এক_খণ্ড_কালো_মেঘ #পর্ব_৫৩ [সমাপ্তি পর্ব]

0
883

#এক_খণ্ড_কালো_মেঘ
#পর্ব_৫৩ [সমাপ্তি পর্ব]
#নিশাত_জাহান_নিশি

“হানিমুন থেকে ফিরে আসার পর থেকেই তোমার ধারে কাছে ঘেঁষতে দিচ্ছনা। তাই আজ আর কোনো বারণ শুনছিনা আমি। তাছাড়া কাল তো সত্যি সত্যিই বেড়াতে চলে যাবে! আরও দু-তিন দিনের জন্যে তোমাকে কাছে পাবনা!”

তাজ্জব বনে গেল অয়ন্তী। রাগী ভঙ্গিমা ভুলে সে অচিরেই বিস্মিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করল তাকে চোখ বুজে আদর করতে থাকা বেখেয়ালী রাফায়াতের দিকে! বহুকষ্টে রাফায়াতকে সে তার উত্তেজিত শরীর থেকে উঠিয়ে উৎফুল্লিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করল তার নেশায় বুদ হয়ে থাকা নেশালো রাফায়াতের দিকে। মুচকি হেসে সে রাফায়াতের দু’গালে হাত রাখল। সন্দিহান গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,,

“সিরিয়াসলি? আপনি সত্যিই আমাকে বেড়াতে যেতে দিবেন?”

মুখভঙ্গিতে কিঞ্চিৎ গম্ভীরতা টেনে এনে রাফায়াত অয়ন্তীর গলায় মুখ ডুবিয়ে দিলো। কয়েক দফা তব্ধ শ্বাস ফেলে সে বিমূঢ় গলায় বলল,,

“হুমম। সত্যি।”

“তাহলে মন খারাপ কেন?”

“কোথায় মন খারাপ?”

“এইযে মুখটা কেমন ফুলিয়ে নিলেন। কণ্ঠেও বিষণ্নতার ছাপ।”

“কই না তো!”

“মন থেকে না চাইলে থাক, যাবনা।”

“দু-তিনদিনেরই তো ব্যাপার পরাণ। কিছু হবেনা। আমি একা ম্যানেজ করে নিব।”

“না থাক। আমি যাবনা। আপনার মনে কষ্ট দিয়ে আমি কোথাও গিয়ে শান্তি পাবনা।”

নিজেকে যথেষ্ট স্বাভাবিক করে তোলার চেষ্টা করল রাফায়াত। অয়ন্তীকে তার বিমর্ষতা এক ইঞ্চিও বুঝতে দেওয়া যাবেনা। এমনকি তার আপত্তিও বুঝাতে দেওয়া যাবেনা। এতে অয়ন্তীর আবারও মন খারাপ হবে। আবারও তাদের মধ্যে কলহ্ সৃষ্টি হবে। গম্ভীরতা ভুলে রাফায়াত অয়ন্তীর দিকে উচ্ছ্বল দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। স্মিত হেসে সে শান্ত স্বরে বলল,,

“আরেহ্ মন থেকে-ই বলছি যাও। কিছুদিন পর যখন আমাদের বাচ্চা কাচ্চা হবে তখন তো এমনিতেও কোথাও বেড়াতে যেতে পারবেনা তাই না? তাদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বে।”

মুহূর্তেই যেন লজ্জায় রাঙা হয়ে উঠল অয়ন্তী। রাফায়াতের গলা প্যাঁচিয়ে ধরে সে হুড়োহুড়ি করে রাফায়াতের বুকে মুখ লুকালো! কয়েক দফা অস্বস্তিকর শ্বাস ফেলে সে লাজে রাঙা স্বরে বলল,,

“ইশশশ! কবে যে আমি কনসিভ করব। আমাদের বেবি কবে হবে রাদিফ? আই জাস্ট কান্ট ওয়েট।”

নিমিষেই অয়ন্তীকে বুকের মাঝে একাত্নভাবে মিশিয়ে ধরে রাফায়াত দীর্ঘ এক রুদ্ধশ্বাস ফেলল! বিমূঢ়তায় কেমন যেন মাখোঁ মাখোঁ হয়ে উঠল। অবিলম্বেই চোখ দুটো তার অশ্রুসজল হয়ে উঠল। বুকের ভেতরটা কেন যেন অসহনীয়ভাবে কাঁপতে লাগল। শ্বাস-প্রশ্বাস তার রুদ্ধ হয়ে আসছিল! কিছু একটা অস্বস্তি হচ্ছিল ভেতরে। কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা, শূণ্য শূণ্য অনুভূতি! জট বাঁধা কিছু অকথিত বেদনায় জর্জরিত সে। ভরাট গলায় অয়ন্তীকে কিছু বলতে যেয়েও সে থেমে গেল! বিবেকে বাঁধা লাগল। এই না বলার যন্ত্রণা ভুলতে রাফায়াত পুনরায় অয়ন্তীকে পাওয়ার নেশায় মত্ত হয়ে উঠল! তার সীমাহীন ভালোবাসায় লজ্জায় কাতর অয়ন্তীকে মুহূর্তেই রাঙিয়ে তুলল। অভিমান ভুলে অয়ন্তীও এবার রাফায়াতকে তার ভালোবাসায় সিক্ত করতে লাগল। দুজনই তাদের নেশাক্ত ভালোবাসায় গাঁ ভাসিয়ে দিলো।

পরের দিন খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠে গেল অয়ন্তী। রাফায়াতের পছন্দের সব নাশতা বানাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। ডিম, পরোটা, আলু ভাজি, ধোঁয়া ওঠা গরম গরম কফি। যেহেতু আজ তারা বেড়াতে চলে যাবে তাই তার শ্বশুড় এবং রাফায়াতের জন্য খাবারের কিছু পদ রান্না করে যেতে হবে। কিছু খাবার গরম করে রেখে যাবে আর বাকি দুইদিনের খাবারগুলো ফ্রিজে তুলে রেখে যাবে। পরে যে যার প্রয়োজন মত ফ্রিজ থেকে খাবার বের করে গরম করে খেয়ে নিবে। এই দুইদিনে তার ভাসুরেরও ঢাকায় আসার কোনো সম্ভাবনা নেই। প্রতি শুক্রবার তিনি বাসায় আসেন। ভোর থেকে সকাল গড়াতেই অয়ন্তীর ভাবি এবং শ্বাশুড়ী মা এসে অয়ন্তীকে রান্নার কাজে সাহায্য করল। সবাই হাতে হাতে কাজ করাতে সকাল নয়টার মধ্যেই তাদের সকালের নাশতা এবং রান্নাবান্নাও সম্পন্ন হয়ে গেল!

