আমার_একলা_আকাশ_তোমায়_জুড়ে-১০,১১

0
532

#আমার_একলা_আকাশ_তোমায়_জুড়ে-১০,১১

#১০ম_পর্ব

অন্না অবাক নয়নে দেখতে লাগলো অর্জুনকে। অর্জুনদার চোখে মুখে চিন্তার গাঢ় ছাপ, এই চিন্তাটুকু কেবল ই অন্নার জন্য। অবাকের মাত্রা তখন আরোও গাঢ় হলো যখন সকলকে অবাক করে অন্নাকে কোলে তুলে নিলো অর্জুন। অন্না বিমূঢ় দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো শ্যাম মুখশ্রীর দিকে। মস্তিষ্ক কাজ করছে না, সম্পূর্ণরুপে যেনো নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে। হৃদস্পন্দনের গতি বাড়লো নিমিষেই। ভেতরে এক অদ্ভুত শিহরণ হচ্ছে। অনুভূতিখানা লজ্জার রুপ নিলো যখন কয়েকজোড়া চোখ তাদের দিকে হতবিহ্বল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। সকলের মুখে বিস্ময়ের ছাপ। শুধু রবিন ভাই এবং কৃষ্ণা ঠোঁট চেপে হাসছে। বাকিদের মুখে হাসি নেই, শুধু বিস্ময় এবং কৌতুহল। পরিস্থিতি ধাতস্থ হতেই অন্নার গালে র’ক্ত জমলো, সারা দেহে লজ্জা ভর করলো। কিন্তু এতে অর্জুনের খুব একটা ভ্রুক্ষেপ হলো না। সকলের চাতক দৃষ্টি উপেক্ষা করে সে অন্নাকে বসালো একটি কাঠের বেঞ্চে। বা পাটা হাতে নিয়ে বললো,
“ব্যাথা করছে এখনো?”

অন্না কথা বলতে পারছে না। কথাগুলো যেনো গলার কাছে এসে দলা পাকিয়েছে। সকলের দৃষ্টিকে না দেখার ভান করে কোনোমতে বললো,
“একটু”
“আ’বু’দ্দা তুই? কোথায় মন ছিলো? আর শাড়ি পড়ে ধেই ধেই করার কি ছিলো? জামা পালটে আসতে পারলি না? এখন হলো তো? এখন আর নাচাই লাগবে না”

অর্জুন বিনাক্লান্তিতে বকাঝকা করেই যাচ্ছে অন্নাকে। অথচ তার হাত অন্নার পায়ে। ধীরে ধীরে আলতো হাতে ব্যাথা প্রশমনের জন্য টিপে দিচ্ছে। আবার মাঝে মাঝে শুধাচ্ছে,
“এখানে ব্যাথা করছে? কমেছে একটুও? ডাক্তারের কাছে যাবি? তোর গ’বে’ট দাদাটা কোন মুল্লুকে গেছে?”

অর্জুনের অস্থিরতা সবাই নির্বাক দর্শক হয়ে দেখছে। কিছু বলার সাহস হচ্ছে না। অন্নার মুখখানা রক্তিম হয়ে যাচ্ছে। সে মাথানত করেই বসে রয়েছে। লজ্জায় মুখ ও তুলতে পারছে না। এদিকে যুবসমাজে চোখাচোখি হচ্ছে, সামান্য কানাগোসাও হচ্ছে। বিদ্যুৎ ধীর কন্ঠে রবিন ভাইয়ের কানে কানে বললো,
“কি বুঝছো?”
“বুঝার কি আছে! যা হচ্ছে সব জলের মতো পরিষ্কার। দেবদাস অর্জুন ভায়া প্রেয়সীর ব্যাথায় কাতর হয়ে যাচ্ছে!”
“তবুও মুখে স্বীকার যায় না”
“এটাই তো মজা, মুখে না, অন্তরে হ্যা”

বলেই মুখ চেপে হাসলো তারা। হাসি থেমে গেলো দেবব্রতের আগমনে। বরফ নিয়ে এসেছে সে। সে আসতেই অর্জুন রাগান্বিত কন্ঠে বললো,
“বরফ আনতে কি হিমালয় গিয়েছিলি? এতো দেরি হলো কেনো?”
“ভাবটা এমন দিচ্ছিস যেনো বাপের বরফকল আছে, যাবো আর নিয়ে আসবো। এই ঠান্ডা আবহাওয়ায় বরফ পাওয়া কি এতো সহজ?”
“অফ যা, এতো কথা বলিস কেনো? আগে বরফ দে”

দেবব্রত কথা বাড়ালো না। অর্জুন তার হাত থেকে বরফ এবং কাপড়টা নিয়ে অন্নার পায়ে আলতো করে দিতে লাগলো। বরফ লাগতেই ব্যাথা যেনো বাড়লো, চোখ মুখ খিঁচে তা সহ্য করলো অন্না। অর্জুন তখন নরম গলায় বললো,
“একটু লাগবে, ঠিক হয়ে যাবে”

