Love_With_Dragon #Episode__04

0
760

#Love_With_Dragon
#Episode__04
[গল্পটি কাল্পনিক দয়া করে কেউ বাস্তব এর সাথে তুলনা করবেন না]

— রিদিয়া তোর হাতের আংটিটা কোথায়..(মিসেস মেহের)

— কোথায় হয়তো পড়ে গেছে। (রিদিয়া)

— পড়ে গেছে মানে। তুই জানিস এই আংটিটা…..(মিসেস মেহের)

— এই আংটিটা কি আম্মু বলো….(রিদিয়া)

— তুই জানিস তোর বাবা তোর জন্য এই আংটিটা দিয়ে গিয়েছিল আর তুই হারিয়ে ফেলেছিস। তুই আংটিটা যত্ন করে রাখতে পারলি না।বলেই মিসেস মেহের মন খারাপ করে চলে গেল। (মিসেস মেহের)

— আম্মুর কি হলো আর আংটিটা হারিয়ে গেছে বলাতে এতো চিন্তিত দেখা গেল কেন।কেন জানি মনে হচ্ছে এই আংটিটার কোনো রহস্য আছে।আম্মু আমার কাছ থেকে কিছু তো লুকাচ্ছে।কিন্তু কি……(রিদিয়া)
_________________________

নিজের রুমে এসে রিদিয়া আংটিটার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
মায়ের কাছে মিথ্যে বলেছে রিদিয়া। কলেজ থেকে আসার সময় রাস্তায় কি মনে করে আংটিটা হাত থেকে খুলে ব্যাগে রেখে দিয়েছে। মূলত আংটিটার রহস্য জানার জন্য সে মিথ্যে বলেছে।কিন্তু তার মা কিছু বলতে গিয়েও বললো না।

— কি রহস্য লুকিয়ে আছে তোর মধ্যে বল।হঠাৎ আলো আসল কিভাবে তোর মধ্যে। (রিদিয়া)

রিদিয়ার কথার মাঝে হঠাৎ করে একটা কন্ঠস্বরে বলে উঠে,,,
সময় হলে সব জানতে পারবি এখন আমার অনুমতি নেই। রাজকুমারী লিনিয়া বারন করেছে তোকে যেন কিছু না বলি।
রিদিয়া অবাক হলো সাথে ভয়ও পেল।

— কে….. কে কথা বলছো সামনে এসো।আর তুমি কি বলতে চাইছো……(রিদিয়া)

কিন্তু এবার আর রিদিয়ার কথার জবাবে আর কোনো কথা শুনতে পেল না।
হাতের আংটিটার দিকে নজর পড়লো রিদিয়ার। আংটিটা জ্বলজ্বল করছে। রিদিয়ার মন খারাপ হয়ে গেল।রিদিয়া আংটিটা আঙ্গুলে পড়ে নিল।

“””পরী পরী পরী চলে আসো তাড়াতাড়ি”””

বাক্যটি তিনবার বলতেই হঠাৎ করেই তার রুমে ঠান্ডা হাওয়া আসতে লাগলো।

— অদ্ভুত তো আমার ঠান্ডা লাগছে কেন।(রিদিয়া)
সামনে তাকাতেই দেখে তার ম্যাজিকম্যান দাঁড়িয়ে আছে।

— ম্যাজিকম্যান তুমি?…….(রিদিয়া)

— ম্যাজিকম্যান?……

— তুমি তোমার নাম আমাকে বলনি তাই আমি তোমার একটা নাম দিয়েছি “ম্যাজিকম্যান”।(রিদিয়া)

— ভালো। আমায় কেন স্মরন করলে কোনো সমস্যা হয়েছে তোমার।(ম্যাজিকম্যান)

— না কোনো সমস্যা হয়নি আমি তো এমনি বাক্যটি বললাম?।তুমি যে সত্যি সত্যি চলে আসবে আমি ভাবিনি। (রিদিয়া)

