মনের মাঝে তুমি,১০,১১

0
692

গল্পঃ মনের মাঝে তুমি,১০,১১
লেখিকাঃ আয়েশা মণি

পর্বঃ ১০

লন্ডনের ইয়ারপোর্টে নেমে সোজা নিযের বাসায় চলে গেল মিহরাব। আজ আর ক্লিনিকে যাবে না। আজকের দিনটা রেস্ট নিয়ে কাল যাবে।

বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বাবার কাছে একটা কল করলো।

আসসালামু আলাইকুম, বাবা! আমি পৌঁছে গেছি।

– ওয়ালাইকুমকুমুসসালাম। ভালোভাবে পৌঁছেছিস তো? কোন সমস্যা হয়নি তো?

না বাবা, কোন সমস্যা হয়নি।

– শোন মিহরাব! যত দ্রুত সম্ভব ওখানকার কাজ কমপ্লিট করে দেশে ফিরে আয়। বৌ’মা কিন্তু তোকে ছাড়া ভালো নেই।

কেন? তোমরা তো আছো।

– আরে বোকা ছেলে, আমাদের ভালোবাসা আর তোর ভালোবাসার মধ্যে তফাৎ আছে না?

মিহরাব মনে মনে বলল, তোমাদের বৌ’মার জন্য আমার ভালোবাসার দরকার নেই, সে অন্য কাউকে ভালোবাসে।

– কি হলো বাবা মিহরাব?

না বাবা কিছু না ফোন রাখছি, টেক কেয়ার।

– ওকে আল্লাহ হাফেজ।

বাবার সাথে কথা বলার পর মিহরাব সিদ্ধান্ত নিল সে তুবা জান্নাতকে মেসেঞ্জারে ব্লক করে রাখবে। শুধু মেসেজ আদান প্রদান হবে না তবে সকল নোটিফিকেশন আসবে। আর তুবা জান্নাতের গল্প গুলোও পড়তে পারবে। এখন মিহরাবের মন ভালো রাখার একমাত্র উপায় তুবা জান্নাতের গল্প/উপন্যাস গুলোই।

তাই সে এক মগ কফি অর্ডার করে বেলকনিতে গিয়ে বসল। তারপর ডাটা অন করলো তুবা জান্নাতকে ব্লক করার জন্য। কিন্তু মনটা কেমন যেন সায় দিচ্ছেনা। তাছাড়া এত সম্মানিত একজন মানুষকে ব্লক করলে তাকে অসম্মান করা হবে। এসব ভাবতে ভাবতে তুবা জান্নাতের ইনবক্সের দিকে তাকাতেই টং করে একটা মেসেজ এলো। তুবা’র আইডি থেকেই মেসেজটা এসেছে। I love u 2

মেসেজটা দেখে কেঁপে উঠল মিহরাব।
এটা কি আদৌ তুবা’র মেসেজ? নিযের চোঁখকে বিশ্বাস হচ্ছে না। খুঁশিতে মিহরাব অর্ডার করা গরম কফি ডগডগ করে চুমুক দিয়ে ঠান্ডা পানির মত একেবারে খেয়ে ফেলল। তারপর চোঁখ বন্ধ করে ফোনের স্কিনে একটা চুমু খেল।

খুঁশির চোটে মিহরাবের কেমন পাগল পাগল ফিলিংস হচ্ছে। মিহরাব অনেকক্ষণ সেই ফিলিংসটা উপভোগ করে তারপর একটু শান্ত হয়ে তুবাকে মেসেজ করলো।

– আমি ভাবতেই পারিনি আপনি আমার প্রপোজ একসেপ্ট করবেন। সত্যিই আমার যে কি ভালো লাগছে আপনাকে বলে বুঝাতে পারবো না। এটা আমার কল্পনার ১০০ গজ দূরে ছিলো, জীবনে এমন একটা দিন আসবে যে, আমার ফেভারিট লেখিকা, যাকে তিনটি বছর যাবত মনে প্রাণে অনুভব করে এসেছি সে আমাকে ভালোবাসবে।

ওপাশ থেকে তাহিয়া নিযের স্বামীর পাগলামি দেখে মিটমিট করে হাসল। তারপর সে রিপ্লে দিল আমাকে ভালোবাসা যায় কিন্তু জীবন সঙ্গিনী করা যায় না।

– হোয়াট?

