#অনুভবে_ভালোবাসি,পার্টঃ৫
#লেখনীতেঃতানজিলা_খাতুন_তানু
নীলা- নিশা কি বলছিস এসব ।
তানিশা- সত্যি বলছি। ওই ঝুম আমি কী করবো বল আমার থেকে আমার ভালোবাসাকে আলাদা করে দিস না ( নিঝুমের হাত ধরে)
সবাই একবার অনিক এর দিকে তাকাচ্ছে আর একবার তানিশার দিকে ।অনিক ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ।
নিঝুম- আমি তোকে কথা দিচ্ছি তোর আর অনিক এর মধ্যে আমি বাধা হয়ে দাঁড়াবো না ।
নিঝুম কথাটি বলে দৌড়ে চলে যেতে যাবে তখন
তানিশা বলে উঠে- এক মিনিট ঝুম।
নিঝুম দাঁড়িয়ে পড়ে ।
তানিশা- আগে বলে যা
নিঝুম- কী বলে যাবো।
তানিশা- আমি অভিনয় কেমন করলাম।( মুচকি হেসে)
সবাই চোখ বড়বড় করে তাকায় । আর আমাদের আদি তানিশার মুচকি হাসির উপর ফিদা হয়ে যায়।
মেঘ- অভিনয় মানে।
তানিশা- অভিনয় মানে অভিনয়।( নিঝুমের কাছে গিয়ে মাথায় চাটি মেরে বললো) কুত্তা এতদিনে আমাকে এই চিনলি। তুই ভাবলি কি করে তোর আর তোর ভালোবাসার মানুষের মাঝে আমি তৃতীয় ব্যক্তি হয়ে দাঁড়াবো।( অনিকের দিকে তাকিয়ে)
নিঝুম কিছু না বলে তানিশাকে জড়িয়ে ধরে। আর তানিশা নিঝুমের কানে কানে কিছু একটা বলে যাতে নিঝুমের চোখ বড় বড় হয়ে যায়।
তানিশা- এবার দুজন মিলে একসাথে কেক কাটবে।
মিতু- কী হলো এটা।
তানিশা- কিছু না ।
নীলা কোন প্রশ্ন করছেনা কারণ ও ব্যাপারটা আন্দাজ করতে পারছে।
আদি- এই আমার কিছু প্রশ্ন আছে।
তানিশা- পড়ে বলবেন।
আদি- না এখনি।
তানিশা- ওকে বলুন।
আদি- তোমার সাথে অনিক এর কোন সম্পর্ক নেই।
তানিশা- কে বললো সম্পর্ক নেই ( ভুরু কুঁচকে)
মেঘ- সম্পর্ক আছে?
তানিশা – হুম ।
মিতু- কী সম্পর্ক?
তানিশা অনিকের দিকে তাকায় ।
অনিক- আমার সাথে নিশার ফেসবুকে আলাপ।
আদি- তাহলে প্রথম দিন আমাদের সথে ওর আলাপ করাস নি কেন।( কৌতূহল হয়ে)
অনিক- এমনি। ( চোখের ইশারায় বলে পড়ে বলবো)
তানিশা- এবার কেক কাটবে।
নিঝুম আর অনিক একসাথে কেক কাটে ।তারপর নিঝুমকে সবাই উপহার দেই ।
তানিশা- আর কী লাগবে বল।
নিঝুম- আমার জীবনের সবচেয়ে বড় উপহার তুই।( জড়িয়ে ধরে)
তানিশা- ওই বাড়ি যাবি তো
নিঝুম- যাবো না আমি কেউ আমাকে wish করে নি ।
অনিক- হয়তো মনে নেই । তুমি এতদিন পর বাড়িতে গিয়ে সবাইকে চমকে দাও।
নিঝুম- ওকে আমি যাবো।
তানিশা আর নিঝুম কিছু ইশারা করলো এটা নীলা আর আদি খেয়াল করলো।
তানিশা- ওই ঝুম তোকে অনিক দা দিয়ে আসবে।
নিঝুম- আমি একা পারবো ।
