মন_নিয়ে_কাছাকাছি #পর্ব_১১

0
347

#মন_নিয়ে_কাছাকাছি
#পর্ব_১১
লেখনীতে #পুষ্পিতা_প্রিমা

নতুন বৌ বরণের জন্য বাড়ির সামনেই জটলা পাকিয়েছে অনেক চাকরবাকর মেয়েলোক স্ত্রীলোক। কয়েকটা তরুণকেও ছোটাছুটি করতে দেখা যাচ্ছে।

কারো কারো হাতে মিষ্টির প্লেট, ফুলের ঢালা, স্প্রে।
রোহিনী হাতের মোটা বালাগুলো আর মাথার হিজাব খুলে শাড়ির আঁচল টেনে মাথায় দিয়ে নিচে চলে এসেছে। বউ এখনো গাড়ি থেকে নামেনি।

সবার হৈচৈ দেখে আনতারা বেগম গলায় একটু বিরক্ত মিশিয়ে বললেন

আহ! এত ঝামেলার কি দরকার। পথ পরিষ্কার করো। অধীর বউকে নিয়ে আয়।

না না এ হবেনা। অধীর ভাই ভাবিকে কোলে নিয়ে ঘরে নিয়ে যাবে।

আরেহ আমি লেংড়া বউ বিয়ে করিনাই। সর। ফালতু কথা বলিস না।

বলেই হনহনিয়ে নিজের ঘরের দিকে চলে গেল সে।

ফুপাতো বোনগুলো চুপসে গেল। সানজু উঁচু গলায় বলল

কেন? এ হবেনা অধীর ভাই । বড় ভাই মিনা আপাকে কোলে নিয়ে ঘরে নিয়ে গেছিলো।

মিনা চিমটি কাটলো। বলল

চুপ থাক বেয়াদব।

বড় ভাই কিছু তো বলো। রাহান গলা কাত করে মিনার দিকে তাকিয়ে বলল

আমার বউ লেংড়া ছিল তাই কোলে নিছি। কিন্তু তোদের অধীর ভাইয়ের বউয়ের পা আছে।

সবাই হো হো করে হেসে উঠলো। মিনা মুখ মোচড়ে বিড়বিড় করল

হুহ, আমার পা নেই? অসভ্য লোক।

মুখের ভেতর বিড়বিড় করা কথার উদ্দেশ্য বুঝে রাহান ফোকলা হাসলো। চোখ টিপে দিল মিনাকে। মিনা সানজুকে নিয়ে সেখান থেকে সরে পড়লো। যেখানে সেখানে অসভ্যতামি।

নোরাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে বাড়ির দরজা পর্যন্ত নিয়ে এল সানজু আর আরও কয়েকটা তরুণী মিলে। সদর দরজার সামনে নিয়ে এসে থামিয়ে দিল। পাশ থেকে দামী শাড়ি গহনা পরিহিত একজন স্ত্রীলোক ঘোমটা তুলে দিল। তিনি অধীরের বড় ফুপু আছিয়া। ঘোমটা তুলে আবার নামিয়ে দিল। রোহিনীকে বলল

এসো এসো বড় বউ। তুমি ঘোমটা তুলে সবার আগে মিষ্টি খাওয়াও। দেখো বাপু এই সংসার ভাবির পর তোমাদের উপর। কোনো অশান্তি চাই না। মিলেমিশে থাকবা। নাও নাও মিষ্টি নাও।

রোহিনী নোরাকে মিষ্টিমুখ করিয়ে হেসে বলল

এই দেখো তুমি কাঁদছ কেন? এখানে সবাই তোমার আপনজন। এখানেই থাকতে হবে বাকি জীবন। এটাই তোমার বাড়ি।

নোরাহ গোলগোল চোখে সবার দিকে তাকালো একে একে। তারপর বাড়িটা। সবদিকে চোখ বুলিয়ে পরিবেষ্টন করে আসতেই যখন অধীরকে দেখতে পেল না তখন ভীষণ মন খারাপ হলো তার। মানুষটা তাকে এভাবে এতগুলোর মানুষের কাছে একা রেখে চলে গেল?

