#গল্পের নামঃ হোম টিউটর,পর্বঃ ১ম
লেখায়ঃ শাফি ইসলাম
হঠাৎ করে স্যার আমার কোমরে হাত দিয়ে বসলেন।
স্যার আপনি কি করছেন?
আমি কিন্তু এই ধরনের মেয়ে নই। পড়াতে এসেছেন,সুন্দর করে ভদ্রভাবে পড়ানো শেষ করে চলে যাবেন।
স্যার এমন ভাবে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে যেন মনে হচ্ছে উনি আমাকে আজ প্রথম বার দেখছেন। তাকানোর মাঝেও ছিল কুদৃষ্টি, যেটা আমার একদম ভালো লাগছিল না। টেবিলে কলম দিয়ে শব্দ করার পর তার দৃষ্টি যেন ফিরলো।
তার দৃষ্টি ভক্ষণ শেষে মনে হচ্ছে সে আমার কোন কথাই শোনেন নি এত সময়।
কিছু সময় পর আবার একি কান্ড।
এবার টেবিলের নিচে পায়ের সাথে পা লাগার স্পর্শ অনুভব করলাম। আমি পা সরিয়ে নিতেই পূনরায় আবার জ্ঞান ফিরলো স্যার। নানান অজুহাতে আমার হাত ধরে। বার বার হাত ছাড়িয়ে নেওয়া সত্বেও তিনি যেন কিছুই বুঝতে পারছেন না।
তার প্রতি বিরক্তি ভাব দিন দিন আমার বেড়েই চলেছে।
কিন্তু না পারছি কিছু বলতে আর না পারছি নিরবে সহ্য করে যেতে।
মাঝে মাঝে পড়ানো বাদ দিয়ে উনি আমার সাথে প্রেমের গল্প শুরু করে দিতেন। আমাকে প্রেমের মানে বুঝাতেন। প্রেমের সঙ্গা কি, প্রেমের ব্যাখ্যা কি এইসব বুঝাতেন। যা আমার একদম ভালো লাগতো না।
মনে মনে তখন বলতাম বজ্জাত লোকটা যেন মনে হয় প্রেমের ক্লাস নিতে আসছে আমার।
আরও মেজাজ খারাপ হত যখন দেখতাম আম্মু বাবা বাবা বলে আদর করে ভালো ভালো খাবার সামনে এনে দিত।
আম্মু রুমে প্রবেশ করাতে তার রুপ এমন ভাবে পরিবর্তন হয়ে যেত। তখন তাকে দেখে মনে হত পৃথিবীতে তার থেকে নিষ্পাপ মানুষ দ্বিতীয় কেউ হতেই পারে না। আম্মু চলে যাওয়ার সাথে সাথে আবার পূনরায় আগের রুপে ফিরে আসতো।
প্রেম বিষয়ে কথা বলতো।
আমার কোন ধরনের ছেলে পছন্দ।
তাকে দেখতে কেমন। এইসব হাবিজাবি প্রশ্ন করে আমার মাথা খারাপ করত। স্যারের এমন দৃষ্টিকটু আচার-আচরণ আমার মোটেও ভালো লাগছিল না। পড়ানো শেষে একটা সরি শব্দ উচ্চারণ করে সেদিনের মত বিদায় হলেন।
তার চলে যাওয়াতে সেদিন একটু সস্তি পেলাম। এর আগেও বেশ কয়বার এমন ঘৃণিত কাজ করার চেষ্টা করেছেন আমার সাথে। কিন্তু আমি কখনো সুযোগ দেই নি। বিষয়টি আমি বুঝতে পেরেও না বোঝার অভিনয় করে থাকতাম।
কিন্তু রিসেন্টলি আমি রীতিমতো অবাক হচ্ছি তার সাহস দেখে। পড়াতে এসে তিনি আর আগের মত মনোযোগ দিয়ে পড়ান না।
শুধু আমার দিকে কুদৃষ্টিতে তাকান আর অপ্রাসঙ্গিক কথা বলার চেষ্টা করেন। রাতে ঘুমাতে যাব, ঠিক সেই মুহুর্তে আমার ফোনটা বেজে উঠলো। এত রাতে আমার ফোনে ফোন আসা দেখে একটু অবাক হলাম। খুব কৌতূহল বশত তারাতাড়ি ফোনটা হাতে নিলাম। হাতে নিয়ে দেখি স্যার ফোন দিয়েছেন।
প্রথমে ধরতে না চাইলেও দ্বিতীয় বার কল আসাতে স্বাভাবিক ভাবেই ফোনটা রিসিভ করলাম।
এরপর যা শুনলাম, তা শোনার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।
তিনি আমাকে বললেন সে নাকি আমার সাথে শারিরীক সম্পর্কে লিপ্ত হতে চায়। কথাটা শুনে আমি যতটা না অবাক হয়েছি তার থেকে বেশি ভয় কাজ করতে ছিলো আমার ভিতর। স্যারের এমন কুপ্রস্তাব, ছি আমি স্যার বলছি কাকে!
