এক_খণ্ড_কালো_মেঘ #পর্ব_৫০

0
748

#এক_খণ্ড_কালো_মেঘ
#পর্ব_৫০
#নিশাত_জাহান_নিশি

হুট করে কেন যেন রাফায়াতের গলা শুকিয়ে এলো! চোখের কোণে অবাধ্য জলেরা চিকচিক করে উঠল। আচমকাই সে আবেগ আপ্লুত হয়ে উঠল। অয়ন্তীর ভীতিকর মুখের দিকে তাকাতেই তার কষ্টের মাত্রাটা যেন অতিরিক্ত বেড়ে গেল!

রাফায়াতের চোখেমুখে এহেন অপ্রতুল বিষাদের ছাপ দেখে অয়ন্তীর ভয়ের মাত্রাটা যেন দ্বিগুন, তিনগুন, চারগুন বেড়ে গেল। চক্ষুভরা টইটম্বুর জল নিয়ে অয়ন্তী এক দৃষ্টিতে রাফায়াতের দিকে তাকালো। চোখের পলক পড়ার পূর্বেই সে তার ডান হাতটি দ্বারা রাফায়াতের খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি যুক্ত গালে মলিন হাত ছুঁয়ালো। অবিন্যস্তভাবে গালটিতে দু-একবার চাপড় মেরে ভরাট গলায় শুধালো,,

“বলুন না? কোথায় যাবেন আপনি?”

তাৎক্ষণিক অয়ন্তীর মায়ায় ভরা অতুল বেদনাহত মুখশ্রী থেকে রাফায়াত তার সংকুচিত মুখখানি সরিয়ে নিলো। কেন যেন ফুঁপিয়ে কান্না আসছিল তার! এক প্রকার চিৎকার করে-ই কাঁদতে ইচ্ছে করছিল। তবে এই মুহূর্তে তা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এতে অয়ন্তীর ভয়ের মাত্রাটা আরও পেয়ে বসবে। তাই পরিস্থিতি বিগড়ে না দিয়ে বরং পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে তোলাটাই শ্রেয়। অকাতরে গড়িয়ে পড়তে থাকা চোখের অশ্রুবিন্দু গুলোকে লুকিয়ে দু’হাতের উল্টো পিঠ দ্বারা মুছে নিলো রাফায়াত। জোরপূর্বক হেসে ব্যাকুল অয়ন্তীর দিকে তাকালো। দু’হাতে অয়ন্তীর গাল দুটো চেপে ধরে কপালে কপাল ঠেকাল। মিহি হেসে বলল,,

“কোথায় যাব আমি হ্যাঁ? তোমাকে ছেড়ে? এই দু জাহানে আমার মা-বাবার পর তুমি ছাড়া আর কেই বা আছে? আমি তো জাস্ট কথার কথা বলছিলাম অয়ন্তী। মানুষ তো আর আজীবন বেঁচে থাকার জন্য পৃথিবীতে আসেনা। মৃ’ত্যু অনিবার্য। হয়ত কেউ আগে ম’রে, নয়ত কেউ পরে। একদিন না একদিন ম’র’তে তো হয়-ই৷ তাই বলছিলাম, যদি কখনও এমন দিন আসে যে আমি আর এই পৃথিবীতে নেই তুমি কখনো আ’ত্ন’হ’ত্যার মত নি’কৃ’ষ্টতম পথটি বেছে নিবেনা। জানোই তো, ‘আ’ত্ন’হ’ত্যা মহাপাপ। ইহকালের সুখ শান্তি থেকে তুমি যেমন বঞ্চিত হবে তেমনি পরকালের সুখ শান্তি থেকেও। সব পাপের ক্ষমা হলেও এই পাপের কিন্তু ক্ষমা হবেনা অয়ন্তী। আর আমি কখনও চাইব না আমার অয়ন্তী জা’হা’ন্নামে নিক্ষিপ্ত হোক। আমি চাইব আমার অয়ন্তী যেন সবর করে। আল্লাহ তা’আলার উপর ভরসা রাখে। ইহকালে যেমন আমরা একসাথে ছিলাম, আছি হয়ত ভবিষ্যতে ও থাকব। ঠিক তেমনি যেন পরকালেও আমরা একসাথে একে অপরের পরিপূরক হয়ে থাকতে পারি।”

