অনুভবে_ভালোবাসি,পার্ট_৩

0
813

#অনুভবে_ভালোবাসি,পার্ট_৩
#লেখনীতেঃতানজিলা_খাতুন_তানু

কুইন- হুম

আয়মান- কুইন প্লিজ মজা করো না।

কুইন- মজা নয় সত্যি।(আয়মান এর হাতে একটা ফাইল এগিয়ে দিয়ে)

আয়মান ফাইল টা পড়ে হতবাক হয়ে গেল।

কুইন- অবাক হবার কিছু নেই,এটা কোন নতুন ব্যাপার নয় এর আগেও বহুবার এরকম হয়েছে।আমরা বাচ্চাদের উদ্ধার করে তার পরিবারের হাতে তুলে দিই ।আর যারা অনাথ তাদের কাউকে দত্তক দিয়ে দিই।

আয়মান- ওই মেয়েটা কে দত্তক নিয়েছে একজন পুলিশ অফিসার ( অবাক হয়ে)

কুইন- কেন পুলিশ অফিসার বলে কী বাচ্চা দত্তক নিতে পারেনা।

আয়মান- সেটা নয় । তোমার সাথে পুলিশ অফিসার
এর চেনা পরিচিত আছে।

কুইন- দ্যাখ আয়মান আমার আর তোমার কাজ একই কিন্তু প্রক্রিয়াটা আলাদা । তুমি আইনের লোক আর আমি তোমাদের চোখে অপরাধী ।

আয়মান- আমি জানি তুমি ভালো তাই আমি আমার সব টা দিয়ে চেস্টা করি তোমাকে রক্ষা করতে।

কুইন- এবার বাড়ি যাও

আয়মান চলে গেল। কুইন কিছু একটা ভেবে হাসলো।

লন্ডন——

রাজ- বাপি বাপি কোথায় তুমি

রাজের বাবা- কী হয়েছে ডাকচ্ছিস কেন ।

রাজ- আজকে আমরা ডিলটা পেয়ে গেছি( খুব খুশি হয়ে)

রাজের বাবা- সত্যি

রাজ- হুম,মম কোথায়

রাজের বাবা- ঘরে আছে ।

রাজ – আমি দেখা করে আসছি ।

রাজ চলে গেল।

রাজের বাবা কাউকে ফোন করে বললেন- রাজ খুব খুশি। সব তোমার কথা মতো হয়েছে।

ওপাশের কথা শোনা গেল না।

পরেরদিন—–

নিঝুম- ওই আর কিছুদিন পর নবীন বরণ অনুষ্ঠান তাতে কি কেউ নাম দিবি ।

নীলা- গ্রুপ ডান্সে দেবো। মিতু তুই নাচ পারিস তো

মিতু- হুম ।একসাথে চার জন নাচবো কী মজা।

তানিশা- হুম ।

মিতু- চল মেঘ কে নামটা দিয়ে আসি ‌।

নীলা- এখন তো ক্লাস আছে পরে যাবো ।

মিতু- ওওও সরি ।

ক্লাস চলা কালীন সিনিয়ররা আসলো

প্রফেসর- ওরা কী বলছে মন দিয়ে শোনো

আদি- আগামী সপ্তাহে তোমাদের নবীন বরণ অনুষ্ঠান তাতে তোমরা কে ,কী অনুষ্ঠানে নাম দিতে চাও বলো ।

সবাই নাম দিলো

মিতু- আমরা গ্রুপ ডান্সে নাম দেবো ।

আদি – ওকে ।তবে ৫ জনের বেশি না হয় ।

মিতু- ওকে ।

অনিক- আজকে থেকে প্র্যাকটিস

প্র্যাকটিস রুম —

আদি- কে কোন গানে নাচবে সেটা আগে ঠিক করো ,তার পর প্র্যাকটিস হবে

একটা মেয়ে- কিন্তু আদি দা আমাদের একজন টিচার হলে ভালো হত ।

আদি- হুম কিন্তু স্যার তো এখন কলেজে আসবেন না , শরীর টা একটু খারাপ

মেঘ- তাহলে কী হবে

অনিক- আমাদের কলেজে কী ছাত্রীর অভাব।

আদি- ছাত্রী দিয়ে কি করবো
অনিক- আরে কেউ না কেউ তো নাচে পারদর্শী হবে সেই নয় এদের কোচ হবে ।

মেঘ- কিন্তু সেই টা কে হবে ।আর কে পারদর্শী সেটা কীভাবে জানবো ।

আদি- সেটাই তো, তাকে পাবো কোথায়। ( চিন্তিত হয়ে)

অনিক- তোদের সামনেই আছে।
রিয়া বলতে যাচ্ছিল সে নাচে পারদর্শী কিন্তু অনিক এর কথা শুনে চুপ করে গেল। সাথে সবাই অবাক হলো অনিক কার কথা বলছে ।

আদি- কে সে ?