অন্নাও মাথা কাত করে তার কথাটা মেনে নিলো। তখন রবিন ভাই বলে উঠলেন,
“রহিম চাচাকে একবার দেখালে হয় না? উনি ভালো হাড়ের ডাক্তার। আল্লাহ না করুক, হাড় ভেঙ্গে টেঙ্গে গেলে? আমার চাচাতো ভাই দিলশাদের এমন হয়েছিলো। একটা সিড়ি মিস করে পড়ে গিয়েছিলো। প্রথমে টের পায় নি, পড়ে দেখা গেলো হাড়ে ফাটল ধরেছে। চান্স নেবার কি দরকার?”

রবিনের কথা শেষ হতেই অর্জুন বলে উঠলো,
“না না চান্স নেবার দরকার নেই। এমনেই মাথায় বুদ্ধির অভাব, পরে হাটতে না পারলে আরেক বিপদ হবে। ফেলু অন্না থেকে খোঁড়া অন্না হয়ে যাব। না, না, চান্স নেওয়া যাবে না।”

অর্জুনের কথায় দেবব্রত ও সায় দিলো। অন্না কিছুসময় হা করে তাকিয়ে রইলো অর্জুনের দিকে, সে এক দিকে যেমন তার ব্যাথায় বরফ দিচ্ছে অপরদিকে সমানে শানিত বাক্যে তাকে অপমান করেই যাচ্ছে। লোকটি এমন কেনো? এর মাঝে বিদ্যুৎ বললো,
“তোদের নামটা কেটে দিচ্ছি, তোরা বরং অন্নাকে বাড়ি নিয়ে যা”
“সেটাই ভালো”

অর্জুনের কথাটা শেষ হবার আগেই অন্না বলে উঠলো,
“নাম কেটো না। আমি নাচতে পারবো। আজ রাতেই ব্যাথা সেরে যাবে”
“তুমি কি জ্যোতিষী হইছো? তোঁতাপাখি বলে গেছে কানে কানে? কিভাবে জানিস ঠিক হবে কি না?”
“আরে আমার পা আমি জানবো না?”
“এতো যখন জানিস তাহলে পড়ে যাস কি করে? চোখ আর মন কোথায় থাকে? এখন আবার নাচবেন উনি। কোনো নাচানাচি হবে না। বাড়ি যাবি, খেয়ে দেয়ে ঘুম”
“অর্জুন দা”
“চুপ, প্যা পু বন্ধ”

অন্না মনখানা মিয়ে গেলো। সে চুপ করে বসে রইলো। অর্জুনের ভ্রুক্ষেপ হলো না। সে অন্নার পায়ে বরফ দিতে ব্যাস্ত। তখন দেবব্রত বললো,
“ওকে বকিস না, ইচ্ছে করে তো পড়ে নি। যদি অনুষ্ঠানের আগে পা সেরে যায় তাহলে না হয় একটু পারফর্ম করলো”

দেবব্রতের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো অর্জুন। তার মোটেই কথাটা পছন্দ হয় নি। একেই মেয়েটির পা টা ফুলে গেছে, আগামীকাল হতে হতে দেখা যাবে পা ঢোলের আকার নিয়েছে। অর্জুন তার কথা উপেক্ষা করে প্রতীককে বললো,
“প্রতীকদা এখন কি রহিম চাচাকে ডাকা যাবে। ওকে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছি। তোমরা নাহয় তাকে একটু বাড়িতে নিয়ে আসো। ও তো দাঁড়াতেও পারছে না”

প্রতীক মাথা নাড়ালো। এদিকে কৃষ্ণার মুখে হাসি। দুর্বোধ্য সেই হাসি। সে যেনো কিছু একটা আন্দাজ করছে। হয়তো কোনো গল্পের শুভসূচনা_____

*****

অন্নার পা মচকেছে, ভালো করেই মচকেছে। রহিম চাচা বেডরেস্ট নিতে বলেছে। ফলে রবিন ভাই এর অন্না এবং অর্জুনের যুগলবন্দীর প্লানের উপর সমুদ্রের ঢেউ চলে গিয়েছে। তবে এতে রবিনভাই এর মাথাব্যাথা নেই। কারণ কোথাও না কোথাও তার পরিকল্পনা অনেকাংশে সফল। অর্জুনের প্রেমকাহিনীর আগুনটা বেশ ভালো করেই জ্বলেছে। অপরদিকে, অন্নার মনখানা খারাপ। সবাই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবে শুধু সেই বাসায় বসে থাকবে, পুজোতেও সে বের হতে পারবে না। ব্যাপারটা মোটেই ভালো লাগছে না। ফলে শ্যামমুখখানা আরোও কালো হয়ে গেলো। কোনোমতে কিশোরী তার চোখের অশ্রু আটকে রেখেছে। যা কারোর চোখে না পড়লেও অর্জুনের দৃষ্টি এড়ালো না। সকলের দৃষ্টির আড়ালে সে অন্নার কাছে গেলো। তার খোঁপা করা মাথার চুলগুলো বা হাত দিয়ে এলোমেলো করে দিলো। অন্না অশ্রুসিক্ত চোখে তাকাতেই স্বর খাঁদে নিয়ে বললো,
“কষ্ট পাস না, পা ঠিক হবার উপলক্ষে আরেকবার অনুষ্ঠান করবো না হয়”
“কথা দিচ্ছো?”
“দিলাম”

