#দেবী,৩১,৩২
লেখিকাঃ শবনম রাবাহ (স্রোতস্বিনী)
কপি করা সম্পুর্ণ নিষেধ।
৩১ঃ
দুলাল সিরাজীর মাথায় পানি ঢালছে লতিফ। বিছানায় বসে মাথা নিচু করে রেখেছে। আর লতিফ বদনা দিয়ে পানি মাথার উপরিভাগে দিচ্ছে।তার পাশেই বসে আছে তার সহধর্মিণী যে গুন গুন করে কাদছে।
দুলাল সিরাজী প্রচন্ড চিন্তায় আছে। কাল থেকে তার চোখে কেবল একটি জিনিস ই ভাসছে।সকলের পায়ে পায়ে হেলালের রক্ত লেগেছে। যা তার মস্তিষ্কে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। দুলাল সিরাজী তো জন্মগতভাবেই বংশের মান রক্ষার শিক্ষায় পরিপক্ক হয়েছে।অথচ তার বংশের মান এতটুকু। তার কাছে ব্যাপারটা অত্যন্ত হেয় পুণ্য লাগছে। এছাড়াও নতুন চিন্তা তো আছেই।
দরজায় কারো করাঘাতে হুশে ফিরলেন দুলাল সিরাজী। তাকিয়ে দেখলেন রুহুল দরজায় দাড়িয়ে আছে। দুলাল সিরাজী বললেন, “ভিতরে আইসো।”
অনুমতি পেয়ে রুহুল কক্ষে গেলো।দুলাল সিরাজী লতিফ কে ইশারা করলেন চলে যেতে। তাই লতিফ ও বালতি আর বদনা নিয়ে চলে গেলো।দাদিমাও বুঝলেন তার স্বামী এখন জরুরি কথা বলবে তাই সে ও বেরিয়ে গেলো।
দুলাল ঠিক হয়ে বসে বললো, “কিছু কইবা রুহুল?”
–” জি দাদাজান, কিছু কথা ছিল। ”
–“কি কথা কইবা কও। ”
–“আপনার ও কি মনে হয় হেলাল কে আমি হত্যা করেছি বা এতে আমার কোনো হাত আছে।”
দুলাল সিরাজী গামছা দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে বললেন,”তুমি কি মহীর কথা কইবার চাও। তাইলে শুইনা রাখো আমি মহী জামাল কাউ রেই বিশ্বাস
করি না। তাই ওইগুলা নিয়া চিন্তা কইরো না।”
–“হয়তো আপনি বিশ্বাস করেন না তবে অন্যরা তো করতে শুরু করেছে দাদাজান ।”
–” অন্যরা করতাছে মানে। পুরা সিরাজপুর জানে তুমি কেমন পোলা।”
–“দাদাজান, একদল লোক সিরাজপুরের দক্ষিণ দিকে আমার নামে এই কথা রটিয়েছে যে এই হত্যায় আমার হাত আছে। আর এই কাজটি কে করছে জানেন?
–“কেডায় করতাছে? ”
-“আপনার নিজ সন্তান অর্থাৎ আমার চাচাজান নিজে।”
–“এইডা তুমি কি কও রুহুল জামাল করবো কেন।”
–“কারন সে চায় না আমি এই বংশের কর্তা হই। এগুলো ছড়ালে আমার বদনাম হবে। আপনি বাধ্য হবেন মহীকে সব কিছু দিতে। ”
–“তুমি কেমনে শুনলা?”
–“সাজু বলেছে। আর সাজু কখনো মিথ্যে খবর দেয় না দাদাজান। এইটা আপনিও জানেন।”
–“জামালের কি সুবুদ্ধি হইবো না। নিজ বংশের মান নিজে হাতে শেষ করতাছে। ”
–“আব্বার জন্য চাচাজান যেমন বংশের প্রধান হতে পারেন নি চাচাজানের ধারণা আমার জন্য মহী হতে পারবে না। তাই উনি এমন করছেন।”
–“কর্তা হইলেই তো আর হইবো না। যোগ্যতা থাকুন লাগবো। হের কি আর ওই যোগ্যতা আছিল নাকি এই জন্যই বিলাল রে দায়িত্ব দিছিলাম।”
–“সেটা আপনি ভালো জানেন দাদাজান আপনি কেন দিয়েছিলেন। আর চাচাজান কে নাকি কথা দিয়েছিলেন অথচ কথার খেলাপ করে আব্বাকে প্রধান করেছিলেন। সেই ক্ষোভ হয়তো এখনো পুষে রেখেছে চাচাজান। ”
–“সেইসব অতীত তোমার না ঘাটলেও হইবো।”
–” বেশ বলব না। তবে আর একটা কথা বলতে চাই!”
–“হ্যা কও কি কইবা?”
