মন_মহুয়ার_নেশা-০৪,০৫

0
590

#মন_মহুয়ার_নেশা-০৪,০৫
#তানজিলা_খাতুন_তানু

(পর্ব_৪)

-ডাক্তার দিদি নদীর ধারে আবারো একটা লা*শ পাওয়া গেছে। এটা মনে ওই নিশির।

কেয়ারটেকারের কথা শুনে মহুয়া চমকে উঠলো।
– কি বলছো এসব।
– হ্যা ডাক্তারদিদি গ্রামের সকলেই তো যাচ্ছে ওইদিকে তাই আমি তোমাকে খবর দিতে আসলাম।
– চলো দেখি।

মহুয়া কেয়ারটেকারের সাথে নদীর তীরের দিকে যায়। সেই প্রথম দিনের মতোই মানুষজনের ভীড় হয়ে আছে। মহুয়া ভীড় ঠেলে সামনে গিয়ে দেখলো একটা মেয়ের লা****শ মুখটা কিছুই বোঝা যাচ্ছে না,, পুরোই থেঁ**ত**লে গেছে। পরনে নিশির আগের দিনের জামাটা। একটা মহিলা কান্না করছে সম্ভবত নিশির মা। নিশান একভাবে লা***শটার দিকে তাকিয়ে আছে কিছু বলার বা করার কিছুই খুঁজে পাচ্ছে না। ইতিমধ্যেই ওইখানে চেয়ারম্যান সাহেব উপস্থিত হলেন…
– এই মেয়ের দা**ফ**নের ব্যবস্থা তাড়াতাড়ি করো।লা**শ বেশিক্ষন রাখা ঠিক নয়।

কথাটা শোনা মাত্রই গ্রামের বাকি লোকজন ভিড় কমাতে লাগলো। শুধুমাত্র কয়েকজন বাদে সকলেই চলে গেছে।

– এই নিশান তোর বোনকে কি এইভাবেই ফেলে রাখবি যা ব্যবস্থা কর।
– এখন কোনো দা**ফ**ন কার্য হবে না। আমার বোনের খু***নের তদন্ত আমি করাবোই,দেখি কে আটকায়।
– নিশান বাড়াবাড়ি করিস না। তোর কি মনে হয় কোনো লাভ হবে এতে।( গ্রামের একজন মানুষ)
– লাভ ক্ষতির হিসাব আমি জানি না,তবে নিশির পো*স্ট**ম*র্টে*ম হবে,পুলিশ কে**স হবে ত**দ*ন্তও হবে।
– তোর কি মনে হয় নিশান ওই শক্তিশালী জানোয়ারদের সামনে আমাদের মতো সাধারণ মানুষরা বাঁ**চ*তে পারবো‌। আমার সোনার নারায়নপুর আজ অ*ভি***শ*প্ত। ( কথাগুলো বলার সময়ে চেয়ারম্যান সাহেবের চোখগুলো ছলছল করছিলো।)

মহুয়া বিষয়টা খেয়াল করলো তবে কারনটা উদঘাটন করতে পারলো না। চেয়ারম্যান সাহেবের কথাতে নিশান একটু শান্ত হলো। নিশানের উদ্দেশ্য চেয়ারম্যান সাহেব কিছু বলবে তার আগেই সেখানে একটা গাড়ি উপস্থিত হয়। এবং গাড়ি থেকে নেমে আসেন এক সুর্দশন পুরুষ পরনে একটা সাদা রঙের শার্ট,, কালো প্যান্ট। চেয়ারম্যান সাহেব ভ্রু কুঁচকে বললো…
– আপনে কে?
– আমি এই গ্রামের নতুন ওসি অর্ক আহমেদ।

কথাটা শুনে চেয়ারম্যান সাহেবের চোখের কোনো একটা হাসির ঝলক খেলে গেলো। অর্ক আবারো বলতে লাগলো…

