মন_মহুয়ার_নেশা,২৪,২৫

0
403

#মন_মহুয়ার_নেশা,২৪,২৫
#তানজিলা_খাতুন_তানু

(পর্ব_২৪)

মহুয়াকে চিন্তিত দেখে নিশি অর্ককে ফোন করে আসতে বললো। কিছুক্ষণের মধ্যেই অর্ক চলে আসলো।

– তুই ?
– হ্যা নিশি ফোন করে বললো তুই কোনো কারনে খুব চিন্তিত আছিস তাই আসতে বললো।

মহুয়া রাগী চোখে নিশির দিকে তাকালো। নিশি মহুয়ার দৃষ্টি দেখে বললো…
– আমি যায় গিয়ে দেখি মা কি করছে।

নিশি তাড়াতাড়ি কেটে পড়লো ওইখান থেকে, অর্ক ওর দিকে তাকিয়ে বললো…
– আহ মহু এইসব নিয়ে রাগারাগি করিস না, বল না কি হয়েছে। কী নিয়ে চিন্তিত তুই।
– ক্রিশ ফিরে এসেছে।
– মানে?

অর্ক কৌতুহল চোখে মহুয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। অর্ক ক্রিশকে ভালো করেই চিনতে মহুয়ার সূত্র ধরে।

– ক্রিশ আমাকে পছন্দ করে।
– হ্যা তাতে কি হয়েছে।
– বিষয়টা আমি বুঝতে পেরে ৩ বছর আগে নারায়নপুর গ্রামে ওইসব ঘটনা ঘটার পর ক্রিশের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিই ,, এতগুলো দিন ক্রিশের সাথে আমার কোনো যোগাযোগ ছিলো না আজকে হুট করেই আমার হসপিটালে ডক্টর হিসাবে জয়েন করেছে আমার মনটা বড্ড কু ডাকছে অর্ক।

অর্ক মহুয়ার দিকে তাকালো। মহুয়াকে চিন্তিত দেখে অর্কের নিজের খারাপ লাগছে মহুয়াকে অনেক দিন থেকে চেনে মহুয়াকে বি”ধ্বং”স্ত অবস্থায় খুব কমই দেখেছে।

– মহু চিন্তা করিস না উপরওয়ালা তোর সাথে আর কোনো অ’ন্যা’য় করবে না।

মহুয়া একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো…
– কেসটার কি খবর অর্ক।
– সবটাই নিশান দেখছে আমি এইসবের কিছু বলতে পারছি না ঠিক মতো। তবে একটা কথা বলতে পারি
– কি?
– আমার মনে হচ্ছে পা”চা’রকা’রী চ’ক্রে’র সাথে নিশানের কোন যোগসূত্র আছে।
– মানে?
– সন্দেহ হলো, আমার আন্দাজ যদি ভুল না হয় তাহলে তোদের সামনে বিশেষ করে নিশানের সামনে খুব বি’প’দ।

মহুয়ার বুকটা কেঁপে উঠলো।

– দ্যাখ মহু আমি তোকে চিন্তিত করার জন্য কথাগুলো বলছি না আমার সন্দেহ থেকেই কথাগুলো বলছি, নিশান কেসটা থেকে আমাকে দূরে রাখলেও আমি খোঁজ খবর রাখছি এই বিষয়ে। আঙ্কেল জানতে পেরেছিলেন বলেই ওনাকে শে’ষ করে দেওয়া হয়েছে সেখানে যখন নিশান এই কেসটা নিয়েছে তখন ওর কাছেও অনেক তথ্য এসেছে সেই সূত্র অনুযায়ীই নিশানের ওহ প্রা”ন সং’শ’য়ের মাঝে আছে।।

মহুয়া কিছু বলার মতো ভাষা খুঁজে পেলো না ,শান্ত হয়ে চুপচাপ বসে পড়লো।

মহুয়া বাড়ি ফিরলো প্রচন্ড পরিমানে চিন্তিত হয়ে। কিছুই ভালো লাগছে না অর্কের কথাগুলো বারবার কানে বাজছে। মহুয়া কে চিন্তামগ্ন দেখে নিশান বললো…

– কি হয়েছে মহু তোমাকে এইরকম লাগছে কেন?

