#অনুভবে_ভালোবাসি,পার্ট-৪
#লেখিকাঃতানজিলা_খাতুন_তানু
সবাই হা করে তাকিয়ে আছে তানিশার দিকে তানিশা একটা সাদা রঙের সালোয়ার কামিজ পড়েছে। চুলটা সামনে হালকা ডিজাইন করে বেনী করা। মুখে মেকাপ নেই বললেই চলে হালকা পিংক কালারের লিপস্টিক,কাজল ।কানে একটা সাদা স্টোনের টপ।হাতে একটা সাদা স্টোনের ঘড়ি। সাধারণ সাজেই অসাধারণ লাগছে ।আদি হা করে তাকিয়ে আছে।
মিতু- ওই তুই শাড়ি পড়িসনি কেন
তানিশা- এমনি,এখন বল কেমন লাগছে।
অনিক- পুরো সাদা পরি কিন্তু শাড়ি পড়লে বেশি ভালো লাগতো
তানিশা- ধুররর।( তানিশা চলে গেল)
মেঘ- কী হলো
নীলা- জানিনা।
নিঝুম – ওই নীলা ওই দিকে দ্যাখ
নিঝুম এর কথা শুনে সবাই তাকিয়ে হার্ট অ্যাটাক করার মতো অবস্থা।
রিয়া একটা সাদা নেটের শাড়ি পড়েছে । মুখে একগাদা মেকাপ। টকটকে লাল লিপস্টিক।পুরো সাদা পেত্নী লাগছে। রিয়া আদি র কাছে আসলো ।
রিয়া – আদি আমাকে কেমন লাগছে।
আদি- ভালো ( মেকি হাসি দিয়ে)
রিয়া – ওওও , thanks
আদি -হুম, আমার একটা কাজ আছে তুমি ভেতরে গিয়ে বসো ।
রিয়া – ওকে ।
রিয়া চলে গেল ।
মেঘ- পুরো সাদা পেত্নী।
নিঝুম- সত্যি।
ওরা সবাই কথা বলতে লাগলো । তখনই একটা চিৎকার শুনে ওরা দৌড়ে যায় হালকা ভীড় জমেছে ওরা ভীড় ঠেলে ভেতরে ঢুকে দেখে তানিশা বসে ব্যাথায় ছটফট করছে।
নিঝুম- কী হলো তুই পড়লি কীভাবে ।
তানিশা- জানিনা তবে পা খুব ব্যাথা করছে।
অনিক – কী হচ্ছে সবাই স্টেজের দিকে যাও।
সবাই চলে গেল শুধু ওরা কজন বাদে। অনিক তানিশাকে কোলে তুলে নিল সেটা দেখে আদি আর নিঝুম রেগে গেলো ।বাকিরা এটা নিয়ে মাথা ঘামানোর প্রয়োজন মনে করলো না ।
তানিশা- কী হলো কোলে তুললে কেন ।
অনিক- চুপ করে থাকো নাহলে এবার আমি ফেলে দেব ।
তানিশা চুপ করে যায় ।
অনিক- মেঘ একটু ঔষধের ব্যবস্থা কর তো ।
মেঘ- ওকে
মেঘ আর মিতু ঔষধ আনতে গেল।
অনিক তানিশাকে একটি ফাঁকা ক্লাসরুমে নিয়ে গেল ।ওকে বেঞ্চে বসালো।
মেঘ- মিতু আমার মনে হচ্ছে অনিক আর তানিশার মধ্যে কিছু একটা আছে ।
মিতু- হুম অনিক দা তোমাদের কিছু বলে নি ।
মেঘ- না।
মিতু- ওওও
মেঘ- আমার মন বলছে আদির মনে তানিশার জন্য কিছু একটা আছে ( মনে মনে)
মিতু- এই মেঘ তাড়াতাড়ি চলো।
ওরা তাড়াতাড়ি করে ক্লাসরুমে গেল।অনিক ঔষধটা নিয়ে তানিশার পায়ে লাগিয়ে দিল।
তানিশা- ওই তোদের নাচ তো সবার প্রথম তোরা যাবি না নাকি।
নীলা- কিন্তু তুই
তানিশা- আমি কীভাবে এই পা নিয়ে নাচবো বল ।
মিতু- তা হলে কী হবে
তানিশা- কিছু হবে না তোরা যা।
নিলা- ওকে
তানিশা- তোমরা সবাই যাও আমি আছি এখানে।
মেঘ- তুমি একা থাকবে
তানিশা- কিছু হবে না তোমরা না থাকলে হবে বলো
তোমরা যাও প্লিজ ।
সবাই চলে গেল শুধুমাত্র অনিক ছাড়া।
অনিক- সত্যি করে বল কেসটা কী?
