ভালোবাসতে_চাই_প্রিয়_তোমাকে,০২,০৩

0
719

#ভালোবাসতে_চাই_প্রিয়_তোমাকে,০২,০৩
#পর্ব_দ্বিতীয়
#দিয়া

নতুন একটি দিনের সূচনা সবকিছুর মাঝেই বিরাজ করছে নতুনত্ব । বিষন্ন মনে রান্নাঘরে সকালের নাস্তা তৈরি করছি।কাল রাতে শুভ্রের কথা শুনে আমার যা বোঝার আমি বুঝে নিয়েছি।শুভ্র অবশ্য আমার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছিল কিন্তু আমিই পাত্তা দেইনি।চুপচাপ গিয়ে বিছানার এক পাশে শুয়ে পরি।কখন যে ঘুমের জগতে তলিয়ে যাই সেটা আমি জানিনা।ভাগ্যে যা আছে তাই হবে কারণ আমার যে যাওয়ার কোনো জায়গা নেই।বাসায় বৃদ্ধ মা বাবা আর কিশোরী দুই বোন।বাবা মায়ের ঘাড়ে বোঝা হওয়ার থেকে যতদিন টিকে থাকতে পারি নিজের সংসারেই নাহয় টিকে থাকি।এত সব চিন্তা করছিলাম আর পরোটা ভাজছিলাম।কখন যে চুলোর পরোটাটা পুড়ে গিয়েছে বুঝতে পারিনি।আম্মার কথায় আমার ধ্যান ভাঙ্গে,,

এই যে মহারাণী কি চিন্তা করছিলেন আপনি ? এইদিকে যে চুলোয় পরোটা পুড়ে যাচ্ছে সেই খোঁজ কি রাখেন – আম্মা

সরি আম্মা আসলে খেয়াল ছিল না।আমি এখনি জলদি করে সব পরোটা ভেজে দিচ্ছি – বলে আমি জলদি জলদি সব কাজ করতে লাগলাম।

আম্মা ও আর কিছু না বলে নিজের মতো বিরবির করে কিছু একটা বলে রান্না ঘরে থেকে বেরিয়ে গেলেন।সব নাস্তা বানানো শেষে আমি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে লক্ষ্য করলাম ৮ টা বাজে।সবার খেতে আসতে এখনো আধা ঘণ্টার মতো সময় আছে।আমি তাই সবকিছু টেবিলের উপর গুছিয়ে রেখে রুমে চলে আসলাম।রুমে আসার পর প্রথমেই আমার শুভ্রের সাথে চোখাচোখি হয়ে গেল।শুভ্রকে দেখে আমি বুঝতে পারলাম ও হয়তো আমাকে কিছু বলতে চায় কিন্তু হয়তো কেনো দ্বিধাদ্বন্দের জন্য বলতে পারছে না।আমি বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম। ভাবতে লাগলাম অতীতের স্মৃতিগুলো। শুভ্র আর আমার সম্পর্ক আর ১ বছর আগে ও এমন ছিল না।আমার শশুড় আব্বু নিজে আমাকে পছন্দ করে ছেলের বউ বানিয়ে আনেন।কিন্তু বিয়ের পরেই আমি বুঝতে পারি আমার শাশুড়ী আম্মা আমাকে মেনে নিতে পারেননি।তার কারণটা আমি আজ পযন্ত ও জানিনা।কিন্তু ১ টা বছর আগে ও শুভ্রের সাথে আমার সম্পর্ক টা আর পাঁচ দশটা স্বামি স্ত্রীর মতোই স্বাভাবিক ছিল।শাশুড়ী আম্মা আগে থেকেই এমন নানা কথা শুভ্রকে বানিয়ে বলতো।মাকে কিছু না বললেও শুভ্র বুঝতো আমি এসব করিনি।সে শাশুড়ী আম্মার সব কথা শুনার পর ঘরে এসে আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলতো,

সরি বউজান।আম্মুর কথায় কিছু মনে করোনা। আম্মু বয়স্ক মানুষ এখনো সবকিছু মেনে নিতে পারেনি। একটু সময় দাও সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে – শুভ্র

