অনুভবে_ভালোবাসি,পার্ট- ৮

0
859

#অনুভবে_ভালোবাসি,পার্ট- ৮
#লেখনীতেঃতানজিলা_খাতুন_তানু

তানিশা- আপনি এখানে আসলেন কী করে?

আদি- সে যে করেই আসি না কেন সেটা তুমি জেনে কি করবে‌।

তানিশা- আমার রুমে এসেছেন।আর আমি জানবো না( উঠে দাঁড়িয়ে)

আদি- না জানবে না।

তানিশা- আপনি বেরোন আমার রুম থেকে

আদি- নো যাবো না( বিছানায় বসে)

তানিশা- আপনি বসে পড়লেন কেন আপনি বাইরে যান।( কোমড়ে হাত দিয়ে)

আদি উঠে দাঁড়িয়ে তানিশার দিকে আগিয়ে।

তানিশা- আপনি আগাচ্ছেন কেন।

আদি- তুমি পেছাচ্ছে কেন।

তানিশা,- একদম আগাবেন না বলে দিলাম।( তানিশার পিঠ দেয়ালে ঠেকে যায়‌)

তানিশা পাশ কাটিয়ে চলে যেতে গেলে আদি তানিশার দুদিকে হাত রাখে।

তানিশা- আপনি।

আদি – চুপ (তানিশার ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে)

তানিশা আদির চোখের দিকে তাকায়। তানিশা আদির চোখে স্পষ্ট নিজের জন্য ভালোবাসা দেখতে পাচ্ছে।আদি নিজের হাতটা তানিশার গালে ছোঁয়ায় তানিশা আদির স্পর্শে কেঁপে উঠল।আদি হাসলো সেটা দেখে।

আদি- কাঁপছো কেন( বাঁকা হেসে).

তানিশা- কোথায় ( আমতা আমতা করে)
আদি- কোথায় তাই না।( শয়তানি হেসে)

আদি তানিশার গালে একটা চুমু দিয়ে সরে আসে। ঘটনা টা হঠাৎ হওয়ায় তানিশা হকচকিয়ে যায় ও ওর হাতটা নিজের গালে স্পর্শ করে ঘটনা টা মনে করে লজ্জায় লাল হয়ে যায়।

আদি- এত লজ্জা পেয়েও না একদম খেয়ে নিতে মন চাই।( শয়তানি করে)

তানিশা আদির কথা শুনে চোখ বড়ো বড়ো করে তাকায়।

তানিশা- আপনাকে কী ভূতে ধরেছে।এসব কি কথা বলছেন।

আদি- হুম ভূতে ধরেছে তোমার ভূতে।

আদি বলে বারান্দায় চলে যায়।তানিশা ও পেছন পেছন যাই। ও দেখলো আদি বারান্দা টপকে চলে গেল।সমস্ত ঘটনা দেখে তানিশা হা করে রয়ে গেল।

মেহেদীর অনুষ্ঠান-

তানিশা- ওই দ্যাখ তোদের হাতে আমি করতে পারব না আমি পার্লারের মেয়েদের বলেছি ওরা আর কিছু ক্ষনের মধ্যেই চলে আসবে।

নিঝুম- তুই করবি না

তানিশা- আমি ফাস্ট র্টাচ করবো তারপর ওরা হাতে করবে।

তানিশার কথা মতোই হলো সব।তারপর একটা পার্লারের মেয়ে তানিশার হাতে করতে থাকে।

মেয়েটা- ম্যাম আপনার হাতে কী কোন লেটার লিখবো।

তানিশা- না লিখতে হবে না।

মেয়েটা- ওকে।

মেহেদি টা সবাই শুকাতে দিয়েছে।

নীল- ইশা তুমি হাতে মেহেদি করেছো কেন।

তানিশা- আমার বান্ধবীদের বিয়ে আর আমি করবো না এটা হতে পারে।

নীল- শরীর খারাপ করলে কী হবে।

তানিশা- কিছু হবে না।

মিতু- মেহেদি দিলে শরীর খারাপ হবে কেন।

নীল- তানিশার মেহেদি তে এলার্জি আছে।

নীলা- ও মনে নেই তো।এই নিশা তুই ধুয়ে নে।

নিঝুম- হুম তাড়াতাড়ি কর।

তানিশা- কিছু হবে না।

নীল- চলো আমার সাথে।

নীল তানিশার হাত ধরে নিয়ে যেতে যাবে।

রাজ- নীল তানিশার হাত টা ছাড়।

নীল- কেন।

রাজ- মেহেদি তুলতে হবে না।

নীল- কেন?

