প্রেয়সীর হৃদয় ব্যাকুল-৩৩,৩৪

0
1674

প্রেয়সীর হৃদয় ব্যাকুল-৩৩,৩৪

৩৩.
ডিসেম্বর গড়িয়ে জানুয়ারিতে পড়েছে মাস।আবহাওয়ার কিছুটা পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। তবে কনকনে ঠান্ডা এখনো উপভোগ করার মতো। আজ জানুয়ারির ছয় তারিখ! মাসের প্রথম সপ্তাহ! অরুর ইন্টার ফাইনালের রেজাল্ট বেরোবে। ঠিক দুপুর বারোটায় অনলাইনে চলে আসার কথা। এর আগে জানতে হলে কলেজ যেতে হবে।

আনোয়ার সাহেব মেয়ের রেজাল্ট বেরোবে শুনে আর অফিস গেলেন না। বরং বাক্স ভর্তি মিষ্টান্ন নিয়ে এসেছেন বিশ কেজি। প্রতিবেশী, আত্নীয় স্বজনদের দিবেন বলে৷ দিব্বি ব্যস্ত পায়ে ড্রয়িংরুমে বিচরণ করছেন। সিঙ্গেল মিষ্টান্ন বাক্স গুলোতে, পর্যাপ্ত মিষ্টি গুছিয়ে নিচ্ছেন। একেকজন প্রতিবেশীদের বাড়ি এভাবেই যাবে। তবে আত্নীয় স্বজনদের ব্যাপারটা ভিন্ন। তাদের বাড়ি কেজি হিসেবে যাবে! তিনি এখনই দশ কেজি আলাদা করেছেন।

অরুর খুব বাজে ভাবে ঠান্ডা লেগে বসেছে। সকাল থেকে টিস্যু ব্যবহার করে, ঘরবাড়ি ভরিয়ে ফেলেছে। এতক্ষণ সোফায় বসে টেলিভিশন দেখছিল। হুট করে জবেদা বেগম তাকে ডেকে বসে। তাই রাতারাতি আর টিস্যু গুলো সরাতে পারেনি। হুড়মুড় চলে গেল। কিছুক্ষণ পর মোস্তফা সাহেব ড্রয়িংরুমে এলেন। নিউজপেপারে চোখ রেখে সোফায় বসতে নিচ্ছিলেন! ঠিক অরুর ব্যবহিত টিস্যুর উপর প্রায়!

দীপ্ত ডাইনিং থেকে চেঁচিয়ে উঠলো, ‘চাচ্চু বসো না ওখানে! সর্দির টিস্যু দিয়ে অরু আপু ঘরবাড়ি, সোফা সবকিছু নষ্ট করে.. ‘

দীপ্তর মাথায় একটা ছোট থাপ্পড় বসিয়েছে আকাশ।পরপর দীপ্তর কানে টান মেরেছে বিদায় বেচারা চুপ করে গেল। অসম্পূর্ণ রয়ে গেল কথাগুলো। চমকিত মোস্তফা সাহেব আর বসলেন না। কিঞ্চিৎ ভুরু কুঁচকে সোফায় তাকালেন। সুমিতা বেগম মিষ্টি নিতে এসে এমতাবস্থা দেখে, মেয়েকে বকতে শুরু করেছেন। দ্রুত এগিয়ে বাম হাতে টিস্যুগুলো ডাস্টবিনে ফেলে দিলেন। মোস্তফা সাহেব দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, ‘অরুর জন্য ঔষধ আনা হয়েছে?’

আনোয়ার সাহেব মিষ্টির বাক্স গুনছিলেন। গুনা রেখে, ভাইয়ের প্রশ্নের জবাব দিলেন, ‘এনেছি। ঠান্ডা কমছেই না!’
‘আজ যাক। রাতের মধ্যে না কমলে আমাকে জানাবে!’
‘জি আচ্ছা ভাইয়া।’

বাপ-চাচাদের কীর্তিকলাপে অরু বেশ বিরক্ত এবং লজ্জিত। রেজাল্ট কী এখনো আউট হয়েছে নাকি! আগ বাড়িয়ে কীসব করে বেড়াচ্ছে! এখন যদি সে খারাপ করে! তারপর এই মুখ আর কিভাবে দেখাবে? আনোয়ার সাহেবের অত্যন্ত বিশ্বাস অরুর প্রাণে ডর-ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছে। প্রত্যেকবার রেজাল্ট আউটের দিন, অরুর মনে শুধু বাপ-চাচাদের প্রত্যাশা ধরে না রাখার ভয় কাজ করে। নাহলে রেজাল্ট নিয়ে অতটা মাথা ব্যথা হয়না!
আপাতত জবেদা বেগম অরুর হাতে কফি ধরিয়ে দিয়েছেন। তন্ময়ের জন্য! তন্ময় এখন বাড়িতেই আছে। অফিস যায়নি। কারণ বিকেলে সোজা বিজনেস ট্যুরে বেরোবে চট্রগ্রামের উদ্দেশ্যে। দু’চারটে মিটিং শেষ করে পরদিন রাতে ব্যাক করবে ঢাকা। অরু বিষয়টি শুনে বিচলিত হয়ে পড়েছে। তন্ময় দুদিনের জন্য চলে যাবে, এটা সে মানতে পারছেনা। অদ্ভুত শূন্যতা বুকের ভেতর এখনই অনুভব করছে। অদ্ভুত খারাপ লাগা চারিপাশে ভীড় জমিয়েছে।

