দেবী,৪৬

0
347

#দেবী,৪৬
লেখিকাঃ শবনম রাবাহ (স্রোতস্বিনী)
কপি করা সম্পুর্ণ নিষেধ।

–“মাস্টারমশাই এর দু’হাত রাবণের পেটে যাক। মেরে লাল করে দিয়েছে আমার হাত খানা। ও মাগো।”

–“মমতা রোজ রোজ এমন করে মাস্টারমশাইকে না বকে পড়াগুলো পড়ে আসলেই তো হয়। শুধু শুধু ওনাকে বকিস কেন হ্যাঁ।”

–“তো আমি কি করবো দেবী বল দেখিনি। মা সারাদিন আমার বিয়ে বিয়ে করে। তারওপর পড়তে বসলেই মাথা ঘুরায়,খুদা লাগে, কাল তো পড়ার টেবিলেই ঘুমিয়েই পড়েছিলাম।”

–“নিশ্চিত মাসিমার মার খেয়েই তোর ঘুম ভেঙেছিল?”
–“হ্যা,কাঠের স্কেল টা দিয়ে কি বারিটাই না দিয়েছিল!”
–” হিহিহি।”
–“তুই খুব খারাপ দেবী। আমি না তোর প্রিয় সই কোথায় কষ্ট পাবি তা না হাসিস শুধু।”
–“আরে আরে রাগে না। আমি তো মজা করছিলাম।”

মমতা মুখ গোমড়া করে বললো, “হয়েছে আর বলতে হবে না। সব ই বুঝি আমি। ”
–“কিরে আমার ওপর রাগ করলি নাকি?”
মমতা দেবীর এক বেণি টেনে বললো, “তোর সাথে রাগ করলে তুই আমায় আস্ত রাখবি বুঝি।”

দুই বান্ধবী মিলে গল্প করতে করতে বিদ্যালয় থেকে বাড়ির পথে আসছিল। পথের ধারে গলায় পঁচা ঘা হয়ে মৃত অবস্থায় পরে আছে এক কুকুর ছানা। মশা-মাছিরা ভিন ভিন করছে সেই সাথে দুর্গন্ধ। দেবী সেখানে দাড়িয়ে করুণ চোখে চেয়ে রইলো।
দেবীর করুণ চোখ-মুখ দেখে মমতা বললো, “মন খারাপ করিস না। কাল তো হলুদ মাখিয়ে দিয়েছিলি আজ হয়তো মরে গেছে।একটা কুকুর ই তো ছিল।”

দেবী বললো, “হ্যাঁ একটা কুকুর ই ছিল তবে পৃথিবীর বুকে এক শ্রেষ্ঠ বিশ্বস্ত প্রানী ছিল যা কমে গেলো।”

কথাটি বলেই আবার এগোতে লাগলো দেবী। মমতা ও সাথে হাটছে। মমতা বললো, “শ্রেষ্ঠ কিভাবে?”
দেবী মৃদু হেসে মমতার দিকে চেয়ে বললো, ” মানুষ যেদিন কুকুরের মতো প্রাণি থেকে বিশ্বস্ততা শিখবে সেদিন থেকে পৃথিবী সুন্দর হবে। পৃথিবীতে আর কোনো অকৃতজ্ঞ প্রাণি থাকবে না। এখন বুঝে নে।”

দেবীর এমন কথায় মুগ্ধ হলো মমতা। দেবী যতটা চঞ্চল তার চেয়েও বেশি বুদ্ধিমতী। পোদ্দার বাড়ির আম গাছের মুকুলমুঞ্জুরী গুলো দেখা যাচ্ছে। দেবী বললো, “মমতা আম গাছে তো দেখি বেশ আম আসবে এবার। একদিন পেরে খাবো আমরা আচ্ছা। ”

–“হ্যাঁ রে দেবী। ইশ কবে যে কাচা আম খাবো আমি।আমার জিভে জল এলো বলে।”
–“না কাচা নয় আম পাকলে খাবো। পাকা আম খেতে ভাড়ি মজা আহ মিস্টি, আর রসালো ইশ।”
–“ধুর মিস্টি ভাল্লাগে না টক ভাল্লাগে। ”
–“না মিস্টিই সেরা।”
–“না বললাম তো টক।”
দুই বান্ধবীর পথের ধারে ঝগড়া লেগে গেলো। দু’জনই তর্ক করছে।পোদ্দার বাড়ির সামনে কথা কাটা কাটি লেগে গেলো। এ অবশ্য নতুন না রোজ ই এমন হয়।

