মন_মহুয়ার_নেশা,২৬,২৭

0
363

#মন_মহুয়ার_নেশা,২৬,২৭
#তানজিলা_খাতুন_তানু

(পর্ব_২৬)

-কাকে চাই।

মহুয়ার এইরকম প্রশ্ন শুনে উপস্থিত ব্যক্তিটি অদ্ভুত দৃষ্টিতে মহুয়ার দিকে তাকিয়ে থাকলো। মহুয়ার ভীষন রকমের অস্বস্তি হচ্ছে এইভাবে তাকিয়ে থাকা দেখে,তাই পুনরায় জিজ্ঞেস করলো…
– কাকে চাই জানতে পারি।
– আপনি কে?

মহুয়ার রাগ হলো কিন্তু পরক্ষনেই মনে পড়লো ওহ তো এই বাড়িতে নতুন তাই অনেকেই ওকে চেনে না।

– আমি মহুয়া এই বাড়ির বড়ো ছেলের বউ। আপনি কাকে চান বলুন আর ভেতরে এসে বসুন আসুন।

লোকটি ভেতরে প্রবেশ করলো না মহুয়ার দিকে তাকিয়ে থাকলো, মনে হলো মহুয়া নামটা শুনে চমকে উঠেছে।

– এই বাড়ির বড়ো ছেলে মানে মৃন্ময়ের বউ তুমি।
– জ্বি। আপনি কাকে খুঁজছেন বললে ভালো হতো।

লোকটি নিজের মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো…
– আরে কাকে আর খুঁজবো নিজের শশুড় বাড়িতে এসেছি কোথায় আপ্যায়ন করবে সবাই তা না দরজায় দাঁড় করিয়ে রেখেছো এটা কি ঠিক।

মহুয়া ঘাবড়ে গেলেও শান্ত কন্ঠে বললো…
– আমি জানি না আপনি কে ,, তাই আপনাকে জিজ্ঞেস করলাম। আর এই বাড়িটা আপনার শশুড়বাড়ি মানে আপনি দিদিভাইয়ের হাসবেন্ড রাইট।
– হ্যা। আমি মিতালীর হাসবেন্ড প্রতীক। যদিও তোমার দোষ নেয় আমিই দেশে ছিলাম না তাই আর কী,,তবে তোমাদের বিয়ের কথাটা আমাকে কেউ কেন জানালো না বলো তো।
– সেটা তো বলতে পারবো না আপনি বরং ভেতরে এসেই কথা বলুন আসুন।

প্রতীক ঘরে পা বাড়াতে যাবে তখনি মিতালী কোথা থেকে এসে বললো…
– দাঁড়াও।

প্রতীক আর মহুয়া দুজনেই চমকে উঠলো মিতালীর এই রকমের কথা শুনে।
– কি হলো মিতা…( প্রতীক জিজ্ঞেস করলো)
– তোমার সাহস কিভাবে হয় আমার বাড়িতে পা রাখার,, আমি আগেও বলেছি প্রতীক তোমার সাথে আমার কোনোপ্রকার সম্পর্ক নেয় তবুও কেন এসেছো।
– এইসব কি বলছো মিতা।
– এতদিন যখন কাজের চাপে আমার খোঁজ নাওনি তখন।

মিতালী মুখ বেঁকিয়ে কথাগুলো বললো। মিতালীর কথা শুনে প্রতীক হেসে উঠলো মহুয়া অবাক হয়ে একবার এইদিকে আর ওইদিকে তাকিয়ে দেখতে লাগলো।

– একদম হাসবে না বলে দিচ্ছি আমার রাগ হচ্ছে খুব।
– সরি বউ রাগ করো না ,, জানোই তো আমার কাজের প্রেশার কেমন তাই তো খোঁজ নিতে পারিনি।
– থাক আর সোহাগ করতে হবে না ঘরে চলো ফ্রেশ হয়ে নেবে।
– ওকে,, ভাবিজি আপনার সাথে পড়ে মিট করবো এখন বউয়ের রাগ অভিমানটা ভাঙিয়ে আসি।

প্রতীক মিতালীকে নিয়ে চলে যায় ঘরেতে,মহুয়া হা করে দাঁড়িয়ে থাকে কিছুই বুঝতে পারলো না কি থেকে কি হয়ে গেলো। প্রতীককে কিরকম একটা অদ্ভুত লাগলো মহুয়ার কাছে।