অনিক- আমি জানি আমার হবু বউ সাহসী কিন্তু তবুও আমি তোমাকে দিয়ে আসবো ।
নিঝুম- ওকে ।( ভয়ে ভয়ে)
অনিক- আসছি। বাইইই
অনিক আর নিঝুম যাবে বলে নীলা ডাক দেই।
অনিক- আবার কি হলো।
নীলা নিঝুমের জামা টা দেখায়।
নিঝুম নিজের জামার দিকে তাকায়- একটা সূতির গোলাপী রঙের সালোয়ার কামিজ। পায়ে একটা স্যান্ডেল। তারপর ভ্যা ভ্যা করে কাঁদতে লাগলো। নিঝুমের এরকম ব্যবহারে সবাই হকচকিয়ে যায়।
অনিক- কী হলো তোমার।( হকচকিয়ে গিয়ে)
নিঝুম করুন চোখে তাকিয়ে আছে।
মিতু- কী হলো ভ্যা ভ্যা করছিস কেন।
তানিশা- ওই তুই রেডি হয়ে তারপর বাড়িতে যাবি।
নিঝুম- ওকে অনিক চলো ।( হাত টেনে নিয়ে চলে গেল)
মেঘ- আদি, মিতু ঘরে যাবি তো।
মিতু- হুম
আদি- তোরা যা আমার একটা কাজ আছে।
মেঘ – ওকে ।
মেঘ আর মিতু চলে গেল
আদি – নীলা তুমি যাও আমার তানিশার সাথে কথা আছে।
আদির এরকম কথায় নীলা আর তানিশা আকাশ থেকে পড়ল।
তানিশা- আমার সাথে আপনার আবার কী কথা।
আদি- আছে। নীলা তুমি যাও।
নীলা মাথা নাড়িয়ে রুমের বাইরে চলে গেল।
দুজনের মাঝে ই একটা পিনপিনে নীরবতা। নীরবতা ভেঙে আদি বললো- সরি
তানিশা বিরক্ত মুখ নিয়ে আদির দিকে তাকালো- কেন?
আদি- অনুষ্ঠানের দিনের ঘটনার জন্য।( শান্ত কন্ঠে)
তানিশা- ওওও। তাই বলুন ( হতাশ হয়ে)
আদি- তুমি কী ভেবেছিলে( কপাল কুঁচকে)
তানিশা- কিছু না । নীলা দাঁড়িয়ে আছে আমি তাই( নিরাস কন্ঠে)
তানিশা চলে গেল আদি ভাবতে লাগলো- তানিশা আমার কাছ থেকে কী শুনতে চাইছিল । সরি বলায় মুখটা ওমন করে রেখেছিল কেন।
নীলা – কী হলো আদি দা কি বললো।
তানিশা- সরি বললো( বিরক্ত হয়ে)
নীলা – কী? এমন ভাবে বললো আমি ভাবলাম কী না কি বলবে।
তানিশা- হুম।
নীলা- কিন্তু সরি বললো কেন।
তানিশা- ওই আসলো আমার সাথে ঝগড়া করে ছিল
তাই ( মেকি হাসি দিয়ে)
নীলা – ওওও
নীলার ব্যাপার টা ঠিক বিশ্বাস হলো না।
ওদিকে-
মেঘ- কী হলো বলোতো।
মিতু- জানিনা।
অন্যদিকে-
অনিক নিঝুমকে নিয়ে ওদের বাড়িতে যাচ্ছে বাইকে করে।
অনিক- কেমন লাগলো সারপ্রাইজটা।
নিঝুম- সারপ্রাইজ আর একটু হলেই জান উড়ে যেত ( অনিকের পিঠে ঘুষি মেরে)
অনিক- তাহলে বলো আমার কী রকম হতো ।আমি যে তোমাকে গত ৫ বছর থেকে ভালবেসে আসছি।
নিঝুম- ভালোবাসে না ছাই।
অনিক- বাসি তো❤️ অনুভবে ভালোবাসি ❤️।
নিঝুম নিরব।
অনিক- নামো চলে এসেছি।
অনিক কে বিদায় দিয়ে, নিঝুম গিয়ে কলিং বেলে চাপ দেয়। কাজের মেয়ে দরজা খুলে।
নিঝুম- সবাই কোথায়।
কাজের মেয়ে- কেউ বাড়িতে নেই।
