#গল্প-আড়ালে_কে(১ম পর্ব )
#লেখক — সালাহউদ্দিন তারিক( জুনিয়র মুগলি )
এক…. ( ১৮+ এলার্ট )
স্ত্রীর মোবাইলের হোয়াটসঅ্যাপের মেসেজ বক্সটা খুলতেই জঘন্য কিছু মেসেজ দেখতে পেলেন নাজমুল সাহেব। রোমান্টিক মেসেজের সাথে পাল্লা দিয়ে সে*ক্সুয়াল মেসেজেরও ছড়াছড়ি সেখানে। খুব বেশি মেসেজ দেখতে পারলেন না, গতকালের সব মেসেজ মুছে দেওয়া হয়েছে। আজকের মেসেজগুলোও হয়তো মুছে যেতো যদি না তিনি নকল চাবি দিয়ে ঘরে ঢুকতেন। চোখ বন্ধ করে ভাবলেন কতক্ষণ “আর কত হাজার মেসেজ মুছেছে কে জানে! কি ছিল সেখানে তা-ই বা কে জানে!”
রাগের মাথায় মোবাইলটা ভাঙতে নিয়েও ভাঙলেন না তিনি। সবগুলো মেসেজ ডিলেট করে দিয়ে মোবাইলটা একটু অন্য জায়গায় রেখে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন তিনি। বাইরে থেকে আবারও নকল চাবি ঘুরিয়ে লক করে দিলেন দরজাটা।
.
.
.
রাস্তার পাশের টং দোকান থেকে চা-সিগারেটের ধোঁয়া একসাথে উঠছে। নাজমুল সাহেব আগে কখনো দোকানে বসে চা-সিগারেটে ঠোঁট ছোঁয়াননি। কিন্তু আজ অফিস থেকে এক ঘণ্টা আগে এসেছে বলে দোকানের সামনের টেবিলটাতে ধপ করে বসলেন তিনি। টেবিলের অপর পাশে থাকা একজন চোখ ঘুরিয়ে তাকালেন ওনার দিকে, হয়তোবা ভেবেছে শিক্ষিত মানুষ কি অভদ্রের মতো ধপাস করে বসেছে। টেবিলের সাথেই শত্রুতা না-কি কোমড়ের হাড্ডি ভেঙে এই অবস্থা।
টেবিলে বসে কতক্ষণ কাচুমাচু করা শেষে বললেন, “চাচা একটা গোল্ডলিফ দেন তো।”
বুড়ো চাচা তার দোকানের পিচ্চি কর্মচারীকে দিয়ে একটা সিগারেট পাঠালেন। নাজমুল সাহেব মানিব্যাগের কোণাগুলোতে ছানবিন করে ভাংতি টাকাগুলো বের করে দিলেন পিচ্চি ছেলেটার হাতে। তারপর পকেট থেকে লাইটারটা বের করে সিগারেট ধরালেন। গোল্ড লিফ এর ফ্ল্যাভার ছড়িয়ে পড়ল চারদিকে। নাজমুল সাহেব একেরপর এক টান দিতে লাগলেন দ্রুততার সাথে। এতো তাড়াতাড়ি সিগারেট ফুঁকছেন, যে কেউ দেখলে ভাববেন উনি বুঝি গাড়িতে উঠবেন তাই তাড়াতাড়ি সিগারেট শেষ করতে হবে। কতক্ষণ ধুঁয়া উড়িয়ে আনমনে বসে থাকলেন চাঁদের দিকে তাকিয়ে। প্রায় আধঘন্টা শেষে আবার উঠে একটা সিগারেট নিয়ে রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে খেতে লাগলেন।
আজ থেকে প্রায় ছয় মাস পূর্বে ওনাদের বিয়ে হয়েছিল। পারিবারিক বিয়ে, দু’পক্ষের সাধারণ সম্মতিতে হওয়া বিয়ে।
নাজমুল সাহেবের বয়স যখন ২৬ বছর তখন তিনি একটা অফিস সহকারী হিসেবে চাকরিতে ঢুকেন। তারপর থেকে ২ বার পদন্নোতি পেয়ে যখন একটা ভালো অবস্থানে যান তখন-ই পরিবার থেকে চাপ আসতে থাকে “বিয়ে কর বাবা, বিয়ে কর তাড়াতাড়ি।”
নাজমুল সাহেবের বয়স তখন উনত্রিশ, এবার আসলেই বিয়ে করা উচিত। পরিবার থেকে মেয়ে দেখতে শুরু করল একে একে। পঞ্চমবারে পরিবারের চোখে ভালো লাগল সোহানাকে। নাজমুল সাহেবকে এবার যেতেই হলো মেয়ে দেখতে। ইন্টারের সময়গুলোতে উনি কতটা লাজুক ছিলেন তা আমার জানা নেই। কিন্তু মেয়ে দেখার দিন অনেক লজ্জা পাচ্ছিলেন। মিস সোহানার দিকে চোখ তুলে তাকাতেও কেমন যেন সঙ্কোচ করছিলেন। বাসর ঘরের নতুন বউয়ের মতো আস্তে আস্তে মাথাটা তুলে ক সেকেন্ড দেখেই দ্রুত চোখ নামিয়ে নিলেন তিনি।
কোথায় যেন শুনেছিলেন তিনি, ইন্টার পেরুনোর পর থেকে মেয়েদের সুন্দর্য আস্তে আস্তে কমে যায়। কিন্তু সদ্য ২২ এ পা রাখা সোহানার ক্ষেত্রে এমনটা হয়নি। মেকাপ ছাড়াই তার চেহারা এক অন্য রকম জ্যোতি ছড়াচ্ছে। তাই আরেকবার তাকানোর থেকে আর নিজেকে বিরত রাখলেন না তিনি। অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকলেন সোহানার দিকে। মনে মনে ঠিক করে ফেললেন এই মেয়েটিকেই বিয়ে করবেন। ঘন পাপড়ি ঘেরা গাঢ় কালো চোখ, উজ্জ্বল গোলাপি ঠোঁট এসব এক অদৃশ্য চুম্বকীয় আবেশ তৈরি করল নাজমুল সাহেবের মনে। বারবার চোখ নামিয়ে নিলেও পরোক্ষনে আবারও এক নজর দেখা থেকে বিরত থাকতে পারলেন না তিনি।
