আসক্তি?Mr_Arrogant_4 #পর্ব_২৬

0
1150

#আসক্তি?Mr_Arrogant_4
#পর্ব_২৬
#Writer_Sanjana_Shabnam_Fahmida

ওহির মাথা আভির বুকের সাথে লেপ্টে আছে। আভি আশেপাশে আড়ি চোখে তাকায়, পরিস্থিতি বুঝার চেষ্টা করে ও।

কিন্তু তেমন কোনো মানুষজন না থাকায় ওদের উপর দৃষ্টি পরার ভ*য়টা কে*টে গেল আভির। স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলল ও, কিন্তু এখনো সমস্যা কাটে নি বরং ওর বুকের সাথে লেগে আছে।‌

আভি দু হাত দিয়ে হালকা করে ধরে রেখেছে ওহিকে। কিন্তু আভি এমন ভাবে ওকে ধরেছে যে‌ ওর হাতের বাঁধন শিথিল হলেই ওহি সোজা মাটিতে পরবে।

ওহি এক চোখ খুলে তাকায়, তারপর দৃষ্টি দেয় আভির পকেটের দিকে। বাইকের চাবির কিছুটা অংশ বেরিয়ে আছে পকেট থেকে। আলতো করে খুব সাবধানতার সাথে আভির পকেটে আঙুল ঢুকিয়ে চাবিটা বের করে নিল ওহি তারপর শক্ত থাবায় মুঠো করে নিল চাবিটা।

এর মধ্যেই হঠাৎ আভির বুকে দু হাত দিয়ে ধাক্কা মেরে ওকে সরিয়ে এক সেকেন্ডও দেরি না করে দৌড়ে পালায় ওহি।

হঠাৎ ধাক্কা লাগায় আভি নিজেকে সামলাতে না পেরে পেছনে এলে যায়। পরতে পরতেও পরলো না ও বরং চার কদম পিছিয়ে ব্যালেন্স করে দাঁড়িয়ে গেল। পুরো ঘটনা যেন আভির মাথার উপর দিয়ে গেল। ওহি ওকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে পালিয়েছে কথাটা মাথায় ঢুকতে কয়েক সেকেন্ড সময় লেগে যায় ওর।

তৎক্ষণাৎ নিজের সেন্সে ফিরে সামনে তাকায় ও‌। ওহি দৌড়ে নিজের গাড়িতে উঠেছে। আভিও কম যায় কিসে? ও ওহির পেছনে দৌড় না দিয়ে পেছনে নিজের বাইকের কাছে যায়। বাইকে উঠে পকেট থেকে চাবি বের করার জন্য পকেটে হাত দিতেই হচকায় ও।

চাবি নেই। বেকুবের মতো প্যান্টের পকেট জ্যাকেটের পকেট হাতড়েও খুঁজে পেল না আভি, ওর চাবি।

গাড়ি স্টার্ট হওয়ার শব্দ কানে আসতেই আভি কনফিউজড মুখ নিয়ে সামনে তাকায়। ওর বাইকের চাবি দেখতে পারছে ও, সেটাও ওহির হাতে।‌

ওহি গাড়ির গ্লাস খুলে ওখান দিয়ে এক হাত বের করে আছে আর ওর আঙ্গুলে ঝুলছে আভির বাইকের চাবি‌‌।

আভি পুরোই হা, এ টুকু মেয়ে ওর মতো একজন সিবিআই অফিসারের নাকের নিচে থেকে ওরই বাইকের চাবি নিয়ে পালিয়েছে। বিষয়টা যতটুকু অবাকীয় তত টুকুই লজ্জাজনক।

নীলের বলা সে কথাটা এখন স্পষ্ট আভির কানে বাজতে শুরু করেছে, “ তুমি কী পরিক্ষা দিয়ে সিবিআই অফিসার হয়েছো নাকি ঘুষ দিয়ে?”

সত্যিই আভির এখন নিজের উপর সন্দেহ হচ্ছে। ও কী আদৌ কোনো পরিক্ষা দিয়েছিল?