রাজ- নিশার মেহেদি তে এলার্জি নেই তাই।

নীলা- নেই মানে।

রাজ- ও মেহেদি পরবে না বলে ওই কথাটা বলতো।আসলে ওর মেহেদি তে এলার্জি নেই।

নীল- ওওও।

বিয়ের দিন–

পার্লারের মেয়েরা নিঝুম, নীলা আর মিতাকে রেডি করে।ওরা তিনজন বেনারসী পড়েছে। তিনটেই লাল নীলা প্রথমে লাল নিতে রাজী হয় নি কিন্তু সবাই লাল আর ও অন্য তাই আর না করে নি। বরকর্তারা সাদা শেরওয়ানী আর লাল পায়জামা পরেছে। দারুন লাগছে।

আদি একটা নীল রঙের পাঞ্জাবি পরেছে। চুলগুলো হালকা স্টাইল করা। মেয়েরা গিলে খাচ্ছে।আদি সবার সাথে কথা বলছে। কিন্তু ওর চোখ দুটো শুধু তানিশাকেই খুঁজছে।

এদিকে তানিশা একটা গোলাপী রঙের লেহেঙ্গা পড়েছে।কোমড়ের নীচে পর্যন্ত চুল।কানে বড়ো বড়ো কানের দুল। মাথায় টিকলি। চোখে গাড় করে কাজল। আইলাইনার। পিংক কালারের লিপস্টিক । হাতে গোলাপি রঙের চুড়ি।আর অন্য হাতে একটা ব্রেসলেট।

তানিশা রুহির সাথে কথা বলতে বলতে নামে।আদি তানিশার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।আদির চোখ যায় আশেপাশে অনেক না সবাই হা করে তাকিয়ে আছে তানিশার দিকে।

আদির খুব রাগ হয়। কিন্তু কিছু বলে না।
বিয়েটা ভালো ভাবে হয়ে যায়।বিয়ে শেষে ওদের কী কান্না। কনেদের বাসর ঘরে বসানো হয়।তিন বরকর্তা কে আটক করা হয়।

রুহি- টাকা বার করো তিনজনে।

অনিক- কীসের টাকা।

ইরা- আমাদের পাওনা টাকা।

মেঘ- তোমাদের আবার কীসের পাওনা টাকা?

তানিশা- এত বলতে পারবো না।টাকা দাও।

অনিক- কত।

তানিশা- ত্রিশ হাজার টাকা মাত্র।

রোহিত- ওকে।

ওরা রোহিত টাকাটা দিয়ে দেই।

তানিশা- তুমি যাও।

রোহিত চলে গেল।

অনিক- আমারো যাই‌।

তানিশা- তোমরা দেবে তারপর যাবে‌

মেঘ- আদি কিছু কর ভাই।

তানিশা- উনি কী বলবেন ওনার বিয়ের সময় পঞ্চাশ হাজার ( বলতে গিয়ে আদির দিকে চোখ পড়ে আদি মুচকি হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছে তা দেখে তানিশা চুপ করে যায়)

ইরা- দিয়ে দাও তো।

অনিক আর মেঘ টাকাটা দিয়ে চলে যায়।

সবাই যে যার রুমের দিকে চলে যায়।তানিশা রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করতে যাবে তার আগে আদি রুমে ঢুকে দরজা দিয়ে দেই।

তানিশা- আপনার তো সাহস কম না আপনি আবার আমার রুমে এসেছেন।

আদি- তখন যেন কী বলছিলে( ভ্রু নাচিয়ে)

তানিশা- কোথায় কী বললাম।

আদি- ওই যে আমার বিয়ের সময় পঞ্চাশ হাজার টাকা নেবে।

তানিশা- ওও ওটা ।

আদি- তুমি চাইলে আমার প্রাণটাও দিয়ে দেব সেখানে মাত্র পঞ্চাশ হাজার টাকা ( মনে মনে)

আদি- আমি দিয়ে দেব আমি আমার বউকে ওয়েট করাবো না।

তানিশা- রিয়াকে খুব ভালোবাসেন তাই না ‌( করুন কন্ঠে)