সবার মিষ্টিমুখ শেষে অধীর চলে এল। সে শেরওয়ানি পাল্টে সুতি পাঞ্জাবি পড়েছে। নোরা এবার একটু শান্তি পেল। আঁড়চোখে একবার দেখে আবার চোখ নামিয়ে নিল। আনতারা বেগম বললেন

আচ্ছা আচ্ছা অনেক হয়েছে। এবার ঘরে নিয়ে যাও তো দেখি।

নোরাহকে ধরে সবাই ঘরের পথে যাত্রা করতেই সবার পেছন থেকে রাশভারি গলার আওয়াজ ভেসে এল। সবার সাথে সাথে নোরাও খানিকটা ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো।

আরেহ অধীর! ওনাকে হাঁটিয়ে নিয়ে যাচ্ছিস কেন ভাই? এসব পড়ে উনি অতদূরে হেঁটে যেতে পারবে? সিঁড়ি বেয়ে উঠতে কষ্ট হবে।

রাহান বলল

ও নাকি লেংড়া বউ বিয়ে করেনি। তাই আমাদের দেখাচ্ছে ওর বউ হাঁটতে জানে।

সানজুও গলা মিলালো।

হ্যা ভাইয়া। দেখো আমিও বললাম সেটা। অধীর ভাই ভাবিকে কিন্তু কষ্ট দিচ্ছে।

অধীর চট করে সানজুর মাথায় চাটি বসিয়ে বলল

চুপ চুপ।

আহ মারলে কেন?

তানজীব চোখের ইশারায় বলল

কোলে নে।

অধীর পাঞ্জাবির হাত গুটিয়ে বলল

শালা আর্মি।

এপাশ ওপাশ মাথা নাড়ালো তানজীব ।

নোরাহকে চট করে কোলে তুলে নিয়ে হাঁটা ধরতেই তরুণ তরুণী সব হৈ হৈ করে উঠলো। মাথার উপর ফুল ছিটিয়ে দিল। নোরাহ লজ্জায় একদম গুটিয়ে গেল। একটুখানি অধীরের মুখের দিকে তাকানোর সময় অধীরও তাকালে ঘোমটা মুখের উপর টেনে দিল সে। উনি কি তার উপর রেগে টেগে আছেন এখনো?

অধীর তাকে ঘরে নিয়ে বিছানায় বসিয়ে দিল। নোরা ততক্ষণে চোখ বুলিয়ে নিয়েছে পুরো ঘরটাতে। ঘরটাতে নান্দনিক সব দামী আসবাবপত্রে ঠাঁসা। বেশিরভাগই নতুন বোঝা যাচ্ছে।

কিছুক্ষণ সবাই মুখ দেখাদেখি করে বিদায় হলো ঘরটা থেকে। সানজু এসে নোরার কানে কানে বলল

ভাবি আমরা কাল আসব আবার। কাল দেখা হবে কেমন?

নোরা মাথা তুলে চাইলো। মিনমিন করে বলল

মিনাও চলে যাচ্ছে?

সানজু হেসে বলল

হ্যা। আমরা সবাই চলে যাচ্ছি। বেশিদূর না। হেঁটে গেলে মাত্র দশ মিনিটের পথ। আর গাড়ি করে গেলে তো…

নোরা বলল

আচ্ছা। তাড়াতাড়ি এসো কেমন। মিনাকেও নিয়ে এসো।

আচ্ছা। আচ্ছা।

মাথা দুলিয়ে মিষ্টি হেসে সে চলে গেল। কি মিষ্টি একটা মেয়ে। তার বনুর মতো। ও হ্যা রাহাকে জানানো প্রয়োজন ছিল না?