অয়ন্তীর ভয় যেন কিছুতেই কাটছিলনা। কান্নার ঢেউ বেগতিক বাড়তেই লাগল। উদ্বিগ্নমনা হয়ে সে অধীর গলায় রাফায়াতকে বলল,,

“এসব কথা এখন কেন আসছে রাদিফ? কেন আপনি হঠাৎ আমাকে এভাবে কষ্ট দিচ্ছেন? প্রচণ্ড ভয় হচ্ছে আমার রাদিফ। এসব কেন বলছেন বলুন তো?”

“আই ডোন্ট নো অয়ন্তী। আমি কেন এখন এসব বলছি! তবে যা বলছি মন থেকে বলছি। আমি থাকি বা না থাকি তুমি কখনো আমার কথার বিরুদ্ধে যাবেনা। যদি যাও তবে আমি ম’রেও শান্তি পাবনা অয়ন্তী! ভেবে নিব আমাদের ভালোবাসা মিথ্যে ছিল। তুমি কখনো আমাকে মন থেকে ভালোবাসো নি!”

“ধ্যাত। আপনার সাথে আর কথাই বলব না আমি। সবসময় অকারণে আমাকে কাঁদান, কষ্ট দেন। গর্দবের মত আবোল তাবোল বকেন। আপনি খুব খা’রা’প রাদিফ। খুব খা’রা’প।”

রাফায়াতকে ছেড়ে অয়ন্তী কাঁদতে কাঁদতে বসা থেকে উঠার পূর্বেই রাফায়াত অয়ন্তীর ডান হাতটি পেছন থেকে টেনে ধরল। দুঃখ ভুলে সে আচমকা ব্যগ্র হাসল! অতিশয় ডানপিটে গলায় বলল,,

“ইশশশ! কাল কি-না আমাদের ফার্স্ট নাইট আর আজ কি-না উনি আমার সাথে কথা-ই বলবে না বলছে। খা’রা’পির তো এখনো কিছুই দেখোনি জানেমান। কাল রাতে দেখবে! হাড়ে হাড়ে টের পাবে তোমার রাদিফ কতটা খারাপ!”

লজ্জায় গাঁ কাটা দিয়ে উঠল অয়ন্তীর।রাফায়াতের এহেন ঠোঁট কাটা কথাগুলো অয়ন্তীকে মাঝেমধ্যে অতিরিক্ত লজ্জার মধ্যে ফেলে দেয়। জবান বন্ধ হয়ে আসে তখন তার। শিরদাঁড়া বেয়ে উষ্ণ ঘাম ঝড়তে থাকে। বুকের ধুকপুকুনি বন্ধ করতে হলেও তখন পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করে তার। লোকটা যেন সবসময় প্রস্তুত হয়ে থাকে তাকে লজ্জা দেওয়ার জন্য। সঙ্গে সঙ্গেই মাথা নুইয়ে নিলো অয়ন্তী। চোখের জল মুছে হযবরল গলায় বলল,,

“ধ্যাত। বিয়ে-ই করবনা আপনাকে!”

“ওহ্ আচ্ছা। তাই?”

“হ্যাঁ তাই।”

“আরেকবার বলো?”

“দেখি হাতটা ছাড়ুন। শাড়ি পাল্টাতে হবে।”

“বলে যাও এরপর ছাড়ছি।”

“কী বলব?”

“ঐ যে বিয়ে করবেনা আমায়।”

“সত্যিই তো করব না!”

