#মধুবালা,১০,১১
অরিত্রিকা আহানা
#পর্বঃ১০
জ্ঞান ফিরতেই সচেতন হলো মধু। এইমাত্রই গায়ে ঘাম দিয়ে জ্বর নেমেছে তাঁর। এদিক ওদিক চোখ মেলে একপলক চাইলো সবার দিকে। তারপর ঘরের বাতি নিভিয়ে বেরিয়ে যেতে বললো সবাইকে। অসুস্থ শরীরে ঘরে এত ভীড় ভালো লাগছে না তাঁর। সামান্য একটু জ্বরে মেয়েগুলো সব ভীড় করে বসে আছে তাঁকে ঘিরে। অসহ্য লাগছে মধুর! পুনরায় বিরক্তমুখে বেরিয়ে যেতে বললো সবাইকে।
ইতোপূর্বে যেই মেয়েটা মধুর অসুস্থতার খবর আশরাফিকে জানিয়েছিলো সে ভয়ে ভয়ে মধুর কাছে এগিয়ে গেলো। কিছুক্ষণ কাচুমাচু করে ভীত কন্ঠে আশরাফির আসার খবরটা জানালো মধুকে। খবরটা শোনার পর হতবাক হয়ে তাঁর দিকে চেয়ে রইলো মধু। মুহূর্তেই তার রোগা মুখখানা গম্ভীর হয়ে গেলো। রাগত গলায় বললো,’কে বলেছে তোকে কারবারি করতে? কেন তাঁকে ফোন করতে গেলি তুই? এটা কি ভদ্রলোকের জায়গা? তাঁর কোন সম্মান নেই?’
মেয়েটা জবাব না দিয়ে নতমুখে বসে রইলো।আশরাফির আসার খবর শুনে মধুমা এত খেপেছে কেন সেটাই বুঝতে পারছে না সে! মধুমার তো খুশি হওয়া উচিৎ। মানুষটা তাঁর অসুস্থতার খবর শুনে ছুটে আসছে তাঁর সঙ্গে দেখা করার জন্য! এমন কপাল কয়জনের হয়? কই তাদের সঙ্গে তো কেউ দেখা করতে আসে না? তাঁরা মরে গেলেও খোঁজ নেওয়ার মত কেউ নেই! যারা আসে তাঁরা কেবল শরীরের লোভে আসে! কিন্তু মানুষটা তো সেরকম নয়? মধুমা কিছু না বুঝেই বিনাকারণে তাঁকে বকছে! জ্বরের ঘোরে তো ঠিকই মানুষটার নাম করছিলো, এখন আসতে বলাতে যত দোষ!
নিস্তেজ গলায় বিড়বিড় করে বেশ কিছুক্ষণ মেয়েটাকে বকাবকি করলো মধু। মেয়েটার কথা অনুযায়ী অনেকক্ষণ আগেই বেরিয়েছে আশরাফি। পৌঁছাতে হয়ত আর বেশিক্ষণ লাগবে না। তার আগেই তাঁকে ফোন করে বারণ করে দিতে হবে। ব্যতিব্যস্ত হয়ে আশরাফি নাম্বারে ফোন করলো মধু।
★
মাঝরাস্তায় আবার ফোন বেজে উঠলো আশরাফির। মধুর নাম্বার থেকেই এসেছে। গাড়ির স্পিড স্লো করে ফোনটা রিসিভ করলো সে। রিসিভ করার পর গলা শুনে বুঝতে পারলো ফোনটা মধুই করেছে। সে হ্যালো বলার পূর্বেই ওপাশ থেকে মধু রুগ্ন কণ্ঠে তড়িঘড়ি করে বললো,’হ্যাঁ, হ্যালো। আমি মধু বলছি।’
মধুর গলার স্বর শুনে আশরাফি মনে হলো হঠাৎ করেই বুকের ওপর থেকে মস্ত বড় পাথরটা নেমে গেছে তাঁর। স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো সে।
মধুর অসুখের কথা শোনার পর থেকেই নানারকম আজেবাজে চিন্তাভাবনা ঘুরপাক খাচ্ছিলো মাথার ভেতর। অজানা আশংকায় বুকটা বারবার কেঁপে উঠছিলো তাঁর। কেবলই মনে হচ্ছিলো, মধুর সাথে সেদিন এতটা খারাপ ব্যবহারে করে আসা মোটেই উচিৎ হয় নি। মধুকে বুঝতে নিশ্চয়ই কোন ভুল হয়েছে তাঁর। মধু কখনো খারাপ হতে পারে না! সব দোষ আশরাফির! সে-ই বিনা কারণে মধুর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছে। ভালোবাসার মানুষের দেওয়া আঘাত যদি সহ্যই করতে না পারে তবে কিসের প্রেমিক সে? এমনি করে মধুর ভাগের সমস্ত দোষ মনে মনে নিজের ঘাড়ে চাপিয়ে সান্ত্বনা খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করছিলো সে। মধুর কথার জবাবে স্নেহার্দ্র কণ্ঠে বললো,’যাক! জ্বর তাহলে নেমেছে?’