মহুয়া নিশানের দিকে তাকিয়ে আহত দৃষ্টিতে বললো…
– ৩ বছর আগের ঘটনা কি আমার পিছু ছাড়বে না নিশান।

নিশান অবাক হলো অনেকটাই মহুয়াকে এই কথা বলতে দেখে।

– কি হয়েছে মহু হঠাৎ করে তুমি এই কথা বলছো কেন?
– আমি আর পারছি না নিশান, ওই ঘটনার জন্য আমি আজকে অনাথ হয়ে গেছি আর সেই ঘটনার জন্য আমি তোমাকে হারাতে কিছুতেই পারবো না তুমি ছাড়া আমি ম’রে যাবো নিশান।

মহুয়া নিশানকে জড়িয়ে ধরলো। মহুয়ার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে, নিশানের শার্ট ভিজে যাচ্ছে তবুও নিশান কিছু বলছে না মহুয়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরছে ও না আর না মহুয়াকে শান্ত হতে বলছে।

অনেকক্ষন কেটে যায়…

মহুয়া স্বাভাবিক হয়ে নিশানের কাছ থেকে সরে যায়। চোখের পানি মুছে নিয়ে বললো…
– পর নিশান আসলে আবেগী হয়ে পড়েছিলাম একটু।

মহুয়া একপ্রকার অভিমানেই চুপ করে গেলো নিশানের চুপ করে থাকা ওর মনে আঘাত করেছে সেটা ভালো করেই উপলদ্ধি করতে পারলো নিশান।

– তোমাকে কেন চুপ করতে বা শান্তনা দিলাম না জানো মহুয়া।

মহুয়া নিশানের দিকে তাকালো। সরল দৃষ্টির মানে বুঝতে নিশানের অসুবিধা হলো না ,মহুয়ার দৃষ্টি বারেবারে নিশানকে বলছে কেন তুমি আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলে না নিশান কেন আমাকে বললে না আমি আছি তো তোমার পাশে সবসময়‌ নিশান হাসলো। তারপরে মহুয়ার দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিলো, মহুয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলার ক্ষমতা ওর নেয়। ভালোবাসার মানুষটির চোখের দিকে তাকালে যে যেকোন শক্ত মনের মানুষই দূর্বল হয়ে যায়, নিশান ওহ হয়ে যাবে।

– মহুয়া তোমাকে একটা কথা বুঝতে হবে, আমি বা অন্য কেউই কিন্তু তোমার সাথে সারাজীবন থা’কবে না তোমাকে একাকেই সারাজীবন ল’ড়া’ই করে থাকতে হবে। তুমি একজন প্রতিষ্ঠিত ডাক্তার তোমাকে এইভাবে দূর্বল হওয়া মানায় না।

মহুয়া তাচ্ছিল্যের হাসলো…
– ডাক্তার হলেও আমি একজন মানুষ নিশান। একজন র’ক্তে মাং”সে গড়া মানুষ, আমার ভালোলাগা খারাপ লাগা অনুভূতি সবকিছুই আছে। একটা মেয়ের কাছে তার বাবা মা আর তার স্বামী অনেক মূল্যবান হয় আমার কাছেও তুমি অনেক মূল্যবান নিশান। বাবা মাকে হা”রিয়ে”ছি তোমাকে হা’রা”নোর ক্ষমতা আমার নেয় আমি চাই তূমি আমার বাবা মায়ের কে’স”টা ছেড়ে দাও নিশান।

নিশান মহুয়ার দিকে তাকালো। মহূয়ার এই সরল স্বীকারোক্তি নিশানের কাছে একটু অদ্ভুত লাগলো।

– মহু তোমার কি হয়েছে আজকে এইসব কথা বলছো কেন?
– নিশান আমি রাগের বশে জেদের বশে তোমাকে নিজের অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছি। আমি আর নিজের সাথে নিজে যু’দ্ধ করতে পারছি না আমি হে’রে গেছি নিশান আমি হে’রে গেছি তোমার ভালোবাসার কাছে।

