মন_মহুয়ার_নেশা,২২,২৩

0
400

#মন_মহুয়ার_নেশা,২২,২৩
#তানজিলা_খাতুন_তানু

(পর্ব_২২)

আহমেদ ভিলার সকলেই চমকে উঠলো মানুষটির কথা শুনে। নিশানের মা অবাক চোখে তাকিয়ে বললো…
– আপনি জানতেন মৃন্ময় বিয়ে করেছে?
– হ্যা আমি জানতাম, মৃন্ময় আমার পারমিশন নিয়েই বিয়েটা করেছে,আমার যেহেতু কোনো সমস্যা নেয় তাহলে আর কারোরই সমস্যা হবার কারন নেয় আশা করি।

সকলেই মাথা নীচু করে নিলো। তার কথার উপরে আর কারোরই কোনো কথা বলার অধিকার নেয়।

– বড়ো বউমা মহুয়াকে নিয়ে ভেতরে এসো।
– জ্বি বাবা।
– আর একটা কথা সকলে মনে রাখবে মহুয়ার কোনো অসম্মান আমি বরদাস্ত করবো না, মহুয়া এই বাড়ির বড়ো নাতবউমা তাকে তার যোগ্য সম্মান দেবে আশা করি।

মহুয়াকে ভেতরে নিয়ে যাওয়া হলো, মহুয়া সকলে সালাম দিলো। সকলে সালাম জবাব দিলেও মহুয়া বুঝলো এই বাড়িতে মানিয়ে নিতে একটু সময় লাগবে ওর এত সহজে কেউ ওকে মেনে নিতে পারবে না আর না নেওয়াটাই স্বাভাবিক,এইভাবে বিয়ে করে নেওয়াটাকে কোনো পরিবারই মানতে পারবে না।

মহুয়াকে একটা মেয়ে একটা ঘরে নিয়ে আসলো। মহুয়া ওনাকে আগেই দেখেছিলো ,সেদিন দেখতে যাওয়া মানুষদের মাঝে নিশানের মা,উনি আর একটা মেয়ে যাকে এখনো পর্যন্ত মহুয়ার নজর পরেনি।

– দ্যাখো মহুয়া আমি বুঝতে পারছি তোমার খারাপ লাগছে, কিন্তু বিষয়টা একটু বুঝতে হবে তোমাকে আর সেই দিনের ঘটনার জন্য মা তোমার উপরে রেগে আছেন, ওইভাবে সরাসরি না বলে দেওয়াতে মায়ের ইগোতে হার্ড হয়েছে,মা এত সহজে তোমাকে মানবে না,তুমি তো শিক্ষিত,, বুদ্ধিমতি মেয়ে তুমি পারবে না সবাইকে মানিয়ে নিতে।

শেষের কথাটা মেয়েটা অনুরোধে স্বরে বললো।মহুয়া কিছুটা হলেও স্বত্বি পেলো, অন্তত এই বাড়ির একটা মানুষ তার পক্ষে আছে, সারাদিন বোর হবে না এটাই অনেক ওর কাছে।

– আমি নিজের সবটা দিয়ে চেষ্টা করবো।
– ভালো মেয়ে। আর শোনো আমি তোমার বড়ো ননদ মিতালী। এই বাড়ির বড়ো মেয়ে বুঝলে। আমাকে মৃন্ময় দিদিভাই বলে তুমিও বলবে ঠিকাছে।
– আচ্ছা দিদিভাই।
– এখন ফ্রেশ হয়ে নাও।
– আচ্ছা।

মহুয়া ফ্রেশ হয়ে এসে দেখলো নিশান ঘরে বসে আছে।

– সরি মহু। আমার জন্য তোমাকে এতগুলো কথা শুনতে হলো।
– না ঠিকাছে সবটাই আমার কপাল (তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো)

নিশান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো…
– চলো দাদু তোমাকে নীচে ডাকছে।
– আচ্ছা।