নিজেকে শক্ত রাখার সবরকম প্রস্তুতি নিয়েই ফোনটা করেছিলো মধু। কিন্তু আশরাফির কোমল, স্নেহপূর্ণ গলা শুনে থমকে গেলো সে। কতদিন তাঁর সঙ্গে এভাবে কথা বলে আশরাফি! জবাব না দিয়ে চুপ করে রইলো মধু। আশরাফি ভাবলো অভিমান করেছে হয়ত! পুনরায় কোমল কন্ঠে বললো,’অসুস্থ শরীর নিয়ে ফোন করার কি দরকার ছিলো? আমি তো আসছিই।’
চোখের পানি নিঃশব্দে গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়লো মধুর। ফুঁপিয়ে কান্না ঠেকাতে গিয়ে নিচের ঠোঁটটা সজোরে কামড়ে ধরলো সে। তথাপি কান্না ঠেকানো গেলো না। দলা পাকিয়ে হাউমাউ করে বেরিয়ে আসতে চাইলো! গলা দিয়ে কান্নার শব্দ বেরোনোর পূর্বেই হাত দিয়ে ফোনের স্পিকার চেপে ধরলো সে।
আশরাফি কেন তাঁকে এমন অন্তর্দাহে পোড়াচ্ছে? কেন এখনো এতটা অবুঝ সে? এই জায়গাটা যে ভালো নয় সে কি জানে না? মধুর নাহয় মানসম্মানের বালাই নেই! সমাজের কাছে পতিতা সে! কিন্তু আশরাফি? তাঁকে তো সমাজের আর দশটা লোকের সঙ্গে চলাফেরা করতে হবে? কেন সে নিজের সম্মানের কথা ভাবছে না?
কান্না থামিয়ে থমথমে,কঠিন গলায় বললো,’আসার দরকার নেই তোমার। আমি ভালো আছি।’
স্নেহের বিপরীতে মধুর কাছ থেকে এমন রুক্ষ ব্যবহার আশা করে নি আশরাফি। দ্বিধান্বিত কন্ঠে প্রশ্ন করলো সে,’মানে?’
-‘মানে তোমাকে আসতে বারণ করছি আমি।’
-‘কিন্তু তুমি যে অসুস্থ? জ্বরের ঘোরে নাকি আমার নাম করছিলে?’
-‘কে বলেছে তোমাকে এসব ফালতু কথা? আর বললেই বা তোমাকে আসতে হবে কেন? তোমার নিজের কোন বিবেক বুদ্ধি নেই? তুমি কি ডাক্তার না কবিরাজ যে তুমি এলেই আমি ভালো হয়ে যাবো? যতসব উদ্ভট কথাবার্তা। আমাকে দেখার জন্য আরমান আছে, এখানকার সব মেয়েরা আছে। তোমাকে এত মাথা ঘামাতে হবে না। তুমি নিজের কাজে মন দাও। নিজের মানসম্মানের কথা ভাবো।’
-‘তুমি অসুস্থ মেহের। এইমুহূর্তে তোমার সঙ্গে কোনরকম ঝগড়া করার ইচ্ছে আমার নেই! তাই রিকোয়েস্ট করছি তোমাকে, দয়া করে আমার মাথা গরম করিও না প্লিজ।’
-‘আমি মোটেও তোমার মাথার গরম করছি না। যেটা সত্যি, যেটা ঠিক আমি শুধু সেটাই বলছি। তোমার সঙ্গে আমার সব সম্পর্ক অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। আগের কথা সব ভুলে গিয়েছি আমি। এখন আমার স্বামী আছে, আলাদা একটা জগৎ আছে। আরমানই যেমনই হোক না, ওর সঙ্গে আমি নিজের জগতে সুখে থাকতে চাই। দয়া করে তুমি আমাদের মাঝখানে ঢুকো না প্লিজ! আর পারলে আমার আশা ছেড়ে দিয়ে ভদ্রলোকের মত নিজের ভদ্রজগতে ভালো থাকার চেষ্টা করো, আমার লাইফটাকে হেল করার চেষ্টা করো না।’