আদি হাসলো।

আদি- রিয়া হুম বাসি তো ভালো ( ভ্রু কুঁচকে)

তানিশা- ওও। ( হতাশ হয়ে)

আদি – আসি বাই।রিয়ার সাথে কথা বলবো।

আদি দরজা খুলে চলে গেল । তানিশা দরজাটা বন্ধ করে বিছানায় বসলো।

তানিশা- আদি তুমি যাকে নিয়ে ভালো থাকতে চাও থাকো আমি বাঁধা দেবো‌না। কিন্তু তুমি যদি রিয়াকে ভালোবাসো তাহলে আমার সাথে ওসব করছো কেন আমি তো নিজেকে সামলে নিয়েছি।

পরেরদিন সকালে ওরা সবাই ফিরে আসে। কালকে বৌভাতের অনুষ্ঠান হবে।

বৌভাতের দিন-

তিনজন কনে লেহেঙ্গা পড়েছে। তানিশা একটা কালো গাউন পরেছে।তানিশা স্টেজে ছবি তুলছে নীলাদের সাথে।ও দেখতে পাই আদির সাথে রিয়া ও এসেছে।তানিশা খুব কষ্ট পাই।

রিয়া- তানিশা কেমন আছো।

তানিশা- ভালো তুমি।

রিয়া- ভালো।আদি আর আমি খুব তাড়াতাড়ি বিয়ে
করতে যাচ্ছি।

তানিশা- কনগ্রাচুলেট।

রিয়া- থ্যাকংইউ।

অন্যদিকে-

লোক- হ্যালো স্যার সব ইনফরমেশন পেয়ে গেছি।আর আপনার ফোনে পাঠিয়ে দিয়েছি দেখে নিন

আয়মান-ওকে।

ফোনটা কেটে দিয়ে আয়মান নিজের ফোনে পাঠানো জিনিস গুলো দেখে একটা বাঁকা হাসি দিল।

আয়মান-আর মাত্র কয়েকটা ধাপ তারপর আসল খেলা হবে।

ওদিকে-

ইরা- হাই।কেমন আছেন।

নীল- ভালো তুমি।

ইরা- ভালো।আচ্ছা একটা কথা বলতে পারি।

নীল- হুম

ইরা- আমি আর আপনি কি ফ্রেন্ড হতে পারি প্লিজ।

নীল ইরার দিকে তাকায় ইরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে উওরটা শোনার জন্য।নীল কিছু একটা ভেবে হ্যা বলে দেই।ইরা এতটা উত্তেজিত হয়ে পড়ে যে নীলকে জড়িয়ে ধরে।

নীল অবাক হয় তবে তার কোন অস্বস্তি বোধ হয় নি বরং একটা ভালোলাগা কাজ করছিল।ইরা বুঝতে পেরে নীলকে ছেড়ে দেয়।

ইরা- সরি( বলে চলে আসে)

বৌভাতের অনুষ্ঠান শেষে অনিক,মেঘ,আর রোহিত নিজেদের বউকে নিয়ে বাড়ি চলে যায়।

পরেরদিন-

নীল- আমরা সামনের সপ্তাহে আবার চলে যাবো।

তানিশা- নো। এখন যেতে পারবেনা।

রাজ- কেন।

তানিশা- সে সব পড়ে জানবে কিন্তু এখন তোমরা যাবে না।

কয়েকদিন পর-

নীল আর রাজ দুজনে এখন এখানেই আছে। নীলা, নিঝুম আর তানিশা যে বাড়িটাই থাকতো সেখানেই রাজ আর নীলের পরিবার।নীল ,রাজ আর তানিশা আছে।

আজকেই নীলরা ওদের নিজেদের বাড়ীতে চলে যাবে।

সবাই বসে কথা বলছে। তানিশা রেডি হয়ে নিচে নামে।

নীল- কোথায় যাবে।

তানিশা- একটু কাজ আছে।

নীল- কী কাজ।

তানিশা – এসে বলবো।আসছি বাই।

তানিশা রাজের মায়ের কাছে যায়।

তানিশা- মামণি আসছি।

রাজের মা- সাবধানে যাবি।

তানিশা চলে যায়।

ওদিকে-

লোক- কুইন আয়মান স্যার এসেছেন।

তানিশা- ওকে।

তানিশা ভেতরে ঢুকে মাস্ক টা খুললো।

তানিশা- কেমন আছেন আয়মান সাহেব।

আয়মান-কী ব্যাপার কুইন আজ মাস্ক ছাড়া।

তানিশা- এমনি।( মুচকি হেসে)

আয়মান- ওও

তানিশা- ইনফরমেশন বলুন।

আয়মান সবটা বললো। তানিশা হাসলো সবটা শুনে।

তানিশা – আসল খেলা তো এবার।

আয়মান- প্ল্যান কী?

