পুষ্পবৃষ্টি,পর্ব-২

0
420

#পুষ্পবৃষ্টি,পর্ব-২
ফারিয়া নাজনীন

পরেরদিন সকালবেলা ঘুম ভাঙল অনেক হৈ-হুল্লোড়ে।হট্ট’গোল শুনেই বুঝেছি, বাড়িতে অনেক মেহমান। ঘর থেকে বেরিয়ে দেখি মামা, খালামনি, নানু, বড় ফুপু, ছোট ফুপু মোটামুটি সব আত্মীয়স্বজনই আছেন। কিন্তু হঠাৎ এতজন বাড়িতে! আগে থেকে আসার কথা ছিল বলেও তো মনে হয় না। থাকলে তো আমি জানতাম।

পরে অবশ্য মায়ের কাছে শুনেছি, সকালবেলাতেই তাদের ফোন করে জরুরি তলব করা হয়েছে। আর তলবের কারণ হলো আমার বিয়ে। শুনে খানিকটা অবাকই হয়েছিলাম। আমার বিয়ের কথা চলছে আর আমিই জানি না, জানা দূর একটু আভাস পর্যন্ত পায়নি। শুনে যতটুকু বুঝলাম, বাবা বেশ কিছুদিন ধরেই কথা চালাচ্ছিলেন। তার ছোটবেলার বন্ধুর ছেলে। বেশ খোঁজখবর নেওয়ার পর তাদের আজ আসতে বলা হয়েছে। সব ঠিকঠাক থাকলে আজই কাবিন হয়ে যাবে।

বিয়ের কথা শুনে আমার মাথায় প্রথমেই আরাফের নাম এলো। কিন্তু পরক্ষণেই সে চিন্তা বাদ দিলাম। তার অনুভূতি সত্যি নাকি মজার ছলে করা সবকিছু, সেটাই তো জানিনা। আর তার আমার প্রতি অনুভূতি থাকলেও সমাজ তো আর সহজে মেনে নেবে না। তার উপর আরাফের বয়সও বড্ড কম। জীবন সম্বন্ধে কতটুকুই বা জানে সে! সব চিন্তা বাদ দিয়ে বর্তমানে যা হচ্ছে, তা নিয়েই ভাবা শ্রেয় বলে মনে করলাম।

সন্ধ্যার দিকে ছেলের বাড়ি থেকে বেশ কজন এলো। তিনজন মহিলা আর ছেলে সহ চারজন পুরুষ। প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, শাড়ি পড়ে, বেশ ঘোমটা টেনে নিজেকে পরিপাটি করে তাদের সামনে হাজির হলাম। তাদের পছ’ন্দও হলো। ছেলের সাথে আলাদাভাবে কথা বলতে দিলেও নাম, পরিচয় এতদূরই, এর বেশি কথা এগোলো না। তারপর বাবা এলেন মতামত নিতে। কিন্তু বড্ড অভি’মান হয়েছিল সেদিন। কোনোকিছু না জানিয়ে সব ঠিক করে তারপর মতামত জানতে এসেছেন! একরাশ অভিমান নিজের মাঝে জমিয়ে আমি সম্মতি দিলাম। ব্যস, আমার নতুন জীবনের শুরু!

এ জীবনের শুরুটা যে খুব খারাপভাবে হয়েছিল এমন বলব না। স্বামী, সংসার সবটাই মনমত ছিল। নিজের মতো করে সবটা গুছিয়েও নিচ্ছিলাম। আর সেইসাথে আমার পড়াশোনাও সমানতালে চলছিল। এরমাঝে ভুলেই গিয়েছিলাম আরাফের কথা। কিন্তু আরাফ! সেকি ভুলেছিল?মন থেকে মুছে ফেলতে পেররছিল তার অপরিণত বয়সের প্রেয়সীকে? তার প্রেয়সী তো তখন অন্যকারো রমণী, অন্যকারো ঘরণী!

বিয়ের ছয়মাস পরে একবার মায়ের কাছে অবশ্য আরাফের কথা শুনেছিলাম। মা হুট করেই জিজ্ঞেস করেছিল,

“হ্যাঁরে পুষ্প, আরাফের কথা কিছু জানিস? ছেলেটার কিছু কি হয়েছে?”