অপমানে রক্তবর্ণ ধারণ করলো আশরাফির মুখ! এমনিতেই মধুকে না পাওয়ার যন্ত্রণা তার ভেতরটাকে জালিয়ে পুড়িয়ে কয়লা বানিয়ে দিচ্ছিলো তারওপর মধুর অবজ্ঞামিশ্রিত কথাবার্তা! আত্মবিস্মৃত হলো সে! ভালোবাসার নিষ্ঠুর পরিহাস সর্বাঙ্গে জ্বালা ধরিয়ে দিলো তাঁর। ক্রোধে, উন্মত্ত হয়ে ক্ষিপ্ত কণ্ঠে বললো,’স্বার্থপর, বিশ্বাসঘাতক, নির্লজ্জ! নিজেকে কি ভাবো তুমি? বিশ্বসুন্দরী? পৃথিবীর সব পুরুষ তোমার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে? তোমাকে পাওয়ার জন্য মুখিয়ে আছে সবাই? সিরিয়াসলি? এখনো এসব মনে হয় তোমার? ভুল! আমি বলছি শোনো, তোমার মত মেয়ের বাজার দর কেবল ঐ একরাতের জন্যই! এর বেশি কেউ ফিরেও তাকাবে না। তাই তোমার এসব সস্তা, ভিত্তিহীন উপদেশ নিজের কাছেই রাখো তুমি। আমাকে সাথে জাহির করতে এসো না। আমার এখনো এতটা খারাপ দিন আসে নি যে তোমার মত মেয়ের কাছ থেকে উপদেশ ধার করে চলতে হবে আমাকে।’
রুগ্ন, বির্বণ ঠোঁটে মলিন হাসলো মধু! পৃথিবীর সকল পুরুষের কথা সে জানে না! জানতে চায়ও না। কিন্তু এই একটা মানুষ যে এখনো তাঁকে পাগলের মত ভালোবাসে এই কথাটা খুব ভালো করেই জানে সে। এখনো মানুষটার সমস্ত পৃথিবীর জুড়ে কেবল মধুর বসবাস! সেইজন্যেই তো মধুর এত দুঃখ হয়! মানুষটার বুক ভর্তি ভালোবাসা হাত বাড়িয়ে নেওয়ার অধিকার তাঁর নেই। ভাগ্যের কাছে কি নির্মমভাবে নিরুপায় ভালোবাসা!
এদিকে আশরাফি তখনো ক্রমাগত চিৎকার করে যাচ্ছিলো। তাঁর বিরতিহীন চিৎকারে কানের পর্দা ফেটে যাওয়ার উপক্রম মধুর। কান থেকে ফোন সরিয়ে নিলো সে। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে বললো,’যা বলছো সেটা মনে থাকলেই হয়। বেহায়ার মত আবার সত্যিই চলে এসো না যেন।’
কথাটা শোনার পর পূর্বের তুলনায় দ্বিগুন রাগে দিশেহারা হয়ে পড়লো আশরাফি! দ্বিগুণ জোরে চেঁচিয়ে উঠে বললো,’কি বললে তুমি? আমি বেহায়া? বেহায়া আমি? বেহায়া? বাহ! একেই বলে চোরের মায়ের বড় গলা।’
-‘এত চিৎকার করার মত কিছু হয় নি। আস্তে কথা বলো।’
-‘শোনো, কপাল ভালো তোমার আমার সামনে নেই তুমি। নইলে এইমুহূর্তে গলা টিপে মেরে ফেলতাম আমি। অসভ্য! বেয়াদব মেয়ে! নাঈম ঠিকই বলেছিলো তোমার মত মেয়ে কখনো ভালো হতে পারে না। আমারই ভুল! এতকিছুর পরেও আমার শিক্ষা হয় নি। সব জেনে শুনেও পাগলের মত তোমার পেছনে ছুটেছি!’
আশরাফির সাথে তর্ক করার মত শক্তি মধুর নেই। শরীরটা আবার ভেঙ্গে আসছে তাঁর। কাঁপুনি দিয়ে ফের জ্বর আসছে। ক্লান্ত স্বরে বললো,’একদম ঠিক বলেছো। ভুল টা তোমারই। তোমার আগেই বোঝা উচিৎ ছিলো যেই মেয়ে রোজ রাতে একটা করে পুরুষের বিছানায় যায় সে কখনো ভালো হতে পারে না।’
থমকে গেলো আশরাফি! আকস্মিক অপরপক্ষের আত্মসমর্পণ মেনে নিতে পারছিলো না সে! স্পষ্ট বুঝতে পারলো তাকে কষ্ট দেওয়ার জন্যই ইচ্ছে করে কথাগুলো বলছে মধু। তাঁর কাটা ঘায়ে নুনের ছিঁটা দিচ্ছে! সমস্ত রাগ,অভিমান এবার অনুতাপ হয়ে জমা হলো কণ্ঠস্বরে। মলিন, ক্লান্ত গলায় বললো,’আমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য ইচ্ছে করে এমন করছো তাই না? কেন মেহের? কি ক্ষতি করেছি আমি তোমার? কেন তুমি আমাকে এভাবে কষ্ট দিচ্ছো?’