— আমি তো ভাবলাম তোমার কোনো বিপদ হয়েছে ?।দুষ্টামি করার কতগুলো লিমিট থাকা দরকার। (ম্যাজিকম্যান)

— কিছু মনে করো না।চল আমরা দুজন একটু বাহির থেকে ঘুরে আসি?।(রিদিয়া)

— এখন আমার গুরুত্বপূর্ণ কাজ রেখে তোমার ডাক পেয়ে চলে এসেছি। অন্যদিন ঘুরাবো তোমায় এখন যাচ্ছি আমি।(ম্যাজিকম্যান)

রিদিয়ার মন খারাপ হয়ে গেল। রিদিয়া ব্যাগ থেকে ডায়েরি বের করে ড্রাগনের ছবি আঁকতে শুরু করলো। যখন মন খারাপ হয় রিদিয়া ড্রাগনের ছবি আঁকতে শুরু করে এতে করে রিদিয়ার মন ভালো হয়ে যায়।

— নেকড়ে, ম্যাজিকম্যান এদের সাথে তো দেখা হলো কবে যে তোমার সাথে দেখা হবে ড্রাগন।(রিদিয়া)

রিদিয়া ড্রাগন নিয়ে ভাবছে তখনি মোবাইল বেজে উঠল।

মোবাইলের শব্দ শুনে ভীষণ বিরক্ত হলো রিদিয়া।

— শান্তিতে একটু আমার ড্রাগনকে নিয়ে ভাবতে পারছি না।এখনি এর ফোন করতে হলে।(রিদিয়া)

ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে,,,,,

— আমাদের লাইব্রেরীতে যাওয়ার কথা বলে কোথায় হারিয়ে গেলি তুই। জানিস কতটা চিন্তায় ছিলাম তোকে নিয়ে।তোর যদি কিছু হতো আন্টিকে কি জবাব দিতাম।(মেঘলা)

— দূর আমি কি বাচ্চা মেঘলা এত চিন্তার কি আছে।কাজ ছিলো তাই চলে এসেছি। (রিদিয়া)

রিদিয়া রোহিতের কথা এড়িয়ে গেল মেঘলার থেকে।

— আমাদের বলে আসতি পারতি।পুরো কলেজ তোকে খুঁজে বেরিয়েছি। (মেঘলা)

— সরি আর এমন হবে না।(রিদিয়া)

— ঠিক আছে। এবার মাপ করে দিলাম পরের বার এমন করলে আন্টির থেকে বলে দিমু বলে দিলাম কিন্তু। (মেঘলা)

— এই না না আম্মুর থেকে কিছু বলবি না। যেখানে যাব তোদের বলে যাব।(রিদিয়া)

— ওকে গুড গার্ল আমি ফোন রাখলাম।(মেঘলা)
________________________

[দশ-বারোটা নেকড়ে রিদিয়ার সামনে মিহি আর মিসেস মেহেরকে ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাচ্ছে।

— দয়া করে আমার আম্মু আর আপুকে ছেড়ে দেও?।আমরা তোমাদের কি ক্ষতি করেছি।ওদের মেরো না।(রিদিয়া)

চারদিকে রক্ত আর রক্ত। রক্তে রিদিয়ার ফোবিয়া আছে।কান্না করতে করতে রিদিয়া অজ্ঞান হয়ে গেল। ]

রিদিয়া হুড়মুড় করে ঘুম থেকে উঠলো। পুরো শরীর ঘেমে একাকার হয়ে গেছে।

— তার মানে আমি স্বপ্ন দেখছিলাম। হঠাৎ এমন ভয়ানক স্বপ্ন দেখলাম কেন।আম্মু আর আপুকে একবার গিয়ে দেখে আসি।(রিদিয়া)

রিদিয়া নিজের রুম থেকে বের হয়ে প্রথমে মায়ের রুমে উঁকি দিয়ে দেখলো।

— না আম্মু ঠিক আছে ভয়ের কিছু নেই এইটা শুধুই স্বপ্ন আর কিছু না।(রিদিয়া)
তারপর মিহির রুমে উঁকি দিল।সবকিছু ঠিকঠাকই আছে।