তানিশা- কীসের কেস ।
অনিক- দ্যাখ ফাজলামি করবি না তোকে আমি হারে হারে চিনি । কীভাবে পড়লি সেটা বল।
ফ্ল্যাশব্যাক–
রিয়া – আমাকে কেমন লাগছে।
নেহা- শাকচূন্নি ( বিরবির করে)
রিয়া – কী রে
নেহা- পুরো কিউটের ডিম্বা ( মেকি হাসি দিয়ে)
রিয়া- তাই ,বাকিরা সব কোথায়
নেহা – ঘোরা ফেরা করছে এদিকে ওদিকে ।
রিয়া – ওও চল কাজ সারতে হবে ।
নেহা মাথা নাড়ালো ।রিয়া তানিশা কে দেখে একজায়গায় দাঁড়ায় তানিশা যখন পাশ কাটাতে যাবে তখন ল্যাঙ্গ মারে । তানিশা পড়েযায় আর পায়ে চোট পাই।
বর্তমান-
অনিক- সব বুঝলাম ।
তানিশা- এবার যাও
অনিক চলে যাবার কিছুক্ষণ পর আদি আসে ।
আদি- এখন ও ব্যাথা পাচ্ছো ।
তানিশা আদির কন্ঠ শুনে চমকে উঠে।
তানিশা- আপনি এখানে ।
আদি- কেন আস্তে পারি না ।
তানিশা- সেটা নয়।
আদি- তাহলে ।আচ্ছা পা এখনো কী ব্যাথা করছে।
তানিশা- হুম ।
আদি তানিশার সামনে বসলো তারপর ওর পা টাকে ধরল।
তানিশা- এই কী করছেন
আদি- চুপ করে থাকো।
আদি তানিশার পা টাকে মোচড় দেয় । তানিশা আদির পাজ্ঞাবির হাতা টাকে খামচে ধরে । আদি ওর পা ছেড়ে দিয়ে ওর মুখের দিকে তাকায়- ঠোঁটটা কামড়ে ধরে আছে ,চোখ বন্ধ করে আছে । চোখের পাপড়ি গুলো আর ঠোট দুটি হালকা কাঁপছে সেটা যেন আদিকে নেশা ধরিয়ে দিচ্ছে।তানিশা পায়ে কারোর স্পর্শ না পেয়ে চোখ টা খুলে দেখে আদি তার দিকে নেশাকাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ।আদির চোখ তানিশার চোখে পড়তেই আদি ঘোরের মধ্যে চলে যেতে লাগলো।মনে হচ্ছে তাদের চোখে চোখে অনেক কথা হচ্ছে । অনেক দিনের তৃষ্ণা মেটাচ্ছে । হঠাৎ আদির কিছু মনে পড়ায় আদি চোখ সরিয়ে নিয়ে দাঁড়িয়ে জানালার পাশে চলে গেল ।আর তানিশা অপ্রস্তুত হয়ে এদিক ওদিক তাকাতে লাগল।
ওদিক–
স্টেজে তানিশাকে না দেখতে পেয়ে রিয়া খুব খুশি হয়। মিতু,নীলা,নিঝুম খুব ভালো করে নাচটা শেষ করে ।অনুষ্ঠান শেষ হয় ।এরপর আদি আর তানিশার সাথে কথা বলে নি।
রাত্রিবেলা-
সবাই সবার ভাবনা তে ব্যস্ত।নীলা তার হবু বর এর সাথে কথা বলায় ব্যস্ত।মিতু মেঘ এর সাথে । তানিশা পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে।
নিঝুম- আমি কেন কস্ট পাচ্ছি যদি অনিক আর নিশা একে অপরকে পছন্দ করে তাহলে আমি আর ওদের মাঝে বাঁধা হয়ে দাড়াবো না। আমি না হয় অনিক কে দূর থেকে ভালবাসে যাবো। অনিক তোমায়❤️ অনুভবে ভালোবাসি ❤️।( বিছানায় চোখের জল ফেলে।)
এদিকে-
আদি- তানিশাকে দেখলে আমার এমন লাগে কেন ,কেন অনিক এর সাথে ওকে দেখলে আমার রাগ হয় ।কেন তানিশার চোখের দিকে তাকিয়ে আমি হারিয়ে যাচ্ছিলাম।তাহলে কী আমি তানিশাকে না না এ হতে পারে না আমি ওকে কথা দিয়েছি ।ও ছাড়া কাউকে ভালো বাসতে পারি না পারি না ।( আকাশের দিকে তাকিয়ে)
অন্যদিকে—-
অনিক- তোমায় খুব তাড়াতাড়ি আমার মনে র কথা বলবো ,তোমাকে নিজের করে নেবো ।I love youসোনা ।
পরেরদিন …..