আমিও শুভ্রর কথামতো সবকিছু মেনে চলতাম।সারাদিনে এতকিছু ঘটনা ঘটার পরেও শুভ্রের ভালেবাসায় নিজেকে জগতের সবথেকে সুখি মানুষ মনে হতো।আহা কত আনন্দের সময়ই না ছিল সেগুলো।কিন্তু এখন সবকিছু বদলে গিয়েছে।১ বছর আগে থেকেই হঠাৎ শুভ্রের মাঝে আমি পরিবর্তন লক্ষ্য করতে থাকি।কেমন জেনো বদলে যেতে থাকে শুভ্র। কোনো একটি কারণে ও আমাকে সহ্যই করতে পারতো না।আমি ওর আশেপাশে আসলেই বাজে বিহেভ শুরু করতো।আম্মার কথা গুলো শুনেও আমার উপর নানান অত্যাচার করতে থাকে।আমি বুঝতে পারিনা এত পরিচিত একজন মানুষ হঠাৎ কিভাবে এতটা অপরিচিত হয়ে গেলো।শুভ্রের পরিবর্তন টা আমাকে আজ ও ভাবায়।অনেক চেষ্টা করেছি এসবের কারণ জানার।কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।এই এক বছরে হয়তো একটা ঘন্টা সময় ও আমরা একসাথে বসে গল্প করে কাটাইনি।অনেক দূরত্ব এসে গিয়েছে আমাদের স্বামি স্ত্রীর মাঝে।নিজ ভাবনার জগতে মশগুল ছিলাম আমি। শুভ্রের কথা শুনে ভাবনা জগতে থেকে বেরিয়ে আসলাম,

ঝিলিক – শুভ্র

আমি জবাব দিলাম না।

কিছু কথা ছিল ঝিলিক – শুভ্র

আমি তবুও কোনো জনাব দিলাম না।

এবার শুভ্র কিছু টা রাগী কন্ঠে বলে উঠলো,

কিছু বলেছি তোমাকে আমি ঝিলিক – শুভ্র

ও আচ্ছা আমাকে বলেছো।বুঝতে পারেনি আসলে। দুঃখিত – আমি

না বুঝতে পারার কারণ ? – শুভ্র

আমি মনে হয় কারণ টা হয়তো তোমার অজানা নয় – আমি

আমি তেমার কাছে জানতে চেয়েছি – শুভ্র

আগে কখনো তো আমাকে ঝিলিক বলোনি তাই বুঝিনি।তুমি তো সবসময় আমাকে বউজান বলেই ডাকতে – আমি

নিজের দোষে আজকে তুমি সেই ডাকটি শুনতে পারছো না – শুভ্র

কি দোষ আমার বলো তো শুভ্র আমি জানতে চাই কোনো দোষের শাস্তি তুমি আমাকে এত কঠোর ভাবে দিচ্ছো। – আমি

শুভ্র নিশ্চুপ

বলো শুভ্র বলো আমি আর পারছি না শুভ্র এভাবে তোমার এত অবহেলা অত্যাচার নিয়ে বেচে থাকতে শুভ্র। আমার দমবন্ধ হয়ে আসছে শুভ্র। আমার দমবন্ধ হয়ে আসছে শুভ্র। ভিতরে ভিতরে সেই এক বছর আগেই আমি শেষ হয়ে গিয়েছি।হয়তো খুব জলদি দেহের ভিতরে থেকে প্রাণ পাখিটা ও উড়ে যাবে।মরার আগে জেনে তো যাই কোন দোষের শাস্তি তুমি আমাকে এত জঘন্য ভাবে দিচ্ছো।কোন দোষের কারণে আমার স্বামী আমাকে ডিভোর্স দিয়ে অন্য মেয়েকে বিয়ে করতে চাচ্ছে। আজকে তুমি বলেই দাও শুভ্র। আমি আর পারছি না এভাবে চলতে – বলতে বলতে আমি কান্না করে দিলাম।

