মন_মহুয়ার_নেশা,২৮,২৯

0
360

#মন_মহুয়ার_নেশা,২৮,২৯
#তানজিলা_খাতুন_তানু

(পর্ব_২৮)

আত্মীয়দের কোনো রকম ভাবে ম্যানেজ করে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। মহুয়া সহ বাকি সকলেই খুব চিন্তিত নিশানের হঠাৎ নিখোঁজ হওয়াটা নিয়ে‌।

– নিশান কোথায় তুমি প্লিজ আমার কাছে ফিরে এসো প্লিজ।( মনে মনে মহুয়া)

– দিদিভাই।

নিশি মহুয়ার কাঁধে হাত রাখতেই মহুয়া নিশিকে জড়িয়ে ধরে ফোঁপাতে লাগলো। নিশি কি বলে শান্তনা দেবে খুঁজে পাই না।

– মহুয়া।

অর্ক তাড়াতাড়ি করে মহুয়ার কাছে এসে মহুয়াকে ডাকলো।

– কি হয়েছে অর্ক নিশানকে পেলি।
– না তোর সাথে আমার কথা আছে।
– কি কথা ‌ বল। ( চোখ মুছে বললো)

অর্ক একবার নিশির দিকে তাকিয়ে বললো…
– আমার মনে হচ্ছে নিশানকে কেউ কি”ড”ন্যা”প করেছে।
– হোয়াট।
– হ্যা মহুয়া আমার মনে হচ্ছে ওরাই নিশানকে কি”ড”ন্যা”প করেছে।

মহুয়া একপা পিছিয়ে গেলো।

– অর্ক আমি জানি না আমাকে তুই এখুনি নিশানকে খুঁজে এনে দে আমি জানি না।
– মহু শান্ত হও। আমাদের সবকিছু ঠান্ডা মাথাতে করতে হবে তুই আমাকে একটু সময় দে আমি ঠিক তোর নিশানকে তোর কাছে ফিরিয়ে দেবো।

২ দিন পর…

নিশান এখনো নিরুদ্দেশ। কোনো মতেই নিশানকে খুঁজে পাওয়া যায়নি মহুয়া তো পাগলপ্রায়। গোটা আহমেদ ভিলা পুরো ম’রা’র বাড়ি হয়ে গেছে। মহুয়া বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে তখনি দেখলো একটা গাড়ি এসে দরজার সামনে এসে দাঁড়ালো। মহুয়ার ভ্রু কুঁচকে গেলো ,,গাড়ি থেকে নেমে এসে দাঁড়ালো একজন সুট বুট পড়া একজন মধ্যবয়স্ক লোক। এর আগে লোকটাকে মহুয়া দেখেনি কে এ। ভাবনার মাঝেই দরজায় টোকা পড়লো মহুয়া বারান্দা থেকে এসে বসার ঘরেতে উপস্থিত হলো। এসে চমকে উঠলো।

ওনাকে জড়িয়ে ধরে মহুয়ার শাশুড়ি মা কান্নাকাটি করে চলেছে। মহুয়া বুঝে উঠতে পারলো না উনি কে।

– ও গো তুমি আমার মৃন্ময়কে ফিরিয়ে এনে দাও না।
– আমি দেখছি।

আরো কিছুক্ষণ পর ওদের কথাশুনে মহুয়া বুঝলো যে উনি নিশানের বাবা। এতদিন কাজের সুত্রে দেশের বাইরে ছিলো ছেলের কথা শুনে দেশে ফিরেছেন।

– ওই কি আমাদের বউমা।

নিশানের বাবার হঠাৎ এইরকম কথা শুনে মহুয়া ওনার দিকে তাকালো। নিশানের মা হ্যা বললেন। মহুয়া নিশানের বাবাকে সালাম জানালো।

মহুয়ার কাছে একটা মেসেজ আসলো…
– মহু তুই তাড়াতাড়ি একটু বাড়ি থেকে বের হ। খুব দরকার।