প্রতীক ঘরে গিয়ে মিতালী কে জড়িয়ে ধরলো।মিতালী রাগ নিয়ে বসে আছে,

– এত রাগ কেন করছো, আমি তো বলছি আর হবে না এইরকম।
– আমি রাগ করিনি।
– মিতা তুমি তো জানো আমি তোমাকে কতটা ভালবাসি, আর এটাও তো জানো তুমি আর আমাদের বাবু ছাড়া আমার আর কেউ নেয় তোমার তো গোটা পরিবার তোমার সাথে আছে কিন্তু আমার তো তোমার ছাড়া আর কেউ নেয় তুমি রাগ করে থাকলে আমি কিভাবে ভালো থাকবো কিভাবে।

প্রতীকের কথা শুনে মিতালী আর রাগ করে থাকতে পারলো না প্রতীককে জড়িয়ে ধরলো।

– এইভাবে বলো না তুমিই তো আমার সবকিছু আমি তো তোমাকে ভালোবাসি বলো।

প্রতীক আর মিতালী নিজেদের মাঝে ঝামেলা মিটিয়ে নিলো। প্রতীক একজন অনাথ ছেলে, মিতালীর বাবার কোম্পানিতে চাকরি করতেন তারপরে মিতালীর মা প্রতীকের সাথে মিতালীর বিয়ে দেন আমার আলাদা ভাবে আরেকটা কোম্পানি খুলে দেন। সেই থেকেই প্রতীক আলাদা ভাবেই বিজনেস করছে।

রাতে…

প্রতীককে খাবার টেবিলে দেখে সকলেই চমকে উঠলো। খুশিও হলো। বাড়ির মেয়েরা প্রতীকের উপস্থিতির কথা জানলেও ছেলেরা কেউ জানতো না সকলেই খুশি হয়। নিশান প্রতীকের সাথে কুশল বিনিময় করলো।

– মৃন্ময় নিজেই বিয়ে করে নিলে একবার আমাকে বললে না।
– আরে প্রতীক দা এমনভাবে সবটা হয়ে গেলো বলার সময়ই পেলাম না।
– বুঝলাম তবে একটা কাজ করলে হতো না।
– কী
– তোমাদের বৌভাতটা অনুষ্ঠান করে করলে কেমন হয় আহমেদ ভিলার বড়ো ছেলের বিয়ে এইভাবে হয়েছে বৌভাতটা না করলে কেমন দেখায় না।

প্রতীকের কথা শুনে সকলেই খুশি হয়ে গেলো। সকলেই মহুয়াকে মেনে নিয়েছে মন থেকে, দাদুভাই প্রতীকের কথা শুনে সহমত প্রকাশ করলেন সিদ্ধান্ত হলো সামনের মাসের প্রথম রবিবার অনুষ্ঠান করা হবে।

মহুয়া কিছুটা হলেও লজ্জা পেলো। এইভাবে সবার সাথে বৌভাতের কথা শুনে একটা মেয়ের লজ্জা হওয়াটাই স্বাভাবিক।

– কি মহুয়া লজ্জা পাচ্ছো।( কানে কানে ফিসফিস করে মিতালী বললো)
– ধ্যাত।

মহুয়া রান্নাঘরে চলে গেলো।

এইভাবেই কেটে যায় কয়েকদিন ,, মহুয়া হাসপাতাল, ঘর সবটাই সুন্দর ভাবে চলছে। ক্রিশের সাথে হাতে গোনা কয়েকবার কথা হয়েছে, ক্রিশ হঠাৎ করেই মহুয়াকে ইগনোর করে চলেছে। মহুয়ার বিষয়টা অদ্ভুত লাগলেও কিছু বলেনি।

ক্রিশ নিজের কেবিনে বসে আছে তখন ওর কাছে কল আসলো।।

– হ্যালো বলুন।
– কি ক্রিশ কেমন চলছে দিনকাল।
– এই তো ভালোই।
– মহুয়ার খবর কি তোমার।
– জানি না আপনার কথা শুনেই তো মহুয়ার সাথে কথা বলিনি ঠিকমতো এতে আমার কতটা কষ্ট হচ্ছে জানেন আপনি।
– আরে কষ্ট লাগলেই তো মনের জ্বালাটা তবেই তো বাড়বে। বাদ দাও এসব একটা কথা জানানোর ছিলো।
– কি
– তোমাকে এই আহমেদ ভিলাতে ঢুকতে হবে।
-কিন্তু কিভাবে?
– কয়েকদিন পরেই মহুয়ার বৌভাত। তোমাকেও নেমন্তন্ন করতে হবে সেইখানে গিয়েই তোমাকে কয়েকটা কাজ করতে হবে।
– কি কাজ।