-‘তোমার যা খুশি ভাবো। আমার তাতে কিচ্ছু আসে যায় না। আমার যেটা বলার ছিলো আমি বলে দিয়েছি, ব্যস। নিজের লাইফ নিয়ে সুখি থাকতে চাই আমি। তুমিও তোমার লাইফ নিয়ে খুশি থাকার চেষ্টা করো।’
কথা শেষ করে আশরাফিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ফোন কেটে দিলো মধু। রাগ আবার মাথায় চড়ে বসলো আশরাফির। মধুর কাছ থেকে একের পর এক প্রত্যাখ্যান মেনে নিতে পারছিলো না সে। অত্যাধিক রাগে ফোনটা আছাড় মেরে ভেঙ্গে ফেললো। মুখ দিয়ে বেরলো কুৎসিত ধরনের একটা গালি। ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে পাগলের মত নিজের মাথার চুল টেনে ছিঁড়ে ফেলার উপক্রম।
ভালোবাসার যন্ত্রণা সত্যিই বোধহয় মৃত্যুর যন্ত্রণার চাইতেও বেশি ভয়ানক, বেশি পীড়াদায়ক! নতুবা অপমানে, অপমানে মধুকে জর্জরিত করে দেওয়ার পরেও কেন মধুর সামান্য উপেক্ষাটুকু সহ্য করতে পারছে না আশরাফি। মধুর প্রত্যাখ্যান কেন তাঁর সারা শরীরেবিষের মত জ্বালা ধরিয়ে দিচ্ছে?
অন্তরের নিবিড় জ্বালা মেটাতে মধুকে অনেকগুলো খারাপ কথা শুনিয়েছে সে ঠিকই,কিন্তু তাঁর চাইতে বেশি অন্তরযন্ত্রনায় ভুগছে সে নিজে! হতাশায়,শূন্যতায় বুকের ভেতরটা অসহায় চাতকের মত আর্তনাদ করছে তাঁর! অসহ্য যন্ত্রনায় সারা শরীর অবস হয়ে আসছে। ফলশ্রুতিতে, চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়লো বিষাক্ত, জ্বালাময়ী তপ্ত অশ্রু। রাগ, অভিমান সামলাতে না পেরে দিগ্বিদিকশূন্য হয়ে হাইওয়ে ধরে সর্বোচ্চ গতিতে গাড়ি চালানো শুরু করে দিলো সে। আজকে হয় মরবে, নাহয় মারবে! কিন্তু এভাবে আর বেঁচে থাকা যায় না!
.
.
.
চলবে
#মধুবালা
অরিত্রিকা আহানা
পর্বঃ১১
সারারাত জ্বরে ছটফট করে শেষরাতের দিকে ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়েছে মধুর। শরীরটা এখনো বেশ দুর্বল! হাতেপায়ে জোর নেই! হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে কেউ যেন সমস্ত শরীটাকে ঝাঁজরা করে দিয়েছে। তাই ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ার পরেও বেশকিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইলো। দরজার কাছে দাঁড়িয়ে ভেতরে উঁকি দিলো আরমান। মধুকে চোখবুজে শুয়ে থাকতে দেখে প্রায় নিঃশব্দেই ভেতরে ঢুকে চৌকি টেনে বসলো। গলা খাঁকারি দিয়ে বললো,’গায়ে জ্বর আছে এখন?’
তাঁর গলার আওয়াজ পেয়ে সচেতন হলো মধু। ধীরে ধীরে উঠে বসার চেষ্টা করলো সে। আরমান বাধা দিয়ে বললো,’উঠার দরকার নেই। শুয়ে থাকো। শরীর দুর্বল তোমার।’ তথাপি উঠে বসলো মধু। আধশোয়া হয়ে গায়ের ওপর কাঁথা মেলে দিয়ে বললো,’তুমি বেরোও নি এখনো?’
-‘এইতো বেরোবো। তোমাকে দেখতে এলাম।’
-‘আমি ভালো আছি। খাওয়াদাওয়া হয়েছে তোমার?’