তানিশা- সেটা সময় হলেই জানতে পারবেন।

আয়মান- তোমার মাথায় কী ঘুরছে বলো তো।

তানিশা বাঁকা হাসলো।আর চলে গেল। আয়মান একটু চিন্তিত হয়ে পড়লো।

পরেরদিন সকালে-

রিয়া ওর বাবা- কে নিয়ে এসেছে আদিদের বাড়ি।

আরমান- আপনাদের তো ঠিক চিনলাম না।

রিয়ার বাবা- আমি রিয়ার বাবা।

আরমান- ওও। কিন্তু আপনি এখানে কেন এসেছেন যদি বলতেন।

রিয়ার বাবা- বেয়াই মশাই আপনি তো বললেন আজকে আসতে রিয়ার সাথে আমার মেয়ের বিয়ের দিন ঠিক করবেন।

আদি – কী।বাপি তুমি বলেছিলে এটা।

আরমান- না আমি কেন বলবো।

কিছুক্ষণের মধ্যেই সকলে আদিদের বাড়ি তে উপস্থিত হয় ।

আদি- সবাই আমাদের বাড়িতে কেন?

অনিক- একটু অপেক্ষা কর।সবটা সবাই বুঝতে পারবে।

আদি- ওকে।

ওরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছে । হঠাৎ একজন আসে তার পেছনে অনেক গার্ড । সবাই অবাক হয়।

লোকটা- কী হচ্ছে এখানে।

আরমান- আপনি কে আমার বাড়িতে কেন?

রিয়া- ড্যাড তুমি।

রিয়ার ড্যাড-হুম আমি এসেছি। তোমার বিয়ে আজকেই আদির সাথে হবে।কাজী ডাক‌।

আরমান- কী ।আদির বিয়ে কেন রিয়ার সাথে হবে।( অবাক হয়ে)

রিয়ার ড্যাড-চুপচাপ থাকুন। নাহলে সবাইকে গুলি করে দেবো।

রিয়ার বাবা- ভাই কি করছো সব তো গোলমাল হয়ে গেল ‌।তোমায় যদি কেউ চিনে ফেলে।( ফিসফিস করে)

রিয়ার ড্যাডের সব মনে পড়ে যে সে একটা বড়ো ভুল করে ফেলেছে।

রাজের মা- আপনাকে খুব চেনা চেনা লাগছে আপনি কে বলুন তো।

রিয়ার ড্যাড ঘাবড়ে গেল।

রিয়ার ড্যাড- সর্বনাশ একবার বুঝতে পারলেই সব শেষ আমার এতদিনের সমস্ত পরিশ্রম জলে যাবে। না কিছুতেই বুঝতে দিলে হবে না( মনে মনে)

অনিকের বাবা- হুম আমার ও খুব চেনা লাগছে।

রিয়া- ড্যাড একজন বিজনেস ম্যান আর আপনারও তাই হয়তো চেনা চেনা লাগছে হয়তো কোথাও দেখেছেন।

আদি- কেসটা কী রিয়ার বাবা ওটা তাহলে রিয়া ওনাকে ড্যাড বলছে কেন । তারমানে( আদি ভাবছিল কথাটা ওর কিছু একটা মনে পড়ায় ওর মুখে হাসি ফোটে)

রিয়া- ড্যাড কখন কাজি আসবে।

আদি- সত্যি কখন যে কাজি আসবে।আমার তো তর সইছে না।

সবাই আদির দিকে তাকায়।

আরমান-কী বলছিস এসব।

আদি- হুম আমি রিয়াকে বিয়ে করতে চাই।

রিয়ার ড্যাড – তাহলে তো কথাই নেই।( খুশি হয়ে)

রিয়ার বাবা- ভাই।আপনাকে দেওয়া খবরটা মিথ্যে ছিল আর এসব করিয়েছে আসিফ( ফিসফিস করে)

রিয়ার ড্যাড- কী বলছো এসব আসিফ কীভাবে করাবে ওতো

রিয়ার বাবা- বেঁচে আছে আর এটা এখানে উপস্থিত সবাই জানে।

রিয়ার ড্যাড রেগে ফুঁসে ওঠে একটা চেয়ারে লাথি মারে। সবাই চমকে উঠে।

রিয়ার ড্যাড- ওই বল আসিফ কোথায়?