নিমিষের মধ্যেই অয়ন্তীর হাওয়া ফুস হয়ে গেল! অয়ন্তীকে ঘুরিয়ে নিয়ে রাফায়াত সরাসরি তার কোলে বসিয়ে দিলো। রাগে অতি রঞ্জিত হয়ে দাঁতে দাঁত চেপে সে হঠাৎের মধ্যেই অয়ন্তীর গলায় গভীর এক কা’ম’ড় বসিয়ে দিলো! টনটনে ব্য’থা’য় অয়ন্তী আহ্ করে উঠতেই রাফায়াত গরম চোখে অয়ন্তীর দিকে তাকালো। চোয়াল শক্ত করে বলল,,

“আর বলবা কখনো আমাকে বিয়া করবা না? এই নিয়ে অনেকবার কথাটা বলেছ। মাথা গরম হয়ে যায় আমার এই কথাটা শুনলে। বুঝতে পারো না তুমি?”

ব্য’থা’যুক্ত জায়গাটিতে হাত রেখে অয়ন্তী ন্যাকা কান্না করে বলল,,

“কু’ত্তা। দেখেশুনে জংলী কু’কুর’কে বিয়ে করছি আমি!”

“হ্যাঁ আমি কু’ত্তা’ই! আর একবার বলো বিয়ে করবা না?”

“পাগল নাকি? কে যেচে গিয়ে কু’কু’রের কা’ম”ড় খেতে যাবে?”

“দেট’স গ্রেট মাই সুইটহার্ট।”

বলেই রাফায়াত গলা থেকে অয়ন্তীর হাতটা সরিয়ে ব্য’থা’যুক্ত জায়গাটিতে দীর্ঘ এক চু’মু এঁকে দিলো। ভালোবাসায় সি’ক্ত হয়ে অয়ন্তীকে তার প্রশ্বস্ত বুকের মাঝে চেপে ধরল। অল্প সময় মৌণ থেকে অতি প্রেমমাখানো গলায় বলল,,

“কাল থেকে আমাদের জীবনের নতুন একটা অধ্যায় শুরু হবে পরাণ। আ’ম সো এক্সাইটেড। আমাদের এতগুলো বছরের ভালোবাসা কাল পূর্ণতা পাবে। সবকিছু কেমন যেন স্বপ্নের মত মনে হচ্ছে।”

“এ্যাহ্। আমার কোন এক্সাইটমেন্ট নেই! কাল থেকেই আমার জীবনটা ন’র’ক হয়ে উঠবে! আপনার ট’র্চা’র সহ্য করতে হবে।”

“ইট’স লাভ ট’র্চা’র বেইবি। নট অনলি ট’র্চা’র!”

কদাচিৎ হেসে রাফায়াত অয়ন্তীর সমস্ত শরীরে শু’ড়’শু’ড়ি দিতে লাগল! খিলখিল করে হাসতে হাসতে অয়ন্তী মেঝেতে প্রায় লুটিয়ে পড়ছিল। আহাজারি করে বলছিল রাদিফ ছাড়ুন। নাছোড়বান্দা রাফায়াত কেবল মুগ্ধ হয়ে অয়ন্তীর হাসিমাখা মুখখানি দেখছিল। সমস্ত মুখমণ্ডল যেন অবিলম্বেই টগবগে লাল বর্ণ ধারণ করছিল অয়ন্তীর। দেখতে বড্ড নাদুসনুদুস দেখাচ্ছিল। চোখ দুটিতেও স্বচ্ছ পানিরা টলমল করছিল। হাসলে কত সুন্দরী, মায়াবী, অমায়িক দেখায় অয়ন্তীকে। মেয়েটা কেন এভাবে সবসময় হাসেনা? সামান্য দুঃখেই কেন এত কষ্ট পায়, এত বেশী কান্না করে? একটু আগেও তো কেমন যেন ফ্যাচ ফ্যাচ করে কাঁদছিল সে। বিশ্রী দেখাচ্ছিল তখন৷ আর এখন? কতটা সুশ্রী দেখাচ্ছে তাকে! চোখ ধাঁধিয়ে যাওয়ার মত সুশ্রী। সবশেষে রাফায়াত পেরেছে কান্না ভুলিয়ে অয়ন্তীর মুখে হাসি ফুটাতে। উদ্দেশ্য যেন সফল হলো তার!

