#মন_মহুয়ার_নেশা,১৬,১৭
#তানজিলা_খাতুন_তানু
(পর্ব_১৬)
– মহুয়া এইগুলো পড়ে নাও।
– কি এইগুলো।
নিশান কোনো উত্তর দিলো না,মহুয়া প্যাকেটটা খুলে দেখলো ভেতরে একটা লাল বেনারসি শাড়ি।মহুয়ার মুখটা লাল বর্ন ধারন করলো নিমিষের মধ্যেই।
– এসব কি নিশান।
– যেটা দেখছো সেটাই।
– আমি তোমাকে বিয়ে করবো না।
– বিয়ে আমাদের হয়ে গেছে।
– মানে?
– সেইদিন সেই পেপারটা রেজিস্ট্রি পেপার ছিলো। তুমি আইনমতে আমার বিবাহিত স্ত্রী। তবুও আমি চাইছিলাম ধর্মমতে বিয়ে করতে,নাহলে বিয়েটা শুদ্ধ হবে না।
– আমি তোমাকে বিয়ে করবো না কিছুতেই।
– মহুয়া জেদ করো না, যেটা বলছি ওটা শোনো।
– পারবো না।
– ঠিকাছে, আমি ভালো করে বলছি তুমি শুনছো না,,আমি তোমাকে জোর করবো এটা তোমার জন্য ভালো হবে না কিন্তু।
মহুয়া চুপ করে আছে। নিশান মহুয়ার কাছে এসে আদুরে গলায় বললো…
– মহু প্লিজ সবটা বোঝো।
– ঠিক আছে আমি রাজি তবে আমার একটা শর্ত আছে।
শর্তের কথা শুনে নিশানের কপালে ভাঁজ পড়লো।
– কি শর্ত।
– এই বিয়েটা ততদিন পর্যন্ত থাকবে যতদিন না আমি আমার বাবা মায়ের খু”নীকে খুঁজে পাচ্ছি। যেইদিন খুঁজে পাবো সেইদিনই আমি এই সবকিছু ছেড়ে অনেক দূরে চলে যাবো।
– অনেক দূরে মানে কী?
– দেশের বাইরে।
নিশান রেগে গেলো মহুয়ার কথাতে কিন্তু নিজেকে শান্ত করলো উত্তেজিত না হয়ে। মহুয়াকে নিজের কাছে রাখার জন্য বিয়ে করাটা খুব জরুরি,আর মহুয়াকে নিজের কাছ থেকে আলাদা করবে না কিছুতেই।
– ওকে আমি রাজি। তুমি রেডি হয়ে নাও।
নিশান চলে যেতেই মহুয়া শাড়িটা বের করে নিজের গায়ে ফেলে আয়নার সামনে দাঁড়ালো। ওর মা তো এইভাবেই দেখতে চেয়েছিলো কিন্তু শয়তানরা তো সেই ইচ্ছা পূরন করতে দিলো না। মহুয়ার চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো,নিজের পানিটা নিজের হাতে নিয়ে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো…
– অ”ন্যা”য়কারীদের শাস্তি আমি দেবোই।
নিশান মহুয়াকে ডাকতে এসে চমকে গেলো, লাল শাড়ি গায়ে গহনা,চুলে বেলি ফুলের মালা সবমিলিয়ে মহুয়াকে ভীষন সুন্দর লাগছে,নিশান চোখ ফেরাতে পারছে না। মহুয়া নিশানের মুখের সামনে এসে তুড়ি বাজাতে নিশানের ধ্যান ভাঙ্গলো।
– সুন্দর লাগছে।
– থ্যাঙ্কস।
– চলো তাহলে।
– হুম।
মহুয়া আর নিশান বেরিয়ে পড়লো কাজি অফিসের উদ্দেশ্যে। মহুয়া কাজি অফিসে পৌঁছে চমকে উঠলো, কারন সে তার পরিচিত দুটো মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। মহুয়া একটু বেশিই আবেগ প্রবন হয়ে অর্ককে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো,অর্ক মহুয়ার অনেক দিনের পুরানো বন্ধু,জীবনের অনেকক্ষেত্রেই ওর পাশে ছিলো তাই হয়তো ওকে দেখে কান্নাটা চেপে রাখতে পারলো না।
– মহু কান্না করছিস কেন কান্না করিস না,দ্যাখ আমরা আছি তো।
নিশি এসে মহুয়াকে সামলাতে থাকলো।
– দিভাই এবার কিন্তু তুমি আমার ভাবি হবে।
মূলত নিশি কথাটা বললো মহুয়ার মনটা অন্যদিকে ঘোরানোর জন্য,মহুয়া কিছু না বলে মেকি হাসলো।অর্ক মহুয়াকে আর নিশানকে তাড়া দিলো..