অরুর রেজাল্ট বেরোবে শুনে শাবিহাও বাড়িতে। তার অফিস না যাবার আরেকটি কারণ রয়েছে অবশ্য। মোস্তফা সাহেব সাফসাফ জানিয়ে দিয়েছেন, এখন থেকে আর জব করার প্রয়োজন নেই শাবিহার। তখন জোরপূর্বক কাজে গিয়েছে নিজের ভাইয়ের কষ্ট দেখে। রেগে সেও তখন বাবার টাকায় চলবে না, স্বীদ্ধান্ত নিয়েছিলো। কিন্তু এখন তো সবকিছু ঠিক হয়েছে। মোস্তফা সাহেব তাই আর মেয়েকে কাজে যেতে দিবেন না। বাবার স্বীদ্ধান্তে শাবিহা নারাজ। সে কাজ করতে চায়। মুলত এরজন্য আজ সে বাড়িতেই। বাবার মুখোমুখি হয়ে কথা বলবে। অথচ মোস্তফা সাহেব সুযোগ দিচ্ছেন না কিছু বলবার। বিরক্ত হয়ে তন্ময়ের রুমে এসেছে সে। কথা বলবে তার ভাইয়ের সাথে। তন্ময় তখন মনোযোগ সহকারে কিছু ফাইলস চেক-আউট করছিলো।

শাবিহাকে দেখতেই চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। ‘কি হয়েছে?’ বলে সামনে অগ্রসর হতে লাগলো। বসতে ইশারা করলো। শাবিহা বসলো না। দাঁড়িয়ে রইলো মাথা নত করে। আঁখিদুটির নিচে কালো হয়ে আছে। ক্লান্ত দেখাচ্ছে মুখশ্রী। তাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে সারারাত ঘুমায়নি।

শাবিহা বলল, ‘তুমি কি ব্যস্ত?’
‘না।’
‘আমি কাজ করতে চাই।’
‘তাহলে করবি।’
‘বাবা যেতে না করে দিল।’
‘আমি কথা বলে নিব।’
‘ভাইয়া… আমি…’

শাবিহার গলা আটকে আসছে। এই প্রসঙ্গে কথা বলতে বেশ দ্বিধাবোধ করছে সে। দু ভাইবোনের আলাপ-আলোচনার মধ্যে হুট করে অরু চলে এলো। তবে ভেতরে ঢুকল না। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে পড়ল। লুকিয়ে গেল দরজার আড়ালে।
শুনতে পেলো তন্ময়ের গম্ভীর স্বরে বলা অনাকাঙ্ক্ষিত প্রশ্ন,’অয়নকে পছন্দ করিস?’

অরু নড়েচড়ে দাঁড়ালো। ভুত দেখার মতো চমকে গেল। প্রশ্নটির পর পরিস্থিতি থমথমে নিস্তব্ধতায় ঘেরা। শাবিহার জবাব এলো না। সে ক্ষীণ দৃষ্টিতে ভাইয়ের পানে তাকিয়ে। ঠোঁট ঠোঁট চেপে অরু চোখজোড়া বড়বড় করে রেখেছে। তারমানে কি তন্ময়ের কথা সত্য? শাবিহা আর অয়ন! অরুর মস্তিষ্কের সবকিছু গুলিয়ে আসছে।

তন্ময়ের গলা পুনরায় শোনা গেল, ‘কিছু ভেবেছিস? সিচুয়েশন বেশ খারাপ কিন্তু! বাবা এই বিষয়ে সহজে রাজি হবে বলে মনে হয়না। ইট উইল বি টাফ! আমি কি কথা বলব? নাকি আরও সময় লাগবে?’
‘অয়ন… ‘

তন্ময় কিঞ্চিৎ ভুরু কুঁচকে বলল,’অয়নকে বলেছিস?’
‘না!’
‘জানিয়ে দেখ। তুই তো একা সবকিছু হ্যান্ডেল করতে পারবি না। তোদের দুজনকে একসাথে এই সিচুয়েশনে ওভারকাম করতে হবে। আজ বাদে কাল তোকে দেখতে আসবে। বাবার কথাবার্তায় বোঝা যাচ্ছে, দেখতে এসে আঙটি বদল করে নিবেন।’
‘ভাইয়া..’
‘আমি জানি, অয়ন ভালো ছেলে। খুব মেধাবী এবং হার্ডওয়ার্কিং গায়। দু তিনবছর পর স্টাডি শেষ করে একজন ভালো বিজনেস ম্যান হয়ে উঠবে। অবস্থা আরও উন্নত হবে! কিন্তু এখনকার সিচুয়েশন তো আর তিন-চার বছরের জন্য ওয়েট করবে না। বুঝতে পারছিস? শাবিহা তুই কি শিয়র? আর ইউ? অয়ন এখনো ইমম্যাচিউর! আন-এডাল্ট! ভালোভাবে ভেবে নিয়েছিস?’

শাবিহা নিশ্চুপ হয়ে রইলো। খুব সময় নিয়ে বলল, ‘আমি ওকে ভা..ভালোবাসি!’

