আড়ালে_কে-০২,০৩

0
624

#আড়ালে_কে-০২,০৩

[ #পর্ব- ০২ ] ( ১৮+ এলার্ট )

ঘরে ঢুকেই অকথ্য ভাষায় চিৎকার করতে লাগে সিয়াম, “ঐ মা**গী, ঘড়িতে কয়ডা বাসে দেখস না। এখনো রান্না ঘরে কি করস? রান্না ঘরে কি নতুন ভা*তা*র জুটাইছস! ‘
কোনো উত্তর দিতে পারে না সাইফা। রক্ত*স্রাবে ভেজা পায়জামা পরে সোজা দাঁড়িয়ে থাকে। কতক্ষণ নিচের ঠোঁটটা দাঁতের ফাঁকে দিয়ে স্বজোরে চেপে ধরে রাখে। রান্না এখনো পুরোপুরি শেষ করতে পারেনি সে। স্রাব চলা অবস্থাতে সে শারীরিক ভাবে অনেক দূর্বল হয়ে যায়। কিন্তু সিয়াম যে এসব শুনবে না, সময় মতো রান্না না পেলে একটা লা*থিও মাটিতে পড়বে না। এদিকে ডাল এখনো ফুটছে না।

চুলাতে আগুন যেন আসে যায়, লাইনের গ্যাসের অবস্থা খুব করুণ। যদি একটু তাড়াতাড়ি রান্না টুকু শেষ করা যায় তবেই মাইর থেকে বাঁচতে পারবে সে। এই ভেবে দ্রুত হাতে ডালের পাতিলে ঘুঁটনি নাড়তে থাকল সাইফা। গ্যাসের আগুন, মসুর ডাল দুটোই আজকে শত্রুতা করছে তার সাথে। ডাল প্রায় হয়ে আসছে, এমন সময়েই রান্না ঘরের দরজায় শব্দ পেলো সাইফা। বুকের ভিতরে ধুকধুক করে উঠল তার। ভূূত দেখার মতো পিছনে ফিরে তাকালো সে। সিয়াম তখন দরজায় দাঁড়িয়ে দাঁত কিরকির করছে। ভয়ে ঢোকর গিলতে শুরু করল সাইফা। ভয়ার্ত চেহারা দিয়ে সিয়ামকে বুঝানোর চেষ্টা করল, ” প্লিজ এমন করো না একটু সময় দাও।”

সাইফার এই আকুতি সিয়ামের কাছে কোনো পাত্তাই পেলো না। বিদ্যুৎ গতিতে লাফিয়ে এসে সাইফার চুলগুলো মুঠ করে ধরল সে। শক্ত করে চুুলের মুঠি ধরে নিজের মুখের দিকে ফিরালো তাকে। ভয়ানক সৃষ্টিতে চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, “তোকে কতবার বলেছি রান্নায় দেরি করলে আমার সহ্য হয় না?”

সাইফা দ্রুত নিজের নাক মুখ চেপে ধরল। সিয়ামের মুখ থেকে কেমন জঘন্য গন্ধ বেরুচ্ছে। গন্ধে বমি হওয়ার উপক্রম হয় তার। নাক-মুখ চেপেই উত্তর দেয়, “প্লিজ আর ৫ টা মিনিট অপেক্ষা কর শুধু।”

সিয়ামের মন গলে না এতে। চিৎকার করে বলে, “চুপ, একদম চুপ। কোনো অযুহাত শুনতে চাই না আমি।”
চুলের মুঠি ধরেই এক ধাক্কা মেরে ফ্লোরে ফেলে দেয় সাইফাকে।

— “আহ্ ” করে ব্যাথায় চিৎকার ছুঁড়ে সাইফা।
সিয়ামের মাথা যেন আরো গরম হয়ে যায়। চুল ধরেই টেনে উঠায় সাইফাকে। চুলের ডগায় ধরে তার কোমড়ে একের পর এক লা*থি মারতে থাকে। হঠাৎই একটা লা*থি পিছনে না লেগে পেটের দিকে লাগতেই বেশ খানিকটা র*ক্ত বেরিয়ে এলো তার লজ্জাস্থান হয়ে।

