দেবী,৪৫

0
371

#দেবী,৪৫
লেখিকাঃ শবনম রাবাহ (স্রোতস্বিনী)
কপি করা সম্পুর্ণ নিষেধ।

“আমার নাম দেবীশ্বরী ঠাকুর” কথাটা শুনে সকলেই বিদুৎ চমকানোর চেয়ে ও ভয়াবহ ভাবে চমকালো। মুসলমান সমাজে, মুসলমান গৃহে কি করে কেউ এই নাম রাখতে পারে। সকলেই অবাকের সর্বোচ্চ স্তরে।তবে একথা শুনে সবচেয়ে বেশি চমকালো সুভা আর রুহুল। সুভা ধপ করে মেঝেতে বসে পড়লো। নিজের কান কেও যেন বিশ্বাস করতে নারাজ এখন সুভা । রুহুল এতক্ষণ কাকনের দিকে চেয়ে ছিল তবে কাকনের কথা শুনে রুহুল নিজের চোখের পলক ফেললো। ‘দেবী’ শব্দটা শুনেই ওর শ্বাস যেন থেমে গেছে। দাদিমার বিলাপ কান্নাও মুহুর্তেই থেমে গেলো। সেই সাথে তার ঠোঁট দুটো আলগা হয়ে গেলো অবাকে।

সুভা মাটিতে বসেই কাকনের দিকে তাকালো। কাকনের মুখের দিকে চেয়ে বললো, “তু..তুমি কি বললে আবার বলো কাকন? ”

কাকন নিরুত্তর তার চোখ দুটো রুহুলের দিকে নিবদ্ধ। কাকনের চোখ যেন ঝাপসা হয়ে আসছে। কাকন চোখের পলক ফেললো। দুচোখ থেকে দুফোঁটা নোনাজল প্রস্রবণ হলো দু’গাল বেয়ে।

মালেকা কাকনের উদ্দেশ্যে বললো, “দেবী, কিসের দেবী। তুমি এগুলা কি কও কাকন বউ। এইডা তো হিন্দুগো নাম। আমরা তো মুসলমান। ”

কাকন চোখের পানি মুছে বললো, ” হ্যাঁ ‘দেবী’ হিন্দুদের নাম। কারণ আমি জন্মগত ভাবে হিন্দু। জন্মগত ভাবে আমার নাম ‘দেবী’।”

–“তাইলে তুমি এই সিরাজপুরে কেন? ”
–“আমি দেবাশীষ ঠাকুরের মেয়ে।”

জামালের স্ত্রী কাদতে কাদতেই বললো, “কেডায় দেবাশীষ ঠাকুর, কিসের দেবাশীষ ঠাকুর।আমার মহীর আব্বারে মারলা কেন? হের সাথে কিসের শত্রুতা?”

কাকন চিৎকার করে বললো,”আপনার মৃত স্বামী জামাল সিরাজীকে জিজ্ঞেস করুন।এই পাপিষ্ঠ শয়তানরুপী দুলাল সিরাজীকে জিজ্ঞেস করুন। জিজ্ঞেস করুন এই মঞ্জিলের প্রত্যেকটি পুরুষ কে?জিজ্ঞেস করুন এই বিলাল সিরাজীর প্রথম স্ত্রীকে। ”

সুভা এগিয়ে যেয়ে কাকন কে জড়িয়ে ধরলো। বুকে জড়িয়ে নিতে চাইলো কিন্তু কাকন নিজেকে সুভার থেকে ছাড়িয়ে নিলো। উচ্চস্বরে কাদতে কাদতে বললো, “ছোবেন না আমায়। খবরদার বলে দিচ্ছি ছোবেন না আমায়। আপনাদেরকে আমি ঘৃণা করি। আপনাদের ছোয়া আমার ঘৃণা বাড়িয়ে দেয়। আপনারা সবাই ঘৃণিত,পাপি। ঘৃণা করি আমি, সকলকে ঘৃণা করি।”

কথাটি বলে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো কাকন। বারবার বলে যাচ্ছে “ছোবেন না আমায়। ছোবেন না। ঘৃণা করি।” কিছুক্ষণ পরেই কাকন জ্ঞ্যান হারালো।

সুভা কাকনের মাথা নিজের কোলে নিলো। রানু কে বললো, “রানু, রানু পানি নিয়ে আয় জলদি।”

কিন্তু দাদিমা বললো,”খবরদার কেউ এই বেজাত রে পানি দিবি না। কাল নাগিণী,কুফা মা*।”
সুভা কাকনকে জ্ঞ্যান ফেরানোর চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। সুভা ঠোঁট কামড়ে কেদেই যাচ্ছে।