অনিক- এই কোথায় যাচ্ছো ।( চেঁচিয়ে)
অনিক দৌড়ে তানিশার হাত ধরে সামনে টেনে আনলো।সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।

মিতু- অনিক দা তুমি ওকে এভাবে টেনে নিয়ে আসলে কেন ।

অনিক- ওকে না নিয়ে আসলে হয়(বাঁকা হেসে তানিশার দিকে তাকিয়ে)

তানিশা- এই হাতটা ছাড়ো ,ভালো হচ্ছে না বলে দিলাম ( আস্তে আস্তে )

আদি অনিকের এরকম কাজে খুব অবাক হয় ।ও একবার অনিক একবার তানিশার দিকে তাকায়।তারপর ওর নজর পড়ে ওদের হাতের উপর ।অনিক তানিশার হাত ধরে রেখেছে এটা কেন জানি না আদি সহ্য করতে পারলো না । ওদের সামনে গিয়ে অনিক এর হাত থেকে তানিশার হাত টা ছাড়িয়ে দিল ।

আদি- অনিক সবটা পরিস্কার করে বল ( কিছুটা রাগ নিয়ে)

আদির রাগ টা কেউ না বুঝতে পারলেও নিঝুম বুঝতে পারলো কারণ একই রকম রাগ তারও হচ্ছে কারণ টা তার অবগত নয়।

অনিক- আমাদের নাচের কোচ হবে তানিশা।

সবাই আরো অবাক হলো । তানিশা কাঁদো কাঁদো ফেস করে তাকিয়ে আছে অনিক এর দিকে।

রিয়া- তানিশা কোচ হবে মানে ( রেগে)

অনিক- যেটা বুঝেছো সেটাই। তানিশা নাচে পারদর্শী তাই ওই কোচ হবে

নীলা- অনিক দা তুমি কীভাবে জানলে।( হতবাক কন্ঠে)
নীলার এমন প্রশ্নে অনিক হকচকিয়ে যায় । তানিশা অনিকের দিকে রেগে কটমট করে তাকালো।

আদি-অনিক কী তানিশা বলে মেয়েটাকে আগে থেকে চেনে । কিন্তু আমার কেন এরকম হচ্ছে ( মনে মনে)

নিঝুম- অনিক জানলো কী করে নিশা নাচে ভালো ।তাহলে কী ওরা আগে থেকে চেনা পরিচিত ( মনে মনে)

অনিক- আসলো আমার মনে হলো তানিশা নাচে পারদর্শী তাই বললাম ( আমতা আমতা করে)
সবার ভ্রু কুঁচকে গেল‌। সবাই সন্দেহের চোখে তাকাল।

রিয়া- তোমার মনে হলো আর তুমি বলে দিলে‌।কী আজব আমি ড্যান্স কোচ হবো ( রেগে ফুঁসে ওঠে)

অনিক- না তানিশা হবে

মেঘ- আচ্ছা ঠিক আছে ।তাহলে রিয়া আর তানিশার মধ্যে কম্পিটিশন হোক কী বলো সবাই।

সবাই হা বললো। তানিশা অনিকের দিকে রেগে কটমট করে তাকালো আর অনিক চোখ মারলো এটা কেউ না দেখলেও আদি আর নিঝুম দেখেছে ।ওরা এক অজানা কারণে রেগে গেল। রিয়া তানিশার দিকে রেগে তাকালো সেটা দেখে তানিশা তাচ্ছিল্যের হাসি দিল এতে রিয়া আরো রেগে গেল।

অনিক- জাজমেন্ট তা হবে তাতে কেউ কিছু বলতে পারবেনা ।এখানের তার ভোট বেশি হবে সেই জয়ী‌।

নেহা- আমরা জানি রিয়া জিতবে ওই মেয়েটা ওকে নাকি হারাবে।( হেসে)

নিঝুমের আগে তানিশা আর অনিক কে‌ নিয়ে জেলাস হলেও নেহার ওরকম কথায় তেতে উঠল।

নিঝুম- কে জিতবে আর কে হারবে সেটা সময় হলেই দেখা যাবে (ব্যঙ্গ করে)

