#মনে_রেখো_এই_আমারে,#পর্ব:০৪
#মাহমুদা_আক্তার_তাহিনা(লেখিকা)
এরপরে কি জহুরা! আপনিই বা কেন থানায় এসে নিজের নামে সব মিথ্যা বললেন?
কিঞ্চিৎ হেসে জহুরা বললো–
আমি থানায় এসে নিজের নামে মিথ্যা কথা বলেছি, কারণ আমি জানতাম আমাকে বাচানোর জন্যে হলেও সুজন সব স্বীকার করে আত্মসমর্পণ করবে, আর দেখুন আমার পরিকল্পনা অনুযায়ী সুজন ঠিকই আত্মসমর্পণ করেছে।
সুজন আত্মসমর্পণ করেছে ঠিকই কিন্তু আপনি জানেন সুজনের অপরাধের জন্য তার কি শাস্তি হতে পারে?
কি আবার হবে কয়েক বছর জেল হবে, তাতে কি হয়েছে আমি সুজনের জন্য অপেক্ষা করবো, তারপর দুইজন মিলে টুনাটুনির সংসার করবো,
মলিন হেসে আবেশ জহুরার দিকে তাকিয়ে আছে, এই মেয়েটা এখনো বুঝতে পারে নি সুজন একসাথে কতোজনকে বিষ মিশিয়ে খাইয়ে হত্যা করেছে, সুজনের তো ফাঁশি হবে সেটা নিশ্চিত, কিন্তু জহুরা এটা সহ্য করতে পারবেন তো!
আমাকে একটু সুজনের সাথে দেখা করাবেন অফিসার, কতোদিন হলো আমি আমার সুজনকে দেখিনি, একবার নিয়ে যাবেন সুজনের কাছে
জহুরার কথায় আবেশ ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে, মলিন হেসে বলে – অবশ্যই তুমি তো অপরাধী না তাই তুমি মুক্ত তোমার যেখানে খুশি তুমি যেতে পারো এখন,
আমাকে একটু সুজনের সাথে দেখা করিয়ে দেন না অফিসার, শুধু একবার দেখবো
চলুন আমার সাথে সুজনকে জেলে রাখা হয়েছে, সব প্রমাণ তার বিরুদ্ধে আর সেটা সত্য, সুজনকে কাল আদালতে হাজির করানো হবে, তাই এখন দেখা করার পর আর করতে পারবেন না,
বলেই আবেশ উঠে দাড়ালো, পাশে তাকিয়ে পরশকে ইশারায় বললো গাড়ি বের করতে, পরশ ও ইশারা বুঝতে পেরে চলে গেলো, জহুরার দিকে তাকিয়ে তাকে অনুসরণ করতে বলে হাটা ধরলো আবেশ, জহুরাও তার পিছু পিছু এসে গাড়ির সামনে দাড়ালো, আবেশ গাড়িতে উঠতে ইশারা করলো, তারপর নিজেও পরশের পাশে বসলো, আবেশের দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো পরশ।
____
জেলের ভিতরে মাথা নিচু করে বসে আছে সুজন, জহুরার প্রতি এক আকাশ সমান অভিমান তার, কেন জহুরা এখনও তার সাথে দেখা করতে এলো না, সে কি জানেনা সুজন তার অপেক্ষা করছে,,
সুজন,,,
হঠাৎ করেই জহুরার গলার স্বর শুনে মাথা নিচু করেই হাসলো সুজন, সে জানতো তার জহুরা ঠিকই আসবে তার সাথে দেখা করতে
আমার সাথে কথা বলবে না, প্লিজ একবার কথা বলো তুমি কি আমার উপর অভিমান করেছো, আই এম সরি সুজন প্লিজ তুমি আমার সাথে কথা বলো,
মাথা তুলে সুজন জহুরার দিকে তাকালো, তারপর মলিন হেসে বললো- আমি কিন্তু আমার অপরাধ স্বীকার করেছি জহুরা, আদালতে জানিনা আমার কি শাস্তি দিবে তবে তুমি আমার জন্য অপেক্ষা করো, করবে তো জহুরা,,,,
করবো সুজন করবো, আমি তোমার জন্য অনন্তকাল ধরে অপেক্ষা করবো
জহুরার থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে পরশ ও আবেশ,
পরশ আবেশের দিকে তাকিয়ে আছে,
-আপনার কি খুব কষ্ট হচ্ছে স্যার
– কষ্ট পেয়ে কি আর হবে পরশ, এটাতো হওয়ারি ছিলো, আমি শুধু এতটুকু চাই যাতে সুজনের ফাঁশির রায় না হয়, দেখেছো দুজন দুজনকে কতো ভালোবাসে ওদের ভালোবাসা পূর্ণতা পেলে হয়তো আমার কষ্ট হবে তবে সেই কষ্ট আমি গ্রহণ করতে রাজি, জহুরা শুধু ভালো থাকুক এটাই তো আমার চাওয়া। আমি নাহয় তাকে কল্পনায় ভেবে ভালোবেসে যাবো সবসময়,