পায়জামায় রক্তের ছাপ দেখা দিতেই সিয়াম অস*ভ্যের মতো খেঁকখেঁক করে হাসতে লাগল। রক্তাক্ত পায়জামার দিকে হাতে বাড়াতে নিতেই পাতিলে ডাল উপচে পরে যাওয়ার শব্দ হলো। এটা দেখে সিয়াম আর সাইফার দিকে হাত বানালো না। হাতের ইশারায় বুঝিয়ে দিল, “কান্নাকাটি রেখে তাড়াতাড়ি পাতিল উঠিয়ে নিয়ে আয়।”

সাইফা উঠে এমন ভাবে রান্না গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল যেন কিছুই হয়নি। তাড়াতাড়ি পাতিল নামিয়ে অন্যসব জিনিসপত্র ও গুছিয়ে নিয়ে একটার পর একটা ঘরে আনতে লাগল সে। তখন ভেজা পায়জামা বেয়ে রক্তের ফোঁটা ফ্লোরে পরার উপক্রম। এই অবস্থাতেই সিয়ামকে খাবার গুছিয়ে দিয়ে, তারপর অন্য কাপড় নিয়ে পরনের কাপড় পাল্টাতে গেল। খাবার সম্পূর্ণ টেবিলে রাখার আগ পর্যন্ত সাইফার সাহস হয়নি পরনের কাপড় পাল্টানোর মতো ও।
.
.
.
প্রেমিকের হাতে দিনের পর দিন এভাবেই নির্যাতিত হচ্ছে সাইফা। প্রেমিক বলছি এই কারণেই যে তাদের বিয়েটা পারিবারিক ভাবে হয়নি। বরং নিজেরাই একা একা পালিয়ে বিয়ে করেছে। বিয়ের আগেই এই বাসাটা ঠিক করে রেখেছিল সিয়াম। তাই কোর্ট থেকে বিয়ের পর্ব সেড়ে আর বাড়ি মুখো হয়নি তারা। এখানেই তাদের দিন অতিবাহিত হতে থাকে। সাইফার বাড়ি থেকে কল দিলে সে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, “আমি আমার পছন্দ মতো বিয়ে করেছি। তোমাদের পছন্দ করা ঐ বুড়া বেডাকে বিয়ে করার কোনো ইচ্ছে আমার ছিল না। আমি আমাকে নিজের মতো গুছিয়ে নিচ্ছি। তোমরা অযথাই আমাকে খোঁজার চেষ্টা করো না। আর আমার স্বামীর নামে কোনো প্রকারের মিথ্যা মামলা দেওয়ার চেষ্টা করো না।”

সাইফা নিখোঁজ হওয়ার পাশাপাশি যখন পাশের এলাকার ছেলে সিয়ামও নিখোঁজ হয়ে যায় তখন সবাই তাদের সমবয়সী ছেলে মেয়েদের থেকে জানতে পারে তাদের প্রেমের কথা। সাইফার বড় ভাই আজিজ হন্ন হয়ে খুঁজে বেড়ায় তাদের। কিন্তু সিয়াম এতোটাই ধুরন্ধর ছিল যে, বাড়ির কারো সাহায্যই নেয়নি সে। পাছে কেউ তাদের অবস্থান বাড়িতে জানিয়ে দেয় এই ভয়ে। অবশেষে তাদের খুঁজে না পেয়ে সাইফার পরিবারের পক্ষ থেকে সিয়ামের নামে অপহরণের মামলা করা হয়। পুলিশ সবকিছু জেনেও অপহরণের মামলা গ্রহন করে। কিন্তু পরদিনই সাইফার ফোনে কল ঢুকলে সে সোজাসাপটা বলে দেয় মামলা উঠিয়ে নিয়ে তাদের শান্তিতে থাকতে দেওয়ার জন্য।

