#অনুভবে_ভালোবাসি,পার্ট_১
#লেখিকাঃতানজিলা_খাতুন_তানু
আজ কলেজের প্রথম বর্ষের পঞ্চম দিন ছেলেমেয়েদের আনাগোনা রয়েছে কলেজে।কলেজের গেট দিয়ে প্রবেশ করলো তিনটে মেয়ে, একদম সাধারন সাজ পোশাক, দেখেই যে কেউ বুঝবে সাধারন পরিবারের মেয়ে। মেয়েগুলোকে এর আগে দেখা যাইনি কলেজে ……
প্রথম মেয়েটা পুরো কলেজটা একবার চোখ বুলিয়ে বললোঃ ওই দ্যাখ কি সুন্দর কলেজ
দ্বিতীয় মেয়েটাও প্রথম মেয়েটার সাথে সহমত জানিয়ে বললোঃ হুম , কিন্তু যেটার জন্য এতদিন আসলাম না সেটা থেকে বাঁচতে পারবো তো?? (পাশের মেয়েটা কে খোঁচা দিয়ে বললো)
দ্বিতীয় মেয়েটার খোঁচা খেয়ে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটা নড়েচড়ে দাঁড়িয়ে চোখে থাকা চশমা টাকে ঠিক করে নিয়ে বললোঃ জানিনা তবে আমার ও খুব ভয় লাগছে।
(তিন বান্ধবী- তানিশা, নিঝুম আর নীলা,কলেজ শুরু হবার পাঁচদিন পরে এসেছে,যাতে না র্যাগিং এর স্বীকার হয়।)
নীলা-কী আর করার যেতে তো হবেই, এমনিতেই চারদিন পর এসেছি (মেকি হাসি দিয়ে)
তানিশা-হুম চল
ওরা তিনজন চুপচাপ চলে যাচ্ছিলে তখনই পেছন থেকে ডাক দিলো কেউ ওরা পেছনে ফিরে তাকিয়ে ভয়ে শেষ ৫টা সিনিয়র ছেলেমেয়ে দাঁড়িয়ে আছে (৩টে ছেলে আর ২টো মেয়ে)
সৌভিক-নতুন স্টুডেন্ট তো
ওরা মাথা নাড়িয়ে বললো হ্যা,
রকি-আগে তো দেখিনি আজকেই প্রথম নাকি
নিঝুম- হুম
সুমন- আসোনি কেন ?(ভ্রু কুঁচকে)
নীলা-এমনি ভালো লাগে নি তাই
সৌভিক-ভালো লাগেনি না আমাদের ভয়ে আসোনি(শয়তানি হাসি দিয়ে)
নীলা-আপনারা কে যে আপনাদের ভয়ে আসবো না(মনে সাহস নিয়ে)
এটা শুনে ওরা হাসতে লাগলো
নেহা-ওই ওদের কে বুঝিয়ে দে আমরা কে (বাঁকা হেসে)
রকি-এই তোমাদের নাম কী?
নীলা- আমি নীলাঞ্জনা জাহান
নিঝুম-আমি নিঝুম খাঁন আর ও তানিশা রহমান
নেহা -ও বোবা নাকি (ভ্রু কুঁচকে)
নীলা কিছু বলতে যাবে তানিশা থামিয়ে দিল ইশারায়,নিঝুম চুপ করে যায়।
রকি -ওই রিয়া মেয়েটা বোবা ,একে দিয়ে কি করাবি।
রিয়া (এই গ্রুপের লিডার) এতক্ষণ ফোনে ডুবে ছিল রকির কথায় মাথা তুলে ওদের তিনজনের দিকে একবার চোখ বুলিয়ে বাঁকা চোখে বললো-ওই নাগিন গান চালিয়ে দে ওরা তিনজন নাচ করুক
তানিশারা তিনজন একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে ,
সৌভিক-চালু করো বলে ওদের সবাই হাসতে লাগলো সবাই ওদের দিকে তাকিয়ে আছে কেউ মুচকি হাসছে, কেউ ফিসফিস করছে কিন্তু কেউ প্রতিবাদ করছে না, সবাই মজা নিচ্ছে
নিঝুম-যেটার ভয় কর ছিলাম সেটাই হল (ফিসফিস করে)
নীলা-দ্যাখ কেউ কিছু বলছে না সবাই মজা দেখছে (দাঁত চেপে)
রিয়া -কী হলো কথা কানে তাই না (ধমক দিয়ে)
ওরা ভয়ে ভয়ে চালু করবে তখনই কেউ বলে উঠল
–কী হচ্ছে এখানে
রিয়ারা আগন্তুক মানুষটিকে দেখে ঘাবড়ে গেল , আর তানিশা রা ভাবছে কে উনি তাকে দেখে রিয়া রা ভয় পাচ্ছে কেন।
উনি আবার ধমক দিল-এখানে কী সার্কাস হচ্ছে এখানে কেন সবাই ক্লাসে যাও।
জায়গাটা ফাঁকা হয়ে গেল শুধু মাত্র ওরা কজন আছে।
ব্যক্তিটি আবার বললো-এখানে কী হচ্ছিল?