–“আমি সিরাজপুরের সিরাজী আব্বা হতে চাই না।আমি চাইনা এই বংশের প্রধান হতে। তার চেয়েও বড় কথা এই ডাক শুনার জন্য নিজের পরিবার, আপন মানুষদের মাঝে কোনো দ্বন্দ চাই না আমি।”
–“কিহ তোমার মাথা খারাপ হইয়া গেছে নাকি। তুমি যদি না হও মহীবুল আর জামাল কি করতে পারে তুমি জানো না। ধ্বংস করবো আমার বংশ বাপ-বেটা মিলা।”
–“দাদাজান সব জানি আমি। তবে এই দায়িত্ব যদি আমি নেই সিরাজী মঞ্জিল আর একতা থাকবে না।”
–“মঞ্জিলে একতা থাকুক আর না থাকুক তোমারে হইতেই হইবো।আমার বংশ আমার কাছে সবার আগে।”
রুহুল মেকি হেসে বললো, “আপনি তো বরাবর আপনার বংশের নিয়েই ভেবে গেলেন দাদাজান।”
–“হ্যাঁ ভাবি তাই তুমি তোমার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করো।”
–“মাফ করবেন আমি আমার সিদ্ধান্তে অটল। ”
–” তাইলে তুমিও শুইনা রাখো যদি না হও তোমারে এই মঞ্জিলে জায়গা দেওয়া হইবো না।”
–“আমায় জায়গা না দিলে কিছু করার নেই। আমি আমার আম্মা,আব্বা স্ত্রীকে নিয়ে চলে যাবো এই মঞ্জিল থেকে। ”
দুলাল সিরাজী চিল্লিয়ে উঠলেন,”রুহুল!”
–“আমি আপনার বংশের নিয়ম মানতে বাধ্য নই দাদাজান। আপনার বংশের নিয়ম আমার সব টুকু কেড়ে নিয়েছিল। আমার মায়ের মুখের হাসি কেড়ে নিয়েছে। আজ হেলালের এই মৃত্যু এই সব কিছু আপনার বংশের জন্য। আজ ছোট আম্মার বিলাপ কান্না সব কিছু এগুলাতে আমি শতভাগ নিশ্চিত আপনার এই অহংকার জড়িত। জীবনে তো কম পাপ করেন নি। এখন আমার হাত ও পাপের রঙে রাঙাতে চান। তাহলে শুনে রাখুন আমি আমার মায়ের সন্তান যে মা পবিত্র। তার শিক্ষায় আমি বড় হয়েছি। অন্যায় কারী কে শাস্তি দেবো আর নির্দোষ দের মুক্তি। আমি কোনো অন্যায় করতে চাই না। ”
কথাটি বলেই রুহুল চলে গেলো।
দুলাল সিরাজী রুহুলের এমন আচরণে অবাক হলেন।
মনে মনে বললেন,” আমি বাঁইচা থাকতে আমার স্বপনে পানি ঢালতে পারুম না। এই জমিদারি, এই মঞ্জিল সব রক্ষা করার দায়িত্ব তোমারে নেওয়াই লাগবো রুহুল। আমার ফাদে পা দিতে তুমি বাধ্য হইবা। ”
___________________
সামিয়া নামাজ পড়ে দোয়া পড়ছে। বকুল সামিয়ার দিকে চেয়ে আছে। গতকাল কতই না হাসি খুশি ছিল। নিজের বিয়ে অথচ নিজের ভাই কে হারিয়ে কেমন মন মরা হয়ে আছে।
বকুল এগিয়ে যেয়ে সামিয়ার পাশে বসলো। বললো, “সামিয়া ”
সামিয়া কোনো উত্তর দিলো না। বকুল আবারো বললো, ” সামিয়া এভাবে উদাস হয়ে থেকো না। তোমায় এভাবে দেখে আমার ভালো লাগছে না। এভাবে চোখের জল না ফেললে কি হয় না। ”
সামিয়া কাদতে কাদতে বললো, “তাইলে কি হাসবো আমি বলেন।আমার আম্মা কানতাছে, আমার ভাইজান মইরা গেছে আর আপনে আমায় কেমনে এই কথা টা কইতাছেন। ”
–“আমি তোমার কষ্ট টা বুঝছি কিন্তু দেখো কাদতে কাদতে কেমন তোমার গলা বসে গেছে। আমার ভালো লাগছে না তোমার এমন মুখ।”
–” আমার জন্যই তো মইরা গেছে আমার ভাই। আমি কানমু না তো কে কানবো।”
–“তুমি নিজেকে কেন দোষী ভাবছো?”
–“তো কারে কমু কন। আমার যদি বিয়া না হইতো তাইলে কি আমার ভাই রে কেউ খুন কইরা যাইতে পারতো। কেউ পারতো না। ”
–“এটা ওনার ভাগ্যে ছিল। আল্লাহর ইচ্ছা সব। ”
–” ভাগ্য? পচা ভাগ্য এইডা। আপনে কেন আইলেন আমার জীবনে। আপনি যদি না আসতেন তাইলে আমি আপনারে ভালোবাসতাম না। বিয়া ও হইতো না। আর না ভাইজান মরতো। আপনি ও দায়ী।”
–“আমাদের বিয়েকে এভাবে দোষ দিও না। সব দোষ হত্যাকারী দের।”
সামিয়া আবারো বিলাপ কান্না শুরু করে বললো, “আমার যদি বিয়া না হইতো ভাইজান মরতো না। আইজ ভাইজানের লাশ সিরাজী মঞ্জিল থিকা যাইতো না। আমার জন্য আইজ আমার ভাইজান রইলো না। আমার খুব কষ্ট লাগতাছে।”