কিছুক্ষণ তন্ময় নিশ্চুপ থাকলো। শাবিহাকে ভালোভাবে দেখে তারপর বলল,’ফিরে এসে কথা বলবো বাবার সাথে। তুই অয়নকে জানিয়ে রাখ। সিচুয়েশন ওকেও হ্যান্ডেল করতে হবে।’

শাবিহা মাথা দোলাল। আলগোছে বেরিয়ে পড়লো। অরু নিজের রুমে ঢুকে গিয়েছে দৌড়ে। শাবিহাকে যেতে দেখে বুকে হাত চেপে নিশ্বাস ছাড়লো। সে কি খুশি হবে নাকি অবাক? অয়নকে তার খুব পছন্দ। ছেলেটা যেমন দেখতে সুন্দর তেমন তার চলাফেরা এবং ব্যবহার। সবকিছুই দুর্দান্ত সুন্দর। শাবিহার সাথে নিশ্চয়ই খুব মানাবে? অরুর ঠোঁট জুড়ে অমায়িক হাসি। সে এখন থেকেই ওদের দুজনের ভক্ত হয়ে গেল। ভালোভাবে দুজনকে নিয়ে ভাবতেই,
অদ্ভুত কিছু দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে এলো। যেমন দু’এক বছর আগে বৃষ্টির মধ্যে অয়নের সাথে যখন শাবিহার অফিসের সামনে গিয়েছিল কলেজ বাংক দিয়ে, তখন খুব করে খেয়াল করেছিল অয়নের নজর বারবার শাবিহাকে দেখছে। তারপর সিলেট গিয়েছিল যে তখনো প্রায়শই লক্ষ্য করেছিলো শাবিহা সর্বদাই অয়নের পাশাপাশি আছে! অবশ্য তখন এভাবে ভেবে দেখেনি তাই বুঝতে পারেনি! তবে এখন যখন কাহিনি খোলাসা হয়েছে, সবকিছু তার চোখে রোমান্টিক এবং প্রেমময়।

অরু কফির মগ হাতে উঁকিঝুকি মারছে। কেউ নেই! যেমন মাত্রই এসেছে তেমন ভান ধরে বেড়িয়ে পড়লো। এসে দাঁড়ালো তন্ময়ের রুমের সামনে। দাঁড়াতেই পরপর ঘাবড়ে গেল। একটা ফাইল হাতে তন্ময় দাঁড়িয়ে দরজার সামনেই। যেনো অরুর জন্য অপেক্ষা করছে।
ফাইলের একটা পৃষ্ঠা পাল্টে প্রশ্ন করলো, ‘মাত্র এলি?’
‘হু।’
‘আমিতো দেখলাম তুই কান পেতে দাঁড়িয়েছিলি।’

অরু নাক কুঁচকে বসলো। দেখে ফেলেছে! এরজন্যই এমন হাবভাব নিয়ে রেখেছে। অরু বিরক্ত সুরে বলল,’আমিতো শুনতে চাইনি।’
‘ওহ্।’

অরু কফির মগ এগিয়ে দিতে নিয়ে খেয়াল করলো, কফি ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে। দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে কফির দিক তাকিয়ে রইলো। এখন কি এই কফিটা ফেরত নিয়ে যাবে? আঁড়চোখে তন্ময়ের দিক তাকাল। কিছু প্রশ্ন আছে তার মনে। প্রশ্ন গুলো কী করবে? তন্ময় ঘুরে ভেতরে চলে গিয়েছে। অরু পেছন পেছন গেল। কফি টেবিলের উপর রেখে দিল।

ইনিয়েবিনিয়ে ধীর স্বরে প্রশ্ন করলো, ‘শাবিহা আপু আর অয়ন ভাইয়া কি সত্যিই প্রেম করছে?’

তন্ময়ের জবাব এলো না। সে ফাইল টেবিলে রেখে ঠান্ডা কফি হাতে নিল। কয়েক চুমুক বসিয়ে অরুর দিক তাকিয়ে রইলো। জবাব না পেয়ে অরু বলল,’আমি কাউকে বলবো না। সত্যি! বলেন না তারা প্রেম করছে কী? আমার না তাদের দুজনকে একসাথে অনেক ভালো লাগে। আর অয়ন ভাইয়াকে তো আমার হেব্বি পছন্দ!’

তন্ময়ের অসাধারণ মুখশ্রীর সামান্য পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেল। ভ্রু দুয়ের মাঝে সূক্ষ্ম ভাজ পড়েছে। মগে পুনরায় চুমুক দিতে নিয়েও দিল না। গম্ভীর স্বরে শুধালো, ‘তাই বুঝি?’
‘হু। আপনার ভালো লাগেনা?’
‘লাগেনা।’

অরু পিটপিট চোখে তাকাল। ভালো না লাগার কী আছে আশ্চর্য! কক্ষ জুড়ে পায়চারি করে আবারো তন্ময়ের সামনে এলো। তন্ময় কনসনট্রেশন নিয়ে ফাইল পড়ছে। সাবলীল ভঙ্গিতে অরু জিজ্ঞেস করলো, ‘আজ চট্রগ্রাম যাবেন?’
‘হু।’
‘চট্রগ্রাম অনেক সুন্দর তাই না?’
‘হু।’
‘আমি কখনো যাইনি।’
‘হু।’
‘ভাবছিলাম এবার গিয়ে ঘুরে আসবো।’
‘হু।’
‘আপনার সাথে আমাকে নিবেন?’
‘হু..কী!’