সাইফার বাবা কি করবেন তা বুঝতে পারেন না। শেষে একপ্রকার রাগ হয়েই মামলাও তুলে নেয়। আর মেয়েকেও সাফ জানিয়ে দেয়, “আজ থেকে তুই আমার মেয়ে না। আমার বাড়িতেও তোর আর কোনো অংশ নেই। কোনো দিন আর আমার বাড়িতে পা রাখার সাহস করিস না।

রাগ অভিমানে দুই পরিবার দুই জায়গা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে যায়। তাদের মধ্যে আর কোনো প্রকারের যোগাযোগ থাকে না। সিয়াম একটা ফুড প্রোডাক্ট কোম্পানিতে কাজ করত নিয়মিত। সেখান থেকে তার যা বেতন আসত সেটা দিয়ে টেনেটুনে সংসার চলতে থাকে। যদিও অনেকটা অভাব অনটন ছিল কিন্তু বাড়ি থেকে বেরুনোর সময়ে যে টাকা নিয়ে এসেছিল তা দিয়ে ১ বছরের বাড়ি ভাড়া চলে যাবে এজন্যই অল্প খরচ করে করে সুন্দর ভাবেই তাদের দিন কাটছিল। চলতে ফিরতে কষ্ট হলেও সাইফা এটা মানিয়ে নিচ্ছিল। কিন্তু এই সুখ বেশিদিন টিকেনি।

একদিন রাতে দেরি করে বাসায় ফিরে সিয়াম। সাইফা দরজা খুলে দিতেই পাশ কাটিয়ে ঘরে ঢুকতে নেয় সে। কিন্তু তার শরীর থেকে উড়ে আসা বাজে গন্ধ সাইফার নাক অবদি পৌঁছাতে দেরি করে না। দরজা লাগিয়েই সিয়ামকে জিজ্ঞেস করে , ” তোমার গায়ে এসব কি বাজে গন্ধ, কি খাইছ তুমি?”

সিয়াম আমতা আমতা করে। কোনো উত্তর দিতে না পেরে সাইফার হাত ধরে ফেলে। কাচুমাচু করে বলে, “স্যরি জান আর কোনোদিন খাব না।”

সাইফা রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলে, “এক্ষুনি গোসল করতে যাও। শরীরে এমন গন্ধ থাকলে আমার পাশে ঘুমাতে পারবে না।”

সিয়াম মুচকি হাসে, খাটে পাশ থেকে একটা লুঙ্গি নিয়েই দৌড়ে যায় গোসল খানার দিকে। তাড়াতাড়ি গোসল শেষ করে এসে দেখে সাইফা খাবার নিয়ে বসে আছে। পুটিমাছের ঝোল আর ভাজি করা আলু ভর্তা দিয়ে রাতের খাবার শেষ করে দু’জন। খাওয়া শেষে সাইফা সব গুছিয়ে এসে বিছানার এক কোণে বসে। সিয়ামও তার পাশে বসে অনেকক্ষণ গল্প করে। রাত তখন ১২ টা পেরুতে শুরু করেছে। সিয়াম তার দুইহাতে সাইফার গালদুটো চেপে ধরে। ঠোঁট চুমু দেওয়ার চেষ্টা করতেই সিয়ামকে দূরে ঠেলে দেয় সাইফা, “কি বিশ্রী গন্ধ তোমার মুখে, ছাড়ো আমাকে। ”

সিয়াম মুখ গোমড়া করে বলে, “স্যরি জান। ‘

সাইফার গলার আওয়াজ বেড়ে যায়, ” স্যরি টরি বলে কোনো লাভ নেই। দূরে থাকো আমার থেকে। আজকে একবারও আর আমাকে ছোঁয়ার চেষ্টা করবে না। ”

সিয়াম কানে ধরে বলে, “বলছি তো আর খাব না। ”

সাইফার একই কথা,”বললেই লাভ হবে না। আজকে তুমি দূরে থাকবা এটাই শেষ কথা। আর আককের পর থেকে যদি এসব খাও তবে কোনো দিনও আমাকে টাচ করতে পারবা না।”

