#মধুবালা,১৮,১৯
অরিত্রিকা আহানা
পর্বঃ১৮
রাগে মুখ লাল হয়ে আছে মধুর। এই নিয়ে তিনবার আশিরাফিকে ডেকে পাঠিয়েছে সে। কিন্তু আসে নি আশরাফি। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে আবার খবর পাঠালো। চতুর্থবারেও এলো না আশরাফি। নিচের ঘরের সুলেখার সাথে গল্প করছে সে। গল্প বলতে, আসলে মধুর জীবনে ঘটে যাওয়া কাহিনী সমূহের বর্ণনাই করছিলো সুলেখা।
এদিকে মধু নিজের ঘরে বসে ছটফট করছে। জ্ঞান ফিরতেই সে সর্বপ্রথম যেই প্রশ্নটা করেছে সেটা হলো আশরাফি বাড়ি ফিরেছে কি না। ফেরে নি শোনার পর থেকেই মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো তাঁর। অত্যাধিক রাগে প্রথমে সুলেখাকে ডেকে আনার জন্য খবর পাঠালো। কিন্তু সংবাদবহনকারী ফিরে এসে জানালো সুলেখা ব্যস্ত আছে। এখন আসতে পারবে না।
ধক করে জ্বলে উঠলো মধুর চোখজোড়া। দাঁতমুখ খিঁচে ফেললো সে। বুকের ভেতরটা জ্বালাপোড়া করছে তাঁর! মুখে স্বীকার না করলেও আশরাফি সঙ্গে সুলেখার অকৃত্রিম ঘনিষ্ঠাতা সহ্য করতে পারছিলো না সে। আর যাইহোক অন্তত চোখের সামনে এসব সহ্য করা যায় না। এরপর আশরাফিকে ডেকে আনার জন্য খবর পাঠালো। সে-ও যখন এলো না তখন অভিমানে, অবহেলায় চোখে পানি চলে এলো মধুর। বিছানার বালিশ আঁকড়ে ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে ফেললো সে।
★
মেঝেতে বসে আরমানের কুকীর্তির বর্ণণা করছিলো সুলেখা। খাটের ওপর বসে মনোযোগ দিয়ে শুনছিলো আশরাফি। একপর্যায় সুলেখা দাঁতকিড়মিড় করে বললো,’আমার তো মাঝে মাঝে মন চায় হারামজাদাটাকে গরম পানিতে সিদ্ধ করে চামড়া তুলে নেই। কিন্তু সাহসে কুলায় না। ব্যাটার গায়ে মহিষের মত জোর!’
তাঁর বলার ঢং দেখে হেসে ফেললো আশরাফি। সুলেখাও হাসলো। ঠিক সেইসময়ে দরজায় এসে হানা দিলো মধু। বাইরে থেকে হাসির শব্দ শুনে মাথায় রক্ত উঠে গেলো তাঁর। দরজায় পাট্টায় সজোরে বাড়ি মেরে দাঁতেদাঁত চেপে বললো,’এতবার খবর পাঠালাম! ফিরিয়ে দিচ্ছিলে কেন?’
নিঃসন্দেহে প্রশ্নটা আশরাফিকে উদ্দেশ্য করেই করা হয়েছে। কিন্তু সুলেখা সেটা বুঝতে পারলো না। কৈফিয়ত দেওয়ার ভঙ্গিতে কিছু বলতে যাচ্ছিলো সে তার আগেই আশরাফি জবাব দিয়ে বসলো। গম্ভীর গলায় বললো,’ব্যস্ত ছিলাম! কিন্তু তুমি এখানে কি করছো? আমি তো পুরো টাকা পেমেন্ট করেছি।’
রাগে মুখ লাল হয়ে গেলো মধুর। তাঁর শরীর খারাপের কথাটা পর্যন্ত একবার জিজ্ঞেস করলো না। তীব্র অভিমানে আশরাফির দিকে চাইলো না সে। একদিকে কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছে আবার মুখ ফুটে কিছু বলতেও পারছে না। সেই সুযোগে আশরাফি যা খুশি তাই করছে। আর সুলেখা! যেই আশরাফির কাছ থেকে প্রশ্রয় পেয়ে সে তো মাথায় চড়ে বসেছে। রাগত মুখে সুলেখাকে উদ্দেশ্য করে বললো,’তোর শরীর খারাপ তাই খোঁজ নিতে এসেছিলাম।’