আমি অবাক চাহনী নিয়ে বলেছিলাম, ” আমি কীভাবে জানব? কেন কী হয়েছে ওর?”

“না মানে তোর সাথে তো অনেক দুষ্টু’মি করত, ভাবলাম জানিস কীনা। ছেলেটা ইদানীং বড্ড চুপচাপ থাকে। বাড়ি থেকে তেমন বেরও হয়না। সেদিন ওর মা বলছিল, সারাদিন নাকি ঘর অন্ধকার করে বসে থাকে। কী যে হলো ছেলেটার! এমন একটা ভালো ছেলের এরকম দশা মানা যায় নাকি।”

আমি সেদিন অবাক হয়েছিলাম। আরাফ এতোটা ভালোবাসত আমাকে? সে কি কষ্ট পাচ্ছে আমাকে অন্যকারো সাথে দেখে। তার ভালোবাসার অস্তিত্ব আমি টের পেয়েছিলাম বিয়ের মাসখানেক পরেই। হঠাৎ একদিন একটা চিঠি পায়। চিঠি না বলে সেটাকে চিরকুট বললেই হয়ত ভালো হবে। শুধু চিরকুটটাই, স্বয়ং আরাফের দেখা আমি তখনও পর্যন্ত একবারও পায়নি!

“পুষ্প,
জানেন, এখন আমার জীবনে একটা অভিশপ্ত শব্দ আছে। শব্দটা হলো- “পর’স্ত্রী”। এই একটা শব্দই আমাকে প্রতিনিয়ত ভেঙেচুড়ে নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। যেদিন গ্রামে গিয়েছিলাম, সেদিনই হয়তো আমার অবচেতন মন কিছুটা আন্দাজ করেছিল। বারবার মনে হারি’য়ে ফেলার ভয় আসছিল। আসলে অনেক ভালোবাসতাম তো আপনাকে, তাই হয়তো আভাস পেয়েছিলাম। ওই দুটো দিন শুধু ছটফট করতে করতেই কাটিয়েছিলাম। দাদু অনেক অসুস্থ থাকায় চলেও আসতে পারিনি। কিন্তু যখন এলাম, ততক্ষণে যে বড্ড দেরি হয়ে গেল! আমার মানুষটা তখন অন্যকারো স্ত্রী, অন্যকারো জীবনসঙ্গী। অবশ্য আপনি কোনোদিনই আমার মানুষ ছিলেন না। থাকলে কি এত সহজে অন্য কারো নামে কবুল বলতে পারতেন? একটু কি অপেক্ষা করতেন না?”

আমি চিরকুটটা পড়ে একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেললাম। আরাফ আমার থেকে বয়সে ছোট। তাই আরাফের এই ভালোবাসা কোনোদিনই সমাজ স্বী’কৃত হতোনা। না মানত আরাফের পরিবার আর না মানত আমার পরিবার। তারচেয়ে ভালোই হয়েছে সেদিন ছেলেটা ছিল না। নাহয় কীযে পাগ’লামী করত! এসব ভাবতে ভাবতে হুট করেই আমার নজরে পড়ল অপরপৃষ্ঠায় লেখা কিছু লাইনের উপর। এটা আগে চোখে পড়েনি।

“নাইবা হলে আমার, নাইবা থাকলে পাশে
পরের জন্মেই নাহয় জো’র করে থেকে যাব
তোমার নামের ওই বসন্ত ফুলটি হয়ে।”

এই তিনখানা লাইনেই মিশে আছে স্পষ্ট অভি’মানের ছাপ, আরাফের তীব্র ভালোবাসার ছাপ। আমি তখন মনেমনে খুব করে চাইলাম যাতে আরাফের এই চাওয়াটা কবুল হয়। কিন্তু ওইযে শব্দটা। “পর’স্ত্রী”। পর’স্ত্রী হয়ে কি আর এমন অন্যা’য় আবদার মনে রাখা যায়! যত্ন করে চিরকুটটা আলামারিতে কাপড়ের ভাঁজে তুলে রাখলাম। আরাফের ভালোবাসাকে নাহয় জীবনে রাখলাম না, কিন্তু এই শেষ চিরকুটটা রাখতে দোষ কী? কিন্তু হায়, তখনও যদি জানতাম এই যত্নে রাখা চিরকুটই একদিন আমার চরি’ত্রে দাগ লাগাবে, লেপ্টে দেবে এক দোয়াত পরিমাণ কালিমা।