এর ই মাঝে এক প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ বললো, “কি হচ্ছে
টা কি এখানে? ”
দুজনেই লোকটির দিকে তাকালো। মমতা ভয়ে দেবীর পিছনে চলে গেলো। দেবী বললো,” কি হবে কই কিছু না তো। আমরা তো কথা বলাবলি করছিলাম।”

–“এভাবে কাউকে কথা বলতে আগে দেখিনি।নিশ্চয়ই আমাদের বাগানের ফল চুরি করার ধান্দা তাই না।”

দেবী কোমড়ে দুহাত দিয়ে বললে,”আজ্ঞে না। আমরা বড় বাড়ির মেয়ে,আমরা কেন চুরি করতে যাবো বাপু।”

লোকটা দেবীকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখলো। গোলগাল ফর্সা সুন্দরী এক কিশোরী। নাক ঘেমে মুক্তোর দানার মতো ফুটে আছে। লাল ফিতা দিয়ে দু’বেনী করা চুল গুলো দুপাশে ছেড়ে দেওয়া। লোকটা বললো, “তা কোন বড় বাড়ির মেয়ে গো তুমি? ”
–“ঠাকুর বাড়ির মেয়ে।”

লোকটা মুহুর্তেই চিনে ফেললো।বললো, “দেবী?”
দেবী বললো, “হ্যাঁ। চিনলেন কি করে? ”
লোকটা বাকা হেসে বললো, “বড় হয়ে গেছো বেশ।”

দেবী বললো, “কেন বাপু আমি কি বামুন দাদু নাকি যে পুচকি টিই থেকে যাবো। তাই আমি এখন অনেক বড় হয়ে গেছি।”

লোকটা দেবীর কথায় হেসে বললো “না সে বলি নি।বামুন হবে কেন।কয়েকবছর পর দেখলাম তো তাই। ”

দেবী আর কিছু না বলে মুখ ভেচকিয়ে চলে গেলো মমতার হাত ধরে। পোদ্দার বাড়ির বড় ছেলে রঞ্জিত পোদ্দার দেবীর যাওয়ার দিকে চেয়ে থাকলো।তারপর বললো, “আজ থেকে ভালোবাসা আর প্রেম নিয়ে আঁকবো তোমার ছবি ঠাকুর বাড়ির ঝি। ষষ্ঠীর আগেই হবে তুমি আমার প্রনয় গৃহের দেবী আর আমি হবো তোমার হৃদয় সালতির মাঝি।”

কিছুদূর যাওয়ার পর মমতা বললো,”এই রে দেবী তুই যে ওনাকে এভাবে মুখ ভেচকিয়ে চেতিয়ে দিলি রেগে যদি মেশোমশাই কে বলে দেয় তখন কি হবে?”

–“বললে বলুক গিয়ে আমার কি।বাবা ই তো বলেছে জীবনে যাই হোক ভয় পাবে না। মনের ভেতর সাহস রেখে দুনিয়ার সকল কিছুর মোকাবিলা করবে। হৃদয়ে সাহস থাকলে দুনিয়ার কেউ হারাতে পারবে না তোমায়।তাই একটু সাহস দেখিয়ে এলাম, হিহিহি।”

–“তোর বাবা কত ভালো রে দেবী। আর আমার বাবা, পাড়ার কাকিমারা মিছে বললেও তাই মেনে নেবে।”

–“আমার বাবা দুনিয়ার সেরা বাবা, এই দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ বাবা।আমার বাবাই আমার সব রে মমতা। আমি আমার বাবার মতো সাহসী হবো একদিন দেখে নিস মমতা।আর বাবার সকল স্বপন পুরণ করবো। ”
__________________

রাত ৯টার অধিক। ঠাকুরঘরে প্রদীপ জ্বলছে। ঠাকুর ঘরের পাশের কক্ষে পুরনো জলচৌকির উপর শুয়ে আছে এক বৃদ্ধা মা। বয়স হয়েছে তবে গায়ের রঙ এখনো দুধে আলতা।যৌবনকালে যে অসম্ভব সুন্দরী ছিল তা যে কেউ দেখলেই বুঝে যাবে। কয়েক মাস যাবৎ সে শয্যাশায়ী। দুচোখের জল ফেলছে। দেবাশীষ ঠাকুর মায়ের কক্ষে গেলো। বললো, “মা,, ও মা তুমি আর কত কাদবে বলো। এভাবে তোমায় দেখিতে আর ভালো লাগছে না। ”