বলেই স্মিত হাসলো অর্জুন। চমৎকার সেই হাসি। অন্না মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে রইলো অর্জুনের দিকে। তার হৃদস্পন্দন বাড়লো। হৃদয়ের কোনায় যে প্রণয় বীজটা রোপন করেছে তার বাড়ছে, ধীরে ধীরে। কেউ ঠিক ই বলেছে সুন্দর জিনিসগুলো ভয়ংকর। চরম ভয়ংকর। অন্না অর্জুনের প্রগাঢ় নয়নে নিজের সর্বনাশ দেখতে পেলো। এই সর্বনাশে পরম সুখ______

********

সকাল থেকেই অঝোর ধারায় বৃষ্টি। অক্লান্ত বর্ষণে ভিজে যাচ্ছে হিমুলেন। পানিও উঠেছে। ড্রেনের কাজ গত মাসেই হয়েছে। তবুও আজ পানি উঠেছে। থেকে থেকে মেঘের গর্জন শোনা যাচ্ছে। অক্লান্ত গর্জন। অপরাহ্নের শেষ প্রহর। বিছানায় আধশোয়া ভাবে শুয়ে আছে অন্না। হাতে বই, “নৌকাডুবি”। বই টা নিয়ে তার প্রচুর কৌতুহল। বেশি কৌতুহল হেমনলিনীকে নিয়ে। তাই তো দেবব্রতকে দিয়ে কিনিয়েছে। যখন বলেছিলো তার এই বইখানা লাগবে, দেবব্রতের চোখ কপালে। অবাক কন্ঠে বললো,
“তুই বই পড়বি?”

অন্না ক্ষেপে উত্তর দিলো,
“কেনো আমি বই পড়তে পারি না?”
“শুনেছি অর্জুন নাকি তোকে পড়াচ্ছে, এখন সেটার চাক্ষুষ প্রমাণ পাচ্ছি। বইপোকাটার সাথে থাকতে থাকতে তুই ও সেটাই হচ্ছিস”

অন্না উত্তর দিলো না। শুধু বললো,
“কিনে দিবি কি না বল”
“যাহা মহারানীর আজ্ঞা, পেয়ে যাবি”

দেবব্রতের উছিলাতেই বইটা পাওয়া। কিন্তু বইটা পড়ে কষ্ট লাগছে। এতোটা কষ্ট পাবে বুঝতে পারে নি। ভালোবাসা গুলো বুঝি এমন ই অসহায়, প্রণয়ের মানুষের আঘাতগুলো বুঝি এতোটাই বেদনাদায়ক। অন্না হেমনলিনী নয়, তবুও রমেশের দেওয়া আঘাতগুলো যেনো সে অনুভব করছে। চোখ ভিজে আসছে বারংবার। তখন ই ঘরে উপস্থিত হলো দেবব্রত। বললো,
“চল”
“কোথায়?”
“অনুষ্ঠানে। শুরু হয়ে যাবে”
“ভালো লাগছে না”
“সে কি কথা! সবাই এতো কষ্ট করলো দেখবি না”
“কৃষ্ণা আসছে বুঝি?”

কৃষ্ণার কথাটা শুনতেই বিষম খেলো দেবব্রত। হালকা কেশে কড়া স্বরে বললো,
“কৃষ্ণা কি রে! বয়সে বড় তোর”
“বৌদি বলবো তাহলে?”
“বৌ…বৌ..বৌদি কেনো বলবি? পড়ে কি মাথাটাও মচকেছে?”
“জানি না, ইচ্ছে হলো। বাদ দে। চল, দেখি কি অনুষ্ঠান হচ্ছে যার জন্য এতো আগ্রহ তোর”

দেবব্রত কথা বাড়ালো না। বোন যে তার কিছুটা আন্দাজ করেছে বুঝতে বাকি নেই। কিন্তু সে তো জানে না তার বোন পুরো ঘটনাই জানে। অন্না মিটিমিটি হাসলো। দাদার লজ্জিত মুখখানা দেখতে মন্দ লাগছে না।

