#মনে_রেখো_এই_আমারে
#সূচনা_পর্ব
#মাহমুদা_আক্তার_তাহিনা(লেখিকা)
– নিশুতি রাত! থেমে থেমে কোথাও থেকে শিয়ালের ডাক ভেসে আসছে, চারিদিকে বাতাস প্রবাহিত হচ্ছে। আকাশের দিকে তাকিয়ে কারো স্বরণে এক মনে গান গেয়ে চলেছে কেউ,,,,,,
সোনারও পালঙ্কের ঘরে
লিখে রেখে ছিলাম দ্বারে
যাও পাখি বলো তারে
সে যেন ভোলে না মোরে
সুখে থেকো ভালো থেকো
‘মনে রেখো এই আমারে
বুকের ভেতর নোনা ব্যথা
চোখে আমার ঝরে কথা
এপার ওপার তোলপাড় একা।।
যাও পাখি বলো তারে
সে যেনো ভোলে না মোরে
সুখে থেকো ভালো থেকো
‘মনে রেখো এই আমারে
মেঘের ওপর আকাশ ওড়ে
নদীর ওপার পাখির বাসা
মনে বন্ধু বড় আশা।।
যাও পাখি যা রে উড়ে
তারে কইও আমার হয়ে
চোখে জ্বলে যায় দেখবো তারে
মনে চলে যায় অদূর দূরে
যাও পাখি বলো তারে
সে যেনো ভোলে না মোরে
সুখে থেকো ভালো থেকো
‘মনে রেখো এই আমারে
সোনারও পালঙ্কের ঘরে
লিখে রেখে ছিলাম দ্বারে
যাও পাখি বলো তারে
সে যেনো ভোলে না মোরে
সুখে থেকো ভালো থেকো
‘মনে রেখো এই আমারে
◑– নিজের রুমের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে গানটি গেয়ে উঠে জহুরা। পরনে তার লাল পেরে সাদা শাড়ি! চুল গুলো সমান তালে উড়ছে। চোখ দিয়ে তার নোনাজল গড়াচ্ছে। হাতে তার খুব কাছের একজন প্রিয় মানুষের ছবি। ছবিটির দিকে তাকিয়ে কান্না ভেজা কন্ঠে জহুরা বলে উঠে,
তুমি কষ্ট পাইয়োনা সুজন! তুমি কষ্ট পাইয়ো না, আমি খুব তারাতারি তোমার কাছে চলে আসবো। আমি জানি তো তুমি আমাকে ছাড়া থাকতে পারো না।
পরমুহূর্তেই কন্ঠে তেজ নিয়ে বলে জহুরা,
ওদের মরার দিন ঘনিয়ে এসেছে, ওদের করা পাপের শাস্তি ওদের পেতেই হবে। আর সেটা আমি দিবো! আমি নিজের কাছে নিজে প্রতিজ্ঞা করলাম, আমার সুজনের কসম আমি তোদের পাপের শাস্তি দিয়েই ছাড়বো!
পাশে রাখা পাখির খাঁচাটি হাতে তুলে নেয় জহুরা। পাখিটার নাম ‘মন’। এই পাখিটা জহুরার একাকিত্বের সঙ্গী। এটার সাথে তার আর সুজনের অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। ‘মনকে খাঁচা থেকে বের করে হাতে তুলে নেয় জহুরা। মাথায় হাত ভুলিয়ে বলে উঠে,
— তোরে যেদিন রক্তাক্ত অবস্থায় পেয়ে যখন সুজন আমার কাছে নিয়ে এসেছিলো, সেদিন খুব কষ্ট পেয়েছিলাম তোর অবস্থা দেখে জানিস, তারপর তোরে সেবা করে সুস্থ করে তুলছিলাম। সুজনরে বলছিলাম তোরে কি বলে ডাকবো, তখন সুজন বলছিলো–‘আমি যদি কখনো না থাকি, তাহলে এটা তোমার একাকিত্বের সঙ্গী হবে, ওর কাছে তোমার মনের কথা বলবে, আজ থেকে এটার নাম ‘মন’!