ওহি কিছুক্ষণ চাবিটা আঙ্গুলে ঝুলিয়ে রেখে নিচে ফেলে দেয় আর দ্রুত গাড়ি স্টার্ট করে চলে যায়।

পেছনে বেকুব বনে দাঁড়িয়ে রইল আভি রায়জাদা নামক এক অসহায় প্রানি।

ওহি যাওয়ার পর প্রায় পনেরো মিনিটের মতো স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল আভি, কিন্তু এর পরপরই মাথাটা কয়েকবার ঝাকুনি দিয়ে নিজেকে সামলায় ও।

দ্রুত গিয়ে চাবিটা তোলে আভি, তারপর একদম বরাবর তাকিয়ে বলতে শুরু করে। “ পরিক্ষা তো আমি দিয়েছিলাম আর ঘুষ ছাড়াই অফিসার হয়েছি। হয়ত নীলকে এটার প্রমান দেওয়ার সময় চলে এসেছে।

মিস ওহি তুমি ভেবেছো আমাকে, আভি রায়জাদাকে বোকা বানানো এতোই সহজ? ওয়েল আজ আমি একটু অন্যমনস্ক ছিলাম তাই তোমার এই ট্রিক কাজ করে গেছে কিন্তু এর পর থেকে এমনটা হবে না। আজকের দিন তোমার ছিল কিন্তু আগামী প্রতিটা দিন আমার হবে। আমার নামও আভি রায়জাদা। ”

কথা গুলো নিজে নিজেই বলে নিজেকে যেন শান্তনা দেয় আভি। এর পরেই চাবিটা আঙ্গুলে ঘুরাতে ঘুরাতে নিজের বাইকের দিকে এগোতে এগোতে বলতে শুরু করে ও,

‘মাউন্ট এভারেস্ট সমুদ্র হতে ২৯,০২৯ ফুট উঁচু,
মিস ওহি তুমি যতই পালাও, এই আভি ছাড়বে না তোমার পিছু।’ – লাইন টুকু বলেই থমকে যায় আভি। মুখে একটা অবিশ্বাস্যকর ভাব এনে বলে ও,

“ওয়াও আভি কী সুন্দর কবিতা বানিয়ে ফেললি, তুই তো পুরোই কবি হয়ে গেলি। সো প্রাউড অফ ইউ।
কিপ গোয়িং ডুড, এমন ছোট খাটো কবিতা বানাতে বানাতে তুই একদিন বড় কবি হয়ে যাবি। কবি আভি রায়জাদা।”

নিজেই নিজের কবিতায় গর্বিত হয়ে নিজের তারিফ করতে শুরু করে ও।

[ স্যরি ফর দ্য ব্যাড কবিতা – আভি ?]

এইদিকে,

রওশন কেবিনের বাইরে ডাক্তারের সাথে কথা বলছে আর সুবহা বেডে পা ঝুলিয়ে বসে দরজার গ্লাস দিয়ে রওশনকে দেখছে।

সুবহা সেন্সে ফেরার পরপরই রওশনকে নিজের পাশে দেখেছে। প্রায় আধাঘণ্টা হবে জ্ঞান ফিরেছে ওর। আর এই আধাঘণ্টায় একশোটার মতো প্রশ্ন করে ফেলেছে ও রওশনকে। ‘ ও এখানে কিভাবে আসলো, ওকে কে বাঁচালো, রওশন ওকে কোথায় পেলো ব্লা ব্লা ব্লা।”

কিন্তু সুবহার এতগুলো প্রশ্নের একটারও উত্তর দেওয়া দরকার মনে করেনি রওশন। ওতো একটা শব্দও উচ্চারণ করেনি এখন অব্দি। শুধু চুপচাপ বসে সুবহার প্রশ্ন শুনছিল। এমনি নার্স যখন ঔষধ খাওয়াতে এসেছিল সুবহাকে আর সুবহা বাহানা দিচ্ছিল খেতে চাইছিল না, চোখ পাকিয়ে ওকে ভয় দেখায় আর ইশারা করে রওশন চুপচাপ খাওয়ার জন্য।