– এই লাশটির ত**দ**ন্ত হবে আর সেটা আমি নিজে করবো।

অর্ক ফোন করে স্থানীয় পুলিশদের আসতে বললো। তারপরে নিশির লা**শটা নিয়ে চলে গেলো। নিশানের মাকে ওখান থেকে নিয়ে চলে গেলেও নিশান এখনো ওইখানেই বসে ছিলো।মহুয়া ধীর পায়ে নিশানের কাছে গিয়ে বসলো।

– নিশান।

একটা আবেগ, একটা আশ্রয়স্থলের প্রচন্ড দরকার ছিলো নিশানের। নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারলো না জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। বলে ছেলেদের নাকি কাঁদতে নেয় কিন্তু ছেলেরাও তো মানুষ তাদের ওহ কষ্ট হয়।

আচমকা এইরকম কাজে মহুয়ার শিঁড়দাড়া বেয়ে একটা স্রোত বয়ে গেলো। বুকের ভেতরে ধুকপুক করছে আগে কখনোই এতটা কাছে কোনো পুরুষ আসেনি তাই হয়তো নাকি অন্য কিছুর সূচনা ঘটবে।

– নিশান নিজেকে সামলাও। তুমি ভেঙে পড়লো তোমার মাকে কিভাবে কে সামলাবে বলো। আর তুমি তো শক্ত মানষিকতার অধিকারি তাহলে কেন দূর্বল হয়ে পড়ছো। নিশির খু***নীদের শাস্তি দিতে হবে না।

মহুয়া নিশানকে শান্ত করে সোজা থানাতে আসলো। তন্ময় মহুয়াকে দেখেই ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো…
– আপনি এখানে কেন?
– আমার কি আসা বারন নাকি।
– ফাজলামি করেন কেন।
– আপনাদের নতুন ওসি অর্ক আহমেদ আমাকে ডেকে পাঠিয়েছেন।
– গ্রামের ঝামেলায় নিজেকে না জড়ালেই পারতেন।(মুখ কুঁচকে বললো)
– আমি কি করবো আর কি না করবো সেটা আপনার থেকে জানবো না আমি।
– প্রা**নে**র ভয় নেয় নাকি‌।
– শহরের মেয়ে তো তাই ভয়টা একটু কমই আছে। চিন্তা করবেন না আর কিছুদিন তার পরেই এই নারায়নপুরের মেয়ে-বউদের মাঝেও এই সাহসটা থাকবে।

কথাটা বলেই মহুয়া ওসির রুমের দিকে এগিয়ে গিয়ে দরজায় টোকা মারলো।

– মে আই কাম ইন স্যার।
– ইয়েস।

মহুয়া ভেতরে আসতেই অর্ক ওকে বসতে বললো। তারপরে বললো…

– আপনিই মহুয়া হাসান তো।
– জ্বি স্যার।
– কতদিন হলো এইখানে এসেছেন।
– ৪ দিন।
– আপনার কি এই গ্রামের কোনো কিছু চোখে লেগেছে খুব।
– জ্বি। এইখানের অনেককিছুই রহস্যময়।

কিছুক্ষন পুরোপুরি চুপচাপ তারপরে অর্ক আহমেদ বললেন…

– ডাক্তার ম্যাডাম আপনি কি এই হ**ত্যা**র সাথে যুক্ত আছেন। সন্দেহ ভাজন হিসাবে আমি আপনাকে গ্রে**প্তা**র করছি।

কথাটা শুনে মহুয়া কিছুক্ষণ অর্কের দিকে তাকিয়ে হা হা করে হেসে উঠলো। অর্ক মুখ কুঁচকে তাকিয়ে আছে মহুয়ার দিকে।

– কি হলো আপনি এইভাবে পাগলের মতো হাসছেন কেন?
– এই ভাই নাটক অফ কর। তোর নাটক দেখে আমার প্রচুর হাসি পাচ্ছে।