এরকম একটা নোংরা মনের মানুষকে কিভাবে স্যার বলে সম্মোধন করবো। আমার এখন ঘৃণা করছে তাকে স্যার বলে ডাকতে।
যাই হোক ওই নোংরা মনের মানুষটির এমন কুপ্রস্তাব শোনার পরেও চাইলেই আমি তাকে রিজেক্ট করতে পারছি না।
কারন আমাকে পড়ানোর জন্য আমি নিজেই তাকে ঠিক করেছিলাম। কিন্তু আমি তখন বুঝতে পারিনি তার মন মানুষিকতা এমন হবে।
এবার আমি স্যারকে থামতে বলি,
কিন্তু তিনি যেন আমার কথা শুনছেনি না। আমাকে নানান ভাবে নানান কৌশলে আয়ত্ত করার চেষ্টা করেই যাচ্ছেন। কিন্তু আমি কোন ভাবেই তার এমন বাজে প্রস্তাব গ্রহণ করছি না। একটা মুহূর্তে এসে আমি রাগ করে ফোনটা কেটে দিয়ে রেখে দেই।
এরপরও অনেক বার ফোন দিয়েছে সেই রাতে। অনেকগুলো ম্যাসেজ পাঠিয়েছেন।
কিন্তু আমি তার ফোন না ধরে, ম্যসেজ গুলো দেখতে ছিলাম আর রাগে জলছিলাম। আমি যে সেই মুহুর্তে তাকে পড়াতে আসতে মানা করবো, সেই সাহস টুকুও পাচ্ছিলাম না। কারন আমার এক মাস পর ইন্টার ফাইনাল পরিক্ষা ছিল।
এখন যদি আমি স্যারকে আসতে মানা করে দেই তাহলে বাসায় হাজারটা প্রশ্নের জবাব দিতে হবে।
তাই ভাবলাম একটা মাস যেমন করেই হোক, নিজেকে মানিয়ে নিয়ে তারপর এই খারাপ লোকটাকে বাদ দিয়ে দেব।
কিছুদিন পর আমার পরিক্ষা।
কিন্তু আমি ওই লোকটার এমন প্রস্তাবের চিন্তায় ঠিক ভাবে পড়ালেখাও চালিয়ে যেতে পারছিলাম না। সারাক্ষণ শুধু মাথার মধ্যে নোংরা লোকটির ওইসব কথা ঘুরপাক খাইত।
পরের দিন,,,,
ডোর বেলের শব্দ শুনে মা দরজা খুলে দেয়। রুম থেকে মাথাটা বের করে দেখলাম স্যার এসেছেন।
দুপর বারটার সময় লোকটাকে দেখে আমি অবাক হয়ে যাই।
আম্মু তাকে জিজ্ঞাসা করলেন বাবা তুমি আজকে এই সময়!
আসলে আন্টি আর কিছুদিন পর থেকে তমার পরিক্ষা তো, তাই ভাবলাম এই কয়দিন দু বেলা করে এসে ওর সমস্যা গুলো সমাধান করার চেষ্টা করবো। স্যারের মুখে এমন রস মাখানো কথা শুনে আম্মু খুশিতে গলগল হয়ে যায়।
আম্মু এটাও বলে দিলেন দুপুরে যেন সে খাওয়া দাওয়া করে যায়।
আচ্ছা তুমি ভিতরে এসে বস। আমি তোমাকে রেডি হয়ে নিতে বলি।
লোকটার রস মাখানো কথা আর আম্মুর আদীক্ষিতা দেখে আমার রাগটা আরও দ্বিগুণ হয়ে গেল।
অপেক্ষা করুন দ্বিতীয় পর্বের জন্য,,,,,