রিদিয়া ড্রয়িং রুমে এসে সোফায় চুপচাপ বসে আছে।
কেমন জানি অস্বস্তি লাগছে ওর।স্বপ্নটা মাথা থেকে সরাতে পারছে না।হঠাৎ বাহির থেকে কিছুর আওয়াজ শুনতে পেল রিদিয়া।আওয়াজটা শুনে রিদিয়ার কলিজা কেঁপে উঠল।

রিদিয়াদের বাড়ির বাম পাশেই জঙ্গল রয়েছে।মূলত আওয়াজটা জঙ্গল থেকেই আসছে।মনে হচ্ছে কিছুর ধস্তাধস্তির আওয়াজ।

রিদিয়ার মন প্রথমে না না করলেও পরে আর নিজেকে আটকাতে পারল না।বাহিরে কি হচ্ছে ও সেটা দেখবে।
রিদিয়া ভয়ে ভয়ে দরজা খুলে বাড়ির বাহিরে চলে গেল।কাঁপা কাঁপা শরীর নিয়ে জঙ্গলের দিকে এগোচ্ছে রিদিয়া।
ধীরে ধীরে জঙ্গলের ভেতর প্রবেশ করলো রিদিয়া।ভয়ে পুরো শরীর কাঁপছে রিদিয়ার।

জঙ্গলে প্রবেশ করে একটু সামনে এগোতেই রিদিয়া যা দেখলো এতে ওর হার্ট স্ট্রোক হয়ে যাবে এমন অবস্থা।
রিদিয়ার ভয়ে খুশিতে চিৎকার করতে যাবে কিন্তু তার আগেই নিজেই নিজের মুখ নিজে চেপে ধরলো।
রিদিয়া ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে পরলো।

একটা ড্রাগন আর দশ-বারোটা নেকড়ের যুদ্ধ চলছে।
ড্রাগনটা একাই নেকড়ে গুলোকে শায়েস্তা করছে।রিদিয়ার দারুন লাগছে ব্যাপারটা।সে শুধু মুভিতেই এইসব দেখেছে।সরাসরি নিজের চোখে দেখতে পারছে নিজেরই বিশ্বাস হচ্ছে না। রিদিয়া হা করে নেকড়ে আর ড্রাগনের যুদ্ধ দেখছে।
হঠাৎ করে একটা নেকড়ে মানুষের রূপে আসল।বেচারা অনেক আহত হয়েছে। নেকড়েটাকে দেখে রিদিয়া ভয় পেয়ে গেল।

— নেকড়ে লিও।এই অসভ্য নেকড়ে আমায় খেয়ে পেলতে চেয়েছিল।বেশ হয়েছে আরো মারুক তোকে?।

ড্রাগনটা নেকড়েদের মেরে মেরে অবস্থা খারাপ করে দিয়েছে। কোনোরকম বেঁচে পালিয়েছে বেচারারা।রিদিয়া তো ভীষন এক্সাইটেড। রিদিয়া ঝোপের আড়াল থেকে বের হয়ে ড্রাগনটার সামনে আসল।
হুট করে সামনে আসাতে ড্রাগনটা রিদিয়াকে আক্রমণ করে বসলো।
রিদিয়া দূরে ছিটকে পরলো।

— আ….হ্। আরে ড্রাগনের বাচ্চা তোর কোনো ক্ষতি করতে আসিনি আমি?।আমি তো তোর সাথে সাক্ষাৎ করতে আসলাম। আর তুই আমায় ব্যাথা দিলি।মনে হচ্ছে শরীরের হাড়গোড় সব ভেঙে গেল রে?।(রিদিয়া)

ড্রাগনটা মানুষের রূপে আসল।

— তুমি কে আর লুকিয়ে লুকিয়ে কি করছিলে এখানে।

— এতকিছু জেনে কি করবেন।আমি যে এত ব্যাথা পেয়েছি একবারও জিজ্ঞাসা করেছেন?।তারমানে আপনি একটা খারাপ ড্রাগন। (রিদিয়া)

