মনের মাঝে তুমি,০৮,০৯

0
832

গল্পঃ মনের মাঝে তুমি,০৮,০৯
লেখিকাঃ আয়েশা মণি

পর্বঃ ৮

– মিহরাব ফোনটা নিয়ে ছাদে চলে গেল।
তারপর দোলনায় বসে তার প্রিয় লেখিকাকে মেসেজ পাঠাল।

– আসসামুআলাইকুম।

মিহরাব মেসেজ পাঠানোর সঙ্গে সঙ্গেই ওপাশ থেকে তুবা জান্নাত রিপ্লে দিল ওয়ালাইকুমুসসালাম।

– কেমন আছেন প্রিয় লেখিকা সাহেবা?

– আলাহামদুলিল্লাহ। আমি অনেক ভালো আপনি?

-জ্বি আলহামদুলিল্লাহ।
নাস্তা করেছেন?

– জ্বি।

– ওহ গুড।

– হুম।

– আপনার কন্ঠতো চমৎকার। আপনার লেখার মতই।

– তাই?

-১০০%

– আসলে আমি ওটা আপনাকে দিতে চাইনি, আমার ফ্রেন্ডকে দিয়েছিলাম। বাট হঠাৎ টার্চ লেগে,ফরওয়ার্ড হয়ে আপনার ওখানে চলে গেছে।

– মিহরাবের মনটা একটু খারাপ হলো, তবুও সে লিখল,যাকেই পাঠাননা কেন গানটা আমাকে নিয়েই ছিলো।

– মানে?

– গানের কথা গুলো, যেন আমার জন্যই।

– কেন?

– কারন আমার মনেও অনেক স্বপ্ন ছিল। কিন্তু সব ভেঙে চুর্ণ বিচূর্ণ হয়ে গেছে।

– কেন কি হয়েছে?

– আপনি আমার প্রিয় লেখিকা। অন্তরের অন্তস্তল থেকে আপনাকে ভালোবাসি। তাই আপনাকে শেয়ার করতেই পারি।

– জ্বি বলুন।

– আমার অনেক স্বপ্ন ছিলো, আমার মনের মত কাউকে বিয়ে করবো। বিয়ের পর প্রেম করবো। সেজন্য আজ পর্যন্ত কোন মেয়ের সাথে প্রেম করিনি। মা আর বোন ব্যাতীত কোন মেয়েকে যদি ভালোবাসি সে হলেন আপনি। আর আপনাকে তো প্রেমিকা হিসেবে নয় অন্যরকম ভালোবাসি। যে ভালোবাসার উপমা নেই।

– তুবা মিহরাবের মেসেজ পড়ছে আর হাসছে।
মিহরাব আরো লিখলো।

– আমি বিয়ে করেছি,বাট বিয়েটা এক ধরনের এক্সিডেন্ট। এতে আমার বা আমার স্ত্রীর কোন ইচ্ছা ছিলোনা। তবুও আমি ভেবেছি তাকে নিয়েই সংসার করবো। কিন্তু আমার স্ত্রী আগে থেকেই তার মনে একজনকে ভালোবাসে। আমি তাকে জিজ্ঞেস করে যতদূর বুঝলাম সে তাকে ছাড়া বাঁচবেনা। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি তাকে তার ভালোবাসার কাছে ফিরিয়ে দিবো।

– বাহ্! আপনি খুব মহান। কিন্তু আল্লাহ যাকে আপনার জন্য নির্ধারিত করেছেন, তাকে আপনি কি করে অন্যের হাতে তুলে দিতে পারেন?

– কিন্তু এছাড়াতো কোন উপায় নেই। আল্লাহ তো জরুরতের ক্ষেত্রে তালাককে জায়েয করেছেন।
আর এটা তো অত্যান্ত জরুরি। কারন এভাবে না আমি সুখি হবো না সে সুখি হবে। এক ছাদের নিচে থেকে দুজন ভিন্ন গ্রহের মত থাকতে হবে। এভাবে কি আর জীবন চলবে?