সিয়াম ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানায়।

সেদিনের মতো বিছানার দুই পাশে ঘুমালো দু’জন। সাইফা ভেবেছিল সিয়াম হয়তো ঠিক হয়ে যাবে। কখনো আর এসব ছাইপাঁশ খাবে না। কিন্তু সে ভুল প্রমানিত হয়। সিয়াম কয়দিন পর আবার খায় ওসব নেশা জাতীয় জিনিস। কিন্তু তখন বাড়িতে ফেরার অনেক আগে খেতো। পরে ভালো মতো মুখ ফ্রেশ করে বাড়িতে আসত। শুরুতে সাইফা বুঝতে পারেনি, কিন্তু ঠোঁট ও দাঁতের দাগ দেখে আস্তে আস্তে বুঝতে পারে সেও। ঝগড়া শুরু হয় দু’জনের। শুরুর দিকে সিয়াম নিজেকে অপরাধী ধরে নিয়ে বেশ কয়েকবার স্যরি বলে। ছেড়ে দেওয়ার অঙ্গিকার করে বারবার। কিন্তু প্রতিবারই সে ওয়াদা ভঙ্গ করে। আস্তে আস্তে গাঁজার নেশাটা সিয়ামকে অনেক বেশি আক্রান্ত করে ফেলে। গাঁজার সাথে সাথে অন্য কিছু নেশাতেও হাত লাগায় সে।

ধীরে ধীরে তার মস্তিষ্ক বিগড়ে যেতে থাকে। নেশার টাকা যোগাতে গিয়ে সংসারে পুরোদমে অভাব দেখা দেয়। এখন সে অল্পতেই মারধর করে সাইফাকে। আগের “জান” শব্দটা এখন অকথ্য নোংরা গালিতে পাল্টে গেছে।

ঝগড়ার সময় সাইফার শরীরের এমন কোনো অংশ বাদ থাকে না যেখানে লা*থি-ঘু*ষি না লাগে। সিয়াম যখন স্ব-জোরে তার লজ্জা স্থানে লা*থি দেয় তখন দুই সেকেন্ডের বেশি চিৎকার করতে পারে না সে। চিৎকার মুহূর্তের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায়, অজ্ঞান হয়ে একপাশে ঢলে পরে সে। সিয়াম তখন তার পাশেই পায়ের উপরে পা তুলে সিগারেট ফুঁকতে থাকে। ডার্বি সিগারেটের বিষাক্ত ধোঁয়া ছড়িয়ে যায় পুরো ঘরে।

বিকৃত মস্তিষ্কের খুনির মতো সিয়াম তখন অজ্ঞান হয়ে পরে থাকা সাইফার মুখে পানি দিতে থাকে। জ্ঞান ফিরতে ফিরতে যদি সিয়ামের সিগারেট শেষ হয়ে যায় তবে তো ভালো। কিন্তু সিগারেট শেষ হওয়ার আগেই যদি সাইফার জ্ঞান ফিরে। তবে শুরু হয় আরো অকথ্য নির্যাতন। সিয়াম তখন তার মুখ চেপে ধরে। ঠোঁট ফাঁক করে মুখের ভিতরে সিগারেট ধুঁয়া দেয। আর হাসতে হাসতে বলে, “এবার বল মুখে গন্ধ থাকলে আমার কাছে আসবা না। বলস না কেন! বল!”

সাইফার মস্তিষ্ক কাজ করে না। কাশতে কাশতে হাঁপিয়ে উঠে সে। এমন অকথ্য নির্যাতনের জন্যই কী পালিয়ে বিয়ে করেছিল সে! নিজেকেই নিজেকে ধিক্কার দিতে দিতে কাঁদতে থাকে….।

( চলবে ইন শা আল্লাহ)

. #আড়ালে_কে [ #পর্ব- ৩ ] ( ১৮+ এলার্ট )

নাজমুল সাহেব স্ত্রীর কানের কাছে মুখ নিয়ে বলেন “তোর এত্তো দেমাগ কেনরে মা**গী !”
গা*লি শুনে চোখ উল্টে ওনার মুখের দিকে তাকাতে চাইল সোহানা। কিন্তু এক ইঞ্চিও নড়তে পারল না সে। নাজমুল সাহেব আরো জোরে গলা টিপে বালিশের সাথে চেপে ধরল তাকে। সোহানার শ্বাসবন্ধ হওয়ার উপক্রম হলো। সাপের লেজের মতো পা মোচড়াতে শুরু করল সে। নাজমুল সাহেব সেদিকে একবারও খেয়াল করলেন না। এতোটাই নির্জীব ভাবে সোহানার গলা টিপে ধরে রাখল যেন খু*ন না করে থামবেন না আজ।

