#সেই_তমসায় (শেষ পর্ব- ১),(শেষ পর্ব-২)
নুসরাত জাহান লিজা
(শেষ পর্ব- ১)
ময়ূখের থমথমে চেহারাতেও খানিকটা হাসি ফুটল, তবে ভীষণ শীতল। ঘরের যেটুকুও ফিসফিস ছিল তা মুহূর্তেই শান্ত হয়ে গেল।
এবার সে বলল, “এরপর আপনি অত্যন্ত গোবেচারা সেজে এই বাড়িতে প্রবেশ করলেন, এবং ছক কষছিলেন প্রতিনিয়ত। কিন্তু সফল হতে পারছিলেন না। এহতেশাম সাহেবের মতো ধূ/ /র্ত লোক কাউকেই বিশ্বাস করেন না। একদিন সুযোগটা পেয়ে গেলেন। এরপর তার সেই জানালা বেয়ে ঘরে গিয়ে প্র/তি/শো/ধ চ/রি/তা/র্থ করে বেরিয়ে এলেন।”
“পারিনি। যদি পারতাম। ওই লোকটাকে নিজের হাতে /শে/ষ করতে পারলে শান্তিতে ঘুমাতে পারতাম। কিন্তু, আমি ভেতরে এসে দেখলাম আমার কাজটা আগে থেকেই কোন কু* বা* করে রেখেছে। আমার শি/কা/র কেড়ে নিয়েছে।” সাজিদের মুখটায় অপার /হিং /স্র/তা। আ/হ/ত সিংহ যেন এই ঘরে চলে এসেছে পথ ভুলে। ফুঁ/স/তে ফুঁ/স/তে কথাগুলো বলল সে।
“বুঝলাম, এখন বলুন তো সেদিন ভেতরে গিয়ে কী দেখেছিলেন?” এক গ্লাস পানি সাজিদের দিকে এগিয়ে দিয়ে প্রশ্ন করল ময়ূখ।
পানিটা নিয়ে খুব ধীরে সুস্থে তাতে চুমুক দিল সাজিদ, ওর স্নায়ুবিক ;উ/ত্তে/জ/না খানিকটা প্রশমিত হয়েছে বোঝা গেল। বড় করে শ্বাস টেনে বলতে শুরু করল, “অনেকদিন ধরেই একটা সুযোগ খুঁজছিলাম। প্রথমদিকে কিছু পেয়েওছিলাম। হাত নিশপিশ করত। কিন্তু তখন কিছু করলে ধ/রা পড়ে যেতাম৷ কারণ তখনো আমাকে কেউই বিশ্বাস করে উঠতে পারিনি৷ আমি যেহেতু কিছুটা হলেও তার কাছাকাছি থাকতে পারতাম তাই স/ন্দে/হ/টা আমার উপরেই বর্তাতো। মুনিমও সবসময় তার কাছাকাছি থাকত। এরপর আর সেভাবে সুযোগ পাইনি। দু’দিন খুব বৃষ্টি হলো। অনেকের মনেই তার জন্য একটা চাপা ক্ষো/ভ ছিল, উ/ই/ল করার পর তা ম/হা/মা/রী/র মতো সং/ক্র/মি/ত হলো। প্রথম বৃষ্টির রাতে আমি প্ল্যান করে ফেললাম। প্রকৃতিও আমাকে সহযোগিতা করল। দ্বিতীয় রাতে অমাবস্যা ছিল। গাঢ় অন্ধকার। দিনের অনবরত বৃষ্টির পরে ভীষণ ভ্যাপসা গরম আর গোমট একটা আবহাওয়া ছিল। এমন রাতগুলোতে ওই জানালা খোলা থাকবে সেটা জানতাম। তবে অমাবস্যার জন্য খুলবে কিনা দ্বিধায় ছিলাম। চাঁদের প্রতি তার ভালোবাসা ছিল খুব। একমাত্র এটাকেই বোধহয় তিনি কোনো হিসেব নিকেশ ছাড়াই ভালোবাসতেন।” মুখে হাসি থাকলেও তাতে প্রচ্ছন্ন বিদ্রুপ মাখা।