_____________________________

পরের দিন সুষ্ঠুসম্মতভাবেই অয়ন্তী এবং রাফায়াতের বিয়েটা সম্পন্ন হলো! অনামিকার মৃ’ত্যু’তে পরিবারের বর্তমান বি’ক্ষি’প্ত অবস্থা দেখে অয়ন্তীর মন সায় দিচ্ছিলনা পার্লারে গিয়ে জাঁকজমকভাবে সেজেগুজে আসতে! তবে ইতি অয়ন্তীকে পার্লারের মত করেই সুনিপুণভাবে বাড়িতে যতটা সম্ভব সাজিয়ে দিয়েছিল! সাজ দেখে বুঝাই যাচ্ছিল না এটা সাধারণ কোনো সাজ। অয়ন্তীর বিয়েতে এসে ইতি তার সমস্ত অতীত ভুলে গিয়েছিল! রাফায়াত এবং অয়ন্তীর সাথে অতি স্বাভাবিকভাবেই মিশেছিল। এমনকি ফারহানও অয়ন্তী এবং রাফায়াতের বিয়েটা মন থেকে মনে নিয়েছিল। অয়ন্তী তার ভাগ্যে ছিলনা বলে বিষয়টা খুব সহজেই মেনে নিলো! এসবের মাঝেও অয়ন্তী এবং রাফায়াত কখনই চায়নি তাদের বিয়েটা এমন সাদামাটাভাবে হোক! তবে সমসাময়িক পরিস্থিতির চাপে পড়ে এমন রসকষহীনভাবেই তাদের বিয়েটা করতে হলো।

কনের সাজেই অয়ন্তীকে বাসর ঘরে বসানো হলো। রাফায়াতের ভাবি, আলিজা এবং রাফায়াতের নিকটস্থ আত্মীয়স্বজনরা অয়ন্তীর সাথে নানা ধরনের ঠাট্টা মশকরা করতে লাগল৷ প্রথম প্রথম লজ্জায় অয়ন্তী কুঁকিয়ে উঠলেও পরক্ষণে আবার তাদের সাথে হাসি ঠাট্টায় মেতে যেত। বাবা-মায়ের কথা তেমন মনে পড়ছেনা তার! কারণ, সে যখন ইচ্ছা তার বাবা-মায়ের সাথে দেখা করতে পারবে৷ প্রয়োজনে সারাক্ষণ তার বাবা-মায়ের কাছে গিয়ে থাকতেও পারবে। মুখোমুখি তাদের বাসা৷ তাই খারাপ লাগার কোনো অবকাশ-ই নেই।

চঞ্চল অনেক চেয়েও রাফায়াত এবং অয়ন্তীর বিয়েতে আসতে পারেনি! মোদ্দা কথা চঞ্চল চায়নি রাফায়াতের বিয়েতে এসে নতুন করে কোনো ঝামেলা বা অশান্তি করতে! মির্জা ফখরুল হকের স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা জারি আছে রাফায়াতের বিয়েতে চঞ্চলের এটেন্ড করাটা! যা রাফায়াত খুব ভালো ভাবেই জানে। তাই সে চঞ্চলকে তেমন জোর করেনি তার বিয়েতে আসার জন্য। তবে ভিডিও কলে চঞ্চল প্রথম থেকে শেষ অবধি রাফায়াতের বিয়ে দেখেছে। কিছুক্ষণ হায় হুতাশ করেছে তো কিছুক্ষণ রাফায়াতকে পঁচিয়েছে!

রাত তখন এগারোটার কাছাকাছি প্রায়। রাফায়াত তার মায়ের মুখোমুখি চুপটি করে বসে আছে। চোখে ভাসা ভাসা জল মিসেস শায়লা বেগমের! মনে তীব্র ভয় নিয়ে তিনি রাফায়াতের হাতটি টেনে ধরলেন। ভরাট গলায় শুধালেন,,

“একটা প্রশ্ন করি বাবা?”