–সেদিন সুজনের কথা শুনে কি অভিমানটাই না করেছিলাম। মনে মনে বলেছিলাম এই ছেলের সাথে আর কথাই বললো না সবসময় ‘আমি যদি কখনো না থাকি’ এই কথা বলে। কিন্তু দেখ সুজনের কথাই পূর্ণ হইলো! তুই সত্যিই আমার একাকিত্বের সঙ্গী হইয়া গেলি।
__________
সকাল ৭টা বেজে ২০ মিনিট। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন আবেশ। সম্পূর্ণ নাম আবেশ এহসান, পেশায় একজন গোয়েন্দা ইনভেস্টিগেটর। গতকালই তার একটা কেস শেষ হয়েছে, তাই এখন শান্তিতে ঘুম দিচ্ছে। কিন্তু তার শান্তির ঘুম বেশিক্ষণ রইলো না, বালিশের নিচ থেকে তার মোবাইল ফোন বিকট চিৎকার করে বেজে উঠলো। ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে পাশের বালিশের নিচ হাতরে মোবাইল হাতে নিয়ে স্কিনের দিকে তাকায়। স্কিনে ভেসে ওঠে তারই জুনিয়র ইনভেস্টিগেটর পরশ এর নাম। সাধারণত পরশ কোনো কারণ ছাড়া এতো সকালে ফোন দেয় না, কথাটা মস্তিষ্কে আসতেই কলটা রিসিভ করে কানে ধরে কিছু বলবে তার আগেই ওপাশ থেকে পরশ উদ্ধিগ্ন কন্ঠে বলে,
স্যার আপনি খুব তারাতারি চলে আসুন, ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার প্রাচীন কালের বিখ্যাত জমিদার নুহাশ মির্জার(কাল্পনিক)বংশধর ও একমাত্র পুত্র ফারুক মির্জা ও তার পরিবারের সকলকে কারা যেন হত্যা করেছে! আমাদের যত তারাতারি সম্ভব সেখানে যেতে হবে।
–ঠিক আছে আমি ৩০ মিনিটের ভিতরে আসছি
আবেশের শান্তির ঘুম শেষ। চটজলদি বিছানা থেকে উঠে শাওয়ার নিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লো, সেখান থেকেই পরশকে সহ সাইন্টিস্ট জাকারিয়া রহমান কে নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হবে।
*****
খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জমিদার বাড়ির প্রতিটি কোণা পর্যবেক্ষণ করছে আবেশ ও পরশ। ইতি মধ্যেই নুহাশ মির্জার বংশধর ফারুক মির্জা ও তার পরিবারের সবার লাশ অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে নিয়ে চলে গেছেন সাইন্টিস্ট জাকারিয়া। তবে যাওয়ার আগে কিভাবে মারা হয়েছে সেটা ক্লিয়ার করে গিয়েছেন। সবাইকেই খাবারে বিষ মিশিয়ে খাইয়িয়ে মারা হয়েছে। আর আসল খবর হলো জমিদার বাড়ির কাজের লোক সবাই উপস্থিত থাকলে ও যে খাবার পরিবেশন করে ছিলো সেই রহিমা বেগম উধাও। আবেশ অন্যান্য সব কাজের লোকদের থেকে জানতে পেরেছে রহিমা এ বাড়িতে প্রায় ১২ বছর যাবত কাজ করছেন, আর তিনি সবার চাইতে খুব বিশ্বস্ত একজন ছিলেন। এমনকি তার স্বামী এবাড়ির গাড়ির ড্রাইভার ও ছিলেন, কয়েকমাস আগে তার স্বামী এক্সিডেন্টে মারা যান। যে রহিমা এ বাড়ির প্রতিটা বিপদে আপদে পাশে থেকেছে সে নিখোঁজ তাও আবার বাড়ির সবার মৃত্যুর খবর পেয়েও ছুটে আসেনি।
