দেবী,২১,২২

0
361

#দেবী,২১,২২
লেখিকাঃ শবনম রাবাহ (স্রোতস্বিনী)
কপি করা সম্পুর্ণ নিষেধ।
২১ঃ

–“ভালোবাসা হলো এক বিষাক্ত মরনব্যাধি,
একবার যাকে আক্রমণ করে শেষ নিশ্বাস
অব্দি বেদনাময় সুখ দেয়। ”
_____________________________________________

“আল্লাহু আকবার” ধ্বনি কর্ণগোহর হচ্ছে রুহুলের। বাড়ান্দায় দাঁড়িয়ে অতীতে ডুব দিয়েছিল রুহুল। কত সুন্দর ই না ছিল বিবিজানের সাথে কাটানো দিন গুলি। কত সুন্দর মনোমুগ্ধকর মুহুর্ত। বিবিজানের সাথে কাটানো দিন গুলি রুহুলের জীবনের শ্রেষ্ঠ দিন ছিল। কতটা মধুর, কতটা সুখের তাইতো সেই স্মৃতি টুকু বুকে জড়িয়েই বেঁচে আছে রুহুল। তবে এই নিসঙ্গতার সঙ্গী হয়েছে অসীম বেদনা ও বিরহ।

কি এমন হতো যদি “দেবী” সব কিছু তছনছ না করতো। না জ্বালাতো রুহুলের ভালোবাসার সংসার। কি এমন হতো যদি জীবনের শেষ অব্দি নিজের কাছের মানুষ গুলো নিয়ে শেষ নিশ্বাস অব্দি বাঁচতে পারতো রুহুল।

কিন্তু ভাগ্যবিধাতার লিখন যে বড়োই নিষ্ঠুর-নির্মম
ছিল। পৃথিবীর নিষ্ঠুরতার কাছে হেরে গিয়েছিল
রুহুল- কাকনের পবিত্র প্রণয়বন্ধন। সেই পবিত্র
ছোয়া, পবিত্র পরশ, পবিত্র প্রণয় সব কিছু ধ্বংস
করে দিয়েছিল “দেবী”

রুহুল অতীতের সকল ভাবনা থেকে বর্তমানে ফিরে এলো। রাত শেষ তবে সূর্য পুরোপুরি উদয় হয় নি। আজকের রাতে এক মুহুর্ত ও ঘুমানো হয় নি রুহুলের।মাথা টা যেন কেমন করছে। রুহুল কক্ষে যেয়ে ওজু করে নিলো। উদ্দেশ্য এখন মসজিদে যাবে।

রুহুল মসজিদে গিয়ে জামায়াতের সাথে ফজর নামাজ আদায় করলো। নামাজ শেষে মক্তবে গেলো। ছোট ছোট বাচ্চাদের সাথে দেখা করা তার দিনকার অভ্যাস হয়ে গেছে। এরপর সিরাজপুরের সব কিছুর খোজ খবর নেওয়ার জন্য হাটতে শুরু করলো।

হাটছে আর গায়ে লাগছে প্রকৃতির বসন্তের শীতল বাতাস। ফজর নামাজ আদায় শেষে প্রকৃতিতে যে বাতাস পাওয়া যায় তাতে হৃদয়ে শান্তি দেয়। বসন্তের আগমণ হয়েছে। প্রকৃতিতে বসন্তকে ঋতুরাজ বলা হয়। কি সুন্দর রুপ ধারণ করেছে প্রকৃতি। এই প্রকৃতি কত সুন্দর, বৈচিত্র‍্যময় অথচ রুহুলের সব টুকু জুড়ে কেবল বিরহ।

হাটছে রুহুল, এত গুলো বছরে রাস্তা গুলো পাকা হয়ে গিয়েছে। মসজিদ, পাঠশালা, হাসপাতাল সব কিছুতেই উন্নতি। আর এই সব কিছু করেছে রুহুল নিজেই।

পথে দেখা হলো মৌলভি সাহেবের সাথে। রুহুল কে দেখেই বললো,”আসসালামু আলাইকুম সিরাজী আব্বা, কেমন আছেন? ”

–“ওয়া আলাইকুমুস সালাম। আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ তায়লা ভালো রেখেছে । আপনার কি অবস্থা?”

–“আছি ভালো আছি। তা আম্মার অবস্থা কেমন। সে কি আগের চেয়ে ভালো হইছে? ”

রুহুলের মুখ টা ছোট হয়ে গেলো। খুব সাধারণ ভাবেই বললো, “জি না , ওনার অবস্থা আগের চেয়েও খারাপ হয়ে গেছে। খুব শীঘ্রই শহরে নিয়ে যাবো ডাক্তার দেখাতে। কিন্তু যেতে চান না তো এজন্য অনেক কষ্ট পোহাতে হয় আর কি ।”

–“হ্যাঁ সেইডা আমিও শুনছি। তয় একখান কথা কই শুরুতেই কবিরাজ দেখাইলে এতদিনে সুস্থ থাকতো।”

–“আমি এধরণের কাজে বিশ্বাসী নই।আমি যতদিন বেঁচে আছি ওনাকে ডাক্তারের চিকিৎসা করেই যাবো।”-
কথাটি বলেই রুহুল আবারো হাটতে শুরু করলো। পিছনে মৌলভি সাহেব রুহুলের অবজ্ঞায় মুখটি ছোট করে ফেললেন।