নিশান মহুয়াকে নিয়ে দাদুর ঘরে আসলো। মহুয়া সালাম দিলো,উনি সালামের জবাব দিয়ে বললো…
– দিদিভাই তোমার খারাপ লাগছে তাই না।
– না দাদুভাই ঠিকাছে।
– সবটাই তো বুঝতে পারছো মন খারাপ করো না। সবটা মানিয়ে নিতে তোমাকেই হবে। তোমাকেই সবার মন জয় করতে হবে।
– জ্বি।
– দাদুভাই আমাকে সবটাই বলেছে, আমি জানি এইখানের কোনো কিছুতেই তোমার দোষ নেয় তুমি পরিস্থিতির শিকার আর কিছুটা এই পাগলের জন্য গন্ডগোল হয়েছে। ( নিশানের কানটা চেপে ধরে)

– আহ দাদুভাই লাগছে তো।
– ধরেছি তো লাগার জন্যই, সেইদিন ওইরকম না করলে তো সকলেই ভালোভাবেই দিদিভাইকে মেনে নিতো তাই না।
– সরি ( মুখটা কাঁচুমাচু করে)
– সরি বলে লাভ নেয় ,, কিভাবে সবাইকে মানাবি সেটাই ভাব আর সবাইকে তো সবটা বলতেও পারবি না তাই না।
– এটাই তো সমস্যা দাদুভাই।
– চিন্তা করিস না উপরওয়ালা যা ঠিক করে রেখেছেন তাই হবে।
– হুম।

দাদুভাই উঠে গিয়ে আলমারি থেকে গহনার বাক্স নিয়ে আসলেন। তারপর সেইগুলো মহুয়ার হাতে দিয়ে বললেন…
– এইগুলো তোমার দাদীমার উনি ওনার বড়ো নাত বউমার জন্য এইগুলো রেখে গেছেন,আজ থেকে এইগুলো সব তোমার।

মহুয়া একপলক গহনার বাক্স গুলোর দিকে তাকিয়ে তারপর নিশানের দিকে তাকিয়ে দাদুভাই কে বললো…
– দাদুভাই এইগুলো আমি নিতে পারবো না।

নিশান আর দাদুভাই দুজনেই চমকে উঠলেন। দাদুভাই গম্ভীর কন্ঠে বললো…
– কেন?
– যেইদিন এই বাড়ির সকলে আমাকে বাড়ির নাতবউমা হিসাবে মেনে নেবে সেইদিনই আমি এই গহনাগুলো নেবো।

নিশানের ঠোঁটের কোনে একটা হাসির ঝলক দেখা গেলো। মহুয়ার কাছ থেকে এটাই আশা করেছিলো নিশান। দাদুভাই মহুয়ার কথা শুনে দ্বিমত প্রকাশ করলেন না বরং সহমত হয়ে বললেন…
– আমি জানি তুমি খুব তাড়াতাড়িই এই কাজটা করবে।
– দোয়া করবেন দাদুভাই।
– সবসময়ই করি।

নিশান কে আহমেদ বাড়ির সকলে মৃন্ময় বলে ডাকে। নিশানের দাদুর ৩ ছেলে। নিশানের বাবা বড়ো ওনার তিন সন্তান নিশানের দিদি মিতালী, নিশান আর ছোট বোন মিতু। মেজ ছেলের তিন মেয়ে , আর ছোট ছেলের এক ছেলে সাহান আর এক মেয়ে সোহা।