মহুয়া আবারো হাসতে লাগলো। অর্ক উঠে এসে মহুয়ার মাথাতে চাঁটি মেরে বললো…
– এই যে ডাক্তার ম্যাডাম এত হাসি ভালো না,ভুলে যাস না আমি কিন্তু এই থানার ওসি।
– আর আমার হাবি হি হি হি।
– পাগলি একটা।
– ইয়েস তোর জন্য।
– ফাজলামি বন্ধ কর। কেস নিয়ে কিছু কথা বলার ছিলো।
– বল,তবে আমার একটা কথা বলার ছিলো আমি এই লা**শটার পোষ্ট**ম**র্টেম করতে চাই।
– তুই।
– হ্যা আমি।
– কিন্তু তুই তো লা**শ ভয় পাস।
– অর্ক ভুলে যাস না আমি একজন ডাক্তার।
– হুম আচ্ছা তাই হবে তুইই করবি।
– থ্যাঙ্কু।
– আচ্ছা শোন তোর কি মনে হচ্ছে এই সব কাজের সাথে কে যুক্ত।
– দ্যাখ আন্দাজ করতে পারছি না,তুই দ্যাখ ভালো করে।
– হ্যা সেটা তো দেখতেই হবে। তবে আমার একটা বিষয় অদ্ভুত লাগছে।
– কী।।
– আমাকে হুট করেই এই গ্রামে পাঠানো হলো কেন? আমি তো…
– চুপ চুপ এইসব কথা একদম এখানে বা কারোর সামনে বলবি না। দেয়ালের ওহ কান আছে সবাই জানা জানি হয়ে গেলে আমাদের প্ল্যান কখনোই সাকসেসফুল হবে না।
– হুম।
– আমি তাহলে আসছি।
– আচ্ছা সাবধানে যা।

মহুয়া থানা থেকে বের হয়ে সোজা কোয়াটারে যায়।

পরেরদিন…

কালকে নিশির পোষ্ট***ম*র্টে*ম হয়েছে। মহুয়াই করেছে,,

– মহু কি বুঝলি তুই।
– অনেককিছু।
– মানে?
– সময় হলেই জানতে পারবি। এখন আমি আসছি।

মহুয়া নিজের কোয়ার্টারে ফিরে এসে কিছু কাজ করতে থাকে ‌তখনি দরজায় টোকা মারার শব্দ হয়,মহুয়া দরজা খুলে দেখলো কেউ নেয় আর নীচে একটা চিরকুট পড়ে আছে। মহুয়া সেটা খুলে দেখলো তাতে লেখা আছে…

“ডাক্তার সাবধান করছি সময় থাকতে চলে যাও,নাহলে।”

মহুয়া ভালো ভাবেই বুঝলো কেউ তাকে হু*ম*কি দিচ্ছে। মহুয়া চিরকুট টাকে যত্ন করে রেখে দিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কাউকে ফোন করে কিছু বললো। আগামী দিন থেকে শুরু হবে নতুন কিছু, নতুন ল**ড়া***ই।

#চলবে…

#মন_মহুয়ার_নেশা
#তানজিলা_খাতুন_তানু

(পর্ব_৫)

মহুয়া হাসপাতালে বসে রোগী দেখছেন তখনি একজন গুন্ডা টাইপের কিছু লোক এসে হুড়মুড়িয়ে মহুয়ার কেবিনে ঢুকে পড়লো, সকলের মুখেই মাস্ক,তাদের দেখে হাসপাতালের রোগীরা সবাই যে যার মতো বেড়িয়ে গেলো,মহুয়া কিছুই না বুঝে হতবাক হয়ে গেছে। শান্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো…
– আপনারা কে?