হাটতে হাটতে রুহুল চলে এলো মহিলাশালার সামনে।
টিনের গেইটের পরিবর্তে এখানে আজ লোহার বড় গেইট। উপরে স্পষ্ট লেখা “সিরাজী মহিলাশালা”।রুহুলের হৃদয়ের গতি বেড়ে গেলো মুহুর্তেই।এই সেই স্থান যেখানে কাকন কে প্রথম দেখেছিল রুহুল। শুভ্রপরীর মতো দেখতে সেই কাকন রুহুলের মনে ভালোবাসার প্রেমপ্রাসাদ তৈরি করে দিয়েছিল। কিন্তু সেই প্রাসাদে শেষ অব্দি আশ্রয় টুকু হলো না দুজনের।
রুহুল দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন।

রুহুলের প্রণয়ের শুরু হয়েছিল কাকন কে নিয়ে,
-কিন্তু রুহুলের বিরহের শুরু করেছিল ‘দেবী’! ”

_________________________
অতীতঃ~

চোখ খুলে সকালে ভালোবাসার মানুষের মুখ দেখতে পাওয়া আনন্দের। রোজ সকালে ঘুম ভেঙে কাকনের ঘুমন্ত মুখোশ্রী দেখলে দিন টি ভালো যাবে এমন ধারণাই রাখে রুহুল।
ঘুম ভেঙেছে ত্রিশ মিনিটের অধিক। কিন্তু ঘুমন্ত কাকন কে দেখে রুহুলের সময়ের খেয়াল নেই। এই বিবিজান কে সারাজীবন দেখে গেলেও হৃদয়ের ক্ষুধা মিটবে না। রুহুলের ইচ্ছে করছে কাকন কে আদুরে ঘুম ভাঙিয়ে দিতে। রুহুল ইচ্ছে করে কাকনের ঘাড়ে কাকনের খোলা চুল গুলি দিয়ে শুরশুরি দিতে লাগলো।

ঘাড়ে শিরশির অনুভূতি হতেই কাকনের গভীর ঘুম নিমিষে ভেঙে গেলো। চোখমুখ খিচে চোখ খুলে তাকালো কাকন। হাসতে থাকা রুহুল কে দেখেতে পেলো কাকন। সাতসকালে রুহুল কে এভাবে হাসতে দেখে কাকনের ভালো লাগা অনুভব হলো। রুহুল যে তার দেখা সবচেয়ে সুদর্শন পুরুষ। রিতা বুঝি ঠিক ই
বলেছে, “কাকনের ই কপাল !”

ললাটে রুহুলের অধরের ছোয়ায় ঘোর ভাঙলো কাকনের। রুহুল কাকনের গালে হাত রেখে
বললো, “সুপ্রভাত এবং ধন্যবাদ বিবিজান”

কাকন আস্তে করে বললো, “ধন্যবাদ কেন?”

রুহুল দুষ্টু হেসে উত্তর দিলো, “এত সুখের রাতের পর এত সুন্দর সকালে আমার সাথি হওয়ার জন্য।”

রুহুলের কথা শুনে কাকন লজ্জায় রাঙা হয়ে গেলো। রাতের কথা মনে পড়তেই কাকন রুহুলের হাত ছাড়িয়ে উঠতে চাইলো। কিন্তু কাকন ব্যার্থ হলো।

রুহুল হাত ধরে ফেললো তারপর কাকন কে নিজের দিকে ফিরিয়ে বললো, “এতো লজ্জা কেন পান লজ্জাবতী। লজ্জা পেলে আমার পবিত্রফুল কে যে আরো সুন্দর লাগে। তখন আমার এই লজ্জাবতী ফুলটাকে ছুয়ে দিতে ইচ্ছে করে।”

কাকন মাথা নিচু করে বললো, “ছ..ছাড়ুন, দেরি হয়ে যাচ্ছে আমার,কাজ আছে। ”

–“উহু,,আজকাল সময় ই দিতে পারি না আপনাকে, আর যতটুকু সময় পাই আপনি শুধু আমার থেকে দূরে যেতে চান কাজের বাহানা দিয়ে। ”

–“বাহ রে আপনার কাজ কাজ আর আমার কাজ বুঝি কাজ না। আপনি থাকুন গিয়ে আপনার কাজ নিয়ে আমি তো আর আপনার কেউ না।”

–“আমার বিবিজানের বুঝি রাগ হয়েছে। বেশ এখন থেকে থেকে কাজ বাদ দিয়ে সারাদিন বুকে করে রাখবো কেমন।”

কাকন ইচ্ছে করেই বলল,”কেন আপনার এই বুকে রাখবেন কেন, কি আছে আপনার বুকে যে সেখানে রাখবেন শুনি?”

রুহুল নিজের বুকে কাকনের মাথা নিয়ে বললো, “শুনতে পাচ্ছেন আমার হৃদয়ের ধ্বনি, প্রত্যেক ধ্বনি তে কেবল একটিই শব্দ ‘ ভালোবাসি বিবিজান’।”

কাকন মাথা তুলে চাইলো রুহুলের পানে। রুহুলের পাজরে হাত রাখলো। সত্যিই রুহুলের বুকে মাথা রাখলে কাকন সবচেয়ে বেশি ভালোবাসা অনুভব করে।

রুহুল আবারো বললো, ” মায়ের পায়ের নিচে আপনার বেহেস্ত হবে কিন্তু আমার বুকে আপনার জন্য বেহেস্তর শ্রেষ্ঠ সুখ রেখেছি। একবার ভালোবেসেই দেখুন না বিবিজান, সকল সুখ আপনার পদতলে এনে দেবো।”

রুহুলের কথায় কাকনের চোখ বেয়ে নোনাজল বেরোলো। ও তো কেবল ঠাট্টার ছলে রুহুলকে বলেছিল। লোকটা এত ভালোবাসে কাকন কে। অথচ বিনিময়ে কাকন কিনা একটাবার মুখফুটে ভালোবাসার কথা বলতে পারছে না। কাকন রুহুলকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো, “এত কেন ভালোবাসেন আমায়?”