রিয়া- জিতবো তো আমিই ( হেসে

নীলা- দেখা যাবে ( বাঁকা হেসে)

নাচ চালু হলো——

ডোলা লারে ডোলা ( গানটা লিখলাম না,)

রিয়া আর তানিশার নাচ শেষ হলো করতালির মাধ্যমে।

একটা ছেলে- ওওও জিওওও কী নাচলে , তুমিই আমাদের কোচ হবে।( করতালি দিয়ে)

অনিক- কারা কার দলে বলো ।

সৌভিক- ওই তানিশার কাছে তো রিয়ার নাচ কিছু না।( ফিসফিস করে)

নেহা- হুম ভাবতেই পারিনি তানিশা এত সুন্দর নাচ করে ।

সবাই তানিশা কেই কোচ হিসাবে চাই ।রিয়া রেগে গেল।

নিঝুম- বলেছিলাম নাচ শেষে বোঝা যাবে ।

অনিক- আমি বলেছিলাম তানিশাই জিতবে ।

তানিশা- কালকে আমি সবার গান ঠিক করে দেব আর নাচ দেখিয়ে দেব এখন তোমরা যাও

সবাই চলে গেল। থাকলো শুধু ওরা‌

তানিশা- মিস রিয়া আমি গরীব হতে পারি কিন্তু মূখ্য নয় ওকে ।

রিয়া – তোমাকে আমি দেখে নেব ।

তানিশা- I’m ready Goodbye।

তানিশা চলে গেল সাথে ওর দলবল….থাকলো শুধু রিয়ার রিয়ার দলবল আর আদি সাথে মেঘ আর অনিক।

অনিক- রিয়া এটা তোমার লাস্ট সুযোগ ।(রেগে বলে চলে গেল)

আদি- রিয়া নিজের যোগ্যতা দিয়ে জয়ী হবে কখনো কারোর ক্ষতি করার চেষ্টা করে জেতার চেষ্টা করে জেতার চেস্টা করবে না তুমি তানিশাকে ফেলে দিতে চেয়ে ছিলে কিন্তু তুমি পারোনি সেই তানিশাই জিতলো।

আদি চলে গেল সাথে মেঘ।

রিয়া – ওই মিডিলক্লাস মেয়েটার কাছে আমি হেরে গেলাম ।ওকে আমি কিছুতেই জিততে দেবো না কিছুতেই না।

ওদিকে-

মেঘ- ওই আদি আমার মনে হয় অনিক আগে থেকে তানিশাকে চেনে কিন্তু ও আমাদের কিছু বলছে না কেন ।

আদি- বুঝতে পারছি না ।তবে গন্ডগোল তো আছে ।

মেঘ- তবে রিয়া চেস্টা করবে তানিশার ক্ষতি করার জন্য।

আদি – হুম রিয়া আর তানিশার দিকে একটু খেয়াল রাখতে হবে।

অন্যদিকে-

নীলা – নিশা তুই কী কোন ভাবে অনিক দাকে আগে থেকে চিনিস।

তানিশা- কেন ?

নিঝুম- তাই তো মনে হচ্ছে।

তানিশা কিছু বলতে যাবে তখনই ওর ফোন আসে ।

তানিশা- একটু আসছি।

তানিশা একটু দূরে চলে যায়।

মিতু- আমার মনে হচ্ছে অনিক দা। তানিশাকে পছন্দ করে ।

নিঝুম কথাটি শুনে অস্থির হয়ে গেল।

নীলা – হুম হতে পারে ।

নিঝুম- ওই নীলা রিত দার সাথে তোর কথা হয়েছে।( প্রসঙ্গ পাল্টে)

নীলা- হুম

নিঝুম- কী বললো

মিতু- এই রিত টাকে ?

নিঝুম- নীলার ফিয়েন্স

মিতু- ওওও মা তাই

নীলা- হুম

তানিশা- কালকে নিয়ে কথা হচ্ছে।

নিঝুম- রিত দার কথা

তানিশা- ওওও ।

এভাবে কিছুদিন কেটে গেল।

তানিশা সব দায়িত্ব সুন্দর করে পালন করেছে ।রিয়া বারবার ওকে বিপদে ফেলার চেষ্টা করে কিন্তু তানিশা সবটা সামলে নেই ,এই কয়েকদিনে তানিশাদের সাথে আদিদের ভালো সম্পর্ক হয়ে গিয়েছে।তবে অনিক নিঝুম,আদি তানিশা ঝগড়া করতেই থাকে ।অনিক আর তানিশাকে একসাথে দেখে আদি আর নিঝুম রেগে যায় এর কারণ নিঝুম বুঝতে পারলেও আদি এসবের অবগত নয় ।

কালকের পরের দিন নবীন বরণ অনুষ্ঠান তার জন্য কলেজে একটা খুশির আমেজ।আদি আর তানিশার দল বসে আছে মাঠে একসাথে।

মিতু- কালকের ড্রেস থিম কী?