–“দেবা, আমার সোনাবাবা, আমি খালি একটা বার আমার সুভাষীরে দেখতে চাই। তুই ওকে আমার আঁচলে এন দে। শুধু একবার দেখব। বিশ্বাস কর ওরে দেখলেই আমি শান্তি পাবো। তা না হইলে আমার এই বুকের হাহাকার কোনোদিনো শেষ হইবো না। আমি মইরাও স্বর্গ পাবো না, শান্তি পাবো না।”

দেবাশীষ ঠাকুর এই নামটা শুনলেই পুরনো দিনের কথা মনে পরে যায় । কত স্মৃতি, কত ভালোবাসা। সময়ের বিবর্তনে এখন সব ই স্মৃতির বাক্সে বন্দি। দেবাশীষ ঠাকুর বললো, “মা তুমি শান্ত হও। তোমার শরীর ভালো না। তুমি ওষুধ খাও নি কেন এখনো?”
তারপর চিৎকার করে ডাকলো,”মালতী, মালতী!”

মালতী হাতের কাজ ফেলে এগিয়ে এলো স্বামীর কাছে বললো, “হ্যাঁ বলুন, ডাকছিলেন কেন?”
–” তুমি মা কে ওষুধ দাওনি কেন রাতে ?”
–” আজ্ঞে আমি তো মা কে ওষুধ দিয়েছিলাম খেতে। কিন্তু উনিই না খাচ্ছে না গিলছে। ”

দেবাশীষ তার মায়ের জেদ সম্পর্কে অবগত। বললো,
” ঠিক আছে তুমি যাও মালতী। আর আমাকে ওষুধ গুড়ো করে এনে দেও। আর সাথে জল ও নিয়ে এসো।”

স্বামীর কথা মতো মালতী জল আর ওষুধ গুড়ো করে এনে দিলো। পানির সাথে গুলিয়ে মুখে ঢেলে দিতে চাইলো। কিন্তু তার মা বাধা দিয়ে বললেন, ” না আমি খাবো না। কিচ্ছু খাবো না,, আমার সুভাষি রে না আইনা দিলে খাবোনা। আমার সুভাষিরে আইনা দে,, আইনা দে।” বলেই কাদতে শুরু করলো।

দেবাশীষ ঠাকুর এবার বিরক্ত হলো। রোজ রোজ তার মায়ের এই আবদারে সে বিরক্ত। তার তো কিছুই করার নেই। যে বোন পরিবারের কথা ভাবে নি, বংশের মান ইজ্জতের কথা ভাবেনি তাকে কি করে এনে দেবে সে।জীবিত আছে কি না মৃত তাও জানা নেই তার। তবে মনের মাঝে কষ্ট লাগে একটা কথা ভেবে সে কি তার মায়ের শেষ ইচ্ছে পুরণ করতে পারবে না। দেবাশীষ ঠাকুর ছোট নিশ্বাস ছেড়ে কক্ষ ত্যাগ করলো।

এতক্ষণ সব দূর থেকে দেখছিল তার কিশোরী কন্যা। দেবী দুনিয়াতে সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করে দুঃখ কষ্ট কে। কেউ তার সামনে কাদলে তার মনে হয় কেউ তার দম আটকে রেখেছে। চৌকিতে শুয়ে থাকা ঠাকুমা আবার আগের মতোই বয়ান শুরু করেছে। তার ঠাকুমা গত এক মাস ধরে এক ই আবদার করে চলেছে, “আমার সুভাষিনীরে আমি দেখবার চাই”। বাবার সাথে সাথে সে ও সত্যিই বিরক্ত। কে এই সুভাষিনী। যাকেই জিজ্ঞেস করে সেই এড়িয়ে যাবে। আর নাহয় বলবে এ ব্যাপারে চুপ থাকো দেবীমা। তবে সে আজ নিশ্চিত এটা কোনো ব্যামো ট্যামো না। মনে মনে পরিকল্পনা করলো আজ সে সব জানবে। কেন এত আবদার করে তার ঠাকুমা এই সুভাষিণীকে দেখার। কে এই সুভাষিণী?”

দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আবার বাইরে তাকালো দেখলো কেউ আছে কি না কিন্তু কেউ নেই। নিশ্চিত তার বাবা-মা নিজ কক্ষে আছে। দেবী ঠাকুমার ঘরে ঢুকার আগেই বললো,” ঠাম্মা, ও ঠাম্মা!”