–“কেন ভালোবাসি জানি না। আমি শুধু এইটুকুই জানি আমি আপনাকে ভালোবাসি।ভালোবাসা হঠাৎ করেই মানবহৃদয়ে নিজের স্থান করে নেয়। এই আমিও আপনাকে অকারণেই ভালোবাসি বিবিজান । ”

কাকনের হঠাৎ সুভার বলা কথা গুলো মনে পড়লো। রুহুল কে ছেড়ে দিয়ে গায়ের আঁচল ঠিক করলো। তারপর খোপা করে বিছানা থেকে নেমে বললো,”আব্বা ও তো আম্মাকে অনেক ভালোবাসতো, কিন্তু… ”

রুহুল কাকনের কথা শেষ না করতে দিয়েই মুখোমুখি দাড়িয়ে গেলো। কাকনের হাত নিজের বুকের বা পাশে রেখে বললো, “আমার এই হৃদয়ে কেবল আপনার ই স্থান বিবিজান। আমার দেহে প্রাণ থাকতে আপনি ব্যতীত এই হৃদয়ে আর কেউ স্থান পাওয়া তো দূর ছুতেও পারবে না। ”

কাকন রুহুলের বুকে অধর ছোয়ালো। তারপর নোনাজল ভড়া চোখ দুটি নিয়ে রুহুলের চোখে রেখে বললো,”আপনার এই বুকেই যেন আমার শেষ ঠাই হয়।”
________________________

সকালের সকল কাজ শেষ। সুভা আচার বানাচ্ছে। কাচা আমের আচার করে তা সংরক্ষণ করবে সারা বছর। তবে এই আচার সামিয়ার জন্য বানানো হচ্ছে। অল্প চিনি দিয়ে বেশি করে ঝাল দিয়ে। আর পাশে বসেই কাটাকাটি করছে কাকন। মহীবুলের মা মাছ কাটছে আর সাথে আছে রানু। মালেকা শাশুড়ির মাথায় তেল দিয়ে দিচ্ছে।

সুভা আচার নাড়ছে ঠিক ই কিন্তু আড়চোখে কাকন কে দেখছে। এই মুখখানা সুভা কে ভীষণ তৃপ্তি দেয়। হয়তো রুহুল এর জন্যই। সে বরাবরই রুহুল আর বিলাল কে নিজের হাত পায়ের বেড়ি মনে করে এসেছে। আর রুহুলের জন্যই নিজের সব টুকু ফিরে পাওয়ার সুযোগ হারিয়েছিল। যার কারনে রুহুল মায়ের ভালোবাসা খুব একটা পায় নি। কিন্তু রুহুল তার মাকে ভীষণ ভালোবেসেছে। সুভার ধারণা কাকন রুহুল কে ভালোবাসে যার জন্য রুহুল এখন সুখের মুখ দেখছে, হাসিখুশি থাকছে। সুভা মনে প্রাণে চায় ছেলের দাম্পত্য জীবনের সকল বাধা বিপত্তি যেন দূর হয়। আর দাম্পত্য জীবন যেন সুখের হয়। হাজার হলেও নিজের নাড়ি কাটা সন্তান। ছোট নিশ্বাস ফেলে সুভা নিজের কাজে মন দিলেন।

সামিয়া কে দেখে বেশ অবাক হয় কাকন। এই মেয়েটা এত টক কিভাবে খায়। কাকন সামিয়া কে বললো, “তুমি এত টক কিভাবে খাও গো?”

সামিয়া খেতে খেতে বললো, “আমাকে সারাদিন রাত টক খাইতে দিলে আমি তাই খাবো। ”

–“এত কেন পছন্দ করো টক খেতে সেটাই তো
জানতে চাই? ”

–“জানিনা তবে টক খাইতে আমার সেই ভাল্লাগে। জানো একবার আম গাছে উঠছিলাম আম পারতে। দুই মাস ভাঙা পাও নিয়া ছিলাম হাহাহাহা। ”

–“তুমি সত্যিই অদ্ভুত সামিয়া। ”

–” আর তুমি আমার দেখা সবচেয়ে ভিন্ন মাইয়া ভাবিজান যে কি না টক পছন্দ করো না। যদিও খাও তাও মন মর্জি। ”

দাদিমা বললেন, “কাকন তুই একবার খালি পুয়াতি হ দেখবি তর ও সারাদিন চুকা খাইতে মন চাইবো।”

সামিয়া বললো, “আপনিও কি পুয়াতি হইলে সারাদিন চুকা খাইছেন দাদিমা, আর আপনে নাকি ছয়বার পুয়াতি হইছিলেন?”

কাকন সহ সকলেই মুখ চেপে হাসলো। ছেলের বউদের সামনে এমন কথা শুনে বিব্রত হলো দাদিমা।
দাদিমা সামিয়ার চুলে টান দিয়ে বললো,”শয়’তান ছেমরি। এই হেলালের মা তোমার এই মাইয়া পাইকা গেছে খালি বুড়া বুড়া কথা কয়।”

মালেকা মুখ চিপে হেসে বললো, “এই সামিয়া চুপ চাপ আচার খা, কথা কইস না তো। ”

মহীবুলের মা বললো, “হ্যা গো বউ বিয়ার তো মেলাদিন ই হইলো এখন একখান পোলাপান নেও, উটকি পারতি তো দেহি না তোমারে। ”

কাকন মাথা নিচু করে আবার কাজে মন দিলো। এর উত্তর যে তার কাছে নেই। ভীষণ লজ্জা পেলো এমন প্রশ্নে। সামিয়া কাকনের বিষয়টি বুঝতে পারলো। তাই কথা টি ঘোরানোর জন্য সামিয়া বললো, “আচ্ছা ভাবিজান আপনে কি খাইতে বেশি পছন্দ করেন। মিস্টি,ঝাল নাকি টক ?