সবসময় চোখের সামনে যা দেখা যায় তা সত্যি হয়না।প্রত্যেক সত্যির গভীরে আরো একটি সত্যি বিদ্যমান থাকে।পারলে সেটা খুঁজে বের কর – বলে শুভ্র বারান্দা থেকে চলে আসলো।আমি ডুবে গেলাম ভাবনার অতল সাগরে।

এভাবেই নানা ব্যস্ততায় কাজের মধ্যে দিয়ে সারাদিন কেটে গেল।সন্ধ্যার দিকে আবারো মা ফোন করলো।আমি ফোন রিসিভ করার সাথে সাথেই মা বলে উঠলো,

ঝিলিক – আম্মু

হ্যা আম্মু বলো – আমি

তোর আব্বার অবস্থা ভালো না।তাকে কিছুক্ষণ আগে প্রতিবেশিরা মিলে গ্রামের হসপিটালে নিয়ে আসছে।তুই একটু আসার চেষ্টা কর মা।লোকটা বার বার শুধু তোর নামটা বলছে – ভেজা কন্ঠে বললো আম্মু

আম্মু কোনো টেনশন করোনা আমি এখনি শুভ্রের সাথে কথা বলছি।তুমি আব্বুর সাথে থাকো।আব্বুকে দেখে রেখো আমি জলদিই আসছি – আমি

হুম – বলে আম্মু কল কেটে দিল।

আমি রুমে চলে গেলাম।কিছুক্ষণ আগেই শুভ্র হসপিটাল থেকে ফিরেছে।আমি শুভ্রের কাছে গিয়ে বলতে লাগলাম,

শুভ্র – আমি

হুম বলো – শুভ্র

আব্বুর শরীরটা অনেক খারাপ।কিছুক্ষণ আগে তাকে গ্রামের হসপিটালে ভর্তি করা হয়েছে। বার বার আমার নাম বলছে আর আমাকে দেখতে চাচ্ছে। প্লিজ আমাকে নিয়ে চলো – বলতে বলতে আমি কান্না করে দিলাম।

কারণ গত এক বছরে হাজার বার অনুরোধ করার পরেও শুভ্র আমাকে একবারো বাবার বাসায় যেতে দেয়নি। তাই আমি আন্দাজ করে ছিলাম এবার ও শুভ্র মানবেনা।কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে শুভ্র বলে উঠলো,

রেডি হয়ে এসে আমরা এখনি বের হবো।- শুভ্র

শুভ্রের কথা শুনে আমি কোনোমতে বাসায় পরা থ্রিপিস টি চেঞ্জ করে অন্য একটা জামা পরে আসলাম।তারপর বের হয়ে পরলাম দুইজনে গ্রামের উদ্দেশ্য। শাশুড়ী আম্মা অনেক রাগ করেছিলেন আমাদের আসতে মানা করেছিলেন।কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে শুভ্র শাশুড়ী মাকে বুঝিয়ে আমাকে নিয়ে আসে।শুভ্রের একের পর এক আজব কর্মকান্ডে আমি অবাক হচ্ছি।আজকে আবার শুভ্রের মাঝে আমি সেই একবছর আগের শুভ্রের প্রতিচ্ছবি লক্ষ্য করছি।রাত ২ টার দিকে আমার বোন আমাকে ফোন করে জানায় আব্বুকে নিয়ে সবাই বাসায় এসে পরেছে আমরা যেন সোজা বাসায় যাই।আমিও ওর সাথে কথা বলে ফোন রেখে দেই।

সকাল সাড়ে ছয়টা

বাড়ির সদর গেট দিয়ে প্রবেশ করতেই উঠানে অনেক মানুষের শোরগোল আমার নজরে পড়ে।বেশিরভাগই গ্রামের মুরব্বিরা। কিন্তু তাদের এখানে থাকার কারণ আমি বুঝতে পারছিনা।হয়তো আব্বু অসুস্থ তাই।কিন্তু ঘরে প্রবেশ করতেই আমি চমকে উঠি।একি একজন মৃত ব্যক্তির লাশের পাশে বসে আমার আম্মু আর রিনি মিনি কান্না করছে।আমি হয়তো বুঝতে পারছি সবটা।আতঙ্কে আমার বুকটা কেপে উঠলো

চলবে?