হ্যা আমি একজন প্রতিবন্ধি। ডান হাতটা কাজ করে তাই সেটা দিয়েই লেখালেখি করি। বাকি সব অঁচল।
(তাহিয়া এটা বলল তার স্বামীকে পরিক্ষা করার জন্য, যে তার প্রিয়তমা তাকে কতটা ভালোবাসে। তাছাড়া সে তার স্বামীর ভালোবাসায় বিভোর হয়ে সত্যিই প্রতিবন্ধি)

– মিহরাব একটুও না ভেবেই বলল, ভালোবাসার জন্য দু’টি মন’ই যতেষ্ট। দু’টি মন যখন একাকার হয়ে যায়,
তখন শরীরের কোন অঙ্গ, টাকা পয়সা বা কোন বড় দেয়াল তাদের মাঝে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে না। আমি আপনাকে ভালোবেসেছি না চিনে, না দেখে বিগত তিনটি বছর যাবত। আপনি যদি বৃদ্ধাও থাকতেন তবুও আপনার প্রতি আমার ভালোবাসা ঠিক সেরকমই থাকতো।

তাহিয়া নিয স্বামীর এরকম উত্তরে মুগ্ধ হয়ে গেল। সত্যিই সে সব চাইতে সৌভাগ্যবান নারী। তাই এরকম একজনকে পেয়েছে।

তুবা জান্নাত মানে তাহিয়া আবারো মেসেজ পাঠাল, কিন্তু আমার জন্যতো আপনাকে সারা জীবন কষ্ট পেতে হবে।

– না, আপনাকে পেলে আমার কোন কষ্ট থাকবে না।

তাই?

– জ্বি।

আচ্ছা, তাহলে এতক্ষণ যাবত আপনি আপনি কেন করছেন?

– ওহ সরী, আপনি সম্মানিতা মানুষ তাই আরকি।

তাই বলে… ( তুবা একটি মন খারাপের ইমুজি দিল)

– সরী, তুমি।

কি?

– তুমি।

আবার বলুনতো।

– তুমি, তুমি,তুমি।

আই লাভ ইউ তুমি।

– আই লাভ ইউ টু তুমি।

হা,হা, হা…দুজনেই দুজনার পাগলামিতে হো হো করে হেসে উঠল।

– জানো তুবা?

কি?

– কতরাত আমার কেটে গেছে আঁখি জলে,
কতদিন আমার কেটে গেছে বিফলে।

কেনো?

– তোমাকে ভেবে ভেবে।

এত ভালোবাসতে নেই।

– কেনো? আমি ভালোবাসতে কেন কৃপাণতা করবো?

কারন অতিরিক্ত ভালোবাসলে মানুষ একে অপরকে চিরতরে হারিয়ে ফেলে।

– হুসসসস,চুপ। একদম বাজে কথা বলবে না।
তিন বছর যাবত, তোমাকে আমার অস্তিত্বে ধারণ করেছি। আমার থেকে আমার অস্তিত্বকে আলাদা করতে হলে আমাকেও পরপারে উঠিয়ে নিতে হবে।

ওরকম বলোনা আমি পাগল হয়ে যাবো।
জীবনে কখনো কারো থেকে এত ভালোবাসা পাইনিতো তাই নিতে পারছি না। তোমার ভালোবাসার মাঝে আমি বিলীন হয়ে যাচ্ছি।

– ঠিকআছে পাগলিটা বলবোনা। এবার বলো বাসার সবাই কেমন আছে?

হ্যা আলহামদুলিল্লাহ ভালো।
তোমার বাসার সবাই ভালো আছেতো?

– আমি ঠিক জানিনা। আমি লন্ডনে চলে এসেছি।তবে আশা করি ভালোআছে।

আচ্ছা এটা কি ঠিক হলো? তুমি যে তোমার নতুন স্ত্রী’কে এভাবে ফেলে রেখে এসেছো?