–” মিস্টি আমার ভীষণ প্রিয়।”

–“আমারো ভালো লাগে।তবে টক বেশি ভাল্লাগে। আচ্ছা কোন মিস্টি বেশি পছন্দ আপনার ? ”

–“রসমালাই খেতে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি।রসমালাই দিয়ে লুচি, পরোটা খেতে আমার দারুণ লাগে। মা আগে অনেক করে দিতো। ”

কাকনের কথায় সুভা কাকনের দিকে চাইলো। সুভার নিজেরও এই খাবার টি ভীষণ পছন্দের ছিল। মা করে দিলে পরিবারের সবাই মিলে প্রতিযোগিতা দিতো কে কয়টা খেতে পারে। কত সুন্দর দিন কাটতো তখন। আসলে সময়ের সাথে আপন মানুষ ও হারায়। প্রিয় জিনিসের প্রতি রুচিও হারায়।

সামিয়া বললো, “ঠিক আছে আপনারে আমি রসমালাই এর ব্যবস্থা কইরা দিমু। আর বড়াম্মা পরোটা বানিয়ে দিবো তখন খাইয়েন।”

কাকন নির্বিকারে বললো,” আমি আর কখনোই রসমালাই দিয়ে পরোটা-লুচি খাবো না সামিয়া।”

–“কেন? ”

–“কেননা আমার বাবারও ভীষণ পছন্দের খাবার ছিল। যেহেতু বাবা নেই তাই আমি খেতে পারবো না।”

-“এইটা কি বলেন ভাবি, উনি নাই তো কি হইছে?”

–” সে তুমি বুঝবে না সামিয়া। যে খাওয়া শিখিয়েছে তাকে ছাড়া কিভাবে খাবো, আমার মুখে উঠবে না। ”

–“আপনি সত্যিই অনেক ভালো ভাবিজান।”

সুভা কাকনের মুখ পানে চেয়ে রইলেন। বাবার প্রতি কতটা ভালোবাসা। মেয়েরা বোধহয় এমন ই বাবাই তাদের প্রথম প্রেম। সুভা কাকন কে পরখ করতে বললেন,” আমি যদি তোমার সাথে খাই খাবে?”

কাকন কিছুক্ষণ চেয়ে রইলো সুভার দিকে। তারপর বললো, “আম্মা, আপনি আমার সাথে খেলে আমার সৌভাগ্য, তবে এই খাবার আমার মুখ তুললে পেট শান্তি পাবে, কিন্তু হৃদয়ে অশান্তি হবে। ক্ষমা করবেন। ”

সুভা কাকনের মাথায় হাত রেখে বললো, “বাবা কে ভীষণ ভালো বাসতে বুঝি?”

–” পৃথিবীতে বাবার আগে কাউকে ভালোবাসতে শিখিনি আম্মা। উনিই আমার প্রথম ভালোবাসার মানুষ ছিলেন। আর বাবার পরেই ছিলেন মা। ”

মালেকা প্রশ্ন করলেন, “তোমার বাপ-মায়ের নাম কি ছিল গো কাকন বউ?”

কাকন উত্তর দেবে ওমন সময় সিরাজী মঞ্জিলের আরেক কাজের মেয়ে তরিপা ছুটে এলো।যেন দৌড়ে এসেছেন হাপাচ্ছে খুব। তরিপা এসে সকলের উদ্দেশ্যে বললো, “আম্মারা তাড়াতাড়ি আহেন, দেহেন কারা আইছে? ”

তরিপার কথা শুনে সকলেই সেই দিকে মন দিলো। দাদিমা বললেন, “কেডায় আইছে?”

–“আপনারা আইসাই দেহেন আগে, শহর থিকা আইছে আর রুহুল দাদাভাই রে ডাক দেন।”

সকলেই কাজ ফেলে চললো দেখতে কে এসেছে।
আর তারাই বা কে আর কেনই বা রুহুলকে
ডাকতে বলেছেন?

চলবে….
#দেবী
#শবনম_রাবাহ

#দেবী
লেখিকাঃ শবনম রাবাহ (স্রোতস্বিনী)
কপি করা সম্পুর্ণ নিষেধ।
২২ঃ

সকলে রন্ধন শালা থেকে তরিপার কথা মতো ছুটে এলো। এসে দেখলো হাতভর্তি মিস্টি আর ফলমূল নিয়ে হাজির হয়েছে বকুল আর বকুলের পরিবার। বকুল মা-বাবা, বোন কে নিয়ে এসেছে। হয়তো আসার সময় খুব কষ্ট হয়েছে তাদের। পথের জমা পানিতে হাটু অব্দি ভিজে একাকার।