সেদিনের মতো দর্শন পর্ব সমাপ্ত করে বাড়িতে ফেরার পর নিজের মতামত জানিয়ে দিলেন। খুব বেশি দেরি হয়নি দিনক্ষণ ঠিক করতে। এক মাসের মধ্যেই বিয়ে হয়ে গেলো। তখন জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়, শীত একদম জেঁকে বসেছে। বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে এলো ওনাদের।
রাতের খাবারে নাজমুল সাহেবের সাথে ওনার অফিসের কিছু ঘনিষ্ঠ কলিগ আর পুরাতন বন্ধুরা ছিল। খাওয়া শেষ করে ছাদে দিয়ে সম্পেশ আড্ডা দিলেন সবাই। এই ফাঁকে নববধূ কি করছে তার খোঁজও নিতে পারলেন না নাজমুল সাহেব। নববধূর সিগারেটের গন্ধ সহ্য না হতে পেরে একটার বেশি সিগারেটও খেতে পারলেন না উনি। অন্য দিকে একের পর এক সিগারেট পুড়িয়েই চলছে ওনার বন্ধুরা।
রাত ১১ টার পরে বন্ধুরা ওনাকে ঘরে যাওয়ার কথা স্বরণ করিয়ে দিলো। ভালো করে মুখ ধুয়ে সিগারেটের গন্ধ দূর করে ঘরে ঢুকলেন তিনি। ভেবেছিলাম স্ত্রী হয়তো ওনাকে সালাম করতে আসতে পারে। কিন্তু এমন কিছুই হলো না। ডিম লাইটের অল্প আলোতে দেখলেন স্ত্রী ঘুমাচ্ছে। বাসর রাতে স্বামী ঘরে আসার আগেই কি করে কোনো মেয়ে ঘুমাতে পারে তা ওনার বুঝে আসল না। একবার ডাক দিবেন ভেবে আবার দিলেন না। ভাবলেন হয়তোবা ক্লান্ত অনেক এজন্য ঘুমিয়ে পরেছে।
তাই তাকে আর বিরক্ত না করে কাপড় পরিবর্তন করে নিজেও শুয়ে পরলেন বিছানার অন্য পাশে।
সেটিই ছিল প্রথম ধাক্কা। পরদিন থেকে বুঝতে পারলেন সোহানার নিজের ইচ্ছেতে বিয়েটা হয়নি। পরিবারের চাপে রাজী হতে বাধ্য হয়েছে।
পূূর্বের সেসব কথা ভাবতে ভাবতে হঠাৎই একটা ইঁটের টুকটায় ধাক্কা খেয়ে মুখ থুবড়ে পড়ার উপক্রম হলো নাজমুল সাহেবের। কোনো রকমে নিজেকে সামলে নিলেও সিগারেটটা হাত থেকে পরে গেল। একটু ফুঁ দিয়ে পরিষ্কার করে জ্বালালেন সেটা। একদম শেষ সাদা অংশ টুকু অবদি পোড়ানো শেষে ছুঁড়ে ফেললেন সেটা। নিজেকে সামলে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠলেন। নকল চাবিটা ভালো মতো লুকিয়ে রেখে কলিং বেল টিপলেন। পাকিস্তানি কোনো এক ব্রান্ডের কলিং বেল, উর্দূতে কি সব যেন বলল আর পাখির ডাকের শব্দ হলো।
দরজাটা ভিতর থেকে খুলে দিল মিস সোহানা। নাজমুল সাহেব জানে ওর চেহারায় কিছু একটা থাকবে। তাই আড় চোখে দেখলেন তাকে। চিন্তা, ভয় সবকিছুর বহিঃপ্রকাশ দেখা গেল সোহানার চেহারায়। কেমন যেন কাচুমাচু করছিল সে। নাজমুল সাহেবের বুঝতে অসুবিধা হয়নি এমন ভাবভঙ্গির কারণ আসলে কী।
ঘর থেকে বের হওয়ার সময় ইচ্ছে করেই সব মেসেজ ডিলেট করে দিয়েছিলেন তিনি, আর তার সাথে মোবাইলটাও একটু অন্য জায়গায় রেখেছিলেন যেন সোহানা বুঝতে পারে কিছু একটা হয়েছে।
ব্যাগপত্র রেখে গোসলখানায় চলে গেলেন সোজা। সোহানার মুখের দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকলে চাইলেন না। ঝড়নার নিচে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগলেন, “সবে তো শুরু কেবল, আরো অনেক কিছু বাদ রয়েছে রাজকন্যা।”
হো হো করে হাসতে মন চাইল নাজমুল সাহেবের কিন্তু কিছুতেই ভুল করলেন না। শুধু আয়নার দিকে তাকিয়ে নানা ভঙ্গিমায় হাসতে লাগলেন। ভাবতে থাকলেন কোন হাসিতে বেশি মানায় নিজেকে।
গোসল শেষ করে আসতেই দেখলেন টেবিলে খাবার রেখে সোহানা বিছানায় বসে আছে। নাজমুল সাহেব তার দিকে তাকিয়ে স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই বললেন, “খেয়েছ?”