– হুম তাও ঠিক। বাট তার তো ভালোবাসার মানুষ আছে। কিন্তু আপনার তো কেউ নেই। আপনি কাকে নিয়ে বাঁচবেন?

– আমি, আপনাকে নিয়ে বাঁচবো।

– হোয়াট?

– না, মানে আপনার লেখা গুলো নিয়ে বাঁচবো।
আপনার লেখা গুলো পড়তে আমার ভীষণ ভালোলাগে। তাই কাজের ফাকে যে সময়টুকু ভালোবাসার মানুষকে সময় দিতাম তখন আপনার লেখা গুলো পড়বো।

– মিস্টার! এভাবে জীবন চলবে না। কাউকে লাগবেই। জীবনটা এত সহজ না। এত বড় পৃথিবীতে এত মানুষ তবুও একা কেন লাগতো? কারন নিযের অর্ধাঙ্গিনী ছিলোনা বলে স্পেশালি সারা জীবনের জন্য একজন ভালোবাসার মানুষের বিশেষ দরকার। একা কখনো পুরোটা জীবন বিচরণ করা যায়না। যে একা থাকে, তাকে জীবন বলা যায়না।

– আমিতো একা নই, আমি ভালোওবেসেছি।

– কাকে?

– আপনাকে।

– মানে?

– মানে I love u

– হোয়াট?
আপনি কি বলছেন জানেন?

– হ্যা জানি, আমি অংক করতে গেলে এতদিন হিসেব মিলাতে পারতাম না। কারন আমি আপনাকে পাগলের মত ভালোবেসেও জানতাম না যে আপনি কেমন বয়সি। কিন্তু আজ যখন আপনার ভয়েস শুনলাম তখন আমার আইডিয়া হয়ে গেছে আপনার সমন্ধে। তাই আমি অংক করে হিসাব মিলানোর পর বার বার ফলাফলটা আপনিই আসছেন।

– এ জন্যই আমি কারো মেসেজের রিপ্লে দিতাম না।
আসলে কাউকে পাত্তা দিলেই এই অবস্থা।
ধ্যাৎ।

– ওহে প্রিয়তা! আমি আপনাকে ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি।

কিন্তু ততক্ষণে তুবা জান্নাত রাগ করে ডাটা অফ করে দিয়েছে।

– মিহরাব দেখল তুবা জান্নাত অফলাইনে চলে গেছে।
ধুর, এখন রাগ হচ্ছে নিযের উপর। এত তাড়াহুড়া কেন করতে গেলাম? নাজানি সে কি মনে করছে। নিশ্চয়ই সে আমাকে বাজে ছেলে ভাবছে। আর ভাবারই কথা।
প্রথমত তিনি সম্মানিত ব্যাক্তি। তাকে ভালোবাসার কথা বলার কোন যোগ্যতাই নেই আমার। দ্বিতীয়ত সে জানে যে আমি নিযে বিবাহিত। আর সে বিবাহিত নাকি অবিবাহিত সে সম্পর্কেও জানা নেই আমার। আমি তাকে ভালোবাসার কথা বললেই সে এক্সেপ্ট করে নিবে এটা আমি ভাবলাম কি করে? ছিহ্,আমি এতটা দিন যে কাজ করিনি আজ হঠাৎ কি এমন হলো যে কথাটা এভাবে বলে ফেললাম?

এ’কদিন আমি তাকে ভালোবাসি বললেও তিনি রাগ করেননি। কিন্তু আজ যখন বললাম তখন তিনি রাগ করলেন। তারমানে নিশ্চয়ই মাইন্ড করেছে। আর মাইন্ড করবেই না বা কেন? সবাই করতো। আজকের বলার ধরণটা যে অন্যরকম ছিলো।

মিহরাব এসব ভেবে এখন খুবই লজ্জিত হচ্ছে।
কি করবো এখন?

