দেবী,৪৩

0
300

#দেবী,৪৩
লেখিকাঃ শবনম রাবাহ (স্রোতস্বিনী)
কপি করা সম্পুর্ণ নিষেধ।

খোলা বাড়ান্দায় দাড়িয়ে আছে কাকন। আকাশের ওই সঙ্গীহীন চাঁদের মতো নিজেকেও একলা নিঃসঙ্গ মনে হচ্ছে। রুহুল ঢাকা গিয়েছে দু’সপ্তাহ হবে। সিরাজী মঞ্জিলে সবকিছু আগের মতোই আছে। সবকিছু আগের ন্যায় চললে ও ঠিক নেই কাকনের মন। জীবনে বোধহয় মানুষ অনাকাঙ্ক্ষিত জিনিস গুলোর সাথেই গাঢ় ভাবে জড়িয়ে যায় যেমনটি জড়িয়েছে কাকন। না চাইতেও রুহুলের সাথে পৃথিবীর সবচেয়ে পবিত্রবন্ধনে আবদ্ধ হলো। তারপর একের পর এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। তবে কাকনের জীবনে সবচেয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা হলো রুহুলের সঙ্গে প্রনয়ে আবদ্ধ হওয়া।কাকন না কোনোদিন বিয়ে করতে চেয়েছিল আর না কোনো পরিবার চেয়েছিল, আর না কাউকে ভালোবাসতে চেয়েছিল। একা হয়ে যাওয়ার কষ্ট সবচেয়ে নিকৃষ্ট যা বাবা-মা হারানোর পর বুঝেছিল।রুহুলের সঙ্গে বিবাহের পর এত কিছু পেয়েও শান্তি নেই। হৃদয় কাকন কে শান্তি দিলেও মস্তিষ্ক দেয় নি। আবার মস্তিষ্ক যখন শান্তি দেয় হৃদয় দেয় না। এই তো সেরাতে কাকনের সাথে রুহুলের প্রথমবারের মতো মনোমালিন্য হলো। তাতে অবশ্য রুহুলের দোষ ছিল না কাকনেরই দোষ। কাকন নিজের অজান্তেই রুহুলের মনে কষ্ট দিয়ে ফেলেছে। এই কষ্ট টা কাকন কে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। কাকনকে অবজ্ঞা করেই রুহুল ঢাকায় চলে গেল। কাকন কথা বলতে চাইলেও এড়িয়ে চলে গিয়েছিল।সে রাত কতই না অশ্রু ঝরেছিল কাকনের।

আবার সুভার হত্যা পরিকল্পনার কথা ও কাউকে বলতে পারছে না। রুহুলকে বলতে চেয়েছিল কিন্তু কাকন জানে নিজের মায়ের মৃত্যুর কথা জানলে যে রুহুল যুদ্ধ বাধিয়ে ছাড়বে অথবা তাদের খুন করতে পিছোপা হবে না। কিন্তু দুলাল আর জামালকে রুহুল হত্যা করুক এটা কাকন চায় না। আবার এগুলো জানার পর যদি রুহুল কর্তা না হতে চায় তবে মহিলাশালাসহ নানা কাজ অসম্পূর্ণ থেকে যাবে সেটিও কাকন হতে দেবে না। আকাশ পাতাল ভাবনা অকালেই কাকন কে শেষ করে দেবে বোধহয়।