মহুয়া মেসেজটা দেখে চমকে উঠলো। তাড়াতাড়ি এখুনি বের হতে হবে অর্ক মেসেজ করেছে মানে‌ খুব দরকার,, কিন্তু কিভাবে বের হবে।

মহুয়া কোনো রকমে চেন্জ করে নিশানের মায়ের কাছে গিয়ে বললো…
– মা আমাকে এখুনি বের হতে হবে।
– কিন্তু কেন?
– আমার হাসপাতালে একটা জরুরী কাজ পড়ে গেছে এখুনি না গেলে প্রবলেম হয়ে যাবে। আর এই কয়েকদিনে তো আমি হাসপাতালে যেতেই পারিনি।
– আচ্ছা যাও তবে সাবধানে যাবে।
– আচ্ছা মা।

হাসপাতালের‌ নাম করে মহুয়া তাড়াতাড়ি করে অর্কের বলা জায়গায় পৌঁছে গেলো।

– বল কেন ডাকলি।
– নিশানের খবর জানতে পেরেছি।
– সত্যি।
– হুম।
– তাড়াতাড়ি চল।
– নিশানের খবর জানতে গিয়ে অনকে কিছুই জেনেছি আর কে করেছে তাও জেনেছি।
– কে করেছে‌ বল।
– সময় হলেই জানতে পারবি। এখন আমার সাথে চল।

মহুয়াকে নিয়ে অর্ক একটা গাড়ির ভেতরে বসলো। ৩০ মিনিট কেটে যাবার পরেও অর্ক চুপচাপ বসে আছে মহুয়া বিরক্ত হয়ে বললো…
– কি হলো এইভাবে বসে আছিস কেন?
– চুপ করে থাক।

মহুয়া বিরক্ত হয়ে নাক মুখ কুঁচকে গেলো।

– ওই দিকে দ্যাখ।

মহুয়া সামনে তাকিয়ে দেখলো একটা গাড়ি আসছে।।।
– কার গাড়ি এটা।
– ওয়েট কর সবটা জানতে পারবি।

অর্ক গাড়িটাকে ফলো করতে লাগলো।‌কিছুক্ষন ফলো করার পর একটা বাংলো বাড়িতে আসলো। গাড়িটা থেকে একটা লোক বের হয়ে ভেতরে যেতেই অর্ক আর মহুয়াও নামলো। মহুয়ার লোকটাকে বড্ড চেনা চেনা লাগছে।

– অর্ক ওটা তো।
– আসতে আসতে মহু একদম কথা বলিস না। চুপ করে চলে আমার সাথে।

লোকটাকে পিছু করে মহুয়া আর অর্ক একসাথে‌ ভেতরে পৌঁছে গেলো। ভেতরে গিয়ে চমকে উঠলো।

নিশান একটা চেয়ারের সাথে বাঁধা অবস্থাতে আছে। লোকটা এসে নিশানের চোখে মুখে পানি দিলো।

– আহ্ আহ্।

নিশানের এইরকম অবস্থা দেখে মহুয়ার বুকটা কেঁপে উঠলো।‌মহুয়া নিশানের কাছে যেতে চাইলে অর্ক আটকে দিয়ে অপেক্ষা করতে বললো।

– আহা গো খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না।

বলেই হা হা করে হেসে উঠলো লোকটা।

– তোকে এইভাবেই তিলে তিলে আমি শে”ষ করবো, মহুয়া শুধুমাত্র আমার। শুধুই আমার।

ক্রিশ নিশানের মাথাটা ধরে কথাগুলো বললো। মহুয়া রেগে বোম হয়ে গেলো ক্রিশের এইরকম কথা শুনে,মহুয়ার ইচ্ছা করছিলো এখুনি গিয়ে ক্রিশকে ধরতে কিন্তু পারলো না অর্ক আটকে দিলো আবারো।