ঘরে এখন পিনপতন নীরবতা। ময়ূখের অন্তর্ভেদী দৃষ্টি উপেক্ষা করে সাজিদ বলে চলল, “ঘুঁটঘুঁটে অন্ধকার রাতে, আমি জানালায় হাত দিতেই কাঠের ভারি পাল্লাটা সরে গেল। আমি খুশি হয়ে উঠলাম। সেটা বেয়ে ভেতরে ঢুকলাম। কিন্তু প্রথমে তাকে কোথাও দেখলাম না। এবার অবাক হলাম, তিনি ঘরে নেই অথচ জানালা খোলা এমন কোনোদিন হয়নি। সা/ব/ধা/ন হয়ে গেলাম। দুদিনের বৃষ্টিতে ইলেকট্রিসিটির দ/ফা/র/ফা। একটা হ্যারিকেনের টিমটিমে আলো ছাড়া ঘরে আর কোনো আলো নেই। আরেকটু সামনে এগুতেই পায়ে কিছু একটার সাথে ধা//ক্কা খেলাম। স্বয়ং এহতেশাম আহমেদ মেঝেতে লুটিয়ে আছে৷ সমস্ত অ/হং/কা/র আর দ/ম্ভ নিয়ে লোকটা ভূপাত ধরণীতল।” ঘর কাঁপিয়ে হেসে উঠল সাজিদ। তবে মুহূর্তেই তার চেহারার বিষাদ ফুটে উঠল। গলার স্বর অত্যন্ত নিচু করে স্থিতি বজায় রেখে বলল,
“কিন্তু আমি তার এই অহমিকা ভাঙতে পারিনি। আমি বাবা-মায়ের কাছে জবাব দিতে পারব না, যে তাদের সাথে যে অ/ /ন্যা/ /য় করেছে তার শা/ /স্তি আমি নিজে দিয়েছি। পারিনি।” ছেলেটার মানসিক স্থিতি নিয়ে সন্দিহান হতে পারে যে কেউ। কিন্তু ময়ূখ জানে তেমন কিছু হয়নি।
“অস্বাভাবিক কিছু দেখেছিলেন ঘরে?”
“না তো। আমি আর কিছু বলতে পারব না এখন।” এতক্ষণ সত্যি বললেও এবারের কথাটা যে সত্যি নয় তা ময়ূখ বুঝতে পারল। বলার আগে একটু সময় নিয়েছে, চোখের পাতার কুঞ্চনটুকুও নজর এড়ায়নি।
তবে আপাতত আর সেটা নিয়ে প্রশ্ন করল না। সাজিদ যাকে বাঁচাতে চাইছে তার সাথেও কথা বলবে সে। আগে প্রথম থেকে সে বাড়ির সকলের সাথে হওয়া কথোপকথন আর তাদের কার্যকলাপ আরেকবার বিশ্লেষণ করবে সে৷ ময়ূখ একটা জিনিস খেয়াল করেছে প্রথমদিকে কেউই মুখ খোলেনি, এমনকি এবাড়ির কর্মীরাও না। তবে সাঈদরা বলতে শুরু করার পরে তারাও মুখ খুলেছে। যা কিছু স্বাভাবিকতা বিবর্জিত বলে মনে হয়েছে, তাও অকপটে বলেছে তারা।
“রায়হান সাহেব ব্যবসায় লস খেয়ে ঋণে জর্জরিত ছিলেন, ওদিকে আবার সাঈদ সাহেব নমিনেশন পেপার কিনতে চাইছিলেন। আপনার বাবা ভর্ৎসনা করে বলেছেন, ‘আগে নিজেকে সামলাতে শেখ। মানুষের দায়িত্ব পরে নে।’ মুনিরা ম্যাডামের হাজব্যান্ডেরও টাকা প্রয়োজন, বোনের সংসার গুছিয়ে দেবার জন্য। এত অবজ্ঞার পরেও আপনারা সকলেই তাকিয়ে ছিলেন সেই উ/ই/লে/র দিকেই। টাকাটা যত দ্রুত হাতে আসবে ততই আপনাদের জীবনে নিশ্চিন্ত নিশ্চয়তা। কিন্তু লোকটা বেঁচে থাকলে তো সেটা হাতে আসবে না। যে মে/ /রে/ ছে, সে আপনাদের উপকারই করেছে, তাই না?”