বকুল সামিয়াকে শক্ত করে নিজের বুকে জড়িয়ে নিলো। সামিয়ার মাথায় হাত বুলাতে লাগলো।মনে মনে বললো, “আজ ই কেদে নাও। আমি আর কখনো তোমায় কাদতে দেবো না।”
____________________
বকুল নামাজ পড়তে বের হবে। কক্ষ থেকে বেরিয়ে দেখলো রুহুল ও বের হচ্ছে। বকুক এগিয়ে গেলো রুহুলের দিকে। তারপর দুই বন্ধু মিলে হাটতে হাটতে মসজিদে গেল।
বকুল রুহুলকে বললো,” কাল বিয়েটা না হলেই বোধহয় ভালো হতো। ”
–” হুহ,, এগুলো বলে কি আদোও কি কোনো লাভ আছে। যে যাওয়ার সে তো চলেই গেছে। হেলাল কি আদোও ফিরে আসবে। ”
-“সামিয়া আমাকে বারবার বলছে বিয়ের জন্যই এগুলো হয়েছে। নিজেকেও দোষ দিচ্ছে সাথে আমাকেও।”
–“সে তো ছোটাম্মা আমাকে দেখেও বলছে। ওর মাথা ঠিক নেই এখন। আমাদের দুই ভাই এর অনেক আদরের তো তাই এমন বলছে। ”
–” হেলাল কে এভাবে কেউ কেন মারলো। ছেলেটাকে যতটা দেখেছি ভালোই মনে হয়েছে। তোদের কি কারো সাথে শত্রুতা আছে রুহুল। ”
–” কে মেরেছে,কেন মেরেছে সেটা যদি জানতাম তাহলে হেলাল আজ জীবিত থাকতো। কেননা তাকে অনেক আগেই আমি নিজ হাতে হত্যা করতাম।”
–“তোর কাউকে সন্দেহ হয় না। বা চোখে ও পড়েনি কোনো কিছু। তোর মত বিচক্ষণ মানুষের চোখ ফাকি দেয় কিভাবে। ”
–” আমরা যা দেখতে চাই আমাদের চোখ সেটাই দেখায় আমাদের।চোখের সামনে এমন অনেক সত্য থাকে যা আমাদের কল্পনার বাইরে।হয়তো আমার সাথে ও তেমন ঘটছে। তবে খুব শীঘ্রই ধরবো। ”
–” তুই নিজেও সাবধানে থাকিস রুহুল। প্রথমে আব্বা, তারপর হেলাল। আমার কেন যেন মনে হচ্ছে গভীর কোনো চক্রান্ত আছে। ”
–” কিভাবে সাবধানে থাকবো যেখানে নিজের লোক ই বড় শত্রু। আর আমি মৃত্যুর ভয় করি না। আগে মৃত্যুর কথা ভাবলে আম্মার মুখ ভেসে উঠতো আর এখন বিবিজানের কথাও মনে হয়। আমি মরে গেলে এই দুনিয়া তাদেরকেও বাচতে দেবে না।”
–“কেউ না জানলেও তোর বেদনা আমি জানি। এই জন্যই বলছি তুই নিজে সতর্ক হ। ”
–“হুম, সতর্ক তো আমায় হতেই হবে। খুনিতে যে ধরতেই হবে আমার। নিস্তার নেই তার। ”
__________________
রাতে কাকন নামাজ পড়ে সব কাজ করলো।বাড়িতে মেহমান অনেক সেই সুবাদে কাকনের উপর কাজের চাপ বেশি। সকলেই কান্না কাটি করছে কিন্তু সুভার আদেশ মতো মন খারাপ হলেও মেহমান দের খাওয়ার ত্রুটি রাখা যাবে না। সবাইকেই নিজ হাতে বেড়ে খাওয়ালো কাকন। রানু এসে জানালো রুহুল খেতে চায় কাকন যেন নিজে নিয়ে যায় খাবার ভোজন কক্ষে। কাকন রানুর সাহায্যে সব খাবার ভোজন কক্ষে নিয়ে গেলো। তারপর রুহুল কে বেড়ে দিতে লাগলো।
রুহুল কাকন কে বললো, ” ছোট আম্মা, অতিথিরা আর বাড়ির সবাই খেয়েছে?
–“হুম অল্প করে সকলেই মুখে নিয়েছে শুধু।”
–“আর আপনি খেয়েছেন?”
–” আমি, আমি পরে খাবো। আপনি খেয়ে নিন
তারপর আম্মা কে নিয়ে খাবো।”
–“কেন আম্মা এখনো খায় নি? ”
–“আপনি না খেলে আম্মা খায় না।আর আমিও আপনার জন্য অপেক্ষায় থাকি তাই আম্মাও খায় না।”
–“আপনি আমার জন্য অপেক্ষা করবেন না।ক্ষুধা লাগলে দয়া করে খেয়ে নেবেন।”
–“না দাদিমার নিষেধ। স্বামীকে রেখে খেলে অমঙ্গল। ”
–“এগুলো উদ্ভট কথা।আপনি খেয়ে নেবেন।আর আম্মাকেও বলবেন যেন খেয়ে নেয়।”
–“আপনি খেলেই উনি খেতে বসেন।”
কিছুক্ষণ কথা হলো না। তারপর রুহুল বলল” একটা কথা বলবেন বিবিজান? ”
–” জি বলুন”
–“আম্মা কি আপনাকে ভালোবাসে বা আপনাকে আপন করে নিয়েছে। ”
–” জি ভালো বাসবেন না কেন। উনি তো আমাকে অনেক ভালোবাসেন।আর আপন করেও নিয়েছে।”
–” সত্যি তো। ”
–“হ্যাঁ। আপনার কি এতে কোনো সন্দেহ আছে। আর ভালো বাসবেই না কেন বলুন।”
–” আমার স্ত্রী তো আপনি এই জন্য সন্দেহ হয় যে আদোও ভালোবাসে কি না আপনাকে। ”
–“আমি আপনার স্ত্রী এই জন্য ভালোবাসবে না, মানে?”