অপর পাশের মানুষগুলো কয়েকটা কথা বললো ।

– এসব আপনি কি বলছেন।
– মহুয়াকে পেতে গেলে এইগুলো তোমাকেই করতে হবে।
– ওকে।

ক্রিশের সাথে কথা বলে ফোনটা রেখে অপরপাশের মানুষটা বাঁকা হাসলো।

– তুমি তো গুটি মাত্র,, প্রয়োজন মিটে গেলে তুমি আমার কোনো কাজে লাগবে না বেচারী ক্রিশ।

ওইদিকে ক্রিশ চিন্তিত হয়ে গেলো। অপর পক্ষের মানুষটা কি গেম খেলছে সেটা কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পারছে কিন্তু তবুও মহুয়াকে পাবার শেষ আশা টা নষ্ট করতে পারছে না।

ক্রিশের ভাবনার মাঝে দরজায় নক পড়লো।

– কাম ইন।
– কেমন আছিস।

মহুয়ার কন্ঠস্বর শুনে ক্রিশ সামনে তাকিয়ে দেখলো মহুয়া দাঁড়িয়ে আছে । মহুয়াকে এইখানে দেখে চমকে উঠলো ক্রিশ পরক্ষনেই মনে পড়লো বৌভাতের কথা তাই একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো।

– কিরে কথা বলছিস না হাসছিস কেন?
– কিছু না কিছু দরকার না মানে তুই হঠাৎ আমার কেবিনে তাই বলছিলাম।
– একটা নেমন্তন্ন দেবার আছে, এই নে কার্ড।
– কিসের কার্ড।
– আমার বৌভাত।
– ওহ কনগ্রাচুলেশন।
– থ্যাঙ্কস। তুই উপস্থিত থাকলে আমার খুব ভালো লাগবে আসবি কিন্তু।
– অবশ্যই যাবো।

মহুয়া ক্রিশের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে চলে যায়। ক্রিশ কার্ডটা হাতে নিয়ে বাঁকা হাসি দিলো।

দেখতে দেখতে সময় ঘনিয়ে আসতে লাগলো। মহুয়া বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে পেছন থেকে নিশান জড়িয়ে ধরে কাঁধে মুখ ঘষতে লাগলো।

– ভালোবাসি।

নিশানের কথা শুনেও মহুয়া কিছু বললো না । মহুয়াকে চুপ করে থাকতে দেখে নিশান বললো…
– কি হয়েছে মহু মন খারাপ কেন।
– আচ্ছা নিশান আমি সবকিছু পেয়েও হা’রি’য়ে ফেলবো না তো।
– এইরকম কথা বলছো কেন?
– কিছু না বৌভাতের প্রিপেরশন কতদূর।
– চলছে ভালোই আর তুমি এড়িয়ে যেতে চাইছো কেন?
– কিছু না একটা কথা রাখবে আমার।
– কি বলো।
– তুমি আমার মা বাবার কে”সটা থেকে সরে যাও।

নিশান মহুয়ার কাছ থেকে সরে গেলো।

– কি হলো নিশান বলো।
– মহু আমি তোমাকে এই কথাটা দিতে পারবো না। আমি নিজের কাছে নিজে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ মহু আমি কিছূতেই এইসব কিছু থেকে বের হতে পারবো না।
– আমার কথাটা রাখবে না তো।
– মহুয়া বোঝার চেষ্টা করো আমি জড়িয়ে গেছি এইসব কিছুর সাথে তাই কিছুতেই বের হতে পারবে না প্লিজ বোঝো আমার কথাটা।
– আমি তোমাকে কিছূতেই হা”রা”তে পারবো না নিশান।

মহুয়া নিশানকে জড়িয়ে ধরলো। নিশান মহুয়াকে জড়িয়ে ধরে বললো…
– সত্যের পথে থাকলে আমাদের জিত হবেই মহুয়া চিন্তা করো না। সত্যের জয় হবেই।
– জানি না আমি আর এখন সবকিছু ভ”য় লাগে। ভ”য় লাগে তোমাকে হা’রা’নো’র।
– কিছু হবে না।

মহুয়া বাচ্চাদের মতো নিশানের বুকে মাথা গুঁজে থাকলো। নিশান মহুয়ার পাগলামী দেখে মৃদু হাসলো।

মহুয়ার বৌভাতের কেনাকাটা আয়োজন জোর কদমে শুরু হয়ে গেছে। আর মাত্র ৫ দিন বাকি আছে ,,সকলেই খুব এক্সাইটিং।

মহুয়া সকালে সকলকে চা দিয়ে রান্না ঘরে আসার সময়ে হঠাৎ করে কেউ মহুয়াকে জড়িয়ে ধরলো,মহুয়া চমকে উঠলো আচমকা এইভাবে জড়িয়ে ধরা দেখে।
– কে?