রান্নাঘরের কাজ শেষ করে অয়ন্তী বেশ তাড়াহুড়ো করেই তার শোবার ঘরে এলো। রাফায়াতকে ঘুম থেকে জাগাতে হবে। আজ অনেকটাই দেরী হয়ে গেল তার রাফায়াতকে ঘুম থেকে জাগাতে। না জানি আজ রাফায়াতের অফিসে পৌঁছাতে কতটা দেরী হয়ে যাবে। ঘরে প্রবেশ করতেই অয়ন্তী এক দফা অবাক হয়ে গেল। বিছানায় রাফায়াত নেই! ঐদিকে ওয়াশরুমে থেকেও ছমছম পানি পড়ার শব্দ হচ্ছে। তার মানে কী রাফায়াত আজ নিজ থেকেই ঘুম থেকে ওঠে গেছে? কষ্ট করে তার আর জাগাতে হয়নি রাফায়াতকে? স্বস্তির শ্বাস ফেলল অয়ন্তী। সেই ফাঁকে সে বিছানা গুছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল৷ বিছানাটা ঠিকঠাক মত গুছিয়ে অয়ন্তী ঘরটা ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করতে-ই রাফায়াত শাওয়ার নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে এলো। টাওয়াল দ্বারা চুল মুছতে মুছতে সে ব্যস্ত ভঙ্গিতে ড্রেসিং টেবিলের সামনে এসে দাঁড়ালো। ওয়াড্রব থেকে শাড়ি, ব্লাউজ, পেটিকোট, প্রয়োজনীয় যা যা লাগবে সব বের করে অয়ন্তী তার ল্যাকেজ গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। রাফায়াত বের হয়ে যাওয়ার পর পরই তারা দাউদকান্দির উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যাবে। আর সেজন্যই তাদের এত তাড়াহুড়া।

আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বের সামনে দাঁড়িয়ে রাফায়াত আড়চোখে ব্যস্ত অয়ন্তীকে দেখছিল! শরীরটায় কেমন যেন জ্বর জ্বর অনুভব হচ্ছে তার! হাত-পাও ব্যথায় যেন নিংড়ে আসছে। ভেতরটাও পরিপূর্ণ বিষাক্ত হয়ে আছে। অয়ন্তীকে কিছুতেই বুঝতে দেওয়া যাবেনা সে অসুস্থ! তাহলে অয়ন্তীর বেড়াতে যাওয়ার খুশিটা নষ্ট হয়ে যাবে৷ রাফায়াতকে অসুস্থ অবস্থায় রেখে অয়ন্তী কিছুতেই বেড়াতে যেতে চাইবেনা। এমনিতেই কাল সে অয়ন্তীকে অনেক আঘাত করে ফেলেছে নতুন করে আর আঘাত করতে চায়না।

চুপচাপ থেকেই রাফায়াত তার অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে গেল। ব্যাগপত্র গুছিয়ে অয়ন্তী টাই ঠিক করতে থাকা রাফায়াতের দিকে দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেল। উদ্দেশ্য প্রতিদিনকার ন্যায় আজও রাফায়াতের টাই বেঁধে দেওয়া। কিন্তু রাফায়াত আজ কিছুতেই তার জ্বরে আক্রান্ত শরীরকে স্পর্শ করতে দিবেনা! এতে অয়ন্তী বুঝে যাবে তার জ্বর হয়েছে। উদ্বেলিত হয়ে অয়ন্তী রাফায়াতের টাইয়ে হাত দেওয়ার পূর্বেই রাফায়াত হঠাৎ উল্টোদিকে ফিরে গেল! অপ্রস্তুত গলায় শুধালো,,

“ল্যাকেজ গোছানো শেষ?”

তাজ্জব হয়ে দাঁড়িয়ে রইল অয়ন্তী! কপালের ভাঁজে সন্দেহের ছাপ তুলে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ল,,

“কী ব্যাপার? হঠাৎ ঘুরে গেলেন কেন?”

“টাই বাঁধা শেষ তো পরাণ।”

“উঁহু। বাঁধা হয়নি। সামনে তাকান। আমি বেঁধে দিচ্ছি।”

“আরে যা হয়েছে ভালো হয়েছে। আগামী দুইদিন তো আমাকে একা একাই টাই বাঁধতে হবে তাইনা? তাই আগে থেকে নিজেকে প্রস্তুত করে রাখা ভালো নয় কী?”

“আপনি এখনও নারাজ আমার বেড়াতে যাওয়া নিয়ে তাইনা?”

“কই না তো! সবসময় নেগেটিভ ভাবো কেন? এমনিতেই আজ অফিসের অনেকটা দেরী হয়ে গেল। যাওয়ার সময় তুমিও এখন মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং করছ।”

বলেই রাফায়াত টাই থেকে হাত সরিয়ে ভেজা চুল আঁচড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল! রাফায়াতের এহেন খামখেয়ালী কার্যকলাপে প্রচণ্ড বিরক্তবোধ করল অয়ন্তী। নাক ফুলিয়ে সে খরখরে গলায় বলল,,

“চুলটা তো অন্তত শুকানোর সময় দিবেন না-কি?”

রাগী ভাব নিয়ে অয়ন্তী তার শাড়ির আঁচল দিয়ে রাফায়াতের ভেজা চুলগুলো মুছে দেওয়ার জন্য সামনে অগ্রসর হতেই রাফায়াত পুনরায় তাকে পাশ কাটিয়ে রুমের দরজার দিকে চলে গেল! অফিসের ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে সে নিরাগ দৃষ্টিতে অয়ন্তীর দিকে তাকালো। দ্বিখণ্ডিত গলায় বলল,,

“তিনদিনের বেশী থাকবা না ওকে? নিজের যত্ন নিবা। তুমি এখন বউ মানুষ। এদিক থেকে ওদিক ছুটোছুটি করা চলবেনা। মুরুব্বিরা যা বলবে তাই মন দিয়ে শুনে চলবে। ঠিকমত খাওয়াদাওয়া করবে। খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারে যেন কোনো অনিয়ম আমি না শুনি। যদি শুনি তাহলে কিন্তু স্বয়ং রাফায়াত ঐ বাড়িতে গিয়ে তোমাকে মে’রে আসব! সো বি কেয়ারফুল। আর মায়ের দিকে খেয়াল রাখবে। ভাবিকে ফলো করবে। বিয়ের এত বছর পরেও কিন্তু কেউ ভাবির দিকে আঙুল তুলতে পারেনি, তোমার দিকেও যেন কেউ আঙুল তুলতে না পারে। আমি ফোন করার সাথে সাথেই ফোনটা তুলবে এবার তুমি যেখানেই থাকো আর যে অবস্থাতেই থাকো! আর শোনো? আমার জন্য বেশী টেনশন করতে হবেনা। এই কয়েকদিন আমি তোমাকে ছাড়া ঠিক মানিয়ে নিব! অপেক্ষায় থাকব কখন তুমি আমার বুকে ফিরে আসবে। জানোই তো তোমাকে ছাড়া আমি বেশীক্ষণ থাকতে পারিনা! দম বন্ধ লাগে।”

চোখের কোণে টইটম্বুর জল নিয়ে রাফায়াত দরজার চৌকাঠে পা রাখল! যাত্রা পথে রাফায়াতকে পিছু ডাকতে চাইল না অয়ন্তী। ডাকতে গিয়েও হঠাৎ থেমে গেল। কেবল রাগে হাত-পা ছুড়োছুড়ি করে ভরাট গলায় বলল,,

“আরেহ্ একটা বার তো আমাকে হাগ করে যান! এই তিনদিন আপনাকে ছাড়া থাকব কীভাবে বলুন? আমারও আপনাকে ছাড়া দম বন্ধ লাগে। একটু আদরও করতে পারলাম না পরাণটাকে। আর কবে না কবে দেখা হচ্ছে! ধ্যাত, একটা আফসোস রেখে গেল!”