সুভা এগিয়ে গেলো তাদের দিকে। তারপর সালাম দিয়ে রানুর সাথে পাঠিয়ে দিলো হাত-মুখ দিয়ে আসার জন্য। সব কিছু সেড়ে বসার ঘরে তাদের কে বসানো হলো। সবাই বসার ঘরে উপস্থিত হলেও নেই কেবল সামিয়া। সে তো বকুল কে দেখেই উত্তেজনায় ঘরে খিল দিয়ে বসে আছে। নিজ চোখ কে যেন বিশ্বাস হচ্ছে না সামিয়ার।কাকন একবার চোখ বুলালো কিন্তু সামিয়াকে দেখতে পেলো না। আর এদিকে রানু মেহমানদের সেবার কাজে নিয়োজিত। কিছুক্ষণের মধ্যেই রানু আর তরিপা মিলে নাস্তা দিয়ে টেবিল ভরে ফেললো।

সকলে বকুলের বাবা-মার সাথে কথা বলছেন। বকুলের মা কাকন কে দেখে খুব পছন্দ করলেন। কাকন ও সম্মান দিয়ে কথা বললো। তারপর সুযোগ বুঝে কেটে পড়লো কারণ ও এখন সামিয়ার কাছে যাবে। সামিয়ার যে বউ হওয়ার সময় হয়ে গেছে সামিয়াকে জানাতে হবে তো।

বকুলের চোখ কেবল একজন কেই খুজছে। গত দু’মাস যাবৎ যে নারীর অপেক্ষা করছে বকুল তাকে একপলক ও দেখা হয় নি। বকুল মনে মনে ভাবতে লাগলো সামিয়া বোধহয় জানে না সে এসেছে। আবার ভাবছে সামিয়ার বিয়ে হয়ে যায় নি তো। এসেছে বেশ অনেক্ক্ষণ অথচ সামিয়ার খবর নেই। মনটা যে তার বড় আনচান আনচান করছে।

কাকন সোজা চলে গেলো সামিয়ার কক্ষের সামনে। দরজায় কয়েকবার কড়া নাড়লো। এদিকে দরজায় এমন কড়াঘাতে সামিয়ার আরো হৃদস্পন্ধন বেড়ে যাচ্ছে। একবার ভাবছে দরজা খুলবে আবার ভাবছে যে দরজা খুলবে না।
কাকন বললো, “সামিয়া দরজা খোলো আমি। ”
কাকন এসেছে শুনে সামিয়া কিছুটা শান্ত হলো। তারপর দরজা খুলে দিলো। কাকন কক্ষে প্রবেশ করলো।
কাকন সামিয়ার এমন আতঙ্কময় চেহারা দেখে হেসে দিলো। সামিয়ার কাছে যেন কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা লাগলো। সামিয়া মুখ গোমড়া করে বিছানায় খাটের হাতল ধরে বসে পড়লো।
কাকন সামিয়ার কাছে যেয়ে বললো, “কি ব্যাপার এতদিন যার প্রহর গুনেছো সে এসেছে অথচ তুমি ঘরবন্দী হয়ে আছো কোন দুঃখে বাপু?”

সামিয়া মুখটা ছোট করে বললো,” আমার ভীষণ লজ্জা করতাছে আর ভয় ও করছে। উনি কইছিলেন বাবা-মা নিয়ে আসলেই বিয়ার কথা কইবো। তাইলে কি উনি সত্যিই বিয়া করতে আইছে। আর তাছাড়া দাদাজান যদি রাজি না হয় তখন কি হইবো।”

–” আমি ওনাদের দেখেই বুঝেছি তারা তোমার জন্য প্রস্তাব নিয়েই এসেছে। আর একি কথা দাদাজানের তবে তুমি নিশ্চিত থাকো তোমার দাদাভাই আমাকে বলেছেন সে সব ব্যবস্থা করে দিবে। ”

সামিয়া কাকন কে জড়িয়ে ধরে বললো,”সত্যিই ভাবিজান, দাদাভাই কইছে সব ঠিক করব। ”

কাকন সামিয়ার নাক টেনে বললো, “হ্যাঁ সত্যি। ওইদিন রাতে উনি আমাকে বলেছিল বকুল ভাই বাবা-মা নিয়ে এলে উনি বিবাহ মেনে নেবে।”

–“আর তুমি আমায় আজ কইতাছো ভাবিজান। এতদিন কত চিন্তাই না করলাম আমি।”

–” হুম তোমার ভালোর জন্যই বলি নি। এখন এই রকম ভাবে না থেকে সুন্দর করে পরিপাটি হও দেখিনি।বকুল এর বাবা-মার ও তো তোমায় পছন্দ হতে হবে নাকি। ”

সামিয়া বিছানা থেকে লাফ দিয়ে উঠে বললো, “হ্যাঁ তাই তো। কামের বেটি হইয়া আছি আমি।ভাগ্যিস ওনাদের সামনে যাই নাই। যাই সাবান দিয়া মুখ ধুয়া আসি। ”
কাকন সামিয়ার এমন ভাবে যাওয়া দেখে হাসলো।
_______________________

লতিফ কে দিয়ে খবর দেওয়া হয়েছিল রুহুল কে। বন্ধুর আসার কথা শুনে রুহুল বেশ আন্দাজ করতে পেরেছে যে বকুল কেন এসেছে। রুহুল সাথে করে দুলাল সিরাজী কেও নিয়ে এলো। পরিবারের আসল অবিভাবক তো তার দাদাজান ই। রুহুল তার দাদাজান কে নিয়ে সিরাজী মঞ্জিলে আসলো। এর ই মধ্যে মহীবুল, হেলাল আর জামাল ও হাজির হলো।

