স্বামীর_বিয়ে১৫

0
2070

স্বামীর_বিয়ে১৫
#সাখেরীন
অভ্রঃরুহীনির জন্য অপেক্ষা করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম মনে নেই ওয়াশরুমে গিয়ে দেখি রুহীনি নেই। তাই বারান্দায় আসলাম।চাঁদের আলোতে রুহীনির মায়াবী মুখখানা দেখা যাচ্ছে।
রুহীনির পাশে গিয়ে বসলাম।
রুহীনিঃচোখ অফ করে ছিলাম। অভ্রের শরীরের স্মেল আমার নাকে এসেছে এতেই বুঝে গেলাম আমার পাশে অভ্র বসা।
অভ্র আর রুহীনি দুজনেই অনেকক্ষণ চুপ করে রইলো।
রুহীনিঃ( নিরবতা ভেঙ্গে) মেয়েটা কে অভ্র????
অভ্র রুহীনির কথা শুনে চোখ বড় বড় করে ফেললো।
রুহীনিঃ ( অভ্রের দিকে তাকিয়ে) চোখ বড় বড় করলে হবে না….আমার উওর টা চাই। মেয়েটা কে????(একটু জোরেই বললাম)
অভ্রঃরীতিমতো ঘামতে শুরু করলাম। রুহীনির কথা শুনে পায়ের থেকে মাটি সরে গেছে মনে হচ্ছে আমার। কথা বলার ভাষা নেই। কি জবাব দিবো??
রুহীনিঃ কি ভাবছো?? নতুন কোন মিথ্যে বাহানা খোঁজা যায়???
অভ্রঃ নিশ্চুপ…!
রুহীনিঃ ( দোলনায় বসে)বল???
অভ্রঃ ( মনকে শক্ত করে নিজেকে সামলিয়ে) কোন মেয়ের কথা বলছো??
রুহীনিঃ ওহো হো দেখোতো কোন মেয়ে??আমি ইলার কথা বলছি। তোমার বাচ্চার মার কথা বলছি।
অভ্রঃ বেশ অবাক হয়ে রুহীনি দিকে তাকালাম। কিভাবে জানলো ইলার কথা?কেউ বললো নাকি?? আর কেই বা বলেছে রুহীনিকে??( মনে মনে)
রুহীনিঃ ডক্টরের বউ
অভ্রঃ (ভ্রু কুঁচকে রুহীনির দিকে তাকালাম। রুহীনির কথা বোঝার চেষ্টা করছি)ডক্টরের বউ মানে??
রুহীনিঃ ডক্টর বউ মানে…যে ডক্টরের কাছে তুমি ইলাকে নিয়ে চেক-আপ করতে গিয়ে ছিলা। তার বউই আমার কলেজের ফ্রেন্ড ছিলো আর এখনো আছে। সে সব ডিটেইলস সহ আমাকে দিয়েছে ( কথা গুলো বলছি আর রাগে ফুুসছি)
অভ্রঃমাথা নিচু করে আছি। ইলার সাথে আমার যা সম্পর্ক তা দুনিয়াতে কেউ ভালো চোখে দেখবে না।আর আমি রুহীনিকেও কষ্ট দিতে চাইনি। ( মনে মনে)
রুহীনিঃ ইলা ফেশন ডিজাইনার তাই না??
অভ্রঃ হুম।
রুহীনিঃ আর কিছু না বলে চলে এলাম। সোফায় বালিশ নিয়ে শুয়ে পরলাম। চোখ দিয়ে পানি পরেই যাচ্ছে। না আমি কান্না করছি না। এই চোখই সমস্যা পানি পরছেই শুধু চোখ থেকে থামার নাম নেই৷ হয়তো আর থামবেও না।
অভ্রঃ( রুহীনি পিছে পিছে এসে ও সোফায় শুয়ে আছে এটা দেখে বুকটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। রুহীনিকে এখন কিছু বলার আমার সাহস হচ্ছে না। রুহীনির এমন রুপ আমি কখনই দেখি। রুহীনি বারান্দায় ইলার কথা বলার সময় ওর চোখ গুলো লাল হয়ে আছিলো৷আমি আবার বারান্দায় চলে এলাম৷ চোখের কোনায় পানি জমে আছে। ছেলে বলে হয়তো কান্না সহজে আসছে না।
অভ্র রাতটা নির্ঘুমের মধ্যে দিয়ে পার করিয়ে দিলো।
অন্যদিকে রুহীনি কেদেঁ সারা রাত পার করলো।
সব কিছুর একটা সীমা থাকে সেটা রাগ হোক বা ভালোবাসা। কোনো কিছুই সীমাহীন ঠিক নয়। অভ্র সীমা ছাড়িয়ে গেছে।
ভোরের দিকেই কিলংবেল বেজে উঠলো।
রুহীনিঃ এতো ভোরে?? কে আসলো আবার?