– আমি কি করতাম? তাকে আমি ইচ্ছে করে বিয়ে করিনি। এটা একটা এক্সিডেন্ট। তার উপর সে অন্য কাউকে ভালোবাসে।এখন যদি আমার অধিকার ফলাতে চাই তাহলে তার শরীর পাব মন নয়। তারথেকে উত্তম তার কাছ থেকে দূরে থাকা। আর সঠিক সময়ে তালাক দিয়ে তার ভালোবাসার হাতে তুলে দেওয়া।

তালাক শব্দটা শুনে তাহিয়ার ভেতরটা কেঁপে উঠল।
তারপর নিযেকে সামলে নিয়ে লিখল, তুমি কি শিউর? সে অন্য কাউকে ভালোবাসে?

– হুম আমি নিযে এ কথা জিজ্ঞেস করেছিলাম আপনি কাউকে ভালোবাসেন? সে বলেছে সূর্যকে সে ভালোবাসে।

তাহিয়া এবার বুঝতে পারল তার স্বামী কোন কারনে এসব বলছে। আসলে তার বুঝার ভুল হয়েছে,মিহরাব সূর্য বলতে মানুষের নাম বুঝেছে। কিন্তু তাহিয়া তো ভোরের সূর্যের কথা বলেছে।

যাইহোক তাহিয়া এখন’ই নিযের সত্যিটা প্রকাশ করবেনা। সঠিক সময়ে সে তার স্বামীকে সারপ্রাইজ দিবে।

তাহিয়া লিখল, আচ্ছা ঠিকআছে আমি এখন একটু কাজ করবো ফোনটা রাখি।

– ওকে সোনাপাখিটা, লাভ ইউ।

সেইম টু ইউ,আল্লাহ হাফেজ।

আল্লাহ হাফেজ।

তাহিয়া ডাটা অফ করে মিটমিট করে হাসতে লাগল,
পাগল একটা আমার জন্যই আমাকে ছাড়তে চায়।
হি হি এরকম কারো লাইফে আদৌ হয়?

তাহিয়াকে হাসতে দেখে মেহনাজ বলল, কি গো ভাবী!
হাসছো যে? তোমার পাগল প্রেমিক কি বলল?

– আরে কি বলবো, সে কি বলছে জানো? তুবার জন্য তাহিয়াকে ডিভোর্স দিবে।

হি,হি তারমানে তোমার জন্যই তোমাকে ডিভোর্স?

– হুম।

আমার ভাইটা যে এত পাগলু আগে জানতাম না।

– এরকম পাগল কাউকেই চেয়েছিলাম আমি।
যে হবে আমার রোজ বিহানের ঝলমলে সূর্য।
সবার কাছে মিস্টার পারফেক্ট, আর আমার কাছে পাগলু….

সত্যিই ভাবী তুমি অনন্য। তোমাকে ভাবী হিসেবে পেয়ে আমি গর্বিত। যদিও তোমাদের বিয়েটা একটা এক্সিডেন্ট তবুও আল্লাহ যা করেছেন তা মঙ্গলের জন্যই। নাহলে তোমার মত একজন উদার মনের ভাবীকে পেতাম না। যার হৃদয় জুড়ে শুধু ভালোবাসা।

– হয়েছে আর মিথ্যে প্রশংসা করতে হবে না।

সত্যি বলছি ভাবী বিশ্বাস করো বা না করো।
তোমার প্রতিটা কথাই কবিতা আর উপন্যাস এর মত।
একদিন তুমি মস্ত বড় লেখিকা হবে দেখে নিও।
তাহিয়া আমিন বলল।