অনুষ্ঠান শুরু হলো ছটা নাগাদ। একে একে সবার মেধার প্রকাশ হলো। করতালির ঢেউ উঠলো। ঢেউ জোরালো হলো যখন স্টেজের অর্জুন উঠলো। অন্নার উত্তেজনা বাড়লো। অর্জুনদা গাইবে আশা করে নি। ভাগ্যিস এসেছে, নয়তো তার পারফরম্যান্সটা দেখা হতো না। অন্নার চোখে একরাশ আগ্রহ। সে জানে অর্জুনদা কতোটা সুন্দর গায়। তার কন্ঠের প্রেমে এই পাড়ার প্রতিটি কিশোরী হাবুডুবু খায়। অর্জুন সুর তুললো,
“আমার একলা আকাশ থমকে গেছে রাতের স্রোতে ভেসে
শুধু তোমায় ভালোবেসে
আমার দিন গুলো সব রঙ চিনেছে তোমার কাছে এসে
শুধু তোমায় ভালোবেসে
তুমি চোখ মেললেই ফুল ফুটেছে আমার ছাদে এসে
ভোরের শিশির ঠোট ছুঁয়ে যায় তোমায় ভালোবেসে
আমার একলা আকাশ থমকে গেছে রাতের স্রোতে ভেসে
শুধু তোমায় ভালোবেসে”

পরিবেশে যেনো অদ্ভুত প্রেমের লহর উঠলো। অন্নার কাজল কালো চোখে শুধু অর্জুনের প্রতিচ্ছবি। খরা জমিনে এক পশলা বৃষ্টি হয়ে নামলো মনের আকাশের মেঘগুলো। ঠিক তখন ই তামিমা ধীর কন্ঠে বললো,
“অর্জুনদার চোখ তো তোর থেকে সরছেই না”

অন্না এতোসময় খেয়াল না করলেও তার এখন মনে হচ্ছে অর্জুনের চোখ যেনো তার দিকেই তাকিয়ে আছে। তাদের মাঝে চোখাচোখি হলো কিন্তু কেউ দৃষ্টি সরালো না। এর মাঝে কখন গান শেষ হয়ে গেলো টের ও পেলো না অন্না। গান শেষ হবার পর ও মিনিট দুয়েক অর্জুন দাঁড়িয়েছিলো। তারপর সকলকে ধন্যবাদ জানিয়েই নেমে পড়লো। সাথে রেখে গেলো কিশোরীর মনে হাজারো প্রশ্ন। গানটি কি তার জন্য ছিলো! নাকি এ কেবল ই মনের ভ্রান্ত ধারণা!

*****

পুজো শেষ হয়ে গেছে, দেবীর বিদায়ে কাঁদলো বহু চোখ। তবে মনকে আশ্বস্ত করলো এই বলে “আসছে বছর আবার এসো মা”। বিজয়া দশমীতে সিঁদুর খেলা হলো। কিশোরী অন্না তা দেখলো চোখ ভরে। দেবব্রত ধুনুচি নাচ ও করেছিলো। সবাই অর্জুনকে বলা স্বত্তেও সে নাচে নি। এক কোনায় দাঁড়িয়ে ছিলো। অন্নার চোখগুলো তাকেই দেখছিলো। বিজয়ার দিন কৃষ্ণা এসেছিলো। বাড়ির সকলের সাথে তার কথা হয়েছে। কিন্তু তা কেবল ই অর্জুনের বান্ধবীরুপে। অবন্তীকা দেবীর সাথে তার বেশ খাতির ও হয়েছে। ফলে দেবব্রত ঠিক করলো আজ রাতেই সে বিয়ের কথা পাড়বে। ভাসানের পর বাসায় ফিরেই সে অবন্তীকা দেবীরকে বললো,
“আমার কিছু কথা আছে”

নারায়ন বাবু এবং প্রদীপ বাবু আগ্রহ নিয়ে বসলো। রীতাদেবী হাত মুছতে মুছতে বললো,
“কি কথা দেব?”
“ছোট মা আমি বিয়ে করবো। আমি একজন কে খুব ভালোবাসি। আমি আর কলকাতা যাচ্ছি না। এখানেই থাকবো। আর যদি তোমরা আপত্তি করো তবে আমি তাকে বিয়ে করে বাড়ি আনবো”

দেবব্রতের কথাটা শেষ হবার আগেই তার গালে স’জো’রে চড় পড়লো। আর মানুষটি অন্য কেউ নয় বরং অবন্তীকা দেবী………