বলেই চোখের কোণের পানি মুছে বেরিয়ে চলে গেলো আবেশ।
জহুরা আবেশের জীবনে হঠাৎ করেই আগমন করেছিলো, তাও আবার একজন আসামি হয়ে, গম্ভীর স্বভাবের ইনভেস্টিগেটর অফিসার কি জানতো এই আসামি রুপি মেয়েটাই তার ঘুম কেড়ে নেবে, নিজের অজান্তেই মন দিয়ে অবশেষে না পাওয়ার বেদনা নিয়ে সারাজীবন থাকতে হবে, কখনো কি আবেশর জীবনে কেউ আসবে? হয়তো আসবে নয়তো না,
পরিশিষ্ঠঃ ৭বছর পরে,
আজ জহুরা ও সুজনের বিয়ে। কতো অপেক্ষার পর জহুরা ও সুজন এক হবে। ইতি মধ্যেই কাজি সাহেব বিয়ের জন্য তাড়া দিচ্ছেন কিন্তু সুজন একটু অপেক্ষা করতে বলে, বারবার গেইটের দিকে তাকাচ্ছে অবশেষে তার কাঙ্ক্ষিত মানুষের আগমন ঘটলো।
ধীর পায়ে এগিয়ে আসলো আবেশ, এসেই সুজনের সাথে কোলাকুলি করলো, তারপর জহুরার দিকে একপলক তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলো, এ নারীকে নিয়ে ভাবা তার জন্য পাপ, সে ভাবতে চায় না এই নারীকে নিয়ে কিন্তু না চাইলেই কি বেহায়া মন শুনে বার বার তারই কথা স্বরণ করে,
জহুরা ও সুজনের বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। যেহেতু জহুরার কেউ নেই তাই আবেশকেই জহুরাকে সুজনের হাতে তুলে দিতে হবে,
নিয়ম অনুযায়ী জহুরাকে কোলে নিয়ে গাড়িতে সুজনের পাশে বসিয়ে দিলো আবেশ, তারপর দুজনের হাত একসাথে মুঠোয় নিয়ে বললো– সুখি হয় তোমরা, দোয়া করি।
গাড়ি চলে যাচ্ছে সীমানা ফেরিয়ে তবুও সেদিকেই চেয়ে আছে আবেশ, তার চোখের কোণ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়লো। পেছন থেকে কেউ কাধে হাত রাখতেই চোখের জল মুছে পিছন ফিরে তাকিয়ে মুচকি হাসলো,
বিনিময়ে পরশ ও হালকা হাসলো,
যাবেন না স্যার,
হুম যাবো চলো, বলেই হাটা ধরে আবেশ। কিছুদূর যেতেই কারো সাথে ধাক্কা লাগলো, সামনে তাকিয়ে দেখে একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে,
দেখে হাটতে পারেন না, চোখ কোথায় থাকে
সরি আসলে আমার পিছনে কুকুর তাড়া করেছিলো তাই দৌড়াতে গিয়ে খেয়াল করি নি,
এতোবড় মেয়ে হয়ে সামান্য কুকুর দেখে ভয় পান
আমার তো এখন কুকুরকে ধন্যবাদ দিতে ইচ্ছে করছে, কুকুর তাড়া করেছিলো বলেই না আপনার মতো একজন সুদর্শন যুবকের সাথে দেখা হলো, আমি আবার ঘুরিয়ে পেছিয়ে বলতে পারিনা, তাই সরাসরিই বলছি, আই লাভ ইউ মিস্টার আপনাকে আমার প্রথম দেখেই ভালো লেগে গেছে,
কটমট করে মেয়েটির দিখে তাকিয়ে কিছু না বলে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো আবেশ,
মেয়েটি গলা উচু করে চিৎকার করে বললো, আমাকে কিন্তু মনে রাখবেন, আমাদের আবার ও দেখা হবে মিস্টার,
********
রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে আবেশ, তার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে, কাউকে না পাওয়ার বেদনা যে কতো যন্ত্রণা দায়ক সেটা সে বুঝতে পারছে, ভার্সিটিতে পড়ার সময় তার বন্ধুরা যখন ছ্যাঁকা খেয়ে কান্নাকাটি করতো তখন আবেশের সেসব বিরক্ত লাগতো, তার মনে হতো সব নেকামো, আর আজ সেই এই নেকামো তে ফেঁসে গেছে।
রাতের তারা দেখতে দেখতে হঠাৎ করেই আবেশ গেয়ে উঠে,,,,,,
~সুখে থেকো ভালো থেকো,
মনে রেখো এই আমারে?
_______(সমাপ্ত)________