–“দেবী,, দেবী আসছোস তুই,,,আয় আমার কাছে
আয় দিদিভাই।”
–“সাবধান হোন দিলিপ ঠাকুরের সুন্দরী পত্নী, আপনার সামনে হাজির হচ্ছে দেবাশীষ ঠাকুরের একমাত্র কন্যা কুমারী দেবীশ্বরী ঠাকুর ওরফে আপনার আদরের দিদিভাই দেবী।”
–“হাহাহা,, আমার দিদিভাই আয় বুকে আয়।”

দেবী গাল ফুলিয়ে বললো, ” যাবো না তোমার কাছে। তুমি আমাকে একটুও ভালোবাসো না। চোখের জল মুছো তোমাকে বলেছি না একদম কাদবে না।
আর ঝটপট ওষুধটুকু খেয়ে ফেলো দেখি নি।”

–“তুই যে আমার সাত রাজার ধন। আমার দেবার পাঁচ আত্মা। তরে আমি ভালো বসি না তো কারে বাসবো। আমার কাছে আয়। আমিতো আর উইঠা পারি না।”

দেবী তার ঠাম্মার মাথার কাছে গিয়ে বসলো। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। বললো, ” ও ঠাম্মা! এই সুভাষিণী কে গো? আমার যে খুব জানতে ইচ্ছা করে। আমি তো ঠাকুরের কাছে কত্ত প্রার্থনা করলাম সবাই যেন আমাকে বলে। মা, বাবা কেউ কিচ্ছুটি বলছে না। তুমি আমাকে বলো না গো ঠাম্মা।”

–“তুই সত্যিই শুনবার চাস দিদিভাই?”
–“হ্যাঁ গো সত্যি জানতে চাই?”
–“বেশ তাহলে শোন। ২৮ বছর আগের ঘটনা। তোর জন্মের ও বহু বছর আগের ঘটনা এইডা। আমি মইরা গেলে হয়তো তুই কোনোদিন জানতে ও পারবি না যে তোর একটা পিশি ছিল। তাই তোরে জানানো দরকার।আমি যে সুভাষিণীর কথা কই সে তোর পিশি ছিল।সুভাষিণী যে তোর পিশিমা হয় রে দেবী।”

দেবী অবাক হয়ে গেলো। বললো, ” কিহ আমার পিশিমা আছে। কিন্তু আমি তো জানি বাবা ছাড়া তোমার আর কোনো সন্তান নেই ঠাম্মা।”

–“দেবার পরেও আমার ৩টা পুত্রসন্তান হইছিল। কিন্তু আমি ধইরা রাখিতে পারি নাই। মইরা গেছে। তারপর সুভাষিনী হইলো। তোর মত গায়ের রঙ গরন কিন্তু চেহারা হইছিল আমার মতো। তর দাদু খুব ভালো বাসতো। তোর বাবার নয়নের মনি আছিল। তর দাদু আর বাপের কলিজার টুকরা আছিলো আমার সুভাষি। আমার সুভাষি যে আমার একমাত্র মেয়ে ছিল রে দিদিভাই। ২৮ বছর হইলো ওর মুখ ও দেখি না আমি।”
বলেই আবারো কাদতে শুরু করলো।

–“পিশিমা যদি থেকেই থাকে তার মুখ দেখোনি কেন ঠাম্মা।আর আমায় কেউ কেন বলেনি আজ অব্দি?”

–“তোর মায়ের বাচ্চা হয়তো না দেইখা লোকে নানা কথা কইতো। তাই তোর বাবা এইখান কার বাড়ি রাইখা সিদ্ধান্ত নেয় অন্য কোথাও থাকবো। তাই আমরা ঢাকায় থাকতে গেছিলাম। ওইখানকার বড় কলেজে তর বাবা সুভাষি কে ভর্তি করায়া দিছিলো। আমার মাইয়া খুব ভালো ছাত্রী আছিলো। রুপ,গুণ সব দিক দিয়া ই সেরা আছিলো। প্রথমে তর দাদু রাজি হয় নাই ভর্তি করায়া দিতে। কিন্তু সুভাষির আবদারে তোর বাবা রাজি হয়। তারপর তোর দাদুরে রাজি করায়। ভর্তি কইরা দেয় সেইখানে। সব কিছু ঠিক ঠাক চলে কিন্তু ২ বছর পর তর দাদু ব্যানার্জি মহাশয়ের ছেলের সাথে সুভাষির বিয়া ঠিক করে।কিন্তু তোর পিশি জানায় সে একজন রে ভালোবাসে। ঠাকুর বাড়িতে যেন বাজ পড়ছিল সেইদিন। বোনের খুশির জন্য তর বাবা সব মাইনা নেয়। তর দাদুকেও রাজি করায়। বলে যে সেই ছেলের সাথেই সুভাষির বিয়া দিবো, কিন্তু,,,”

–“কিন্তু কি ঠাম্মা?”