রিয়া – আসলে (ভয়ে ভয়ে)
ব্যক্তিটি-কী আসলো (ধমক দিয়ে)
ওনার ধমক শুনে সবাই কেঁপে উঠলো,
নীলা-ওই কে উনি (ফিসফিস করে)
তানিশা-আমি কীভাবে জানবো , চুপ করে থাক নাহলে আমরা ঝাড় খাবো (ফিসফিস করে)।
নীলা-হুম
নীলারা চুপ করে যায়।
রিয়া -আসলো অনিক ওই মেয়েটা না বোবা তাই ওকে বলেছিলাম কিছু সাহায্য লাগলে বলতে(আমতা আমতা করে)
ওরা কথা শুনে তানিশা রা আকাশ থেকে পড়ল
নিঝুম -কি মিথ্যাবাদী (নীলার কানে কানে বলল)
অনিক-ও তোমরা ক্লাসে যাও
রিয়া-হুম
অনিক-আর একটা কথা তোমাদের কাউকে না দেখি জুনিয়ারদের বিরক্ত করতে।যাও…(শেষের কথাটা একটু জোরে বললো)
রিয়া দৌড়ে চলে গেল তানিশারা হাঁ করে তাকিয়ে আছে
অনিক-ওরা সত্যি তোমাদের সাথে কথা বলছিল না অন্য কিছু
নিঝুম-আমাদের নাগিন ড্যান্স করতে বলেছিল (রাগ দেখিয়ে)
অনিক- ও তা তোমরা নতুন তো
নীলা-হুম
অনিক-নাম কী তোমাদের
নিলা-আমি নীলা,ও নিঝুম আর ও তানিশা
অনিক – তুমি সত্যি বোবা (বাঁকা হেসে)
তানিশা রাগী চোখে অনিক এর দিকে তাকিয়ে আছে
নিঝুম- না ওরা এমনি বলছিল
অনিক-ও ।আমি অনিক হাসান, তোমাদের সিনিয়র যদি কখনো কিছুর দরকার হয় আমাকে বলবে
নীলা-ওকে
অনিক-আসি তাহলে তোমরা ক্লাসে যাও ।
অনিক চলে গেল ওরা নিজেদের ক্লাসে চলে গেল
ক্লাস শেষে~
মিতু- তোমরা কি আমার বন্ধু হবে
তানিশা-নাম কি তোমার
মিতু-মিতু , তোমাদের
ওরা নিজেদের নাম বললো,
মিতু- কী গো হবে
তানিশা-হতে পারি তবে একটা শর্তে
মিতু-শর্ত (একটু ভেবে) ওকে
তানিশা-আমাদের তুমি বললে হবে না, তুই বলতে হবে রাজী
মিতু-রাজী( হেসে)
ওরা গল্প করতে লাগল
নীলা -আজ অনিকদা না আসলে কী যে হতো কে জানে
মিতু-তোমরা সরি তোরা অনিকদা কে চিনিস ?
নিঝুম-না আজ প্রথম দেখা
মিতু-ওও
নীলা -ওই রিয়া না ফিয়ারা তো ভয়েই শেষ (হাসতে হাসতে)
মিতু-ওদের তিনজন কে সবাই ভালো বাসে সাথে
সবাই ভয় ও পাই
তানিশা-তিনজন বলতে?