— স্যার! এমন নয়তো রহিমাই সবাইকে খাবারের সাথে বিষ মিশিয়ে মরে পেলেছে।
— রহিমা যে খাবারের সাথে বিষ মিশিয়েছে সেটা তো প্রমাণ হয়নি, শুধু জানা গেছে সে খাবার পরিবেশন করেছিলো। তুমি এখনি বাড়ির সব কাজের লোকদের ডেকে আনো, আমি আবার ওদের সাথে কথা বলতে চাই।
— ওকে স্যার
◑–কয়েক মিনিটের মধ্যেই সেখানে মির্জা বাড়ির সব কাজের লোককে নিয়ে এলো পরশ। আবেশ তাদের দিকে এগিয়ে এসে প্রশ্ন শুরু করলো——–
আচ্ছা তোমরা তো এ বাড়িতে অনেক দিন যাবত কাজ করো। কখনো এমন কোনো ঘটনা ঘটেছে এবাড়িতে, এমন কোনো কিছু হয়েছে যা রহিমা বেগমের পরিবারের সাথে যুক্ত।
স্যার অনেকদিন আগে রহিমা বেগমের ছেলে সুজন নিখোঁজ হয়েছিলো। পরে একটা লাশ পুলিশ নিয়ে এসেছিলো, সেই লাশটা নাকি সুজনের লাশ। কিন্তু! লাশটার চেহারা দেখে বুঝার উপায় ছিলোনা সেটা সুজনেরই লাশ কিনা, পরে পুলিশ ডিএনএ টেস্ট করে মিলিয়ে প্রমাণ করে ঐ লাশটাই সুজনের লাশ।
আচ্ছা সুজন সম্পর্কে কি কি জানো আমাকে একটু বলো, মানে এমন কোনো কিছু যা সুজনের খুব কাছের সেটা জিনিস হোক বা মানুষ।
স্যার এমন কোনো কিছু তো জানিনা, তবে সুজন জহুরাকে খুব ভালোবাসতো, আর জহুরাও সুজনকে খুব ভালোবাসতো।
এই জহুরা টা কে?
স্যার! জহুরা মির্জা ফারুক মির্জার একমাত্র মেয়ে, কিন্তু সুজনের মৃত্যুর পর থেকে সে ও নিখোঁজ,
জহুরা ও সুজনের ব্যাপারে যা জানো বলো
— স্যার, জহুরা আর সুজন ছোট বেলা থেকে একে অপরের বন্ধু ও খেলার সাথী ছিলো, বড় হয়ে যা ভালোাবাসায় রুপান্তরিত হয়। সুজন ড্রাইভারের ছেলে বলে বড় সাহেব জহুরার সাথে সুজনকে বেশি মিশতে দিতে চাইতেন না। বড় সাহেব জহুরার বিয়ে ঠিক করে ছিলেন তার কোন বন্ধুর ছেলের সাথে কিন্তু জহুরা রাজি ছিলো না, সে সুজনকে ছাড়া কাউকেই বিয়ে করবে না বলে নাকোজ করে দেয়। সেই নিয়ে সুজন আর বড় সাহেবের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিলো। এরই মধ্যে একদিন খবর আসে সুজন নিখোঁজ হয়ে গেছে, আর বাকি টা তো আপনাকে আগেই বলেছি,
সুজনের যখন লাশ পাওয়া যায় তখন জহুরা কিছুতেই বিশ্বাস করছিলো না যে সেটা সুজনের লাশ। এর কয়েকদিন পরে বড় সাহেবের সাথে জহুরার কি বিষয় নিয়ে যেন একটা তর্কাতর্কি হয়, তার পর থেকে জহুরাও নিখোজ,
চলবে,,,,,