মেয়েটা মহুয়াকে ছেড়ে দিয়ে চারিদিকে ঘোরাতে লাগলো। মহুয়া চমকে চমকে উঠছে বারে বারে, এইভাবে ঘোরানোর কারনটা কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছে না আর না বুঝতে পারছে ওহ কে?
– আরে আরে আস্তে আস্তে মাথা ঘুরছে আমার।
– ভাবি ভাবি আমি ভাবতে পারছি না তুমি আমার ভাবি হয়েছো আমি খুব খুব খুশি।

ঘোরানো ছেড়ে দিয়ে মহুয়া কে জড়িয়ে কথাটা বললো।

– আসতে আসতে আমার মাথা ঘুরছে।
– সরি গো আসলে খুব এক্সাইটিং ছিলাম।
– হুম বুঝলাম কিন্তু এইভাবে ঘোরানোর মানে কি আর তুমি কে?
– আমি তোমার ছোট ননদ মিতু আর তুমি আমার আইডল ,,মেডিকেল কলেজে তোমার অনেক নাম শুনেছি সেই থেকেই তোমাকে দেখার আমার খুব ইচ্ছা ছিলো তোমার মতো ডাক্তার হওয়ার আর আমি ভাবতে পারছি না তুমি আমার ভাবি হয়েছো।

মহুয়া ভাবতেই পারছে না একজন মেয়ে এতটা পাগল হতে পারে। এইভাবে ধরে ঘুরিয়ে ছেড়ে দিলো সত্যি মেয়েটা পাগল আছে।

– দাদাভাই কোথায় গো।
– তোমার দাদাভাই ঘরে আছে ঘুমিয়ে আছে।
– ওকে আমি আসছি।

মিতু দৌড়ে চলে গেলো। মহুয়া রান্নাঘরে করে গিয়ে রান্না করছিলো তখনি একটা চিৎকার শুনে দৌড়ে গিয়ে চমকে উঠলো…

#চলবে

#মন_মহুয়ার_নেশা
#তানজিলা_খাতুন_তানু

(পর্ব_২৭)

মহুয়া নিশানের ঘরের কাছে এসে চমকে উঠলো। মিতু পেটে হাত দিয়ে হেসেই চলেছে আর নিশান মুখ কালো করে দাঁড়িয়ে আছে। নিশানের মুখের দিকে তাকিয়ে মহুয়ার ওহ হাসি পেয়ে গেলো ,,, মিতুর সাথে হাসতে লাগলো। নিশানের গোটা মুখ সাদা পাউডার দেওয়া পুরোই ভূতের মতো হয়ে আছে।

– ওই তোমরা হাসি বন্ধ করবে আর মিতু তোর তো খবর আছে।
– আমি কিছু করিনি সবকিছু ভাবি করেছি।

মহুয়া মিতুর কথা শুনে আকাশ থেকে পড়লো। মিতু কাঁচুমাচু হয়ে বললো…
– আমি গেলাম টা টা।

মিতু দৌড়ে ঘর থেকে বের হয়ে যায়। মহুয়া ঢোক গিললো নিশানের চাহনী দেখে।

নিশান মহুয়ার দিকে তাকিয়ে মহুয়ার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো।

– কি হলো এইভাবে এগিয়ে আসছো কেন?
– তুমি এইরকম করছো‌ কেন?
– বিশ্বাস করো আমি কিছু করিনি আমি তো চিৎকার শুনে আসলাম।
– তাই না।

নিশান মহুয়ার কোমড় ধরে নিজের কাছে টেনে নিয়ে নিজের গালের সাথে মহুয়ার গাল লাগিয়ে দিলো। মহুয়া বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে তাকালো।

– এটা কি হলো।
– তুমি দাও আর না দাও আমার সব জিনিসেই তোমার অধিকার আছে তাই আমার মুখে পাউডার তোমার মুখেও দিয়ে দিলাম।