রুহুল কিছু বলবে তার আগেই মহীবুল আর জামাল ভোজনকক্ষে ঢুকলো। অগত্যা রুহুল বললো,
–” কিছু নয়। আপনি রন্ধনশালায় যেয়ে খেয়ে নেন আম্মার সাথে। এখন আসুন। ”
কাকনও রুহুলের কথা মত চলে গেলো।
মহীবুল আর জামাল চেয়ারে বসলো। মহীবুল নিজের মাকে ডাকলো। কিন্তু সাড়া পেলো না। জামাল আবারো ডাকবে তার আগেই রুহুল বললো, ” আজ নিজ হাতে বেড়ে খান চাচাজান। ”
মহীবুল বললো, “আব্বার হাত এখুনো ঠিক হয় নাই। ”
–“বেশ তাহলে আমি বেড়ে দিচ্ছি। ”
–“আমি আম্মারে ডাকছি হেতিই আসব দিতে।”
রুহুল জামাল আর মহীবুলের প্লেটে খাবার বেড়ে দিতে দিতে বললো, “চাচি আম্মা হয়তো অন্য কাজে ব্যস্ত। নিজে হাতে বেড়েও তো খাওয়া যায়। ”
–“আম্মা থাকতে আমরা বাড়মু কেন?”
–“ওহ উনি বেড়ে দেয় তোরা খাস।আর চাচিআম্মা আদোও খায় কিনা কোনোদিন খোজ নিয়েছিস? ”
–“ওইসব খোজ রাখার সময় নাই আমার! ”
–“বাহ, নিজের মা এর খোজ নেওয়ার সময় নেই।অথচ ছোট আম্মাকে এত ভালোবাসিস যে হেলালের মৃত্যুতে আমার হাত আছে এটা বুঝাচ্ছিলি। তার প্রতি যত্ন দরদ সব উতলে পড়ছে।”
মহীবুল আমতা আমতা করে বললো, “আমি আপনের কথা কই নাই দাদাভাই। আমি শুধু কইছি আপনে আমাগো পছন্দ করেন নাই কোনোদিন ওই আরকি।আর এইডা কি মিছা কথা কইছি নাকি হ্যাঁ । ”
–“আমি তোদের কত টা পছন্দ করি এটা যদি তোরা বুঝতি এ কথা বলতে পারতি না। আর হ্যাঁ তোরা দক্ষিণে আমার নামে বাতাশা ছিটানো বন্ধ কর। ”
–” মা,,মানে কিসের বাতাশা। ”
–“তুই নিজেই ভেবে দেখ কি করছিস। ভুলে যাস না আমার চোখ ফাকি দেওয়ার সাধ্য তর এখনো হয় নি।”
জামাল সিরাজী বললেন, ” আহ রুহুল, বাপজান তুই এগুলা কইস না। ছোট ভাই বোঝে না তাই কইছে। আর কিসের বাতাশা বুতাশা কইতাছা।”
–“চাচাজান মহী তোমার যোগ্য সন্তান। তবে বুঝাও তোমার ছেলেকে আমার বিরুদ্ধে যেন এগুলো না বলে।”
–” হয়তো অন্য কেউ করতাছে। আমাগো শত্রুর তো অভাব নাই। ”
–“হ্যাঁ আসলেই শত্রুর অভাব নেই। তবে তোমাদের বুদ্ধির বড় অভাব। এইজন্য নিজ ভাতিজাকে হত্যা করতে চাও। সময় থাকতে শুধরে যাও তা না হলে ভয়াবহ কিছু হয়ে যাবে।”
রুহুল প্লেটে হাত ধুয়ে চলে গেলো। আর মহীবুল নিজের প্লেট টি মেঝেতে ছুড়ে ফেললো। বললো, “এত কিছু কেমনে জানতে পারে ওই রুহুল।”
–“হেইডা তো আমার মাথায় খেলে না। ”
–“সা’লা ওর তেজ কমাইয়া ছাড়মু আমি।”
জামাল ছেলের দিকে পানি এগিয়ে দিয়ে বললো, “ঠান্ডা হ বাজান। আর তো কিছুদিন, ওরে শেষ করমুই।”
–“তার আগে আপনের বুইড়া বাপ রে খু’ন করেন। হের জন্যই এত কিছু সহ্য করা লাগে ।”
–“সাপের লেজে পা দিতে গেলেই ছোবল। আল্লাহ নিয়া গেলেই রাস্তা পরিষ্কার,ধৈর্য্য ধর। ”
–“একবার খালি বুইড়া মরুক। রুহুলরে তো শেষ করমুই।”
জামাল ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো, “আচ্ছা করিস। তুই ই তো করবি।”
–“তয় ওরে শেষ করার আগে ওর বউ আর মা রে খুন করমু। ওর বউ আর মা এর শোকে ও যখন দিশেহারা হইবো তখন ওরে ও খুন করমু।”
জামাল বাকা হেসে বললো, “ওর ওই ফকিন্নি বউরে আগে আমি খুন করমু। মা*র জন্য ওই রুহুল আমার হাত ভাংছে। ওর বউ এর চুল ধরছি দেইহা রুহুল জীবনের প্রথম আমার গায়ে হাত তুলছে। কিন্তু
কিচ্ছু কইতে পারি নাই তয় কিচ্ছু ভুলি নাই। ”
–“ওর বউ এর চুল ধরছেন দেইহা আপনের হাত ভাংছে তাই না আব্বা। ওর বউ রে খুন করার আগে দেইখেন কত কি ধরি। তখন দেখমু ওর তেজ কই থাকে।”
চলবে….
