড়িয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে জায়ান গাড়িতে উঠে বসল। আপাতত মনিকে ছাড়া আর কিচ্ছু মাথায় আসছে না। এক ঝলক দেখা মনির অচঞ্চল সর্বাঙ্গ এখনো চোখের সামনে ভাসছে। বেশ দ্রুত বেগে গাড়ি ছুঁটিয়ে বিশ মিনিটের রাস্তা দশ মিনিটে অতিক্রম করে। তখন মনির অপারেশন শেষ হয়েছে। তাকে বেডে দেওয়া হয়েছে। ছুরি বেশি গভীরে লাগেনি। তাই এই যাত্রায় মনি বেঁচে গেছে।
মনির মা বেডের পাশে বসে রয়েছে। চোখে তার এখনো পানি লেপ্টে আছে। মনির অচেতন। হাতে ক্যানেলার লাগান।
জায়ান ভেতরে প্রবেশ করতেই মনির আম্মু বাহিরে বেরিয়ে গেলো।

মনির ক্যানেলা লাগান হাত আলতোভাবে তার আঙুলের বাজে নিলো জায়ান। একটু ঝু্ঁকে কাছে এগোতেই ঘন-ঘন নিশ্বাসগুলো স্পষ্ট অনুভব করছে। মনির মুখটা দেখে খুব মায়া লাগছে। এই মায়ার কোনো ব্যাখ্যা নেই। দেখলেই মনেহয় একটু ছুঁয়ে দেই, একটু আলতোভাবে আদর করি। একটু কাছে টেনে তাকে উষ্ণতার চাদরে ঢেকে দেই। ওই মুখটায় যেন বিশেষ কিছু আছে। চুলের ফাঁকে আঙ্গুল গুঁজে মাথাটা বুলিয়ে দিলো জায়ান। মনির তন্দ্রার ঘোরটা আস্তেধীরে পাতলা হতে লাগল। নিভু নিভু চোখে জায়ানের দিকে তাকালো। মনি যেন জায়ানকে দেখে আদুরে হয়ে পড়লো। আঁখিযুগল তার ভিজে এলো। কম্পিত ঠোঁট জোড়া নড়েচড়ে বলার জন্য উদ্যত হতেই জায়ান ওষ্ঠদ্বয় আলতোভাবে মিলিয়ে দেয়। ভেজা চোখজোড়া অতি সন্তর্পণে বুঁজে আসে তার। সুখের সাগরে যেন ভেসে যাচ্ছে সে। জায়ান সরে যাওয়ার পূর্বে মনির কপালে চুমু এঁকে দেয়। হাতের ভাজে আঙুল রাখা অবস্থায় জায়ান কোমল স্বরে বলল,
‘এখন তোমার কেমন লাগছে?’
মনি নরম স্বরে বলল,
‘ভালো!’
মনির হাত গালের সঙ্গে মিশিয়ে নিয়ে আর্দ্র কণ্ঠে বলল,
‘আমি ভেবেছিলাম তোমাকে এই বুঝি হারিয়ে ফেলবো। তবে আমার বিশ্বাস ছিল তোমাকে ফিরে পাওয়ার। তুমি না থাকলে আমার জীবনে ঘুটঘুটে অন্ধকার নেমে আসতো। যেদিন থেকে তুমি এলে, আমি সবকিছু দু’হাতে সাজিয়ে-গুছিয়ে নিতে শুরু করলাম। রগচটা, গম্ভীর ছেলেটি হাসতে শিখে গেছে। তোমার দুষ্টুমি গুলোতে আমি ক্রোধ দেখাতাম ঠিকিই, কিন্তু মনে মনে আমি খুশি হতাম। ওয়েট করতাম কখন তুমি নতুন কোনো দুষ্টু ফন্দি আঁটবে। কখনই বা আমি তোমার কাছে যাওয়ার সুযোগ পাব। মনি আমি তোমাকে ছাড়া অপূর্ণ! পূর্ণতা পাবে তখন, যখন আমি তোমার ভালোবাসা পাবো। পরিপূর্ণ ভাবে আমি তোমাকে ভালোবাসতে পারব।’
মনি ফুপিয়ে উঠলো। চোখের পাপড়ি ভিজে স্রোতের মতো দু’প্রান্ত দিয়ে ঝরছে। জায়ানর ভালোবাসা প্রকাশের ধরণে শোকাবেগ করে তুলেছে তাকে। গলা দিয়ে স্বর বেরুচ্ছে না, তবুও আঁটকে আঁটকে বহু চেষ্টায় বললো,
‘আমি সেই রগচটা, গম্ভীর লোকটাকে ভালোবেসে ফেলেছি। তার অবর্তমানে তাকে খুব মিস করেছি। তাকে কাছে পাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা আমায় ক্রমশে ব্যাকুল করে তুলেছে। আমি আপনাকে ঠিক ততটাই ভালোবাসি, যতটা আপনি আমাকে ভালোবাসেন।’
জায়ানের ঠোঁটে প্রশান্তি হাসি ফুটে উঠে। মনির হাতের উল্টোপিঠে চুমু খেয়ে চোখের পানি মুছিয়ে দেয়। দুষ্টুমির ছলে বলে,
‘তাড়াতাড়ি সুস্থ হও। এখনো অনেক কাজ বাকি আমাদের।’
মনি ভ্রুকুটি কিঞ্চিৎ বাঁকিয়ে বলল,
‘যেমন?’
জায়ান উঠে দাঁড়িয়ে বালিশের দু’পাশে হাত রেখে মনির মুখোমুখি আদল নিয়ে মুচকি হেসে বলল,
‘তোমাতে বিলীন হওয়া বাকি জানেমান।’
স্মিত হেসে লজ্জায় মনি নজর সরিয়ে নিলো। জায়ান মুখে মুচকি হাসি রেখে এগিয়ে নেয় মুখ।
পুনোরায় দুই জোড়া ওষ্ঠদ্বয় মিলিত হলো। দু’জনের প্রতি দু’জনের আছে অফুরন্ত ভালবাসা। পৃথিবীতে এমন জায়ান-মনি জুটি সুখে থাকুন, ভালো থাকুন চিরকাল।

(সমাপ্ত)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here