এতগুলো বছর পর এই নামটা শুনে সবাই অবাক হয়।আর তার থেকেও বেশী অনেক অবাক হয় উনার মুখে আসিফের নাম শুনে‌।

রাজ- আসিফ আঙ্কেল কোথায় মানে?

রিয়ার ড্যাড- একদম নাটক করবি না সত্যি করে বল আসিফ কোথায়।

অনিক- আপনি আঙ্কেলকে চিনলেন কেমন করে।

রিয়ার ড্যাড- আমি আমার প্রশ্নের উত্তর পাইনি।

রাজের বাবা- তুমি রাকেশ না।

রিয়ার ড্যাড- চিনে ফেললে তাহলে।

রাজের মা- এজন্য চেনা চেনা লাগছে।

অনিকের বাবা- আসিফ এর ব্যাপারে তুমি কিছু জানো না।

রিয়ার ড্যাড- না।

অনিকের বাবা- তুমি চলে যাবার এক বছর পর আসিফ,বোন আর মনি গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যায়।( করুণ কন্ঠে)

রিয়ার ড্যাড- সোহান তাহলে তুমি যেটা বললে ওটা কী ?(রেগে)

তানিশা- মিথ্যে ( চেঁচিয়ে)

তানিশার কন্ঠ শুনে সবাই দরজার দিকে তাকায়।

রিয়া- মিথ্যে মানে? আর সেটা তুমি জানলে কি করে।

রিয়ার ড্যাড- আপনি এখানে।

তানিশা- অবাক হলেন( হেসে) অবাক হবার তো এখন অনেক কিছু বাকি( রেগে দাঁতে দাঁত চেপে)

রিয়া- ড্যাড তুমি ওকে চেনো।

রিয়ার ড্যাড- হুম। আপনি এখানে কেন.

তানিশা- আমি কেন সেটা পড়ে বলছি। তার আগে আপনি বলুন তো আপনি আমার শশুর বাড়ি তে কেন?

তানিশার কথায় সবাই চোখ বড় বড় করে তাকায়।

নীলা- তোর শশুর বাড়ী মানে।

তানিশা- এত মানে টানিস না।

রিয়া- এটা আমার শশুর বাড়ি তোমার না ।

তানিশা হাসলো।

রিয়া- তুমি হাসছো কেন।আদি বলো‌না তুমি আমাকে বিয়ে করবে তো।

আদি- হুম অবশ্যই।

তানিশা কটমট করে তাকালো আদির দিকে।

আদি- একদিকে তানিশা আর একদিকে

রিয়া( বিরবির করে)

রিয়া- শুনলে তো।

তানিশা- আমি কী বলেছি আমি আদিকে বিয়ে
করবো আমি বলেছি আমার শশুর বাড়ি তে কেন তোমরা।

রিয়া- আদি কে বিয়ে না করলে এটা তোমার শশুর বাড়ি হবে কেমন করে।

তানিশা- আমি আয়মান চৌধুরীকে বিয়ে করবো।( মুচকি হেসে)

আদি হা করে রয়ে যায়।

রিয়া- আয়মানটা কে?

তানিশা- পড়ে বলছি।মিস্টার আপনি আয়মান কে চেনেন।

রিয়ার ড্যাড- নামটা খুব চেনা চেনা লাগছে।

আরমান- এসব কি হচ্ছে আমার বাড়িতে।( চেঁচিয়ে)