– ঠিকআছে আমি এখন ফ্রেশ হবো আসি ভাবী।

ওকে যাও। আমিও ফ্রেশ হবো।

মেহনাজ চলে গেলে তাহিয়া ওয়াস রুমে গিয়ে গোসল করে নিল। এরপর ড্রেস চেঞ্জ রুমে এসে ভাবতে লাগল কোন ড্রেস পরবে। ধুর! এখন তো আর মিহরাব কাছে নেই কার জন্য এত সিলেক্ট করছি। একটা পরলেই হল।
তারপর একটা শাড়ি হাতে নিয়ে পরতে যাবে তখনি মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি এল। শাড়িটা রেখে তাহিয়া মিহরাবের একটা রেডিমেড পাঞ্জাবি হাতে নিল। তারপর সেটা উল্টেপাল্টে দেখে গায়ে জড়িয়ে নিল। পাঞ্জাবি টা থেকে একটা দারুন পারফিউম এর ঘ্রাণ বেরুচ্ছে। পারফিউম সাথে মিশ্রিত এক পুরুষালি ঘ্রাণ দুটো ঘ্রাণ মিশ্রিত হয়ে এক অন্যরকম মাতাল করা ঘ্রাণে পরিণত হয়েছে। তাহিয়া পাঞ্জাবির কলারে নাক ডুবিয়ে দিল। তারপর প্রাণ ভরে তার স্বামীর শরীরের ঘ্রাণ নিল।

তারপর মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি এল,
টপটপ করে পানি পরা ভেজা এলোমেলো চুলে
সেই অবস্থায় ফোনে একটা সেলফি তুলল।

এরপর চুল মুছতে মুছতে নিযের রুমের ভেতর গিয়ে আয়নার সামনে বসল।

তাহিয়া আয়নাতে নিযেকে দেখে লজ্জা পেল।
পাঞ্জাবি তার শরীরে দারুন শুট করেছে।
বেশ অন্যরকম লাগছে চেহারাটা। মনে হচ্ছে বিয়ের পর তার চেহারার সত্যিই উন্নত হয়েছে। নিযেকে আয়নার সামনে দাড়ালে আর কালো মেয়ে মনে হয়না।

মিহরাবের উজ্জ্বলতা হয়তো তার মাঝে বিস্তার করতে শুরু করেছে। উল্টোপাল্টা কিসব ভেবে তাহিয়া হেসে উঠল। তারপর ফোনটা হাতে নিয়ে ইমোতে মিহরাবের নাম্বারে পাঞ্জাবি পরা পিকটা পাঠিয়ে দিল।

অপর পাশে মিহরাবের ফোনে টুন শব্দ হতেই সে ইমোতে চেক করে দেখল একটা মেয়ে পিক পাঠিয়েছে।

প্রথমে দেখে চিনতে পারেনি, তাই এক নজর দেখেই ফোনটা রেখে দিচ্ছিলো,কিন্তু চেনাচেনা লাগল বলে আবারো খেয়াল করে দেখল, এই মেয়েটা আর কেউ নয় তার নতুন বৌ তাহিয়া। এবার পিকটার উপর মিহরাবের চোঁখ আটকে গেল। চোঁখ দুটো রসগোল্লার মত করে নিযের অজান্তেই বলে উঠল। ওয়াও! কি সুইট।

চলবে……

গল্পঃ মনের মাঝে তুমি

লেখিকাঃ আয়েশা মণি

পর্বঃ ১১

– মিহরাব কতক্ষণ যাবত সেই পিকটার দিকে চেয়েই আছে। ঠিক সেই মূহুর্তেই তাহিয়া মিহরাবকে কল করল। মিহরাব অন্য সময় হলে হয়তো কলটা রিসিভ করতো না। কিন্তু তাহিয়ার পিক দেখা অবস্থায় কল আসাতে কেমন জানি ইচ্ছে হলো কথা বলতে, তাই ফোনটা রিসিভ করল।

– আসসালামুয়ালাইকুম,

ওয়ালাইকুমুসসালাম।

– কেমন আছেন?

আলহামদুলিল্লাহ, আপনি কেমন আছেন?

– যেভাবে আপনি রেখে গেছেন।

মানে?