সুবহাও কী করবে চুপচাপ খেয়ে নিয়েছে। রওশনের এমন রাগি ভ*য়*ঙ্কর দৃষ্টি সহ্য করার মতো সাহস নেই ওর মধ্যে।

রওশন এখন বাইরে ডাক্তারের সাথে কথা বলছে সুবহাকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে।

কথা বলা শেষ করেই রুমে চলে আসে রওশন। এসেই দেখে সুবহা পা ঝুলিয়ে বসে আছে। বাড়ি যাওয়ার জন্য পুরোই প্রস্তুত ও।

রওশন টেবিলের সামনে গিয়ে নিজের ফোন নিয়ে পকেটে রেখে দেয়। তারপর সুবহার দিকে তাকিয়ে বলে ও, “ চলো সুবহা।”

এতক্ষণে এই একটা কথা বলল রওশন সেটাও ‘চলো সুবহা!’ মানা যায় এটা? কোথায় রোমান্টিক মুভির মতো হাত বাড়িয়ে দিবে, কোলে তুলে নিয়ে যাবে। কিন্তু কিছুই না শুধু ‘চলো সুবহা।’ একজন অসুস্থ মানুষের সাথেও এমন রুড ব্যবহার করে কেউ? অবশ্য এমন পরিস্থিতিতেও এমন কথা রওশনই বলতে পারে। একদম হার্টলেস।

সুবহা মুখটা বাংলার পাঁচ বানিয়ে ফেলল সেকেন্ডেই। একতো বেচারি কি*ড*ন্যাপ হয়েছিল, কতবড় বি*প*দ থেকে বেরিয়েছে, তারউপর এতো তেতো তেতো ঔষধ আর ভ*য়*ঙ্কর ইন*জে*কশ*ন নেওয়ার পর কতটা দূর্বল হয়ে গেছে। এমন সিচুয়েশনে রওশন ওকে হাঁটিয়ে নিয়ে যেতে চায়? একদমই নয়, সুবহা মানবে না। ওতো কোলে চড়ে যাবে তাও রওশনের। একদম ফিল্মি ভাবে।

সুবহা আড়চোখে রওশনের দিকে তাকায় তারপর বেড থেকে নামার জন্য পা ফ্লোরে নামাতেই পরে যাওয়ার ভান করে। সাথে সাথে রওশন ওকে ধরে ফেলল।

“ সাবধানে সুবহা।” চিন্তিত হয়ে বলল রওশন। সুবহা মুখটা মাসুম করে নরম গলায় বলতে শুরু করে, “কেমন যেন দূর্বল লাগছে রওশন হাঁটতে পারছি না।”

সুবহার কথা শুনে একটা বড় নিঃশ্বাস ফেলল রওশন। “ আগে বললেই তো হতো। ঠিক আছে তোমাকে হাঁটতে হবে না।”

রওশনের কথাটা শুনেই মুচকি হাসে সুবহা। ওর প্ল্যান কাজ করেছে। এখন নিশ্চয়ই রওশন ওকে কোলে তুলে নিবে।

কিন্তু পরক্ষনেই সুবহার হাসি আর প্ল্যান দুটোতেই পানি ঢেলে দিল রওশন ওকে হুইলচেয়ারে বসিয়ে। সুবহা পুরোই হতভম্ব, কী ভেবেছিল আর কী হলো। এই দিনটাই দেখার বাকি ছিল ওর, হুইলচেয়ার সিরিয়াসলি!