মহুয়া শক্ত করে নিশানকে জড়িয়ে ধরলো,আজকে আর কোনো বাঁধা নেয় ওদের মাঝে। মহুয়া নিজের রাগ অভিমান সবটা সরিয়ে রেখে নিজে থেকে ধরা দিয়েছে নিশানের কাছে, নিশান মহুয়াকে জড়িয়ে ধরলো।

– নিশান আমি তোমাতেই পূর্ন হতে চাই আমাকে তোমার সাথে মিশিয়ে নাও যাতে কেউ কখনো না আমাকে তোমার কাছ থেকে আ’লা’দা করতে পারে।
– মহু তুমি কি সবটা ভেবে বলছো।
– হ্যা নিশান আমি ভেবেই বলছি।

মহুয়ার সরল স্বীকারোক্তির পর নিশানের আর কিছুই বাঁধা থাকলো না ,, পরম আবেশের সাথে মহুয়াকে ভালোবাসার পরশে পরশে ভরিয়ে দিতে থাকলো। তাদের দুজনের ভালোবাসা মিলেমিশে এক হয়ে গেলো। পূর্নতা পেলো আবারো একটা ভালোবাসা।

অন্যদিকে…

– কি করছো নিশি?

নিশি ফেসবুকে ঘোরাঘুরি করছিলো তখনি অর্কের মেসেজ দেখে মাথাতে দুষ্টুমি খেলে গেলো।

– এই তো একটা ছেলের সাথে কথা বলছিলাম।

নিশির এইরকম মেসেজ দেখে অর্কের ভ্রু কুঁচকে গেলো। কপাল কুঁচকে বিরবির করে বললো…
– আমার সাথে বাবুর কথা বলার সময় নেয় আর এইদিকে অন্য ছেলের সাথে ঠিকই কথা বলছে। এটা আবার নিশির বয়ফ্রেন্ড নয় তো।

অর্ক নিশিকে মেসেজ করলো…
– বয়ফ্রেন্ড নাকি।
– আরে না ,তবে হতে পারে। ছেলেটা বেশ কেয়ারিং আমার বেশ খেয়াল রাখে প্রতিদিন মেসেজ দেয় নিয়মিত।

অর্ক নিশির মেসেজটা সিন করে, রিপ্লাই না করে সোজা কল করলো। নিশি অর্কের কলটা রিসিভ করে বললো…
– কি হলো এতরাতে কল করলেন কেন?
– ছেলেটা কে?

অর্কের অবস্থা দেখে নিশির প্রচন্ড পরিমানে হাসি পাচ্ছে, কিন্তু কিছুতেই হাসা যাবে না হাসলেই বি’প’দ।

– এখন বলা যাবে না সময় হলে সকলকেই জানাবো। এখন অনেক রাত হয়েছে পরে কথা বলবো বাই বাই।

নিশি অর্ককে কিছু বলতে না দিয়ে ফোনটা কেটে দিয়ে হাসতে লাগলো। অর্ক কিছুই না বুঝে হতভম্বের মতো কানে ফোন দিয়ে বসে থাকলো।

অপরদিকে….

ক্রিশ মহুয়ার ছবির সামনে বসে সিগারেট টানছে। তখনি একটা ফোন কল আসলো…
– হ্যালো কে?

অপর পাশের কথা শুনে ক্রিশের কপাল কুঁচকে গেলো।

– কি বলছেন আপনি এসব!

#চলবে…

নিশান আর মহুয়ার মিল করিয়ে দিয়েছি মিস্টি দাও সবাই??

ভুল ত্রুটি মার্জনীয়।
হ্যাপি রিডিং ?