রুহুলের জীবনে বোধহয় আজকের রাতটি দুর্যোগে পরিপুর্ণ। তার জীবনের সবচেয়ে প্রেমময়ী দুজন নারী যাদের কে সে নিজের চেয়ে বেশি ভালো বেসেছিল তারা দুজনই অসহায় ভাবে কাদছে। রুহুল একবার দুলাল সিরাজী আর জামাল সিরাজীর দিকে তাকালো। কতটা ঘৃণা থাকলে এতটা নৃশংস ভাবে হত্যা করা যায় কাউকে। একবার কি অন্তত ক্ষমা করা যেতো না। তারা তো আর আগের মতো নেই। রুহুল নিজেও অপছন্দ করত নিজের দাদা -চাচাকে তবে এখন আর সেই ঘৃণাটা নেই। কারণ তারা তো নিজেদের শুধরে নিয়েছিল। তবে রুহুলের মনে অন্য প্রশ্ন তার বিবিজান কি তাকেও এতটা ঘৃণা করে যতটা এই মঞ্জিলের বাকি সদস্যদের করে গেছে।রুহুলের কানে যেন কেবল একটি কথায় বাজছে, ‘ঘৃণা করি,ঘৃণা করি আমি সকলকে।’

রানু তাড়াতাড়ি করে পানি এনে দিলো সুভার কাছে। সুভা পানি ছিটিয়ে দিলো কাকনের চোখে-মুখে। আর মাথায় হাত বুলাতে লাগলো।রানুর খুব খারাপ লাগছে কাকনের জন্য। তবে মনে মনে কেমন যেন লাগছে এটা ভেবে যে হিন্দু মানুষ ছিল। আর রানু তার সাথে কত কথা বলেছে। কত আনন্দ করেছে। কাকন চোখ পিটপিট করে তাকালো কিছুক্ষণ পর।

সাজু রাতে মঞ্জিলের পাশ দিয়েই যাচ্ছিল। প্রহরীদের গেইটের কাছে না দেখে এগিয়ে এলো।তারপর যখন দেখলো অন্দরমহলের দরজার সামনেও প্রহরীরা নেই সাজু অবাক হয়ে মঞ্জিলের ভেতরে এলো। তারপর সাজু সকলকে অনুসরণ করে এগিয়ে গেলো বসার ঘরের দিকে। দরজার কাছে ভীড়। সাজু বসারঘরে ঢুকে দুলাল সিরাজী আর জামালের ভয়াবহ লাশ দেখে ঢোক গিললো। এত ভয়াবহ ভাবে কে হত্যা করলো। সাজু আতঙ্কিত হয়ে রুহুলের দিকে চেয়ে বললো,”সিরাজী আব্বা,চাচাসাব এগো কেমনে হইলো এইগুলা? ”

রুহুল কোনো উত্তর দিলো না। তার চোখ দুটি এখনো তার বিবিজানের দিকেই নিবদ্ধ।

দুলাল সিরাজীর স্ত্রী বিলাপ করতে করতে বললো, “এই মা*, এই কাল সাপ আমার সিরাজী সাব রে মা’ইরা ফালাইছে। আমার জামাল রে খু’ন করছে। ওরে খু’ন কর। ওরে মা’ইরা ফালা সাজু। ”

তরিপা সায় মিলিয়ে বললো, “হ সাজু ভাই। আম্মা ঠিক কইছে। পুলিশ ডাহেন কেউ। হেতি তো হ’ত্যা করছে সিরাজি আব্বারে। আল্লাহ হিন্দু মানুষ হইয়া সিরাজপুরে। আমার কি পাপ হইবো আমি তো তারে ছুইছি। তার হাতের রান্দা খাইছি।”

তরিপার কথায় কাকন হেসে দিলো। ঘরকাপানো হাসি হেসে উঠে বসলো।সুভার হাত নিজের গায়ে থেকে সড়িয়ে দিয়ে বললো, “ঠিক ই বলেছো আমি হিন্দু। আমায় ছুতে কি এখন ঘৃণা করছে তোমার। তবে আমি কিন্তু এখন মুসলমান। আমি চার কালিমা পারি। আমি নামাজ পড়ি। আমি কুরআন পড়ি। কুরআন হাদিসে কিন্তু লেখা নেই হিন্দুদের ছুতে পারবে না। ইসলাম ধর্ম অনেক সুন্দর কিন্তু তাকে কুৎসিত বানিয়েছো তোমরা।ধর্মকে আগে জানো তারপর এগুলো বলো।”