একান্নবর্তী পরিবার , সকলেই মিলেমিশে থাকেন। বাড়ির বড়ো বউ মানে নিশানের মা খুবই শক্ত প্রকৃতির বাড়ির কর্তা নিশানের দাদুভাই হলেও বাড়ির সকলে সদস্যকে একসুতোতে বেঁধে রেখেছে নিশানের মা। নিশানের মাকে সকলেই খুব সম্মান করে আর ভালোবাসে। নিশানের মেজমা একটু সাদাসিধে টাইপের, বড়ো জা’য়ের ভক্ত, দিদির মতো সম্মান করে কখনোই কোন কিছুতেই অবাধ্য হয়নি। নিশানের ছোট মা একটু অন্যরকম টাইপের মানুষ, প্রেমের বিয়ে প্রথমে বাড়ির কেউ না মানলেও‌ পরে মেনে নেয়, বড়ো জায়ের শাসনটা খুব একটা ভালো চোখে দেখেন না। আবার তিনভাই এর মাঝে খুব মিল । একান্নবর্তী পরিবার মানেই অনেকগুলো মানুষের ভালোলাগা, খারাপ লাগা, সুখ-দুঃখ, হাসিখুশি সবটাই মিলে মিশে থাকাকেই তো‌ বলে একান্নবর্তী পরিবার।

মহুয়া দাদুভাইয়ের ঘর থেকে বেরিয়ে রান্নাঘরের দিকে তাকালো। সকলেই মিলেমিশে রান্না করছে,কারোর মুখেই কোনো হাসি নেয় কারনটা হয়তো মহুয়া।

মহুয়া একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। মিতালী ওর কাঁধে হাত রাখতেই মহুয়া চমকে উঠলো।

– কি দেখছো।
– না দেখছি আমার কারনে কারোর মুখে হাসি নেয়।
– একদিন দেখবে তুমিই সকলের মুখের কারন হবে।

মহুয়া চুপ করে আছে কিছু বলছে না।এইভাবেই কেটে যায় কয়েকদিন ,, কিছুই স্বাভাবিক ভাবে গড়ে উঠেনি,মহুয়াকে কেউ মেনে নেয়নি। ভালোভাবে কথা পর্যন্ত বলেনি।

মহুয়া সকালে ঘুম থেকে উঠে রান্নাঘরে গিয়ে চা করলো‌ সবার জন্য।

নিশানের মা ঘুম থেকে উঠে রান্নাঘরে মহুয়াকে দেখে রেগে গেলেন।

– এই তুমি তোমার সাহস কিভাবে হলো আমার রান্নাঘরে আসার।
– আসলে মা আমি সবার জন্য চা বানাচ্ছিলাম।
– তোমাকে কে পারমিশন দিয়েছে।

মহুয়া ভালো ভাবেই বুঝলো চুপ করে থেকে কোনো লাভ নেয় আর না শান্ত কন্ঠে কিছু বললে কেউ বুঝবে। এতদিন অনেক চেষ্টা করেছে শান্ত ভাবেই সবাইকে মানানোর কিন্তু কেউ মানেনি তাই আর মানাবে না জোর করে সবটা আদায় করে নেবে।

– কি হলো চুপ করে আছো কেন? কথা বলো।
– আমাকে কেউ পারমিশন দেয়নি মা।
– তাহলে তুমি কোন সাহসে আমার রান্নাঘরে এসেছো,এখুনি এই রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে যাও।
– আমি কারোর পারমিশন নিয়ে রান্নাঘরে আসিনি, আমি আমার অধিকার নিয়ে এই বাড়িতে এসেছি আমার অধিকার আছে এই বাড়ির প্রতিটা জিনিসের প্রতি তাই এই বাড়ির রান্নাঘরে আসার অধিকার আমার আছে।
– অধিকার কিসের অধিকার।
– এই বাড়ির পুত্রবধূর অধিকার মা।
– তোমার সাহস দেখে আমি অবাক হচ্ছি ,,তুমি আমার মুখে মুখে তর্ক করছো।
– তর্ক করছি না শুধু সত্যি টা বলছি আর আমি এতটাও অবুঝ নয় আমি একজন প্রতিষ্ঠিত মেয়ে, তাই কারোর অপমান সহ্য করবে এটা ভাববেন না মা।
– মৃন্ময় মৃন্ময় দেখে যা তোর বউ এর সাহস দেখে যা।

নিশানের মায়ের চিৎকারে সকলেই রান্নাঘরের সামনে উপস্থিত হলো।

#চলবে….