অরু খুশিতে গদগদ হয়ে উঠলো। শেষের ‘কী’ শব্দটি যেমন শোনেনি। ‘সত্যি নিবেন?’
‘না। সারাদিন মাথায় কি চলে তোর? শুধু আজগুবি! ধর, কফিটা গরম করে নিয়ে আয়।’

অরুর হাতে কফির মগ ধরিয়ে তন্ময় বারান্দায় চলে গেল। অরুর মুখমণ্ডল অন্ধকার তখন। সে কিছুক্ষণ চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে থাকলো বারান্দার দিক। তারপর হনহনিয়ে বেড়িয়ে পড়লো। আজ সে তন্ময়ের সঙ্গে এই বিজনেস ট্যুরে যাবেই যাবে! লাগলে পুরো বাড়ি মাথায় তুলবে! কিন্তু সে যাবেই যাবে!
_______________
অয়ন বন্ধুদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে। কথা বলছে! একসময় বন্ধুগন সব চলে গেল। পাশে রয়ে গেল সৌভিক। একটা সিগারেট ধরাতে গিয়েও ধরালো না অয়ন। সৌভিক তখন দিব্বি সিগারেটে টান মেরে চলেছে। হুট করে বলল,’দোস্ত মন খারাপ করিস না। সব ঠিক হইয়া যাইবো।’

অয়ন থমকে গেল। ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে বলল,’কী!’

সৌভিক অয়নের কাঁধ থাপড়ে বলল,’ব্যাটা প্রেমে এমন বাঁধা না আসলে হয় নাকি? আর তুই তো একটা চ্যাম্প, যে পরীর পেছনে ছুটেছে! ওমন পরী ধরতে গেলে ছ্যাকা একটু খেতেই হয়!’

অয়ন এবার পুরোপুরি সৌভিকের দিক ঘুরলো। তার কপাল এখনো মারাত্মক কুঁচকে। সৌভিক ও নড়েচড়ে দাঁড়ালো। দাঁত কেলানো বন্ধ করে, ঠোঁট ভিজিয়ে মাথা চুলকে নিল। অয়নের হাবভাবে বুঝে গেল, এই বোকার বাচ্চায় কিছুই জানে না। এখন? জানানো কি ঠিক হবে? অয়ন জিজ্ঞেস করলো, ‘কি হয়েছে? খুলে বল!’

সৌভিক সতর্কতা সহিত বলল,’শাবিহাকে পরশু দেখতে আসছে পাত্রপক্ষ! তুই জানিস না দোস্ত?আম্মার থেকে শুনলাম সেদিনই এনগেজমেন্ট হয়ে যাবে।’

অয়নকে স্তব্ধ দেখাল। তার চাহনি জলন্ত অগ্নির ন্যায়। সৌভিক ছোট ঢোক গিলে বলল,’দোস্ত আমি সত্যি কইতাছি।’
____________
অরুর রেজাল্ট এসেছে কিছুক্ষণ আগে। সে জিপিএ ফাইভ পেয়েছে। অরু সবসময় দুর্দান্ত রেজাল্ট করে এসেছে। এবারও ভিন্ন নয়।সবগুলো সাবজেক্টেই ভালো রেজাল্ট। আনোয়ার সাহেব আরও প্রফুল্লতায় মিষ্টি বিতরণ করছেন। হাসিমুখে মেয়ের প্রশংসায় মগ্ন তিনি।

প্রত্যেকবারই অরুর রেজাল্ট বেরোলে, বাবা এবং চাচারা তার একটি ইচ্ছে পূরণ করে। যা চায় তাই দেওয়ার হয়। এবারও মোস্তফা সাহেব হেসে শুধালেন, ‘কি চাই?’

অরু সঙ্গে সঙ্গে বলল,’যা চাই দিবে?’
‘হু।’
‘আমি চট্রগ্রাম যেতে চাই চাচ্চু!’
‘আচ্ছা যেও। সবাই মিলে…’
‘আমি আজই যেতে চাই।’

মোস্তফা সাহেব হঠাৎ আতংক চোখে তাকালেন অরুর পানে। আজ মানে? আজ তো তন্ময় চট্রগ্রাম যাবে! তারমানে…হুট করে তার চোখ চলে গেল কিছুটা দূরে। তন্ময় সিঁড়ির সামনে দাঁড়িয়ে। পিতা পুত্রের চোখাচোখি হলো মুহুর্তেই। মোস্তফা সাহেবকে আরেকটু স্তব্ধ করতে, হঠাৎ তন্ময় নিঃশব্দে বাঁকা হাসলো।

চলবে~
‘নাবিলা ইষ্ক’

প্রেয়সীর হৃদয় ব্যাকুল

৩৪.
তন্ময় গার্ডেনের মধ্যস্থানে দাঁড়িয়ে। হাতে কফির মগ। একটু পরপর তাতে চুমুক দিচ্ছে! দুপুরের সময় এখন। নির্জন চারিপাশ। কোলাহল নেই। প্রকৃতি শান্ত এবং প্রানবন্ত। দখিনা বাতাস বইছে। হুড়মুড়িয়ে বাতাস ছুটে এসে শরীর ছুঁয়ে দিয়ে, শান্ত হয়ে পড়ছে। আবার হুট করে অশান্ত হয়ে পুনরায় ছুঁয়ে দিয়ে যাচ্ছে। বাগানের ফুলগুলোও এই শান্ত এবং অশান্ত দখিনা বাতাসে দুলছে। হরেকরকম ফুলের সমাহার! একত্রে তাদের দোলানো আকৃতি দেখতে অসম্ভব আকর্ষণীয়!