“কী বলতে চান আমরা করেছি এটা?” রায়হান ক্র/দ্ধ গলায় বলল।
“দেখুন, আমরা যেমনই হই, সুযোগ-সন্ধানী বা যা ইচ্ছে বলতেই পারেন৷ কিন্তু তাই বলে তিনি খু/ /ন? তিনি যেমনই হউন আমাদের বাবা তো!” মুনিরার গলায় তীব্র অসন্তোষ।
সাঈদ কিছু বলার জন্য মুখ খুলতে যাচ্ছিল কিন্তু ময়ূখ থামিয়ে দিল।
“সেটা আমি জানি, আপনারা এটা করেননি। তবে এই বাড়িতে একজন আছেন, যিনি এহতেশাম সাহেবের দ্বিতীয় বিয়ের কথা জানতেন, মুনিম আর শিরিনের পরিচয় সম্পর্কেও অবগত ছিলেন।”
“কে?” বেশ কয়েকটা মুখ থেকে একযোগে প্রশ্নটা এলো।
ময়ূখ সেই ছবিটা হাতে পেতেই বুঝতে পেরেছিল যে এই কে/ /সে/ র সাথে ব্ল্যা/ক/মে/ই/লে/র একটা গভীর যোগসূত্র রয়েছে।
“বলছি।”
একটু সময় নিয়ে ময়ূখ স্থির দৃষ্টিতে মৃদুলার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল, “কীভাবে জেনেছিলেন বিষয়টা, ম্যাডাম?”
……..
(ক্রমশ)
#সেই_তমসায় (শেষ পর্ব – ২)
নুসরাত জাহান লিজা
“কীসের ভিত্তিতে এটা বলছেন আপনি?” শুরুর হতচকিত ভঙ্গি কাটিয়ে স্বরূপে ফিরে প্রশ্ন করল মৃদুলা।
ময়ূখ মৃদুলার চোখে চোখ রেখে দৃঢ় গলায় বলল, “মশিউর টাঙ্গাইলের একটা মা/দ/কা/স/ক্তি নি/রা/ম/য় কেন্দ্রে থাকে। এহতেশাম সাহেবের এই সিদ্ধান্তে আপনি নাখোশ ছিলেন। এটা তো সত্যি, তাই না?”
“হ্যাঁ, আমার ভাই সে, আমি আমার কাছে রেখে শোধরাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু মামা আমার কথা শুনলেন না। আমি তার কাছে কৈফিয়ত চাইতেই পারি। তাতে অ/ন্যা/য় হয়নি নিশ্চয়ই?”
“না, সেটা একদমই অন্যায় নয়। কিন্তু ঘটনার দিন সন্ধ্যায় তুমুল কথা-কা/টা/কা/টি, এর কতক্ষণ পরেই লোকটা পৃথিবীতে নেই। শুধুই কাকতাল?”
“কিন্তু সেদিন তার সাথে আমার কোনো কথা কা/ /টা/কা/ /টি হয়নি৷ হয়েছিল দুই সপ্তাহেরও বেশি আগে।”
“তাহলে একজন স্বাক্ষী আমরা কী করে পেলাম?”
“সেটা আমি কী করে বলব? সে মিথ্যে বলছে।”
“আচ্ছা, এক মুহূর্তের জন্য ধরে নিলাম সে মিথ্যা বলেছে। কিন্তু আপনি আমার ঘরে গিয়ে আমার এত মঙ্গল কামনা করে যে চিরকুটটা রেখে এলেন, আমার ব্যাগ অগোছালো করে এলেন, সেটা কেন করেছেন?”
“আপনি অনেক আ/জে/বা/জে অ/ভি/যো/গ করেছেন। আমি কিন্তু আপনার নামে মা/ন/হা/নী/র /মা/ম/লা করতে পারি।”
“সে আপনি করতেই পারেন। কিন্তু অভিযোগ তো মিথ্যে নয়।”
“প্রমাণ আছে আপনার কাছে ময়ূখ?”
হেসে একটা বই বাড়িয়ে ধরল মৃদুলার সামনে, “এহতেশাম সাহেবের বইয়ের তাকের এই বইটা আপনি তাকে উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন। শুভেচ্ছা বার্তাটুকু সুন্দর লিখেছেন। আপনার হাতের লেখাও দারুণ। আমার /হিং/ /সা হচ্ছে।”
মৃদুলার মুখাবয়বের আত্মবিশ্বাসী ছবিটা খানিকটা যেন ম্লান হলো। ময়ূখ হাসিটা বিস্তৃত করে বলল, “এই লেখা আর আমার পাওয়া ওই চিরকুটের একটা শব্দের লেখা কিন্তু একইরকম। আর এটা যে আপনার লেখা সেটা আমি অন্যভাবেও বের করতে পারব। তাই, বুঝতেই পারছেন…”
এতক্ষণ মৃদুলা ময়ূখের চোখে চোখ রেখে কথা বললেও এবার চোখ নামিয়ে নিল।
“আমাকে তা/ড়া/নো/র এত এত প্রচেষ্টা কেন ছিল আপনার মৃদুলা?”