সুলেখা তখন গল্প বলার মুডে। আশরাফির মত মনোযোগী শ্রোতা পেয়ে গল্প বলার আগ্রহটাও তুঙ্গে! মধুর কথা শুনে অবাক হয়ে তাঁর মুখের দিকে চাইলো। তাঁর শরীর খারাপের কথাটা তো মিথ্যে! বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর মধুর মিথ্যে বলার কারণটা বুঝতে পারলো সে। চোখেমুখে হাসি ফুটে উঠলো। দুষ্টু হেসে চোখ বড় বড় করে বললো,’কই না তো মধু মা। আমি তো ঠিকই আছি! ‘
মধু থতমত খেয়ে গেলো। পাছে তাঁর রাগটুকু আশরাফির কাছে ধরা পড়ে যায় তাই বিব্রত মুখে দ্রুত নিজের কথা সংশোধন করে বললো,’না মানে। শরীর খারাপ কি না সেটাই জিজ্ঞেস করতে এসেছি। তোর তো প্রায়ই শরীর খারাপ থাকে তাই।’
-‘আমি একদম ঠিক আছি মধুমা। তুমি আমাকে নিয়ে কোন চিন্তা করো না। তোমার শরীর খারাপ তুমি গিয়ে বরং রেস্ট নাও।’
সুলেখার ঢং দেখে রাগে গা জ্বলে যাচ্ছিলো মধুর। তথাপি নিজেকে সংযত করে নিলো সে। শান্ত গলায় কিছু বলতে যাচ্ছিলো, ভেতর থেকে আশরাফি পুনরায় সাড়া দিয়ে বললো,’জিজ্ঞেস করা শেষ? ও ভালো আছে। শুনেছো? এবার তুমি আসতে পারো। শুধুশুধু আমার সময় নষ্ট করো না।’
আগুনে ঘি ঢেলে দিলো আশরাফি কথাটা। জ্বলজ্বল করে উঠলো মধুর চোখজোড়া। সুশ্রী শান্ত মুখখানা ধারালো,কঠিন হয়ে উঠলো। তিরস্কারের সুরে বললো,’তর দেখছি আর সইছে না!’
-‘সইবে কেন? সয় না বলেই তো এখানে এসেছি।’
এবার আর আত্মসংবরণ করতে পারলো না মধু। দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে গেলো সে। ইশারায় বেরিয়ে যেতে বললো সুলেখাকে। আশরাফির দেখেও না দেখার ভান করে মুখ টিপে হাসলো। সুলেখা বেরিয়ে গেলে খপ করে তাঁর একটা হাত ধরে নির্দেশের সুরে বললো,’চলো আমার ঘরে চলো!’
আশরাফি কৃত্রিম অবাক হওয়ার ভান করে বললো,’কেন তোমার ঘরে কেন? আমার কাছে এখন টাকা নেই।’
এইকথাটা তীব্রভাবে আঘাত করলো মধুকে। ইতোপূর্বে তাঁর বলা কথাগুলোরই শোধ নিচ্ছে আশরাফি। তথাপি নিরবে একঝলক আশরাফির মুখের দিকে চেয়ে মাথা নিচু করে ফেললো সে। কিন্তু হাত ছাড়লো না। টেনে বের করে নিয়ে গেলো আশরাফিকে। আশরাফিও বাধ্য ছেলের মতন পেছন পেছন বেরোলো।
দোতলা উঠে নিজের ঘরে ঢুকেই দরজা বন্ধ করে দিলো মধু। চারপাশে একবার চোখ বুলিয়ে তাঁর খাটের ওপর বসলো আশরাফি। মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি চাপলো। ইচ্ছে করেই শার্টের প্রথম তিনটে বোতাম খুলে দিলো সে। সেদিকে চোখ পড়তেই লজ্জায় আরক্তিম হয়ে গেলো মধু। দ্রুত চোখ নামিয়ে নিলো সে। ধমক দিয়ে বললো,’এসব কি? শার্ট খুলছো কেন?’
-‘আমি ভাবলাম তুমি আমাকে ভালোবাসবে বলে তোমার ঘরে নিয়ে এসেছো। কেন আনোনি বুঝি?’
লজ্জায় মধুর গালদুটো পাকা টমেটোর মত লাল হয়ে গেলো। অস্বস্তি ঠেকাতে মুখ ঘুরিয়ে নিলো সে। বিড়বিড় করে বললো,’অসভ্য!’
হাসলো আশরাফি। শাটের বোতাম পুনরায় লাগাতে লাগাতে বললো,’লজ্জা লাগছে?’