মোস্তফা সাহেব তন্ময়ের পাশেই গম্ভীরমুখে দাঁড়িয়ে। ইতোমধ্যে গলা খাকড়ি দিয়েছেন কয়েকবার। পিঠে দু’হাত পেঁচিয়ে ছোট করে কেশে উঠলেন। যেমন কিছু বলতে চলেছেন। এবং বললেন ও গম্ভীর স্বরে, ‘অরুকে বলবে তুমি নিজের সাথে নিতে পারবেনা। তুমি একটা ধমক দিলে এই মেয়ে এখনো কীভাবে যাওয়ার জন্য জেদ ধরে থাকতে পারে, হ্যাঁ?’

তন্ময়ের গলার স্বর অস্বাভাবিক শান্ত,’দিয়েছিলাম ত।’

অপরদিকে মোস্তফা সাহেব ছেলের শান্ত স্বরে অশান্ত হয়ে উঠছেন,’তুমি ধমক দিয়েছ আর ও এখনো যেতে চাচ্ছে? অসম্ভব! তুমি নিতে নারাজ থাকলে ও এতদূর আসার সাহসই পেতো না। তুমি এক্ষুনি যাবে আর বড়ো ধমক দিয়ে বলবে, নিবেনা সঙ্গে! ব্যস।’

তন্ময়ের চেহারার কোনো পরিবর্তন দেখা গেল না। বাবার মতো সেও মুখশ্রী গম্ভীর করে রেখেছে। চোখের চাহনি দূরে সীমাবদ্ধ। মগে চুমুক বসালো। খুব সাবলীল ভঙ্গিতে বলল,’আজকাল ওকে ধমক দিতে আর ইচ্ছে হয়না। বুকে লাগে!’

মোস্তফা সাহেব তাজ্জব বনে গেলেন। দু’একবার মুখ খুলেছেন কিন্তু কিছু বলার ভাষা খুঁজে পেলেন না। অবশেষে সময় নিয়ে আঙুল তুলে ধমকে উঠলেন,’তু..তুমি এমন শান্ত চেহারা নিয়ে এভাবে অসভ্য কথাবার্তা কীভাবে বলতে পারো! অসভ্য ছেলে!’
‘যেতে চাচ্ছে ও নিজে। তাহলে অসভ্য আমি কীভাবে হলাম!’
‘অরু ছোটো! তুমি একজন সাবালক ছেলে হয়ে এভাবে বিহেভিয়ার কীভাবে করছ! ভবিষ্যতে তুমি ওর থেকে একশো হাত দূরে থাকবে।’
‘তোমার ভাতিজি নেচে-কুঁদে চলে আসে। ওকে গিয়ে থামাও।’

নিজের কথাগুলো শেষ করে, খুব উষ্কখুষ্ক ভঙ্গিতে চলে যাবার জন্য পা বাড়ালো। মোস্তফা সাহেব উচ্চস্বরে ডেকে গেলেন,’তন্ময় আমার কথা শেষ হয়নি এখনো!’

কে শুনে কার কথা। তন্ময় সুড়সুড় করে চলে গেল। মোস্তফা সাহেব চেয়ারে শব্দ করে বসলেন। উচ্চস্বরে স্ত্রীকে ডেকে চলেছেন। জবেদা বেগম তাড়াহুড়ো পায়ে আসতেই বললেন, ‘এক কাপ চা দাও ত।’
মাথা ঠান্ডা করার জন্য জবেদা বেগমের হাতের গরম গরম এক কাপ চা খেতে হবে এক্ষুনি। নাহলে তিনি রাতারাতি রাগে স্ট্রোক করে বসবেন নিশ্চিত।

অরুর জেদের কাছে অসহায় আনোয়ার সাহেব। বিচলিত চেহারা নিয়ে কয়েকবার বড়ো ভাইয়ের কাছে গিয়েছেন। কিন্তু মোস্তফা সাহেব গম্ভীরমুখে বসে আছেন! কোনোপ্রকার কথা বলতে চাচ্ছেন না! আনোয়ার সাহেব আবারো এলেন। পাশের চেয়ারে বসে নরম সুরে বললেন, ‘ভাইয়া! অরু খুব করে যেতে চাচ্ছে! আমাদের তন্ময় আছে যেহেতু যাক সাথে।এখানে কোনো সমস্যা থাকার তো কথা নয়।’

মোস্তফা সাহেব বিড়বিড় করে নিজ মনে আওড়ালেন,’ওই বড়ো সমস্যা।’

আনোয়ার সাহেব শুনতে না পেয়ে শুধালেন, ‘জি ভাইয়া?’
‘কিছু না। যাইহোক আমার কিছু বলার নেই। যা ইচ্ছে করো গিয়ে!’