উত্তর আসল, “জি, আপনি খেয়ে নিন।”
নাজমুল সাহেবের অফিস ৮ টার পরপর ছুটি হয়ে যায়। বাড়িতে আসতে আসতে সময় ৯ঃ৩০ থেকে ১০ টা অবদি হয়ে যায়। তারপর এসে গোসল করে খেতে বসতে ১০:৩০ অন্তত। এজন্য সোহানা সব সময় আগেই খেয়ে ফেলে।
খাওয়া শেষে নিজের কম্পিউটারে বসে বসে কিসব হিসাব নিকাশ করে নিলেন কিছুক্ষন। তারপর ডিম লাইট জালিয়ে বিছানায় গেলেন। বিছানার এক পাশে সোহানা শুয়ে আছে আর অন্য পাশে একটা একটা বালিশ। মাঝখানে বিশাল এক কোল বালিশ দিয়ে উপত্যকা তৈরি করা আছে। বিয়ের পরের অধিকাংশ রাত ওনাদের এভাবেই কেটেছে। নাজমুল সাহেব কখনো প্রতিবাদ করেননি। কিন্তু আজকে আর এটা সহ্য হলো না ওনার। বালিশটা ঢিল দিয়ে সোফার উপরে ফেলে দিয়ে সোহানার বালিশের কাছাকাছি হয়ে শুয়ে পরলেন। বিয়ের পরে কখনো স্ত্রীকে কাছে না টানলেও আজকে আর নির্জীব থাকলেন না। সোহানার একটা হাতের বাজু ধরে নিজের দিকে ঘুরানোর চেষ্টা করলেন তিনি। সোহানা এক ধাক্কায় নাজমুল সাহেবের হাত সরিয়ে দিলেন। রাগে গজগজ করে বলতে লাগল, “কি হচ্ছে এসব! ওই দিকে যান।”
বিয়ের পরে থেকে কখনো নাজমুল সাহেবকে রাগারাগি করতে দেখেননি। এজন্য সোহানা ওনাকে তেমন ভয় পায় না। তবুও কিছু কিছু কাজ আছে যা লুকিয়েই করে সে।
নাজমুল সাহেব চুপ থেকেই আবারও সোহানার হাতটা ধরলেন। সোহানা এবারও ওনার হাতটা সরিয়ে দিল। তৃতীয় বারের মতো আবারও একই কাজ করলেন নাজমুল সাহেব। সোহানা এবার আরো রাগের সাথে ওনার হাতটা ছিটকে দিলেন।
নাজমুল সাহেব যেন এটার অপেক্ষাতেই ছিলেন। এক লাফে উঠে বসে পরলেন তিনি। বাম হাতে সোহানার দুই হাত চেপে ধরে অন্য হাতে স্ব জোরে গলা টিপে ধরলেন। নিঃশ্বাস নিতে না পেরে পা দু’টো এদিক ওদিক ছড়িয়ে নিজেকে ছুটানোর চেষ্ঠা করতে লাগল সোহানা। কিন্তু তাতে কোনো লাগ হলো না। নাজমুল সাহেব ওনার পায়ের হাটু দিয়ে সোহানাকে বিছানার সাথে চেপে ধরলেন, আর সাথে সাথে গলাতেও আরো জোরে টিপে ধরলেন। অক্সিজেনের অভাবে সোহানার মুখ নীল হয়ে যেতে লাগল। তখনই নাজমুল সাহেব ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে বললেন “তোর এত্তো দেমাগ কেনরে মা**গী !”
নাজমুল সাহেবের মুখে এই জঘন্য সম্মোধন শুনে সোহানার চোখ দু’টো কোটর ছেড়ে বেরিয়ে আসার উপক্রম হলো। সোহানা হয়তো ভাবতে লাগল, ” এ কেমন ভূ*ত সওয়ার হলো ওনার ঘাড়ে!”
( চলবে ইন শা আল্লাহ )