নিশান শিস দিতে দিতে ওয়াশরুমে চলে গেলো। মহুয়া মুচকি হাসলো।

মহুয়া আজকেই হাসপাতালে গিয়ে ছুটি নিয়ে এসেছে কয়েকদিনের জন্য। খাওয়া দাওয়া শেষ করে মিতু মহুয়াকে জড়িয়ে ধরলো।

– কি হলো এইভাবে মিতু তুই এইভাবে মহুয়াকে জড়িয়ে ধরে রেখেছিস কেন?
– আমি আজকে ভাবির কাছে ঘুমাবো।
– পালা এইখান থেকে,,তোর ঘর নেয়।
– আছে তো কিন্তু আমার ভাবি তো আগে ছিলো না নতুন হয়েছে তাই আজকে আমি ছাড়ছি না।ভাবি চলো‌তো।
– আচ্ছা চলো।
– মহুয়া যাবে না তুমি।
– যাবো আমি ,,, মিতু তুমি যাও আমি আসছি।
– আসবে তো‌ পাক্কা।
– হুম যাও।

মিতু নিশানকে ভেংচি দিয়ে চলে যায়। নিশান মহুয়ার দিকে তাকিয়ে রাগী কন্ঠে বললো…
– তুমি মিতুর কাছে‌ ঘুমাবে মানে কী?
– দ্যাখো ওহ তো বাচ্চা
– মিতু বাচ্চা ( চোখ বড়ো বড়ো করে)
– হ্যা তোমার মতো‌ বুড়ো নাকি।
– ধ্যাত তোমার সাথে কথা বলাই বেকার। যাও তোমাকে আমার কাছে থাকতে হবে না।

নিশান রাগ দেখিয়ে কথাগুলো বললো। মহুয়া মুচকি হেসে বললো…
– থ্যাঙ্ক ইউ। আমি আসছি বাই।

মহুয়া ঘর থেকে বের হতে যাবে তখনি নিশান মহুয়ার হাত টেনে জড়িয়ে ধরলো।

– যাবে না তুমি,, তোমাকে ছেড়ে আমি থাকতে পারিনা ঘুমাতে পারি না জানো না।
– পাগলা একটা। ছাড়ো মিতু নাহলে আবার আসবে।
– হু।

নিশান শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। মহুয়া শয়তানী হাসি দিয়ে নিশানকে‌ কাতুকুতু দিতে লাগলো। নিশান মহুয়াকে ছেড়ে দিয়ে লাফালাফি করতে লাগলো।

– দ্যাখো ভালো‌ হ”চ্ছে না কিন্তু।
– আমি গেলাম।

নিশানকে ধাক্কা দিয়ে মহুয়া দৌড়ে ঘর থেকে বের হয়ে গিয়ে মিতুর ঘরে গিয়ে হাসতে লাগলো।

– কি হলো‌ হাসছো কেন?
– কিছু না বলো‌ তোমার মেডিকেল কলেজের খবর‌ কী?
– ভালোই চলছে।

মহুয়া আর মিতু অনেকক্ষন কথা ঘুমিয়ে পড়লো। সবটাই দেখে আড়াল থেকে কেউ একজন বললো…
– নিশানের কাছ থেকে তুমি ঠিক এইভাবেই আলাদা হতে থাকবে মহুয়া। নিশান আর তোমাকে এক হতে আমি দেবো না।

আসতে আসতে কেটে যায় কয়েকদিন। আজকে মহুয়ার বৌভাতের অনুষ্ঠান ,, সকাল থেকেই আয়োজন হচ্ছে,নিশান দৌড়দৌড়ি করতে করতে শেষ।

মিতু আর মিতালী মহুয়াকে খুব সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়েছে। লোকজনের ভিড় হতে শুরু করেছে।

– ভাবি গো তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে। দাদাভাই দেখলে‌ তো ফিদা হয়ে যাবে একেবারে।
– ধ্যাত কি বলছো এইসব।
– এই মিতু মহুয়াকে আর লজ্জা দিস না বেচারী এমনিতেই লাল নীল হয়ে যাচ্ছে।

মিতালী আর মিতু মহুয়াকে নিয়ে মজা করতে লাগলো।মহুয়া লজ্জা পাচ্ছে খুব ওদের এইসব কথা শুনে।

মহুয়াকে নিয়ে স্টেজের কাছে নিয়ে আসলো। নিশান মহুয়ার দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো।