– মানে, বিয়ের পর দিনই নতুন বৌ’কে রেখে চলে গেলেন। এখন একা একা নতুন বৌয়ের যেরকম থাকার কথা সেরকমই আছি।

ওহ আচ্ছা, কিন্তু আপনি তো একা নন,আর আপনার মন্দ থাকারও কথা নয়। আপনার সূর্য আছে তো।

– হ্যা ঠিক বলেছেন, আমি মন্দ নই। তাছাড়া আমি বলিও নি যে আমি মন্দ আছি।

গুড, ভালো থাকলেই ভালো।

– আচ্ছা আপনি আমাকে আপনি করে বলেন কেন?
নিযের স্ত্রীকে কেউ আপনি করে বলে?

কারন আপনার ছোট বোনের সঙ্গে আমার বিয়ের কথা ছিলো। আর সে হিসেবে আপনি সমন্ধে আমার বড় থাকতেন। সেজন্যই আপনি বলে ডাকি।

– ওহ এই কথা?

হুম।

– জীবনে শুনিনি এসব কাউকে ভাবতে।

হা,হা, হা। ২৩ বছরের জীবন নিয়ে এত বড়াই?

– আরে, বড়াই কোথায় করলাম?

না এমনি জোকস করলাম।

– আপনি ভালো জোকস করতে জানেন।

আসলে সত্যিকারের ব্যাপারটা হলো, আমি আপনাকে কষ্ট দিতে চাইনা। তাই আপনাকে আপনার সূর্যের কাছে ফিরিয়ে দিব। তাই যেহেতু আপনি অন্যের বন্ধক । সেহেতু আমি তুমি তুমি বলে আপনার সাথে ঘনিষ্ঠ হতে চাইনা। এতে করে আমার কষ্ট হবে।

– তাই?

হুম, ঠিক তাই।

– আচ্ছা, খুব ভালো।

ওকে রাখছি।

– শুনুন! আমি যদি আপনার কাছেই থাকতে চাই। আমি যদি অন্যের কাছে যেতে না চাই, আমি যদি আপনাকেই ভালোবাসতে চাই? তাহলে কি আপনি আমাকে রাখবেন না?

তাহিয়ার কথাটা শুনে মিহরাব চুপসে গেল। তার মুখের ভাষা ফুরিয়ে গেল। এরকম প্রশ্নের সমুক্ষিন হতে হবে ভাবেনি সে। এখন কি উত্তর দিবে ভেবে পাচ্ছেনা।

– কি হলো কিছু বলছেন না যে?

উত্তরটা আমার কাছে নেই।

– তাহলে না বিয়ে করলেই হতোনা?
বিয়েতো মানুষ করে একে অপরের সাথে আজীবন সম্পর্কটাকে অটুট রাখার জন্য। যদি উত্তর না’ই বা থাকে তাহলে কেনো বিয়ে করলেন আমাকে? দয়া করেছিলেন? নাকি সম্মান ভিক্ষা দিয়েছিলেন?

কথা গুলো মিহরাবের কলিজায় গিয়ে বিধলো।
যদিও কথা গুলো সত্যি। আমি তাকে কেন বিয়ে করেছিলাম।তার কান্নার আওয়াজ শুনে দয়া হয়েছিল? নাকি সম্মান দিতে!যদি সম্মান দেওয়ার জন্যই বিয়ে করে থাকি তাহলে সারা জীবন তাকে সম্মানের সাথে আমার কাছে রাখা দায়িত্বের মধ্যে পরে।
মিহরার দ্বিধায় পড়ে গেল।

– মিহরাব বলল আমি এখন ফোনটা রাখছি পরে কথা হবে। এটা বলেই ফোনের লাইন কেটে দিল। মিহরাবের কাছে কোন উত্তর নেই বলেই ব্যাপারটা সে এড়িয়ে গেল। কিন্তু সত্যিই যদি তাহিয়া তার কাছ থেকে যেতে না চায়। তাহলে কি করে তাকে ছেড়ে দিবো? আবার তুবা’ও তো আমার জীবনে চলে এসেছে। কি করি এখন। তুবা’কে ব্যাপারটা বললে সে আমাকে ঠকবাজ বলবে। আবার তাহিয়া যেতে না চাওয়া সত্ত্বেও তাকে তাড়িয়ে দিলে খুব বড় অন্যায় হবে। আমি কি করি এখন।