হঠাৎই দরজায় ঠকঠক শব্দ হলো। নাজমুল সাহেবের যেন হুঁশ ফিরল। সোহানার গলা থেকে হাত সরিয়ে নিয়ে তাড়াতাড়ি দরজা খুলতে গেলেন তিনি। আর এদিকে ছাড়া পেয়ে কাশতে কাশতে হাঁপিয়ে উঠল সোহানা। সে এতো জোরে কাশতে ছিল, যে কেউ ভাববে তার গলা দিয়ে রক্ত বের হবে এখন। সোহানা লম্বা লম্বা নিঃশ্বাস নিয়ে নিজেকে সামলে নেওয়ার পরে দরজা খুললেন নাজমুল সাহেব। দরজার বাইরে ওনার বাবা দাঁড়িয়ে আছে। দরজা খুলতেই বলতে শুরু করলেন, “তাড়াতাড়ি আয় বাইরে দেখ তোর মা কেমন যেন করছে।”

মুহূর্তেই যেন দম বন্ধ হয়ে আসল নাজমুল সাহেবের। দৌড়ে মায়ের রুমে গেলেন তিনি। বয়োবৃদ্ধ নারী আছিয়া খাতুন চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে আর ছটফট করছে। নাজমুল সাহেব দ্রুত পানির জগ থেকে আল্প পানি নিজের হাতের তালুতে নিয়ে মায়ের মাথায় দিল। ভিজা মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল আস্তে আস্তে। ওনার শরীর দ্রুত গরম হয়ে যাচ্ছে, আস্তে আস্তে অজ্ঞানের মতো অবস্থা হয়ে গেল ওনার। নাজমুল সাহেব বুুঝতে পারলেন ওনার মায়ের প্রেশার আবারও বেড়ে গেছে। এতো রাতে এখন গাড়িও সাথে সাথে পাবেন না। আর চিকিৎসাও সব হাসপাতালে পাবেন না। কি করবেন ভেবে না পেয়ে অবশেষে একটা নতুন চকচকে সুঁইয়ের মাধ্যমে কানের লতিতে ছোট ছোট ফুটা করে দিলেন। আস্তে আস্তে গাঢ় লাল র*ক্তের ফোটা গুলো উপচে বেরুতে শুরু করল। বেশ কয়েক ফোঁটা র*ক্ত বেরিয়ে যেতেই একটু স্বাভাবিক হলেন নাজমুল সাহেবের ষাটোর্ধ বৃদ্ধা মা।

এতো রাতে আর হাসপাতালে যাওয়ার কথা ভাবলেন না কেউ। মায়ের প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পন্ন কর ঘরে ফিরলেন তিনি। নিজ ঘরে ফিরে দেখলেন বিছানার উপরে উল্টো হয়ে শুয়ে আছে সোহানা। কাঁদতে কাঁদতে চোখ আর নাকের পানিতে পুরো বালিশ ভিজিয়ে ফেলেছে সে। তিনি বিছানার উপরে একটা হাঁটু রাখতেই ভয়ে লাফিয়ে উঠে সোহানা। খাটের এক কোণে গিয়ে হাঁটু বুকে চেপে বসে থাকে ভয়ে। নাজমুল সাহেব একটু কাছে যেতেই ভয়ে আরো জড়োসড়ো হয়ে যায় সে। তার ঠোঁট, চোখের পাতা তিরতির করে কাঁপতে থাকে।

নাজমুল সাহেব আরো সামনে এগিয়ে গিয়ে দুইহাতে সোহানার গালদুটো চেপে ধরে। অতঃপর মুখে আফসোস সূচক শব্দ করে বলে “আহারে জানটা আমার, এ-কি অবস্থা হয়েছে তোমার! আহ্ বাবুটা কান্না করছ কেন!”