আনোয়ার সাহেব অসহায় মুখে বসে রইলেন। ভাইয়ের নারাজি সে বুঝতে পারছেন! তবে নারাজি ঠিক কেন বা কি নিয়ে, তা বুঝতে পারছেন না! আগে প্রায়সময় তন্ময়ের বিজনেস ট্যুরে শাবিহা বা দীপ্ত বা রুবি গিয়েছে সঙ্গে। তাহলে অরু গেলে সমস্যা কী? তাদের সাথে তন্ময়ের ম্যানেজার তো থাকছেই। দেখে রাখবে সেখানে। আনোয়ার সাহেবের মনে কিছু প্রশ্ন রয়েছে! তবে বলার সাহস পাচ্ছেন না। আর যাইহোক তিনি রাগী মোস্তফা সাহেবের সামনে আপাতত কিছুই বলতে পারবেন না।
_________
অরুর একটি ছোট ল্যাগেজ আছে। পুতুলের ল্যাগেজ। ছোটোখাটো! এটাতে দুদিনের একটা ট্যুরের জন্য সরঞ্জাম নেওয়া যাবে। ল্যাগেজটি দিয়েছিল মোস্তফা সাহেব। যখন অরু ক্লাস সেভেন। পরিক্ষায় খুব ভালো করেছিল বিদায় উপহার স্বরুপ দেওয়া! সাধারণত এই ল্যাগেজ সে বের করেনা। নষ্ট করে ফেলার ভয়ে। তবে আজ এটাই নিতে ইচ্ছে করছে। ল্যাগেজে দুই স্যুট কামিজ এবং আরও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম গুঁছিয়ে নিয়েছে। সবকিছু তৈরি করে ল্যাগেজ আটকে দিল। ধীরেসুস্থে নিচে নেমে এলো। মোস্তফা সাহেব গম্ভীরমুখে বসে আছেন সোফায়। আনোয়ার সাহেব পাশেই বসেছেন। তিনি জিড়িয়ে জিড়িয়ে গরম চা খাচ্ছেন। জবেদা বেগম রান্নাঘরে। অরু ছোটছোট পায়ে এগিয়ে গেল। বাপ-চাচার সামনে মাথা নত করে দাঁড়িয়ে রইলো। মোস্তফা সাহেব গম্ভীর সুরে বললেন, ‘যেতে চাচ্ছ যাও! কথা ত শুনবে না আর!’

অরুর মুখশ্রী পূর্নিমার চাঁদের ন্যায়ে জ্বলজ্বল করে উঠলো । বত্রিশ দাঁত দেখিয়ে চেঁচানো গলায় বলল,’থ্যাংকিউ চাচ্চু!’

যতই নারাজ হোক না কেন মোস্তফা সাহেব। আদুরে মেয়ের খুশিতে তিনিও খুশি হতে বাধ্য। মেয়ের হাস্যজ্বল চেহারা দেখে আনোয়ার সাহেবও হাসলেন। হেসে বললেন,’তৈরি হয়ে নাও। বিকেলের আগেই বেরোবে তন্ময়!’

খুশিতে অরু সোফার চারপাশে ঘুরেছে কিছুক্ষণ। তারপর ছুটে চলল উপরে। সিঁড়ির সামনে মাত্রই তন্ময় এসে দাঁড়িয়েছে। সেদিকে ভালোভাবে খেয়াল করলো না অরু। ছুটে নিজের রুমে ঢুকে শব্দ করে দরজা লাগালো। এখন সে তৈরি হবে! সুন্দর ভাবে সাজগোছ করবে। আশপাশ দেখার সময় কই?

অরু চুরিদার পরেছে। চুল আঁচড়ে তৈরি হয়ে গিয়েছে। আয়নায় নিজেকে কয়েকবার দেখে নিয়েছে। কপালে টিপ দিতে গিয়ে দিল না। সুমিতা বেগমের ডাকে, ল্যাগেজ হাতে বেরিয়ে পড়লো। যাওয়ার সময় তন্ময়ের রুমে তাকাল। তন্ময় নেই!নিচে গিয়েছে হয়তো। অরুও দ্রুত পায়ে নিচে নামলো। জবেদা বেগম টিফিনবাক্স ধরিয়ে দিলেন হাতে। আনোয়ার সাহেব মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছেন।সকলের থেকে বিদায় নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো সে। তন্ময় গাড়ির ভেতরে ড্রাইভিং সিটে বসে। ল্যাগেজ পেছনে ঢুকিয়ে, সামনে এসে উঠে বসলো অরু। সিটবেল্ট বেঁধে ছোট শ্বাস ফেলে হেসে উঠলো। ঠোঁটের দুপ্রান্ত ছড়িয়ে গিয়েছে। একতরফা যুদ্ধের পর অবশেষে জয় তারই হয়েছে। এই দুর্দান্ত জয়ের দুর্দান্ত হাসি মুখশ্রী’তে লেপ্টে। তন্ময়ের দিক তাকিয়ে বলল, ‘দেখলেন ত আমি চট্রগ্রাম যাচ্ছি!’