নানা চিন্তা ভাবনা করতে করতেই শেয়ালের ডাক শোনা গেলো। এই ডাকে কাকনের মনে হলো এখন ঘুমাতে হবে। কাকন কক্ষে এসে হারিকেন এর আলো বাড়িয়ে দিলো। তারপর তাদের যুগল ছবিটির দিকে চেয়ে থাকলো। আগে সময় পার করতো অন্যকিছু তে। তবে আজকাল সময় পার করে এই ছবিটি দেখে। রুহুল এর এই হাসি মুখখানা কাকনের খুব ভালো লাগে। এই সুন্দর হাসিটি কাকনের মনে যে আনন্দ দেয় সে আনন্দ বোধহয় আর কোনো কিছুতেই পায় নি আজ অব্দি কাকন। কাকন কাঠের চেয়ার টি টানলো তারপর সেই চেয়ারে উঠে দাড়ালো। রুহুলের হাসি ভরা ঠোঁটে হাত রাখলো। কি সুন্দর হাসি অথচ নিজের করা ভুলের এজন্যই এই সুন্দর হাসি, এমনকি রুহুলের এই সুন্দর মুখ দর্শন ও হচ্ছে না কাকনের। কাকন ছবিটি নামিয়ে বিছানায় নিয়ে এলো। তারপর বুকে জড়িয়ে শুয়ে পড়লো বিছানায়। আর দুচোখ বেয়ে বইতে লাগলো নোনাজল।মস্তিষ্ক তো মানুষকে ঘৃণা করতে শিখিয়েছিল। তবে হৃদয় কেন রুহুল কে ভালোবাসলো।

“হৃদয় ও মস্তিষ্ক বোধহয় পৃথিবী সৃষ্টির শুরু থেকেই জাত শত্রু। এ জন্যই বিংশ শতাব্দীতেও এরা বন্ধু
হতে পারছে না।”
______________________

পরের দিন সকালে কাকন রান্নার জোগাড় করতে গেলো।রন্ধন শালায় পা রাখতেই সুভার সাথে ধাক্কা খেলো। সুভা নিজেকে ঠিক রেখে বললো, “তুমি ঠিক আছো কাকন?
কাকন উত্তর দিলো না। নিরুত্তর চেয়ে রইলো সুভার দিকে। মুখ ফুটে হাজারো কথা, হাজারো প্রশ্ন দলা পাকিয়ে আসছে। সুভা ভ্রু কুচকে বললো, ” কি হলো কথা বলছো না কেন?”

কাকন বললো,”জি আম্মা,আমি ঠিক আছি।”
কাকনের আচরণ ঠিক লাগছে না সুভার। আজ বেশ কিছুদিন হলো কাকন কেমন যেন স্বাভাবিক আচরণ করে না। বিষয়টি সুভা বেশ বুঝেছে তবে সুভা কিছু বলতে চায় না। সুভা রন্ধনশালা থেকে বের হয়ে যাওয়ার আগে কাকনের দিকে এক পলক তাকালো কাকন আসলেই ঠিক নেই।

সুভা চলে গেলে সবাই সবার মতো কাজ করতে থাকলো। দাদিমা কাকনের উদ্দেশ্যে বললো, “নাতবউ তোর মন উদাস কেন। আইজকাল তরে জানি কেমন দেখা যায় তরে!”

–“আমার মন উদাস হবে কেন দাদিমা। আমি একদম ঠিক আছি।”

–“ঠিক থাকলেই ভালো।এই বয়সেই তো হাসখেল করবি। মুখ গোসা কইরা থাকবি না বুঝছা।”

এরই মাঝে রানু হাসতে হাসতে হাসতে রন্ধনশালায় এলো। সকলেই সেদিকে তাকালো। মালেকা অবাক হয়ে বললো, ” কিরে এত জোরে হাসোস কেন? ”

–“হেহেহে, হাসমু তো কি করমু কন আম্মা!”
–“তা কি এমন হইছে যে হাসোস? ”
–“ইয়ে কি আর কমু আপনে গো কইতে শরম করে!”
দাদিমা বললো, “হাসতে শরম করে না আর কইতে শরম করে কেন?”