হ্যা ক্রিশ‌ই নিশানকে কিডন্যাপ করে এনেছে ওইখানে। ঘড়িতে কাঁটা পরিবর্তন হয়ে গেলো। ক্রিশ একটা চেয়ারে বাঁধা আছে আর মহুয়া একের পর এক জেরা করেই যাচ্ছে।

– ক্রিশ তোর জন্য সত্যিটা বলাই ভালো‌ হবে। আমি তোকে জিজ্ঞেস করছি তুই ঠিক কার কথাতে কাজগুলো‌ করেছিস বল সত্যি টা ( মহুয়া)
– তুই শুধুই আমার মহুয়া, আমার । আমি তোকে আর নিশানকে এক হতে দেবো না কিছুতেই দেবো না।
– ক্রিশ তুই পাগল হয়ে গেছিস এইভাবে পাগলের মতো কথা বলছিস তূই জানিস না আমি বিবাহিত।
– মহু তুই তো এই কয়েকদিন বিয়ে করেছিস তোর জীবনে মাত্র কয়েকদিন নিশান এসেছে কিন্তু আমি আমি যে এতগুলো বছর তোর সাথে আছি আমার প্রতি কি তোর একটুও ফিলিংস জন্মায় নি।
– চুপ কর তুই চুপ কর। আমি নিশানকে ভালোবাসি ভালোবাসি নিশানকে বুঝেছিস তুই।
– না এটা হতে পারে না।
– এটাই সত্য কথা‌ আর তুই আমার ভালোবাসার মানুষটিকে কষ্ট দিয়েছিস তার মানে কি তুই জানিস।
– জানি না আমি কিছু জানি না।
– তুই ভালোবাসার অর্থটাই জানিস না। ভালোবাসা মানে তাকে পেতে হবে তার কোনো মানে নেই, ভালোবাসা মানে তাকে সুখী দেখা সেটা হোক না অন্য জনের সাথে।।।

ক্রিশ আহত দৃষ্টিতে তাকালো মহুয়ার দিকে। মহুয়ার চোখে পানি চিকচিক করছে।

– দ্যাখ ক্রিশ আমরা তো খুব ভালো বন্ধু হয়ে ছিলাম আর তুই কি করলি আমাদের ভালোবাসার বন্ধুত্ব টা নষ্ট করে দিলি।
– ভালোবাসি আমি তোকে।
– আমি তো তোকে ভালোবাসি না এইকথাটা বোঝ একটু
– পারবো না আমি।
– তুই না আমাকে ভালোবাসিস তাহলে তুই কি সত্যি আমাকে ভালোবাসিস।
– মানে?
– হ্যা যদি ভালোবাসতিস তাহলে আমার খুশি টাকে মেনে নিতিস এইভাবে আমাকে কষ্ট দিতিস না।

ক্রিশ মাথা নিচু করে আছে। মহুয়া ভালো করেই বুঝলো ক্রিশ কে ঠিক জায়গাতেই আঘাত করেছে। আর একটু আর একটু চাপ দিলেই ক্রিশ সত্যিটা বলে দেবে এটা শিওর মহুয়া।

– ক্রিশ আমি জানি তুই নিজে থেকে এইগুলো‌ করিস নি তাই সত্যিটা বল সত্যিটা বল। প্লিজ বল। আমি জানি তুই আমাকে এইভাবে কষ্ট দিতে পারিস না সত্যিটা বল।

ক্রিশ চিৎকার করে উঠলো মহুয়ার কথা শুনে।

– আমি কিছু করতে চাইনি করতে চাইনি। আমাকে একটা লোক ফোন করে‌ সবকিছু করতে বলেছিলো আর আমি তোকে পেতে চেয়েছিলাম তাই করেছি এইসব।।