#ভালোবাসতে_চাই_প্রিয়_তোমাকে
#পর্ব_তৃতীয়
#লেখিকা_দিয়া

সকাল ৭ টা,

ঝড়ের গতিতে পেরিয়ে গেলো গোটা একটা দিন।বাড়িতে এখন মানুষ বলতে আমরা ৫ জন। শুভ্রের হসপিটাল থেকে কল আসা শুরু হয়ে গেছে। যেহেতু তাড়াহুড়োর মধ্যে ছুটি নিয়ে আসতে পারেনি তাই এত কল।অনেক কষ্টে ২ দিনের ছুটি নিতে পেরেছে। কালকে আবার হসপিটালে থাকতে হবে।তাই আজকেই আমাদের ফিরতে হবে। উঠানে হাটাহাটি করছিলাম আর ভাবছিলাম কালকের কথা,

আসতে কালকে বড্ড দেরি করে ফেলেছিলাম বোধহয়। তাই তো আমি আসার আগেই আব্বু চলে গেলো চিরবিদায় নিয়ে।আম্মু রিনি মিনি এত কান্না করলো কিন্তু আমি শুধু পাথরের মূর্তির নির্বিকার ভঙ্গিতে আব্বুর পাশে বসেছিলাম। শুভ্র আসার পরই সবকিছু জানতে পেরে গ্রামের লোকদের সাথে আব্বুর দাফনের ব্যবস্থা করতে থাকে।টানা দুই থেকে তিন ঘন্টা আব্বুর পাশে বসে রইলাম তবুও আমার চোখ গড়িয়ে এক ফোঁটা ও পানি পরেনি। কথায় আছে না অল্প শোকে কাতর অধিক শোকে পাথর।আমার অবস্থা ও ঠিক সেই রকমই হয়ে গিয়েছে। বার বার মনে হচ্ছে আব্বুর শেষ সময়টাতে আমি তার পাশে থাকতে পারলাম না।কত বড় ব্যর্থ মেয়ে আমি।এসব ভাবতে ভাবতে ভাবনার জগতের গভীরে তলিয়ে গিয়েছিলাম আমি।হঠাৎই রিনি এসে ডেকে উঠলো আমাকে,

আপি – রিনি

হ্যা রিনি বল – আমি

চল নাস্তা করবে।সেই কখন থেকে উঠানে এসে বসে আছো – রিনি

হুম আসছি। মিনি কোথায় ? – আমি

ও আম্মুর সাথে নাস্তা সাজাচ্ছে। চলো তুমি- রিনি

হুম চল – বলে আমি রিনির সাথে ঘরের ভিতরে চলে আসলাম

খাবার টেবিলে নিরবতা ভেঙে হঠাৎ শুভ্র বলে উঠলো,

রিনি মিনি কোন ক্লাসে এবার তোমরা ? – শুভ্র

কিছুদিন আগে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে শেষ করলাম ভাইয়া – মিনি

ও এখন তো কলেজে ভর্তি হবা।তো এখানেই কি পড়ার ইচ্ছে নাকি শহরে কোথাও পড়তে চাও ? – শুভ্র

ইচ্ছে তো আছে ভাইয়া ঢাকা পড়ার।এখন জানিনা কি হবে – রিনি

আম্মু৷ আমি একটা কথা ভেবেছি – শুভ্র

বলো বাবা – আম্মু

রিনি আর মিনি বড় হয়েছে একা বাড়িতে ওদের নিয়ে একা থাকা একটু ও নিরাপদ নয়।তার মধ্যে গ্রামে। আমি চাচ্ছি আপনারা ঢাকায় চলে আসেন।আমি একটা বাসা খুঁজে দেই আমাদের বাসার আশেপাশে। রিনি মিনি ও ঢাকায় পড়াশোনা করতে পারলো। আপনারা সবাই নিরাপদে থাকতে ও পারলেন – শুভ্র