অভ্রঃ এতো ভোরে কে আসলো? বারান্দা থেকে বেরিয়ে রুম ডুকতেই দেখি রুহীনি সোফায় নেই বুঝে গেলাম রুহীনি ডোর খুলতে গেছে তারপর নিচে গেলাম গিয়ে যা দেখাল………
রুহীনিঃ ( ডোর খুলতে কউ একজন জড়িয়ে ধরলো আমি ভয়ে পেয়ে গেলাম। মুখটা উঁচু করে দেখি নিহাল) তুইইইইইইই…..
নিহালঃ( রুহীনিকে ছেড়ে) হুম আমি।
অভ্রের সাথে নূর,আর বাকি সবাই নিচে এসে দেখে নিহাল আসছে।
অভ্রের মাঃ নিহাললল তুই আসছিস???
নিহালঃ( হাগ করে) হুম মামনি।
অভ্রঃ রুহীনির এই কাজটা ঠিক করেনি নিহালকেও সব বলে দিয়েছে সমাধান করার আগেই??
নিহালঃ একে একে সবার সাথেই হাগ করলো।
নূরঃ আমি আসছি বলেই তুই এসে পড়লি??
নিহালঃ না আমি রুহীনির জন্য আর আসছি। তুই যে আসছি সেটা আমার জানা ছিল না…!
নূরঃরুহীনির জন্য??
নিহালঃ ( রুহীনির দিকে তাকিয়ে) রুহীনি আমার কলিজা তাই চলে এলাম।
রুহীনিঃ সরি আসলে আমার ফোনের বেটারিটা শেষ হয়ে এসেছিলো তাই অফ হয়ে গিয়ে তাই আর কথা হয়নি। তাই বলে তুই চলে আসবি এভাবে?? আন্টিদের বলেছিস তো??
নিহালঃ জ্বী বলেছি
নূরঃ আমি কিছুই বুঝলাম না। তোর কলিজা মানে??
নিহাল আর রুহীনি একসাথেই বলে উঠলাম বেস্ট ফ্রেন্ড।
নূরঃ ওহ।
অভ্রের মাঃ নিহাল যা ফ্রেশ হয়ে আয় আমি খাবার দিচ্ছি। আর বাকি সবাই ও ফ্রেশ হয়ে আসো।
সবাই যে যার রুমে চলে গেলো।তারপর সবাই এক সাথে নাস্তা করে বাগানের বসে আড্ডা দিতে লাগলো।
রুহীনিঃ লোক দেখানোর হেসে কথা বলছি।সবাই এখন কিছুই বলা যাবেনা।
অভ্র রুহীনির দিকে অনেক বারাবর তাকিয়ে আছে। কিন্তু একবার তাকায়নি।
অভ্র এতে খুব খারাপ লাগছে।
অভ্রঃ রুহীনির ইগনোর করাটা আমার বুকে বাম পাশে ব্যাথা অনুভব হচ্ছে।
নিহালঃনূরের থেকে চোখ ফেরানো যাচ্ছে না। দম আটকে যাচ্ছে আমার। মায়াবী লাগছিল নূরকে।
নূরঃনিহাল বরাবরই তাকিয়েই আছে আমার দিকে কিন্তু কেনো?? আমার কেমন জানি অস্তিত্ব লাগছে।
কিং কিং কিং
অভ্রঃ দেখলাম ইলা ফোন করেছে। রুহীনির দিকে তাকিয়ে দেখি ও আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তাই ফোনটা কেটে দিলাম৷
রুহীনিঃ অভ্রের ফোন আসছিলো তাই না চাইতেও চোখগুলো অভ্রের দিকে তাকালো। দেখি ও আমার দিকে তাকিয়ে আছে তাই চোখ সরিয়ে নিলাম৷
কিং কিং কিং
অভ্রঃ এবারও কেটে দিলাম।
ইলাঃ ফোন ধরছে না কেনো?? আজ একটা গুড মনিং এর মেসেজেও দিলো না কিন্তু কেনো??
কিং কিং কিং
রুহীনিঃ ( অভ্রের হাতের থেকে ফোনটা নিয়ে রিসিভ করলাম।) হ্যালো
ইলাঃ রুহীনি ফোন রিসিভ করছে তাই ফোনটা কেটে দিলাম।
রুহীনিঃ বুঝার আর বাকি রইলো না। অভ্রের হাতে ফোনটা দিয়ে উপরে চলে এলাম।
অভ্রঃ আমি পিছনে পিছনে গেলাম রুহীনির
নিহাল ব্যাপার গুলো নোটিশ করছে।
নিহালঃ কিছু একটা তো হয়েছে ওদের মাঝে কিন্তু কি???