– কে বল‌ কে বলেছিলো তোকে।।
– জানি না শুধু ফোন করেছিলো।
– ফোনে নম্বর আছে?
– হ্যা।

মহুয়া ক্রিশের দড়িগুলো খুলে দিয়ে ক্রিশের কাছ থেকে ফোন নম্বরটা নিলো।

– অর্ক অর্ক।
– কি হয়েছে মহু এইভাবে ডাকছিস কেন?
– এই নম্বরটা কার সেটা এখুনি জেনে‌ বল।
– আচ্ছা।

মহুয়ার‌ কাছ থেকে অর্ক নম্বরটা নিয়ে চলে গেলো। ক্রিশ কিছু না বলে মহুয়াকে জড়িয়ে ধরলো। মহুয়া চমকে উঠলো ক্রিশের এইরকম কাজে।

#চলবে…

শীঘ্রই রহস্যের উদঘাটন হবে। প্রিয় পাঠকদের রেসপন্স চাই।

ভুল ত্রুটি মার্জনীয়।
হ্যাপি রিডিং ?

#মন_মহুয়ার_নেশা
#তানজিলা_খাতুন_তানু

(পর্ব_২৯)

ক্রিশের হঠাৎ এইভাবে জড়িয়ে ধরাটা মহুয়ার কাছে অদ্ভুদ লাগলো। কিছুক্ষণ পর ক্রিশ ওকে ছেড়ে দিয়ে বললো..
– সরি মহুয়া আসলে তোকে একবার ছুঁয়ে দেখার বুকে জড়িয়ে নেবার লোভটা সামলাতে পারলাম না। জানি এটা অন্যায় তবুও আমি করলাম পারলে মাফ করে দিস আমাকে।

ক্রিশ নিজের চোখের পানিটা মুছে নিলো। মহুয়া কথা বলার মতো ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। কিছুক্ষনের মধ্যেই ওইখানে অর্ক উপস্থিত হলো।

– মহুয়া একটু অপেক্ষা করতে হবে ওরা দেখে জানাচ্ছে বললো।
– নিশান কেমন আছে
– ভালো আছে তুই ভেতরে যা।

মহুয়া ভেতরের ঘরে প্রবেশ করলো। নিশানকে এইখানে রেখেই মহুয়া কিছু প্রাথমিক ট্রিটমেন্ট করেছে। নিশান ক্লান্ত হয়ে শুয়ে আছে, চোখ মুখ শুকিয়ে গেছে, ঠোঁটের এক কোনো র”ক্ত লেগে আছে, চুলগুলো, জামাকাপড় সবকিছুই এলোমেলো হয়ে আছে।

মহুয়া নিশানের পাশে বসে কপালে একটা চুমু দিলো। চোখ দিয়ে একফোঁটা পানি গড়িয়ে মহুয়ার।

ক্রিশ মাথা নিচু করে বসে আছে।

– ক্রিশ এইসব কেন করলে, তুমি জানতে তাই না মহুয়া নিশানকে ঠিক কতটা ভালোবাসে। নিশানের জন্য ওহ কি কি না করেছে আর সেইখানে তুমি ওর প্রা’নের প্রিয় মানুষটিকে এইভাবে কষ্ট দিলে। বাবা মাকে হা”রা”নোর পর মহুয়া কতটা ভেঙে পড়েছিলো এটা তুমি না দেখলেও আন্দাজ তো করতেই পারতে তাই না।

– আমি মহুয়াকে সেই কলেজ লাইফ থেকে ভালোবাসি। তিনবছর আগে নারায়নপুর গ্রামে গিয়ে আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় সেই সময়ে আমার কি অবস্থা হয়েছিলো একবারো কি ওহ সেটা ভেবেছিলো?