ঠিক তখনি মিহরাবের ফোনে লন্ডন থেকে কল এল।
তার ক্লিনিকের একজন ডক্টর ফোন করেছে।

-হ্যালো স্যার!

– ইয়েস, বলেন।

– স্যার আপনি কতদিন হলো দেশে গিয়েছেন কবে আসবেন?

– এইতো চলে আসবো।

– স্যার একজন পেশেন্ট এর অবস্থা বেশি ভালোনা। আমরা যথাযথ চিকিৎসা করছি। আপনি যদি দয়া করে শিঘ্রই চলে আসতেন। খুব ভালো হতো।

-ওকে।

-বাই।

মিহরাবের মাথায় আইডিয়া চলে এল। সব বাদ দিয়ে আমি লন্ডনে চলে যাই। সেখানে গিয়ে আমার ক্লিনিক সামলাই। এখানে থাকলে হয়তো তাহিয়ার প্রতি মায়া বাড়তে পারে। আর বসে বসে থাকলে তুবা জান্নাতের প্রতিও দূর্বল হয়ে পরবো। যতই ভালো ছেলে হই না কেন। নফস তো সব সময় কু পরামর্শ দিতেই থাকে।

যে’ই ভাবা সেই কাজ।
মিহরাব দ্রুত ছাদ থেকে নিচে নামল। তারপর বাবা মাকে বলল, মা! বাবা! আমাকে আর্জেন্ট লন্ডন যেতে হবে। এক পেশেন্ট এর খুবই জটিল অবস্থা। আমাকে ছাড়া কাজ হবেনা।

– আবিদা বেগম বললেন,কিন্তু বাবা! তুই তো নতুন বিয়ে করেছিস এখন বৌ’মা ছেড়ে কিকরে যাবি?

– তাহিয়া পেঁছন থেকে এসে বলল, মা! যদি সেখানে কারো জীবন মরনের প্রশ্ন আসে তাহলেতো তাকে তার দায়িত্ব পালন করার জন্য যেতেই হবে। ডক্টরের কাজই মানুষের সেবা করা। তাই আমার চাইতে একজন পেশেন্ট এর হক কম নয়।

– আহমাদ সাহেব বললেন বাহ্! বৌ’মা কি বুদ্ধি তোমার। সত্যিই তোমার তুলোনা হয়না। মিহরাবের আম্মু! তুমি অমত করোনা বৌ’মা ঠিকই বলেছে।

– মিহরাব মনে মনে বলল, হুম তাহিয়া তুমিতো আমাকে যেতে দিবেই, কারন আমি কাছে থাকলে তোমার প্রবলেম। তুমি তো ভালোবাসো অন্য কাউকে। তাই আমি তোমার থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। সেখানে গিয়ে খুব শিঘ্রই তোমার ভালোবাসার কাছে তোমাকে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থাও করবো।

– তাহিয়া মুখে বললেও তার মনটা কেঁমন যেন কাঁদছে। বিয়ের পর দিনই কেউ কারো স্বামীকে অন্যদেশে চলে যেতে দিতে চাইবেনা। কিন্তু তাহিয়া নিযের চাইতে অন্যদের চিন্তা বেশি করে। তার হৃদয়ে সবার জন্য মায়া মমতা ভালোবাসার কমতি নেই। চাই সে শত্রু হোক বা বন্ধু। পেশেন্ট এর খারাপ অবস্থা শুনেই সে তার স্বামীকে যেতে বলছে। কিন্তু তারও মনে স্বাদ জাগছে নিযের স্বামীর ভালোবাসা পেতে। তার সাথে সময় কাটাতে।

– মিহরাবের মা, আহমদ সাহেব আর তাহিয়ার কথা শুনে মিহরাবকে লন্ডন যাওয়ার অনুমতি দিয়ে দিলেন।