মৃদু হেসে রাফায়াত তার মায়ের হাতটিতে চুমু খেল। নরম স্বরে বলল,,

“করো মা।”

“অয়ন্তীকে পেয়ে আমাকে ভুলে যাবি না তো বাবা?”

“এসব তুমি কী বলছ মা? তোমাকে ভুলে যাব কেন?”

“ভয় হয় বাবা। অয়ন্তীকে তুই এত ভালোবাসিস! মাঝে মাঝে মনে হয় আমার থেকেও হয়ত বেশী ভালোবাসিস!”

দীর্ঘশ্বাস ফেলল রাফায়াত। তার মায়ের দিকে সরল দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। শান্ত এবং স্বাভাবিক স্বরে বলল,,

“তোমার পরে যদি কাউকে ভালোবাসতে হয় সেটা অয়ন্তী মা। যদি অনেস্টলি বলি, তবে বলব তোমাদের দুজনকেই আমি সমানভাবে ভালোবাসি মা। কাউকেই কম বেশী না। তোমরা দুজনই হলে আমার জীবনে অপরিহার্য। তুমি ছাড়া যেমন আমার জগৎ অন্ধকার, তেমনি অয়ন্তীকে ছাড়াও মা। দিনশেষে তোমরা দুজনই আমার স্বস্তির জায়গা। যাদের চোখের দিকে তাকালে সব কষ্ট ভুলে যায়। তুমি যেমন মৃ’ত্যু’স’ম যন্ত্রণা সহ্য করে আমাকে জন্ম দিয়ে পৃথিবীর মুখ দেখিয়েছ মা, তেমনি অয়ন্তীও আমার জীবনে এসে আমার অন্ধকার জীবনটাকে আলোয় আলোয় ভরিয়ে দিয়েছে। তাই তোমরা দুজনই আমার কাছে সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া এসব উদ্ভট প্রশ্ন তোমার মাথায় আসল কীভাবে মা?”

ছেলের কথায় খুশি হয়ে মিসেস শায়লা বেগম চোখ থেকে আনন্দ অশ্রু ছেড়ে দিলেন। আদুরে হয়ে তিনি ছেলের কপালে চু’মু খেয়ে দিলেন। আবেগঘন গলায় বললেন,,

“যা বাপ। ঘরে যা। অয়ন্তী তোর জন্য অপেক্ষা করছে।”

রাফায়াতও ভীষণ আবেগ আপ্লুত হয়ে মিসেস শায়লা বেগমের কপালে চু’মু খেয়ে বলল,,

“ঘুমিয়ে পড়ো মা। অনেক রাত হয়েছে।”

“ঠিক আছে বাপ। তুই যা।”

মিসেস শায়লা বেগমের থেকে বিদায় নিয়ে রাফায়াত তার বাসর ঘরের দিকে রওনা হলো। অমনি চতূ্র্দিক থেকে তার ভাবি মহল তাকে ঘিরে ধরল! দাবী তাদের একটাই। এক্ষণি তাদের হাতে পাঁচ হাজার টাকা ধরিয়ে না দিলে আজ আর তার বাসর ঘরে ঢুকা হবেনা! অনেক তর্ক বিতর্ক করেও রাফায়াত তাদের হাত থেকে মুক্তি পেল না! বাঞ্চাল আরিফ এবং তার বড়ো ভাইয়ের কথামত পকেট থেকে পাঁচ হাজার টাকা খসাতেই হলো! টাকা পেয়ে রাফায়াতের ভাবিরা অবশেষে রাফায়াতকে ছাড়ল। সবশেষে রাফায়াত বাসর ঘরে ঢুকার অনুমতি পেল।