আরমান হাসলো। অসুস্থ অবস্থায়ও মধুর তাঁর খাবারে কথা ভোলে নি ভেবে মনে মনে বেশ খুশিই হলো সে। আজকে এমনিতেও তাঁর খুশির দিন! সকালে ঘুম থেকে উঠতে না উঠতেই একটা ভালো খবর পেয়েছে সে! খবরটা আপাতত মধুকে দেওয়ার কোন প্রয়োজন নেই! তাই মুখের ভাবখানা নিতান্তই নিরস, নিরাসক্ত বানিয়ে নিরুৎসাহি গলায় বললো,’আমার খাবার দাবার নিয়ে তোমাকে চিন্তা করতে হবে না। আমাকে খাবার দেবার লোকের অভাব নেই। তুমি নিজের কথা ভাবো। এভাবে বিছানায় পড়ে থাকলে চলবে না। তাড়াতাড়ি সুস্থ হতে হবে। তুমি তো জানো, তোমাকে এভাবে দেখলে বড় কষ্ট হয় আমার। কাজে মন দিতে পারি না।’
জবাব দিলো না মধু। ডানহাতখানা ভাঁজ করে কপালের ওপর দিয়ে চুপচাপ শুয়ে রইলো সে। গতকাল আশরাফির সাথে খারাপ ব্যবহার করার পর থেকেই মনটা কু ডাকছে তাঁর! খচখচ করছে!চিন্তায় সারারাত একফোঁটাও ঘুম হয় নি! সেই কথা মনে পড়তেই চোখে পানি চলে এলো। পাছে আরমান দেখে ফেলে তড়িঘড়ি করে চোখ মুছে ফেললো। আরমান উঠে দাঁড়িয়ে বললো,’আমি তাহলে আসি?’
-‘এসো।’
-‘ওষুধপত্র কিছু লাগবে?’
-‘না।’, সংক্ষেপে জবাব দিলো মধু।আরমানও আর বিরক্ত করলো না। পীড়িত মধুকে রেস্ট নেওয়ার সুযোগ করে দিয়ে চুপচাপ বেরিয়ে গেলো সে।
★
আরমান বেরিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ বাদেই বিছানা ছেড়ে উঠলো মধু। বহুকষ্টে শরীরে শক্তি সঞ্চয় করে স্নানের ঘরে ঢুকলো ফ্রেশ হওয়ার জন্য। ফ্রেশ হয়ে বেরোতেই নিচতলা থেকে তেরো, চৌদ্দ বছর বয়সী একটা মেয়ে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বললো,’খবর শুনেছো মধু মা?’
গামছা দিয়ে মুখ মুছতে মুছতেই বেশ হেঁয়ালি করে জবাব দিলো মধু,’না তো। কেন কি হয়েছে?’
মধুর মুখ থেকে প্রশ্নের শোনার অপেক্ষাতেই ছিলো যেন মেয়েটা। প্রশ্ন শুনে আর একমুহূর্তও দেরী করলো না। হড়বড়িয়ে বলতে শুরু করলো,’ঐ যে তোমাকে যিনি ফোন করতো সেই আংকেলটা…’
মধু তখনো মেয়েটার কথার সূত্র ধরতে পারে নি। অভ্যাসবশতই জিজ্ঞেস করল,’হ্যাঁ! কি হয়েছে ঐ আংকেলটার?’
-‘গতকাল রাতে অ্যাক্সিডেন্ট করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তিনি। আমি মাকে বলতে শুনেছি আর বোধহয় বাঁচবে না! হুজুর(আরমান) বারণ করে দিয়েছে তোমাকে বলার জন্য। কিন্তু আমি শুনে ফেলেছি।’
মেয়েটার পরের কথাগুলো ঠিকমত কানে গেলো না মধুর! আশরাফির অ্যাক্সিডেন্টের খবর শুনেই আকস্মিক পাণ্ডুবর্ণ, ফ্যাকাসে, রক্তশূন্য হয়ে গেলো তাঁর রোগামুখখানা। নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলো না সে। থর-থর করে সমস্ত শরীরে কাঁপনি দিয়ে উঠলো ! চোখমুখ অন্ধকার দেখলো সে! নির্বাক, নিস্তব্ধ চোখে ফ্যালফ্যাল মেয়েটার দিকে তাকিয়ে থেকে আচমকাই মূর্ছা গেলো সে। মেয়েটা ‘মধুমা’ বলে চিৎকার দিয়ে ধরে ফেললো। তাঁর একহারা শরীরে মধুর ভার ঠেকানো গেলো না। ফলাফলস্বরূপ মধুকে নিয়ে মেঝেতে পড়ে গেলো সে!