মুখ পাতলা রানু হাসতে হাসতে বললো, “আমি ছোট চাচিআম্মারে ডাকতে গেছিলাম।”
–“তাই হাসা লাগব?”
–“তো চাচা কি কইতাছে জানেন?”
–“কি কইছে?”
–“আমি দরজার কাছে যাইয়া হুনি যে উনি চাচি আম্মা রে কইতাছে হেতি যুবক হইলে আবার পোলাপান নিতো। হেহেহে চাচার বুড়া বয়সে বাপ হওয়ার সখ হইছে।”

রানুর কথা শুনে ঘর কাপানো হাসি দিলো সকলে। কাকনের এত চিন্তার মাঝে ও হাসি ফুটলো মুখে।দাদিমা হেসে বললো, ” আমার পোলাডা বুড়া বয়সে বাপ হওয়ার সখ হইছে। এখুন বউ রে নিয়া সুখে থাকতে চায় সে। আল্লাহ আমার দুয়া কবুল করছে এই অনেক। তয় এখুন তো আর বাপ হওয়া যাইব না। নানা হইয়া গেছে, কয়দিন পর দাদা ও হইবো।”

রানু বললো, “ঠিক কইছেন দাদি আম্মা। কিন্তু হের কথা শুইনা নিজের হাসি থামাইবার পারি নাই। এই জন্যই তো এইখানে চইলা আইলাম। চাচি আম্মারে
ও আর ডাকি নাই। ”

–“ভালো করছা এখুন যাইয়া ডাইকা নিয়া আয়। জামাল এর লিগা হের ই রান্দা লাগবো। ”
–“আইচ্ছা দাদিমা। ”
রানু চলে গেলে মালেকা কাজ করতে করতে বললো,
” সবাই শেষ কালে সুয়ামির ভালোবাসা পাইলো।কিন্তু আমিই জীবনে কোনো দিন পাইলাম না।”

দাদিমা বললো, “এইভাবে আর কত দোষারোপ করবি আমার বিলালরে। সে যা করছে অবুঝে করছে তাই বইলা কি তরে অভাবে রাখছে।কোনো কিছুর অভাব দেয় নাই। তিন তিনডা সন্তান ও দিছে বিলাল তরে।”

–“জি আম্মা দিছে কিন্তু ভালোবাসা কি দিছে সেইডা দেয় নাই। সে আমারে ভালোবাসা দেয় নাই। আমার এই কষ্ট কেয়ামত পর্যন্ত থাইকা যাইবো।”
__________________

জামাল আর দুলাল সিরাজী বসার ঘরে বসে আছে। মাহফিল কিভাবে করবে এখন থেকেই তার পরিকল্পনা শুরু করে দিয়েছে তারা। কাকন পানডালা হাতে নিয়ে রন্ধন শালায় বসলো।কোনো কাজ করুক আর না করুক পান বানানোর চাকরি টি যেন কাকন কে দেওয়া হয়েছে লিখিত ভাবে। অগত্যা করতেই হয় কাকন কে। দাদিমা কাকনের হাতের পান খুব পছন্দ করে। দুলাল সিরাজীর কাছে ও কাকন বিয়ের আগে থেকেই পান বানিয়ে খাওয়ানোর জন্যই পরিচিতি ছিল। কাকন পান বানিয়ে একে একে সকল কে দিলো। মালেকা প্রশংসা করতে করতে বললো, “বুঝি না ওর হাতের পান এত স্বাদ লাগে কেন ? আপা আপনে এখুন অন্তত কাকন বউ এর হাতের পান খান। ”

সুভা বললো, “না তোমরাই খাও মালেকা। আমার এগুলো পছন্দ না। গন্ধেই মাথা ঘুরায় জর্দার জন্য।”

কাকন বললো, “আম্মা আপনি কি খাবেন যদি খান তাহলে দেবো।আর না হলে দাদাজানকে দিতে যাবো।”