জবাব দিলো না মধু। আশরাফির এমন উদ্ভট আচরণ করবে ভাবতেই পারে নি সে। অসভ্যটা মধুর জালে মধুকেজ ফাঁসিয়েছে। আশরাফির তাঁর লাজুক, ভীরু মুখ পানে চেয়ে ফের হাসলো। গলাটা সামান্য গম্ভীর করে নরম গলায় বললো,’কেন আমাকে মিথ্যে বলেছিলে মেহের? নিজের সম্পর্কে এমন জঘন্য কথা বলতে একটুও বুক কাঁপে নি তোমার? আমি কতটা কষ্ট পেয়েছিলাম তুমি জানো?’ আর্দ্র হয়ে এলো আশরাফির কন্ঠস্বর।
নিরুত্তর রইলো মধু। সে মরেও গেলে সত্যিটা বলতে পারবে না আশরাফিকে। এখান থেকে ফেরার সব পথ বন্ধ হয়ে গেছে তাঁর। আর যদি ভুল করেও সেই বন্ধ পথ কোনদিন খুলে যায় তথাপি আশরাফির সঙ্গে কখনো মিলবে না। নীলার সঙ্গে এ্যাংগেইজমেন্ট হয়ে গেছে তাঁর। বিয়েটা হয়ে গেলেও সে মধুর কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হবে।
তাকে চুপ করে থাকতে দেখে আশরাফি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,’তুমি কেন আমাকে কষ্টটা বুঝতে চাও না মেহের? কেন তুমি আমাকে এত দুঃখ দাও? তুমি তো ভালো করেই জানতে,যে যাই বলুক না কেন আমার কাছে সবার আগে তুমি! তোমার সম্মান। তবে কেন তুমি আমাকে সত্যিটা বললে না? কি অসহ্য যন্ত্রণায় আমার এতগুলো দিন কেটেছে তুমি জানো? মনে হচ্ছিলো মরে যাই। তোমাকে স্বামী সন্তান নিয়ে সুখে সংসার করতে দেখলেও আমার এতটা কষ্ট হতো না যতটা কষ্ট তোমাকে এখানে দেখে হয়েছে। আর চুপ করে থেকো না মেহের, দোহাই তোমার! তুমি শুধু একবার বলো তুমি আমার সঙ্গে যেতে চাও আমি তোমাকে নিয়ে দূরে কোথাও চলে যাবো। কেউ কিচ্ছু জানবে না।’
-‘আমি এখানে স্বামীর সংসারই করছি।’
-‘আবার মিথ্যে কথা?’, রাগে অসহ্য হয়ে ধমক দিলো আশরাফি।
-‘আমি কোন মিথ্যে বলি নি।’
-‘তাহলে এত লজ্জা পাচ্ছিলে কেন তুমি? কেন আমার কাছে আসতে পারছিলে না? এসব তো তোমার অভ্যেস হয়ে যাওয়ার কথা। নিজের ইচ্ছেতেই তো এই ব্যবসায় নেমেছিলে?’
-‘তো? তাই বলে লজ্জা পাওয়া যাবে না? মেয়েরা স্বামী ছাড়া অন্য সকল পুরুষের সামনে লজ্জা পাবে এটাই তো স্বাভাবিক। তাছাড়া তোমাকে তো আগেই বলেছি আরমানের সঙ্গে কথা বলা ছাড়া আমি কারো সাথে কন্ট্রাক্ট করি না!
-‘এতই যখন পতিভক্তি তখন স্বামীর অনুমতি ছাড়া অন্য একটা লোককে নিজের ঘরে ডেকে আনলে কেন?’
-‘এনেছি তার কারণ আছে। তোমাকে আমি শেষবারের মতন নিষেধ করে দিচ্ছি এসব বাজে জায়গায় আর আসবে না তুমি। লোকে শুনলে কি বলবে? তোমার না বিয়ে ঠিক হয়েছে?’
-‘সেটা আমি বুঝবো। তোমার তাতে কি?’
-‘অতো কিছু আমি জানি না। তুমি আর আসবে না ব্যস। যদি আসো তবে আমি দারোয়ানকে নিষেধ করে দেবো সে যেন তোমাকে ঢুকতে না দেয়।’
-‘তা এই জোরটা কি কেবল আমার ওপরেই চলে? নাকি এখানে যারা আসে সবাইকে এই কথা বলো তুমি! ‘
-‘সবাইকে বলবো কেন? সবাইতো আর আমার চেনাজানা নয়!’
-‘ও তারমানে আমি কেবল তোমার চেনাজানা বলেই তুমি আমাকে এসব কথা বলছো?’