মৃদুলা মাথা তোলে না। ময়ূখ এবার গলা কিছুটা মোলায়েম করে বলল, “আমি আপনার সাথে আলাদা করে কিছু কথা বলতে চাই, একা। প্লিজ।” কথাটা অনুরোধ সূচক হলেও ময়ূখের গলায় তার লেশমাত্র নেই, বরং ভীষণ শীতল শোনায়।
মৃদুলাও যেন ওকে কিছু বলতে চায়, কিন্তু এত লোকজনের মধ্যে বলতে পারছে না৷ সে উঠে সোজা ময়ূখের ঘরে চলে গেল৷ ময়ূখ যাবার আগে সবার দিকে তাকিয়ে বলল, “সাজিদ, মুনিম, রমজান আলী সাহেবসহ আপনারা কেউ ঘরের বাইরে যাবেন না এখন। অবশ্য এই বাড়ির চারপাশে এখন বেশ ভালো রকম /পু/লি/শি পাহাড়া আছে। তাই সেটা মঙ্গলকর হবে না।”
ময়ূখের চেহারায় আজ গাম্ভীর্য ঝ/ল/সে পড়ছে। এত বজ্রকঠিন স্বরে সে কথাটা বলল যে, ঘরের কেউই সেটাকে অগ্রাহ্য করতে পারল না। ময়ূখের নির্দেশে মঈদুল আর রেদোয়ান গত দু’দিন হয় এই এলাকাতেই থাকছে। অনেককিছুর প্রমাণাদি সংগ্রহ করেছে।
সাজিদ উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “আমার কিছু বলার আছে।”
“বলুন।”
“মৃদুলা সত্যি বলছে, সেদিন সে সন্ধ্যের পরে ওই ঘরে যায়নি।”
“তাহলে কি মিথ্যে বলা হয়েছে?”
“আমি সেদিন ঘর থেকে পালিয়ে আসার সময় নিজের ছাপ কোথায় কোথায় ফেলেছি, সেটা ভেবে ভেবে মুছছিলাম। আমি জানতাম না পু/ /লি/শ কে//স হবে না। যেই কাজ করিনি, সেটার জন্য ফাঁ/স/তে পারব না, তাই সব মুছে ফেলছিলাম। তখন একটা টেপ রেকর্ডার আমার চোখে পড়ে। সেটায় আমি মৃদুলার… আমি বলতে চাইছি, কেউ ওকে /ফাঁ/সা/নো/র চেষ্টা করছে।”
“কোনো চিন্তা নেই সাজিদ সাহেব, কার পিছে কে আছে, এবং সবার পেছনে কে, তাকেই বের করা হবে।”
ভেতরে এসে মৃদুলা চেয়ারটায় বসল। ময়ূখ জানালার পাশে গিয়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে মৃদুলার দিকে সরাসরি তাকিয়ে প্রশ্ন করল, “আপনি আমাকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা কেন করছিলেন? যাকে বাঁচাতে চাইছেন, সে-ই কিন্তু আপনাকে /ফাঁ/ /সা/তে চাইছে।”
মৃদুলার চোখের পাতা কাঁপল, এরপর সে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “আমি কাউকে বাঁচাতে চাইছি, সেটা ঠিক। কিন্তু আমি বলব না কিছু। পু/লি/শে/ ধ/রি/য়ে দিলে দিতে পারেন, আমি আপনার কথায় বি/ভ্রা/ন্ত হচ্ছি না। আপনি আসল অ/প/রা/ধী/কে ধরতে পারলে আমার সাথে এসব বলে সময় ন/ষ্ট করতেন না।”
ময়ূখ সশব্দে হেসে উঠল, এরপর বলল, “আপনার তাই মনে হয়? একটু অপেক্ষা করুন, আমি যা ভাবছি আশা করছি তাই সত্যি। আমার পর্যবেক্ষণ শক্তি খুব একটা ভুল হয় না।”
যে মেয়েটি মৃদুলা আর এহসানকে কথা বলতে শুনেছিল সেদিন, তাকে ডেকে পাঠানো হলো। ময়ূখ তাকে প্রশ্ন করল, “তুমি সেদিন ওই সময় এহতেশাম সাহেবের ঘরের সামনে কেন গিয়েছিলে?”