– দাদাভাই একটু কম হা কর মশা ঢুকে যাবে।
– দূরররর।

নিশান রাগ দেখিয়ে ওইখান থেকে চলে যায়। মিতু হাসতে লাগলো নিশানের কান্ড দেখে। মিতু আর নিশানের সম্পর্কটা বোন কম বন্ধু বেশি।

নিশি আর অর্ক ওহ এসেছে। নিশি মহুয়ার সাথে গল্প জুড়ে দিয়েছে।

– মহু তোকে যা সুন্দর লাগছে না মনে‌ হচ্ছে তুলে নিয়ে চলে‌যায়।
– তাহলে আমার ভাবিটার যে ভাগ কমে যাবে রে।
– কেন রে দুইজনেই থাকবি একসাথে।
– নারে আমি আমার বরের ভাগ কাউকে দেবো না।
– বাবা গো এত ভালোবাসা বরের প্রতি।
– কি করবো বল,, একটা মাত্র বর তো।
– কার আবার চারটে করে বর হয়।
– কেন তোর।
– দূর।

অর্ক বিরক্ত হয়ে ওইখান থেকে চলে যায়। নিশি মহুয়া আর অর্কের ঝগড়া শুনে‌ হাসছিলো।

– এই তুমি হাসছো কেন।
– এমনিতেই।
– তা কবে বিয়ে করবে।
– এখনো‌ তো মেডিকেল পড়া চালূই করলাম না আর তুমি বলছো বিয়ে কবে করবো।
– কি হয়েছে‌ বিয়ের পর পড়াশোনা করবে।
– বিয়ের পর ,, বিয়ের আগেই পড়তে‌ পারছি না আবার বিয়ের পর।
– হুম।

_কনগ্রাচুলেশন।

ক্রিশের কন্ঠস্বর শুনে মহুয়া সামনে তাকিয়ে দেখলো ক্রিশ‌ এসেছে। মহুয়া খুশি হয়ে যায়।

– থ্যাঙ্ক ইউ। তুই এসেছিস আমি খুব খুশি হয়েছি।
– হুমমম।
– নিশি এটা আমার ফ্রেন্ড ক্রিশ আর ক্রিশ‌ ওটা নিশি।
– হাই।
– হ্যালো।

– নিশি একবার অর্ক আর তোমার দাদাকে ডেকে দাও না ক্রিশের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতাম।
– আচ্ছা।

নিশি ওইখান থেকে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর অর্ককে নিয়ে ফিরে আসলো।

– দাদাভাই কে দেখতে পাইনি ওনাকে‌ পেলাম তাই নিয়ে চলে‌ আসলাম।
– ভালো‌ করেছো। আর অর্ক দ্যাখ তো‌ চিনতে পারছিস কিনা।
– ক্রিশ‌ তো। কেমন আছো।
– ভালো তুমি।
– ভালো। কি করছো এখন।
– এই তো‌ ডাক্তারি করছি।

ক্রিশ আর অর্ক কথা বলতে‌ বলতে অন্যদিকে চলে যায়। নিশি ওহ চলে যায় মহুয়া একা একা বসে থাকে আর সকলে‌ আসছে তাদের সাথে হাসি মুখে কথা বলছে।

– ভাবি দাদাভাই কোথায় গেলো গো।
– জানি না তো।

গোটা বিয়ে বাড়ি খুঁজেও নিশানের খোঁজ মিললো না। অতিথি থাকার‌ কারনে কেউ কিছু করে উঠতেও পারছে না মহুয়ার প্রচন্ড পরিমানে টেনশান হচ্ছে কিন্তু কিছু বলতে‌ পারছে না সকলের সাথে মেকি হাসি দিয়ে কথা বলতে হচ্ছে।

– অর্ক নিশানকে পেলি।
– না রে মহু ফোনটাও সুইচ অফ ‌ পাচ্ছি না।
– আমার চিন্তা হচ্ছে‌ খুব।‌আমাকে এইখান থেকে নিয়ে চল না আমি আর এইভাবে থাকতে পারছি না।

মহুয়ার করুন কন্ঠ শুনে অর্ক মহুয়ার দিকে তাকালো। একটুও আগেও মহুয়ার চোখে মুখে আনন্দ দেখেছিলো কিন্তু এখন সেই আর আনন্দ নেয় ভ”য়, আ”তং”ক বিরাজ করছে চোখে। অর্ক ভেবে উঠতে পারলো না নিশান কোথায় গেলো?

#চলবে….

ভুল ত্রুটি মার্জনীয়।
হ্যাপি রিডিং ?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here