তন্ময় জবাব দিলো না। তবে দু’একবার চোরাচোখে তাকিয়েছে অরুর দিক। ধীরেসুস্থে গাড়ি স্টার্ট করল। ছুটে চলল গাড়ি চট্রগ্রামের উদ্দেশ্যে। অরু সামনে তাকিয়ে। বিকেলের সোনালী আলোয় আলোকিত পৃথীবির বুকে, ভেসে বেড়াতে মনোযোগী হয়ে গেল। কাঁচ নামিয়ে বাহিরে দৃষ্টি দিয়ে রাখল। কিছুক্ষণ গুনগুন করে বলল,’একটা গান ছাড়েন ত।’

সময় নিয়ে তন্ময় বা’হাতে টিপে একটা গান ছাড়ল। গান খানা অরুর পছন্দ হলো না। কপাল কুঁচকে বলল,’অন্য একটা।’

তন্ময় পুনরায় পরিবর্তন করলো। এটাও অরুর পছন্দ হলোনা। এবার পরিবর্তন করতে বলেছে আর সঙ্গে সঙ্গে ধমক খেল। ধমক শুনে অরু ক্ষীণ কষ্ট পেলো যেমন। অভিমানী মন নিয়ে ঘুরে বসল। এক ধ্যানে বাহিরে তাকিয়ে রইলো। তন্ময়ের কথায় আর গ্রাহ্য করলো না। তার ডাকে সাড়া পর্যন্ত করছে না।

তন্ময় নিজ পছন্দের একটি গান প্ল্যা করেছে। অরুর গানটি পছন্দ হয়েছে তবে মুখে প্রকাশ করলো না। মুখমণ্ডল কালো করে শুনে গেল। চোরাচাহতনি’তে তাকিয়ে দেখল তন্ময়কে। তন্ময় যখন ড্রাইভ করে অরুর দেখতে ভালো লাগে। খুব আকর্ষণীয় লাগে বিষয়টা৷ এমন অনেক সাধারণ বিষয় ও তন্ময় করলে অরুর কাছে আকর্ষণীয় লাগে। যেমন এইযে ঘড়ি হাতে স্ট্রিং ঘোরাচ্ছে যে এই বিষয়টিও মারাত্মক চোখে লাগে অরুর।
________
মাগরিবের আজান শোনা যাচ্ছে। শাবিহার আড়মোড়া ঘুম ভেঙে গেল। জোরপূর্বক চোখজোড়া মেলে তাকাল। মাথা ধরে বসে রইলো ঝিম মেরে। বাবার সাথে রেগে নিজের রুমে বন্দী ছিলো সারাদিন। বলা যায় সারাদিন ঘুমিয়েছে। জানালার দিক তাকাল। অন্ধকার হয়ে এসেছে। বিছানা হাতড়ে ফোন হাতে নিল। স্ক্রিনে ভালোভাবে নজর দিতেই চোখ কপালে উঠে গেল। চল্লিশটা মিসডকল? শাবিহা হন্তদন্ত ভঙ্গিতে উঠে দাঁড়ালো। রুমের লাইট জ্বালাল। এতগুলো কল হঠাৎ করে অয়ন কেন দিয়েছে? চিন্তাভাবনা পড়ে!আপাতত তৎক্ষণাৎ কল ব্যাক করলো। অয়ন যেমন ফোন হাতে নিয়ে রেখেছিল। সঙ্গে সঙ্গে ধরেছে। শাবিহা জিজ্ঞেস করবে তার পূর্বেই অয়ন দ্রুততম গলায় শুধালো, ‘কই তুমি?’
‘কি হয়েছে! আমিতো বাসায়।’
‘ছাঁদে আসো।’

কল কেটে গেল। ফোনের দিক তাকিয়ে আছে শাবিহা। কি হলো? সে সেলফোন বিছানায় ফেলে ওয়াশরুম ঢুকল। ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এলো। ওড়না কাঁধে জড়িয়ে ছাঁদের উদ্দেশ্যে চলল। ছেলেটার হঠাৎ করে হলো কী? গলার স্বর এতটা বিচলিত শোনাচ্ছে কেন!

শাবিহাদের ছাঁদে বাতি লাগানো আছে। সন্ধ্যার পরপর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। আজ এখনো জ্বালানো হয়নি। তবুও চাঁদের আলোয় আলোকিত। সবকিছু স্পষ্ট চোখের সামনে। অয়ন আজ তাদের ছাদেই দাঁড়িয়ে। ঠোঁটে সিগারেট! হাফ প্যান্ট আর টি-শার্ট পরে। চুলগুলো উষ্কখুষ্ক। শাবিহার হাসি পেলো। এতটুকু ছেলে এমন গম্ভীরমুখ কেন করে রেখেছে! মনে হচ্ছে কাউকে অনায়াসে খেয়ে ফেলবে। শাবিহা হেসে এগোতে নিয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘কি এমন হয়েছে?’

অয়ন ঘুরে তাকাল। চোখের কোণ লালচে হয়ে আছে। শাবিহা কিছুটা ভড়কে গেল। অয়ন সিগারেট ফেলে এগিয়ে আসলো নিজে। প্রশ্ন করলো, ‘আমাকে কিছু বলবে?’
‘আমি বলব?’
‘তোমার কিছু বলার নেই?’

শাবিহা অপ্রস্তুত স্বরে বলল,’মানে?’
‘আমি না জানলে তুমি আদৌও বলতে?’