দু’নৌকোয় পা দিয়ে আমি কি করে চলবো?
মিহরাব এসব ভাবতে ভাবতেই দিনটা চলে গেল।

তারপর দিন সে ক্লিনিকে গেল, এবং কাজে মন দিল।
এভাবে সে নিযেকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করল, তবে দিন শেষে তু’বার সাথে কথা না বলে সে থাককেই পারেনা।
তু’বার সাথে কথা বলা একটা রুটিন হয়ে গেছে।
অবশ্য তাহিয়ার সাথেও কথা বলে তবে মাঝে মাঝে।
প্রতিদিন না। তুবার সাথে কথা বলে ভালোবাসার টানে, আর তাহিয়ার সাথে কথা বলে দায়িত্বের টানে।
(যদিও দুটো নামের মানুষ একজন’ই। তবে মিহরাবের কাছে দু’জন আলাদা মানুষ)

এভাবেই দিন চলতে লাগল তাদের।
এর মধ্যে ৫ টি মাস কেটে গেল।
তবুও মিহরাব লন্ডন থেকে দেশে ফিরেনি।
মিহরাবের বাবা মা, তাকে অনেক কথা শুনিয়েছেন।কিন্তু মিহরাব নানান ছলে বলেছে আসার সুজোগ নেই।
তাহিয়ার ফাইলাম এক্সাম শেষ হলো।
দেখতে দেখতে ফেব্রুয়ারী মাসও চলে এল।
ফেব্রুয়ারী মাস জুড়ে ঢাকায় বই মেলা হয়।
তাই মিহরাব সিদ্ধান্ত নিল, এ মাসে সে বই মেলার
জন্য ঢাকায় যাবে। আর পছন্দ মত বই কিনে নিবে।
অবশ্য বাসায় বলে আসবেনা। সবাই কে সারপ্রাইজ দিবে।

মিহরাব ভাবল কথাটা তুবাকে জানানো দরকার।
কারন তুবাকে দেখার প্রবল ইচ্ছে মনে জেগেছে।
সে এবার গিয়ে সরাসরি তুবার সাথে প্রথম দিন’ই দেখা করবে। তাই তুবাকে টেক্সট পাঠাল।

– আসসালামুআলাইকুম ।

ওয়ালাইকুমুসসালাম।

– কেমন আছো তুবা?

আলহামদুলিল্লাহ তুমি?

– আলহামদুলিল্লাহ খুব ভালো। একটা গুড নিউজ আছে।

কি?

– আমি আগামি দিন দেশে আসবো।

তাই? সত্যি বলছো?

– হ্যারে পাগলী।

তাহিয়ার মনটা খুঁশিতে নেঁচে উঠল।
এই পাঁচটি মাসে তাহিয়া তুবা সেজে তার স্বামীর সাথে কথা বলতে বলতে যে কতটা ভালোবেসে ফেলেছে তার কোন উপমা নেই।

-তবে তোমার সঙ্গে কিন্তু এবার দেখা করবো।

শুধু কি দেখাই করবে?

– না, তোমাকে কোলে তুলে নিযের বাড়ি নিয়ে যাবো।
সারা জীবনের জন্য আমার করে নেবো।

আর তাহিয়া?

– এবার গিয়ে তার কোন ফায়সালা করে আসবো।

তাহলে বলো কোথায় কিভাবে দেখা করতে হবে?

– তোমাকে কষ্ট করে আসতে হবেনা। আমি নিযে গিয়ে তোমাকে দেখে আসবো।

তাহলেতো আরো ভালো।

– হুম।

কয়টায় আসছো?

– আজ রাতের ফ্লাইটে প্ল্যান এ উঠবো কাল সকাল ১০.০০ গিয়ে পৌঁছবো। প্রথমে বই মেলায় যাবো। সেখান থেকে সরাসরি তোমার বাসায় যাবো। তোমাকে দেখে তারপর নিযের বাসায় যাবো।

ঠিকআছে আমি অপেক্ষায় থাকবো ।

– আর শুনো, তোমার ঠিকানা টা লিখে দিও কেমন?