– চলো তাড়াতাড়ি দেরি হয়ে যাচ্ছে।
– হুম চলো।
নিশি মহুয়াকে সাথে করে কাজি অফিসে ঢুকলো,একজন বৃদ্ধ মতো মৌলাবি মানুষ বসে আছে,নিশানদের আসতে দেখেই বললো…
– আপনারা এসে গেছেন,আমি আপনাদেরই অপেক্ষা করছিলাম।
– হুম,আপনি বিয়ে পড়াতে চালু করুন।(নিশান)
– কিন্তু রেজিস্ট্রি।
– আগেই করা আছে ।
– আচ্ছা
কাজি সাহেব বিয়ে পড়াতে শুরু করলেন, মহুয়া চুপচাপ বসে আছে কিছুই বলছে না। মহুয়াকে কবুল বলতে বলার সময়ে মহুয়া কিছুই না বলে চুপ করে আছে, নিশি ইশারায় কবুল বলতে বললো। মহুয়া কিছুক্ষণ চুপ করে কবুল বললো।
কাজি সাহেব বিয়ে পড়িয়ে দিয়ে বললেন…
– আপনারা এখন বৈধভাবে স্বামী স্ত্রী হয়ে গেলেন, দোয়া করি আপনারা সুখে শান্তিতে থাকুন।
নিশি মহুয়াকে জড়িয়ে ধরলো।
– দিভাই দেখবে তুমি অনেক সুখী হবে,আমার দাদাভাই তোমাকে অনেক ভালো রাখবে।
কথার পরিপ্রেক্ষিতে মহুয়া কিছুই বললো না শুধুমাত্র হাসলো। অর্ক নিশানকে মহুয়ার চোখের আড়ালে নিয়ে গিয়ে বললো….
– তোমাকে আমি কি বলে ধন্যবাদ দেবো আমার জানা নেয়, তুমি সবসময় মহুয়াকে ভালো রেখো এটাই আমার চাওয়া।
– কথা দিলাম আমি আগলে রাখবো মহুয়াকে। সবসময় সব বিপদে ঢাল হয়ে দাঁড়াবো।
অর্ক জড়িয়ে ধরলো নিশানকে।নিশান মহুয়াকে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসলো, নিশি আর অর্কও আসলো।
– একমিনিট একমিনিট।
– কি হলো নিশি।(নিশান)
– নতুন বউ বাড়িতে ঢুকবে এমনি এমনি নাকি।
– মানে?(অর্ক)
– দাদাভাই তুমি আমার নতুন বউকে কোলে করে নিয়ে আসো।
– আমি।
– না অন্যকেউ। তাড়াতাড়ি তোলো।
– আচ্ছা।
নিশান নিশির কথামতো মহুয়াকে কোলে তুলে নিলো,নিশি আর অর্ক চেঁচিয়ে উঠলো। ফুল ওহ ইতিমধ্যে ওইখানে উপস্থিত হয়েছে,সবকিছু দেখে ওর চোখ ছানাবড়া।
মহুয়াকে নিশান সোফাতে বসিয়ে দিয়ে দুষ্টুমি ভরা কন্ঠে বলে উঠলো…
– উফ বাবা মহুয়ার কি ওয়েট আমার কোমড় ব্যথা হয়ে গেলো।
মহুয়া কপাট রাগ নিয়ে বললো…
– আমি কি তোমাকে বলেছিলাম আমাকে কোলে তুলতে।
– না একদম না।
– তাহলে।
– বারন ওহ তো করোনি তাই না।
নিশান কথাটা বলতেই অর্ক আর নিশি সহমত প্রকাশ করে হেসে উঠলো,মহুয়া রাগ নিয়ে নাক ফোলাতে লাগলো।
ফুল সবার দিকে একনজর তাকিয়ে নিশানের দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো, নিশান বের হবার আগে ফুল বাড়িতে ছিলো না, কলেজের ভর্তির জন্য বাইরে বের হয়েছিলো।
– দাদাভাই কি হচ্ছে এইগুলো আর মহুয়া দিদির গায়ে বেনারসি কেন?