“আমারে মশিউর ভাই কইছিল অনে নাকি মৃদুলা আপা ডাকতাসে কী জানি দরকারে। আমি তাগোরে মেজাজ দেইখে আর যাই নাই। আইসা পড়সি।”
মেয়েটির কথা শেষ হলে তাকে বাইরে পাঠিয়ে দিয়ে মৃদুলার দিকে তাকিয়ে ময়ূখ আত্নবিশ্বাসী গলায় বলল, “আপনি যেমন এই বাড়ির একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য, আপনার ভাইও তাই। তাকে আনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। হয়তো আর ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই তাকে আনা হবে। বলেছিলাম না, আমার পর্যবেক্ষণ শক্তি সাধারণত ভুল হয় না, মৃদুলা।”
মৃদুলা আবারও বসে পড়ল, হাতের উপরে কপাল ঠেকিয়ে মাথা দু’দিকে নাড়ালো কয়েকবার।
“দেখুন, আপনাদের আগের কথাবার্তার রেকর্ডিং চালু করে রেখে আসা হয়েছে, আমাকে ফলো করার সময়ও আপনার উপরে স//ন্দে//হে/র বীজ বুনে দেয়া হয়েছে। যাতে আপনি সেদিন ওই ঘরে উ/ত্তে/জি/ত হয়েছিলেন, এটার একজন এ্যা/লি/বা/ই তৈরি করা যায়। এমন একজনকে বেছে নেয়া হয়েছে, যে তলিয়ে ভাবার চেষ্টা করবে না। কিন্তু জিজ্ঞাসাবাদ করলে স্বাক্ষী দিতে পারবে। কে করছে সেটা নিয়ে এখনো সংশয় আছে আপনার? এতে রমজান আলীরই বা লাভ কোথায়, তার সাথে আপনার কীসের শ/ /ত্রু// তা? তাছাড়া ব্ল্যা/ক/মে/ই/ল তো করছিলেন আপনারা দুই ভাইবোন।”
মুখ তুলল মৃদুলা, দৃষ্টিতে আ/হ/ত বি/ষ/ন্ন/তা। যেন খুব গভীরভাবে কিছু ভাবছে৷ এরপর খুব ধীরে ধীরে বলতে শুরু করল,
“মশিউর আর আমার বয়সের ব্যবধান মাত্র দেড় বছরের। তাই মাখামাখি, খুঁনসুটিও বেশি ছিল। আমরা দুই ভাইবোন নিজেরাই নিজেদের কাছের মানুষ। কষ্ট, আনন্দ সব ভাগাভাগি করে নিতাম৷ কিন্তু কলেজে যাবার পর থেকেই সে বদলে যেতে থাকে। একসময় বুঝতে পারলাম ও /ড্রা/গ নিতে শুরু করেছে৷ সে-ও তিন-চার বছর আগের কথা৷ এরপর ডিগ্রীতে ভর্তি হলেও পড়াশোনা আর করল না। কিন্তু ওর তখন টাকার প্রয়োজন হতো নে/শা/র জন্য। মায়ের কিছু গয়না আমার কাছে ছিল। আড়াই বছর আগে একদিন দেখি সেই ড্রয়ারের তালা ভা/ /ঙা। গয়নাগাটি কিচ্ছু নেই। মশিউরকে গিয়ে ধরলাম, প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে ঠিকই স্বীকার করল সেসব বিক্রি করে সে টাকা পেয়েছে। এরমধ্যে মামা সব জেনে গেলেন। ওকে সাবধান করে দিলেন।” এ পর্যন্ত বলে থামল মৃদুলা, জানালার অন্য প্রান্তে এসে দাঁড়িয়ে আবারও মুখ খুলল,