প্রতিবাদী মহুয়া ব্যাক ??
সকলের রেসপন্স চাই কিন্তু।

ভুল ত্রুটি মার্জনীয়।
হ্যাপি রিডিং ?

#মন_মহুয়ার_নেশা
#তানজিলা_খাতুন_তানু

(পর্ব_২৩)

মহুয়ার দিকে সকলে তাকালো। মহুয়ার সকলের দৃষ্টি বুঝতে‌ পেরে বলে উঠলো…

– দাদুভাই আমি মায়ের সাথে তর্ক করিনি আমি শুধুমাত্র আমার অধিকার বুঝে নিতে চেয়েছি।।
– মানে?( দাদুভাই)
– আমি রান্নাঘরে এসেছি বলে মা চেঁচামেচি করছিলেন আমি শুধু বলেছি এটা আমার অধিকার।।
– বড়ো‌ বউমা আমার মনে হয় না মহুয়া কোনো ভুল করেছে,মহুয়ার সম্পূর্ণ অধিকার আছে রান্নাঘরে আসার।। মহুয়া।
– জ্বি বলুন।।।
– আমি বলছি আজকের সমস্ত রান্নার দায়িত্ব তোমার। আজকে আহমেদের বাড়ির অন্য কেউ নয় নতুন নাতবউমা রান্না করবে কি পারবে তো মহুয়া।
– জ্বি দাদুভাই পারবো।।

দাদুভাইয়ের কথার উপরে আর কেউ কথা বলতে পারলো না। মহুয়া সকলের জন্য নাস্তার‌ ব্যবস্থা করে রান্নার জন্য জোগাড় করতে লাগলো।

সকলেই প্রচন্ড পরিমানে বিরক্ত সবকিছু নিয়ে।

দুপুরে..

খাওয়ার টেবিলে সকলেই থমথমে মুখে বসে আছে। নিশানের মায়ের ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও শশুড় মশাইয়ের ইচ্ছাতে খাবার টেবিলে বসেছে। সকলকে মহুয়া খেতে দিলো। দাদুভাই খাবার গালে তুলে নিয়ে বলে উঠলেন…
– এটা কি রান্না করেছো মহুয়া।

দাদুভাইয়ের এমন কথা শুনে সকলে চমকে উঠে মহুয়ার দিকে তাকালো কেউ এখনো পর্যন্ত খাবার গালে তোলেনি তাই কি হয়েছে সেটা কেউ বুঝে উঠতে পারছে না। মহুয়া ভয়ে ভয়ে বললো…
– কেন দাদুভাই।
– পুরোই আমার মায়ের হাতের রান্নার স্বাদ পেলাম এতদিন পর কারোর হাতের রান্নায়।

মহুয়ার মুখের কোনো হাসির ঝলক দেখা গেলো। সকলেই তৃপ্তি সহকারে খাবার খেলো, নিশানের মা মুখে বিরক্ত প্রকাশ করলেও রান্না খেয়ে কিছুটা খুশি হলেন।

বিকালে…

সকলে বসে আছে, পাড়ার কয়েকজন মেয়ে আসলো মহুয়াকে দেখার জন্য। মিতালী মহুয়াকে ডেকে নিয়ে আসলো।

মহুয়াকে দেখে একজন মহিলা বললো…
– সবই ঠিক আছে ভাবি কিন্তু মনে হচ্ছে মেয়ের বয়স ভালোই হয়েছে।

মহুয়ার মুখ কুঁচকে গেলো এইরকম কথা শুনে। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলো কিছু একটা বলবে তখনি নিশানের মা বলে উঠলেন…
– দিদি আমার ছেলের বয়সটাও কিন্তু কম হয়নি। ছেলে হিসাবে আমার বউ হয়েছে, আমি নিশ্চয় আমার আধ বয়সী ছেলের জন্য ১৮ বছরের মেয়ে আনবো না।
– ভাবি আমি এইভাবে বলতে চাই নি।
– আপনি কিভাবে বলতে চেয়েছেন আমি জানি না,আমি সত্যি কথাটা বললাম আর একটা কথা কি জানেন আমার বউমা একজন ডক্টর,তার প্রতিষ্ঠিত হতে সময় লেগেছে তাই বিয়ে করতেও দেরি হয়েছে। আমি বুঝতে পারি না আমাদের সমাজের মানুষগুলোর চিন্তাভাবনা এত নীচ কেন বুঝি না। বয়স হয়েছে তো কি হয়েছে, আপনার ছেলের জন্য তো অল্প বয়সী মেয়ে এনে ছিলেন কি হলো তার পরিনাম।