তানিশা আর কলেজ যাইনি ।অনিক নিঝুমের সাথে খুব ঝগড়া করেছে ।আদি তানিশাকে মিস করছিল। রিয়া প্ল্যান করছে কীভাবে আদি কে পটানো যায়।
অন্যদিকে-
আয়মান তার নিজস্ব কেবিনে বসে আছে একটা লোক আসলো- আসতে পারি।
আয়মান- ইয়েস
লোকটা- স্যার ডেকেছিলেন।
আয়মান- হুম তোমাকে একটা কাজ করতে হবে খুব গোপনে যাতে কেউ না জানে।
লোকটা- কী কাজ স্যার
আয়মান একটা ছবি আগিয়ে দেই
আয়মান – এর আসল পরিচয়। কোথায় কী করে সব খবর আমার চাই যেকোন ভাবে।
লোকটা- ওকে স্যার
আয়মান – তুমি যাও এখন।
লোকটা চলে গেল।
আয়মান চৌধুরী একজন CBl অফিসার। আয়মানের একটা ফোন আসে আর ও বেরিয়ে যায় ।
১ঘন্টা পর-
আয়মান এক জায়গায় আসে – কী ব্যাপার কুইন এত জরুরি তলব।
কুইন- দরকার আছে।
আয়মান – দরকার না আমাকে মিস করছিলে।
কুইন- এই তোমাকে মিস করবো কেন যতসব।
আয়মান- মাঝে মাঝে না তোমাকে দেখার আগ্রহ জাগে আমার ( কুইনের দিকে এক নজর দেখে- কুইন একটা কালো হুডি পরে আছে মাথাটা কালো ক্যাপ দিয়ে ঢাকা মুখে আই মাক্স )
কুইন- সেই একই কথা যদি আমি বলি ( আয়মান সব সময় মুখে কালো মাক্স আর সানগ্লাস পড়ে থাকে)
আয়মান- মজা করছি,বাদ দাও ।বলো কেন ডেকেচ্ছো।
কুইন আয়মানকে সব টা বললো ।
কুইন- বুঝতে পারেছো।
আয়মান– হুম।
ওদিকে ক্লাস শেষে নীলা আর নিঝুম বাড়ি ফিরে আসে।
তানিশা- ঝুম তোর মুখটা ওমনি লাগছে কেন।
নিঝুম- না কিছুনা।
তানিশা- ওওও।
কেটে গেল আরো একসপ্তাহ।এই এক সপ্তাহে আদি বুঝতে পেরেছে যে ও তানিশার প্রতি দুর্বল। নিঝুমের সাথে অনিক প্রতিদিনই ঝগড়া করেছে। নিঝুম কিছু বলেনি শুধু কেঁদেছে। কালকে নিঝুমের জন্মদিন প্রতিবছর তানিশা সবার আগে ওকে wish করে। এখন রাত ১১:৫৯ নিঝুম জেগে আছে । ও জানে তানিশা ওকে সারপ্রাইজ দেবে।
কিন্তু ১২:০১ হয়ে গেল কেউ আসলো নিঝুম ওর ফোন চেক করতে লাগলো কারণ প্রতি বছর আজকের দিনে ওর ফোনে একটা নম্বর থেকে মেসেজ আসে- happy birthday janu।এবারে সেটাও আসেনি । নিঝুম এর খুব রাগ হচ্ছে খুব।
পরেরদিন সকাল–
নিঝুম এর উঠতে একটু দেরি হয়ে যায় ও উঠে দেখে নীলা আর তানিশা বাড়িতে নেই,ও ওদের ফোন করে- কিরে নীলা তোরা কোথায়।
নীলা- এই তো কলেজে কেন।