★
ব্রোথেলেরই একটা মেয়ের বুকে মাথা রেখে দিশেহারা, উন্মাদের মত কাঁদছে মধু। আত্মগ্লানিতে নিজের ভেতরের ‘মেহেরটা’ সাপের মত দংশন করছে তাঁকে। তার ওপর জেদ করেই এই অঘটন ঘটিয়েছে আশরাফি! তাঁকে এত কষ্ট দেওয়া মোটেই উচিৎ হয় নি মধুর! তাঁর বোঝা উচিৎ ছিলো সেও একটা মানুষ! ধৈর্যের একটা সীমা আছে তাঁর! অনেক বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলেছে মধু! এসব কথা মনে পড়তেই পাগলের মত নিজেকে আঘাত করা শুরু করলো মধু! আশেপাশে মেয়েরা সবাই যথাসাধ্য চেষ্টা করলো তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্যে। কিন্তু কোনভাবেই শান্ত করা গেলো না মধুকে। বেশ অবাক হলো সবাই! কারণ ইতোপূর্বে মধুমাকে মানসিক ভাবে এতটা ভেঙ্গে পড়তে দেখে নি তাঁরা। নিজের স্বভাবসুলভ গাম্ভীর্য ভুলে গিয়ে পাগলের মত বিলাপ করছেন মানুষটা। তাঁর কান্না দেখে সবারই চোখে পানি চলে এলো।
অনকক্ষণ যাবত মধুর ফোন থেকে সোহাগের নাম্বারে ডায়াল করা হচ্ছে। কিন্তু রিসিভ করছে না কেউ। ভয়ে আতংকে মধুর চিৎকার আরো বেড়ে গেলো। উন্মাদের মত, গায়ে মাথায় বুকে চাপড় মেরে বললো,’সব দোষ আমার। আমি একটা ডাইনী! আমার জন্যেই সব হয়েছে!’
দুইতিনজন মিলে হাত চেপে ধরলো মধুর। গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করে বললো,’কিচ্ছু হয় নি মধুমা। সব ঠিক হয়ে যাবে।’
মধুর ক্লান্ত, অশ্রুসিক্ত ক্রন্দনে ভেঙে পড়লো! ভগ্ন কণ্ঠে বললো,’খোদা কেন আমার এত বড় সর্বনাশ করতে চাইছেন বলতো? আমার দোষের সাজা কেন তিনি আরেকজনের মাথায় চাপিয়ে দিলেন?’ আমাকে কেন চোখে পড়লো না তাঁর?’ বোধকরি এই স্বীকারোক্তির পরে মধুর কষ্টের বর্ণণা দেওয়ার আর কোন প্রয়োজন নেই। আশরাফি যে তাঁর কতটা আপনার সেসব বর্ণণা দেওয়াও নিতান্তই অমূলক!
★
হস্পিটালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে অচেতন হয়ে পড়ে আছে আশরাফি। মুখে অক্সিজেন মাস্ক লাগানো! মাথায়, হাতে পায়ে ব্যান্ডেজ! ভোররাত থেকেই অর্থোপেডিক বিভাগে প্রায় চারঘণ্টা যাবত সার্জারি হয়েছে তাঁর। ডান পা, বাম হাত সহ মাথাসহ বেশ কিছু জায়গায় আঘাতটা বেশ গুরুতরই ছিলো! রক্ত দিতে হয়েছে দুই ব্যাগ। অপারেশন শেষ করে সাথে সাথেই আইসিউতে শিফট করা হয়েছে।
এদিকে ভোর চারটা থেকেই ইমার্জেন্সির বাইরে দাঁড়িয়ে আশরাফি জ্ঞান ফেরার অপেক্ষা করছে সোহাগ এবং নাঈম। হস্পিটাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অ্যাক্সিডেন্টের খবর শোনার পর হুঁশ ছিলো না দুজনের কারোরই। মাঝরাতে কাঁচা ঘুম থেকে উঠে কিসের ওপর দিয়ে ছুটে এসেছে নিজেরাও জানে না তাঁরা! পরনের পোশাকটাও চেইঞ্জ করার সময় নেয় নি। আধঘন্টার ভেতরে হস্পিটালে এসে হাজির হয়েছে! সেই থেকে এই অবধি এখনো হস্পিটালেই আছে!
সকাল আটটার দিকে নার্স এসে জানালো চব্বিশ ঘণ্টার ডেডলাইন দিয়েছে ডাক্তার! এর ভেতরে জ্ঞান না ফিরলে রিস্ক আছে। কথাটা শোনার পর দুই বন্ধুর কেউ মিনিটখানেকের জন্য কোন কথা বলতে পারলো না। ফ্যালফ্যাল করে একে অপরের দিকে চেয়ে রইলো শুধু।
রাগে দুঃখে নাঈম দাঁতেদাঁত চেপে বললো,’সব দোষ ঐ মেয়েটার। ঐ মেয়েটার জন্যই রাফির এই অবস্থা! ওকে সামনে পেলে খুন করবো আমি!’ কথা শেষ করে নিজের হাতের মুঠোয় সজোরে ঘুষি মারল সে।
সোহাগ জবাব দিলো না। মলিনমুখে চুপচাপ বসে রইলো। এইমুহূর্তে তাঁর যাবতীয় চিন্তা কেবল তাঁর অসুস্থ বন্ধুটিকে নিয়ে। মধু কি করেছে না করেছে সেসব পরে দেখা যাবে!