রুমে ঢুকেই রাফায়াত প্রথমে রুমের দরজাটি ভালোভাবে ভেতর থেকে লক করে দিলো। অমনি তাজা ফুলের সুমিষ্ট সুবাসে ব্যাকুল হয়ে উঠল রাফায়াতের হৃদয় ও মন। সারা ঘরময় আজ বাহারী ফুলে সেজেছে। সেই ফুলগুলোর রানী হয়ে যেন অয়ন্তী তার বিছানায় রাজ করছে! সেদিকে এক্ষুণি নজর দিলো না রাফায়াত। বড়ো ঘোমটা টেনে বসে থাকা অয়ন্তীর দিকে না তাকিয়েই সে পুরো রুমে সর্তক দৃষ্টি নিক্ষেপ করল! দেয়ালের প্রতিটি আনাচ কানাচ থেকে শুরু করে এমনকি রুমে থাকা প্রতিটি আসবাবপত্র ও ঘেটে দেখল। খাটের তলা অবধিও সে উবুড় হয়ে দেখল! ঘোমটার তলা থেকে অয়ন্তী অস্পষ্টভাবে সব দেখছিল। ব্যাপারটায় সে ভীষণ বিরক্তবোধ করল! এতটা সময় ধরে ঘোমটার তলায় থাকা যায় না-কি? ঝট করে মাথা থেকে ঘোমটাটি খুলে অয়ন্তী অস্থির রাফায়াতের দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। বিক্ষুব্ধ হয়ে ঝাঁজালো গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,,

“এই? চোখ দুটো গেল না-কি আপনার? আমি এখানে। খাটের তলায় আপনি কী খুঁজছেন হুম?”

“আরে চেক করছি!”

“কী চেক করছেন?”

“আরিফ কোনো কলকাঠি নাড়ল কি-না!”

“মানে?”

“ফোনে শুনছিলাম আরিফ চঞ্চলের সাথে বলছিল আমাদের বাসর ঘরে না-কি সিসি ক্যামেরা লাগাবে! তাই একটু চেক করছিলাম।”

“এ্যাহ্! কী বলছেন এসব?”

“তবে এখন মনে হচ্ছে আমাকে বোকা বানানো হয়েছে। কই কোথাও তো কিছু দেখছিনা।”

বলেই রাফায়াত হাত দুটো ঝেড়ে উদগ্রীব চিত্তে বসে থাকা অয়ন্তীর দিকে তাকালো। অমনি বাঁকা হেসে সে এগিয়ে এলো অয়ন্তীর দিকে। হুট করেই অয়ন্তীর মুখোমুখি বসে সে বিছানার উপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা গোপালের পাপড়িগুলোকে মুঠোবন্দি করে নিলো। পাপড়িগুলো অয়ন্তীর সমস্ত মুখে ছিটিয়ে দিয়ে মারাত্মক সুন্দুরী রূপে বসে থাকা অয়ন্তীর দিকে নেশালো দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। কেমন যেন রসালো গলায় বলল,,

“কী বেবি? তৈরী তো?”

বিরক্তবোধ করল অয়ন্তী। ভ্যাপসা গরমে হাস ফাঁস করে উঠল। খরখরে গলায় বলল,,

“আসেন দুইটা চ’ড় লাগাই। এতক্ষণ ধরে আমাকে ওয়েট করাচ্ছিলেন কেন হ্যাঁ? দেখছেন না ভারি শাড়ি পড়েছি? এত এত অরনামেন্টস পড়ে এতক্ষণ অবধি থাকা যায় না-কি?”

দুষ্টু ভাব নিলো রাফায়াত। ঠোঁট কামড়ে ধরে ন্যাকা স্বরে বলল,,

“অহ্, সরি বাবু। আসো আদর দিই!”

আর এক মুহূর্তও ব্যয় না করে অয়ন্তীকে চেপে ধরল রাফায়াত! ফ্রেশ হওয়ার একটুখানি সময়ও দিলোনা অয়ন্তীকে। অয়ন্তীর কোনো কথাই যেন সে কানে তুলছিলনা! নিমিষেই তার অপরিমেয় ভালোবাসায় রাঙিয়ে তুলল অয়ন্তীকে!

#চলবে…?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here