#দেবী
লেখিকাঃ শবনম রাবাহ (স্রোতস্বিনী)
কপি করা সম্পুর্ণ নিষেধ।
৩২ঃ
প্রতিক্ষার পর ভালোবাসার মানুষ টিকে বিয়ে করে কাছে পেয়ে ও যেন পেলো না বকুল।পরিবারের সকল কে রাজি করিয়ে সেই বিয়ে হলো অথচ বিয়ের দিন ই হত্যাকাণ্ডের জন্য বিবাহিতা স্ত্রী যে ঠিক ভাবে কথাও বলছে না। বকুল বারবার কক্ষের দরজা দিয়ে উকি দিচ্ছে কখন আসবে সামিয়া। চলে যাওয়ার আগে কি একটা বার আলিঙ্গন ও করতে পারবে না নিজ স্ত্রীকে।
বকুল ধৈর্য্য হারা হয়ে নিচে নেমে এলো। বসার ঘরে ঢুকতে যাবে তখন মনে হলো এত গুলো মানুষের মধ্যে নিজে গিয়ে সামিয়া কে ডাকা লজ্জার ব্যাপার। তাই বুদ্ধি করে কাউকে খুজলো। সেখান দিয়েই যাচ্ছিল রানু। রানু কে দেখে বকুল ডাকলো,” আপনি শুনছেন”
রানু বললো, “জি দুলাভাই কন,,কিছু দরকার? ”
–” না মানে দরকার নেই। সামিয়া কে একটু ডেকে দেবেন? ”
–” হ্যাঁ দিমু না কেন আমি এখুনই কইতাছি?”
–” ধন্যবাদ। আর হ্যাঁ বলবেন যে আমি কক্ষে অপেক্ষা করছি। আর আস্তে ধীরে বলবেন গুরুজনেরা আছে!”
–“আইচ্ছা, আপনে যান দুলাভাই। ”
বকুল সোজা সামিয়ার কক্ষে যেয়ে বসে পড়লো। কিছুক্ষণ পর সামিয়া কক্ষে এলো। এসে
বললো, “কিছু বলবেন? ”
–“হ্যাঁ, বসো আমার পাশে। কিছু কথা ছিল। ”
সামিয়া দুরত্ব বজায় রেখে বকুলের পাশে বসলো। বকুল দূরত্ব ঘুচিয়ে সামিয়ার নিকটে বসলো হাত দুটো ধরে বললো, “আমি আজ চলে যাবো সামিয়া।”
সামিয়া বকুলের দিকে চাইলো। সামিয়া বলতে চাচ্ছিলো যাবেন না। কিন্তু মুখ ফুটে বললো, “ওহহ”
বকুল আবারো বললো, “দেখো যেটা হয়েছে সেটা হয়তো আর ফিরে আসবে না। নিজে শক্ত হও আর আম্মাকেও শক্ত হতে বলো। এভাবে ভেঙে পড়লে
জীবন চলবে না।”
–“হুম ভেঙে পড়ি নি আমি। আর কিছু বলবেন কি? ”
–“হ্যাঁ, মা চায় তুমি আমার সাথে ঢাকা যাবে কিন্তু এই দুর্ঘটনার জন্য আমি তোমায় নিয়ে যেতে চাই না। সেই সাথে তোমার পরীক্ষাও আছে। তাই তোমার এখানে থাকাটাই শ্রেয়।”
–“আপনি নিয়ে যেতে চাইলেও আমি যাবো না। ”
–“আমি আমার সামিয়া রানি কে আমি চিনি। সে যে যাবে না সেও বুঝেছি তাই মাকে রাজি করিয়েছি।”
–“ধন্যবাদ, আর এখানে থাকা টা আমার দরকার।”
বকুল সামিয়ার গালে হাত রেখে বললো,”হুম, আর তুমি না চাইলে আমি জোর করবো এমন মানুষ আমি নই। ”
–” সাবধানে যাবেন, আর নিজের খেয়াল রাখবেন। ”
–” হ্যাঁ,তবে সুযোগ পেলেই তোমাকে চিঠি লিখবো।
তুমি না হয় দু মিনিট সময় অপচয় করে পড়ে নিয়ে
পড়ে নিও আমার চিঠিটি।”
–“আপনার চিঠি পড়তে আমার সময় অপচয় হবে এমন ধারণা রাখেন। আপনি আমার স্বামী আপনার চিঠি আমার কাছে অমুল্য উপহার হবে।”
বকুল সামিয়ার কপালে চুমু খেয়ে বললো, “বেশ তুমিও না হয় সময় পেলে একখানা চিঠির উত্তর লিখো আমার নামে। ভালোবেসে পরম যতনে গ্রহণ করবো।”
সামিয়া সকল কথা ভুলে বকুলকে জড়িয়ে ধরলো। বললো, ” আমার আপনার কথা খুব মনে পড়বে।”
–“আমারও অনেক মনে পড়বে আমার দুষ্টুরানি কে।”
_________________________
বকুলের পরিবার বেড়িয়ে পড়লো সিরাজী মঞ্জিল থেকে। গতবারের ন্যায় অত সুন্দর বিদায় তাদের দেওয়া হলো না। তবে নিয়ম মতো যতটুকু করতে পেরেছে করা হয়েছে। রুহুল ব্যাস্ত থাকায় মহীবুলকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তাদের এগিয়ে দেওয়ার। মহীবুল মনে মনে বিরক্ত হলেও মুখ প্রকাশ করলো না। মহীবুল তাদেরকে নিয়ে গেলো এগিয়ে দিতে।