-‘হ্যাঁ। কারণ আমি চাই তুমি ভালো থাকো।’
স্থিরভাবে কিছুক্ষণ মূর্তির মত চেয়ে সজোরে তাঁর কোমরে একটা চিমটি কাটলো আশরাফি। ‘ও মাগো!’ বলেই লাফ দিয়ে সরে গেলো মধু। রাগে মুখ বিকৃত করে বললো,’অসভ্য! বখাটে। মেয়েদের কোমরে হাত দিতে লজ্জা করে না তোমার।’
-‘না করে না। আমি তো তোমার স্বামীর মতন সাধুও নই, ধোয়া তুলসী পাতাও নই। তাই আমার লজ্জা করে না।’
এই কথার জবাবে চুপ করে গেলো মধু। মনে মনে হাসলো সে। পাগলটা নিজের সঙ্গে আরমানের তুলনা করছে! মাথায় একফোঁটাও বুদ্ধি নেই। নইলে এই ভিত্তিহীন কথাগুলো মুখ দিয়ে বের করার আগে কমপক্ষে হাজারবার ভাবতো। কিন্তু এসব কথা বললে সুযোগ পেয়ে যাবে। আশরাফিকে রাগানোর চেষ্টা করে একটুখানি হাসলো সে। সম্মতিসূচক মাথা দুলিয়ে বললো,’ঠিকই বলেছে। আরমান সত্যিই খুব ভালো। সাধু কিনা জানি না কিন্তু তোমার চেয়ে তো আরমান হাজার গুনে ভালো। এই ব্যাপারে নিশ্চয়ই কোন সন্দেহ নেই।’
ইতোপূর্বেও সুলেখার মুখে আরমানের কথা শুনেছে আশরাফি। মধুর প্রতি দুর্বলতা আছে শয়তানটার। তাই সেই সুযোগে মধুকে একটু খেপাতে চাইলো সে। মুখটা বিচ্ছিরিভাবে বাঁকিয়ে তাচ্ছিল্যসের সুরে বলল,’ও হো,হো! আরমান আমার চাইতে হাজার গুন ভালো? খুব ভালো না?’
-‘ভালোই তো।’
-‘হ্যাঁ আমিও তো বলি ভালো। একেবারে দেবতা!আমি তো রাবণ!’
মধু হাসিচেপে বললো,’সে কখনো আমার গায়ে হাত দেয় নি!’
-‘সেই অধিকার আছে নাকি তাঁর?’
-‘এখানে অধিকারের পরোয়া কেউ করে না।’
কথায় মধুর সঙ্গে পেরে উঠা যাবে না। হাল ছেড়ে দিলো আশরাফি। হাই তুলে বললো,’খাবার দাবার কিছু থাকলে দাও। খেয়ে একটা ঘুম দেই!’
আতংকে চোখ বড়বড় করে তাঁর দিকে চাইলো মধু। বিস্মিত কন্ঠে বললো,’ঘুম দেই মানে? তুমি কি এখানে থাকবে?’
-‘হ্যাঁ।’
-‘তারমানে আমার কথাগুলো কানে যায় নি তোমার?’
-‘গিয়েছে কিন্তু সেগুলো মানার কোন প্রয়োজন মনে করছি না। হয় তুমি আমার সঙ্গে এখান থেকে যাবে নতুবা আমিও এখন থেকে এখানে থাকবো। এককাজ করো হাউজের বাইরে একটা সাইনবোর্ড লাগিয়ে দাও। মেয়ে কাস্টোমারদের নাহয় আমি সেবা দেবো।’
এবারে গলার স্বরটা নরম হয়ে এলো মধুর। আপাতত এই ছাড়া আর কোন উপায় নেই। আশরাফির মাথার কাছে মেঝেতে উপুড় বসে নরম গলায় বললো,’দেখো, তুমি কার কাছ থেকে কি শুনেছো আমি কিছুই জানি না। কিন্তু সত্যি বলছি আরমানের সাথে আমার বিয়ে হয়ে গেছে।’
এতক্ষণ ‘আরমান,আরমান’ করে খুব জ্বালিয়েছে তাঁকে। এবার আশরাফির পালা। মধুর অনুনয়ে বিন্দুমাত্রও পাত্তা দিলো না সে। ভ্রু জোড়া দুষ্টুভাবে নাড়িয়ে বললো,’সেজন্যই বুঝি স্বামী স্ত্রী আলাদা ঘরে থাকো?’
ধরা খেয়ে ফের রাগ উঠে গেলো মধুর। ক্ষিপ্ত কন্ঠে বললো,’থেকেছি বেশ করেছি। তোমাকে কৈফিয়ত দিতে হবে নাকি? তুমি ওঠো আমার বিছানা থেকে!’
-‘আমার পয়সা না উশুল করে আমি এক পাও নড়বো না।’
-‘ঠিক আছে তোমার টাকা আমি ফিরিয়ে দিচ্ছি।’
-‘ফেরত দিলেই বা আমি নিবো কেন? আমার সাথে একরাতের কন্ট্রাক্ট হয়েছে। সেটা মিটিও দাও!’
ঠোঁট চেপে কিছুক্ষন নিরবে আশরাফির মুখের দিকে চেয়ে থেকে বিরক্ত উঠে গেলো মধু। আশরাফি মুখটিপে হাসলো। বললো,’ঠান্ডা লাগছে মেহের। একটা চাদর হলে ভালো হতো!’