আরাফের ওই চিরকুটটা আমার মনে দাগ কেটে গেলেও, বেশিদিন স্থায়ী হলো না। হবেইবা কী করে? নতুন ঘর, নতুন সংসার, নতুন সম্পর্ক। কত মানানো গোছানোর ব্যপার আছে। এতকিছুর মধ্যে কি আর সময় পাওয়া যায়? নতুন সম্পর্কটাও যে দিনকেদিন মনে স্থায়ী হচ্ছিল। সবকিছুর প্রতিই ভালোবাসা অনুভব করছিলাম। সবকিছুর মধ্যে আমি বেশ মানিয়েও নিচ্ছিলাম। কিন্তু আমি যতই মানায়, তা যে টিকবে না। কারণ আমার এই সংসারের ভীতটাই যে ছিল নড়বড়ে।

বিয়ের বছরখানেকের মাথাতেই বুঝেছিলাম, আমার স্বামী লোকটি বিশেষ সুবিধার না। রগ’চটা স্বভাবের কথা তো আগেই জেনেছিলাম। অল্প কিছুতেই চিৎ’কার-চেঁচা’মেচি, বিশ্রী শব্দের ব্যবহার, জিনিসপত্র ছোঁ’ড়া’ছু’ড়ি সবটাই আছে। কিন্তু এ নিয়ে কিছু বলা যাবেনা। বললেই আবার সব শুরু। রোজ রোজ এ নিয়ে ঝগড়া-ঝামেলা লেগেই থাকত। কিন্তু সবকিছু মাত্রা ছাড়িয়ে গেল বছর দুয়েক পর। আমার গায়ে প্রথম হা’ত তুলল। শুধু হাত তুলেই ক্ষান্ত হয়নি, আমার চরি’ত্রে কলঙ্ক মিশিয়ে বাবা-মায়ের কাছে বিচা’রও দিয়েছিল। আর কারণ ছিল আমার সেই অতি যত্নে রাখা চিরকুটটা!

একদিন হুট করেই রাফি অর্থাৎ আমার স্বামীর হাতে চিরকুটটা পরে যায়। আর তা দেখেই মাথা গরম করে আমাকে যাচ্ছে নয় তাই বলা শুরু করেছিল। সাথে শ্বশুড়-শ্বাশুড়িও তাল দিচ্ছিলেন। আর তারপরেই গায়ে হা’ত তোলা, বাবা-মায়ের কাছে বিচার। সাথে একটা জঘন্য নোংরা অভিযোগ। সেই অভিযোগের নাম “পর’কীয়া”। ইশ! নিজের মৃ’ত্যু নিজে কামনা করার মতো একটা অভিযোগ না?

আমি এ সবকিছুরমধ্যেই নির্বাক হয়ে সব দেখছিলাম। নতুন সম্পর্কগুলো গুছিয়ে নিতে আমি কতই না পরিশ্রম করেছিলাম। কিন্তু কোথায় গেল আমার সেই দুবছরের শ্রম, যত্ন আর ভালোবাসা। এ মানুষগুলোকেই কি আমি নিজের বুকে স্থান দিয়েছিলাম? এতদিনে এতটুকুও বিশ্বাস কি অর্জন করতে পারলাম না? কিন্তু আমাকে সম্পূর্ণ অবাক করে দিলেন আমার মা। হ্যাঁ, আমারই জন্মদাত্রী মা। তিনি চোখে-মুখে অসহায়তা মিশিয়ে রাফিকে বললেন,
” বাবা, মেয়েটা একটা ভুল করে ফেলেছে। তুমি এখন মাফ করে দেও। মিলেমিশে তো থাকতে হবে। ও আর এমন ভুল করবে না।”
আমি ডুকরে কেঁ’দে উঠলাম। এতদিনের চেপে রাখা কান্নাগুলো আর ভেতরে থাকতে চাইল না। তখনই বাবা ধমকিয়ে উঠলেন,