চলবে

মুশফিকা রহমান মৈথি

#আমার_একলা_আকাশ_তোমায়_জুড়ে
#১১তম_পর্ব

দেবব্রতের কথাটা শেষ হবার আগেই তার গালে স’জো’রে চড় পড়লো। আর মানুষটি অন্য কেউ নয় বরং অবন্তীকা দেবী। আকস্মিক ঘটনায় কিংকর্তব্যবিমুঢ় দেবব্রত হতবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো মায়ের দিকে। অবন্তীকা দেবীর চোখজোড়া রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে, চোয়াল শক্ত। সকলের মুখ রক্তশূণ্য হয়ে গেলো। বড়মা দাদাকে চড় বসিয়ে দিবে কল্পনাও করে নি অন্না। রীতিমতো মেয়েটি ভয়ে শিটিয়ে গেলো। বড়মা যে খুব কড়া ধাঁচের মানুষ তা নয়, তবে তার নিয়ম কানুনের বাহিরে কাজ করা অপছন্দ। ছেলেমেয়েদের প্রেম প্রীতি ব্যাপারটা কখনোই তার চোখে শোভনীয় লাগে না। প্রেম শব্দটি যেনো বেশ বাজে লাগে কানে। তাই যদি শুনেন বিয়ে বাবা-মায়ের অমতে হয়েছে অথবা ছেলে-মেয়ে প্রেম করে বিয়ে করেছে তবে তিনি মুখ বাঁকিয়ে নেন। তাই ছেলের এমন আবদারে এমন প্রতিক্রিয়াটি খুব একটা অবাককর নয়। অবন্তীকা দেবী তখন বাজখাঁই কন্ঠে বলতে লাগলেন,
“নিজের শিক্ষা কি জলে গুলিয়ে খেয়ে ফেলেছো? বাবা-কাকার সামনে কি করে কথা বলতে হয় জানো না? এ কেমন অসভ্যতামী! না করলে বিয়ে করে বাড়ি আনবে? এসবের জন্য তোমায় কলকাতা পাঠাই নি।”
“আমার মনে হচ্ছে না আমি ভুল বলেছি”
“আবার তর্ক করছো! এমন শিক্ষা আমি তোমায় দিয়েছি!”
“শিক্ষা দাও নি বিধায় আমি যাকে ভালোবাসি তার দায়িত্ব নিতে চেয়েছি। আমি তো অপরাধ করি নি”
“আমার প্রেমের বিয়ে অপছন্দ দেবব্রত। সুতরাং কথা এখানেই শেষ”

দেবব্রত অধৈর্য্য হয়ে বললো,
“তুমি তো তাকে দেখোও নি”
“দেখতে চাই ও না। মেয়েটি ভালো না”
“না দেখে কিভাবে মন্তব্য করছো? একটিবার দেখো। ভালো পরিবার, মেয়েটি তোমার মত”
“আমি আগ্রহী নই”
“তুমি জেদ করছো মা”
“তুমি অভদ্রতা করছো”

মা ছেলের মাঝে বাক্যযুদ্ধ চলছে। দুজন দুজনের দিক থেকে অনড়। এদিকে রীতাদেবী, অন্না, প্রদীপ বাবু এবং নারায়ন বাবু হয়ে গেলেন নির্বাক দর্শক। অবন্তীকা দেবীর বিরোধিতা তারা করতে পারছে না আবার দেবকেও বোঝানোর কিছু নেই। এতো বড় ছেলেকে বোঝানো মানে বোকামী। সে একটি মেয়েকে বিয়ে করবে যা খুব ই স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু অবন্তীকা দেবীর মনোভাব বদলানো কঠিন নয়, অসম্ভব। দেবব্রত মায়ের জিদের সামনে মাথানত করলো না। উলটো বললো,
“আমি তাকে বিয়ে করবো”
“ঘর থেকে বেরিয়ে যেয়ে যা খুশি করো”
“তুমি আমায় ঘর ছাড়া করবে?”
“সন্দেহ আছে?”
“মা?”

অবন্তীকা দেবী উত্তর দিলেন না। হনহন করে ভেতরে চলে গেলেন। রীতাদেবীও পিছনে গেলেন। বাবা-কাকার দিকে তাকালে তারা স্বান্তনার স্বরে বললো,
“ভুলে যা, তোর মা খুব জেদী। তার সাথে ঝামেলা করার মানে হয় না।”

কিন্তু দেবব্রত তার সিদ্ধান্তে অনড়। সে মোটেই পিছ পা হবে না। তবে সমস্যা হলো একটি, একজন উদবাস্তু ভাসমান ছেলের সাথে মোটেই কৃষ্ণার মা-বাবা বিয়ে দিবেন না। আর দেবব্রতের কাছে এখন চাকরিও নেই। কলকাতার চাকরিটি ছেড়ে এসেছে সে। দেশে চাকরি পেতেও সময় লাগবে। তাই এখন ঘরছাড়া হবার সাহসটি সে করতে পারছে না। তাই সিদ্ধান্ত নিলো সে আন্দোলন করবে। বিদ্রোহী আন্দোলন নয়, অসহযোগ আন্দোলন।