#মন_মহুয়ার_নেশা
#তানজিলা_খাতুন_তানু

(পর্ব_২৫)

ক্রিশ ব্যক্তিটির কথাতে চমকে চমকে উঠতে লাগলো।

– এতে আপনার স্বার্থ কী?
– আমার কি স্বার্থ সেটা না জানলেও চলবে তবে তোমার স্বার্থ অনেক আছে, তুমি তোমার ভালোবাসার মানুষ মহুয়াকে পাবে।
– আপনি কে বলুন তো। আপনি আমার সম্পর্কে এতকিছু জানলেন কিভাবে।
– আমি তোমার শুভাকাঙ্ক্ষী। মহুয়াকে তোমার সাথে মিলিয়ে দেবাই আমার কাছ।
– আমাকে এতটা বোকা ভাববেন না আপনার কিছু তো স্বার্থ আছে সেটা বলুন।
– আমার স্বার্থ কি সেটা তোমার না জানলেও চলবে আর একটা কি জানো, তোমার মহুয়াকে আমি আমার স্বার্থে এই পৃথিবী থেকে স’রাতে ও দুইবার ভাববো না কিন্তু তুমি যদি চাও মহুয়াকে বাঁ’চাতে পারো।

ক্রিশ চমকে উঠলো। ভেবে উঠতে পারলো না কি করবে।

– সময় নাও ক্রিশ,ভেবে উত্তর দিয়ো। আশা করি মহুয়াকে হা’রা’নোর মতো বোকামি করবে না। যদি উত্তর হ্যা হয় তাহলে ..কালকে বিকালে…….. এই ঠিকানায় চলে এসো। আর হ্যা খবরদার চালাকি করার চেষ্টা করবে না ,,, মনে রেখো তোমার উপরে আমার সবসময়েই নজর আছে।

ক্রিশকে ভাবনার জগতে রেখেই লোকটি ফোনটা কেটে দিলো।

পরেরদিন সকালে…..

মহুয়ার ঘুম ভেঙে দেখলো নিশানের বুকে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে, একরাশ লজ্জা মহুয়াকে জড়িয়ে ধরলো। নিশানের কাছ থেকে সরে গিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লো,আর কালকের ঘটনা মনে করে লজ্জায় লাল হতে থাকলো।

ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখলো নিশান তখনও ঘুমের মাঝে।‌ মহুয়া নিশানকে না তুলে সোজা রান্নাঘরে গিয়ে সকলের জন্য খাবার তৈরি করতে লাগলো।

মিতালী অর্থাৎ নিশানের বড়ো দিদি মহুয়ার পাশে দাঁড়িয়ে বললো…
– কি গো মহুয়া আজকে তোমাকে এতটা খুশি লাগছে কেন?
– কই না তো।( ঘাবড়ে গিয়ে)
– উহ। আচ্ছা কি রান্না করছো।
– এই তো…

মিতালী মহুয়ার‌ সাথে গল্প করতে লাগলো। মহুয়ার একটা বিষয় একটু অবাক লাগলো,, এতদিন এই বাড়িতে আছে কিন্তু মিতালীর স্বামীকে একবার ওহ দেখেনি আর না মিতালী শশুড়বাড়ি গেছে। মিতালীর ছেলে হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করছে, এই বাড়িতে সবকিছুই স্বাভাবিক থাকলেও মিতালীর বিষয়টা একটু বেশিই অস্বাভাবিক।

সারাটা দিন ভালো ভাবেই কেটে যায়। মহুয়া হাসপাতাল থেকে ফিরে রান্নাঘরের দিকে যেতে গেলেই নিশানের মা বললো…
– মহুয়া তুমি রান্নাঘরে কেন?
– আসলে মা সকলের জন্য রান্না করতাম।
– তোমাকে রান্না করতে হবে না তুমি আমার সাথে আমার ঘরে এসো।

নিশানের মা কথাটি বলেই চলে যায়, মহুয়া বুঝে উঠতে পারছে না নিশানের মা ওকে কি বলবে।

ওইদিকে…

– স্যার আমরা অপরাধীর অনেকটাই কাছাকাছি চলে এসেছি।
– সবকিছুই তো বুঝতে পারছি আহাদ কিন্তু একটা ভয় থেকেই যাচ্ছে। (নিশান)
– কিসের ভয় স্যার।

নিশানকে চুপ করে থাকতে দেখে আহাদ বললো…
– ম্যাডামকে হা’রিয়ে ফে’লার ভ’য় পাচ্ছেন স্যার।

নিশান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। এই ভ’য়টাই ওকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে, ভ’য়টাই আরো তীব্রতর হয়ে গেছে কালকের মহুয়ার ভালোবাসার স্বীকারোক্তি দেখে। মহুয়াকে নিজের করে পাবার পর হা’রিয়ে ফেলাটা যে অনেক ক’ষ্ট’কর।

মহুয়া নিশানের মায়ের ঘরের যেতে উনি বললেন…
– মহুয়া তুমি কিরকম মানুষ ভাবো আমাকে?