না বাবা আমার মানুষটা নিজের শেষ সময়টুকু এখানে কাটিয়েছে।আমি যতদিন বেঁচে আছি মানুষটার স্মৃতি গুলো সাথে নিয়েই বাঁচতে চাই।এই ঘরবাড়ি ছেড়ে যে আমি কোথাও যেতে পারব না – আম্মু

তাহলে আম্মু রিনি মিনির নিরাপত্তার ও তো একটা ব্যাপার আছে। সেই ব্যাপারে কিছু ভেবেছেন ? – শুভ্র

একটা কাজ করি শুভ্র – আমি

কি কাজ ? – শুভ্র

রিনি মিনির রেজাল্ট না দেওয়া পযন্ত ওরা নাহয় আমাদের সাথে আমাদের বাসায়ই থাকুক।তারপর যেই কলেজে ভর্তি হবে তার কাছে ভাল একটা হোস্টেল দেখে ওদের থাকার ব্যবস্থা করে দিব – আমি

কথাটা তুমি খারাপ বলোনি।আম্মা আপনি কি বলেন? – শুভ্র

দেখো তোমরা দুইজনে যা ভালো মনে হয় কর।আমি আর কি বলবো – আম্মু

কিন্তু আম্মু তুমি একা এখানে কি ভাবে থাকবে ? – আমি

আমার কোনো সমস্যা নাই রে মা।আমার মানুষ টা সবসময় আমার সঙ্গেই থাকবে – আম্মু

তাহলে রিনি মিনি তোমরা তোমাদের কাপড় গুছিয়ে ফেলো আর কিছুক্ষণ পরেই আমার রওয়ানা দিব – শুভ্র