রাতের বেলা খাবার বাড়ছেন অবন্তীকা দেবী। অন্না কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বড়মাকে দাদার হয়ে সুপারিশ করার প্রয়াশ করছে। কিন্তু বড়মার কড়া দৃষ্টিতে কথাগুলো গলায় এসেই আটকে যাচ্ছে। অবন্তীকা দেবী টেবিলে খাবার দেবার পর অন্নাকে বললেন,
“যাও সবাইকে ডেকে আনো”
“বড়মা?”
“কিছু বলবে?”
“দাদার ব্যাপারটা!”
“আমার কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে না। তোমাকে যা বলেছি তা করো”

অবন্তীকা দেবীর কড়া বাক্য ঔষধের মতো কাজ করলো। অন্নার তার কথাগুলো গিলে ফেললো। তারপর উল্টো দিকে হাটা দিলো সবাইকে ডাকতে। দেবব্রতকে ডাকতে দরজায় কড়া নাড়তেই ওপাশ থেকে সে বললো,
“আমি খাবো না”
“সে কি কথা? খাবি না কেনো?”
“অনশনে বসেছি তাই”
“কিসের অনশন?”
“যতদিন না আমার বিয়েতে মা রাজি হবে আমি অনশন করবো। আমিও দেখি তার জিদ কতোদিন থাকে”

দেবব্রতের কথায় মাথায় বাজ পড়লো অন্নার। বুঝতে পারলো এবার আর লংকাযুদ্ধ বাধতে দেরি নেই। ছুটে এসে চিন্তিত কন্ঠে বড়মাকে জানাতেই তিনি ঠান্ডা কন্ঠে বললেন,
“ভালো হলো, আমার খাবার বেঁচে গেলো। সকালে এই ভাত দিয়ে খিঁচুড়ি বানিয়ে ফেলবো৷ রীতা আর সকালে নাস্তা বানিও না”
“দিদি ছেলে অসুস্থ হয়ে যাবে”

চিন্তিত কন্ঠে রীতাদেবী বললেন। তার কথা বিপরীতে অবন্তীকা দেবী বললেন,
“হোক, আমি কি করতে পারি? আমি তো বলি নি অনশনে বসতে। সিদ্ধান্ত তার”
“দিদি ছেলে তো বড় হয়েছে, এখন তার পছন্দ অপছন্দ হবেই। জিদ ছেড়ে দাও। মেয়েটি ভালো ও হতে পারে”
“রীতা আমি নিয়ে কথা বলবো না। তোমরা ছেলের বিয়ে দিলে দাও। আমাকে জানিও আমি আমার বাপের বাড়ি চলে যাবো। যে বিয়েতে আমার মত নেই সেখানে আমিও থাকবো না। এখন তোমরা যা পারো করো”

বলেই নিজ ঘরে চলে গেলেন অবন্তীকা দেবী। রীতাদেবী হতাশ দৃষ্টিতে চাইলেন ভাসুর এবং স্বামীর দিকে। মা-ছেলের এই জিদের কারণে উভয় ই কষ্ট পাচ্ছে কিন্তু তারা কেউ নিজেদের নত করবে না। কারণ তাদের জিদই প্রধান।

****

ঘরের অবস্থা ভালো নয়। দুদিন যাবৎ মা-ছেলের মাঝে শীতল যুদ্ধ হচ্ছে, কেউ কথা বলছে না। এদিকে দেবব্রত খাচ্ছে না। সে তার ঘরে নিজেকে গৃহবন্দী করছে। অন্নার এগুলো ভালো লাগছে না। কিন্তু ছোট বিধায় কথা বলতে পারছে না। এই ঝামেলায় মায়ের প্রকোপ বেড়েছে। সেও ধুমধাম ঝড় তুলছেন অন্নার উপর। সামনে পরীক্ষা অথচ তার বই দেখতেও বিরক্তি। অন্নাকে লিফো, ফিফোর ম্যাথ করতে দিয়েছে অর্জুন। অন্না অনিচ্ছুক ভাবে তা করেও দিয়েছে। অর্জুন চোখ ছোট ছোট করে সেই খাতা দেখলো এরপর একটা পেন্সিল দিয়ে তার মাথায় টোকা দিলো। টোকাটা জোড়ালোই ছিলো, ফলে মাথায় হাত দিয়ে “আহ” করে উঠলো অন্না। অর্জুনের দিকে তাকাতে তার শানিত বাক্যের সম্মুখীন হতে হলো,
“এই তোকে কতবার বুঝাবো লিফো মানে শেষের বস্তু আগে বিক্রি হওয়া। আর ফিফো মানে আগের বস্তু আগে বিক্রি হওয়া। তুই এখানে কি করে রেখেছিস? আর ব্যালেন্স শিটে এতো ভুল কেনো? ৮৯০৩ কে ৮৯৩০ কে লিখে? এতো অন্যমনস্ক কেনো রে তুই? দেখে দেখে ও তুলতে পারিস না”