খাবার টেবিলেও রাফায়াত চুপ থাকল। শুধু এক পলকের জন্য তার মা-বাবা-ভাবি এবং অয়ন্তীর দিকে অদ্ভুত এক মায়ায় জড়ানো দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। দুপুরের খাবারটা সে তার অফিস ব্যাগে ঢুকাতে ঢুকাতে তার মা’কে উদ্দেশ্য করে বলল,,

“অয়ন্তীর দিকে একটু খেয়াল রেখো মা। সবসময় তোমার এবং ভাবির আশে পাশে রেখো। খাওয়া দাওয়ার দিকেও একটু খেয়াল রেখো। তার কখন কী লাগে একটু নজর রেখো। তোমার ভরসাতেই কিন্তু আমি অয়ন্তীকে ছাড়ছি মা! খুব শীঘ্রই তোমরা ফিরে এসো। তোমাদের ছাড়া একা একা থাকতে খারাপ লাগবে আমার।”

ছেলের কথায় মলিন হাসলেন মিসেস শায়লা হক। ছেলেকে ষোল আনায় আশ্বস্ত করে বললেন,,

“তুই চিন্তা করিস না বাপ। অয়ন্তীর দিকে আমি খেয়াল রাখব। আর দু-তিন দিনের-ই তো ব্যাপার। এর মধ্যেই আমরা ফিরে আসব। তুই বরং নিজের খেয়াল রাখিস। বাপ ছেলেতে মিলে টাইমলি খাওয়াদাওয়া করিস। তোর বৌ তোদের জন্য খাবার তুলে গেছে ফ্রিজে। খাওয়ার সময় শুধু খাবারটা একটু গরম করে খেয়ে নিলেই হবে।”

মুখ ফুলিয়ে তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা অয়ন্তীর দিকে একবার আবিষ্ট দৃষ্টি নিক্ষেপ করল রাফায়াত। অয়ন্তীর রাগী দৃষ্টিতে দৃষ্টি মিলাতেই ঝট করেই রাফায়াত তার অসহায় দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলো! হুড়োহুড়ি করে সে তার মায়ের দিকে ভরাট দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,,

“আচ্ছা ঠিক আছে মা। আমি আসছি। আল্লাহ্ হাফেজ।”

“আল্লাহ্ হাফেজ বাবা। নিজের যত্ন নিস।”

দ্রুত পায়ে হেঁটে রাফায়াত বাড়ি থেকে প্রস্থান নিলো। মিনিট পাঁচেক বাদে অয়ন্তীও রাফায়াতের পিছু পিছু ছুটল! কী করে রাফায়াত তাকে উপেক্ষা করে আজ সে তা দেখে নিবে। মায়ের থেকে কী সুন্দর বিদায় নিয়ে গেল অথচ তার দিকে একটু ভালো করেও তাকালো না? রাগে গাঁ পিত্তি জ্বলছে অয়ন্তীর। রাফায়াতকে অনুসরণ করেও তার লাভের লাভ কিছু হলোনা। বরং সময় নষ্ট করল। কারণ, রাফায়াত বাইক নিয়ে এতক্ষণে পাকা রাস্তায় ওঠে গেছে! অত্যধিক রাগে-জেদে হাত-পা কঁচলালো অয়ন্তী। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,,

“বাড়ি ফিরতে দিন শুধু। এরপর বুঝাব কত ধানে কত চাল। আমাকে ইগনোর করা না? এত বড়ো সাহস আপনার? শুধু যাত্রাপথ বলে জানে বেঁচে গেলেন। নয়ত আজ খবর ছিল আপনার!”

,
,

দুপুরের দিকেই অয়ন্তীরা দাউদকান্দি অর্থাৎ তার ফুফু শ্বাশুড়ীর বাড়ি এসে পৌঁছালো। দুপুরের খাবারদাবার খেয়ে সবাই রেস্ট করছিল। রাফায়াত অনেকবার কল করেও অয়ন্তীকে পায়নি। বরং ইচ্ছে করেই অয়ন্তী রাফায়াতের কলটা রিসিভ করেনি! রাফায়াতের আচার আচরণে আজ সে দারুন কষ্ট পেয়েছে। কেন তুলবে সে তার কল? অধৈর্য্য হয়ে রাফায়াত তার মায়ের নাম্বারে কল করল। অবশেষে জানতে পারল তারা সহীহ সালামতে দাউদকান্দি পৌঁছে গেছে।

দুপুরের দিকে রাফায়াতের জ্বরটা আরও বেড়ে গেল! এই অতিরিক্ত জ্বর নিয়েই সে অফিস করল। রাত তখন এগারোটা প্রায়। রাফায়াত তার অফিস থেকে বের হচ্ছিল। আজ সে রিকশা করে বাড়ি ফিরবে! বাইক চালানোর শক্তিটুকুও অবশিষ্ট নেই তার। তাই বাইকটা তার অফিসের পার্কিং এরিয়ায় পার্ক করে রেখে এলো। অফিসের চত্বর এতক্ষণে প্রায় ফাঁকা হয়ে গেল। মোটামুটি নির্জন জায়গাটি। গাঁ ছমছম করার মত অবস্থা যেন। এমনিতেও রাফায়াতের অফিসটি বেসাইডে পড়েছে! মানুষের চলাচল এখানে খুবই কম। এমন সময় চঞ্চলের নাম্বার থেকে কল এলো! অফিসের গেইটের ভেতরে দাঁড়িয়ে-ই রাফায়াত মৃদু হেসে কলটি তুলল। উচ্ছ্বাসিত গলায় বলল,,

“হেই চঞ্চল কেমন আছিস?”

অমনি চঞ্চল আর্ত গলায় চিৎকার করে বলল,,

“তুই যেখানেই আছিস রাফায়াত দ্রুত জায়গা থেকে পালা!”

“কেন? কী হয়েছে? এসব কী বলছিস তুই? তাছাড়া তোর কণ্ঠটা এমন শোনাচ্ছে কেন? কী হয়েছে তোর?”

“তোকে বলছি তুই পালা রাফায়াত। আমার জীবন নেওয়া শেষ প্রায়! তুই এবার তোর জীবন বাঁচা! আমি ম*রে গেলেও আমার মা ছাড়া কাঁদার মত কেউ নেই। কিন্তু তোর একটা সংসার আছে রাফায়াত! অয়ন্তী ভাবি আছে। তুই পালা ইয়ার। প্লিজ পালা।”

বুকটা সঙ্গে সঙ্গেই কেঁপে উঠল রাফায়াতের। শরীরের দুর্বল অবস্থা নিয়েই সে এলোমেলোভাবে দৌঁড়ে অফিসের মেইন গেইট পাড় করল। আতঙ্কিত গলায় ফোনে থাকা চঞ্চলকে বলল,,

“আমি আসছি চঞ্চল। তোর কিছু হবেনা। বিশ্বাস কর তুই বেঁচে যাবি। একটু ধৈর্য্য ধর প্লিজ।”

“পাগলামী করিস না রাফায়াত। আমার হাতে সময় নেই আর। তারা যেভাবে আমাকে ছু’রি’কা’ঘাত করেছে আমি বাঁচব না। আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে রাফায়াত।”

“কারা মে’রে’ছে তোকে? নামটা শুধু বল!”