“মামার তো/ /পে/র মুখে সে আস্তে-ধীরে নেশা বা ড্রা/ /গ ছেড়ে দেবে বলে প্রতিজ্ঞা করল। সে যাত্রায় হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম কিন্তু সেটা কথা পর্যন্তই। মামার কথার কেউ অবাধ্য হলে সেটা তিনি একেবারেই পছন্দ করতেন না। তিনি আর কোনো কথা শুনলেন না, পাঠিয়ে দিলেন নিরাময়/ কেন্দ্রে। সেখানকার পরিবেশ জ/ঘ/ন্য। শারীরিক /নি/ /র্যা/ /ত/ন পর্যন্ত হতো। দশ জনের জায়গায় বিশ পঁচিশ জন করে থাকতে হতো। ওই পরিবেশ থেকে ওকে বের করে আনার জন্য আমি যখন ম/রি/য়া, তখন রমজান আলীর কাছ থেকে মামার আরেক বিয়ের ওই ছবিটা পাই। সে কোথায় পেয়েছে অনেকবার জিজ্ঞেস করেছি কিন্তু উত্তর পাইনি। সেটার একটা কপি নিজের কাছে রেখে অন্যটা নিয়ে মামার কাছে যাই। সে যেমনই হোক, তার বাইরের ইমেজ নিয়ে ভীষণ সচেতন। যে সন্তানদের সবসময় ছোট করে কথা বলে এসেছেন, তারা তার উপরে আঙুল উঁচিয়ে কথা বলুক, কৈফিয়ত চাক, এটা তিনি কোনোদিন চাইবেন না। কিংবা বাইরের লোকদের কাছে আসুক, সেটা তো আরও নয়। তাই তার কাছে গেলাম, আর মশিউরকে ফিরিয়ে আনতে বললাম, নইলে সব বাইরে বলে দেব সেটাও জানালাম৷ সাময়িকভাবে তিনি মেনেও নিলেন৷ কিন্তু…”
“কিন্তু?”
“মশিউর ফিরে এসে সেই ছবি দিয়ে টাকার জন্য চাপ তৈরি করতে লাগল। সাধারণ বোধবুদ্ধি হারিয়ে ফেলেছিল। ভুলে গিয়েছিল একটা গা/ধা/র কাছে হাজারটা অ/ /স্ত্র/ থাকলেও বাঘ বাঘ ই থাকে। তাকে রা/গি/য়ে দিলে উল্টো ক্ষ/তি/টা সেই /গা/ /ধা/রই।”
থেমে ময়ূখের টেবিল থেকে জগটা টেনে নিয়ে সেটা ধরেই উপর থেকে ঢেলে পানি খেয়ে আবার গিয়ে চেয়ারটায় বসে বলতে শুরু করল, “যেকোনো মানুষই এটা অপছন্দ করবে। তিনিও করলেন। কিন্তু নিজের বোনের প্রতি ভালোবাসা থেকেই বোধহয় ওকে জে/ /লে দিলেন না৷ ছবিটা উদ্ধার করে আবারও পাঠিয়ে দিলেন নিরাময় কেন্দ্রে।”
“বুঝলাম, কিন্তু রমজান আলী কেন মশিউরকে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করলেন?”
“আমিও সেটা ভেবেছি। লোকটাকে আমার কখনো সুবিধার মনে হয়নি। পড়ে একদিন মশিউর নিজেই নে/শা/গ্র/স্ত অবস্থায় বলেছিল, ওকে ড্রা/ /গ সাপ্লাই দিত রমজান আলী। সেটা নিয়ে লোকটার সাথে আমার ভীষণ লেগে যায়। সেই থেকে আমার পিছু লেগেছে।”
রমজান আলীর এই ব্যবসা সম্পর্কে সে গতকালই অবহিত হয়েছে। সাথে মশিউরের কানেকশন বের করতে বেগ পেতে হয়নি।
“এরপর, মশিউর সেখান থেকে আবার ফিরল কীভাবে?”