সবাই বসার ঘরে বসে কথা বলছিল। এর ই মাঝে তড়িপা জানালো ফাতিমা এসেছে। কাকন খুশি হয়ে দৌড়ে গেলো ফাতিমার কাছে। কতদিন পরে আবার ফাতিমার সাথে দেখা হবে। কাকন ফাতিমাকে যেয়ে নিয়ে এসে বসার ঘরে গেলো। ভদ্রতার খাতিরে সকল কেই সালাম দিলো ফাতিমা। কিছুক্ষণ মালেকার কাছে বসে থাকলো সন্তান হারা মায়ের আর্তনাদ শুনে ফাতিমার কষ্ট হলো। সেও একসময় সন্তানের জন্য কত কেদেছে। কাকন জানে ফাতিমা কারো সন্তান কে কত ভালোবাসে।
ফাতিমার মনের কথা বুঝে কাকন ফাতিমাকে নিজ কক্ষে নিয়ে গেলো। এই প্রথম ফাতিমা কাকনের শোবার ঘর দেখলো।এত সুন্দর ঘর দেখেই ফাতিমার মন ভড়ে গেলো। কাকনের সুখ দেখে খুশি হলেন।
ফাতিমা কাকন কে বললেন, “এইখানে তুই মেলা সুখে আছা তাই না রে কাকন।”
–“হুম সে আছি আর কি। আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ তায়লা ভালোই রেখেছেন। ”
–“আমি সবসময় দুয়া করি তর লিগা যাতে তুই সুখে থাকোস। তুই যে আমার মাইয়া। ”
কাকন ফাতিমার হাত ধরে বললেন, “আর আপনি আমার মা। ”
–” এই জন্যই ভয় হয় কাকন। নিজে অল্প বয়সে বেধবা হইছি তরে তা হইতে দেখবার পারুম না। তুই রুহুল সাব রে দেইখা রাখিস মা। ”
–“এভাবে বলছেন কেন হঠাৎ আপা।”
–“পুরা সিরাজপুরে আতঙ্ক। প্রথমে বিলাল সিরাজীর কেমনে কি হইলো। আবার তর দেওর হেলাল অকালে মরলো। আমার এখুন রুহুল সাব রে নিয়া ডর হয়।”
–“আপনি ভয় পাবেন না আপা। আমার বিশ্বাস ওনার কিছুই হবে না। ওনার মতো সৎ মানুষ হয় না। আর সৎ ব্যক্তিদের আল্লাহ তায়লা নিজে রক্ষা করে।”
–“তর বিশ্বাস অটুট থাকুক। তবে তুই ও চোখ কান খোয়াল রাখিস।তর চাচা শশুড় এর মতলব ভালা না।”
–“সে আমি জানি আপা। তবে ঘরের মানুষদের শত্রু প্রমাণ করা দুনিয়ার সবচেয়ে কঠিন কাজ। ”
–“হুম তয় এই দুঃখের সময় একখান সুখবর আছে। ”
–‘কি সুখবর আপা। ”
–” নুপুর পুয়াতি হইছে। আর ফুলের ও বিয়া আইছে ভালো ঘর থিকা। আশা করি বিয়া দিয়া দিমু। ”
–“সত্যি আপা এটা তো অনেক ভালো খবর। শুনে
খুব খুশি হলাম আপা।”
–“হুম তর দাদা শশুড় বিয়ার খরচ দিবো। তরে যাইতে দিলে যাস। ফুল খুব খুশি হইবো।”
–“চেষ্টা করবো।” কথাটি বলে কাকন আলমারি খুললো। তারপর কিছু টাকা বের করে ফাতিমার হাতে দিলো। বললো,”রাখুন এগুলো। নিজের মতো করে খরচ করবেন। ”
ফাতিমা কাকনের হাতে ফিরিয়ে দিয়ে বললো,” না, না আমি কেন টাকা নিমু। তর টাকা তুই রাখ। ”
–“না আপা, আপনি রাখুন। আমি না আপনার মেয়ে। মেয়ের দেওয়া জিনিস ফেরাতে নেই। ”
–“কিন্তু কাকন তুই বোঝার চেষ্টা কর। মাইয়ার শশুড় বাড়ি থিকা টাকা নেওয়া খুব লজ্জার কাম। কেউ দেখলে খারাপ হইয়া যাইবো।তরেও খারাপ কইবো।”
–” আপনি কাউকে বলবেন না যে আমি দিয়েছি তাহলে কেউ জানবেও না। আর এগুলো আপনি নিজের চিকিৎসা করবেন। আপনার বুকের ব্যাথার ওষুধ কিনে খাবেন কেমন। আপনি ভালো নেই আপা আপনার চোখ মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে।”
ফাতিমা কাকনের কথায় কেদে দিলো।ব ললো, “আমার জন্য এত ভাবোস তুই। তুই আমার পেটের সন্তান না হইলেও আমার মাইয়া। আয় বুকে আয়।”
______________________
জামাল সিরাজী বাড়ির কান্না কাটি দেখে বিরক্ত।
বকুলতলার আগে মসজিদের সামনে ফারুকের চায়ের দোকানে বসে আছে জামাল।একটা কড়া চা খাবে। একেই তিনদিন হলো মদ খেতে পারছে না। তার উপর কান্নাকাটি তার অসহ্য লাগছে। আবার হাত নিয়েও ভোগান্তি তে পড়েছে। এক হাত দিয়ে কাজ করাটা বেশি কষ্টের। হাতের দিকে চাইলেই সেদিনের ওই দৃশ্য ভেসে উঠে চোখের সামনে~~
জামালের দায়িত্বে থাকা আম বাগানের ছোট্ট ঘরে বসে মহীবুল, হেলাল আর জামাল তাশ খেলছিল। পিছন থেকে এসে রুহুল লা”থি মেড়ে দিলো জামাল সিরাজীর পিঠে বরাবর । যার ফলে জামাল সিরাজী উপুড় হয়ে পড়ে যায় নিচে।