আচ্ছা ভাইয়া – মিনি

~~~~~~~~~~~

বাসায় আসতে আসতে আমাদের রাত সাড়ে নয়টা বেজে যায়।আম্মুকে একা ফেলে আসতে মন চাচ্ছিল না। তবুও আমি আমার মাকে চিনি। আব্বুকে প্রচুর ভালোবাসে মানুষটা। আব্বুকে রেখে কখনো নিজের বাবার বাসায় ও থাকেনি মানুষটা।

ঘরের বারান্দায় দাঁড়িয়ে এসব কথাই চিন্তা করছিলাম। তখন আমার পাশে এসে দাঁড়ালো শুভ্র। কিছুক্ষণ নিরব থেকে বলতে শুরু করলে,

মন খারাপ তোমার ? – শুভ্র

না – আমি

দেখো ঝিলিক সবারই একদিন যেতে হবে। তুমি স্বাভাবিক ভাবে ব্যাপারটাকে মেনে নাও।মনে থেকে দোয়া কর আব্বু যেন জান্নাতবাসী হয়।তুমি তার জন্য যত মন খারাপ করে থাকবে সেটা ততই খারাপ – শুভ্র।

হঠাৎই আমি একটি অনাঙ্ক্ষিত কান্ড ঘটিয়ে ফেললাম শুভ্রকে জড়িয়ে ধরে বাচ্চাদের মতো ফুপিয়ে কান্না করতে লাগলাম। শুভ্র হয়তো আমার অবস্থাটা বুঝতে পেরেছিল।তাই শুভ্র ও আমাকে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল।আমি কান্না ভেজা কন্ঠে বলে উঠলাম,

কেন এমন হলো শুভ্র ? আল্লাহ কেনো আমার আব্বুকে আমার কাছে থেকে নিয়ে গেলো ? মানুষটা যে আমাকে বড্ড বেশি বুঝতো।আমার কন্ঠস্বর শুনেই আমার আব্বু আমার মন খারাপ ধরে ফেলতে পারতো।আমি যে পারছিনা এটা মানতে শুভ্র – আমি

শুভ্র নিশ্চুপ হয়ে আমার মাথায় বিলি কেটে দিতে লাগলে।এভাবে ক্লান্তির ফলে আমি এই অবস্থায়ই একসময় ঘুমের কোলে ঢলে পড়লাম।ঝিলিক ঘুমিয়ে যেতেই শুভ্র ঝিলিককে কোলে করে রুমে নিয়ে আসলো।তারপর সুন্দর করে তাকে বিছানায় শুইয়ে দিলো।ঝিলিকের দিকে তাকিয়ে শুভ্র বলতে লাগলো,

কি এমন হতো ঝিলিক আজকে আমাকে না ঠকালে।তুমি আর আমি ও তো আর কোন পাঁচ দশটা স্বাভাবিক দম্পতির মতো সুখে শান্তিতে মিলেমিশে সংসার করতে পারতাম।কাজটা তুমি ঠিক করোনি ঝিলিক।এর জন্য তোমার অনেক শাস্তি পাওনা রইলো – বলে শুভ্র রুমে থেকে বেরিয়ে গেলো।

সময় স্রোতের মতো প্রবাহমান। কোনো পিছুটান নেই সময়ের। তাই নিজের গতিতে সবসময় নিজের মত চলতেই থাকে।দেখতে দেখতে পেরিয়ে গেছে আরো কিছু মাস।এই কিছু মাসে অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে। রিনি আর মিনিকে শুভ্র স্বনামধন্য একটা কলেজে ভর্তি করে দিয়েছে। কলেজের পাশেই বেশ ভালো একটা হোস্টেলে ওদের থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছে শুভ্র। সবকিছুরই কমবেশি পরিবর্তন ঘটলেও কোনো পরিবর্তন নেই আমার আর শুভ্রের সম্পর্কের মাঝে।কোনো উন্নতি বা অবনতি কিছুই হয়নি আমাদের। আজকে বাসায় অনেক আয়োজন চলছে কারণ বাসায় আজকে আম্মার বোনের পুরো পরিবার আসবে। তাই আম্মা আর আমি দুজনেই সকাল থেকে ব্যস্ত রান্নার কাজে।মানুষ আসবে তিনজন।কিন্তু তাদের পছন্দের পরিমাণ অতুলনীয়।আমার খালা শাশুড়ির পছন্দ ইন্ডিয়ান সব খাবার। আবার তার মেয়ে মানে আমার খালাতো ননদ ইশিতার পছন্দ সব বিদেশি আইটেম, আমার খালা শাশুড়ির জামাইয়ের কোনো ভেজাল নেই।মানুষটা যা পায় তাতেই খুশি।উনার পরিবারে উনিই একমাত্র আমার পছন্দের ব্যক্তি।কাজের মাঝেই হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠলো।আমার শাশুড়ী তারাতাড়ি করে চলে গেলেন দরজা খুলতে।আর আমি নাস্তার আয়োজন করতে লাগলাম।তারপর উনারা বসার পর উনাদের সামনে নাস্তা নিয়ে গেলাম।যখন আমি তাদের নাস্তা হাতেহাতে এগিয়ে দিচ্ছিলাম তখন আমার খালা শাশুড়ি বলে উঠলেন,

তা তোমার কি খবর ঝিলিক ? – খালা শাশুড়ি

এই তো খালা ভালই। আপনি কেমন আছেন ? খালু ভালো আছেন ? ইশিতা তোমার কি অবস্থা?- আমি

এই তো মা ভালো – খালু

আমিও ভালো আছি – খালা শাশুড়ি

ইশিতা আমার কথার কোনো জবাব দেয়নি।আমিও আর কথা না বাড়িয়ে চলে আসি সেখান থেকে।রাত ৯ টা বাজে।শুভ্রের আসার টাইম হয়ে গেছে।হঠাৎ করে আবারো কলিং বেল বেজে উঠলো।আমি যেই না রুমে থেকে বেরিয়ে দরজা খুলতে যাবো আমার আগে ইশিতা দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দিলো এবং শুভ্রকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো,

আই মিস ইউ শুভ। আই মিসড ইউ সো মাচ ডিয়ার। কেমন আছো তুমি?- ইশিতা

চলবে ??

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here