“তুমি চুপ কর। আমার মেয়েকে আমি চিনি। ও এরকম কাজ কখনও করতে পারে না। আর এই চিরকুট পড়েই তো বোঝা যাচ্ছে এটা অনেক আগের। পুষ্পর সাথে কোনো সম্পর্ক ছিল না এটাও বোঝা যাচ্ছে। একটা ছেলে একটা মেয়েকে এরকম চিঠি দিতেই পারে। কিন্তু তারমানে এটাই না যে মেয়েটা খারাপ। পুষ্পের ভুল শুধু একটাই, সেটা হলো ও চিঠিটা গ্রহণ করেছে। কিন্তু আমি এটা বিশ্বাস করিনা, আমার মেয়ে আদৌও কোনো ছেলের হাত থেকে এই চিঠি নিয়ে নিজের কাছে রেখেছে। পুষ্প তুমিই বল, কীভাবে পেয়েছ এটা?”

“ভার্সিটি থেকে আসছিলাম, তখন একটা বাচ্চা ছেলে দিয়েছিল। কিন্তু পরে আর ফেলে দেওয়া হয়নি।”

মিথ্যা বলিনিহ, এভাবেই পেয়েছিলাম। শুধু আরাফের নামটা গোপন করলাম। আর সেদিনের মতো আমার কল’ঙ্কটাও কিছুটা মুছল৷ কিন্তু সেদিন জেনেছিলাম, এই পৃথিবীতে আমি ঠিক কতটা অসহায়। আমার মা পর্যন্ত আমায় বিশ্বাস করেনি।

তারপর থেকেই রোজ রোজ আমার গায়ে হা’ত তোলা, ডিভোর্সের হু’মকি এসব লেগেই থাকত। আমি কখনও প্রতিবাদ করতাম কখনও চুপচাপ সহ্য করতাম। কারণ বুঝে গিয়েছিলাম তো, কেউ আমার পাশে এসে দাঁড়াবে না। মা তো সবার আগে দূরে ঠেলে দেবে। তাই পরিস্থিতি সবসময় ঠিক রাখার চেষ্টা করতাম। শুনেছি ভালোবাসা দিয়ে নাকি মানুষ বেঁ’ধে ফেলা যায়। তাই আমিও সেই পথ অনুসরণ শুরু করলাম। সবার অপ’মান, অব’হেলা সহ্য করেও খুব ভালোবাসলাম তাদের, যত্ন করে আগলে রাখলাম, বাড়ির সব কাজ নিজের দায়িত্বে করা শুরু করলাম। আর এসবের চক্করে কবেই তো ভার্সিটি যাওয়া বন্ধ করেছি।

এতকিছুর পরেও রাফির ব্যবহারের পরিবর্তন ছিল না। আর না ছিল আমার শ্বাশুড়-শ্বাশুড়ির। পরে অবশ্য কারণ জেনেছি। রাফির অফিসের কলিগ নীরার সাথে সম্পর্ক ছিল। আমাকে ডিভোর্স দেওয়ার পর বিয়ে করবে এমন চিন্তাভাবনা। আমি ছাড়া পরিবারের সবাই মোটামুটি জানত। তাদের পূর্ণ সমর্থনও ছিল। একদিন তো আমার শ্বাশুড়ি বলেই বসলেন,

” নীরা মাসে মাসে কতটাকা বেতন পায় তুমি জানো? আর তুমি কী কর? আগে যাও ভার্সিটি যেতে এখন তো তাও যাওয়া বন্ধ করেছ। বাড়িতেই হাতা-খুন্তি নাড়ো। তবুওতো স্বামীর মন যুগিয়ে চলতে পারো না।”

আমি সেদিন নির্বাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম। এদেরকে আমি মায়ায় বাঁধতে চাচ্ছিলাম? মায়ায় তো অ’মানুষ বাঁধা যায় না!
কিন্তু এই অপমানের পরও যদি আমি বাড়ি ছেড়ে চলে যেতাম, তবুও হয়তো আমার জীবনে বেঁচে থাকার অবলম্বন হিসেবে কিছু থাকত। এমন নিঃস্ব হয়ে হয়তো আমায় ফিরতে হতো না।

এ ঘটনার সপ্তাহখানেকপর এক রাতে রাফি বাড়ি ফিরল না। সারারাত অপেক্ষায় থাকলাম, কতবার ফোন দিলাম। কিন্তু কোনোকিছুতেই তার সাথে যোগাযোগ করতে পারলাম না। সারারাত নির্ঘুম কাটিয়ে তার অপেক্ষায় থাকলাম। সকালে যখন সে বাড়ি ফিরল, তখন যেন সব ঠিক, স্বাভাবিক এমন ভঙ্গিমা। আমি বারবার রাতে না ফেরার কারণ জানতে চাইলে এক পর্যায়ে উত্তর দিল,

“তুমি জানোনা আমি রাতে কোথায় যেতে পারি?”