জামাল অশ্রাব্য গালি দিয়ে উঠে দাঁড়ায়। হাত বাড়ায় মারার জন্য মহীবুল নিজে। কিন্তু রুহুলের রক্ত চোখের দিকে চেয়ে আর সাহস হয় না রুহুলকে কিছু বলার।
জামাল রুহুলের কলার ধরে বলে, ” তর সাহস এত্ত বড় হইয়া গেছে।তুই আমার গায়ে, তর চাচারে লা’ত্থি দেস।”
রুহুল নিজের কলার ছাড়িয়ে জামালের হাত মুছড়ে বলে,”তোর সাহস কি করে হয় আমার স্ত্রীর গায়ে হাত তুলেছিস।আমার স্ত্রীর চুলের মুঠি ধরেছিস তাই না। তোর মাথার একটা চুল ও আস্তো রাখবো না আমি। ”
জামাল হাত এর ব্যাথায় আর্তনাদ করে ওঠে। মহীবুল রুহুলের হাত থেকে নিজের বাবাকে ছাড়াতে আসে। হেলাল ও যোগ দেয়। তারপর রুহুল ছেড়ে দেয় জামাল কে। কিন্তু হাত এর অবস্থা খারাপ হয়ে যায়।
হেলাল রুহুল সামনে এসে অনুরোধের সুরে বলেছিল,” দাদাভাই, মাফ কইরা দেন চাচাজান রে। সে আমাগো আব্বার মতো। হের গায়ে হাত তুলতাছেন। দাদাজান শুনলে আপনের উপর নারাজ হইবো। ”
–“যা দাদাজান কে যেয়ে বল রুহুল চাচাজানের গায়ে হাত তুলেছে। পারলে এটা ও বলবি কেন তুলেছে। ”
মহীবুল বললো, “কেন তুলছে শুনি কন। আপনের বউ আমার আব্বারে ধাক্কা দিয়া যে মাথা কাইটা দিছে তার বেলা ?”
রুহুল মহীবুলের গালে থাপ্পড় মেড়ে বলে,” তুই আসলেই একটা ********। তোর আম্মার গায়ে তোর বাপ হাত তোলে আর তুই তোর আব্বার অন্যায়ে সায় দেস। আরে আমার স্ত্রী অন্তত তোর মত না যে অন্যায় সহ্য করবে। বেশ করেছে তোর আব্বাকে ধাক্কা দিয়েছে।”
–“তাইলে আমার আব্বাজান ও ঠিক করছে আপনের ওই ফকিন্নি বউ রে চুলের মুঠি ধরছে। ”
–“আমার বউ ফকিন্নি নাকি রাজরানি সেটা তোর না বললেও চলবে। আর কান খুলে শুনে রাখ জামাল সিরাজী আর একবার যদি আমার স্ত্রীর গায়ে টোকা দেওয়ার ও সাহস করিস তাহলে মনে করে নিস রুহুল সিরাজী হাত চালাতে কতটা পারদর্শী।”
কথাটি বলেই রুহুল চলে যেতে নেয় কিন্তু জামাল রাগের মাথায় ভুল করে বসে। রুহুলের দিকে চেয়ার তুলে ঢিল মারে কিন্তু সেটা রুহুলের লাগে না। উল্টো রুহুল ক্ষেপে যেয়ে জামালের হাতে সেই চেয়ার দিয়ে ইচ্ছে মতো পেটাতে থাকে। জামালের চিৎকারে সকলেই কেপে ওঠে। কিন্তু কিছু বলার সাহস হয় না।
হাত যখন রক্তাক্ত হয়ে যায় তখন রুহুল ছেড়ে দেয়। পকেট থেকে টাকা বের করে মহীবুলের হাতে দিয়ে বলে, “চিকিৎসা করে নিস তোর আব্বার। আর এই ঘটনা যেন কেউ না জানে। তাহলে তোদের বাপ-বেটার কুকীর্তিও ছড়াতে সময় লাগবে না।আর হ্যাঁ মঞ্জিলে বলবি পা পিছলে পড়ে যেয়ে হাত ভেঙেছে। ”
তারপর আরেক দফা জামালের পায়ে লাত্থি মারে। আর বলে, “এটা চাচি আম্মাকে মারার জন্য।”
সেদিন জামালের চিৎকার কেউ শোনেনি। ছেলেকে নিয়ে করা কুকর্মের সব প্রমাণ রুহুলের কাছে আছে তাই দুলাল সিরাজী বেচে থাকতে রুহুলের কিছু করতে পারবে না। দুলাল সিরাজী এগুলো শুনলে তাদের কে মঞ্জিল থেকে বিতারিত হতে হবে।এই ভয়ে নিরুপায় জামাল।
ফারুকের কথায় সেদিনের ঘটনা থেকে হুশে ফিরলো জামাল।
ফারুক ফোকলা দাতের হাসি দিয়ে বললো, “আপনের চা,, এই নেন খাইয়া দেহেন। ”
জামাল চা ছুড়ে ফেললো তারপর বললো, ” আবার বানা। ”
অন্যকোনো মানুষ হলে ফারুক কানের উপর দিতো দু-তিনটে মাইর। কিন্তু জামালকে কিছু বলার সাহস নেই। হাজার হলেও ফারুক দুলাল সিরাজীর ই লোক।বললো, “ঠিক আছে আপনে যা কইবেন তাই করুম। ”
সেখান দিয়েই যাচ্ছিল সাজু। সচারাচর সাজু কে দেখা যায় না। রুহুলের দেওয়া নানা ফরমায়েশ পালন করতেই সে ব্যাস্ত থাকে। সিরাজপুরের বিখ্যাত পালোয়ান ছিলো সাজু। এই জন্যই রুহুল সাজু কে নিজের খাশ লোক হিসেবে রেখেছে। সেই সাথে
বিশ্বস্ত ও বলা যায়। জামাল সাজু কে দেখে বাকা হেসে এগিয়ে গেলো। বলল,”আরে সাজু মিয়া নাকি?”