কাকনের কথার প্রতিত্তোরে কেউ করলো না। কাকনের কথা সকলেই চুপ করে শুনছে। কাকন আবারো বললো, ” তোমরা সিরাজপুরের মানুষেরা মানুষ না একেকটা জীবন্ত জানো’য়ার। মানুষকে মানুষ মনে করো না। আর সবচেয়ে বেশি নিকৃষ্ট এই সিরাজী মঞ্জিলের মানুষ জন। বাইরে এক ভিতরে আরেক।”

রুহুল এতক্ষণ চুপ থাকলেও আর চুপ থাকতে পারলো না। হঠাৎ করে মনে উদয় হলো তার বিবিজান সব মিথ্যা বলছে। রুহুল এগিয়ে গেলো কাকনের দিকে। মুখ ফুটে প্রশ্ন করলো, ” বিবিজান, আপনি এতক্ষণ যা যা বললেন সেগুলো সব কি সত্যি?”

কাকন রুহুলের দিকে তাকালো। আজ কতদিন পর তার জীবনের পাওয়া সেরা ডাকনাম, সেরা শব্দ ‘বিবিজান’ শুনতে পেলো। হৃদয় যেন মুহুর্তেই ঠান্ডা হয়ে গেলো। পরক্ষণেই মনে পড়লো দুলাল সিরাজীর বলা সেই কথা গুলো। কাকনের হৃদয়ে এত গুলো মাসে তৈরি হওয়া ভালোবাসা দুলালের কথার কাছে হেরে গেছে। কাকন রুহুলের চোখে চোখ রেখে বললো, “আমার রক্ত আপনাদের মতো ঘৃণিত নয় সিরাজী সাহেব যে আমি মিথ্যা বলবো। আমি যা বলেছি সব সত্যি বলেছি। এত কিছুর পর ও বিশ্বাস হচ্ছে না।”

এরপর কাকন চোখ নামিয়ে নিলো। রুহুলের দিকে তাকাতেও তার কষ্ট হচ্ছে।

মুহুর্তেই রুহুলের মনে ভয় ঢুকে গেলো। এতদিনের ভালোবাসা, এতদিনের সম্মান, রুহুলের বিশ্বাস এগুলো কি শেষ হয়ে যেতে পারে। দুনিয়ার সব মিথ্যা হলেও কাকনের প্রতি রুহুলের ভালোবাসা চিরন্তন সত্যের মতো। তার বিবিজান, তার পবিত্র রক্তজবা ফুল আজ নিজের পরিচয় দিলো সে নাকি ‘দেবী’।

দাদিমা প্রহরীদের বার বার বলছে পুলিশ ডেকে আনতে। আর সিরাজপুর বাসীকে খবর দিতে। কাকন কে যেন ভয়াবহ শাস্তি দেওয়া হয়। সেই সাথে মালেকা, জামালের স্ত্রী বাকি প্রহরীরাও সায় মেলাচ্ছে।কারন তাদের কাছে যে দুলাল সিরাজী ফেরেস্তা ছিল। সে যেমনই হোক সিরাজপুরের মানুষদের টাকা পয়শা সব কিছু দিয়ে সাহায্য করেছে। যত পাপই করুক নিজের মান সম্মান এর ভয়ে সবকিছু লুকিয়ে রেখেছে সিরাজপুর বাসীদের থেকে। তাই সিরাজপুরবাসী তো আর জানে না দুলাল সিরাজী কতটা নিকৃষ্ট পাপি।

রুহুল জানে কাল সকাল হলেই কাকনের অবস্থা ভয়াবহ হতে পারে। কারণ সিরাজপুরের মানুষজন কাকনের শেষ রক্ত না ঝরা অব্দি রেহাই দেবে না। আইন, সিরাজপুরের মানুষজন কেউ রক্ষা করতে দেবে না কাকনকে। তবে রুহুলের মনে ভয় নেই এটা নিয়ে।রুহুলের তার ভয় অন্য বিষয় নিয়ে। কাকনকে হারানোর ভয়, কাকনের ভালোবাসা হারিয়ে যাবার ভয়। রুহুল কাকনকে ছাড়া বাঁচতে পারবে না কিছুতেই। রুহুলের কষ্ট হচ্ছে। গলা দিয়ে যেন আর কথা বেরোচ্ছে না। চোয়াল কেমন যেন শক্ত হয়ে আসছে।বুকের ভেতর ভীষণ জ্বালা পোড়া হচ্ছে। কান্না পাচ্ছে কি রুহুলের। বোধহয় খুব কান্না করতে ইচ্ছে করছে এখন রুহুলের কিন্তু রুহুল কিছুই করতে পারছে না।কাকন কি সব জেনে ফেলেছে নাকি আগে থেকেই জানতো। সকলকে শাস্তি দিলেও রুহুলকে দিলো না কেন। এক নারীকে হারানোর ভয়ে পাপ করেছিল অথচ ভাগ্যের কি খেলা আরেক নারীকেও হারাবে সেই আগের পাপের জন্য।

সাজু রুহুল এর পাশে দাড়ালো। কাকনের দিকে চেয়ে বললো, “আপনে এগো মারলেন কেন ভাবিমা?”