ফুলের কথা শুনে সকলে একে অপরের দিকে তাকাতে লাগলো। মহুয়া আর নিশান ছাড়া ফুলের আসল পরিচয় ওরা কেউ জানে না,আর ফুলকে দেখেও মনে হচ্ছে না ওহ এই বাড়ির কাজের মেয়ে,মনে হচ্ছে এই বাড়ির মেয়ে। নিশি নিশানের তাকিয়ে বললো…
– কে ওহ।
– আমার আরেক বোন(নিশানের সহজ সরল উত্তর)
ফুল কিছুই বললো না কারন জানে নিশান সবসময়েই বোন বলেই পরিচয় দেয়। নিশান ফুলের কাছে গিয়ে বললো….
– মহুয়াকে আর দিদি বললে চলবে না এইবার থেকে ভাবি বলবি।
ফুল অবাক কন্ঠে মহুয়ার দিকে তাকিয়ে বললো…
– সত্যি।
– হুম।
ফুল মহুয়াকে জড়িয়ে ধরলো। মহুয়া সবার আনন্দ দেখে অবাক হলো, সকলে এতটা খুশি মহুয়াকে নিশানের সাথে জুড়ে যেতে তাহলে কি পাঠকরাও কি খুশি?
নিশি অর্ককে টেনে ধরে এক সাইডে নিয়ে আসলো, অর্ক আর নিশির মাঝে একটা ভালো বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।
– কি হলো এইভাবে আমাকে টেনে নিয়ে আসলে কেন?(অর্ক)
– বলছি যে, দাদাভাই আর দিভাই সরি সরি ভাবির আজকে বাসর রাত আর আজকে কি এমনি এমনি যেতে দিলে হয়।
– মানে।
– মানে আবার কি ওদের বাসরের ব্যবস্থা করো।
– কিন্তু হুট করেই কিভাবে।
– বেশি করতে পারবো না ঠিকই তবে কিছু না কিছু করতে তো হবেই।
– কি চলছে তোমার মাথাতে বলো।
নিশি অর্ককে নিজের প্ল্যানটা বললো।
– দারুন।
– তাহলে চলুন,
– ওকে।
নিশি অর্ককে নিয়ে চলে গেলো। ফুলকে বলে গেছে কোনোভাবেই যেন মহুয়া আর নিশান ঘরের দিকে না যায়।
নিশি আর অর্ক নিশানের ঘরটাকে মোমবাতি দিয়ে খুব সুন্দর করে সাজিয়ে দিলো।
– দারুন হয়েছে, ঘরটা দেখে মনে হচ্ছে আমি নিজেই বিয়ে করে বাসর করতে চালু করে দিই।
– তো বিয়ে করে নিন।
– মেয়ে পাইনি,পেয়ে গেলেই আমি বিয়ে করে নেবো।
কথাটা বলেই অর্ক হাসতে হাসতে বের হয়ে গেলো। নিশি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকলো অর্কের যাওয়ার দিকে।
#চলবে..
নিশান আর মহুয়ার বিয়ে দিয়ে দিলাম,সকলের নেমন্তন্ন থাকলো ওদের বিয়েতে সকলে দোয়া করে দেবেন ওর জন্য ?
বিঃ দ্রঃ… ভুল ত্রুটি মার্জনীয়।
হ্যাপি রিডিং ?