কিন্তু আশরাফি! আশরাফির যদি সত্যিই কোন ক্ষতি হয়ে যায়! আর ভাবতে পারলো না সে। বন্ধুপ্রীতিতে চোখজোড়া ছলছল হয়ে উঠলো তাঁর স্বভাবের দিক থেকে তাঁর এই বন্ধুটা কিছুটা রাগী হলেও ভেতরটা কিন্তু খুবই নরম! স্বচ্ছ জলের মত পরিষ্কার তাঁর মন! কখনো কারো খারাপ চায় নি! বারবার নিজে ঠকেছে কিন্তু একবারের জন্যেও নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে ঠকানোর কথা ভাবে নি। অথচ সৃষ্টিকর্তা তাঁর কপালেই কিনা রাজ্যের সমস্ত দুঃখ দিয়ে ভরিয়ে দিলেন! টলমল করতে থাকা চোখের পানি নিয়ে আইসিউর ভেতরের অচেতন মানুষটার দিকে চাইলো সে!
এদিকে নাঈম বিবর্ণ মুখে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। স্বভাবের দিকে থেকে যদিও খানিকটা শক্ত ধাঁচের যে কিন্তু আজকে উত্তেজনা চেপে রাখতে পারলো না! উপরন্তু সোহাগের কান্নারত মুখ দেখে আরো ভড়কে গেলো। আতংকিত কন্ঠে ধমক দিয়ে বললো,’কাঁদবি না খবরদার। কথায় কথায় মেয়েমানুষের মত কান্না কিসের? ও কি মরে গেছে নাকি? মোছ চোখের পানি! কিচ্ছু হবে না রাফির।’
প্রতিবাদ করলো না সোহগা। নিরবে চোখের পানি মুছে নিলো সে। পকেট থেকে ফোন বের করলো সময় দেখার জন্য। সুইচ অন করতেই দেখলো স্ক্রিনে চুয়ান্নটা মিসড কল ভেসে উঠেছে। তাও আবার একটা আননোন নাম্বার থেকে! যারপরনাই অবাক হলো সোহাগ! এত সকালে একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে কে ফোন করবে তাঁকে? সময় নষ্ট না করে নিজেই কল ব্যাক করলো সে!
★
সোহাগ হ্যালো বলতেই বাঁধভাঙ্গা কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো মধু। হাজার চেষ্টা করেও সবেগে বেরিয়ে আসা কান্না চেপে রাখতে পারলো না সে! এদিকে তাঁর ক্রন্দনরত মেয়েলি কন্ঠস্বরটা ঠিক চিনে উঠতে পারে নি সোহাগ। সে পূর্বের ‘হ্যালো, হ্যালো’ করে গেলো। মধু কান্না থামানোর বৃথা চেষ্টা করে বললো,’আপনার বন্ধু এখন কেমন আছে ভাইয়া?’
এতক্ষণে মধুকে চিনতে পারলো সোহাগ। নিমিষেই মুখ কালো করে ফেললো সে। তাঁর বিবর্ণ মুখের দিকে তাকিয়ে নাঈম ইশারায় জিজ্ঞেস করলো, ‘কে?’
সোহাগ নিঃশব্দে মুখভঙ্গি করে বোঝালো মধু ফোন করেছে। তার নাম শুনতেই ফের খেপে গেলো নাঈম। সোহাগের কাছ থেকে ছোঁ মেরে নিয়ে বললো,’তোমার সাহস তো কম নয়! এতকিছুর পরেও তুমি আবার ফোন করেছো! অসভ্য, নির্লজ্জ বেহায়া মেয়ে! তোমার নামে থানায় মামলা করবো আমি!
অপ্রত্যাশিত আক্রোমণে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো মধু! গোদের ওপর বিষফোঁড়া স্বরূপ তাঁর ব্যথায় পুনরায় আঘাত করলো নাঈম। তথাপি গায়ে মাখলো না সে! কান্নারত করুণ গলায় বললো,’আমি সব দোষ স্বীকার করছি ভাইয়া। আমার জন্যই আপনার বন্ধুর এই অবস্থা। আপনাদের যত ইচ্ছে আমাকে শাস্তি দিবেন। কিন্তু আগে আমাকে হসপিটালের ঠিকানাটা দিন। আপনার বন্ধু সুস্থ হলে এসব নিয়ে কথা বলার অনেক সুযোগ পাবেন। কিন্তু এখন নয়! এখন আগে আপনার বন্ধুর সুস্থ হওয়াটা জরুরি।’
-‘সেই বিষয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না! তুমি নিজের চরকায় তেল দাও!’