অর্জুনের বকার মাত্রা বাড়ার আগেই অন্না অসহায় কন্ঠে বললো,
“অর্জুনদা, আমার মনটা ভালো নেই। আজ বকো না”

অন্নার মুখটা মিয়ে আছে। শ্যামমুখখানা আরোও কালো লাগছে যেনো। অর্জুন কিছুসময় তাকে দেখলো। তারপর কন্ঠ নরম করে বললো,
“কি হয়েছে?”
“দাদা অনশন করছে, বড়মা তার শাসনকার্য অব্যাহত রাখছেন। দাদা দুদিন কিছু খায় নি, অথচ বড়মা নির্বিকার। বোধহয় এবারে দাদার আন্দোলন কাজ দিবে না। আমার ভালো লাগছে না। কথা বলতেও ভয় হয়। দাদা তো ঘর থেকেই বের হয় না। চিন্তা হয় ও যদি অসুস্থ হয়ে যায়?”
“তোর দাদা অনশন করছে?”
“হ্যা, তাও জলছাড়া”
“মায়ের কাছে মাসির গল্প দিস না। যে ছেলে দুঘন্টা না খেয়ে থাকতে পারে না, সে দুদিন না খেয়ে আছে! এ আমাকে বিশ্বাস করতে হবে? যেয়ে দেখ বিছানার তলে চিপস, বিস্কুটের প্যাকেট রেখে দিয়েছে। দেবব্রত অনশন করছে এ যদি আমাকে দেবতা এসেও বলে আমি বিশ্বাস করবো না”
“তুমি মজা নিচ্ছো? সত্যি আমার দাদা অনশন করছে। প্রেমের জন্য দাদা সব ছাড়তে পারে। অবশ্য তোমার মতো বেরসিক মানুষ প্রেমের কি বোঝে?”

অন্না ক্ষেপে গেলো। তার রাগ হচ্ছে। একেই বাড়ির প্রতিকুল পরিস্থিতি তার ভালো লাগছে না অথচ অর্জুনদা মোটে পাত্তা দিচ্ছে না। আসলেই পুরোদস্তুর খ’চ্চর মানব সে। ঠিক তখন ই অর্জুন ডানহাতে মাথা ঠেকিয়ে বললো,
“তোর ভাষ্যমতে আমি প্রেম বুঝি না? বেরসিক?”
“অবশ্যই, প্রেম করেছো কখনো? বুঝবে কি করে বিচ্ছদের যন্ত্রণা?”
“আমি তোমার দাদার মতো আ’হা’ম্মক নই, বসে বসে অনশন করতাম না। বিয়ে করে বাড়ি এনে তুলতাম।”

অর্জুনের কন্ঠ দৃঢ়। অর্জুনের প্রগাঢ় নয়নে কিছু সময় তাকিয়ে রইলো অন্না। অর্জুনের নয়নজোড়া অন্নাতে স্থির। অন্না অনুভব করলো তার বক্ষস্থলের অস্বস্তিটা বাড়লো। তাকিয়ে থাকতে পারলো না বেশিসময়। দৃষ্টি সরিয়ে ধীর স্বরে বললো,
“দাদাও ভেবেছিলো। কিন্তু বড়মা তাকে ঘর ছাড়তে বলেছেন। এখন উদবাস্তু ছেলের সাথে কৃষ্ণাদির বাবা মা কি বিয়ে দিবে? দিবে না। তাই খামোখা আমার দাদাকে নিয়ে বাজে কথা বলো না। আহারে কৃষ্ণা দি, কত কষ্টই না পাচ্ছে। দাদা আর কৃষ্ণা দির এই বিরহ আমার মোটেই ভালো লাগছে না।”

অন্না দীর্ঘশ্বাস ফেললো। সত্যি ই কৃষ্ণার জন্য তার খারাপ লাগছে। তখন কপালের চুলগুলো হাত দিয়ে ঠেলে চেয়ারে গা এলিয়ে দিতে দিতে অর্জুন বিদ্রুপের স্বরে বললো,
“তা বিরহদেবী আপনি কিছু করছেন না কেন?”
“আমি কি করবো! আমার কথা কেউ পাত্তা দেয়? তুমি ই তো দেও না”
“কে বলেছে আমি তোর কথা পাত্তা দেয় না! যদি না দিতাম তবে এতো সময় তোর প্যাচাল শুনতাম?”

অকপটে কথাটা বললো অর্জুন। কথাটা মস্তিষ্কে ঝংকার তুললো। চিরচেনা খ’চ্চ’র অর্জুনদার শ্যাম মুখখানা যেনো বড্ড অপরিচিত লাগছে। তার কন্ঠে অদ্ভুত মাদকতা। অন্নার মনে হচ্ছে সে চোরাবালিতে ডুবে যাচ্ছে। আবেগের সেই অদ্ভুত চোরাবালি। অর্জুন কিছুটা এগিয়ে এসে বললো,
“একটা বুদ্ধি দিবো? সাপ ও ম’রবে, লাঠিও ভাঙ্গবে না”

এবার ধ্যান ভাঙ্গলো অন্নার। নড়েচড়ে বললো,
“কি বুদ্ধি?”