জামালের স্ত্রীও বললো , “বড়ভাবি খান না একখান কি এমন হইবো। সত্যি কইতাছি কাকনের পান খাইয়া মাঝে মাঝে মনে হয় ওর হাত দুইডা আল্লাহ পান বানানোর লিগাই বানাইছে। ”
কাকন হেসে আনমনেই বললো, ” যার থেকে পান বানানো শিখেছিলাম উনি আমার চেয়ে ও ভাল পান বানাতে পারতো চাচি আম্মা। তার থেকেই শেখা কি কি দিলে ভালো লাগে পানের সাথে। ”

মহিবুলের মা বললো, ” বড় ভাবি আপনে হইলেন চাঁদের থিকা ও সুন্দর। এই চাঁদ মুখের ঠোঁটে যদি পানের লাল পেচকী লাগে আপনেরে আরো সুন্দর লাগবো।”

সুভা বললো, “বেশ এত করেই যখন বলছো তোমরা আজ বহু বছর পর পান খাবো। কাকন দাও দেখি মা আমায় একটা দাও।”

কাকন আরেকটি পান সুভার জন্য বানিয়ে দিলো। সুভা পান মুখে দিয়ে চিবোতে লাগলো। অনেক বছর পর আজ পান মুখে দিলো। অন্যরকম স্বাদ অনুভব করলো।
সুভা মুখফুটে বললো, ” সত্যিই কাকনের হাতের পানে মজাই আলাদা। দারুণ তো। ”

লাল টুকটুকে ঠোঁট দুটোর দিকে মালেকা তাকিয়ে থাকলো। সুভার সুন্দর মুখখানায় আরো সুন্দর লাগছে। এই সোন্দর্যের জন্যই বোধহয় বিলাল সিরাজী সুভাকে বেশি ভালোবাসতো। মালেকার তাকানো দেখে বললো, “কি মালেকা এভাবে চেয়ে আছো কেন?”
–“আপনে এত সুন্দর কেন আপা?”
–“তুমিও কি কম সুন্দর নাকি, তুমিও খুব সুন্দর।”
–“না আপা আপনে আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দর নারী।”

সকলেই সুভার দিকে চোখ নিবদ্ধ করলো।সুভাকে সত্যিই খুব সুন্দর লাগছে। মহীর আম্মা ও বললো, “ঠিক ই কইছেন ছোট ভাবি বড়ভাবি আসলেই খুব সুন্দরী। এই জন্যই রুহুল ও কিন্তু বড়ভাবির মতো হইছে। শুধু গায়ের রঙ ডা চাপা এই আরকি।”

দাদিমা বললো, ” হ আমার মানিক ওর আম্মার মতো সুন্দর চেহারার হইছে। এখুন তো কাম কাজের চাপে আগের মতো রঙ নাই। তয় ছোট কালে সেই সুন্দর আছিল,দেইখা মনে হইছে বিলেতি মানুষ।”

কাকন বললো, “ওনার নাক, ঠোঁট আম্মার মতো সুন্দর হয়েছে। গায়ের রঙ টা শ্যাম তবে চোখ দুটো একদম অন্যরকম। মায়াবী আঁখি ওনার। ”

কাকনের কথায় সুভার হাসি মুখ গায়েব হয়ে গেলো।সুভা আনমনে বললো, “হ্যাঁ আমার খোকার চোখ দুটো অন্যরকম। এই বংশের কারো সাথে মিল নেই। এই জন্যই আমার খোকার দৃষ্টিভঙ্গিও ভিন্ন।”

সুভার এই কথায় দাদিমা ক্ষীপ্ত হলো। মুখ ফুটে কিছু বলার আগেই রানু বললো,”তয় যা ই কন আপনেরা ভাবিজান যদি বড়াম্মার লগে কোথাও যায় লোকে কিন্তু কইবো আপনেই বড়াম্মার পেটের মাইয়া। দুইজন ই কিন্তু খুব সুন্দর। সিরাজপুরে সক্কলেই কয় যেমন সুন্দরী শাউরি তেমন সুন্দরী পোলাবউ। ”