দুলাল সিরাজী আর রুহুল যখন বসার ঘরে গেলো তখন বকুলের পরিবার সালাম দিলো।রুহুল যেয়ে বন্ধুকে আলীঙ্গন করলো তারপর বকুলের পাশেই আরাম কেদারায় বসলো। বকুল দুলাল সিরাজীকে সালাম করলো।
বকুলের বাবা বললেন, “আসলে চাচা এবার আসল কথাই আসি। আমি যতদুর জানি আপনি এ বাড়ির কর্তা তাই আপনাকেই বলা উচিৎ। আমরা এখানে প্রস্তাব নিয়ে এসেছি আপনাদের মেয়ের জন্য।”

রুহুল বাদে বাকি সকলেই কিছুটা অবাক হলো। দুলাল সিরাজী বললেন, ” আমাদের মাইয়ার জন্য প্রস্তাব।খোলাসা কইরা কইলে খুশি হইতাম আরকি।”

–“আসলে আমার ছেলে বকুল রুহুলের বোন কে বিবাহ করতে চায়। আর আমাদের কাছে ছেলের মতামতই সবার আগে। তাই আপনাদের বাড়ির মেয়েকে আমার বাড়ির বউ করতে চাই। ”

দুলাল সিরাজী বকুল কে রুহুলের বিয়েতে দেখেছিল। ছেলেটা যে মন্দ না তখনি বুঝেছিল।দুলাল সিরাজী রুহুলের দিকে চাইলেন। রুহুল চোখ দিয়ে ইশারা করলো মেনে নিতে।
দুলাল সিরাজী বললেন, “বিয়া তো আর দুই দিনের ব্যাপার না। সারাজীবন এক সাথে থাকার চুক্তি।বেশ আপনারা যখন আমাদের বাড়ির মাইয়া নিতে চান আমাদের কোনো আপত্তি নাই। আর বড় কথা হইলো বকুল রে আমার পছন্দ। আশা করি সে আমার নাতনি
রে সুখেই রাখবো। ”

দুলাল সিরাজী যখন কথা বলছিলেন তখন বকুলের জান যায় যায় অবস্থা। দুলাল সিরাজীকে বকুলের ভালো ভাবেই চেনা হয়ে গেছে রুহুলের বিয়ের সময়। অত্যন্ত রাগী স্বভাবের বুড়ো মনে হয়। এত সহজে মেনে নেওয়ার ব্যাপারটা বুঝলো না বকুল। তবে রাজি হয়েছে এতেই বকুলের শান্তি।সামনে থাকা গ্লাসের পানি খেলো বকুল। পানির সাথে সকল দুশ্চিন্তা শেষ করলো বকুল। এখন কেবল সামিয়া কে দেখার অপেক্ষা।

রুহুল এবার বললেন, “আমার কিছু কথা আছে। বকুল আমার বন্ধু ওকে আমার চেয়ে ভালো বোধহয় খুব কম মানুষই চেনে। ও আমার বোনের জন্য সুপাত্র। তবে আমি চাই আমার বোন নিজের মতামত জানাবে।সামিয়া যদি রাজি থাকে তবেই এই বিয়ে হবে। ”

রুহুলের এমন কথা শুনে বকুল মনে মনে ইচ্ছামতো গালি দিলো রুহুল কে। রুহুল বকুলের দিকে বাকা হেসে সকলের অগোচরে চোখ মারলো। বকুল এমন চোখ করলো যার মানে পরে দেখে নেবো তোকে সা’লা।

বকুলের বাবা বললেন, “তোমার সাথে সহমত রুহুল। একটা মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার আগে মতামত নেওয়া উচিত। তুমি আসলেই বুদ্ধিমান ছেলে। ”

দুলাল সিরাজী বাড়ির মহিলাদের বললেন, ” তোমরা সামিয়ারে নিয়া আসার ব্যবস্থা করো। ”

সুভা বার বার বকুলের পরিবার কে লক্ষ করলো। সুভার কেন যেন মনে হচ্ছে বকুলের মা বিয়েতে রাজি নয়। মুখে মেকি হাসি টানা শুধু। তবে বকুলের বাবা এবং বকুল কে সুভার পছন্দ হয়েছে। সুভা নিশ্চিত বকুল সামিয়াকে ভালো রাখবে। তবে বকুলের মা কে পরখ না করে সামিয়ার সঙ্গে বিয়ে কিছুতেই দেবে না সুভা।

মালেকা আর কাকন মিলে সামিয়া কে নিয়ে এলো। লাল রঙের একটি জামদানী শাড়ি পড়ে এসেছে সামিয়া। সামিয়ার ভীষণ লজ্জা করছে তবুও একপ্রকার বাধ্য হয়েই এলো। সকলকে সালাম করলো মায়ের কথা মতো। তারপর মাথা নিচু করে বসলো।

সামিয়াকে দেখেই বকুলের মনের পাখিরা উড়তে শুরু করেছে। বকুল এর চেহারার দশা এমন হয়েছে বোধহয় এখনি তিন কবুল বলে ফেলবে। কতদিন পর প্রেয়সীর মুখখানা দেখলো সে।

অন্যদিকে সামিয়া মাথা নিচু করে আছে।হুট করে এভাবে বকুলের পরিবারের সামনে সম্মুখীন হওয়াতে কিছুটা বিব্রতবোধ করছে সামিয়া। ভয়,লজ্জা সব ঘিরে ধরেছে সামিয়া কে।

বকুলের মা’য়ের মুখে কিছুটা হাসি দেখা গেলো। উনি ছেলেকে নিজের বোনের মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু সামিয়াকে ওনার পছন্দ হলো। গায়ের রঙ, গঠন সব দিক দিয়েই ঠিকঠাক সামিয়া।