ওকে।

– তাহলে এখন ফোন রাখি। প্রস্তুতি নিতে হবেতো।

ওকে আল্লাহ হাফেজ।

– আল্লাহ হাফেজ।

– তাহিয়ার আনন্দ যেন আর কমছে না৷
সে তার প্রিয় মানুষটিকে দেখতে পাবে।
খুঁশিতে সে পুরো বাসা সহ মেতে রাখছে।
বাসার কেউ তার এত খুঁশি হওয়ার কারন বুঝতে পারছে না।

রাতে মেহনাজ তাহিয়ার রুমে এসে দেখল তাহিয়া নিযের রুম গুছাচ্ছে!

– কি ব্যাপার ভাবী! এত খুঁশি খুঁশি লাগছে যে?

একটা সারপ্রাইজ আছে।

– কি সারপ্রাইজ গো বলোনা।

আজ না, কাল বলবো।

– ওকে ওয়েট করবো। তবে এটা বুঝে গেছি বড় সড় কোন সারপ্রাইজ আছে।

হুম ওয়েট করো।

সেদিন রাতটা আর কাটতে চাইছেনা তাহিয়ার।
উৎকন্ঠা নিয়ে সে রাত্রী যাপন করতে লাগল।

অন্যদিকে মিহরাবের আর তড় সইছেনা। সে কখন দেশে যাবে আর কখন কাঙ্খিত মানুষটিকে দেখতে পাবে। ভাবতেই কেমন কেমন ফিল হচ্ছে।

রাতে প্ল্যান এ চেপে বসে মিহরাব ফোন হাতে নিয়ে ডাটা অন করল। দেখিতো তু’বা ঠিকানা পাঠিয়েছে কিনা।
কিন্তু তু’বার ইনবক্স চেক করে দেখল। আর কোন টেক্সট আসেনি। মিহরাবের মনটা খারাপ হয়ে গেল।
তুবা সেই ৫ ঘন্টা আগে ডাটা অফ করেছে আর এফবিতে আসেই নি। তাহলে কি করে তুবার ঠিকানা জানবে সে?

তুবার এই আচরণে মিহরাবের কেমন জানি ভেতরে চিনচিন কষ্ট হতে লাগল। কত আশা করেছিল সে তুবার সাথে দেখা করবে। কে জানে সেটা আদৌ কপালে আছে কিনা। সারাটি রাত মিহরাব ডাটা অন রেখে অপেক্ষা করল কিন্তু তুবার কোন মেসেজ এলোনা। এবার মিহরাবের রাগ আর কষ্ট দু’টোই একাকার হয়ে গেল। তার চোঁখ বেয়ে টপ করে জল গড়িয়ে পড়ল। ইচ্ছে করছে এখনি আবার লন্ডনে ফিরে যেতে। কেনো এমন করলো তুবা? দেখা করতে চায়না বলে দিতেই পারতো। আশা কেনো দিলো? আর আশা যখন দিল তখন ঠিকানাটা কেন দিলোনা?

হাজারো কষ্টরা একত্র হয়ে বুকে অভিমানের এক পাহাড় মেঘ জমাল।

যেন এই বুঝি বৃষ্টি হয়ে ঝড়ে পড়বে চক্ষু দিয়ে।

এয়ারপোর্টে নেমে ফোনে বাংলাদেশি সিম উঠাল।
তারপর ফোনটা অন করতেই একটা মেসেজ এল।

মেসেজটা ছিল এরকম।

মিহরাব সাহেব! বানিজ্য মেলায় গিয়ে সোজা ১৩ নাম্বার স্টলে যাবেন। সেখানে আপনার জন্য একটা সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে।

– মিহরাবের মন খারাপ নিমিষেই উধাও হয়ে গেল।
সে ধরে নিল নিশ্চয়ই তু’বা মেসেজ করেছে।

কিন্তু মিহরাব আদৌ জানতোনা সেখানে তার জন্য কি সারপ্রাইজ আছে।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here