— কি বললে আমি খারাপ। আমি যদি এই নেকড়ে গুলোকে না শায়েস্তা করতাম তাহলে এতক্ষণে তাদের ভোজন হয়ে যেতে তোমরা।

— মানে….(রিদিয়া)

— এতকিছু জানার দরকার নাই। তুমি এইটা বলো লুকিয়ে লুকিয়ে কি করছিলে এখানে। আর আমাকে দেখে তোমার ভয় লাগেনি।

— না মোটেও ভয় লাগেনি।আমি তো ড্রাগন অনেক ভালোবাসি?।সৃষ্টিকর্তা আমার ইচ্ছে পূরণ করেছে। (রিদিয়া)

— কি পূরন করেছে তোমার সৃষ্টিকর্তা….

— ড্রাগনকে নিজের চোখে সরাসরি দেখার?।(রিদিয়া)

— আমি রাহুল। ড্রাগন কিং এর ছোট ভাই। নেকড়ে গুলো মানুষদের খাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল।কিন্তু আমার ভাই তাদের পরিকল্পনা জানতে পেরে যায়। আমাকে পাঠালো তাদের শায়েস্তা করতে।
রাহুল কথা বলার ফাঁকে ফাঁকে রিদিয়ার দিকে তাকাচ্ছিল।

— মেয়েটা সম্পূর্ণ আলাদা।দেখতে কি মায়াবী। উজ্জ্বল শ্যামবর্নের চেহারায় মায়ায় পরিপূর্ণ। চোখের দিকে তাকালে হার্টবিট একশো গুন বেড়ে যায়।এত মায়া কেন মেয়েটার মধ্যে। (রাহুল)

— এই যে মিস্টার আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে কি ভাবছেন।(রিদিয়া)

রিদিয়া হাত দিয়ে রাহুল এর চোখের সামনে নাড়াচাড়া করলো।

রিদিয়ার হাতের আংটিটার দিকে চোখ আঁটকে গেল রাহুলের।

— তোমার হাতের আংটিটা কোথায় ফেলে তুমি…(রাহুল)

— আম্মু দিয়েছে কেন বলুনতো… (রিদিয়া)

— এটা কোনো সাধারণ আংটি না। আংটিটা ম্যাজিক জানে।(রাহুল)

— কি…..কি বললেন কিভাবে সম্ভব। (রিদিয়া)

— আর এই আংটি শুধু ড্রাগন রাজ্য ছাড়া পাওয়া সম্ভব না।কিন্তু তোমার মায়ের কাছে কিভাবে আসলো এই আংটি।তোমার মা কি সাধারণ মানুষ। (রাহুল)

— হ্যাঁ আমার আম্মু সাধারণ মানুষ। কিন্তু আপনার কথা আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।(রিদিয়া)

— এই আংটিটা ব্যবহার করা হয় নেকড়েদের থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য। এই আংটি যার সাথে থাকবে সে সুরক্ষিত। কোনো নেকড়ে তার ক্ষতি করতে পারবে না। তার কাছে আসলেই শরীর পুড়ে ছাই হয়ে যাবে।তোমার মাকে আমি কি দেখতে পারি……(রাহুল)

— হ্যাঁ কিন্তু লুকিয়ে দেখতে হবে।কোনো ছেলেকে বাড়িতে আসতে দেখলে আম্মু রেগে যায়।(রিদিয়া)

— ঠিক আছে তাহলে আজকে আমি গেলাম আবার দেখা হবে।(রাহুল)
বলেই রাহুল ড্রাগনের রূপে আসল।
আর রিদিয়া নীল রঙের ড্রাগনটার দিকে তাকিয়ে আছে হা করে।

— কত সুন্দর হেই সৃষ্টিকর্তা আমাকে ড্রাগনের সাথে প্রেম করিয়ে দেও প্লিজ প্লিজ প্লি…….জ…।.(রিদিয়া)

চলবে………
#লেখনীতে__ফিহা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here