মহিলাটি চুপ করে গেলো। মহুয়া নিজের শাশুড়ির এই রূপ দেখে চমকে উঠলো। সত্যি ওর ভাবনার বাইরে ছিলো ওইভাবে ওর শাশুড়ি মা ওকে সার্পোট করবে।

মহিলা গুলো মুখ কালো করে চলে যায়। নিশানের মা মহুয়ার সামনে এসে বললো,

– কথাগুলো বললাম বলে ভেবো না আমি তোমাকে মেনে নিয়েছি। তুমি এই বাড়ির বউ তাই আমি চাই না তোমাকে কেউ অপমান করুক তাই কথা গুলো বললাম। আর একটা কথা মাথাতে রাখবে নিজের সম্মান নিজেকেই রক্ষা করতে হবে কেউ তোমার সম্মান রক্ষা করবে না উল্টে অসম্মান করার সুযোগ খুঁজবে।

মহুয়া একটার পর একটা শক খাচ্ছে। মহুয়া বুঝলো তার শাশুড়ি মুখে বললেও তাকে ভালোবাসে,তাই তো ওর অসম্মান হওয়া থেকে রক্ষা করলো।

অন্যদিকে…

– আমি এসে গেছি মহুয়া তোর জীবনে ঝড় তোলার জন্য তৈরি থাক। (ক্রিশ)

২ দিন পর…

মহুয়া বাড়ির সকলের মন আসতে আসতে জয় করে নিতে শুরু করে দিয়েছে। বাড়ির সকলের প্রিয় হয়ে উঠেছে, হাসপাতাল সংসার সবটাই সমান তালে চালিয়ে যাচ্ছে।

মহুয়া রোজকার দিনের মতো সকালে সকলের জন্য চা করে দিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। সকলের জন্য চা করাটা মহুয়ার রোজকার ডিউটি হয়ে গেছে।

– গুড মর্নিং এভরিওয়ান।
– গুড মর্নিং মিসেস আহমেদ। আপনি চলে এসেছেন ভালো করেছেন আজকে একটা নতুন ডক্টর জয়েন হচ্ছে সেটা আপনি জানেন তো।
– নতুন ডক্টর।
– হ্যা।

মহুয়া এইসব চিন্তা মাথা থেকে বাদ দিয়ে রোগী দেখাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। মহুয়ার কেবিনের দরজায় টোকা পড়লো…
– মে আই কাম ইন ডক্টর।
– ইয়েস। কি সমস্যা বলুন।
– হৃদয়ের সমস্যা।

গলাটা চেনা শুনে মহুয়া মাথা তুলে তাকিয়ে দেখলো নিশান দাঁড়িয়ে আছে বুকে হাত দিয়ে।

– কি হয়েছে তোমার এইভাবে বুকে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছো কেন?
– বুকের ভেতরে ব্যথা করছে খুব।

মহুয়া উঠে দাঁড়িয়ে নিশানের কাছে এসে বললো…
– কি হয়েছে দেখি হুট করে ব্যথা করছে কেন, কি খেয়েছিলে তুমি,খুব কম ব্যথা করছে।
– আমার বউটা আমার উপরে আর নজর রাখছে না তাই আমার বুকের ব্যথাটা বেড়ে গেছে।