নিঝুম রেগে গিয়ে ফোন কেটে দেয়। ওর পুরো মেজাজ খারাপ হয়ে আছে না ওর বন্ধুরা না ওর বাড়ির লোক ওর জন্মদিনের কথা মনে রেখেছে।নিঝুম আর কলেজ যাইনি ।
বিকেলে-
মিতু- কীরে ঝুম তুই কোথায়
নিঝুম-বাড়িতে কেন কী হয়েছে।
মিতু- আরে আজকে আমাদের একটা দরকারি পেপারে সাইন করার কথা ।
নিঝুম- কই আমি জানি না তো।
মিতু- তাড়াতাড়ি আয় স্যার মাত্র ৩০ মিনিট আছে।
নিঝুম – আচ্ছা।
ফোনটা রেখে নিঝুমের মাথা ঘুরতে লাগলো।এত কম টাইমে ও যাবে কীভাবে ।
নিঝুম কোন রকমে রেডি হয়ে ২৫ মিনিটে কলেজে যায়। কলেজে ঢুকে দেখে কেউ নেই ।ও মিতুকে কল করে- হ্যালো তোরা কোথায়।
মিতু- হলরুমে আয়।
নিঝুম তাড়াতাড়ি করে হল রুমের দিকে যায়, গিয়ে দেখে হলরুমের দরজা বন্ধ করা ও দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতেই সবাই চেঁচিয়ে উঠলো-happy birthday
আকস্মিক ঘটনায় নিঝুম হকচকিয়ে যায় । একে একে সবাই নিঝুমকে wish করে ।সবাই মানে নীলা, মিতু,মেঘ,আদি,অনিক, তানিশা ।
তানিশা- কেমন লাগলো সারপ্রাইজটা ।
নিঝুম- দারুন (তানিশাকে জড়িয়ে ধরে)
নীলা- নিশা কেক কোথায়।
তানিশা- আমি নিয়ে আসছি ।
তানিশা কাউকে কিছু বলতে না দিয়ে চলে গেল।
নিঝুম সবার সাথে কথা বলছে ।অনিক ওর সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
নিঝুম- কি (অবাক হয়ে)
অনিক- তোমাকে কিছু বলার আছে।
নিঝুম- আমাকে আপনার কী বলার আছে ( অবাক কন্ঠে)
অনিক নিঝুমের সামনে বসে নিজের হাতে একটা আংটি নিয়ে। নিঝুম সহ সকলে হা করে তাকিয়ে আছে।
অনিক- আমি এত ভনিতা করে বলতে পারবোনা । সোজা কথা সোজা ভাবে বলছি আমি তোমাকে ভালোবাসি আর তোমাকেই বিয়ে করবো তুমি কি রাজী আর না রাজী হলেও আমার কিছু যাই আসে না তুলে নিয়ে মে বিয়ে করবো।
সবাই চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে আছে।অনিক উঠে দাঁড়িয়ে নিঝুমকে আংটি টা পড়িয়ে দেয়। সবাই ঘোর এর মধ্যে আছে কারোর হাততালির শব্দে সবার ঘোর কাটে।
তানিশা- বাবা কী দারুণ ( হাততালি দিয়ে)
তানিশা- আমার সাথে এতদিন প্রেম করে এখন আমার বান্ধবীকে প্রোপস করছো (ন্যাকা কান্না করে)
সবাই হা করে আছে কী হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না।
#চলবে….