-‘নির্লজ্জ! বেহায়া!’ মুখ ঝামটা মেরে বেরিয়ে গেলো মধু। আশরাফি চোখবন্ধ করে হাতদুটো আড়াআড়ি ভাবে বুকের ওপর রেখে খুশি খুশি গলায় বললো,’ইশ! মেহের! রাগলেও তোমাকে যে কি অপূর্ব দেখায় ! আমার তো খালি জড়িয়ে ধরে ভালোবাসতে মন চাইছে! ‘
.
চলবে
#মধুবালা
অরিত্রিকা আহানা
পর্বঃ১৯
আরমান এসে গেছে। মধুকে রাতের খাবারের আয়োজন করতে বলে গোসলে ঢুকেছে সে। এদিকে তাঁকে ফিরতে দেখতে ভয়ে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলো মধুর। বুক ধড়ফড় শুরু হলো। বলা বাহুল্য, তাঁর ভয়ের কারণটা অবশ্যই আশরাফি। হাতে পায়ে ধরেও ফিরে যেতে রাজি করাতে পারে নি মধু। এসেছে অবধি একইরকমভাবে জেদ ধরে বসে আছে। মধুর মুখ থেক স্বীকারোক্তি না শোনা পর্যন্ত কিছুতেই এখান থেকে যাবে না সে। নিরুপায় হয়ে সোহাগকে খবর দেওয়ার চেষ্টা করেছিলো মধু। কিন্তু ফোন করার পর জানতে পারলো তাদের দুই বন্ধুকে বাইরে থেকে তালা বন্ধ করে এখানে চলে এসেছে আশরাফি। উপরন্তু আশরাফির নাম শুনতেই রাগে হিতাহিত জ্ঞান হারালো সে। ক্রুদ্ধ কণ্ঠে মধুকে জানালো ভুলেও যেন আজকে বাসায় না ফেরে আশরাফি। ফিরলেই তাঁকে জুতোপেটা করা হবে। মধুকেও সেই উপদেশ দেওয়া হল। ক্ষিপ্তস্বরে জানালো, জুতো মেরে বিদায় করো বেহায়াটাকে। তারপর ওর শিক্ষা হবে!’
ফোন কেটে দিলো মধু। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে পুনরায় ঘরে ফিরে গেলো সে। খাটের ওপর আধোশোয়া হয়ে গুনগুন করছে আশরাফি। গানের সাথে তালমিলিয়ে আবার আঙুলও নাচাচ্ছে । মধুর বিছানাটাকে একেবারে রাজসিংহাসনের মত দখল করেছে সে। মধু আড়চোখে সেদিকে একবার তাকিয়ে আলনা থেকে কিছু খোঁজার বাহানা মুখ ঘুরিয়ে নিলো। পাত্তা না পেয়ে মৃদু শীস দিলো আশরাফি। তৎক্ষণাৎ জ্বলে উঠলো মধু। সোহাগের কথাগুলো তখনো মাথা থেকে সরাতে পারে নি সে। তারওপর আরমান বাড়িতে আছে জানার পরেও আশরাফির ছেলেমানুষি আচরণ বেশ বিরক্ত করলো তাঁকে। দাঁতেদাঁত চেপে বললো,’খবরদার যদি একটা শব্দ করেছো। একদম খাটের নিচে ঢুকিয়ে বসিয়ে রাখবো। তারপর দেখবো কেমন শীস বাজাও!’
চুপ হয়ে গেলো আশরাফি। বাধ্য ছেলের মতন কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইলো সে। তারপরই আবার মিনমিন করে বললো,’ঠান্ডা লাগছে মেহের। সেই কখন তোমাকে চাদরের কথা বলেছি কই দিলে না তো?’ জবাবে মধু অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই ফের মুখে আঙুল দিলো সে। অতঃপর আরো কিছুক্ষণ মৌনমুখে বসে রইলো।
সুলেখা দরজার কাছে দাঁড়িয়ে ভয়ে ভয়ে বললো,’মধুমা তোমাকে নিচে ডাকছে!’
-‘তুই যা, আমি আসছি।’ সংক্ষিপ্ত জবাব মধুর।সুলেখা চলে গেলে আলমারি থেকে একটা রঙীন চাদর করে আশরাফির দিকে ছুঁড়ে দিলো সে। গম্ভীর গলায় বললো,’এই নাও ধরো তোমার চাদর। আর যদি কিছুর কিছুর জন্যে বলেছো তো খবর আছে! তোমার ফরমায়েশ খাটার জন্য আমি এখান বসে নেই। অনেক কাজ আছে আমার।’ কথা শেষ করে বেরিয়ে যাচ্ছিলো সে।
আশরাফি তখন চাদরটা নেড়ে চেড়ে দেখছিলো। দেখা শেষে বাধা দিয়ে বললো,’কিন্তু এই চাদরে তো হবে না!’