নিঝুম কথাটি শুনে রেগে ফুঁসে নিজের ঘরে চলে যায়। নিঝুম নিজের ঘরে গিয়ে চমকে উঠে। ওর ঘরে সবাই বসে আছে আর ও ঘরে ঢুকতেই সবাই চেঁচিয়ে উঠলো- হ্যাপি বার্থডে ।
নিঝুম- তোমাদের মনে আছে।
নিরব-আমার একটা মাত্র বোন আর আমি তার জন্মদিন মনে রাখবো না।
নিঝুম নিরব কে জড়িয়ে ধরে।
সবাই মিলে খুব মজা ।করলো কেক কাটলো। সবাই গ্রিফ্ট দিল। তারপর নিঝুমের বাবা বললেন- আমার একটা কথা বলার আছে।
নিঝুমের বাবা- আমি নিঝুমের বিয়ে ঠিক করেছি।
নিঝুম শক খেলো। ওর বাবা কার সাথে বিয়ে ঠিক করেছে।ওর চিন্তা হচ্ছে কারণ ওর বাবা এক কথার মানুষ।
নিঝুম- বাপি বিয়ে ঠিক করেছো মানে।( ভীত হয়ে)
নিঝুমের বাবা- হুম ছেলেটা খুব ভালো তোর সাথে খুব মানাবে।
ওইদিকে নিঝুমদের বাড়ির বাকি সদস্যরাও শক কারণ উনি কাউকে কিছু বলেন নি।
নিঝুমের মা- কী বলছো তুমি ।মেয়ের বিয়ে ঠিক করেছে আর একবার ও আমাকে জানালে না ।
নিঝুমের বড়ো বাবা- ছোট তুই এটা একদম ঠিক করিস নি।এখন কার ছেলে মেয়ে নিজেদের পছন্দ অপছন্দ থাকতেই পারে।
নিঝুমের বাবা- হুম আমি জানি নিঝুমের পছন্দ তাই এই বিয়ে ঠিক করা।
সবাই একটু অবাক হয় ।কারণ তাদের জানা মতে নিঝুম কারোর সাথে রিলেশন করে না ।
নিঝুমের বাবা- কালকে ছেলেটার পরিবারের লোক আসবে। আংটি পরাতে।
নিঝুমের বাবা চলে যায় সাথে বাড়ির বড়োরা।থাকে নিরব আর ওর বউ মেঘা।
মেঘা- কাকাই এই সিদ্ধান্ত নিলো কেন।
নিরব- জানি না । কিছুই বুঝতে পারছি না,কাকাই তো কারোর কথা শুনবে না।
মেঘা- কাকাই যখন ঠিক করেছে ছেলেটা নিশ্চয় ভাল হবে ,ঝুম তুই এত চিন্তা করিস না।
নিঝুম মাথা নাড়ায় নিরব আর মেঘা চলে যায়।
নিঝুম মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে।
নিঝুম- অনিককে এতদিনে পেলাম আর বাপি আমার অন্য জায়গায় বিয়া ঠিক করেছে। ( কেঁদে উঠলো)
নিঝুম কিছু একটা ভেবে তানিশাকে কল করে কিন্তু ফোন বন্ধ বলছে।
অন্যদিকে-
নীলা আর তানিশা বাড়িতে এসে, ফ্রেশ হয়ে তানিশা নিজের রুমে ফোন টিপছে।তখন নীলা আসে।
নীলা- অনিক দা কে?
তানিশা ফোনে এতটাই মগ্ন ছিল যে নীলা কখন রুমে এসেছে ও বুঝতে পারে নি । নীলার ওরকম প্রশ্নে তানিশা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো।
তানিশা- এটা আবার কী ধরনের প্রশ্ন।
নীলা- দ্যাখ মাথা গরম আছে সত্যি টা বল।
তানিশা- অনিক আমাদের সিনিয়র আর ভবিষ্যত জিজু।
নীলা – সেটা আমি ও জানি কিন্তু তোর সাথে সম্পর্ক কী?