নাজমুল সাহেবের মুখে এসব আদুরে কথা বার্তায় সোহানার ভয় আরো বেড়ে যায়। ভয়ে দেয়ালের সাথে মিশে যেতে চায় সে। নাজমুল সাহেব ঠোঁট উল্টে আফসোসের শব্দ করে বলে, “আহ্ কি হয়েছে আমার বাচ্চাটার এতো ভয় কিসের আমি থাকতে!”

কথা শেষ হতেই সোহানার কোনো উত্তরের অপেক্ষা করে না সে। এক হাতে ধরে টান দিয়ে বিছানায় ফেলে তাকে। নিজেও তার পাশে শুয়ে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরে স্ত্রীকে। সোহানা কি করবে কিছুই বুঝতে পারে না। কি হচ্ছে এসব তার সাথে! নাজমুল সাহেব জোরে চেপে ধরে তাকে। সোহানা নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতেই আরো জোরে চেপে ধরে তাকে। কানের কাছে ফিসফিস করে বলে, ” সোনামনি আমার বাহুর জোর তোর থেকে কম নয়।”

ফিসফিসানি কথাতে সোহানার শরীরের লোম দাঁড়িয়ে যায়। শীত ও ভয়ে দাঁতের পাটি একে অপরের সাথে বাড়ি লাগতে থাকে।

.

চার…
রাত ১২ টার দিকে ঘরে ফিরেছে সিয়াম। চোখ দু’টো উত্তপ্ত লোহার মতো লাল হয়ে আছে। সাইফা কোনো কিছু জিজ্ঞেস করে না, দরজা খুলে এই অবস্থা দেখেই ভিতরে চলে যায় সে। সিয়াম দরজা লাগিয়ে ভিতরের ঘরে ঢুকে। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে, “কিরে ভাত কই! ”

সাইফা কতক্ষণ চুপ করেই থাকে।
সিয়াম আবারও নেশা জড়ানো কন্ঠে বলে, “ভাত কোথায় জিজ্ঞেস করছি না?”

সাইফা নিচু গলায় উত্তর দেয়, “ঘরে কিছুই নেই। বাজার নিয়ে তাড়াতাড়ি ফিরতে বলেছিলাম এজন্যই”।

সিয়াম চিৎকার করে বলে, “আমার কাছে টাকা নাই তুই শোনস নাই? ‘

সাইফা বলে, ” টাকা না থাকলেও চোখ ঠিকই লাল করতে পেরেছো। তুমি তো তাও ধুঁয়া হলেও খাইয়া আসছ। আমি সেটাও খাইনি।”

সিয়াম বসা থেকে উঠে পরে। সাইফার মুখের সামনে এসে বলে, “তোর বাপেরে ফোন দিয়া টাকা আন। ”

সাইফার চোখ বড় হয়ে যায়। সিয়াম এই কথাটা আগে কখনো বলেনি শেষ পর্যন্ত এটাও বুঝি বাকি থাকল না। মাথা নিচু করে উত্তর দেয়, “তুমি ভালো করেই জানো যে আমার সাথে বাড়ির কোনো প্রকার যোগাযোগ নাই। ”

‘ যোগাযোগ নাই তো কি হইছে! যোগাযোগ করবি।”

‘ এটা আমি পারব না। তোমার জন্যই সব কিছু ছেড়ে আসছিলাম আমি। তোমার তো এই সব কাহিনী অজানা না।’

‘ আমি কিছুই শুনতে চাই না। তুই ফোন ও দিবি, যোগাযোগ ও করবি, টাকাও আনবি।”

সাইফা চিৎকার করে বলে, ‘ আমি পারব না। তুুমি এসব ছেড়ে কাজ করতে পারলে কর। আর নয়তো না খেয়ে থাক।’