–“আপনারা সত্যিই জানতে চান কেন মেরেছি?”

–“জি অবশ্যই। আমরা জানবার চাই।”

মঞ্জিলের প্রত্যেকটি সদস্য, প্রহরী, কাজেরলোক উৎসুক নয়নে চেয়ে রইলো কাকনের দিকে। কাকন এতক্ষণ মাথা নিচু করে ছিল এবার মুখ তুলে চাইলো রুহুলের দিকে। দু’জনেরই চোখাচোখি হলো। কাকন আঁখিভরা জল নিয়ে হাসলো।
______________________

তিনবছর আগে ~

“দেবী, এই দেবী সঙ্গীতা এসে গেছে। উঠে পড় এখন!”
এমন ডাকে সাতসকালে ঘুম ভেঙে গেলো কিশোরী এক কন্যার। শোয়া থেকে উঠে বসলেও আখিজোড়া এখনো বন্ধ। বিছানায় বসেই যেন ঝিমুচ্ছে। ঠান্ডা পানির ঝাপটায় বিরক্তকর মুখ বানিয়ে আখিজোড়া খুললো দেবী। মুখ ফুটে বললো, “ভাল্লাগে না সঙ্গীতাদিদি। উঠেছিলেম তো তুমি এভাবে রোজ রোজ পানি না ছিটালেও পারো বাপু।খুব বাজে তুমি। ”

–“সকাল সকাল উঠলে কি আর তোকে রোজ রোজ এভাবে ডাকতে হয়। আর আমি খুব বাজে তাই না। যা তাড়াতাড়ি হাত মুখে পানি দিয়ে আয় দেখিনি।”

হায় দিতে দিতেই চলে গেলো দেবী। কলপাড়ে যাওয়ার আগে একবার ঠাকুরঘরের পাশের ঠাকুমার ঘরটায় উঁকি দিলো। ঠাকুমার গুনগুনিয়ে কাদার শব্দ। এ অবশ্য নতুন নয় আজ এক মাসের অধিক এরকম করছে। কিছু জিজ্ঞেস করলেই তার মা-বাবা একটাই কথা বলবে,” দেবীমা তুমি ঠাকুমাকে কিছুই জিজ্ঞেস করো না। ওনার ব্যামো আরো বাড়বে।” অগত্যা সে ও আর কিছুই জিজ্ঞেস করে না। তবে পড়াশোনা আর সঙ্গীতচর্চার পাশাপাশি সে ডাক্তারবাবুর দেখানো মতো সকল ওষুধ খাইয়ে দেয় তার ঠাকুমাকে। তার যে স্বপ্ন সে বড় হয়ে সেবিকা হবে। মানুষের সেবা করবে। আরো হাজার ইচ্ছে আছে যা সে পুরণ করবে। আপাতত সেগুলো এখন গুপ্ত ডাইরিতে স্থান পেয়েছে।

দেবী হাত মুখ ধুয়ে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগলো। মাঝবয়েসী এক নারী হাতে শাখা পলা সিথি ভর্তি সিদুর। কপালে লাল টিপ দেওয়া। দেবীকে ডেকে বললো, “দেবী সঙ্গীতাকে বলিস না খেয়ে যায় না যেন। আমি আজ লুচি করছি। ”

মায়ের মুখে লুচির কথা টা শুনেই দেবীর পেটের ইঁদুর বিড়াল যা আছে সব লাফ দিয়ে উঠলো। পেটে হাত ঘষতে ঘষতে সঙ্গীতার কাছে চলে গেলো। তারপর প্রতিদিনের ন্যায় আজও সুরের তালে তালে গান শিখলো। নিজের সমুধুর কন্ঠে গাইলো।
ঘণ্টা দেড়েক পর সঙ্গীতা নিজের কাধের থলেটা নিয়ে উঠে দাড়ালো। বললো, “কাল যেন এসে ডাকতে না হয় দেবী। আর আজ ও ভালো গেয়েছো তুমি। ”