রুহীনিঃ রুমে গিয়ে আলমারি থেকে অভ্রে শার্ট বের করে বেডে রাখলাম৷
অভ্রঃ (রুমে গিয়ে দেখি বেডে শার্ট রাখছে।) রুহীনি আসলে আম সরি। আমি জানি আমার ভুলের ক্ষমা হয় না। তারপর সরি রুহীনি আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনি। ইলার সাথে কিভাবে এতো গভীর সম্পর্ক হয়ে গেছে তা আমি নিজেও জানি না। যখন শুনলাম ইলার পেটে আমার বাচ্চা আমার তখন মনে হয়েছিলো আমি পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ পরক্ষনেই তোমার কথা মনে হতেই ইলাকে পিল এনে দিয়েছিলাম। ইলা প্রথমে না করলেও পরে রাজি হয়েছিলো। কিন্তু যখন আমার সামনে আমার বাচ্চাটাকে মারা জন্য ইলা পিল খেতে যাচ্ছিলো তখন আমিই তা সহ্য করতে পারিনি। ইলার হাত থেকে পিলটা কেড়ে নিয়ে পিলটা ফেলে দিছি। আর তুৃমি তো জানো আমি বাচ্চাদেরকে কত লাইক করি। তাহলে নিজের বাচ্চাটাকে কিভাবে মেরে ফেলি?? আর তুমিও তো আর মা হতে পারবা না তোমার সম্যাসার কারনে। তাই আমি বাচ্চাটাকে সৃকৃতি দিয়েছি ইলাকে বিয়ে করে।।
রুহীনিঃ আমি মা হতে পারবো না বলে তুমি এমনটা করেছো?? আরে আল্লাহ রহমতে আমি তো ভাবছিলাম মামনির জন্মদিনে সবাইকে একসাথে বলবো আমি হতে চলেছি। মামনি – দাদাই, তুমি – বাবা হতে চেলেছো। কিন্তু নিয়তি কি খেলা আমি নিজেই সারপ্রাইজ পেয়ে গেছি। ( মনে মনে)
অভ্রঃ তুমি আমাকে বক, মারো, পুলিশ কেস করো, তারপর আমার সাথে কথা বলো। আমি আর সহ্য করতে পারছি না। তোমার না কথা বলা আমাকে তিলতিলে মেরে ফেলছে ।
রুহীনিঃ রেডি হয়ে ইলার কাছে যাও। ইলার ট্রেস নেওয়াটা এখন একদমই ঠিক হবে না।নাহলে ক্ষতি তাই ইলার কাছে যাও।
অভ্রঃ রুহীনি…..!( খুব অবাক হয়ে গেলাম ওরকথা শুনে)
রুহীনিঃ ইলা তোমার জন্য অপেক্ষা করছে। ( বলেই রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম। ছাদে চলে এলাম। চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পরছে। কি কমতি ছিলো আমার ভালোবাসায় যে তুমি আমায় ধোকা দিলা অভ্র?? কেনো এমন করো আমার সঙ্গে।কেনো কেনো??কান্না করতে করতে হাটুঘেরে মেঝে বসে কান্না করতে লাগলাম।
অভ্রঃ রুহীনিকে কত বার ডাকলাম ফিরেও তাকালো না। একটা নিশ্বাস ফেলে রেডি হয়ে বেরিয়ে গেলো ইলার বাসায় যাবার জন্য।
নিহালঃ শরীর খারাপ লাগছিলো তাই রেস্ট নিতে রুমে আসলাম।
নূরঃ আমি আমার রুমেই যাচ্ছিলাম।
অভ্রের মাঃ নূরররর নূরর
নূরঃ কি হয়েছে মামনি??
অভ্রের মাঃ কফিটা একটু নিহাল দিয়ে দিবি….আমার হাতে অনেক কাজ আছে।
নূরঃ ওকে দাও। ( কফির মগটা নিয়ে নিহালের রুমে গেলাম) আআআআআআ….
নিহালঃ( দৌড়ে নূরের মুখ চেপে ধরলাম) চিল্লাস কেনো??
নূরঃ উমম উমম
নিহালঃ কি বল??
নূরঃ ঈশারায় দেখালো নিহালের হাতের দিকে
নিহালঃ( নূরকে ছেড়ে দিয়ে) এখন বল
নূরঃবড় বড় নিশ্বাস নিচ্ছি আবার নিহালের দিকে চোখ যেতেই দেখি ও খালি গায়ে তাই ঘুরে দাঁড়ালাম।
নিহালঃ( ভ্রু কুঁচকে) কি হয়েছে তোর??
নূরঃ ত তুই খালি গায়ে কেনো??
নিহাল এতোক্ষনে বুঝতে পারলো বুকে হাত দিয়ে নিহাল ও নূরের মত চিল্লিয়ে উঠলো।আআআআআ……
নূরঃদৌড়ে নিহালের রুমের থেকে চলে এলাম।
নিহালঃচিল্লানি দিলাম কেনো হুদাই??
রুহীনিঃ যা ভাবা ভেবে ফেলেছি। আমার আর আমার বাচ্চার ওপরে অভ্রের কোন ছায়া থাকবে নাহ। আমি কখনো পড়তে দিবো না।

( জানি আজকের পার্ট খুবই ছোট হয়েছে। একদিন পর দিচ্ছি তারপরও ছোট। আসলে পারিবারিক নানা সমস্যায় লিখার সময় পাচ্ছি না। মন মানসিকতা বলে একটা কথা আছে যা নেই এখন তাই গল্পটা কয়েক পার্টেই শেষ করে দিবো। )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here