অর্ক কি উত্তর দেবে ভেবে পেলো না , হয়তো দুজন দুইদিক থেকে ঠিক।

– আমি ওকে পাগলের মতো খুঁজেছি কিন্তু কোনো খোঁজ পাইনি। শেষে সবকিছু ভুলতে দেশের বাইরে চলে যায় যদি সবটা ভুলতে পারি কিন্তু না মহুয়ার প্রতি আরো আকৃষ্ট হয়ে পড়লাম ওকে পাবার নেশাটা আরো তীব্রতর হয়ে পড়লাম বুঝলাম আমার #মন_মহুয়ার_নেশা’য় আসক্ত হয়ে উঠেছে। খোঁজ খবর নিয়ে জানলাম মহুয়া বিয়ে করেছে তখন আমার ভেতরের রাগটা আরো বেড়ে গেলো প্রতি”শো’ধের আ”গু’ন’টা জ্ব’লে উঠলো, আর সেই আ’গু’নে অচেনা ব্যক্তিটা ঘি দিলো ব্যাস সব শে’ষ।

ভালোবাসা কাউকে হাসায় আবার কাউকে সারাজীবন কাঁদায়। ভালোবাসার চেয়ে বিরহের কষ্টটা যে বেশি ভয়ঙ্কর, প্রতিটা নিয়ত এই দহনে দগ্ধ হতে হয়।

অর্কের কাছে ফোন আসলো নম্বরটা কার সেটা জানানোর জন্য। অর্ক সত্যিটা জানার পর মহুয়ার কাছে গিয়ে বললো।

আহমেদ ভিলাতে কলিং বেলের শব্দ শুনে দরজা খুলে দেবার পর সামনে নিশানকে দেখে চমকে উঠলো মিতালী। ভাইকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো, চিৎকার করে সকলকে ডেকে আনলো বসার ঘরে।

সকলেই নিশানকে ফিরে পেয়ে অনেক খুশি একটার পর একটা প্রশ্ন করেই চলেছে কোথায় ছিল, কেন ছিলো ইত্যাদি ইত্যাদি।

– মা এখন এইসব কথা বাদ দাও সময় হলেই সবাইকে সবকিছু বলবো।
– আচ্ছা।

নিশানের কথাগুলো মেনে নিয়ে ,,নিশানকে রেস্ট নেবার জন্য ঘরে পাঠিয়ে দিলো,, সাথে মহুয়াও ঘরে চলে গেলো। এইখানে থাকা মানেই তো দিভাইয়ের সংসারটা শেষ হয়ে যাবে।
– একজন অপরাধীর সাথে থাকার চেয়ে একা থাকা অনেক ভালো।
– নিশান আমরা কি সবকিছু…
– না মহুয়া এই কথা তোমার মুখে মানায় না যাদের কারনে তোমার আজকে এই অবস্থা তুমি তাদের ছেড়ে দিতে বলছো আর একটা কথা কি জানো প্রতীক দা তো গুটি মাত্র আসল লিডার তো অন্যকেও।
– তুমি কিভাবে জানলে।
– এত বড়ো একটা চক্র প্রতীকদার দ্বারা সম্ভব নয় এর সাথে বড়ো কোনো মাথা লুকিয়ে আছে, শক্তিশালী কোনো মাথা।
– হুম।
– অর্ক ওর কাজ করুক,তুমি চুপচাপ সব দেখে যাও ঠিক কি কি হয়।

২ দিন পর…

প্রতীককে গ্রেপ্তারের কথা শুনে মিতালী উত্তেজিত হয়ে পড়লো। বাড়ির সকলেই চিন্তিত ঠিক কি কারনে প্রতীককে জেল হাজতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে কেউ জানে না।

– ভাই ।
– কি হয়েছে দিদিভাই বল।
– তোর দুলাভাইকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে তুই কিছু কর।
– অন্যায়কারীর জন্য মৃন্ময় আহমেদ নিশান কিছু করে না।
– অন্যায়কারী মানে?
– প্রতীক’দা নানা রকমের বেআইনি কাজের সাথে যুক্ত। নারায়নপুর গ্রামে মেয়ে পাচারকারী দলের সাথে যুক্ত ছিলো প্রতীক’দা। পাশাপাশি মহুয়ার মা বাবার খুনের পেছনেও প্রতীক’দার হাত আছে।