দুলাল সিরাজী সামিয়াকে বললো, “সামিয়া, তোমায় আমরা সকলেই বকুলের লগে বিয়া দিতে চাই। তোমার কি বকুল রে পছন্দ হয়। যদি হইয়া থাকে তাইলে আমরা পাকা কথা কমু। ”

দাদাজানের মুখে এমন কথা শুনে সকল লজ্জায় যেন কথা বের ই হচ্ছে ন। গুরুজনদের সামনে রাজি হওয়ার ব্যাপারটা প্রকাশ করা নিতান্তই লজ্জাজনক মনে হচ্ছে সামিয়ার। সে তো রাজি কিন্তু মুখ ফুটে বলতে পারছে না।গলা অব্দি আসছে কিন্তু মুখ অব্দি আসছে না।”

সামিয়ার এমন অবস্থা দেখে রুহুল বললো, ” সামিয়া বুড়ি, আমরা তোর মতামত জানতে চাই। তুই কি বকুল কে বিয়ে করতে রাজি আসিস। তুই রাজি না থাকলে সমস্যা নেই আমরা তোকে জোর করবো না।”

এই কথা শুনে সামিয়া রুহুলের দিকে তাকালো। সে তো রাজি কিন্তু কেন যেন বলার সাহস হচ্ছে না।
রুহুল সামিয়ার দিকে চোখ দিয়ে ভরসা দিলো। আর কাকন সামিয়ার কাধে হাত রাখলো যার অর্থ হলো তোমার মতামত জানাও।
সামিয়া মুখে কিছু না বলেই মাথা উপর নিচ করে সম্মতি জানালো। যার অর্থ সে রাজি।

সামিয়ার রাজি হওয়াতে সকলেই খুশি। বকুল ও হাফ ছেড়ে বাচলো। অবশেষে নিজেকে সার্থক মনে হচ্ছে। একটা স্বর্ণের আংটি সামিয়ার হাতে পড়িয়ে দিলো বকুল। সামিয়া বকুলের দিকে তাকালেই বকুল চোখ টিপ মারলো। সামিয়া লজ্জায় চোখ নামিয়ে নিলো।

সকলেই খুশি হলো। তবে সামিয়ার বিয়ে শুনে জামাল আর মহীবুলের কোনো হেলদোল নেই। তবে হেলাল ভীষণ খুশি। ছোট বোন কে রুহুল যেমন ভালোবাসে হেলাল ও তেমন ভালোবাসে। হেলাল মায়ের দিকে চাইলো। দেখল তার মাও খুশি। হেলাল বকুলের সাথে বসে কথা বলা শুরু করলো।

সকলের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিলো এক মাস পর যেহেতু সামিয়ার মাধ্যমিক পরীক্ষা তাই বকুলের জোড়া জুড়িতে ১৫ দিন পর বিয়ের তারিখ ঠিক করা হলো। সব কিছু ঠিকঠাক করা হলো। দুলাল সিরাজী জানালো আগামীকাল বকুলের পরিবার যাবে। আজ তাদের সিরাজী মঞ্জিলে থাকতেই হবে। অগত্যা তারা থাকার জন্য রাজি হলো।
_________________________

সামিয়া খুশিতে নাচতে শুরু করেছে নিজ কক্ষে। আর কাকন সামিয়ার কীর্তিকলাপ দেখে হাসছে। নিজের বিয়ের খুশিতে এমনভাবে নাচতে প্রথম কাউকে দেখছে কাকন।যেখানে সে নিজেই লজ্জায় নুইয়ে পড়েছিল আর সামিয়া নাচছে।
রানু সামিয়ার কক্ষে একটা মেয়েকে নিয়ে এলো। বয়স ২০ এর অধিক হবে আরকি। সালোয়ার কামিজ পড়া। বেনি করে একপাশে ছেড়ে দিয়েছে বেনি।
তাকে দেখে কাকন সামিয়া দুজনেই ভদ্রতা বজায় রাখলো এবং তাকে বসতে দিলো। কাকন চিনতে পারলো এটা হলো বকুলের বোন যে চুপচাপ নিচে বসে ছিল। কাকন বুঝেছে মেয়েটা এখানে তাদের সাথে ভাব করতেই এসেছে।

কাকন চেয়ার টেনে বসতে দিলো তারপর বললো, “আসসালামু আলাইকুম। ”

মেয়েটা বললো, “ওওওয়া ল্ললাইকুম সসালাম।
আআমি বিবিন্তি। আআমি ববকুল এর বোবন। ”

মেয়েটা যে তোতলা তা বুঝলো কাকন-সামিয়া। সামিয়া যেহেতু চঞ্চল এবং দুষ্টু স্বভাবের ওর হাসতে ইচ্ছে করছিল। কিন্তু নিজেকে সংযত রাখলো।

কাকন নিজেদের পরিচয় দিলো। সামিয়াও ভদ্র ভাবে কথা বললো। তবে ওরা একটি জিনিস স্পষ্ট ভাবে বুঝলো আর তা হলো বিন্তি খুব ভালো মনের মেয়ে। উচ্চশিক্ষিত পরিবারের হলেও মার্জিত মেয়েটা।
বিন্তি আরো বললো, সে ঢাকা চারুকলা ইন্সটিটিউট এ পড়াশোনা করে। সে দারুণ ছবি আঁকতে পারে।

রানু এসেছিল বিন্তি কে চা নাস্তা দিতে। এই কথা শুনে সে বিন্তির কাছে বললেন, “আফা আপনে মানুষের হুবুহু আঁকবার পারেন?”
বিন্তি হেসে বললো,” হহ্যাঁ আআমি আঁআকতে প্পারি।”