অমনি কেউ রাফায়াতকে পেছন থেকে তার পিঠের ঠিক মেরুদন্ডটিতে লা’ঠি’কা’ঘা’ত করল! সঙ্গে সঙ্গেই রাফায়াতের হাত থেকে ফোনটি ছিটকে পড়ল। ব্য’থা’য় মাগো মা করে চিৎকার করে উঠল রাফায়াত। পেছন ফিরে বি’স্ফো’রিত দৃষ্টিতে তাকাতেই সে দেখল মির্জা ফখরুল হক সহ ছয়/সাতজন চ্যালাফ্যালা তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে! রাস্তাঘাট প্রায় নির্জন বলে জন মানুষের কোলাহল একদম নেই বললেই চলে। এই অবস্থায় রাফায়াত কারো কাছ থেকে হেল্পও চাইতে পারছিলনা! অমনি মির্জা ফখরুল হক বি’ভ’ৎ’স রূপ নিয়ে এগিয়ে এলেন রাফায়াতের দিকে! হাতে একটি ধা*রা*লো চা*পা*তি ঘুরাতে ঘুরাতে তিনি হিং’স্র গলায় রাফায়াতকে বললেন,,

“আমার ভাতিজাকে তুই মে’রে’ছি’লি তাইনা? অথচ সরষের মধ্যে ভূত রেখে আমি বিরোধী দলকে দায়ী করেছিলাম? তোর উসিলায় স্বয়ং নিজ হাতে আমি অনিককে খু*ন করেছি! তখনও বুঝতে পারিনি এটা তোর কারসাজি। বোকার মত তোকে বাঁচাতে গিয়ে বেচারী প্রিয়াকে ফাঁ*সি*য়ে দিয়েছি! আজ যখন জানতে পারলাম আসল কা*র্ল*প্রিট তুই, কী করে তোকে বেঁচে থাকতে দিই বল? বিশ্বাস কর? তুই রাজনীতির লাইন ছেড়ে দিয়ে আমার দল ছেড়ে দিয়ে নতুন জীবন শুরু করেছিস এতে আমার কোনো রাগ-জেদ বা আফসোস নেই! কিন্তু তুই আমার ভাতিজাকে মে*রে কাজটা ঠিক করিস নি রাফায়াত! এর জন্য তোকে আজ সত্যি সত্যিই ম*র*তে হবে রে! বেইমানি আমার পছন্দ না। এর জন্য আমি চঞ্চলকে ছাড়িনি আর তোকেও না!”

বলেই মির্জা ফখরুল হক যেইনা রাফায়াতকে ছু*রি*কা*ঘা*ত করতে গেল অমনি রাফায়াত মৃ*ত্যু*র ভয় নিয়ে মির্জা ফখরুল হকের পা চেপে ধরল! ভয়ার্ত দু’চোখে কাতর গলায় বলল,,

“আমাকে এই বারের জন্য মাফ করে দিন বস। আমি ইচ্ছে করে আপনার ভাতিজাকে মা’রি’নি। তার নামে আমার কাছে অনেক রিপোর্ট এসেছিল। মেয়েদের শ্লী’ল’তা’হা’নি থেকে শুরু করে মেয়েদের অ’প’হ’রণ! আপনার কাছেও অনেক নালিশ এসেছিল কিন্তু আপনি তা কানে তুলেন নি। পুলিশরাও এর বি’রুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। সে কারণে আমি বাধ্য হয়েছিলাম তাকে মা’র’তে। তাছাড়া সে তো এখন পুরোপুরি সুস্থ আছে বস। হয়ত সাময়িক কষ্ট পেয়েছে। প্লিজ ব্যাপারটা এখানেই শেষ করুন বস। এবারের মত আমার প্রাণ ভিক্ষা দিন! বাড়িতে আমার বৌ আছে আমার মা আছে। তারা আমাকে ছাড়া একটা মুহূর্তও থাকতে পারবেনা বস! আমি আপনার কাছে হাত জোর করছি বস। আমার জানটা ফিরিয়ে দিন। প্রয়োজনে জীবনভর আমি আপনার গোলামী খাটব! আবারও আপনার দলে ফিরে যাব। আপনার হয়ে কাজ করব।”

শ্বাস নেওয়ারও সময় দেওয়া হয়নি রাফায়াতকে! কোথা থেকে যেন ফখরুল হকের সেই ভাতিজাটি এসে পেছন থেকে নির্ম’মভাবে ছু*রি গেঁথে দিলো রাফায়াতের পিঠে! ছিন্নভিন্ন করে দিলো রাফায়াতের দেহটিকে! দুর্বল এবং জ*খ*ম যুক্ত শরীর নিয়ে রাফায়াত মৃ*ত্যু*র যন্ত্রণায় গোঙাতে গোঙাতে ঢলে পড়ল মাটিতে! চোখ দুটিতে তার বিষাদের জল ভরে এলো। টপটপ করে সেই জল মাটিতে গড়িয়ে পড়ছিল! তার অতৃপ্ত চোখ দুটিতে কেবল অয়ন্তী এবং তার মায়ের স্নিগ্ধ মুখখানি ভেসে উঠছিল। এই ম*র্মান্তিক ম*রণ’ক্ষণে এসে সে বুঝতে পারল রাফায়াত, কেন অয়ন্তীকে ছাড়তে ইচ্ছে করছিলনা! তার মায়ের প্রতি এবং তার পরিবারের প্রতি এত মায়া কাজ করছিল। কেন অয়ন্তীকে হাসিখুশি দেখলে তার চোখে জল চলে আসত! কেন অয়ন্তীর দিকে তাকালে তার আর চোখ ফেরাতে ইচ্ছে করতনা! বাবা হওয়ার মত মধুর অনুভূতি তার অনুভব করা হলোনা আর! তবে কী অয়ন্তীর সাথে পনেরো দিনের বেশী সংসার করা তার ভাগ্যে ছিলনা? নিয়তি এত নি’ষ্ঠু’র? সবাইকে একা ফেলে সে পরপারে পাড়ি জমাচ্ছে? অয়ন্তীকে দেওয়া কথা সে রাখতে পারল না? অয়ন্তী তাকে ছাড়া থাকতে পারবে তো? তার চলে যাওয়ার পর অয়ন্তীর কী হবে? আ*ত্ন*হ*ননের পথ আবার বেছে নিবে না তো? কিন্তু রাফায়াত তো একদিন তাকে বুঝিয়েছিল আ*ত্ন*হ*ত্যা মহাপাপ। ভুলেও যেন অয়ন্তী এসব পাপী কাজ না করে। ইশশ! পাগলীটার কত শখ ছিল মা হওয়ার! আমি হয়ত তার সেই ইচ্ছে পূরণ করতে পারলাম না। কে জানত আজ তার সাথে আমার শেষ দেখা ছিল? জ্বর ছিল দেখে-ই তো তাকে আমার ধারে কাছে ঘেঁষতে দিইনি। ভালো ব্যবহার করিনি। কাছে ডেকে মন ভরে একটু আদরও করিনি। রাগ করে দুপুরে আমার কলটাও তুলেনি। আমি কী জানতাম? ফিরে এসে পাগলীটা আর আমাকে দেখবেনা? ততক্ষণে চলে যাব আমি পৃথিবী ছেড়ে! তাকে ছেড়ে সবাইকে ছেড়ে মহাকালের অভ্যন্তরে!”