“এবার ছয় মাসের জন্য পাঠানো হয়েছিল। সময় শেষ হওয়ায় সে ফিরে আসে। আমাদের হাতে যেহেতু আর কোনো ছবি ছিল না, মুখের কথা কেউ বিশ্বাস করবে না, তাই মামা নিশ্চিন্ত। তিনি আমাদের প্রতিমাসে যে হাত খরচ দিতেন সেটা বন্ধ করে দিলেন। এরপর উ/ই/ল হলো। কিন্তু…”
মৃদুলা থেমে গেলেও ময়ূখ প্রশ্ন করল না, সে মেয়েটাকে দেখছে খুব মনোযোগ দিয়ে চোখ মুখ, নাকের উঠানামা খেয়াল করছে। আসার পর থেকে মেয়েটাকে দেখে আসছে সে। সবসময় ড্যাম কেয়ার একটা আচরণ। আজ সে হ/তা/শা/য় নিমজ্জিত। প্রিয়জনের বিশ্বাস/ /ঘা/ /ত/ক/তা/য় নাকি প্রিয়জনের অপ্রিয় সত্য সামনে আসায় সেটা বোঝা যাচ্ছে না। তবে এহতেশাম সাহেবকে সে আরও ভালো মতো বুঝতে পারছে। নিজে যা-ই করুক, যেমনই হোক, অন্যরা কিচ্ছু ভুল করার অধিকার রাখে না৷ এই বাড়ির সমস্ত কিছু চলবে তার বানানো নিজস্ব নিয়মে, একমাত্র তারই অঙ্গুলিহেলনে। নিজে সুপিরিয়র বাকিরা ইনফেরিয়র। এমন লোক সত্যিই বি/প/জ্জ/ন/ক। এমন লোকের সংশ্রব কেমন হতে পারে সেটা ভালোই আন্দাজ করল ময়ূখ।
মৃদুলা আরেকবার মুখ খুলল, “সেদিন ওই ঘরে কী হয়েছিল আমি জানি না। তবে মশিউর যে ওই ঘরে গিয়েছিল আরেকবার ছবি নিয়ে হু/ /ম/কি দিতে, এটা জানতাম। রমজানের কাছে ছবির আরও অনেকগুলো কপি ছিল। নিষেধ করেছিলাম, লাভ হয়নি। পরেরদিন যখন মামকে মৃ/ /ত আবিষ্কার করা হয় তখন বুঝতে পারি এটা মশিউর করেছে। সে আমার কাছে স্বীকারও করেছিল, বলেছিল সাহায্য করতে। এবার সে পার পেয়ে গেলে সব ছেড়ে দেবে। আমি বিশ্বাস করেছিলাম৷”
এই প্রথম মৃদুলার চোখ দিয়ে কয়েক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল, এক আঙুলে সেটা মুছে বলল, “আমরা একই মায়ের ঔরসজাত সন্তান। কিছু আগে পড়ে জন্মেছি, একসাথে হেসে খেলে বেড়ে উঠেছি, আমি কী করে ওর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিই এভাবে? হয়তো কেউ কেউ খুব মহান হতে পারে, সবার জন্য জিরো ট/লা/রে/ন্স দেখাতে পারে। কিন্তু বিশ্বাস করুন ময়ূখ, আমি সেই রেয়ার ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর কেউ নই। খুব সাধারণ একজন র/ক্ত /মা/ং/সে/র মানুষ। আমি আমার ভাইকে হারিয়ে ফেলতে চাইনি। তাই তার অ/ন্যা/য়/কে সমর্থন করেছি। কারণ সে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল স্বাভাবিক জীবনে ফেরার। যে গেছে সে তো আর ফিরে আসবে না, কিন্তু যদি ওকে ফেরাতে পারি…”
এবার কান্নায় ভেঙে পড়ম মৃদুলা। চেয়ারে পা দুটো উঠিয়ে বসে তাতে মুখ গুঁজে কাঁদছে সে। এই ভাই অন্তঃপ্রাণ বোনের আবেগমথিত কান্না দেখে ময়ূখের সহসাই সান্ত্বনা দিতে ইচ্ছে হলো৷ কিন্তু দিল না। খানিকটা সময় কেটে গেল চুপচাপ।
এরপর গলায় কাঠিন্য এনে ময়ূখ বলল, “মশিউর সব ভাবনাচিন্তার ঊর্ধ্বে চলে গেছে। নে/শা মানুষের স্বাভাবিক চিন্তাশক্তি ন/ষ্ট করে দেয়। নে/শা/য় টান লাগলে তার কাছে আপন-পরের ভেদাভেদ থাকে না। আপনার এই ভালোবাসা সে দেখেওনি। বরং ব্যবহার করেছে, নিজের স্বা/র্থে। আপনাকেই বরং সরিয়ে কিংবা জড়িয়ে দিতে চেয়েছে। চলুন বাকি খেলাটুকু দেখবেন।”
…….
(আর দুই ঘণ্টার মধ্যে শেষ অংশটুকু আসবে ইনশাআল্লাহ। পর্ব বেশ বড় তাই ভাগ করে দিলাম।)