দলের মাঝ থেকেই একজন লোক বললো..
– শুনলাম মামনি নতুন এসেছো। তা জানো না এই গ্রামটা কেমন।
– আমি কি জানি আর জানি না সেটা নিশ্চয় আপনাদের বলবো না আপনাদের কিছু বলার থাকলে বলতে পারেন নাহলে আসুন,আমার কাজ আছে।
– কি কাজ করবে আমরাই না হয় করি।

কথাটা বলেই লোকটা মহুয়ার দিকে এগিয়ে আসতে থাকে।

– আপনি এগিয়ে আসছেন কেন?
– নিজের কাজ করতে।
– মানে?
– দেখতেই পাবে।

মহুয়া হাতের কাছে কিছু একটা খুঁজে চলেছে। লোকটাও ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে,তখনি একটি পুরুষ কন্ঠস্বর শুনতে পাওয়া গেলো..
– কি হচ্ছে এখানে?

সকলেই দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিটিকে দেখলো, সাদা রঙের পাঞ্জাবি পড়া একজন যুবক। বয়স ২৭-২৮ এর কাছাকাছি।

– আমি জিজ্ঞেস করেছি কি হচ্ছে এখানে।
– কিছু না এই সব চল।

লোকগুলো সব চলে গেলো। মহুয়ার কৌতুহল আরো বেড়ে গেলো, লোকগুলো এই ব্যক্তিটিকে দেখে চলে গেলো কেন এনার সাথে ওদের কীসের যোগসূত্র।

– আপনি কে?(মহুয়া প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো)
– আমি গ্রামের চেয়ারম্যান সাহেবের শ্যালক জিসান আলম। আপনিই কি নতুন ডক্টর।

মহুয়া আন্দাজ করতে পারেনি চেয়ারম্যান সাহেবের শ্যালক এতটা সুর্দশন পুরুষ। জিসানের কথা শুনে মহুয়া মাথা নাড়লো।

– তা আপনি জানেন
না গ্রামের কথা।
– জ্বি জানি।
– তারপরেও এইখানে আছেন।
– ডাক্তারের কাছে তার ধর্ম হলো মানুষের সেবা করা আর সেটাই আমি করছি।
– খুব ভালো, এইরকম একটা মানুষের সাথে দেখা হয়ে ভালো লাগলো। এখন তো মানুষ নিজ স্বার্থ ছাড়া আর কিছুই বোঝে না।

মহুয়া প্রশ্নটির উত্তর না দিয়ে জিসানের দিকে একটা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো..
– আপনি এখানে কেন এসেছেন।
– আমি …( বলেই একটা হাত বাড়িয়ে দিলেন)

মহুয়া হাতের দিকে নজর দিয়ে দেখলো,হাতের তালু বি*শ্রি ভাবে আঘাতপ্রা**প্ত হয়েছে,সাথে কাঁচের টুকরো ওহ আছে।

– এইটা হলো কীভাবে।
– কাঁচের টুকরো হাতে লেগে গিয়েছিলো।
– কাঁচের টুকরোর সাথে যুদ্ধ‌ করছিলেন নাকি।
– জ্বি না,আপনি একটু ড্রেসিংটা করে দিন না তাহলে আমার খুব উপকার হতো।

মহুয়া আর কিছুই না বলে ওনার হাতে ড্রেসিং করতে লাগলো,তখনি নিশান সেখানে উপস্থিত হয়। মহুয়াকে জিসানের হাতে ড্রেসিং করতে দেখে আর জিসান কে মহুয়ার দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকতে দেখে বুকের ভেতরে চিনচিনে ব্যাথা অনুভব করলো। আর এইসব সহ্য করতে না পেরে ওখান থেকে চলে গেলো।

৭ দিন কেটে যায়,,

এই ৭দিনে মহুয়ার সাথে বারবার জিসানের দেখা হয়েছে নানা বাহানাতে। মহুয়ার রীতিমত স*ন্দে*হ হচ্ছে জিসানের উপরে,তাহলে জিসানই কি এইসব কিছুর সাথে যুক্ত।

মহুয়া হাসপাতাল থেকে ফেরার পথে নিশানের সাথে দেখা হয়, নিশান মহুয়াকে দেখেও না দেখার ভান করে চলে যেতে গেলেই মহুয়া নিশান বলে ডাক দেয়।