তানিশা- আঙ্কেল শান্ত হন।এত উত্তেজিত হবেন না।এখনো অনেক অজানা তথ্য জানতে হবে।

আরমান- মানে।

তানিশা- মূল কথায় ফিরে আসি। মিস্টার রাকেশ
আপনি যেন কার খোঁজ করছিলেন ‌

রিয়ার ড্যাড- আসিফ এর।

তানিশা- আমি জানি উনি কোথায়।

রিয়ার ড্যাড- কোথায়, বলুন।

তানিশা- বলবো তার আগে একটা গল্প শোনায় সবাই মন দিয়ে শুনুন।অনেক বছর আগে একটা রাজ্যে একটা রাজা তার রানি আর রাজকন্যাকে নিয়ে থাকতো। সুখেই কাটছিল দিন। রাজার কাছের বন্ধু ছিল রাকেশ আর আরমান। রাকেশ রাজার রাজত্বের সবটা জানতো হঠাৎ একদিন এসে বলে।

ফ্ল্যাশব্যাক-

রাকেশ-আমি বিদেশে সেটেল হবো ।

আসিফ- কেন।

রাকেশ- প্লিজ ভাই বাঁধা দিস না।

আসিফ আর কিছু বলেনি। ২ দিন পর রাকেশ তার বউ আর মেয়েকে নিয়ে চলে যায়।

মনি- বাপি তুমি রানি আপুকে আমার কাছে এনে দাও প্লিজ।( কান্না করতে করতে)

আসিফ- মামনি কান্না করো না ।রানি আপু তোমাকে ঠিক ফোন করবে।

প্রথম কয়েকদিন ফোন আসা – যাওয়া হতে লাগলো। হঠাৎ একদিন ফোন আসা বন্ধ করে দিল।মনি কান্না কাটি করতে লাগলো।

ওদিকে-

রানি- ড্যাড তুমি কেন মনির সাথে আমাকে কথা বলতে দিচ্ছো না।( কান্না করে)

রাকেশ- মা মনি তোমার সাথে কথা বলতে চাই না ।ও তোমার নামে অনেক খারাপ খারাপ কথা বলেছে।বলেছে তুমি খুব খারাপ একদম ভালো না।

রানির বয়স তখন মাত্র ৮ বছর।আর মনির ৬ বছর। রাকেশের কথা রানির সরল মনে দাগ কেটে গেল।রানি মনে মনে মনি কে পছন্দ করতে লাগলো যা একসময় ঘৃণায় পরিণত হলো।

রানির মা- তুমি কেন মেয়েটার মনে বিষ ঢেলে দিচ্ছো।

রাকেশ- চুপ ।আমার পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ালে তোমাকে আর তোমার মেয়েকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেবো কথাটা মাথায় রেখো।

রাকেশ কথাটা বলে চলে যায়।রানির মা ওনার ভাইয়ের রুমে চলে যায়।

রানির মা- ভাই। আমাকে কথা দে তুই আমার রানিকে সামলে রাখবি। তুই এমন কিছু করবি না যাতে আমার রানির কোনো ক্ষতি হয়।কথা দে

সোহান- এসব বলছো কেন।

রানির মা- কথা দে ভাই।

সোহান- কথা দিলাম।

এই ঘটনার ২ মাস পর রানির মা সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়ে কোমায় চলে যায় তারপর মারা যায়।
ওদিকে যতদিন যেতে লাগলো মনি তত একা বোধ করতে লাগলো। এজন্য ওর বাবা ওকে আর ওর মাকে ওর মামার বাড়ি পাঠিয়ে দেই। মনি ওর মামার বাড়ি তে এসে রানিকে আসতে আসতে ভুলে যেতে লাগলো তবে পুরোপুরি পারেনি ।এখন ও ওর বাপি কে রানির কথা জিজ্ঞেস করে।

অনিক- মনি পার্কে খেলতে যাবি।

মনি- আমি কীভাবে যাবো আমি তো কিছুই চিনি না।

অনিক- আরে পাগলী আমি তো চিনি। যাবি কিনা বল।

মনি- ওকে ।আগে মামকে বলে আসি দাঁড়াও।

মনি দৌড়ে ওর মাম এর কাছে যায়।

মাম( মনির মা ও মাম বলে ডাকে)- কীরে মামনি এত দৌড়ে আসলি কেন পড়ে যাবি তো।

মনি- মাম আমি ছোটদাভাই এর সাথে পার্কে খেলতে যাবো।

মাম- সাবধানে যাবি।

অনিক আর মনি পার্কে আসে।

অনিক- চল তোকে আমার বন্ধুদের সাথে দেখা করায়।

অনিক ওর বন্ধুদের কাছে আসে।

অনিক- ওই এটা আমার বোন মনি।আর এগুলো আমার বন্ধু মেঘ আর আদি।

আদি চোখ ছোট ছোট করে মনির দিকে তাকায়-মনি একটা হালকা পিংক কালারের টপ আর একটা হট প্যান্ট পরেছে। পিঠ পর্যন্ত চুল গুলো ২ টো বিনুনি করে ২ দিকে রাখা। হালকা মোটা শরীর।ফর্সা মুখ গুলো হাল্কা লাল হয়ে আছে ।পুরো একটা পুতুল।আদির ইচ্ছা করছে ওকে চুমু খেতে।