মহুয়া কিছুই না বুঝে তাকিয়ে আছে নিশানের মায়ের দিকে।

– জানো একটা সংসার করতে কতকিছু সহ্য করে থাকতে হয় ,কতকিছু মানিয়ে নিতে হয় জানো।

মহুয়া চুপ করে আছে। উনি আবারো বলে উঠলেন…
– তোমার মনে অনেক প্রশ্ন আছে তাই না আমি কেন এইসব বলছি। জানো তোমার বাবাকে আমি অনেক আগে থেকেই চিনি।( উনি মৃদু হাসলেন)

মহুয়া অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলো নিশানের মায়ের দিকে।

– মানে?
– তোমার বাবা আর আমি ছোটবেলার বন্ধু ছিলাম। একসাথেই বেড়ে উঠেছিলাম স্কুল কলেজ সবকিছুই একসাথে তারপরে আমার বিয়ে হয়ে গেলো আর তোমার বাবা নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো, যোগাযোগ হারিয়ে গেল নিজেদের জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলাম নিজেরা আর বন্ধুদের সময় দেবার মতো সময় থাকল না।

উনি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। একসময় প্রিয় মানুষগুলোই ব্যস্ততার মাঝে পরে অনেকটা পর হয়ে যায়,, স্মৃতির মাঝেই জমা হয়ে থাকে মানুষগুলো।

– একদিন আচমকা তোমার বাবার সাথে আমার দেখা হয়ে যায়, প্রথমে আমাকে চিনতে না পারলেও আমি চিনে গিয়েছিলাম কত শত গল্প করলাম পুরানো দিনগুলোতে ফিরে‌ গেলাম। কথার মাঝে জানলাম তুমি একজন ডাক্তার হয়েছো, গ্রামের একটা হাসপাতালে চাকরি করো। আমার খুব লোভ হলো‌ তোমাকে দেখার,, তোমাকে নিজের কাছে রাখার। আমি কোনো কিছু মাথায় না রেখেই আমার মৃন্ময়ের সাথে তোমার বিয়ের প্রস্তাব দিই ,,, সেইদিন তোমার বাবা খুব খুশি হয়েছিলো ,, ওর্ চোখের কোনো পানি দেখেছিলাম আমি।

নিশানের মায়ের চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো। কারনটা জানা নেয় মহুয়ার।

– সেইদিন তোমাকে একপলক দেখেই আমার খুব ভালো‌ দেখছিলো আমি যে এইরকম একটা মেয়ে আমার মৃন্ময়ের জন্য চেয়েছিলাম। নিজের হাতের বালাটা তোমাকে পড়িয়ে দেবার ইচ্ছা ছিল কিন্তু তুমি যখন এসে‌ বললে বিয়ে করবে না তখন আমার রাগ নয় প্রচন্ড অভিমান হয়েছিলো ,,প্রচুর কষ্ট পেয়েছিলাম সেদিন। লজ্জায় তোমার বাবার মাথা নিচু হয়ে গিয়েছিলো আমি আর ওকে লজ্জা দিতে চাইনি তাই বিনাবাক্যে তোমাদের বাড়ি থেকে চলে এসে তোমার বাবার সাথে যোগাযোগ বন্ধ‌ করে দিই।

উনি থামলেন। মহুয়া কিছু বলার মতো‌ ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না ,, সবটাই মহুয়ার কাছে‌ পানির মতো‌ পরিস্কার‌ হয়ে গেছে। সবকিছু জানার পরে আর কি ওনার উপরে রাগ করে থাকা যায়।