-‘হবে না মানে?’ মধু ভ্রু কুঁচকালো।
আশরাফি দুষ্টু হেসে বললো,’জ্যান্ত চাদর লাগবে।’
সিরিয়াস মুহূর্তে মশকরা! মেজাজ চটে গেলো মধুর। চাদরটা কেড়ে নেওয়ার জন্য তেড়ে আসছিলো সে কিন্তু মাঝপথেই অঘটন ঘটলো। তাড়াহুড়ার দরুণ পরিহিত শাড়ির সাথে পা পিছলে পড়ে যাচ্ছিলো সে! কিন্তু না শেষমেশ ঠাঁই হলো গিয়ে একেবারে আশরাফির বক্ষদেশে! অতঃপর দুহাতে তাঁকে জড়িয়ে ধরে, তাঁর সর্বাঙ্গ জ্বালা ধরিয়ে বিজয়ীর ভঙ্গিতে হাসলো আশরাফি। হাসতেই হাসতেই বললো,’কারেক্ট! একদম ঠিক জায়গায় এসে পড়েছো!’ অপ্রত্যাশিত পরাজয়ে ক্ষণকালের জন্য স্তম্ভিত হয়ে গেলো মধু। লজ্জায় লাল হয়ে গেলো সে।
আশরাফি ঠাট্টার সুরে বললো,’যেই জ্যান্ত চাদর চাইলাম অমনি একেবারে বুকে এসে পড়লে? উদ্দেশ্যটা কি হ্যাঁ? তোমার ভারে যদি আমার হাড়গোড় ভাঙ্গতো?’
-‘বেশ হতো। ছাড়ো আমাকে।’ ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট শুরু করে দিলো মধু। কিন্তু আশরাফির শক্ত হাতের বাঁধনে নড়বার জো নেই তাঁর। রাগে কনুই দিয়ে খোঁচা মেরে বললো,’ছাড়ো বলছি!’
আশরাফি ঠোঁট কামড়ালো। মুচকি হেসে বললো,’ছাড়তে পারি। কিন্তু আমাকে একটা শর্ত আছে!’
-‘আমি তোমার কোন শর্ত মানবো না।’
মধুর জবাবে আশরাফির চেহারায় তেমন কোন পরিবর্তন হলো না। সে আগেই ধারণা করে রেখেছিলো এমন কিছুই বলবে মধু। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো,’ফ্রিতে যদি একটা খুন করা যেতো তবে আমি কাকে খুন করতাম বলতে পারবে?’
জবাবটা মধুর জানাই ছিলো। গম্ভীর মুখে বললো,’আমাকে!’
আশরাফি জিভ কাটলো। বাচ্চা ছেলের মত দুদিকে মাথা নাড়িয়ে অনেকটা চুমু দেওয়ার ভঙ্গি করে বললো,’নাআ! নাআ! তোমাকে কেন মারতে যাবো? তুমি হচ্ছো গিয়ে আমার ময়না পাখি। সোনা ময়না! তোমাকে তো শুধু আদর করবো। খুন করবো তো তোমার বাবাকে।’ কথা শেষ চুমু দেওয়া ভঙ্গিতে পুনরায় ঠোঁট দুটো গোল করলো সে। মধু চোখ রাঙালো। হাসি চাপতে গিয়েও হো হো করে হেসে ফেললো আশরাফি। হাসতে হাসতেই বললো,’ঠিক আছে। আমার কোন শর্ত মানতে হবে না তোমাকে। আমার পাওনা আমি জোর করে আদায় করে নিতে জানি।’
-‘ছাড়ো বলছি!’ ধমক দিলো মধু। আশরাফি তাঁর রাগের পাত্তা না দিয়ে পূর্বের তুলনায় আরো বেশি করে ঝাপটে ধরে বললো,’বলো,আই লাভ ইউ! তবে ছাড়বো।’ ত্বরিতে মুখ ঘুরিয়ে নিলো মধু। প্রতিবার করে বললো,’জীবনেও না!’