মধুর অসহায়, নিঃসম্বল ভিখিরির মত করুণ আকুতি জানিয়ে বললো,’আমি আপনার পায়ে পড়ছি ভাইয়া।।’
-‘যত যাই করো না কেন হস্পিটালের ঠিকানা আমি তোমাকে দেবো না। তোমার এসব নাটকে আশরাফিকে বোকা বানাতে পারলেও আমাকে পারবে না। কারণ, অনেক আগেই তোমার সত্যিকারের রূপটা চিনে গেছি আমি। সুতরাং আমার সঙ্গে সব নাটক করে লাভ নেই!’
মধুর আকুতি,মিনতি, করুণ আহাজারি কোন কিছুতেই কোন কাজ হলো না। উল্টে নাঈমের একের ওপর এক অপামানে জর্জরিত তার ভেতরটাকে। বারবার করে অনুনয় বিনয় করার পরেও কিছুতেই মধুকে হাসপাতালের ঠিকানা দিতে রাজী হলো না নাঈম!
বাধ্য হয়ে অন্য পস্থা অবলম্বন করলো মধু! চোখ মুছে গম্ভীর গলায় বললো,’ভালোয় ভালোয় বলছি হস্পিটালের ঠিকানাটা দেবেন কি না?’
-‘না দেবো না। কি করবে তুমি?’
-‘ঠিকানাতো আমি জোগাড় করেই ছাড়বো! যেভাবেই হোক! কিন্তু আমার শুধু একটা কথা জানতে ইচ্ছ্র করছে আপনাদের বন্ধু অ্যাক্সিডেন্ট করে হাসপাতালাতে ভর্তি হওয়ার পরেও আপনারা আমাকে তাঁর কাছে যেতে দেন নি এটা জানার পর আপনাদের সাথে তাঁর সম্পর্কটা ভালো থাকবে তো? ভেবে বলছেন?’
-‘মানে?’
প্রথমে জবাব দিলো না মধু। তার ধারণা প্রশ্নটা ঠিকই বুঝতে পেরেছে নাঈম। না বোঝার ভান করছে। কিছুক্ষণ সময় নিয়ে পুনরায় গম্ভীর, থমথমে গলায় বললো,’মানে কিছুই না। আমার যেটুকু বলার ছিলো আমি বলে দিয়েছি। বাকি আপনাদের মর্জি!
নাঈম মধুর কথার পুনরাবৃত্তি করে বললো,’কি বলতে চাইছো তুমি? তোমার জন্য রাফি আমাদের সাথে সম্পর্ক নষ্ট করবে?’
-‘সেটা আপনিই ভালো জানেন। আপনাদের বন্ধুত্বের সম্পর্কের মাঝখানে আমি ঢুকতে চাইছি না। কিন্তু আমার ধারণা আপনি খুব ভালো করেই চেনেন আপনার বন্ধুকে। সেই হিসেবে আপনার বন্ধু আমার জন্য কি করতে পারে, কতদূর যেতে পারে সেটাও আপনার অজানা থাকার কথা নয়? তবু কথাগুলো আরেকবার স্মরণ করিয়ে দিলাম আপনাকে।’
মধুর কথাগুলো একবর্ণও মিথ্যে নয়! বাস্তবিকই আশরাফিকে ভালো করে চেনে তাঁর বন্ধুরা। এবং এ-ও জানে এতকিছুর পরেএ এই মেয়ে যা বলবে তাই মুখ বুঝে মেনে নেবে আশরাফি! সত্যিমিথ্যা কোনকিছু যাচাইয়ের প্রয়োজন মনে করবে না।
হুমকিতে কাজে হলো। নরম হয়ে এলো নাঈমের গলা। এই মেয়ের বিশ্বাস নেই! আশরাফির কানে সত্যিমিথ্যা কি প্যাচ লাগাবে কে জানে? শেষে বন্ধুর ভালো করতে গিয়ে উলটে সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয়ে হতাশ কন্ঠে বললো,’ঠিক আছে। হস্পিটালের ঠিকানা মেসেজ করছি তোমাকে। তবে এখানে এসে কোনরকম ঝামেলা করলে কিন্তু খবর আছে!’
এতসহজে নাঈম রাজি হয়ে যাবে মধু ভাবতে পারে নি। কান্নার মাঝেও মুখে হাসি ফুটে উঠলো তাঁর! নাইমের কথার জবাবে বাধা দিয়ে বললো,’মেসেজ করার দরকার নেই। আপনি মুখে বললেই হবে। আমি লিখে নিতে পারবো।’
অগত্যা বাধ্য হয়েই মধুকে ঠিকানাটা দিতে হলো নাঈমের। মনে মনে আশরাফির ওপর খুব বিরক্ত হলো সে! তাঁর মূর্খামির জন্য মাথায় উঠেছে এই মেয়েটা!
.
.
.
চলবে