রানু খুশি হয়ে বললো, “তাইলে আমারে একটু আঁকায়া দিবেন আফা। আমি রাইখা দিমু আর আমার সুয়ামিরে দেখামু।আমি তাইলে আইজ বিকালেই শাড়ি পইড়া সাইজা গুইজা আমু নে।”

রানুর কথা শুনে সকলেই হেসে দিলো। বিন্তি বললেন, “ঠঠিক আআছে ”

বেশ অনেক্ক্ষণ এভাবেই গল্প করেই কাটিয়ে দিলো কাকন,সামিয়া আর বিন্তি। তিনজনের বেশ ভাব হয়ে গেলো।
_________________

এর ই মাঝে দরজায় কেউ কড়া নাড়লো। তিনজন ই খোশগল্পে মজে ছিল। কাকন জিজ্ঞেস করলো, “কে?”

পুরুষ কন্ঠে বকুল বললো, “জি আমি বকুল। সামিয়ার সাথে কিছু কথা বলতে চাই।”

তিনজনের ই বুঝতে অসুবিধে হলো না কেন এসেছে।
কাকন আর বিন্তি উঠে দাড়ালো। বিন্তি কাকনের হাত ধরে বললো,”চচলো কাকন তুতুমি আআমাকে তোতমাদের পুরো মমহল টা ঘুরিয়ে দদেখাবে? ”

কাকন কিছু বলবে তার আগেই বিন্তি জোর করে নিয়ে গেলো। আর এদিকে সামিয়ার কথা যেন গলায় আটকে গেছে। কাকন-বিন্তি চলে গেলে সামিয়া মাথায় কাপড় দিয়ে চুপটি করে বসে রইলো।

বকুল কক্ষে এসে দরজা ভিড়িয়ে দিলো। বকুল সামিয়ার দিকে এগোলো তবে কিছু না বলে সোজা গিয়ে সামিয়ার বিছানায় শুয়ে পড়লো। এমন অবস্থায় সামিয়া কিছুটা ভড়কে গেলো। বলা নেই কওয়া নেই সোজা বিছানায় শুয়ে পড়লো এ আবার কেমন।

সামিয়া মাথার কাপড় ফেলে কোমড়ে হাত রেখে বললো, “এই বজ’জাত লোক আমার বিছনা থিকা নামেন। শুইলেন কেন হ্যাঁ। ”

বকুল হাসি নিয়ন্ত্রণ করে বললো, “বিয়ের পর বউকে নিয়ে এই বিছানায় থাকতে হবে তো তাই একটু শুয়ে দেখলাম কেমন লাগে।”

সামিয়া নাক ফুলিয়া বললো, “আপনে আস্ত একটা বজ’জাত। আপনেরে বিয়া করমু না।”

–“তাই তাহলে বসার ঘরে সম্মতি জানালো কে। আমি তো ভেবেছিলাম আমার বউ ই ছিল ওইটা।এখানে কি তাহলে অন্যকেউ দাড়িয়ে আছে নাকি আমার সামনে?”

সামিয়া বউ শব্দ টা শুনে লজ্জা পেলো। তবুও বললো, “আপনার সাথে রাগ করছি আমি কথা কমু। বাহির হন আমার ঘর থিকা। ”

বকুল আধশোয়া হয়ে বললো, “কেন আমি কি করেছি রানি সাহেবা।”

–” যাওয়ার আগে দেখা করছিলেন? এই কয়দিন আমার খোজ নিছিলেন। নেন নাই তাই আপনের লগে কথা নাই। স্বার্থপর পুরুষ মানুষ জানি কোথাকার। ”

বকুল এবার সোজা হয়ে বসলো। তারপর সামিয়া কেও বসতে বললো। সামিয়া খাটের হাতল ধরেই দাড়িয়ে রইলো। বকুল সামিয়াকে বলল, ” এই কয়মাস অনেক ব্যস্ত ছিলাম। চাকরি করে খেতে হয় তাই সরকার কে হিসেব না দিলে কি চলে বলো। তবে এক মুহুর্তের জন্য ও তোমায় ভুলি নি। বাবা-মাকে রাজি করিয়েছি। মা প্রথমে রাজি ছিল না। পরে আমার অনুরোধে রাজি হয়েছে। আর এখানে তো বন্যা হয়েছিল তাই একটু দেরি হয়ে গেলো আরকি।”

সামিয়ার মন টা এখন একটু নরম হলো। তবুও বললো, “একটু না অনেক দেরি। আর কিছুদিন পর আসলে আমি অন্য পোলারে বিয়া করতাম হ্যাঁ ।”

বকুল বললো, ” কিহ বিয়ে করতে, তা কাকে বিয়ে করতে শুনি”

–“আপনেক কমু কেন। ”

–“তাই ঠিক আছে আমিও তাহলে অন্য মেয়েকে বিয়ে করতাম। ”

ব্যাস এই কথা টা শুনেই সামিয়া ক্ষেপে গেলো। তারপর বললো, “আপনে বাহির হন ঘর থিকা। আপনের চেহারাও দেখতে চাই না আমি। ”
সামিয়া একপ্রকার জোর করে বের করে দিলো বকুলকে। বেচারা বকুল তো জ্বালাতে চেয়েছিল সামিয়াকে উল্টো নিজেই বোকা বনে গেলো।

আর এদিকে সামিয়া দরজা আটকিয়ে দু-হাত মেলে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়লো। মন টা তার বিয়ে বিয়ে করছে।

চলবে……
#দেবী
#শবনম_রাবাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here