সোজা কথায় কাজ হবে না বুঝতে পেরে আশরাফি মুচকি হাসলো। খোঁচা মেরে বললো,’ঠিক আছে বলার দরকার নেই! চুপ করে থাকো। আমি এভাবেই তোমাকে জড়িয়ে ধরে থাকি। কতদিন পর কাছে পেয়েছি! একটু আদর সোহাগ না হলে কি চলে? তোমার ঐ আরমানও এসে দেখুক একঘরে কি করছি আমরা! আমার তো ভালোই লাগছে!’ শেষটায় কোমরের চাপ বাড়িয়ে দিলো সে। মধু নিরুপায় হয়ে বললো,’বলছি, বলছি। আগে ছাড়ো।’
-‘উহু! আগে বলো।’
-‘বেশ বলবো না।’, রাগে ঠোঁট ফোলালো মধু।
যদিও আশরাফি জানে ছাড়া পেয়েই মধু পল্টি নেমে তথাপি ছেড়ে দিলো সে। তার এই প্রিয়তমাটি বড়ই শক্ত ধাঁচের! ভাঙবে তবুও মচকাবে না।
তবুও মনের ভেতর কিঞ্চিৎ আশা ছিলো মধু হয়ত বলবে। কিন্তু না!
ছাড়া পেয়ে তড়িৎগতিতে উঠে দাঁড়ালো মধু। রহস্যজনক হাসি ফুটে উঠলো মুখে। এই হাসির মানে আশরাফি অজানা নয়! তাঁকে ধোকা দেওয়া হয়েছে বুঝতে পেরে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো সে। বিরক্ত কন্ঠে বললো,’পারো তো কেবল আমার সঙ্গেই!’
মধু ভেংচি কেটে বললো,’হাদারাম!’
-‘ঘুরেফিরে এই হাদারামের কাছেই আসতে হবে।’
-‘আমার বয়েই গেছে!’, ফের ভেংচি কাটলো মধু।
মধুর কাছ থেকে কথা আদায় করে নেওয়ার সুযোগটা হাতছাড়া হয়ে গেছে বলে ভেতরে ভেতরে মনঃক্ষুণ্ণ হলো আশরাফি! মুখ বিকৃত করে অবজ্ঞাসুরে বললো,’হ্যাঁ! এখন তো বয়ে যাবেই! যাও, যাও! তোমার ঐ হরিদাস পালের কাছে যাও! সেবা করো তাঁর। এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন?’
বহু কষ্টে হাসি চেপে বেরিয়ে এলো মধু। মাঝে মাঝে আশরাফির এইসব ছেলেমানুষি কথাবার্তা ভালোই লাগে তাঁর! কিন্তু বুঝতে দেয় না! এদিকে সে বেরিয়ে যাওয়ার আশরাফি রাগে দুঃখে কিছুক্ষণ আরমানকে বকাবকি করে ফের আগের মত শুয়ে পড়লো।
★
আরমানকে খাবার দিয়ে সুলেখার কাছে গিয়ে শুয়ে পড়লো মধু। আজ রাতে আর কোনভাবেই নিজের ঘরে যাবে না সে। তার দৃঢ় বিশ্বাস একা পেলে তাঁর কাছ থেকে সব কথা আদায় করে নেবে আশরাফি। তখন আর কোন কিছুতেই শান্ত করা যাবে না তাঁকে। সেই ভয়েই মধুর পালিয়ে বেড়ানো। কিন্তু মাঝরাতেই ছটফট শুরু হয়ে গেলো তাঁর। আশরাফিকে একা ঘরে অভুক্ত রেখে এসেছে সে। কি জানি! তার অপেক্ষা করতে করতে না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়েছে কি না! অন্ধকারে চুপিচুপি উঠে গেলো। ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলো। বাতি জ্বালালো না।
শুয়ে পড়েছে আশরাফি। সে জেগে আছে কিনা সেটা পরীক্ষা করার জন্য ধীরে ধীরে খাটের পাশে গিয়ে বসলো মধু। রীতিমত অবাক হলো সে। আশরাফি বেঘোরে ঘুমাচ্ছে! মধু কিছুতেই ভেবে পেলো না এরকম একটা জঘন্য জায়গায় কি করে একটা মানুষ এমন নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারে! অথচ নিচের ঘরগুলোর চেহারা একেবারে অন্যরকম! তারই মত কিছু পুরুষ নোংরা খেলায় মেতে উঠেছে মেয়েদের শরীর নিয়ে! হয়ত আরমানও আছে তাদের দলে! আর এই মানুষটা কিনা দিব্যি ঘুমাচ্ছে! আশ্চর্য!