মেঘ- ঠিক হয়নি।

নীলা – ওও

মেঘ- হলুদ কালার করলে কেমন হবে ।

তানিশা- এটা কী তোমার বিয়ের হলুদের অনুষ্ঠান যে হলুদ করবে ( মেকি হাসি দিয়ে)

মেঘ- তাহলে কী করা যায়।

আদি- সাদা ।

নিঝুম- হ্যাঁ ,সাদা ভালো হবে ।

অনিক- তোমার থেকে কে জানতে চেয়েছে।
নিঝুমের খারাপ লাগে তাই আর কিছু বলে না।

আদি – ছেলেদের সাদা পাঞ্জাবি,লাল পায়জামা আর মেয়েদের সাদা শাড়ি,লাল পাড়।

তানিশা- কী শাড়ি( করুন কন্ঠে)

নীলা- আমি আছি না সবঠিক করে দেবো ।

মিতু- আমরা তো নাচ করবো ।ওই সাদা শাড়িতেই কাজ মিটে যাবে।

তানিশা- নাচ আর শাড়ি একসাথে ( ঢোক গিলে)

মেঘ- কেন তুমি শাড়ি পরে নাচ করোনি।

নীলা – না ওও শাড়ি পরে না ।

মিতু- কখনো পরেনি।

নীলা- না ।

মেঘ – কেন?

তানিশা- শাড়ি সামলাতে পারিনা আমি ( কাঁদো কাঁদো ফেস করে)

মিতু – তা বলে পারবি না নাকি ।

অনিক- যেদিন নিশা শাড়ি পরবে সেদিন আমি সবাইকে মিষ্টি খাওয়াবো।

তানিশা- সেটা হচ্ছে না।

আদি- বিয়ের পর বর যদি বলে শাড়ি পড়ো তাহলে( ভ্রু কুঁচকে)

আদির কথা শুনে তানিশা হকচকিয়ে যায়। আমতা আমতা করতে থাকে।

অনিক – আচ্ছা তোমরা সবাই একসাথে নাচবে তো ।( প্রসঙ্গ পাল্টে)

মিতু- হুম।

অন্যদিকে—-

রিয়া- অনুষ্ঠানের দিন আমি কিছুতেই তানিশাকে নাচ করতে দেব না।

রকি- কী করবি তুই।

রিয়া হাসলো ।

সৌভিক- আমার তানিশাকে পছন্দ হয়েছে। কিন্তু এটা যদি রিয়া জানে আমার বারোটা বাজিয়ে দেবে ( মনে মনে)

অনুষ্ঠানের দিন সকালে–

নিঝুম ঘুম থেকে উঠে নীলাকে তোলে ।ওরা একসাথে একটা বাড়িতে থাকে কিন্তু আলাদা রুমে।

নিঝুম – ওই নীলা ওঠ আজকে কলেজে অনুষ্ঠান।

নীলা – হুম ।নিশা ওঠেছে।

নিঝুম- জানিনা আমি তোকে প্রথম তুলতে আসলাম এখন যাবো ।

তানিশা- আমাকে তুলতে যেতে হবে না তোরা ফ্রেস হয়ে আয় আমি রিনাকে বলছি ব্রেকফাস্ট রেডি করতে।

ওরা তিনজন খেয়ে রেডি হতে বসে । নীলা নিঝুমকে শাড়ি পরিয়ে দেয় ,নিজে শাড়ি পরে তারপর নিজেরা তৈরি হয় ।

নীলা- কীরে নিশা তুই রেডি হসনি।

তানিশা – হুম।

কলেজে —

মিতু আদিদের সাথে কথা বলছিল।নীলা তানিশা আর নিঝুম টেনে ওদের কাছে নিয়ে যায়‌।

মিতু- ওই তোদের কি সুন্দর লাগছে।

নীলা- তোকেও

মিতু- নিশা কোথায় ?

নিঝুম- ওই তো ।

তানিশাকে দেখে সবাই হা হয়ে যায় । বিশেষ করে আদি।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here