মিহরাব ফোনেই তার এক বন্ধুকে ভিসা পাসপোর্ট এর ব্যবস্থা করতে বলল।

রাত ৮.০০ তার ফ্লাইট।

– সত্যি সত্যিই মিহরাব সেদিন রাত ৮.০০ টায় সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে এয়ার্পোট এর দিকে রওয়ানা হলো। যাওয়ার সময় মেহনাজকে বলে গেল তাহিয়ার সাথে থাকতে,তার খেয়াল রাখতে।

– সবাই জানে মিহরাব এক সপ্তাহের জন্য লন্ডন যাচ্ছে। পেশেন্ট নরমাল হলেই ফিরে আসবে। কিন্তু মিহরাবের মনে ছিল অন্য কিছু। সে অনিদৃষ্টকালের জন্য বিদেশের পথে পারি জমাচ্ছে। নিযেও জানেনা কবে ফিরে আসবে।

– মিহরাব চলে গেলে তাহিয়া নিযের রুমে দর্জা লাগিয়ে কাঁদতে লাগল। খুব কান্না পাচ্ছে তার। কেন জানি মিহরাবকে নিযের অস্তিত্ব জুড়ে অনুভব করতে পারছে তাহিয়া। এক দিনের মধ্যেই সে মিহরাবকে ভালোবেসে ফেলেছে। কিছুতেই মন চাইছিলো না মিহরাবকে ছাড়তে। কিন্তু কি আর করার? দায়িত্ব পালন করতে যেতে তো হবেই।

– তাহিয়া অনেকক্ষণ কান্না করার পর বিছানায় শু’তে যাবে ঠিক তখনি মিহরাবের ল্যাবটপের দিকে চোঁখ পড়ল। সে উঠে গিয়ে ল্যাবটপটা ওপেন করলো। সে এটা ভেবে ওপেন করলো যে হয়তো এখানে মিহরাবের ছবি থাকবে। সে সেগুলো দেখবে।

– কিন্তু ল্যাবটপটা ওপেন করতেই সে এক্টা ঝটকা খেল।
একটা আইডি, নাম স্বপ্ন নীল। আরে এটা কার আইডি? মিহরাবের? সে প্রথমে ভাবলো নাহ্, কারো পার্সোনাল জিনিসে হাত দেওয়া ঠিক না। তারপর আবার ভাবলো স্বামী স্ত্রীর মধ্যে কোন পার্সোনাল ব্যাপার নেই। তারপর সে ইনবক্সে প্রবেশ করতেই আরো বড়সড় ধাক্কা খেল।
এক মূহুর্তেই আবারো নদীর স্রোতের মত অশ্রু এসে প্রবাহিত হতে লাগল তাহিয়ার চোঁখ থেকে গাল বেয়ে। তাহিয়া আর কিছু না দেখে ল্যাবটপ অফ করে রেখে দিল।

চলবে…….

গল্পঃ মনের মাঝে তুমি

লেখিকাঃ আয়েশা মণি

পর্বঃ ৯

– তাহিয়া কাঁদছে খুব কাঁদছে। তবে এ কান্না কষ্টের নয় এ কান্না সুখের। অশ্রু ভেজা আঁখি যুগলও হাসছে।
মনে হচ্ছে যেন সে আকাশের সূর্য হাতে পেয়েছে।
হ্যা সত্যি তাই। সে সূর্য হাতে পেয়েছে। তার ভোরের সূর্য। ঠিক এমনই একজন সূর্যকে সে খুঁজে এসেছিল সারা জীবন ধরে। আল্লাহ পাক অবশেষে তাকে তার মনের মানুষকে মিলিয়ে দিয়েছেন।

দীর্ঘ তিনটি বছর যাবত মিহরাব যার লেখা পড়েই মনে মনে ভালোবেসে এসেছে,সে আর কেউ নয়,সে তার বর্তমান স্ত্রী তাহিয়া। তাহিয়ার পুরো নাম তাহিয়া জান্নাত তুবা। যদিও বাসার সবাই তাহিয়া নামে ডাকে, তবে ফেসবুকে সে তুবা জান্নাত নামে পরিচিত।