#মন_মহুয়ার_নেশা
#তানজিলা_খাতুন_তানু
(পর্ব_১৭)
নিশি মহুয়াকে নিশানের ঘরে বসিয়ে দিয়ে দুষ্টুমি ভরা কন্ঠে বললো…
– নাও এইবার ভালো করে বাসর করো।
মহুয়া ঘরটাকে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো। মোমবাতি দিয়ে সাজানোর কারনে ঘরের সৌন্দর্যটা কয়েকগুন বেড়ে গেছে। মহুয়ার জীবনেও এই রাতটা স্পেশাল হতো যদি সবকিছু স্বাভাবিক ভাবে হতো, কিন্তু এখানে যে কোনটাই স্বাভাবিক নয়,না এই বিয়েটা আর না এই বাসররাত।
নিশি মহুয়াকে বসিয়ে রেখে নিশানকে একপ্রকার জোর করেই এই ঘরে পাঠায়,নিশান খুব ভালো করেই জানে মহুয়া কখনোই এই বিয়েটা স্বাভাবিক ভাবে নেবে না এইমুহুর্তে। আর হয়তো স্বাভাবিক ভাবে না নেওয়াটাই স্বাভাবিক,নিশান তো মহুয়ার সুরক্ষার জন্য এই কাজটা করেছে, বৈধভাবে নিজের অধিকারের মধ্যে রেখেছে। মহুয়া রায় বলুক ওহ এই দায়িত্ব পালন করবেন, মহুয়াকে সবসময় আগলে রাখবে ।
নিশান ঘরে ঢুকে দেখলো মহুয়া উদাসীন ভাবে বসে আছে,একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আলমারি থেকে শাড়ি নিয়ে মহুয়ার সামনে ধরে বললো…
– ফ্রেশ হয়ে নাও সারাদিন এককাপড়েই ছিলে।
মহুয়া বাধ্য মেয়ের মতো উঠে গিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলো। এই নিশ্চুপ মহুয়াকে নিশানের একদম ভালো লাগছে না, বড্ড অচেনা লাগছে,নিশান নিজের মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে নিলো যে ভাবেই হোক মহুয়াকে স্বাভাবিক করে তুলবে।
শক্ত মনের মহুয়া একটার পর একটা আঘাতে ভেঙ্গে গুড়িয়ে গেছে। বাবা মাকে হারিয়ে নিশানের প্রতি অভিমান করে ছিলো ঠিকই তবে নিশানের হুট করে বিয়ে করাটাকে কিছুতেই সমর্থন করতে পারছে না।
মহুয়া ওয়াশরুমের দরজা খুলে বের হয়ে আসতেই সময় নষ্ট না করে নিশান ভেতরে চলে যায়। বাইরে এসে দেখলো মহুয়া গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। গায়ের কাঁথাটা ঠিক করে দিয়ে নিশান সোফাতে শুয়ে পড়লো।
পরেরদিন সকালে.
কোনোরকম ডাকাডাকি ছাড়াই মহুয়ার ঘুমটা ভেঙে যায়। ভোরের সৌন্দর্য টাই আলাদা,একদম অন্যরকম। মহুয়া বারান্দায় দাঁড়িয়ে প্রান ভরে নিঃশ্বাস নিলো,গ্রামে থাকতে থাকতে ভোর বেলা ওঠা, হাঁটতে বের হওয়া এইগুলো অভ্যাসে পরিণত হয়ে গিয়েছিলো।
শহরের শুরুটা হয় অন্যরকম ভাবে আর গ্রামের শুরুটা হয় আলাদা রকম করে। পাখির কিচিরমিচির শব্দ,মোরগের ডাক, ঘাসের উপর শিশিরের বিন্দু একটা আলাদা রকমের পরিবেশ সৃষ্টি করে।
মহুয়া ফ্রেশ হয়ে নীচে নেমে আসলো, উদ্দেশ্য কফি করে খাওয়া। বসার ঘরে এসে দেখলে ফুল উঠে পড়েছে,আর বসার ঘরে সোফাতে বসে ঢুলছে। মহুয়ার ভ্রু কুঁচকে গেলো এত ভোরে ফুল এইখানে বসে আছে কেন? কৌতুহল বশত সামনে আগাতেই আরেকদফা অবাক হয়ে গেলো, অর্ক পা ছড়িয়ে সোফায় শুয়ে আছে,আর নিশি সোফাতে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে, এইদিকের সোফাগুলো একটা সাইটে হওয়াতে মহুয়ার প্রথমে ওদের উপরে নজর পড়েনি,সামনে সোফায় বসা থাকা ফুলের দিকে নজর পড়েছে। তিনজনের অবস্থা দেখে মহুয়া আর নিজেকে সামলে রাখতে পারলো না অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো।