সাজু জামাল কে এখানে আশা করে নি। তবে জামালের কথা শুনে বললো, ” আপনের দেখতাছি বুদ্ধির সাথে সাথে দৃষ্টি ও লোপ পাইছে। ”
–“মানে,, কি তুই কি কইবার চাস? ”
–” না আপনে যে আমারে দেইখা ও জিগাইতাছেন এই জন্য কইলাম দৃষ্টি শক্তি কইমা গেছে। ”
জামাল সাজুর ব্যাঙ্গ করা ঠিক ই বুঝলো।তবে আবার ও বললো, “আচ্ছা সে কইছা কইছাই, বাদ দে। তর জন্য একখান প্রস্তাব আছিল।”
–“হায় আল্লাহ তাই কিসের প্রস্তাব বিয়ার নাকি। বিয়ার প্রস্তাব হইলে আমি রাজি। ”
–“আরে ধুর আগে কথা ডা হুইনা নে তারপর চিল্লা।”
–“আচ্ছা কন দেহি কিসের প্রস্তাব।”
জামাল সাজু কে টেনে নিরিবিলি জায়গায় নিয়ে গেলো। বললো, “শোন রুহুল আর আব্বাজান তরে যে টাকা দেয় তার চেয়ে দ্বিগুণ দিমু। আমার হইয়া কাম করবি?”
সাজু বেশ বুঝেছিল এটাই হবে। তবুও বললেন,
–” তাই তা এই টাকা কই পাবেন আপনে। সিরাজী আব্বাই তো আপনেরে টাকা দেয়। তাইলে ঘুরাইয়া ফিরাইয়া হের টাকাই তো পাইলাম। ”
–“আরে ওই সব দিয়া তুই কি করবি। তরে টাকা দিলেই মিটা গেলো। ভাইবা দেখ তর ই কিন্তু লাভ হইবো।”
–“হুম লাভ তো বুঝলাম কিন্তু আমি তো নুন খাইছি রুহুল সিরাজীর তার বেলা।”
–” ওইসব ভুইলা যা, আমার দলে আয় তুই যা
চাইবি তাই দিমু।”
–“কিন্তু আমি তো তা করুম না।রুহুল সিরাজীর বিরুদ্ধে আমি যামু না। কারণ আমি আপনের মতো হাটুত বুদ্ধি নিয়া ঘুরি না। পারলে আপনে ভালো হইয়া যান।”
–“তুই আমাক খারাপ ভালো শিখাবি নাকি সাজু। তর ভালোর জন্যই কিন্তু কইলাম। ”
–” অনেক সময় শিখান ও লাগে। তয় আরেকটা কথা কই যেইডা রুহুল সাব জানে না।”
–“কি কইবার চাস হুনি? ”
–“আমি কিন্তু রুহুল সাব রে এখুনো কই নাই হাবিবুল্লাহ রে দুই নম্বরি কামে পাঠাইছিলেন। আমার লোক দেখছিল ওর লুঙ্গির ভিতর অস্ত্র রাখতে। আমি জানি কিন্তু আপনে গো সংসারে অশান্তি হইবো দেইখা কই নাই। তয় হেলাল ভাই এর খু’নের পিছে যদি আপনের হাত থাকে আমি কিন্তু কইয়া দিমূ।”
–“মা মানে , তুই কি জানোস। আর হেলালের মৃত্যুর পিছে আমার হাত নাই।”
–“মানে খুব সহজ,, রুহুল সিরাজীরে কইলে আপনের কি অবস্থা করবো ভাইবা দেহেন। আর হেলাল রে বাইরের কেউ খুন করছে। তয় হাবিবুল্লাহ আপনের জন্যই মরছে। ”
–“দেখ সাজু কাউ রে কইস না।যত ট্যাহা লাগে দিমু।আব্বাজান আর রুহুল জানি জানে না। ”
–“না কিছু লাগতো না। তা আপনের হাতের কি অবস্থা।”
–” আছে মোটামুটি কুনোরকম।”
–” আগের মতো হইবো কিনা সন্দেহ।আর একটা কথা শুইনা রাখেন আপনের ভালোর জন্যই কইতাছি।ভাবিমার ক্ষতি করতে চাইয়েন না। এইবার হাত ভাংছে পরের বার না আপনের অন্যকিছু ভাংতে পারে। ”
জামাল ঢোক গিলে বললো, “আরে আমি ক্ষতি চামু কেন ওই মাইয়ার। ও তো আমাগো বাড়ির বউ। ”
–” তাই, তার মানে কইতে চান ভাবিমার ক্ষতি চান না?”
জামাল ঢোক গিললো। আজকাল সময়টাই খারাপ যাচ্ছে তার। জামাল মেকি হাসি দিয়ে সেখান থেকে সড়ে গেলো। আর সাজু বাকা হেসে নিজ কাজে গেলো। আন্দাজে মা’রা ঢেল টা তাহলে সঠিক।
চলবে,,,,,,,,