মিতু-অনিকদা,মেঘ আর আদিদা ফেন্ড ।আদি বলতে তো সবাই পাগল, মেয়েদের ফার্স্ট ক্রাশ,অনিক আর মেঘ ও কম যাই না ।ওরা কাউকে পাত্তা দেই না ,রিয়া তো আদি দার জন্য পাগল
নিঝুম-ওওও
তানিশা-ওই বাড়ি যাবো চল
নীলা-ওকে
মিতু-তাহলে বাই ,কাল থেকে দেখা হবে
নিঝুম-বাই
ওরা তিনজন চলে গেল বাড়ি।
সন্ধ্যা বেলা-
মেঘ-কীরে অনিক আজ হঠাৎ করে কলেজ গেলি কেন (ভ্রু কুঁচকে)
অনিক-এমনি(আমতা আমতা করে)
আদি – কেসটা কী বল
অনিক -কীসের কেস
মেঘ-তুই তো আজকে নিজেই বললি আজ কলেজ যাবো না আর তুই নিজেই চলে গেলি
আদি – হুম সেটাই তো, সত্যি করে বল
অনিক-এমনি গিয়ে ছিলাম কিন্তু কলেজে গিয়ে দেখি রিয়া(আদি কে খোঁচা মেরে)
আদি -ওই রিয়া র কথা বলবি না একটা অসহ্য
মেয়ে, সবসময় গায়ে পড়ে কথা বলে
অনিক-আরে শুনবি তো
মেঘ -বল শুনি
অনিক-ওরা আবার ছেলেমেয়েদের বিরক্ত করছে
কথাটা শুনে আদি রেগে বোম
আদি-কী এত বড়ো সাহস,আমি এত করে বলার পড় ও । ওর সাহস কী করে ওসব করার(রেগে)
মেঘ-কালকে ওদের শেষ দিন (বিড়বিড় করে)
অনিক-শান্ত হ কালকে ওদের সাথে কথা বলবো
আদি -হুম
অন্যদিকে–
রূদ্ধি -ওই বনুর সাথে কথা হয়েছে
অভিক-হুম
রূদ্ধি-ওকে একদিন আস্তে বলো না
অভিক-বলেছি অনেক বার ,এটাও বললাম এখানে থাকার জন্য কিন্তু ও রাজী নয়
রূদ্ধি-ওওও।আর অনিক এর সাথে বনুর ঝগড়া শেষ হয়েছে
অভিক-ও আরেক পাগলা। ওদের ঝগড়া কীসের জন্য সেটাই জানিনা।বাদ দাও পাখি কোথায়
রূদ্ধি- মায়ের কাছে ,ও তো পাগলা করে দিচ্ছে ওর কাছে যাবার জন্য
অভিক-হুম
পরেরদিন কলেজ…
আদি-রিয়া এগুলো কি হচ্ছে তোমাদের বার বার করে বলার পড় ও তোমরা কেন করছো এসব হোয়াই?(রাগে চিৎকার করে)
আদির ধমক শুনে সবাই কেঁপে উঠলো। রিয়া দের অবস্থা খুব খারাপ, সবাই ওদের ঘিরে আছে । নীলা রা মাঠে ভীড় ঠেলে ভেতরে ঢুকে গেল আজ তানিশা এখনো পর্যন্ত কলেজে আসেনি
রিয়া-আদি আমার কথাটা শুনো(বলতে না দিয়ে আদি বললো)
আদি-চুপ(ধমক দিয়ে) আর একটা কথা বললে কী করবো আমি নিজেই জানি না।(দাঁত চেপে)
মেঘ-আদি শান্ত হ
আদি- হুম (কিছুক্ষণ পর বললেন) রিয়া তোমাদের আমি সাবধান করে দিয়েছিলাম কিন্তু তাও তোমরা একই কাজ করে যাচ্ছো , তোমাদের কী করা উচিত বলো তো
রিয়া-সরি আর করবো না, একটা লাস্ট সুযোগ দাও (অনুরোধ কন্ঠে)
আদি-লাস্ট সুযোগ ওকে (চুলটাকে পেছনের দিকে ঠেলে) তুমি কাল তোমার বাবাকে নিয়ে আসবে ,এখন আমার চোখের সামনে থেকে যাও সবাই (চেঁচিয়ে)
সবাই কোনমতে প্রান নিয়ে পালানো, নীলারা যাবে বলে তখন মিতু ওদের আটকে দিল
মিতু-কেমন আছেন সবাই
আদি-আরে ভাবিজি যে,কেমন আছেন (মেঘ কে চোখ মেরে) নীলারা হাঁ করে তাকিয়ে আছে আদির দিকে। যে ছেলেটা এক্ষুনি এতটা রাগ দেখাচ্ছিলো সেই আবার হাসি মুখে কথা বলছে।
মিতু-আদিদা তুমি আবার ভাবিজি বলছো আমাকে (মেকি রাগ দেখিয়ে)
আদি-দ্যাখ তুই আমার বন্ধুর বউ হলে তো আমাদের ভাবি হবি তাই না(মুচকি হেসে)
মিতু-তোমার বন্ধুর বউ হতে আমার বয়ে গেছে (ভেংচি কেটে)
মেঘ-আমি কি তোমাকে বলছি আমার বউ হতে ,কত মেয়ে আমার পেছনে লাইন দিয়ে আছে (মুখ বাঁকিয়ে)
অনিক-ওই তোরা আর চালু করিস না ,ভালো লাগে না (বিরক্ত হয়ে)
মিতু-কী করলাম আমি
আদি-কি খবর বল ,কোন সমস্যা হয়নি তো
মিতু-না, তোমাদের সাথে আমার নতুন বন্ধুদের আলাপ করাতে এলাম,ওই আয় তোরা
এতক্ষণ ওদের ওরা খেয়াল করে নি।মিতু ওদের পরিচয় করিয়ে দিল।
অনিক- নিশা কোথায় (করুন কন্ঠে)
সবাই অনিক এর দিকে এমন দৃষ্টিতে তাকালো যেন ও কোন বড়ো অপরাধ করে ফেলেছে
অনিক- কী হলো সবাই এমন ভাবে তাকিয়ে আছো কেন?