সিয়ামের মেজাজ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। কথাটা শেষ করার সাথে সাথেই স্ব জোরে একটা থা*প্পড় মেরে দেয় সাইফার গালে। আকস্মিকতায় তাল সামলাতে পারে না সাইফা। বিছানা থেকে ফ্লোরে পরে যায় সে। সিয়াম সে অবস্থাতেই একের পর এক কি’ল ঘু’সি দিতে থাকে সাইফার পিঠে। একটু উঠার চেষ্টা করতেই একটা ঘু*সি সোজা সাইফার মুখে লাগে। ঠোঁট কেটে র*ক্ত পরতে থাকে তার মুখ থেকে।
অঝোরে কাঁদতে শুরু করে সাইফা। কান্নার শব্দ সিয়ামের কানে যেন ত্রিশূল এর মতো বিদ্ধ হতে থাকে। রাগে জোরে একটা লা*থি মারে সাইফার পেট বরাবর। উল্টে গিয়ে ঘরের এক কোণে শুয়ে পরে সাইফা। চিৎকার করে কাঁদতে চায় সে, কিন্তু মুখ দিয়ে কোনো শব্দ বেরুতে চায় না। পেট চেপে ধরে গোঙাতে গোঙাতে কাঁদতে থাকে।

সিয়াম আর সামনে বাড়ে না। সাইফাকে সেভাবে রেখেই ঘর থেকে বের হয়ে যায় সে। প্রায় বিশ মিনিট পর ঘরে ফিরে আসে। হাতে একটা ছোট্ট পলিথিন, তারমধ্যে দুইটা কেকের টুকরো আর একটা রুটি। সাইফা তখনও ঘরের কোণে পরে কাঁদছে।

সিয়াম পলিথিনটা ছুঁড়ে দেয় সাইফার উপরে। রাগে গজগজ করে বলে, ‘তাড়াতাড়ি আমার সামনে থেকে বিদায় হ। তোর কান্দা দেখে মাথায় র*ক্ত উঠতাছি। ‘

সাইফার কিছুই করার থাকে না। খিদায় পেট চোঁ-চোঁ করছে। তারমধ্যে এই খালি পেটেই আবার লা*থি লেগেছে। পেটের ব্যাথায় সোজা হয়ে দাঁড়াতেও পারে না সে। এক হাতে খাবারের পলিথিনটা নিয়ে অন্য হাতে পেট চেপে ধরে কুঁজো হয়ে হাঁটতে হাঁটতে রান্না ঘরে চলে যায় সে। মেঝেতে বসে পলিথিন থেকে একটা কেকের একটা টুকরো বের করে। কাঁদতে কাঁদতে তার গলা শুকিয়ে গেছে। শুকনো গলা দিয়ে কেক নামতে চায় না। অল্প কেকের সাথে এক ঢোকর করে পানিও গিলতে হয় তাকে। পেটের ব্যাথায় চোখ দিয়ে গরম জল গড়িয়ে পরছে, তার সাথে সাথে নাকের পানিও সমানে বের হচ্ছে। নাক-চোখের পানি একসাথে হয়ে মুখে ঢুকে যাওয়ার অবস্থা হয়েছে।

জামার হাতা দিয়ে নাক পরিষ্কার করে সাইফা। নিজের সাথে হওয়া ভয়ানক অত্যাচারের কথাগুলো ভাবতে ভাবতে কাঁদে আর অল্প অল্প খাবার মুখে দেয়। মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয়, সব লজ্জার মাথা খেয়ে বাড়িতে কল দিবে সে। যেভাবেই হোক বাবা-মা অথবা বড় ভাইদের বুঝিয়ে কিছু টাকা আনতে হবে। আর নয়তো এই জাহান্নামের অংশ থেকে বের করে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলতে হবে।

খাওয়া শেষ করে ফ্রেশ হয়ে নেয় সাইফা। সিয়ামের পাশে শোয়ার কোনো ইচ্ছেই নেই তার। তাই একটা পাতলা কাঁথা বিছিয়ে ফ্লোরেই শুয়ে পরে সে। বিষয়টা সিয়ামের নজরে আসতেই বলে, ‘মাটিতে শুয়ে ঠান্ডা লাগাইলে চিকিৎসা কি তোর বাপে এসে করবে? চুপচাপ উপরে আইসা ঘুমা।”