যখন সে অনার্স ফাস্ট ইয়ারে পড়ত, তখন থেকেই সে লেখালেখি শুরু করেছে। অসংখ্য কবিতা গল্প লিখেছে।প্রতিটা গল্পে তার মনের আবেগ অনুভূতি সব দিয়ে লিখে। এ পর্যন্ত খুব জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে সে। ফেসবুকে তার হাজার হাজার পাঠক। তারা শুধু ফেসবুকের জগতেই নয়। সত্যি সত্যিই তাকে খুব সম্মান করে আর ভালোওবাসে। এদের মধ্যেই একজন মিহরাব। সে তুবা জান্নাতকে হৃদয় দিয়ে ভালোবাসে।
কতটা ভালোবাসে তার হিসেব নেই। তবুও এ’কদিন তাহিয়া মিহরাবের সঙ্গে কথা বলে যতটা তাকে বুঝেছে,তাতে তাহিয়াকে ছাড়া হয়তো মিহরাব বাঁচবেইনা। কিন্তু মিহরাবতো আদৌ জানেনা তার স্ত্রী তাহিয়া’ই তার প্রিয় লেখিকা৷ সে জানলে কি অবস্থা হবে ভাবতেই তাহিয়া শিহরিত হয়ে উঠল।

খুব ভালোলাগছে তার এটা যেন অদ্ভুৎ এক সারপ্রাইজ। এরকম কি আদৌ কারো সাথে ঘটেছে কিনা তার জানা নেই। এ এক অন্য রকম ভালোলাগা, অন্যরকম আনন্দ। তার প্রিয় পাঠকটাই যে তার স্বামী। যে কিনা তাকে পাগলের মত ভালোবাসে।

ইসসসস, সকালে তার সাথে খুব বাজে বিহেভ করেছি।সে আমাকে প্রপোজ করলো আর আমি বোকারাম এক্সেপ্ট না করে রাগ দেখালাম। সে জন্যই বোধহয় সে আমার উপর অভিমান করে লন্ডনে চলে গেল। পাগল একটা।

– মেহনাজ সেই কখন থেকে ভাবী ভাবী বলে ডাকছে অথচ তাহিয়া কথাই বলতে পারছেনা। কারন সে এরকম আনন্দ আর কখনো পায়নি। তাই আনন্দে আত্মহারা হয়ে মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলেছে।

মেহনাজ তাহিয়ার কাছে এসে দেখল তার চোঁখে জল, কিন্তু ঠোঁটে হাসির রেখা। কিছুতো একটা হয়েছে।

মেহনাজ টিসু বের করে তাহিয়ার চোঁখের জল মুছে দিল। তারপর আলতো করে ধাক্কা দিয়ে বলল, এই ভাবী! কথা কেন বলছো না?

এবার তাহিয়া তার পাশের টেবিলে রাখা জগ থেকে এক গ্লাস পানি পান করে নিল। তারপর স্থির হয়ে বলল,আসলে তেমন কিছু না।