অর্কের ঘুম খুবই সজাগ, হয়তো সিক্রেট অফিসার বলে তাই। কারোর হাসির শব্দ পেয়ে ঘুমটা পালিয়ে গেলো অর্কের, বসার ঘরে হালকা একটা আলো জ্বলছে, ভোরের ওহ আলো খুব একটা ফোটেনি আর ফুটলেও দরজা জানালা বন্ধ থাকাতে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করছে না। মহুয়ার খোলা চুল,পরনে শাড়ি আবছা আলোয় হাসতে থাকা রমনীকে দেখে অন্তরাত্মা কেঁপে উঠলো, আমতা আমতা করে বলে উঠলো…
– ভূতত।
এইখানেই শেষ নয় রীতিমতো চেঁচিয়ে উঠলো ভূত ভূত করে। অর্কের চেঁচামেচিতে নিশি আর ফুলের ঘুম গায়েব হয়ে গেছে, সামনে তাকিয়ে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছে। নিশি অর্ককে বললো..
– কি হলো আপনারা মাঝরাতে ভূত ভূত বলে চেঁচামেচি করছেন কেন?
– সামনে দ্যাখো বুঝতে পারবে ভূত।
অর্কের কথা শুনে ওরা দুজন সামনে তাকালো। মহুয়া অর্কের চেঁচামেচি শুনে হাসি বন্ধ করে দিয়েছিলো কিন্তু যখনি বুঝলো অর্ক ওকে ভূত ভাবছে তখন আর হাসি চেপে রাখতো পারলো না আবারো অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো। হাসির শব্দ পেয়ে নিশি আর ফুল একে অপরকে জড়িয়ে ধরে,,ভূত ভূত চেঁচিয়ে উঠলো। এতে মহুয়ার হাসির পরিমান আরো তীব্রতর হচ্ছে। একদিকে অর্ক,নিশি আর ফুলের ভয়ের চিৎকার আর অন্যদিকে মহুয়ার হাসির শব্দ গোটা বাড়িকে কাঁপিয়ে তুললো।
চেঁচামেচির শব্দ শুনে নিশানের ঘুম ভেঙে যায়। নিজের ঘর থেকে বসার ঘরে আলো জ্বালাতে দেখলো নিশি আর ফুল একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কাঁপা কাঁপি করছে, অর্ক ওহ এককোনে বসে বিরবির করছে। আর মহুয়া হেসেই চলেছে একদমে, নিশানের চোখ মহুয়ার দিকে আটকে গেলো,মুগ্ধ হয়ে মহুয়ার হাসি দেখতে লাগলো, সরলতার হাসি যে হাসিতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা নেয়, মন খারাপ নেয়, নাটকীয়তা নেয়। এইভাবেই তো নিশান মহুয়াকে চেয়েছিলো, মহুয়া সবসময়ে হাসি খুশি থাকুক এটাই তো নিশান চাই।
নিশানের হঠাৎ খেয়াল আসলো কেন এত চেঁচামেচি হচ্ছিল তাই এইসব চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিয়ে অর্কের দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো…
– কি হয়েছে এইভাবে চেঁচামেচি করছিলে কেন?
অর্ক ভীত কন্ঠে বললো…
– ভূত।
নিশান অর্কের কথা শুনে টাস্কি খেলো হাই লেভেলের, ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো…
– কোথায় ভূত।
অর্ক মহুয়ার দিকে না তাকিয়েই আঙুল দেখিয়ে দিলো। নিশানের চোখ চরকগাছ একজন হাই লেভেলের সিক্রেট অফিসার বলছে ভূত দেখেছে ভাবতেই নিশানের চোয়ালে শক্ত হয়ে গেলো। রাগে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো..