— “সেইডা যে অসম্ভব ছিল। সুভাষি জানায় সে এক মসুলমান ঘরের ছেলেকে ভালোবাসে। পুরো ঠাকুরবাড়ি অবাক হইয়া যায়। তোর বাবা-দাদু সেদিন অনেক বুঝায় কিন্তু সুভাষী রাজি হয় না। তোর দাদু প্রথমবারের মতো মেয়ের গায়ে হাত তোলে। জোর কইরা বিয়া দেওনের ব্যবস্থা করে। কিন্তু বিয়ার দিন ওর এক সই এর সাহায্য নিয়া সুভাষি পালায়া যায়। শুধু রাইখা যায় একটা চিরকুট। ”

–“চিরকুটে কিছু লেখা ছিল না ঠাম্মা। ”

–চিরকুট পইড়া জানতে পারি সিরাজপুর এর এক মুসলমান জমিদার বাড়ির সন্তানের সাথে নাকি প্রেম আছিলো। ছেলের নাম নাকি বিলাল সিরাজী । সেই ছেলের সাথে সে ভাইগা গেছে। এগুলা শুনার পর তোর দাদু সঙ্গে সঙ্গে মারা যায়। তোর দাদুর জগৎ-সংসার ত্যাগ,,লোকজনের অপমান সব কিছু তে আমরা পুরা পরিবার ভাইঙ্গা পড়ছিলাম। সেইদিন তোর বাবা স্পষ্ট ভাবে বইলা দিছিলো সুভাষির নাম জানি কেউ দ্বিতীয় বার ঠাকুর বাড়িতে উচ্চারণ না করে। এইডাও বলে যে সুভাষিণী ‘ঠাকুর’ বাড়িতে মইরা গেছে। রাগে অভিমানে আমিও তাই মাইনা নিছিলাম। ওর জন্য ঠাকুর বাড়ির মান-সম্মান শেষ হইয়া গেছিলো। আমার সিথির সিঁদুর মুছছে শুধুমাত্র ওর জন্য। কিন্তু আমি তো মা দিনশেষে এই বুকে ঠিক ই পুরাইতো। আমার এখনো ওরে দেখার ইচ্ছা। বাইচা আছে না মইরা গেছে জানি না। আমার এই খালি বুকটা একটা বারের জন্য আমার সুভাষিণী রে চায়। তুই তোর বাবাকে বল দিদিভাই, আমার সুভাষিরে একবার দেখব।একবার আমার বুকে নিবো।”

তারপর আবারো ডুকরে কাদতে শুরু করলো। চোখের জলের ধারা যেন বাধা মানছে না।

সবকিছু শুনে দেবী আশ্চর্য। অবাক সে তার জন্মের বহু বছর আগে এত বড় ঘটনা ঘটে গেছে আর সে আজ জানলো। এজন্যই কি সে কিছু জিজ্ঞেস করলেই তার মা-বাবা ব্যামো বলে ধামাচাপা দিতো। দেবী ঠাকুমার চোখের পানি মুছে দিল।বললো, “কান্না থামাও ঠাম্মা,
তুমি অসুস্থ হয়ে যাবে আরো। আমি তোমায় কথা দিচ্ছি আমি বাবাকে রাজি করাবো যে করেই হোক।”

–“সত্যি তো। আমি কিন্তু তোরে বিশ্বাস করি দেবী।”
–“তিন সত্যি। এবার তুমি ওষুধ খেয়ে নাও দেখিনি।”

দেবী জোর করে তার ঠাকুমাকে ওষুধ খাইয়ে দিলো। যতক্ষণ তার ঠাকুমা জেগে থাকলো মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। তার ঠাকুমা ঘুমানোর পর কক্ষ ত্যাগ করলো। তার ও এখন ঘুমাতে হবে সকালে সঙ্গীতা আসবে।তবে মাথায় ঘুরছে অন্য চিন্তা।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here