কাকন রানুর কথায় হেসে বললো,”পেটে জন্ম না দিলেও উনি আমার আম্মা।আমি তো ওনার মেয়েই।”

কাকনের কথায় সুভার মন ভরে গেলো। সে নিজেও তার শাশুড়ি কে এত সম্মান করেনি। অথচ কাকন কত সম্মান কত ভালোবাসে। শেষ বয়সে ছেলে আর বউমা দিয়েই বোধহয় সুখের মুখ দেখবে এমন টাই মনে হয় এখন সুভার।

কাকন হাতে পানডালা নিয়ে দাড়ালেই দাদিমা বললো, “নাতবউ যা তর দাদাজান রে পান দিয়া আয়। ”
___________________

কাকন পানডালা হাতে নিয়েই বসার ঘরের উদ্দেশ্যে গেলো। সেখানে জামাল আর দুলাল সিরাজী রয়েছে। কাকন দরজার কাছে গিয়ে আগেই ডাকলো না। কান খাড়া করে দাঁড়িয়ে থাকলো। শুনতে চায় জামাল আর দুলাল এর কথোপকথন।
জামাল বলছে,”আব্বাজান রুহুল কবে আসবো?”

–“পত্র দিছিলাম ওরে। এখনো একসপ্তাহ দেরি হইবো কাজ কাম শেষ করতে,আসতেও দেরি আছে।”
–“তাইলে ওর আম্মার কি করবেন?’
–“কাল তো শুক্রবার। পরশুই ওর আম্মার শেষ দিন হইবো।শনিবারে সিরাজী মঞ্জিলের শনি শেষ করুম।”

–“ঠিক আছে আব্বাজান তাই হইবো। তা মেহমানরা কবে আসবো মঞ্জিলে। আসমা, আলেয়া,সামিয়া, রোকেয়া ওগো কি কইছেন?”
–“হ রুহুল সকলরেই দাওয়াত দিছে আর আমিও চিঠিপত্র পাঠাইছিলাম । সামনে জুম্মার আগেই
সকলে মঞ্জিলে চইলা আসবো। ”

–“আব্বাজান কাম ডা কি ঠিক হইবো। রুহুল যদি জাইনা যায় আর তাছাড়া যদি সুভাও বাঁইচা যায়?”

–“ওই গুলা নিয়া তোমার ভাবা লাগবো না। আমি যতদিন বাঁইচা আছি রুহুল তোমারে কিছুই করতে পারবো না। আমি রুহুলের বাপের ও বাপ। এইসব কিছুর মালিক আমি। আমার বংশের নাম ছাড়া এই সিরাজপুরে রুহুল অচল।”

–“তাইলে কর্তা হওয়ার পর যদি প্রতিশোধ নেয়?”

–“নিবো না কারণ তার আব্বা অসুস্থ হইয়া আমার মঞ্জিলে পইড়া আছে। এই দুনিয়ায় রুহুল যদি কোনো পুরুষরে ভালোবাইসা থাকে সে হইলো বিলাল সিরাজী। নিজের আব্বার খুনি রে ধরার জন্য হইলেও রুহুল কর্তা হইবো। আর তারপর এত কিছু পাওয়া মাথা ঠিক থাকব না।ক্ষমতার নেশা খুব খারাপ একবার পাইলে কোনো মানুষই ছাড়ে না। সময়ের সাথে সাথে সব ভুইলা যাইবো। ”

কাকনের হাতের পানডালা কাপছে।আরেকটু আগে আসলে আরো কিছু বোধহয় শুনতে পারতো।কাকনের চোখে কিছুক্ষণ আগের সুভার পান খাওয়া হাসিমুখ ভাসছে । তারপর কল্পনায় রক্তাক্ত সুভাকে দেখলো ওমনি ভয় পেলো কাকন। কাকন কোনোরকম ঘাম মুছে অনুমতি নিয়ে বসার ঘরে গেলো।
দুলাল সিরাজী হাসিমুখে বলল,”আরে কাকন আইসো।”