নোরা ইতিউতি করে ফোনটা খুঁজতেই দেখলো তার ছোট মুঠোফোনটা টিপাটিপ শুরু করে দিয়েছে অধীর। ভুরু কুঁচকে পূর্ণমনোযোগ দিয়ে টিপছে। নোরা মিনমিন করে বলল

রাহাকে একটা ফোন….

সে অনেক আগে করেছি। সবাই আমাকে বেকুব ভাবে নাকি হ্যা?

নোরাহ মাথা নামিয়ে বিড়বিড় করল

এভাবে বলতে হয় নাকি?

ফুপী শ্বাশুড়ি দুজন এল। বলল

বৌমা রাত অনেক হয়েছে। কাল সবাই ঘুমুতে পারেনি। গয়নাগুলো খুলে মুখটা ধুঁয়ে একটু ঘুমানোর চেষ্টা করো। সকাল সকাল উঠে শাড়িটাড়ি আর মাথার চুলগুলো খুলবে আর কি।

সবাই যেমন বলল নোরার সেসব মেনে নিয়ে মাথা দুলালো। অধীর বলল

মানে কি? উনি এভাবে সারারাত কিভাবে থাকবে? এত ভারী শাড়ি পড়ে।

ছোট ফুপু নাছিমা বলে উঠলেন

সবাই ক্লান্ত। রাতও অনেক হলো। সকাল হতে বেশি…

নোরাহ বলে উঠলো

সমস্যা হবেনা ফুপু। থাকতে পারব।

ঠিক আছে। আমি বড় বউকে বলে রেখেছি, তোমাকে যাতে দুটো ভাত খাইয়ে দেয়। তারপর ঘুমিয়ে পড়ো। আমারও বাপু প্রেশার বেড়ে গেছে। আর বসতে পারছিনা। দুটো দিন ঘুম নেই চোখে। তারউপর তোমার বাপ জেঠা মিলে যা করলো। আমার ভাইটা মনের মতো বেয়াইবাড়ি পেল না। এসব টেনশনেও মরে যাচ্ছি।

অধীর কথা ঘুরানোর জন্য বলে উঠলো

যাও যাও ঘুমিয়ে পড়ো। তোমার আবার প্রেশার….

দাঁড়া বাপু কথা ঘুরাস না। তোর বউকে কয়টা কথা বলে যাই। শোনো বউ এই বাড়ির কোনো কথা তোমার বাপকে বলবানা। তোমার বাপ দাদা তো খুনখারাপি করে সেটা অস্বীকার করতে পারবানা। তাই যে যা বলে তা শুনে চুপ থাকবা। মনের মধ্যে কোনো খারাপ মতলব থাকলে সাবধান। বলা যায় না একই রক্ত। আহ ওসব ভাবতে ও পারিনা। কেমন অমানুষ, অমনভাবে দুটো মানুষকে মেরে দিল। আহা ছেলেমেয়ে দুটোর দিকে তাকালেও কষ্ট হয়। আমার কথায় কিছু মনে করোনা আবার। কান্নাকাটি করলে আবার তোমার বাপ জেঠা না ঝামেলা বাঁধায়।

উনারা বকবক করে চলে গেলেন।

অধীর নোরার দিকে তাকালো। ও মাথা নামিয়ে বসে আছে। কিছু বলতে যাবে তখনি রোহিনী ঘরে চলে এল। তার হাতে ভাতের প্লেট।

অধীর ভাই তোমার জন্যও নিয়ে এসেছি। দু’জন বসে খেয়ে নাও। ওদিকে ঝামেলা।

আমি খাব না । উনাকে দে।

কেন খাবেনা কেন? নোরা মুখ লুকিয়েছে কেন? এখনো কি কাঁদছে?

কথা কম বল। খাইয়ে দে উনাকে।

রোহিনী মাথা দুলিয়ে নোরার কাছে গেল। অধীর ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।

ভাত খাইয়ে দেওয়ার সময় নোরার চোখ বেয়ে অঝোর জল গড়াতে লাগলো। সে তা মুছতে মুছতে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টায় আছে । রোহিনী বলল

বাড়ির কথা মনে পড়ছে?