দমটা বন্ধ হয়ে আসতেই রাফায়াত গলাটা ভিজিয়ে নিলো! চোখের জল ছেড়ে পুনরায় বলল,,

“না, আর পারছিনা। রু’হটা বুঝি এবার বের-ই হয়ে গেল। বুকভরা আফসোস, অনুতাপ, দুঃখ, কষ্ট, যন্ত্রণা, রাখতে না পারা কিছু অপূর্ণ ওয়াদাকে সঙ্গে নিয়েই আমি হেঁটে চললাম মহাকালের পথ ধরে। সস্পূর্ণ অন্ধকার একটি জগতে। কেন এত আলো নিয়ে আমার জীবনে এসেছিলে অয়ন্তী? দিলে তো আবারও আমাকে অন্ধকারে ঠেলে? আমি তো একা এখন অন্ধকারে যাচ্ছি না অয়ন্তী। সাথে তোমার জীবনটাকেও অন্ধকারে তলিয়ে দিয়ে গেলাম! তোমাকে বিধবা করে গেলাম। আমাদের প্রেমকাহিনী এখানেই সমাপ্ত অয়ন্তী। অসম্পূর্ণ রয়ে গেলাম আমরা। পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও পরাণ। তবে যারা আমাকে এত তাড়াতাড়ি মৃ*ত্যু দিলো তাদের তুমি ছেড়ে না অয়ন্তী! তাদের উপযুক্ত শাস্তি দিও।”

দীর্ঘ এক শ্বাস ফেলে রাফায়াত মৃ*ত্যু যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে চোখ জোড়া বুজে নিলো! মির্জা ফখরুল হকসহ উনার ভাতিজা এবং চ্যালা ফ্যালারা সঙ্গে সঙ্গেই ঘটনাস্থল থেকে পালালো! তখনি দু-একজন জড় হলো ঘটনাস্থলে। অযথা মৃ*ত রাফায়াতকে নিয়ে তারা আশেপাশের হসপিটালে ছুটে গেল! পুলিশ কেইস করা হলো। কোনোভাবে রাফায়াতের বাবার কানে খবরটা পৌঁছাতেই রাফায়াতের বাবা বেদিশা হয়ে ছুটে এলেন হসপিটালে। ডক্টর এতক্ষণে রাফায়াতকে মৃ*ত ঘোষণা করে দিলেন! র*ক্তে র’ঞ্জিত ছেলের ম*রা লা*শটিকে দেখামাত্রই তিনি সঙ্গে সঙ্গে মিনি স্ট্রো*ক করে ফেললেন! অয়ন্তীর মা এবং বাবা পুরোপুরি শকড হয়ে গেলেন। মেয়েকে তারা খবরটা কীভাবে জানাবেন সেই চিন্তায় চিন্তিত হয়ে পড়লেন। তাদের এই নাজেহাল অবস্থা দেখে পাড়া-পড়শীরা বিশেষ করে ইতি ফোন করে খবরটা অয়ন্তীকে জানালো! ইতির শ’য়’তা’নি ভেবে অয়ন্তী প্রথমে তার কোনো কথাই বিশ্বাস করলনা! পরে যখন ইতি চিৎকার করে বলল আমি ফান করছিনা অয়ন্তী। রাফায়াত সত্যি সত্যিই ম*রে গেছে। তাকে মে*রে ফেলা হয়েছে। তখন অয়ন্তীর বিশ্বাস হলো! ফোনসহ সে মেঝেতে মাথা ঘুরে পড়ে গেল! মৃগি রোগীদের মত হাত-পা ছুড়ে ছটফট করতে লাগল। কেবল রাফায়াতের স্নিগ্ধ মুখখানি তার দু’চোখে ভেসে উঠছিল। পেরেশান হয়ে অয়ন্তীকে ডাকতে থাকা মিসেস শায়লা হককে ডেকে সে অস্ফুটে গলায় বলল,,

“আপনার স্বা*র্থপর ছেলেটা মা*রা গেছে মা। আমাকে তার কাছে নিয়ে চলুন প্লিজ। তাকে একটা নজর দেখে আমি ম’র’তে চাই!”

মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল রাফায়াতের মায়ের! বুক চাপড়াতে লাগলেন তিনি। কাঁদতে কাঁদতে তিনি প্রায় বেহুশ হয়ে যাচ্ছিলেন। এই মাঝরাতেই তারা সবাই ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হলো। মৃ*ত রাফায়াতকে হসপিটাল থেকে বাড়ি আনা হলো। রাফায়াতের বড়ো ভাই খবরটি পেয়ে চট্টগ্রামে থেকেই প্রথমে মির্জা ফখরুল হক এবং তার ভাতিজার নামে মামলা করল! পুলিশ চঞ্চলের থেকে জবানবন্দি নিতে হসপিটালে চলে গেল। চঞ্চলকে সঠিক সময়ে হসপিটালে আনা হয়েছিল বলে সে জানে বেঁচে গেল! ইর্মাজেন্সি রুমে তাকে ভর্তি করা হলো।

বাড়ির মেইন গেইটে পা রেখেই অয়ন্তী বুক ফাটা চিৎকার করে উঠল! তার মা-বাবা এবং আত্নীয় স্বজনরা কেউ তাকে আটকে রাখতে পারছিলনা। ভীড় ঠেলে দৌঁড়ে গিয়ে সে পাটিতে সাদা কাপড় দ্বারা ঢেকে রাখা রাফায়াতকে জড়িয়ে ধরল। শাড়িতে র*ক্তের দাগ পড়ে গেল তার। শ্বাসকষ্টের রোগীদের মত কাঁদতে কাঁদতে সে দুনিয়া কাঁপানো চিৎকার করে বলল,,

“ম*রে যাবেন বলেই কী আমাকে বেড়াতে পাঠিয়েছিলেন হ্যাঁ? মৃ*ত্যুর আগে আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন? একটিবারের জন্যও আমাকে কাছে ডেকে নেননি? মায়া বাড়াননি তাইনা? বারংবার ক্ষত-বিক্ষত করা কথায় বুঝাতেন ম*রে যাবেন আপনি? এজন্যই কী মায়ের হাতে তুলে দিয়েছিলেন আমাকে? আমাকেও বলেছিলেন মায়ের খেয়াল রাখতে? কত নিঁখুতভাব নিজের শেষ কাজগুলো করে গেলেন রাদিফ? বুঝতেও দেননি আপনি ম*রে যাবেন! আজ বুঝতে পারলাম, কেন আপনি সেদিন বলেছিলেন আপনার কিছু হয়ে গেলেও যেন আমি আ*ত্ন*হ*ত্যা না করি! এমন কিছু হবে বলেই আমাকে সামলে গেছেন তাইনা? বিদায় দেওয়ার সময় বলেছিলেন না? আমাকে ছাড়া আপনি থাকতে পারেন না? আমার ফিরে আসার অপেক্ষায় থাকবেন? তাহলে সেই অবধি অপেক্ষাটা কেন করতে পারলেন না রাদিফ? কেন আমাকে ছেড়ে এভাবে চলে গেলেন বলুন? আপনি জানেন না? আপনাকে ছাড়া আপনার অয়ন্তী একটা মুহূর্তও থাকতে পারেনা?”