আদি-নিশা টা কে?
অনিক- আরে তানিশা ওদের বন্ধু ,কাল ওদেরই রিয়া বিরক্ত করছিল। তানিশা নাম আমি সেটাকে ছোট করে নিশা ডাকলাম (আমতা আমতা করে)
মিতু-অনিদা তুমি নিশাকে কী আগে থেকে চেন
অনিক-না(চিৎকার করে)
মেঘ- সালা এটা আস্তে বলা যাই না (অনিক এর মাথায় চাটি মেরে)
অনিক-ওই সালা বলবি না আমাকে (রাগ দেখিয়ে)
মেঘ-ওকে
নীলা-ওই ক্লাসে চল, দেরি হয়ে যাচ্ছে
মিতু -হুম,বাই(ওদের থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল)
অনিক-আমার একটা কাজ আছে আমি গেলাম,বাই(ওদের কিছু বলতে না দিয়ে চলে গেল)
মেঘ- কিছু তো একটা গন্ডগোল আছে
আদি -হুম চল লাইব্রেরী থেকে ঘুরে আসি
মেঘ-ওকে
ওদিকে-
নেহা-আজকে খুব বাঁচান বেঁচে গেছি
সুমন-হুম
সৌভিক-কাল কোথা থেকে অনিক এসে সব বারোটা বাজিয়ে দিল
রকি-কালকের মেয়ে গুলো নিশ্চয় অনিক কে সব সত্যি বলে দিয়েছে
নেহা-সেটাই স্বাভাবিক
রিয়া কিছু বলছে না চুপ করে আছে
সৌভিক-কি রে রিয়া চুপ করে আছিস কেন?
রিয়া তবুও নিশ্চুপ
অন্যদিকে-
আদি আর মেঘ কথাবলে যাচ্ছে হঠাৎ আদির সাথে কারোর ধাক্কা লাগে সামনের মানুষ টার উপর আদি পড়ে যায় । আকস্মিক ঘটনায় আদি হতভম্ব হয়ে যায়
তানিশা-আল্লাহ গো মরে গেলাম কোন হাতি আমার উপর পড়ল ।হাড় ভেঙে গেল (চোখ বন্ধ করে চিৎকার)
আদি তানিশাকে দিকে হা করে তাকিয়ে ছিল কিন্তু তানিশার কথায় ওর মেজাজ খারাপ হয়ে গেল সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়িয়ে পড়ল
আদি-এই মেয়ে কি বললে আমি হাতি
তানিশা- হুম হাতিই তো(উঠে দাঁড়িয়ে)
আদি-কী(রেগে)
তানিশা-কানে কম শোনেন । বয়রা নাকি (ভ্রু কুঁচকে)
আদি-তোমাকে তো আমি(রেগে ফুঁসে উঠে)
তানিশা-সরি বলবেন তো ,সেটা আমি জানি (দাঁত বার করে)
আদি-আমি সরি বলবো কেন তুমি সরি বলো তোমার ভুল
তানিশা- আপনার ভুল সরি বলুন আমি মাপ করে দেবো (ভাব নিয়ে)
মেঘ হাঁ করে তাকিয়ে ছিল কারন আদি কারোর সাথে ঝগড়া করেনা আদির ধমক খেয়ে সব চুপ করে যায় আর এই মেয়ে বকেই যাচ্ছে।
আদি- তোমার সাহস তো কম নয়। তুমি জানো আমি কে?
তানিশা-তা আপনি কি দেশের প্রধানমন্ত্রী নাকি। আপনাকে চিনে রাখবো (ভেংচি কেটে)
আদি-এই তুমি ভেংচি কাটলে কেন?(ধমক দিয়ে)
তানিশা-আমার মুখ আমি কি করবো সেটা আমার ব্যাপার ।আপনি একদম ধমক দেবেন না।
মেঘ- ওই আদি চল (আদিকে টেনে নিয়ে)
আদি- তোমাকে আমি দেখে নেব
তানিশা- দেখে নিন কে বারণ করেছে (দাঁত কেলিয়ে)
আদি রেগে চলে গেল, পেছনে মেঘ ও গেল।আর তানিশা হাসিতে ফেটে পড়ল।
#চলবে…