কথার মধ্যেই অয়ন তেড়েমেরে এগোচ্ছে। দাঁতে দাঁত চেপে রেখেছে সে। কপালের মধ্যস্থান কুঁচকে গিয়েছে মারাত্মক ভাবে। শাবিহা অন্যমনস্ক ভাবে কয়েক’পা পিছিয়ে গেল। অয়নের কথার মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারছেনা। পলকহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। হঠাৎ মগজধোলাই হলো তার। মুহুর্তে চোখ বড়বড় করে ফেললো। অয়ন কী জেনে গিয়েছে, তাকে দেখতে আসার বিষয়টা? তাই হবে হয়তো। সে কিভাবে বুঝিয়ে বলবে ব্যাপারটা? দ্বিধাবোধে আক্রান্ত শাবিহা দোটানায় পড়ে গেল।

অয়ন তখন রাগে থরথর করে কাঁপছে। সামনে কিছু একটা থাকলে ঘুষি মেরে রাগের নিয়ন্ত্রণ করতো। দুঃখের বিষয় তেমন কিছুই নেই চারপাশে। সামনে শুধু তার আদুরে শাবিহা দাঁড়িয়ে। এখন অয়ন তো আর তার আদুরে শাবিহাকে ঘুষি মারতে পারবেনা। বরংচ পারবে একটা চুমু দিতে। কিন্তু সেটা দেওয়ার সময় তো এটা নয়। এখন সে রেগে আছে। চুমু দিলে রাগ কীভাবে দেখাবে? অয়ন ভিষণ বিরক্ত হচ্ছে নিজের প্রতি। সামান্য রাগ সে ঠিকঠাক ভাবে করতে পারছেনা শাবিহার সামনে। আসলে দোষটা তার নয়৷ দোষ শাবিহার। ঘুম থেকে উঠে এমন নিষ্পাপ সরল মুখশ্রী নিয়ে এসেছে যে অয়নের রাগ থাকতে চাচ্ছে না। বরং এই মুখখানা ধরে সহস্র চুমু খেতে ইচ্ছে করছে! নিজের চুলগুলো দু’হাতে কপাল থেকে সরিয়ে বলল, ‘কথা বলছ না কেন! নাকি এনগেজমেন্ট সেড়ে এসে বলতে।’

শাবিহা নিজের শুকনো ঠোঁট জোড়া ভিজিয়ে নিল। উদ্বিগ্ন হয়ে বলল,’আমি সেই সম্পর্কে আজ বলতাম।’
‘তাই বুঝি? বলো তাহলে।’

অয়ন সমানে এগোচ্ছে সামনে। পেছাতে পেছাতে শাবিহা রীতিমতো দেয়ালে ঘেঁষে গিয়েছে। ছেলেটার সমস্যা কি? এভাবে এগোচ্ছে কেন! শাবিহা ধমক দিতে গিয়েও দিলো না। দোষ তো তার। তাই আজ সে অয়নকে সয়ে যাচ্ছে। নাহলে আকাশ ফাটিয়ে ধমকে উঠতো অয়নের উপর। এমন উষ্কখুষ্ক ব্যবহারের কোনো মানে হয়! শাবিহা নিজের গুছিয়ে রাখা কথাগুলো বলতে শুরু করলো,’এসব বিষয় আজ নতুন নয়। প্রস্তাব আসতেই থাকে। মুলত ভাইয়া আটকে রেখেছিল এতদিন। এবার বাবা বেশ সিরিয়াস। সে চাচ্ছে আমি বিয়ে করে নেই।’
‘আমাকে কেন জানাও নি?’
‘জেনে তুমি কি করতে?’
‘জানিয়ে দেখতে কি করতাম!’

শাবিহা নিঃশব্দে তাকিয়ে রইলো। অয়ন আচমকা ঝুকে এলো তার মুখের সামনে। নিচুস্তর গলায় বলল, ‘শাবিহা আমাকে ফাঁকি দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছ না তো? আমি কিন্ত পাগল হয়ে যাবো!

শাবিহার বুক কেঁপে উঠলো। দুরুদুরু কাঁপছে সর্বাঙ্গ। নজর ঘুরিয়ে ফিরিয়ে রাখল। বলল,’কেউ চলে আসবে। সরো!’

অয়ন এক ইঞ্চি নড়ল না। খুব কাছ থেকে শাবিহাকে দেখছে খুটিয়ে খুটিয়ে। শাবিহাকে কতটা আবেদনময়ী লাগছে চাঁদের আলোতে, তা শুধু অয়ন দেখতে পারছে। এবং শুধু সেই দেখবে সারাজীবন। হুট করে অপ্রস্তুত শাবিহার নাকের ডগায় চুমু খেয়ে বসলো। পরপর দু’গাল। শাবিহা কেঁপে উঠে মুখ ঘুরিয়ে ফেললো, ‘তুমি কী থামবে না মাইর খাবে?’

অয়ন গম্ভীর স্বরে হাসলো, ‘মারবে আমাকে? দেখি মারো ত! বাই দা ওয়ে, কোথায় মারবে?’

শাবিহা রেগে তাকাল। মাথাটা ঘুরতেই অয়ন শব্দ করে তার ঠোঁটে চুমু খেয়ে বসলো। থমকে গেল শাবিহা। বড়বড় হয়ে গেল চোখ জোড়া। এটা সে মোটেও আশা করেনি৷ পরপর অয়ন তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে। শাবিহার মাথা নিজের বুকে নিয়ে বলল,’আমরা বিয়ে করে নেই?একবার বিয়ে হয়ে গেলে দেখবে সবাই মেনে নিবে। শাবিহা আমায় বিয়ে করবে?’

চলবে ~
‘Nabila Ishq’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here