মিতালী এক পা পিছিয়ে গেলো নিশানের কথা শুনে।

– না এইসব সত্যি হতে পারে না।
– এইগুলোই সত্যি।
– ভাই আমার প্রতীককে আমার কাছে ফিরিয়ে এনে দে না। আমি আর পারছি না এনে দে না।
– প্রতীকদা নিজের অন্যায়ের শাস্তি পাবেই দিদিভাই আইন ওকে শাস্তি দেবে।
– কিসের আইন,আমি কিছু আইন জানি না তুই আমার স্বামীকে আমার কাছে ফিরিয়ে এনে দেনা আমি তোর দিদি হয়ে তোর কাছে আমার সংসার ভীক্ষা চাইছি।

মিতালীর চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে, নিশানের চোখেও পানি কিন্তু কিছু করার নেই অপরাধীকে শাস্তি না দিলে এই পৃথিবীতে অন্যায়ের পরিমান বেড়েই যাবে। আর কোনো ভালো মানুষ জন্ম নেবে না অপরাধে ভরে যাবে এই দুনিয়াটা।

প্রতীক প্রথমে স্বীকার না করলেও নিজের সমস্ত কাজকর্ম স্বীকার করে নিয়েছে। তবে আসল লিডারের নাম বা ওর সাথে যুক্ত কারোর নামই বলেনি।

– প্রতীক বলো তোমার সাথে আর কে কে এই দলের সাথে যুক্ত বলো।
– আমি একাই এই সবকিছু করতাম পাশাপাশি আরো কয়েকজন কর্মচারী ছিলো।‌ আমিই লিডার।
– ভয় নেয় বল।
– বলছি তো আমিই লিডার কেন বিশ্বাস করছেন না।
– বিশ্বাস করি না আমি কাউকে আমি বলছি তো আমিই লিডার।

অনেক চেষ্টা করেও অর্ক কিছুতেই প্রতীকের মুখ থেকে নাম বের করতে পারে না।

পরেরদিন, জেল হাজতে মিতালী প্রতীকের সাথে দেখা করতে আসে।

– মিতা তুমি কেন এইখানে এসেছো, যাও এই জায়গাটা ভালো নয়।
– ভালো নয় আমিও জানি কেন প্রতীক এইসব তুমি করতে গেলে বলো।

প্রতীক চুপ করে আছে।

– কেন তুমি এইসবকিছু করলে উত্তর দাও। কেন আমাদের ছেলেকে এইভাবে সকলের কাছে ছোট করে দিলে আমাকে সকলের কাছে ছোট করে দিলে বলো। আমাদের ছেলে বড়ো হয়ে কি জানবে ওর বাবা একজন অপরাধী,, ছিঃ আমি তোমার মতো একটা অনাথ ছেলেকে ভালোবেসেছিলাম সবকিছু জেনে কিন্তু তুমি আমার ভালোবাসার মান রাখলে না এইভাবে আমাকে ঠকালে। আজ থেকে তোমার সাথে আমার আর আমার ছেলের কোনো সম্পর্ক নেয় আজ থেকে তোমার একটাই পরিচয় তুমি একজন অ’প’রাধী,খু”’নী, মা”ফি’য়া।

মিতালী কথাগুলো বলে চলে যায়। প্রতীকের কানে মিতালীর বলা কথাগুলো বাজতে থাকে বার বার। নিজের চোখের পানিটা মুছে নিয়ে বিরবির করে বললো…
– সবকিছুর মাঝেও একটা সত্যি কথা লুকিয়ে আছে আর সেটা হলো‌ আমি তোমাকে ভালোবাসি। আর আমার কারনে তোমার অসম্মান হচ্ছে এটা আমি মেনে নিতে পারবো না,তোমাকে এই সব কিছূ মুক্তি দেবো আমি । তোমার কারনেই এই জগতে এসেছিলাম আর তোমার কারনেই এই জগতে ছাড়বো ভালো থেকো প্রিয়।

#চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here