আমি চমকে উঠলাম। এত অধঃ’পত’ন! সেবার প্রথম ধৈর্যশীল আমি অধৈর্য হয়ে উঠলাম। চিল্লিয়ে “দুশ্চ’রিত্র ” “ল’ম্পট” আরও কতকিছুই যে বললাম। রাফিও থেমে থাকল না। চ’ড় থা’প্পড় দিয়ে শুরু করে বে’ল্ট দিয়ে মা’রতে থাকল। এক পর্যায়ে চুলের মু’ঠি ধরে দে’য়ালে মাথা আ’ঘাত করাতে থাকল। তাকে আটকা’তে আমি নড়াচড়া করতে লাগলে এক পর্যায়ে ছিটকে ড্রেসিং টেবিলের উপর যেয়ে পড়লাম। এই মারমারির মাঝেই আমি লক্ষ করলাম পা দিয়ে র’ক্ত পড়ছে। এত র’ক্ত! এতো কোনো কা’টা জায়গা থেকে না। হতভম্ব হয়ে বসে পড়লাম। রাফিও চুপ হয়ে গেল। আমি ধীরে ধীরে বুঝতে পারছি। আমার আশঙ্কায় কি ঠিক? তারমানে কেউ আমার এই দুঃখের জীবনে আসতে চেয়েছিল? আর আমি তাকে হারিয়েই ফেললাম! মুহূর্তেই জ্ঞা’ন হারালাম।

যখন জ্ঞা’ন ফিরল তখন হাসপা’তালের বেডে আমি। সামনে মা-বাবা, আমার বাবার বাড়ির সবাই। আমাকে চোখ মেলতে দেখে মা কাঁদতে থাকলেন।

“মারে, তোকে ওরা এত অ’ত্যাচার করে তা তুই আগে বলিসনি কেন? চুপচাপ সহ্য করছিলি কেন? বললে তো কবেই নিয়ে আসতাম তোকে। তোর বাচ্চাটাও যে আর থাকল না। দুমাসের ছিল।”

আমি চিৎকার করে উঠলাম। আমার জন্যই তো সে থাকল না। সবকিছুর ঝামেলায় আমি তো নিজের দিকে নজরই দিইনি। তাইতো তার আসার সুসংবাটাও আঁচ করতে পারিনি। আমারই দোষ! চিল্লিয়ে কাঁদতে থাকলাম। বাবা-মাকে অভিযোগ করলাম। সত্যিই কি আমি বললে তারা নিয়ে আসত? সেদিন পুরো হাসপাতাল একজন মায়ের সন্তান হারানোর আহাজারি শুনতে পেল। বাতাসের মাঝে মিশে থাকল একজন মায়ের সন্তান হারানোর শোক।

শরীর দুর্বল থাকায় কিছুদিন বেশিই হাসপাতালে রেখেছিল। আমি সারাদিন মরার মত শুয়ে থাকতাম আর কাঁদতাম। চোখ খোলার শক্তিটুকুও পেতাম না। বড্ড ভেঙে গিয়েছিলাম৷ কোথায় কী হচ্ছে কোনোকিছুরই খবর নেই আমার কাছে। এরইমাঝে একদিন হাসপাতালের বিছানাতেই চোখ বুজে শুয়ে আছি। কত মানুষেরই আনাগোনা। তখন হুট করে কানের কাছে এক ফিসফিসানো আওয়াজ শুনতে পেলাম।

” দ্রুত সুস্থ হয়ে যান, পুষ্প। আর একদম চিন্তা করবেন না। যে হাত আপনাকে মারার জন্য উদ্যত হয়েছে, যে হাত আপনার অংশকে নিঃশেষ করার জন্য অবদান রেখেছে, সে হাত আমি নিজে ভেঙে গুড়িয়ে দিয়ে এসেছি।”

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here