হেঁচকি তুলতে তুলতে অয়ন্তী রাফায়াতের মুখের উপর থেকে সাদা কাপড়টি তুলতেই রাফায়াতের ম*রা মুখটি দেখল! দেখে যেন মনেই হচ্ছেনা রাফায়াত ম*রে গেছে। মনে হচ্ছে যেন সে নিশ্চিন্তে ঘুমুচ্ছে। মুখশ্রী তার দ্বিগুন ভাবে খুলেছে। সাদায় পকপক করছে মুখটি! পৃথিবীর সমস্ত নূর যেন তার চোখেমুখে ঠিকরে পড়ছে! হৃদয় শান্ত হয়ে এলো অয়ন্তীর। তবুও কান্নার ঢল থামলনা! শোক কমল না। হারানোর যন্ত্রণা ভুলল না। আকুতি ভরা গলায় সে চিৎকার করে আবারও লুটিয়ে পড়ল মাটিতে! অস্ফুটে গলায় আঁওড়াতে থাকল,,

“আমাকে আপনার সাথে নিয়ে চলুন রাদিফ। আমি যে আপনাকে ছাড়া থাকতে পারবনা! কেন আমাকে এভাবে একা করে চলে গেলেন বলুন? আমার দেহটা যে অসাড় হয়ে আসছে রাদিফ। হাত-পা নাড়াতে পারছিনা। বোধ শক্তি কমে আসছে বোধ হয়। আমিও ম*রে যাচ্ছি। আপনার কাছে আসছি!”

রাফায়াতের লা*শে*র পাশে বসে রাফায়াতের মা বুক চাপড়াতে চাপড়াতে ইনিয়ে বিনিয়ে কাঁদছেন! ছেলের নাম ধরে ডাকছেন। বিলাপ করছেন। মাটিতে কপাল ঠুকছেন। হাত-পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে কাঁদছেন। কিছুক্ষণ পর পর আবার অজ্ঞানও হয়ে যাচ্ছেন। চতর্পাশ থেকে ঘিরে রাখা আত্মীয়স্বজন এবং এলাকার লোকজন বৌ এবং শ্বাশুড়ীর এহেন হৃদয়বিদারক আহাজারি দেখে চোখের জল না ঝরিয়ে পারলেন না!

অনেকক্ষণ হয়ে যাওয়ার পরেও অয়ন্তীর জ্ঞান ফিরল না! রাফায়াতের কাফন দাফন নিয়ে কথা হচ্ছিল রাফায়াতের ভাই এবং আরিফের মধ্যে। দুজনই কান্নায় ভেঙে পড়েছে। তবুও তারা মনে বল রেখে রাফায়াতের কাফন-দাফনের বিষয়টা দেখছে। একটু পরেই রাফায়াতের লা*শকে তারা ঢাকায় নিয়ে যাবে। ঢাকাতেই রাফায়াতকে দা’ফন করা হবে! এদিকে অয়ন্তীর মা-বাবা মুমূর্ষু অয়ন্তীকে নিয়ে হসপিটালে দৌঁড়োদৌঁড়ি শুরু করেছেন! অয়ন্তীর বর্তমান শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। খারাপ কিছুর ইঙ্গিত করছেন অয়ন্তীর মা-বাবা। হলোও ঠিক তাই! অয়ন্তী সত্যি সত্যিই কোমায় চলে গেল! অতি শোকে সে নি’থ’র হয়ে গেল। মানব মূর্তিতে পরিণত হলো প্রায়। কেবল ফ্যাল ফ্যাল করে তাকানো ছাড়া তার শরীরের সমস্ত ইন্দ্রিয় শক্তি লোপ পেল! জ্ঞান শক্তি যদিও তার ছিল তবে সে তার সুখ দুঃখ অঙ্গ ভঙ্গির মাধ্যমে বুঝাতে পারত না। রাফায়াত ম*রে গেছে এই শোক মাথায় নিয়ে সে হরদমে চোখের জল ফেলত! এই অবস্থা থেকে তাকে সুস্থ হয়ে ফিরতে কমপক্ষে চার থেকে পাঁচমাস লাগবে!

________________________________

রাফায়াতের মৃ*ত্যু*র আজ পাঁচ বছর পূর্ণ হলো! কোট কাচারীতে দৌঁড়োদৌঁড়ি করতে করতে অয়ন্তীর পায়ের চামড়া প্রায় ক্ষয় হতে লাগল! শারীরিক এবং মানসিকভাবে তাকে এবং তার গোটা পরিবারকে নানারকম হু’ম’কির সম্মুখীন হতে হয়েছিল। কখনো কখনো তাদের জীবন নিয়েও টানা হেঁছড়া হয়েছিল। কোটি কোটি টাকার লোভ দেখানো হয়েছিল তাদের। যেন কেইসটা তারা তুলে নেয়। তবে অয়ন্তীও নাছোড়বান্দা। তার উপর হাজার ঝড় ঝাপটা গেলেও সে কোনোকিছুর বিনিময়ে কেইসটি তুললনা। প্রয়োজনে সে কু’চক্রী’দের হাতে হ*ত্যা হবে। তবুও সে কেইস তুলবেনা! চঞ্চলও লড়ে যাচ্ছে রাফায়াতের হয়ে। কোর্টে মির্জা ফখরুল হক এবং উনার ভাতিজার বিরুদ্ধে জবানবন্দি দিয়েছে চঞ্চল! সঙ্গে সঙ্গেই তাদের অ্যা”রে’স্ট করা হয়েছে! প্রিয়াকেও বেকসুর খালাস করা হয়েছে! অনিকের খু*নের সাথে সেদিন তার কোনো সম্পৃক্ততা-ই ছিলনা!