মহুয়া রাগী চোখে নিশানের দিকে তাকালো..
– তুমি ফাজলামি করছো আমি সত্যি ভাবলাম।
– চিন্তা নেয় আমি এত সহজে তোমাকে ছাড়ছি না।
– জানি তো আমাকে জ্বালানোর জন্যই তোমার জন্ম।
– বুঝে গেছো তাহলে।
– একদম এখন যাও আমার কাজ আছে আর এটা হাসপাতাল এইখানে তোমাকে থাকতে হবে না।
– ঠিকাছে বাই ।

নিশান বের হতে গিয়েও পেছনে ফিরে এসে মহুয়ার কোমড় টেনে নিয়ে কপালে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিয়ে মুচকি হেসে চলে গেল। মহুয়া নিজের কপালে হাত বুলিয়ে মুচকি হাসলো,

– পাগল একটা।

আবারো দরজায় টোকা পড়লো। মহুয়া ভেতরে আসতে বললো…
– কেমন আছিস মহু।

মহুয়া চমকে উঠলো চেনা কন্ঠস্বরের ডাকটা শুনে।

– ক্রিশ তুই।
– খুশি হসনি আমাকে দেখে।
– না সেটা নয়, তোকে এইভাবে আশা করিনি।
– আমাকে কেন আশা করবি তুই তো আমার সাথে কোনোরকমের যোগাযোগ রাখতে চাসনি।
– আসলে সেটা নয় ক্রিশ, পরিস্থিতি এটাই ছিলো সরি।
– ঠিকাছে।
– কেমন আছিস বল।
– ভালোই তুই, তোর বরের খবর কি?
– আমার বিয়ের কথা তুই জানিস।
– হুম। তা বললি না তো কেমন আছে সে।
– ভালোই আছে। তুই বিয়ে করবি কবে?
– যাকে ভালোবাসতাম সেই তো মেনে নিলো না আবার বিয়ে করার কি আছে।
– অন্য মেয়ে কি পৃথিবীতে নেয় নাকি।
– আছে কিন্তু সে তো একটাই।

মহুয়া আর কিছু বললো না। ক্রিশ মহুয়াকে কিছু বলতে না দিয়ে মহুয়াকে নিয়ে কেবিনের বাইরে আসলো।

হসপিটালের হেড এসে ক্রিশকে সকলের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো। ক্রিশ এই হসপিটালের নতুন ডাক্তার শুনে মহুয়া চমকে উঠলো। মনের কোনে একটা খুঁতখুঁত করছে।

মহুয়া গভীর চিন্তায় পড়ে গেলো। মহুয়ার মনের কোনে একটা প্রশ্ন জমা হতে থাকলো…
– ক্রিশ এতদিন পর কেন আমার জীবনে পুনরায় ফিরে আসলো কি উদ্দেশ্য ওর। আমার নতুন করে কোনো ঝামেলার সৃষ্টি হবে না তো?

মহুয়া হসপিটাল থেকে বাড়ি না ফিরে নিশি দের বাড়িতে আসলো। নিশি আর ওর মা আজকে সকালেই শহরে চলে এসেছে, সবটাই অর্ক জানিয়েছে। মহুয়াকে দেখে নিশি আর নিশির মা খুব খুশি হলো।

– দিভাই তুমি এসেছো আমি খুব খুশি হয়েছি।
– আন্টি বাড়ি পছন্দ হয়েছে আপনার।
– তোমার পছন্দ করা আর পছন্দ হবে না এটা কিভাবে হয় বলো। তোমার বসো আমি কিছু করে আনি।

নিশির মা ভেতরে চলে গেলো। নিশি মহুয়াকে চিন্তিত হতে দেখে বললো…
– কি হয়েছে দিভাই চিন্তিত লাগছে কেন?
– জানি না নিশি আমার না খুব আনইজি ফিল হচ্ছে মনে হচ্ছে আবারো নতুন করে ঝামেলা আসতে চলেছে।
– এসব কি বলছো দিভাই।
– হ্যা নিশি আমার মনটা বড্ড কু ডাকছে।
– চিন্তা করো না সব ভালো হবে।
– হুম।

#চলবে…

ভুল ত্রুটি মার্জনীয়।
হ্যাপি রিডিং ?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here