দেবী মৃদু হেসে বললো, “ধন্যবাদ দিদি। আর কাল
থেকে দেরি হবে না দেখে নিও। ”
–“হ্যাঁ এ আর নতুন কথা নাকি তোমার মুখে। রোজ ই একই কথা বলো কাল থেকে আর দেরি হবে না।”
–“না সত্যিই বলছি আর দেরি হবে না।”
–“আসছি”
–“না আগেই না।মা লুচি করছে চলো গয়ে একসাথে খাই। আমার কিন্তু খুব ক্ষিদে পেয়েছে দিদি।”

সঙ্গীতা হাসলো। মনে মনে ভাবলো এই বাচ্চা সুলভ মেয়েটা যে কবে বড় হবে,কবে জ্ঞ্যান হবে কে জানে।
সঙ্গীতা বললো, “আজ নয় কাল খাবো ঠিক আছে। আজ আসি কেমন। ”

–“কিন্তু মা যে রাগ করবে দিদি। ”
–“করবেনা। তুমি বোলো যে আমার আরেক বাড়ি যেতে হবে। তাই তোমায় আর কিছু বলবে না।”
–“ঠিক আছে সঙ্গীতা দিদি। ”

সঙ্গীতা চলে গেলে দেবী নিজের কক্ষ থেকে রান্নাঘরের দিকে ছূটলো। গরম গরম লুচি আর সাথে রসমালাই ব্যাস এটুকুই দেবীর জিভে জল এনে দেওয়ার জন্য যেথেষ্ট। মা লুচি ভেজে নামাচ্ছে। আর পাশেই রসমালাই এর হাড়ি। রসমালাই দেখে লোভ সামলাতে পারলো না দেবী।সরাসরি হাড়িতে হাত ডুবিয়ে দিলো। ওমনি হাতে খুন্তীর বাড়ি দিল তার মা। দেবী ঠোঁট ভেটকানোর আগেই গম্ভীর কন্ঠে হুংকার ছুড়লো কেউ, “মালতী!”

ধবধবে ধুতি ফতুয়া পড়া এক ব্যক্তি এগিয়ে এলো। কলসিতে ভড়ে রাখা পানি দিয়ে দেবীর হাত ভিজিয়ে দিলো। তারপর বললো, “মালতী, আমি তোমায় বলেছি না আমার দেবীমার গায়ে হাত তুলবে না। সে যা খুশি করুক খবরদার আজকের পর যেন আর এমন করতে না দেখি। আমি কিন্তু মেনে নেবো না। ”

মালতী একবার স্বামীর দিকে তারপর দেবীর দিকে চাইলো।তারপর কড়াইয়ে লুচি তুলে নামালো। মাথা নিচু করে বললো, “হ্যাঁ আপনি তো তাই বলবেন।বেশি আদর দিয়ে বাদর বানিয়ে ফেললেন একেবারে মেয়েটাকে। ”

–“বাদর হোক আর যাইহোক আমার দেবীমার গায়ে এক আচ ও লাগাবে না তুমি বলে দিলাম। আমার মেয়ে যা খুশি করবে তাকে কিচ্ছু বলতে পারবে না তুমি।”

স্বামীর এমন রুপকে ভীষণ ভয় পায় মালতী। তাই কিছু আর বললো না। দেবাশীষ ঠাকুর নিজে হাতে বাটিতে লুচি আর রসমালাই বেড়ে নিলো। দেবীকে সাথে নিয়ে পাটিতে বসে পড়লেন। তারপর লুচি ছিড়ে ছিড়ে রসমালাই এ ভড়িয়ে দিলেন দেবীর মুখে। দেবী খাবারটুকু গিলে বাবার পকেটে থেকে চশমা টা নিলো। বাবার চোখে পড়িয়ে দিয়ে বললো, “আমার কিন্তু লাগে নি বাবা। তুমি শুধু শুধু মাকে বকলে কেন। ”

–“তোর গায়ে একটা পিপড়ে বসলেও আমার মন চায় তাকে হড়িপুরের শ্মশানে ফেলে দিয়ে আসি। আর সেখানে তোর মা খুন্তি লাগাবে। দেখ তো কেমন লাল হয়ে গেছে তোর হাতটা। ”
–“আরে এমনি লাল হয়েছে। সত্যি লাগে নি। ”
–“লাগে নি বললে কি হবে। আমি জানি তোর লেগেছে। এজন্যই তো আমার ও ব্যাথা করছে দেখে।”
–“হাহাহা আমায় এত ভালোবাসো বাবা?”
–“একটা মাত্র মা আমার,তোকে ভালোবাসবো না তো কাকে ভালোবাসবো আমি।তুই যে আমার দেবী মা।”

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here