সিয়ামের মুখের উপরে কথা বলার সাহস হয় না তার। চুপচাপ বিছানায় উঠে তার পাশেই শুতে হয় তাকে।

পরদিন সকালে কাজে যায় না সিয়াম। সাইফা তাগাদা দেয়, ‘ঘরে রান্না করার কিছুই নাই। কাজে না গেলেও যেমনে পারো কিছু নিয়ে আসো রান্না তো করতে হবে।’

সিয়াম উত্তর দেয়, ‘পকেটে টাকা নাই, ঘরেও নাই। তোর বাপেরে ফোন দিয়া বল টাকা পাঠাইতে।’

সাইফা না না করতে থাকে। সিয়াম তার কোনো কথাই শুনতে চায় না। চুলের মুঠিতে ধরে সাইফার হাতে মোবাইল দিয়ে বলে, “এক্ষুনি কল দে।”

বাধ্য হয়ে বাবার নাম্বারে কল দিতে হয় তাকে। কয়েকবার রিং হতেই কল রিসিভ করে রফিক সাহেব। জিজ্ঞেস করে, ‘কে বলছেন?’

সাইফা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে, ‘আব্বু আমি সাইফা।’

– ‘ কোন সাইফা? আমি এই নামে কাউকে চিনি না।’

– ‘ আমি তোমার মেয়ে সাইফা। তুমি আমাকে না চেনার ভান করছ কেন আব্বু।’

ওপাশ থেকে কোনো কথা আসে না। রফিক সাহেব ফোন কেটে দিয়ে সাথে সাথেই মোবাইল বন্ধ করে দেয়। সাইফা বারবার কল দেয়। কিন্তু আর সংযোগ দেওয়া সম্ভব হয় না।

সিয়াম তার হাত থেকে মোবাইলটা নিয়ে নেয়। তারপর কানের কাছে চিৎকার করে বলে, “তোর বাপেও তোকে চিনে না? তুই বাইচ্চা থাইকা কি করবি তবে?’

সাইফা চোখ উল্টে তাকায় সিয়ামের দিকে। জিজ্ঞেস করে, ‘কি বলছ এসব?’

সিয়াম উত্তর দেয়, ‘কি বলছি তুই বুঝস না? তুই আজকার ভিতরে টাকা আনবি, তোর ভাইয়েরে ফোন দে এক্ষুনি।’

সাইফা এবার সরাসরি না করে দেয়। সিয়ামের মাথায় যে রক্ত উঠে যায়। চুল মুঠি করে ধরে ঝাঁকাতে থাকে সাইফাকে। সাইফার মাথা ব্যাথা শুরু হয়ে যায়। নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে থাকে সে। শুরু হয়ে যায় দুজনের ধস্তাধস্তি।
ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে সাইফার ঘাড় ধরে দেয়ালের দিকে ধাক্কা দেয় সিয়াম। সাইফা কোনো রকমে নিজেকে সামলে নেয়। সিয়াম আবারও এসে তার চুলে ধরতে চায়। সাইফা এবার উল্টো সিয়ামকে ধাক্কা মারে। সিয়ামের মেজাজ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, নেশা থেকে উৎপন্ন হওয়া বিষাক্ত পোকা গুলো মস্তিষ্কে কামড়াতে শুরু করে। ডান হাতে শরীরের সবটুকু শক্তিতে সাইফার বাম কানে থা*প্পড় দেয় সে। সাইফা নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। খাটের এক কোণে বাড়ি খায় তার মাথা। অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে যায় সে।

সিয়াম তখনও একের পর এক লা*থি দিতে থাকে সাইফার পিঠে। একবারের জন্যও তার নজরে আসে না লাল র*ক্তের ফোয়ারা। র*ক্ত গড়িয়ে যখন মেঝের মাঝখানে চলে আসে তখন সেটা নজরে আসে তার। ভয়ে তার কলিজা শুকিয়ে যায়, ধপাস করে ফ্লোরে বসে পরে সে। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে…..।

( চলবে ইন শা আল্লাহ….)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here