– কিছুতো একটা হয়েছে’ই ফ্রেন্ড ভেবে বলো না।

আমি একজন লেখিকা,ফেসবুকে নিয়মিত লেখি।
আমার জীবনের সব সুখ দুঃখ,অনুভূতি সব শেয়ার করি গল্প/উপন্যাসের মাঝে। তবে পাঠকদের বুঝতে দেইনা যে গল্পের প্রতিটা শব্দ আমার হৃদয় ঝড়া কান্নার ফোটা। লিখতে লিখতে এখন অসংখ্য পাঠকের প্রাণ হয়ে গেছি। তারা আমাকে খুব সম্মান করে আর ভালোওবাসে প্রচন্ড। তবে আমি কখনো কোন পাঠকের সাথে কথা বলতাম না। সবার’ই খুব ইচ্ছে আমার সাথে যোগাযোগ করার, কিন্তু আমার এসব ভালোলাগে না। তাছাড়া আমি নিযেকে নূন্যতম লেখিকা মনে করি। আমি নিযেকে ততটা সম্মানিত ব্যক্তি মনে করিনা যতটা সম্মান আমার প্রিয় পাঠকরা দেন। তাদের ভালোবাসা আমাকে সামনে এগুতো অনুপ্রেরণা জাগাতো। কত পাঠক বলেছে বই বের করার জন্য কিন্তু আজ অবদি আমি একটা বইও বের করিনি। প্রতিটা পাঠক আমার বই হাতে পাবার অপেক্ষায় দিন গুনে। কিন্তু আমি নিযেকে এখনো বই লিখার যোগ্য মনে করিনা। কারন আমার এটা ভেবে ভয় হয় যে আমরা যা বলি আর যা’ই লেখিনা কেন সব কিছুই ফেরেস্তাদের ডাইরিতে লিপিবদ্ধ হয়ে থাকবে।তাই প্রতিটা কথা ভেবে চিন্তে বলা উচিৎ। কিন্তু কথাটাতো আর সব সময় ভেবে চিন্তে বলা হয়ে উঠেনা, কখনো মুখ ফসকে বেড়িয়ে যায়। তবে লিখা গুলো খুব ভেবে লিখা উচিৎ। কারন একটা বই লিখলে সেটা কিয়ামত পর্যন্ত থাকতে পারে। আর ঐ লিখা গুলো পড়ে যত মানুষ সৎ পথে যাবে তার করা ভালো কাজ গুলো আমার আমল নামায় সেসবের সওয়াব আসতে থাকবে। আর যত গুলো মানুষ খারাপ কাজ করবে আমার আমল নামায় সেসবের গুনাহ্ আসতে থাকবে। সেটা ভেবেই আজ অবদি বই লিখা হয়ে উঠেনি। কিন্তু আজ যখন একজন বিচক্ষণ ব্যক্তির বিচার পেয়েছি তখন মনে হচ্ছে আমার বই লিখার সময় হয়েছে।

– ওয়াও! তুমি একজন সেলেব্রেটি লেখিকা? অথচ আমি জানতাম’ই না।

না, আমি কতটা সেলিব্রিটি সেটা জানতে চেওনা, তবে এটা জানা উচিৎ আমি কতটা আদর্শবান লেখিকা।

– ভাবী!যে লেখিকা এত কিছু মাথায় রেখে লিখে।
সে এই বর্তমান সমাজের একজন অনেক সৎ আর আদর্শবান লেখিকা। আর সে হলে তুমি।

আল্লাহ পাক’ই ভালো জানেন।

-হুম। তবে ভাবী!তুমি কিন্তু এখনো বলোনি তুমি ওভাবে কাঁদছিলে কেন? কি হয়েছিলো?

হ্যা সেটাই বলতে যাচ্ছি।
এভাবেই অসংখ্য পাঠকের অসংখ্য মেসেজ পরে আছে। সিন করা হয়ে উঠেনি কখনো।

হঠাৎ! বিগত ৫/৬ দিন আগে একজন পাঠক স্বপ্ন নীল নামক আইডি থেকে ঝড়ের বেগে মেসেজ করতে লাগল। উনি ইতি পূর্বেই ৯৫ টা মেসেজ করেছেন। তবুও আমি সিন করিনি। তার পর যখন একের পর এক মেসেজ করতেই লাগল। তখন সিন করতে বাধ্য হলাম আর রিপ্লাইও দিলাম।