– নিশান।

নিশান চেষ্টা করেও মহুয়ার ডাক এড়িয়ে যেতে পারলো না।

– বলুন ডাক্তার ম্যাডাম।
– কি হয়েছে তোমার এইভাবে আমাকে এড়িয়ে চলছো।
– এড়িয়ে যাবো কেন বলুন, আপনি কত বড়ো একজন ডাক্তার আর আমি একজন সাধারন দিনমজুর আমার কি কোনো অধিকার আছে আপনার সাথে কথা বলার।
– তুমি এইভাবে কথা বলছো কেন?
– এমনি।

কথাগুলো বলেই নিশান চলে যায়,, মহুয়া নিশানের ব্যবহারে ,হতবাক হয়ে যায় মহুয়া কখনোই নিশানের সাথে এইসব কথা আশা করেনি।

– এর আবার কি হলো, এইরকম অদ্ভুত কথা বলছে কেন।

অন্যদিকে…

– নিশান নিজেকে শান্ত কর তুই তো জানিস ডাক্তার ম্যাডামের সাথে তোর সাথে যায় না উনি একজন শিক্ষিত মেয়ে আর তুই। এইসব উলটো পালটা চিন্তা বাদ দে,, ডাক্তার ম্যাডাম কোনো শিক্ষিত,প্রতিষ্ঠিত ছেলে ডির্জাভ করে, তোর মনের অব্যক্ত কথাগুলো নিজের মনেই থেকে যাবে সারাজীবন।

নিজ মনে কথা গুলো‌ বিরবির করতে লাগলো নিশান। এই কয়েকদিনে মহুয়ার সাথে জিসানকে বারবার দেখে নিশানের মনে সৃষ্টি হয়েছে নতুন এক যন্ত্র*নাদায়ক অনুভূতি। নিজের অজান্তেই মহুয়াকে নিজের মন দিয়ে দিয়েছে সেটা উপলব্ধি করতে পেরেছে কিন্তু পারলেই বা কী মহুয়ার মতো একজন মেয়ে কখনোই ওকে মেনে নেবে না।

২ দিন পর..

গ্রামে আবারো আ*ত*ঙ্ক । কোনো সাধারন মেয়ে নয় এইবার মহুয়া নিজেই নিখোঁজ। নিশান গোটা গ্রাম তন্ন তন্ন করে খুঁজেও মহুয়ার দেখা পাইনি, অর্ক নিজের সবটা দিয়ে খুঁজে চলেছে কিন্তু সে ব্যর্থ। অর্কের কাছে মহুয়ার বাড়ি থেকে ফোন আসছে কিন্তু অর্ক তাদের কিছুই বলতে পারছেন না। গ্রামের মানুষরা ভয় পাচ্ছে আগের মতো কিছু হবার। কয়েকটা দিনে তাদের ডাক্তার দিদি তাদের কাছে বড্ড বেশি প্রিয় হয়ে গেছে।

– নিশান বাবা আমাদের ডাক্তার দিদিকে পেলে।( গ্রামের একজন বৃদ্ধ মানুষ)
– না দাদু, এখনো ওনার কোনো খোঁজ পাওয়া গেলো না।
– কি হবে আমার দিদিটার আল্লাহ তুমি দেখো।

নিশানকে দেখে সকলেই একটা প্রশ্ন করছে মহুয়াকে কি পাওয়া গেছে। নিশান বরাবরই না বলছে, একই কথা বলতে বলতে আর মহুয়াকে খুঁজে না পেয়ে নিশানের অবস্থা করুণ। নিশান বাড়ি ফিরে আসতেই ওর মা একই প্রশ্ন করলো…
– ডাক্তার ম্যাডামের কোনো খবর পেলি।