কী লাভ এতো জীম টিম করে বডি বানিয়ে যদি‌ একটা মেয়েকে কোলেই না নেয়। পুরো হসপিটাল সুবহাকে হুইলচেয়ারে বসিয়ে ঘুরিয়েছে রওশন। তারপর হসপিটাল থেকে বেরিয়ে গাড়িতে উঠে বাড়ির উদ্দেশ্যে বের হয় ওরা।

সুবহা পুরোই চুপ হয়ে আছে। বলতে গেলে রেগে আছে ও। রওশনও তেমন কোনো কথা বলে নি পুরো পথ জুড়ে। এক কথায় নীরবতার মাঝেই কেটে গেছে পুরো পথ।

হঠাৎ সুবহা খেয়াল করে রওশনের গাড়ি অন্য রাস্তায় যাচ্ছে। কিছু সময় পার হতেই ওদের গাড়ি একটা গেইটের সামনে চলে আসে। গেইটে বড় বড় অক্ষরে ‘RR’ লিখা আর কর্নারের বোর্ডে রায়জাদা ভিলা লিখা। সুবহার বুঝতে অসুবিধা হলো না যে এটা রওশনের বাড়ি। অবাক করা হোক বা হাস্যকর বিষয় কিন্তু এটাই সত্য যে এতো বছরেও সুবহা কখনো রওশনের বাড়ির মুখ দেখেনি। এমনকি ও জানতেও পারে নি যে রওশনের বাসা কোথায়।

গেইট খুলতেই ওর গাড়ি ভিতরে ঢুকে পরে। সুবহা তবুও চুপ করে থাকে। কোনো প্রশ্ন বা কথা বলল না ও। রওশন ওকে নিয়ে যাচ্ছে আর ও চুপচাপ যাচ্ছে এমন একটা পরিস্থিতি এটা।

এইদিকে,

“ তুই যেই গেইমের ছোটখাটো প্লেয়ার সেই গেইমের মাস্টারমাইন্ড রওশন রায়জাদা। তোর ভালোর জন্য একটা অ্যাডভাইজ দিচ্ছি, ডোন্ট ক্রস ইউর লিমিট। কারন আমি যদি নিজের লিমিট ক্রস করি তোর লা*শে*র টুকরোও গুনে শেষ করতে পারবে না তোর লোকেরা।

এডভাইজ মেনে চলবি তাহলে বেশিদিন বাঁচার সুযোগ পাবি আদার-ওয়াইজ…. ইউ নো রওশন কি করতে পারে।‌”

চিরকুটটা পড়ে রেগে সেটাকে মুড়িয়ে ছুঁড়ে ফেলল শান। রাগে মুখ পুরো লাল হয়ে গেছে ওর।

ওর লোকেরা সামনেই বসে ওর। শান বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়, একটা পা কাঠের ও। সেই কাঠের পা দিয়েই খুড়োতে খুড়োতে হেঁটে সামনে এগোয় ও। প্রতিটা কদমে খটখট শব্দ শোনা যাচ্ছে।

শান যেতে যেতে পেছনে বসে থাকা লোকদের উদ্দেশ্যে বলতে শুরু করে, “ রওশন যদিও আমার একটা প্ল্যান নষ্ট করে দিয়েছে কিন্তু আমার দ্বিতীয় প্ল্যান ও টেরও পাবে না। এবার আর কোনো হুমকি দেওয়া হবে না সোজা একশন হবে। কালকে ওই পিচ্চিটার জন্মদিন, ওর জন্য গিফট তৈরি করো।”

কথা গুলো বলেই অদ্ভুত একটা হাসি দিয়ে খুড়োতে খুড়োতে চলে গেল শান।

To be continued….

আমার আইডিতে ভা*য়ো*লেন্স এর জন্য রে*স্ট্রি*কশন আসছে তাই আইডি থেকে পেইজে লগইন হচ্ছে না কয়দিন ধরে‌। আজ পেইজে লগইন হলেও ম্যাসেন্জারে হচ্ছে না।? আল্লাহ জানে ভা*য়ো*লেন্সের কি এমন করেছি।? সমস্যা নেই আর কয়েকদিন এমন চললে নতুন আইডি খুলে নিব আর ওটায় গল্প দিব। পেইজের গুষ্টির ষষ্ঠী অনেক জ্বালাচ্ছে ব্যাঙের পেইজ। ?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here