আমি রিপ্লাই দেওয়ার পর সে যেন খুঁশিতে আত্মহারা হয়ে গিয়েছিল। তার নাকি কল্পনাতীত ছিলো আমার রিপ্লাই পাওয়া। লোকটা আমাকে এতটা ভালোবাসে, এতটাই ভালোবাসে যে, তার কন্ঠ থেকে শুধু ভালোবাসা ময় বাক্য গুলোই উচ্চারিত হয়। আমি এই যুগে কেউ কাউকে এতটা ভালোবাসতে পারে জানতাম না।

কিন্তু আমি তাকে পাত্তা দিচ্ছিলাম না। আসলে ঠিক পাত্তা দেওয়া নয়, সে ছেলে মানুষ তাই আমি তাকে এড়িয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু আজ সকালে সে আমাকে প্রপোজ করেছে।

– ও মাই গড! কি বলছো এসব? ভাইয়্যা কিছু জানে?

নাহ্।

– তাহলে?

জানতে দেরী হবে।

– মানে? ভাবী! তুমি কি বলছো আমি কিচ্ছু বুঝতে পারছি না।

মানে হলো, এতক্ষণ যে ছেলেটির কথা বললাম সে হলো তোমার ভাইয়্যা।

– ভাবীইইই! এটা কি বলছো তুমি?এতক্ষণ তুমি যার গল্প আমাকে শুনালে সে আমার নিযের ভাইয়্যা?

হুম।

– নিযের কানকেই বিশ্বাস হচ্ছেনা।

হি,হি।

– কিন্তু ভাবী!তাহলে তুমি কাঁদছিলে যে? তুমি কি সত্যিই আমার ভাইয়্যাকে ভালোবাসো না?

আরে পাগলী!এরকম একটা মানুষকে ভালো না বেসে থাকা যায়?আমিতো কাঁদছিলাম আনন্দে। কারন আমি একটু আগেই জানতে পারলাম যে, পাঠকটা তিন বছর যাবত আমার জন্য পাগলামী করছে। সে আর কেউ নয় আমার’ই নিযের স্বামী।

– ভাইয়্যা কি জানে? তুমিই যে সেই তুবা জান্নাত?

না তোমার ভাইয়্যা এখনো জানে না।

– তাহলে তো মজার ব্যাপার।

হুম, এবার দেখো তোমার ভাইয়্যাকে কেমন মজা দেখাই।

– কি করবে?

প্রেম করবো। তুবা জান্নাত হয়েই প্রেম করবো।

-হা, হা ভাবী! তুমি তো দারুন মেয়ে।

হুম সবাই বিয়ের আগে প্রেম করে, আর আমরা দু’জন বিয়ের পর প্রেম করবো। কিন্তু সে জানবেও না যে বৌ’য়ের সঙ্গে প্রেম করছে।

– হা,হা, কিযে হ্যাপী লাগছে ভাবী, তোমাদের সিনেম্যাটিক কাহিনী দেখে।

তুমি শুধু দেখে যাও। কিন্তু ভাইয়্যাকে কিচ্ছু বলোনা যেন।

– জ্বি আজ্ঞে মহা রাণী।

তাহিয়া ডাটা অন করে ফেসবুকে প্রবেশ করলো,
সঙ্গে সঙ্গেই একটা মেসেজ এল মিহরাবের আইডি থেকে।

– ভালো থাকবেন প্রিয় লেখিকা। আমি আজীবনের জন্য দেশ ত্যাগ করছি। দোয়া করবেন আমার জন্য।
আর হ্যা সত্যিই প্রচন্ড ভালোবাসতাম, ভালোবাসি, ভালোবাসবো। আল্লাহ হাফেজ।

তাহিয়া মেসেজটা মেহনাজকে দেখাল।
তারপর ননদ ভাবী দুজনেই হি, হি করে হেসে উঠল।

এবার তাহিয়া লিখলো I love u 2

– কে জানে? এবার মিহরাবের ফেভারিট লেখিকার
I love u 2 মেসেজটা দেখে কি হবে। বেচারা হার্ট অ্যাটাক করবে না তো?

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here