তানিশা নিশ্চুপ।
নীলা- দ্যাখ তোর নিশ্চুপ থাকায় প্রমান করে দিচ্ছে আমি যেটা ভাবছি সেটাই ঠিক।
তানিশা- হুম তোর ভাবনা টাই ঠিক কিন্তু এই কথাটা না কেউ জানে। এমনকি মিতু ও না প্লিজ। সময় হলে সবটা আমি বলবো।( অনুরোধ কন্ঠে)
নীলা- ওকে।
তানিশা- রুমে যা।
নীলা রুমে গেল । তানিশা কিছু একটা ভেবে নিজের ফোনটা বন্ধ করে রাখলো।
ওদিকে-
আদি- তানিশা আর অনিক শুধু কী ফেসবুক ফ্রেন্ড ।না অন্য কিছু। ধুর আমি এত ভাবছি কেন কেন আমার ভাবনাতে বারবার তানিশা চলে আসছে ।আমার ভাবনাতে তো থাকার অধিকার একজনের। শুধু মাত্র একজনের ( বিরবির করে)
পরেরদিন-
নিঝুম দের বাড়িতে ছেলে পক্ষের লোক আসে ।
নিরব- অভিক তুই।
অভিক- বাপি মেয়ে দেখতে যাবে বলে এখানে আনলো কেন।( অবাক হয়ে)
নিরব- তোরা মেয়ে দেখতে এসেছিস ( চোখ বড়ো
বড়ো করে)
অভিক- হুম ।
নিরব – তা পাত্রী কে জানিস।
অভিক- না বাপি কাউকে কিছু বলেন নি।
নিরব- ওওও সেম আমাদের ওও।
রূদ্ধি-মানে।
নিরব- গেলেই বুঝতে পারবে। বাকিরা কোথায়
অভিক- আসছে।
নিরব- ওওও তোরা ভেতরে চল।
অভিক আর রূদ্ধি কে দেখে সবাই অবাক হয় তার
কিছুক্ষন পর বাকিরাও চলে আসে।
নিঝুমের বাবা- বেয়াই আসুন
অভিকের বাবা- আসছি বেয়াই।
নিঝুম আর অভিকের পরিবার সবটা বুঝতে পারে। নিঝুমকে নিয়ে আসা হয় নিঝুম অনিক ও ওর পরিবার কে দেখে অবাক হয় সাথে খুশি ও হয়। ওদের বিয়ে ঠিক হয়ে যায়। সবাই খুব খুশি।
কেটে গেল কয়েকটি মাস। আর একমাস পর আদিদের ফাইনাল পরীক্ষা। তাই ওদের জন্য একটা অনুষ্ঠান হবে। একসপ্তাহ পর। কয়েকটি কম্পিটিশন হবে এই কলেজের অন্য কলেজের। ওদের ট্রেনিং এর স্যার ফিরে এসেছে তবুও তানিশা নাচের কোচ এর দায়িত্বে আছে ।
মেঘ- মিতু,অনিক- নিঝুম,নীলা- রোহিত ।প্রেম করছে জমিয়ে আর আদি আর তানিশা ওদের কাহিনী দেখছে।আদি আর তানিশার সাথে ঝগড়া করেনি ওদের মধ্যে ভালো বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে। ওরা একসাথে আড্ডা মারছে বসে আর সেটা রিয়া দেখে ঝলছে।
মেঘ- আমরা সবাই কাপল শুধু তোরা বাদে।
মিতু- আমি একটা কথা বলি।
অনিক- হুম।
মিতু- তোরা ও দুজন দুজনের সাথে প্রেম কর।
সবাই কথাটা শুনে মিতুর দিকে তাকায়।
মিতু- সরি।
আদি তানিশার দিকে তাকিয়ে তানিশা এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।
তখন আদির ফোন আসে আর ও কথা বলতে উঠে যায়।
তারপর কথা বলে এসে বলে- আমার একটা কাজ আছে আমি আসছি।
আদি কাউকে কিছু বলতে না দিয়ে চলে যায়।
মেঘ- কী হলো।
অনিক- জানিনা।
অন্যদিকে——
রিয়া – ওই তানিশাকে আমি শেষ করে দেব।( রেগে )
পরেরদিন কলেজে যা হলো তা দেখে সবার মাথা ঘুরে গেল।
#চলবে