আশরাফির নিদ্রাহীন ক্লান্ত রাতের খবর না জানে বলেই মধুর অবাকের মাত্রাটা এত বেশি! কতদিন বাদে বুকের ওপর থেকে বোঝা নেমে গেছে আশরাফির! হালকা লাগছে নিজেকে! তাইতো মধুর জন্য অপেক্ষা করতে করতে ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়েছিলো সে।
তাঁর ঘুমন্ত মুখ পানে চেয়ে নিরবে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো মধু। আপন মনেই হাসলো সে। ইউনিভার্সিটি নামকরা একজন প্রফেসর কি না একটা পতিতা মেয়ের ঘরে ঘুমাচ্ছে এই খবর জানাজানি হলে চারদিকে ধিক্কার পড়ে যাবে! মান সম্মান বলে আর কিছু থাকবে না। অথচ এই নিয়ে কোন মাথাব্যথাই নেই পাগলটার। সে বসে আছে মধুকে ফিরে পাওয়ার জেদ ধরে! ইচ্ছাকৃত ভাবে নিজেকে জীবনটাকে তামাশা বানাতে চাইছে! কি করে তাঁকে ফেরাবে মধু! কি করে তাঁকে বোঝাবে সে যা চাইছে তা অসম্ভব!
নিরবে আশরাফির বুকের ওপর মাথাটা এলিয়ে দিলো মধু। আলতো করে চুমু খেয়ে তাঁর শরীরের ঘ্রাণ নিলো। বিষন্ন, আর্দ্র কণ্ঠে বললো,’কেন তুমি এত অবুঝ বলোতো? কেন তুমি এত স্বার্থপর? কেন তুমি কেবল নিজের সুখের কথাই ভাবো? তোমাকে কেউ ছোট করলে যে আমার কতটা কষ্ট হয় কেন তুমি সেটা বুঝতে পারো না? এমনিতেই আমার জন্য অনেক কথা শুনতে হয়েছে তোমাকে। আজ তোমার বন্ধুরা বলছে কাল জানাজানি হলে অন্যলোকে বলবে! আমি কি করে তোমার অসম্মান সহ্য করবো? তুমি আমাকে এই কোন পরীক্ষায় ফেললে? ‘
বলতে বলতেই কেঁদে ফেললো সে। বুকের ওপর শক্ত কিছুর নড়াচড়া টের পেয়ে সচেতন হলো আশরাফি। ঘুমঘুম চোখে ডাক দিলো সে,’মেহের?’
মধু অভিমানে, গ্লানিতে মাথা ঝাঁকিয়ে কান্নাস্বরে বললো,’মেহের নয়। বলো মধু!.. মেহের মরে গেছে।’
-‘কক্ষনো না!’
মধুর কান্নার বেগ বেড়ে গেলো। অভিযোগের সুরে বললো, ‘তোমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলাম বলেই বুঝি এভাবে আমাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে কয়লা বানানোর পণ করেছো ? নিজের ক্ষতি করে আমার ওপর প্রতিশোধ নিতে চাইছো? কেন? তারচেয়ে বরং একবারেই মেরে ফেলো না!’
আশরাফি হাসলো। মধুর অভিমানের বিপরীতে কিছু বলতে যাচ্ছিলো সে, মধু তড়িঘড়ি করে তাঁর ডান হাতটা নিজের মাথায় রেখে কাঁদোকাঁদো কন্ঠে বললো,’আমি কিছুতেই তোমার সেই আশা পূরণ হতে দেবো না। আমার মাথায় হাত রেখে প্রতিজ্ঞা করে তুমি আর কখনো এখানে আসবে না। যদি আসো তবে আমার মরা মুখ দেখবে!’
ঝট করে হাতের বাধন আলগা হয়ে গেলো আশরাফির। বিস্ফোরিত নয়নে অবাক হয়ে মধুর দিকে চেয়ে রইলো সে। মূর্তির মতোন জমে গেলো একেবারে। ক্ষণকাল চুপ থেকে গম্ভীর গলায় বললো,’তবে আগে কেন মরলে না? কেন এখানে পড়ে রয়েছো? এখানে পড়ে থাকার চেয়ে তো মরে যাওয়াও ভালো।’
-‘তারমানে আমি মরি বাঁচি তাতে তোমার কিচ্ছু আসে যায় না। তুমি আসবেই, তাইতো?’
-‘তুমি আমার সঙ্গে যেতে রাজি হলে আর আসার প্রয়োজন পড়বে না।’
জবাব না দিয়ে ফুঁপিয়ে উঠলো মধু। শেষচেষ্টা বলতে এইটুকুই ছিলো! এবার কি হবে? কি করবে মধু? কি করে আশরাফিকে বোঝাবে সে? হাতের মুঠোয় আশরাফির শার্ট খামচে ধরে পাগলের মত কান্না শুরু করে দিলো সে। বাধা দিলো না আশরাফি। অনেক দিনের জমানো কান্না সব বেরিয়ে আসুক। বুকের ভার নেমে যাক! মধু কাঁদতেই কাঁদতেই ব্যাকুল হয়ে বললো,’তুমি চলে যাও প্লিজ। আমাকে আমার মত থাকতে দাও!’ আশরাফি জবাব দিলো না। সস্নেহে ডান হাতটা মধুর মাথায় রাখলো কেবল!
.
.
.
চলবে