রাফায়াতের ভাগের সব সম্পত্তি অয়ন্তী রাফায়াত হ*ত্যা মামলায় ছিটিয়ে দিলো। চার বছর তিন মাসের বাচ্চাকে কোলে নিয়ে সে এখনও অবধি তার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে! কী অবাক হচ্ছেন? অয়ন্তীর বাচ্চা এলো কোথা থেকে? রাফায়াতের মৃ*ত্যু*র পর অয়ন্তী জানতে পারে সে সন্তানসম্ভবা! পাঁচ মাস পর কোমা থেকে ফিরে এসে সে যদিও অনেকবার চেষ্টা করেছিল আ*ত্ন*হ*ত্যা করতে! হাতের শি*রা কাটতে। গলায় ফাঁ*সি দিতে। শরীরে আ*গু*ন ধরিয়ে দিতে। তবে রাফায়াতের দেওয়া শেষ স্মৃতি তাকে প্রতিবার আটকে দিয়েছে! তার গর্ভে বেড়ে ওঠা নিষ্পাপ সন্তানটি তাকে আটকে দিয়েছে! এই সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে অয়ন্তী মুখ বুজে সব কষ্ট সহ্য করে নিয়েছে। নাওয়াখাওয়া ভুলে অন্ধকার ঘরে নিজেকে বন্দি রেখেছে। সারাক্ষণ রাফায়াতের ছবির দিকে তাকিয়ে হাজারটা অভিযোগ করেছে! চিৎকার করতে করতে কখনো কখনো আ*ধ*ম*রা হয়ে গেছে তো কখনো হুশ হারিয়েছে। অকাতরে চোখের জল ফেলতে ফেলতে তার গালের কিছু অংশও প্রায় ক্ষত হয়ে গেছে! চোখে নানা রকমের সমস্যাও দেখা দিয়েছে। এমনিতেই সে গর্ভবতী তার উপর শরীরের নানান সমস্যা। রাফায়াতের পরিবার এবং অয়ন্তীর মা-বাবা অয়ন্তীর চিন্তায় চিন্তায় ভেঙে পড়ছিলেন। অয়ন্তীর বাবা-মা তো অনেক চেয়েছিলেন বাচ্চাসহ অয়ন্তীর অন্য কোথাও বিয়ে দিয়ে দিতে! তবে অয়ন্তী রাজি হয়নি। বরং সে তার বাপের বাড়ি ত্যাগ করেছিল! বলেছিল আর কখনও বাপের বাড়ি যাবেনা। রাফায়াতের পরিবারও অয়ন্তীকে ছাড়তে চায়নি। কারণ, মৃ*ত্যুর আগে রাফায়াত তার মাকে বলে গিয়েছিল অয়ন্তীকে তিনি যেন তার আশেপাশে রাখেন! অয়ন্তীর যত্ন নেন। খেয়াল রাখেন অয়ন্তীর। ছেলের করা শেষ আবদার তিনি এমন হেলাফেলায় ভঙ করতে চাননি। মেয়ে হিসেবে অয়ন্তীকে রেখে দিলেন তিনি। অয়ন্তী ও রাফায়াতের গোটা পরিবারকে দেখেশুনে রাখছে। কারণ, রাফায়াত যে তাকে বলে গেছে তার মায়ের খেয়াল রাখতে! মুরুব্বিদেে কথা শুনে চলতে। তার ভাবিকে ফলো করতে।

অয়ন্তীর একটি ফুটফুটে ছেলে সন্তান হয়েছে! হুবহু রাফায়াতের মত দেখতে হয়েছে সে! চোখ, কান, নাক, ঠোঁট সব অবিকল রাফায়াতের মত। হাসার সময় তার চোখ দুটোও রাফায়াতের মত কেমন ভেসে ভেসে ওঠে। অয়ন্তী তার ছেলের নাম রেখেছে পরাণ! সোহরাব শেখ পরাণ! রাফায়াত অয়ন্তীকে আদর করে পরাণ বলে ডাকত। এই ডাকটিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যই অয়ন্তী তার ছেলের নাম দিয়েছে পরাণ। এই পরাণের মুখের দিকে তাকালেই অয়ন্তী তার রাফায়াতকে খুঁজে পায়। রাফায়াতকে হারানোর যন্ত্রণা তখন কিঞ্চিৎ হলেও হ্রাস পায়। কতটা অ’ভা’গা তার ছেলে! পৃথিবীর আলো দেখার পূর্বেই বাবাকে হারিয়েছে! যে বয়সে ছেলেরা বাবার হাত ধরে স্কুলে যায়। সে বয়সে তার ছেলে বাবা ছাড়া এতিম হয়ে স্কুলে ঘুরে ফিরে। যার তার বাবাকে বাবা বলে ডাকে। বাবার নামটা ছাড়া বাবা সম্পর্কে তার আর কোনো ধারণা নেই। যদিও অয়ন্তী প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর সময় তার ছেলেকে তার বাবার গল্প বলে ঘুম পাড়ায়।

রাফায়াতের মৃ*ত্যু*র আজ পাঁচ ‘বছর পূর্ণ হলো। আর আজকের দিনটিতেই চঞ্চল, রাফায়াতের বাবা এবং রাফায়াতের ভাই মিলে কোর্ট থেকে একটি খুশির খবর নিয়ে এলো! আপিল শুনানি আপিল শুনানি এই করতে করতে অবশেষে রাফায়াতের খু*নি অর্থাৎ মির্জা ফখরুল হক এবং উনার ভাতিজাকে যাব-জ্জীবন জেলের রায় আদালত থেকে ঘোষণা দেওয়া হলো! যদিও অয়ন্তী এবং রাফায়াতের পরিবার চেয়েছিল তাদের ফাঁ*সি*র ঘোষণা হোক। তবে পলিটিক্যাল লোকজনদের কাছে হেরে তারা খু*নীদের অন্তত যাব-জ্জীবন শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারল এই বা কম কীসে?

রাফায়াতের মৃ*ত্যু*বার্ষিকী আজ বিরাটভাবে পালন করার সিদ্ধান্ত নিলো অয়ন্তী। এতিমখানায় প্রায় পাঁচশ ছেলের খাবারের ব্যবস্থা করল তারা। তাদের এলাকার ফকির, মিসকিন সবাইকে পেট ভরে খাওয়ালো। খুশি যেন তার ধরছিলনা আর। চোখ বেয়ে কেবল আনন্দ অশ্রু ঝরছিল। রাফায়াতের মা হতে শুরু করে তার পরিবারের সবাই খুশিতে কাঁদছিল। রাফায়াতকে আজ তারা বেশী বেশী করে মনে করতে লাগল। রাফায়াতের নামে কোরআন খতম করালো। অনেক অনেক দো’য়া দুরুদ পড়ল।

সারাদিনের সকল ব্যস্ততা সেরে অয়ন্তী রাত এগারোটা বাজতেই পরাণকে খাইয়ে দাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিলো। বেশ ফুরফুরা মন নিয়ে আজ সে রাফায়াতের পছন্দের নীল শাড়ি পড়ল! খোঁপায় বেলীফুল গুজে, চোখে গাঢ় কাজল পড়ে, ঠোঁটে লাল লিপস্টিক পড়ে বিধবা সাজ ভুলে সে আজ নিজেকে সেই পাঁচ বছর আগের ফেলে আসা সদ্য বিবাহিত মেয়ে হিসেবে সাজিয়ে তুলল। ছাদে বসে আজ মনভরে সে তাঁরা দেখবে! তাঁরাদের মাঝে সবচেয়ে যে উজ্জ্বল তাঁরাটা থাকবে সেটি হলো রাফায়াত! তার রাদিফ! তার পরাণ। তার ম*র*ণ!