– জানো যখন তোমাকে মৃন্ময় বিয়ে করে এই বাড়িতে নিয়ে আসলো আমার তোমার বাবার জন্য চিন্তা হয়েছিলো, ওনার তো‌ আত্মসম্মান বোধটা অনেক তাই আমার সামনে এসে দাঁড়ানোর সাহসটা করবে না। আমি রাগ হয়েছিলো তোমাদের দুইজনের উপরে তাই সেইদিন ওইরকম আচরন করে ফেলেছিলাম।‌পরে মৃন্ময় আমাকে সবটা বলেছে আমাকে মাফ করে দিও মহুয়া।

কথাগুলো‌ বলে উনি হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন। মহুয়াকে জড়িয়ে ধরলেন। মহুয়া হতবাক হতভম্ব,, এ কোন নতুন মাকে দেখছে সে এইবাড়িতে আসার পর থেকেই দেখেছে নিশানের মা কতটা শক্ত প্রকৃতির মানুষ আর সেই মানুষটিকে‌ এইভাবে কাঁদতে দেখে মহুয়া হতবাক।

– মা আপনি কাঁদবেন না আমি কিছু মনে করি নি।
– মন থেকে মা টাকে মাফ করে দিয়েছিস তো।
– আপনারা আমার গুরুজন আপনাদের উপর আমি কি রাগ করতে পারি বলুন।‌আপনাদের দোয়াই তো আমাদের শক্তি এইভাবে কাঁদবেন না মা আমার নিজেকে অ’প”রাধী মনে হবে।

নিশানের‌ মা কিছুটা স্বাভাবিক হলো। মহুয়ার কপালে ভালোবাসার পরশ দিয়ে‌ বললেন…
– আজ থেকে আমার এই সংসারের দায়িত্ব তোমার।‌আমার এই সংসারটাকে সব সময়ে আগলে রেখো মহুয়া।
– কথা দিলাম মা আপনার সংসারটাকে আমি নিজের স’বটা দিয়ে আগলে রাখবো।

নিশানের মা মহুয়ার মাথাতে‌ হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন…
– যাও এখন গিয়ে রেস্ট নাও। সারাদিন হাসপাতালে ছিলে এখন আর কিছু করতে‌হবে না বাকিরা সামলে নেবে ক্ষন।
– আচ্ছা।

মহুয়া নিশানের মায়ের ঘর থেকে বের হয়ে যায়। নিশানের মা দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে আলমারি খুলে একটা ছবির অ্যালবাম বের করে ছবির উপরে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন…
– আমার ভালোবাসাটা তোমার কাছে‌ প্রকাশ করার আগেই আমার বিয়ে হয়ে গিয়েছিলো আমি আবারো নিজের হৃদয়কে নতুন করে সাজিয়ে ছিলাম। কিন্তু এতবছর পর হঠাৎ দেখা তারপরে তোমাদের মৃ”ত্যু আমার ভেতরের অনুভুতি কে আবারো জাগিয়ে তুলেছে। জানি এই শে”ষ বয়সে এইসব মানায় না কিন্তু অনুভূতি আর মনের উপরে কি কারোর নিয়ন্ত্রণ থাকে।

একফোঁটা চোখের পানি ছবিটির উপরে পড়লো। চোখের পানিটা মুছে দিয়ে ছবিটা তুলে রাখলো যত্ন করে। ছবিটা মহুয়ার বাবার ,, নিশানের মা ছোট বেলা থেকে পছন্দ করতো বয়স বা’ড়ার সাথে‌ সাথে সেটা ভালোবাসায় রূপ নেয় অনুভূতি প্রকাশের আগেই বিয়ে হয়ে যায় আর সবকিছু চাপা পড়ে যায় সংসারের চাপে।

মহুয়া ঘরের দিকেই যাচ্ছিল ,,বসার ঘর অতিক্রম করতে‌ যাবে তখনি কলিং বেলের আওয়াজ হয়। মহুয়া আশেপাশে কাউকে দেখতে না পেয়ে দরজাটা খুলে দিলো…

#চলবে…

ভুল ত্রুটি মার্জনীয়।
হ্যাপি রিডিং ?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here