নোরা একটু মাথা দুলালো।

ওরকম সবারই হয়। একটু সবুর করো। দেখা হবে। আর কেঁদোনা।

রোহিনী তাকে খাইয়ে দিয়ে চলে গেল।

নোরাহ আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। চোখমুখ অস্বাভাবিকভাবে ফুলেছে। মুঠোফোনটা নিয়ে বাড়িতে ফোন দিতেই সবাই কেমন চাপা কান্নায় মেতে উঠলো। কেউ ভালো করে কথা বলতে পারছেনা। শেষমেশ রাহা জিজ্ঞেস করলো

এই আপা খেয়েছিস? ওদিকে সব ঠিকঠাক আছে?

নোরাহ মিনমিন করে বলল

হ্যা।

আপা কাঁদিস না। আমরা আসব তোর কাছে।

ফোন রেখে নোরা হু হু করে কেঁদে উঠলো। মেয়েদের জীবনটা এমন কেন? মা বাবা ভাইবোন সবাইকে ফেলে চলে আসতে হয়। সব মেনে নিতে হয়, মানিয়ে নিতে হয়।

আয়নার সামনে বসে মাথার ঘোমটাটা খুলে রেখে দিল সে। কেশগুচ্ছের উপর জড়ানো টিকলিটাও খুলে নিল। গলার হীরকসম্বলিত গহনা খুলতেই জঞ্জালমুক্ত হলো যেন। বুক ফুলিয়ে শ্বাস নিয়ে হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে গাল মুছে হাতের মোটা বালাগুলো খুলে নাকের নোলকে হাত দিল। চিনচিনে ব্যাথায় নাকমুখ কুঁচকে গেল তার। টনটনে শূলানিতে প্রাণ যায় যায় অবস্থা। তখনি কারো পায়ের আওয়াজ স্পষ্ট পেছনে। নোরাহ ফিরলো না। দরজা লাগিয়ে অধীর ধীরপায়ে হেঁটে তার পেছনে এল। আয়নায় চোখ দিয়ে গলা পরিষ্কার করে বলল

রাত বাড়ছে।

নোরাহ প্রত্যুত্তর করলো না। নাকের মস্ত নোলকটি ছুঁতেও গলা শুকিয়ে আসছে। নাকটা এত ব্যাথা!

অধীর এদিকওদিক হেঁটে হাতের ঘড়ি খুলতে খুলতে কয়েকবার তাকালো। দেখলো চোখবন্ধ করে নোরা নোলকটি খোলার চেষ্টায় রত। কিছুক্ষণ তাকিয়ে সে এগিয়ে গেল। বলল

কোনো সমস্যা?

নাহ।

নোরা দাঁড়িয়ে পড়লো। নোলকটি থাক। এভাবে থাকতে হবে।

পেছনে ফিরতেই দেখলো অধীর একদম কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়েছে। ঘোমটাবিহীন গয়না বিহীন নোরাকে দেখতে অন্যরকম লাগছে। সে নম্র গলায় বলল,

নাকের বাম পাশটা লালচে কেন?

ওসব কিছু না।

নোরা চলে যেতেই অধীর হাত টেনে আবার সামনে এনে একহাতের বাঁধনে বেঁধে নিল। গলার স্বর নরম করে বলল

আমাকে এড়িয়ে যাওয়াটা আমি পছন্দ করিনা।

নোরার দম বন্ধ অবস্থা। শুকনো ঢোক গিলে মানুষটাকে একবার চেয়ে নিল সে। যান্ত্রিক ফোনে বিদ্যমান থাকা মানুষটা তার এত কাছে। একটা বলিষ্ঠ হাতে তার মধ্যদেশ আগলে ধরে রেখেছে ভাবতেই নিংশ্বাস বন্ধ হয়ে এল প্রায়। অধীর মাথা একটু নিচে ঝুঁকালো। নোরার নাকের শূন্য দূরত্বে নিজের নাক রেখে বলল

আমি না হয় আপনার কেউ না। কিন্তু আপনি আমার অনেক কিছু। দ্রুত বলুন কি হয়েছে?