নীলরঙা সাজে সেজে অয়ন্তী খালি পায়ে দৌঁড়ে ছাদে ওঠে গেল! পেছন থেকে হিমেল হাওয়ারা এসে তার গাঁ ছুঁয়ে দিচ্ছিল। আকাশে আজ পূর্ণ শশী উঠেছে। তাঁরারা যেন উজ্জ্বলভাবে জ্বলছে। খুঁজে বের করা মুশকিল ছিল সবচেয়ে উজ্জ্বল তাঁরা কোনটি! অয়ন্তীর রাদিফ কোনটি। অস্থির হয়ে উঠল অয়ন্তী। অধীর দৃষ্টিতে সে সবচেয়ে উজ্জ্বল তাঁরাটিকে খুঁজতে লাগল। হাসিখুশি মুখটা তার চুপসে এলো। ব্যাকুলতা বেগতিক বাড়তে লাগল। তবে কী রাফায়াত আজ তার সাথে লুকোচুরি খেলছে? পাঁচ বছর ধরে তার চোখের আড়াল হয়েও শান্তি হয়নি তার? অমনি পেছন থেকে পরাণের কণ্ঠস্বর ভেসে এলো! ঘুম জড়ানো গলায় সে বলল,,

“বাবাকে তুমি চিনতে পারছ না মা? ঐ যে চাঁদ মামার গাঁয়ের সাথে ঘেঁষে থাকা তাঁরাটিকে দেখছ? সেটিই হলো আমার বাবা! সবচেয়ে উজ্জ্বল তাঁরা! ঐটাই তো আমার বাবা।”

বুকটা ধর করে কেঁপে উঠল অয়ন্তীর। চোখে টলমল জল নিয়ে সে পিছু ঘুরে তাকালো। অমনি পরাণ দৌঁড়ে এসে অয়ন্তীকে পেছন থেকে জাপটে ধরল! নিরাস হয়ে কেমন যেন ভরাট গলায় বলল,,

“বাবা কেন আমাদের ছেড়ে চলে গেল মা? কেন বাবা আকাশের তাঁরা হয়ে গেল? বাবাকে আমি খুব মিস করি মা। তুমি বলো না বাবাকে আকাশ থেকে খঁসে পড়তে! আমাদের মত মানুষ হয়ে যেতে। আমাকে স্কুলে নিয়ে যেতে। খাইয়ে দিতে। ঘুম পাড়িয়ে দিতে। অনেক অনেক খেলনা কিনে দিতে।চকলেট এনে দিতে। আমাকে খুব আদর করতে। সবার তো বাবা আছে মা। আমার কেন নেই মা? তোমার বাবাও তোমাকে কত ভালোবাসে!”

ফুপিয়ে কেঁদে উঠল অয়ন্তী। হাঁটু মুড়ে জাপটে ধরল সে তার ছেলেকে। ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলল,,

“কে বলল তোমার বাবা নেই পরাণ? তোমার বাবা আছে তো। তোমার বাবা ছিলেন পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো বাবা! তাই উপর ওয়ালা খুশি হয়ে তোমার বাবাকে আকাশের তাঁরা বানিয়ে দিয়েছেন! যেন খারাপ লোকরা তোমার বাবাকে কষ্ট দিতে পারে!”

“তাহলে কী তোমার বাবা ভালো নয় মা? তাই উপর ওয়ালা তোমার বাবাকে মানুষ করে রেখেছেন?”

“এমনটা নয় বাবা। আমার বাবাও ভালো। তবে অল্প অল্প ভালো! তোমার বাবা তো খুব বেশী ভালো বাবা ছিলেন তাই আল্লাহ্ খুশী হয়ে তোমার বাবাকে আকাশে নিয়ে গেছেন!”

“আমিও আকাশে যেতে চাই মা! বাবাকে বলোনা আমাকে আকাশে নিয়ে যেতে!”

কান্না ভুলে ছেলেকে কোলে তুলে নিলো অয়ন্তী। চাঁদের পাশে জ্বলতে থাকা সবচেয়ে উজ্জ্বল তাঁরা টির দিকে তাকিয়ে সে জোরে চিৎকার করে বলল,,

“রাদিফ শুনছেন? আপনার ছেলে এবং আমাকেও আপনার সাথে আকাশে নিয়ে যান প্লিজ! আমরাও আপনার সাথে তাঁরা হতে চাই। আপনার মত করে আকাশে মিটিমিটি করে জ্বলতে চাই। সাথে নিবেন তো আমাদের প্লিজ?”

খিলখিলিয়ে হেসে উঠল পরাণ! তার মায়ের দু-গালে দুটো চুমু খেয়ে বলল,,

“ইয়াহু। আমরাও খুব শিগগিরি আকাশে যাব মা! বাবার মত তাঁরা হয়ে জ্বলব। তখন আর দু*ষ্টু লোকেরা আমাদের জ্বালাতে আসবেনা মা! তোমাকে বকতেও আসবেনা! স্কুল থেকে আমাকে জোর করে নিয়ে যেতে চাইবেনা! আমরা বাবার সাথে মিলে মিশে থাকব মা।”

জোরপূর্বক হেসে অয়ন্তী ছেলের কপালে চুমু খেয়ে দিলো। চোখের জল ফেলে বলল,,

“দু*ষ্টু লোকেরা আমাদের আর বিরক্ত করবেনা বাবা! আল্লাহ্ তা’আলা তাদের শাস্তি দিয়েছেন। তোমাকে আর ভয়ে ভয়ে স্কুলে যেতে হবেনা বাবা। আল্লাহ্ সব ঠিক করে দিয়েছেন।”

“তুমি সত্যি বলছ মা? দু’ষ্টু লোকেরা আমাদের আর জ্বালাবে না?”

“না বাবা। আর কক্ষনো জ্বালাবেনা।”

“তবুও আমরা আকাশে যাব মা! বাবা তো একা একা আমাদের ছাড়া থাকতে পারবেনা!”

ছেলের আবেগী কথায় অয়ন্তীর কান্নার ঢল দ্বিগুন বেড়ে যাচ্ছিল! ঠোঁট কামড়ে ধরে কান্না লুকোচ্ছিল! ছেলেকে শান্তনা দিয়ে চাপা বলল,,

“ঠিক আছে বাবা। আমরা যাব। তুমি যা বলবে তাই হবে বাবা।”

“আমাদের সাথে কিন্তু দাদুকেও নিয়ে যাব মা! দেখোনা দাদু কেমন বাবার জন্য কান্নাকাটি করে!”

ফিক করে হেসে দিলো অয়ন্তী। ছেলের গাল টেনে বলল,,

“ঠিক আছে বাবা। তোমার দাদুকেও আমরা সাথে নিয়ে যাব। আকাশ থেকে একদিন আমরা সবাই মিলে ঘুরে আসব।”

খুশিতে অয়ন্তীর গলা জড়িয়ে ধরল পরাণ! মুহূর্তের মধ্যেই সে অয়ন্তীর কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ল। অয়ন্তীর চোখ থেকে আবারও টপটপ করে চোখের জল গড়াতে লাগল। ভগ্ন দৃষ্টিতে তাঁরাটির দিকে তাকিয়ে সে আর্ত গলায় বলল,,

“আপনি আমার আকাশে #এক_খণ্ড_কালো_মেঘ হয়ে এসেছিলেন রাদিফ! এই কালো মেঘ আমার আকাশ থেকে জীবদ্দশায় কাটবেনা। আজীবন বয়ে বেড়াতে হবে। আপনার ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে আমি আজও বেঁচে আছি রাদিফ। নয়ত কবেই ম*রে ভূত হয়ে যেতাম! আপনার আদেশ অমান্য করে হলেও আ*ত্ন*হ*ননের পথ বেছে নিতাম! এই পাড়ে আমাদের আর দেখা না হলেও পরপারে ঠিকই হবে!”

#সমাপ্ত।

[ক্ষমা করবেন আমায়। গল্পের নামটাই আমাকে পা*ষা*ন হতে বাধ্য করল! লিখতে লিখতে কখন যে আমিও কেঁদে ফেলেছি বুঝতেই পারিনি। চোখ দুটো ফুলে গেছে প্রায়। তাছাড়া গল্পের সমাপ্তিতেই গল্পের সব রহস্য লুকিয়ে ছিল।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here