– অর্ক।
ধমক খেয়ে অর্কের জ্ঞান ফিরে আসলো। সামনে তাকিয়ে দেখলো নিশান আর মহুয়া দাঁড়িয়ে আছে, মহুয়ার চুলগুলো হাওয়াতে উড়ছে, ঠোঁটের কোনে দুষ্টুমির হাসি।
নিশান মহুয়ার দিকে একনজর তাকিয়ে অর্ককে প্রশ্ন করলো..
– কি হয়েছে এইখানে,তোমার সবাই এত ভোরে বসার ঘরে কি করছিলে।
নিশি আর ফুল স্বাভাবিক হয়ে বসেছে। নিশানের প্রশ্ন শুনে একে অপরের দিকে তাকাতে লাগলো।
– কি হলো উত্তর দাও।
নিশি গলা পরিষ্কার করে বললো…
– কালকে রাতে আড্ডা দিতে দিতে এইখানেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ঘুম ভাঙলো অর্কের চিৎকার শুনে আর সামনে তাকিয়ে দেখি একজন মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর হাসছে।
কথাটা বলার সময়ে নিশি সহ অর্ক আর ফুল ঢোক গিললো। ওদের অবস্থা দেখে মহুয়া আবারো হেসে উঠলো। নিশান সহ বাকিরা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে মহুয়ার হাসির কারন উদঘাটন করার চেষ্টা চালাতে লাগলো।
– কি হলো পাগলের মত হাসছিস কেন?
অতিরিক্ত হাসির চোটে মহুয়ার চোখ দিয়ে পানি পড়া শুরু করেছে, কোনোরকমে নিজের হাসিটা চেপে রেখে বললো…
– ভূত দেখেছিলি তোরা।
আবারো হাসতে শুরু করলো মহুয়ার। অর্ক বুঝলো মহুয়া ওকে নিয়ে মজা নিচ্ছে,রাগে মুখটা লাল হয়ে গেলো। দাঁতে দাঁত চেপে বললো…
– না হেসে কি বলবি বল।
– অর্ক তুই এত ভীতু জানতাম না তো, আর কোনদিক থেকে আমাকে তোর ভূত মনে হয় শুনি।
মহুয়া প্রথম কথাটা হাসতে হাসতে বললেও শেষের কথাটা গম্ভীর কন্ঠে বললো। মহুয়ার কথাশুনে আরো কারোরই বুঝতে অসুবিধা হলো না ভূত নয় স্বয়ং মহুয়াই ছিলো রমনী টি। অর্কের নিজের উপরেই রাগ হচ্ছে নিজের বোকামির কথা ভেবে। কিন্তু কিছুতেই সবার সামনে মানলে চলবে না তাই মহুয়ার দিকে এগিয়ে গিয়ে মহুয়ার মাথাতে চাঁটি মেরে বললো…
– তুই তো ভূতই। শ্যাওড়া গাছের পে”ত্মী তুই।
– অর্কের বা”চ্চা তোকে তো আমি ।
– থাক তুই পেত্মী আমি গেলাম।
অর্ক মহুয়াকে আর কিছুই না বলতে দিয়ে তাড়াতাড়ি করে ওইখান থেকে চলে গেলো। নিশি আর ফুল ওহ তাড়াতাড়ি ওখান থেকে সরে গেলো। ওরা চলে যেতেই মহুয়ার মুখটা গম্ভীর হয়ে গেলো।
নিশান ওর কাছে দাঁড়িয়ে বললো…
– হাসিটা পুরোই পে”ত্মীদের মতো ছিলো। মনে হচ্ছিল এক্ষুনি হৃদয়টা নিয়ে চ”লে যাবে।
কথাটা বলেই নিশান ওহ প্রস্থান করলো। মহুয়া নিশানের যাবার দিকে বিরবির করে বললো…
– এটা নাম ছিল না বদনাম ছিলো!
#চলবে