নিশানের চাপা রাগটা জেগে উঠলো। রাগে গর্জে ওঠে বললো…
– তোমরা কি আমাকে সবাই ডাক্তার ম্যাডামের চাকর পেয়েছো নাকি উনি কোথায় আমি জানবো। দ্যাখো কোন ছেলের সাথে আছে আমাকে কেউ কিছু জিজ্ঞেস করবে না

কথাটা বলেই নিশান ওর মাকে জড়িয়ে ধরলো। ছেলের কান্ডে নিশানের মা হতবাক, কিছুক্ষণ পর বুঝতে পারলেন নিশান কাঁদছে। উনি নিশান কে এটা নিয়ে ৩ বার কাঁদতে দেখলেন ওর বাবা,বোনের মৃ**ত্যু*র সময় আর এখন। তারমানে কি?

ছেলেকে শান্ত করে উনি বললেন..
– বাবা সত্যি করে বল তো তুই কি ডাক্তার ম্যাডামকে পছন্দ করিস।

নিশান কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর বললো…
– হ্যা মা।
– কি বলছিস বাপ তুই।
– হ্যা মা আমি জানি না এইসব কিভাবে হলো‌, মা আমি তো আমার বোনকে হারিয়েছি আমি মহুয়াকে হারাতে পারবো না, ওহ আমার নাই হোক তবুও যেন ও, সুস্থ থাকে আমাকে এনে দাও না ওকে।

ওনার বুঝতে অসুবিধা হলো না গ্রামের বুদ্ধিমান মানুষ নিশান শহুরে ডাক্তার ম্যাডাম মহুয়াকে পাগলের মতো করে ভালোবেসে ফেলেছে।

– বাবা আমরা তো ওকে খুঁজে বের করতে পারবো না পারলে তুই পারবি তুই চেষ্টা কর। আমি আর চাই না আমার মেয়ের মতো কারোর এই দশা হোক।

অন্যদিকে….

একটা নরম তুলতুলে বিছানায় শুয়ে আছে মহুয়া। পরনে লাইট পিংক কালারের শাড়ি, মুখটা বড্ড মায়াবী লাগছে, প্রথম দেখাতেই যে কারোর নজর কাড়বে। কিছুটা দূরে একটা সোফাতে কয়েকজন লোক বসে আছে, তাদের হাতে মদের গ্লাস।

– শহুরে মা*ল মালটা কিন্তু জোস আছে।
– একদম,, এই মা*লকে ভো*গ না করলে আমার শান্তি নেয়।
– সত্যি জিসান তোমাকে থ্যাঙ্কস এতসুন্দর একটা পরি এনে দেবার জন্য।

জিসান সোফার এককোনে বসে আছে মুখে কোনো হাসি নেয় নিজের বোকামির জন্য আবারো একটা প্রা**ন যাবে।

হাসাহাসির শব্দে মহুয়ার ঘুম ডেঙে যায়। ভোরবেলা জিসান একটা দরকারে ওকে ডেকেছিলো ,তখনি কেউ একজন পেছন থেকে মুখে রুমাল চেপে ধরে আর মহুয়া জ্ঞান হারায়।

মহুয়া কোনো শব্দ না করে চুপচাপ শুয়ে ওদের কথা শুনতে থাকলো।

– কিন্তু একটা সমস্যা তো আছেই।
– কি সমস্যা ভাই।
– আমাদের তো ১০৫ জন মেয়ে লাগবে আর আছে ১০৪ জন। আজকে রাতের মাঝে কিভাবে একটা মেয়ে জোগাড় করবো। আর একটা মেয়ে কম হওয়া মানে আমাদের কিন্তু ১০৪ টা মেয়ে লস হয়ে যাবে।

অনেকক্ষন আলোচনার পরে শেষে সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলো।

– তাহলে এই মেয়েকে পা**চার করে দে। এই মেয়েকে দিয়ে অনেক টাকা কামানো যাবে।

বলেই সবাই মিলে হেসে উঠলো। মহুয়ার মুখেও হাসি ফুটে উঠলো।

#চলবে.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here