মনির সাথে ওদের বন্ধুত্ব হয়ে যায়।আদি আর মনি খুব ভালো বন্ধু হয়ে যায়। দুজন দুজনের প্রান।
সব ঠিকঠাক চলছিল কিন্তু একদিন হঠাৎ সব এলোমেলো হয়ে যায়।

আসিফ তার স্ত্রী আর মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে বেরোয়।

আসিফ- তোমার হলো।

মনির মা- হুম আসছি।

মনি- আমায় কেমন লাগছে বাপি।

আসিফ- দারুন আমার রাজকন্যাকে খুব সুন্দর লাগছে।

মনির মা- আর আমাকে।

আসিফ তার স্ত্রীর দিকে হা করে তাকিয়ে থাকে।

মনির মা- এই চলো।

আসিফ- অসাধারণ লাগছে তোমাকে।

মনির মা- মেয়ে আছে।চলো।

আসিফ- হুম।

আসিফের ফোন আসে ।

আসিফ- তোমরা যাও আমি আসছি।

ওরা চলে গেল।

আসিফ- হ্যালো বল।

রাজের বাবা- আমি চলে এসেছি তোর সাথে

আজকে বিকালে দেখা করবো‌।

আসিফ- হুম।

আসিফ কথা বলে গাড়ি করে চলে লাগলো।মাঝ রাস্তায়।

মনির মা- কি হলো।

আসিফ – তুমি মনিকে নিয়ে ঝাঁপ দাও।

মনির মা-কেন।

আসিফ- এত কথা বলো না ।ঝাঁপ দাও।

মনির মা- কী হয়েছে বলো।

আসিফ- গাড়ির ব্রেক ধরছে না।যেকোন সময় যা কিছু হতে পারে।

মনির মা-কথা দিয়েছিলাম বাঁচলে একসাথে বাঁচবো আর মরলে একসাথে মরবো।তাহলে আজ কেন এসব বলছো।( কেঁদে)

আসিফ -কিন্তু আমাদের মেয়ের কথা ভাবো।

মনির মা-আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারব না।

আসিফ- আমার কসম ।

মনির মা বাধ্য হয়ে মনিকে নিয়ে ঝাঁপ দেয়।

আসিফ- হ্যালো

রাজের বাবা- কী হয়েছে তোর গলা এরকম লাগছে কেন।

আসিফ- আমার কথা শোন। আমার কিছু হয়ে গেলে মনির মাকে আর মনিকে দেখে রাখিস।

রাজের বাবা-এসব বলছিস কেন।

আসিফ – আমি যেটা বলছি সেটা কর।
আসিফ রাজের বাবাকে সবটা বলা শেষ করে।তারপরই আসিফের গাড়ি ব্ল্যাস্ট করে।

বর্তমান–

তানিশা সহ সকলের চোখে জল।

আদি- তারপর কী হলো মনি কোথায়?

তানিশা- রিয়া তোমার মনিকে মনে আছে।

রিয়া – হুম।তবে আমি ওকে ঘৃণা করি। আমি ওকে কত ভালোবাসতাম আর ও আমার সাথে কথা বলতে চাই নি ও মারা গেছে যেনে ভালো লাগলো( অভিমানি কন্ঠে)

তানিশা- আচ্ছা রিয়া তোমার মনে এই প্রশ্ন গুলো কখনো আসেনি যে মনি তোমাকে এত ভালোবাসতো সে কয়েকদিন দূরে গিয়ে তোমার সাথে কথা বলবেনা।এটা কে বলেছে তোমায়।

রিয়া- ড্যাড বলেছিল।

তানিশা-মিথ্যে বলেছে।

রিয়া- ড্যাড মিথ্যে বলবে কেন।

তানিশা- সেটা ওনাকেই জিজ্ঞেস করো।

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here