–“আ,,আপনার পান দিতে এসেছিলাম দাদাজান।”

–“হ্যাঁ দেও। তোমার হাতের পানেই আমার জান। কি জাদু যে করো পানে আল্লাহ জানে।”
–“জাদু করবো কেন। এমনিই সবকিছু দিয়ে বানিয়ে দেই আরকি। চাচাজান আপনিও কি খাবেন? ”
–“হ দেও আমিও খাই একখান। ”

কাকন পান দিয়ে বেরিয়ে এলো। তবে ওরা কাকনের চোখের দিকে চাইলে বোধহয় একবার কাকনের ঘৃণা ভড়া দৃষ্টি দেখতে পারতো।
________________

কাকনের মন ভালো লাগছে না।এ বাড়ির গোপন কথা কাকন বিলাল সিরাজীর সাথেই বলে। ব্যাপারটায় কাকনের মন হালকা হয়। কারণ বিলাল আদোও শোনে কিনা কাকন নিশ্চিত নয়। তবে কাউকে বলতেও পারবে না বিলাল।কাকন সরাসরি বিলালের কক্ষে চলে গেলো। বিলালের কক্ষে যেয়ে কাছে একটা বেতের মোড়া নিয়ে বসলো। বিলাল চেয়ে চেয়ে দেখলো।

কাকন বিলালের চোখ মুছে দিয়ে বললো, “আব্বা এত চোখের পানি অকারণেই কেন ফেলছেন।জানেন আম্মাকে দাদাজান আর চাচাজান মিলে হত্যার পরিকল্পনা করছে। আপনার কি শুনে কষ্ট হচ্ছে
নাকি হচ্ছেনা।”

বিলালের চোখ বেয়ে পানি বইতে শুরু করলো। এই স্রোতের ধারা যেন আজীবন বইবে।
কাকন আবার চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো, “আমাকে প্রথম দেখেই চোখের পানি ফেলেছিলেন।আজ ও ফেলেন। আমার নিরুপায় লাগছে। এখন আমি কি করবো বলুন তো। সত্যিই বুঝতে পারছি না।আপনিই বলুন না আমি কি করে আম্মাকে ওই কালসাপদের স্বীকার হতে রক্ষা করবো। ”

বিলালের চোখ কাপছে। কাকন মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। বললো, “শান্ত হোন আমি জানি আপনার কষ্ট হচ্ছে। আপনার আপন মানুষ গুলো আপনার স্ত্রীর সাথে অন্যায় করছে আর আপনি অসহায়ের মতো সব সহ্য করছেন। কিন্তু আমার আরও অসহায় লাগছে। কেউ নেই যে তাকে বলব কেননা তারা যদি বিশ্বাস না করে। আর আপনার খোকা ও দু’সপ্তাহ হলো নেই আমি কি করবো বুঝছি না। ”

কাকন মনে মনে বললো, “আমায় সাহায্য করুন আল্লাহ তায়লা। ”

কাকন নানা চিন্তা করতে করতেই চোখ গেলো টেবিলের উপর। কাকন বিলালকে ছেড়েই লাফ দিয়ে উঠে দাড়ালো বেতের মোড়া থেকে। টেবিলের উপর রাখা জিনিসটা তে হাত বুলালো। মস্তিষ্কের দেওয়া বুদ্ধিতে কাকনের মনে খুশি হলেও চোখ ভিজে উঠলো। সুভাকে বাঁচাতে হলে যে আর কোনো উপায় নেই। নিজের হাতে জিনিসটা নিয়ে বিলালের কাছে গেলো। মোড়ায় বসে কাদতে কাদতে বললো, “পেয়ে গেছি আব্বা। এটা দিয়েই বাঁচাবো আমি আমার আম্মাকে। তবে দুনিয়ার বুকে কাকনের সময় বোধহয় খুব কম আব্বা। ”

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here