অর্জুন হাসলো, কিশলয়ের ফাঁকে ভোরের প্রথম কিরণের ন্যায় সেই হাসি। এই হাসিতে ম’র’তেও দ্বিধা হয় না। অন্না অনুভব করলো সে ভয়ংকর কিছুতে মেতে উঠছে, এতে তার ধ্বংস নিশ্চিত। তবুও কিশোরী মুগ্ধ নয়নে তার রমেশকে দেখছে।

******

হেসেলের জানালা দিয়ে সুর্যের তাপ গলে ঢুকছে। তাপটা একটু বেশি ই। চুলোর গরম এবং সেই তাপে তরতর করে ঘামছেন অবন্তীকা দেবী। শাড়ির আঁচল দিয়ে কপালের ঘাম মুছে নিলেন তিনি। মনটা ভালো নেই তার। দেবব্রতের সাথে ক্ষণে ক্ষণে বাঁধছে। ছেলেটা দিন তিনেক খাওয়া নাওয়া ছেড়েছে। ঘরের মধ্যে থাকে। মাঝে মাঝে বের হয়, কিন্তু সেটাও ক্ষণিকের। ছেলেটির মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। রীতা তাকে জোর করে খাওয়াবার চেষ্টা করেছিলো কিন্তু লাভ হয় নি। ফলে বাসায় একটা অরাজকতা তৈরি হয়েছে। নারায়ণবাবু ইশারা ইঙ্গিতে বুঝাতে চাচ্ছেন। কিন্তু এতে খুব একটা যায় আসলো না অবন্তীকা দেবীর। তিনি সরাসরি বলে দিলেন,
“আমি তো কাউকে মানা করি নি! তবে আমার সংসারে আমার অমতে কিছু হবে না”

নারায়নবাবু চেপে গেলেন। স্ত্রীর জেদ এবং রাগ সম্পর্কে তিনি অবগত। চিন্তা যে অবন্তীকা দেবীর হচ্ছে না তা নয়। তবে ছেলের কাছে পরাজিত হবেন না। তিনিও দেখতে চান ছেলের এই অনশনের বাহানা কতদিন চলে। এর মাঝেই রান্নাঘরে প্রবেশ করলো অন্না। চুলোয় রাখা কড়াই এর দিকে উঁকি দিতে দিতে বললো,
“কি রাধছো গো বড়মা?”
“তোমার দাদার পছন্দের পটলের দোলমা। দেখি তার খাবার ইচ্ছে হয় কি না!”
“এসব করে হবে না বুঝলে, দাদাকে বিয়ে দিয়ে দাও। দেখবে অনশন টনশন ভেঙ্গে বেড়িয়ে এসেছে”

অন্নার কথা শুনতেই তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালেন অবন্তীকা দেবী। অন্না তার চাহনীতে শুকনো ঢোক গিলে বললো,
“আমি বলছি না দাদার প্রেমিকার সাথে বিয়ের কথা। আমি বলছি যেকোনো মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়ে দাও”
“মেয়ে কি হাতের মোয়া? যখন তখন পাবো? ভালো মেয়ে পাওয়া এই জমানায় অনেক কঠিন। তুই বুঝবি না! আর এমন মেয়ে কোথায় পাবো বল যে আমার ছেলের মাথা থেকে প্রেমের ভুত নামাবে, একই সাথে রুপে লক্ষী, গুনে স্বরসতী হবে”
“আমার কাছে আছে”

অন্নার কথা শুনেই অবাক নয়নে তাকালেন অবন্তীকা দেবী। বিস্মিত কন্ঠে বললেন,
“কে?”
“কৃষ্ণা, আরে ওই যে অর্জুনদার সাথে এসেছিলো। তোমার সাথে কথা হয়েছে তো। মেয়েটি যেমন সুন্দরী, ঠিক তেমন ই সুন্দর ব্যাবহার। দাদার সাথে মানাবেও। ভেবে দেখো বড়মা, লটারী হাতে এসেছে। সবসময় এমন মেয়ে পাওয়া যায় না৷ তুমি বললে আমি তার ঠিকানা নিতে পারি৷ ভেবে দেখো। আমি হলফ করে বলতে পারি, ওই মেয়ের সাথে বিয়ে হলে আমার দাদার প্রেমের এই ভু’ত উড়ে শ্যাওড়াগাছে চলে যাবে। কি বলো, ঠিকানা নিবো?”

অন্নার কথা মন দিয়ে শুনলেন অবন্তীকা দেবী। তারপর কিছুসময় ভেবে ধীর কন্ঠে বললেন…….

চলবে

মুশফিকা রহমান মৈথি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here