নোরাহ ফ্যাঁসফ্যাঁসে গলায় ফুঁপিয়ে বলে উঠলো

নোলকটা খুলতে গেলে ব্যাথা হচ্ছে। ওটা ওসময় একটু চেপে পড়ানো হয়েছিল তাই বোধহয়। আপনি আমার উপর রেগে আছেন?

হুমম।

নোরা কি বলবে খুঁজে পেলনা। ভাবতে ভাবতেই অধীরের অন্য হাত তখন তার নোলক ছুঁয়েছে। টনটনে ব্যাথায় চোখবন্ধ করে নিল সে।

কাতর স্বরে উচ্চবাচ্য করতেই অধীর বলল

এইতো হয়ে গেছে। আপনি এত ভীতু কেন?

নোরাহ ভয়ে ভয়ে চোখ খুললো। অধীর নোলকটি পকেটে রেখে নাকের উপর নিজের ওষ্ঠপুট ছুঁয়ে কোমল নারীশরীর পাঁজা খোলা করে কোলে তুলে শয়নস্থানে শায়িত করে বলল

আপনি ঘুমান। আমি ওখানটাতে আছি। কোনো সমস্যা হলে ডাকবেন। ঠিক আছে?

নোরাহ তৎক্ষনাৎ তার পাঞ্জাবির কলার চেপে ধরলো একহাতে। জড়ানো গলায় বলল

সমস্যা সবসময়। পাশে থাকুন।

নোরার আকস্মিক আচরণে কিছুক্ষণ চুপ করে চেয়ে রইলো অধীর। তারপর হাসলো মৃদু। বলল

আচ্ছা। শুধু পাশে নয় কাছেই থাকছি।

নোরাহ হেসে মুখ লুকিয়ে নিল বক্ষদেশে।

__________________

গালে হাত দিয়ে কিছুক্ষণে ভাইয়ের ঘুমন্ত মুখের দিকে চেয়ে রইলো মিনা। সেই কখন থেকে ডেকে যাচ্ছে। এখনে উঠার নামগন্ধ নেই। মিনা আবার ও ধাক্কালো পিঠে।

এই ভাইয়া উঠো। অধীর ভাই ফোন করে গালাগালি করছে। এক্ষুণি যেতে বলছে। এই ভাইয়া।

তানজীব ঘুমঘুম গলায় বলল

আরেকটু ঘুম।

না না। আর না। ডাক্তারও ঢুসে ঢুসে ঘুমোচ্ছে। সবাই মিথ্যেবাদী। আমাকে আর সানজুকে মিথ্যে বলার কি দরকার ছিল? বলেছ সকাল সকাল নিয়ে যাবে। বড় আপা ফোন করে এখন আমাকে বকছে। আমরা গেলে বড় আপাকে কাজে কিছুটা হেল্প করতে পারতাম । উঠো না। এই ভাইয়া…

তানজীব তার হাত টেনে মাথার নিচে দিয়ে বলল

মিনি চুপ চুপ। ভাইয়া ঘুমায়।

না না। মিনা অন্য হাত দিয়ে তানজীবের চুল টেনে দিল।

মনমরা হয়ে বসে থাকতে থাকতে হঠাৎ তার মাথায় বুদ্ধি এল। কুটিল হাসলো মিনা। তানজীবের মাথার চুল আলতো আলতো টানতে টানতে বলল

ভাইয়া আজকে প্রাণো আসতে পারে। আমার ভীষণ খুশি লাগছে।

তানজীব এবার শব্দ করলো না। চোখবুঁজে আছে। মিনা বলল

ভাইয়া প্রাণোর নাকি বিয়ে ঠিক আছে। ওর হবু বরটা হেব্বি দেখতে। আমি ছবিতে দেখেছি।

তানজীব এবারও কোনো শব্দ করলো না। জবর আর্মি অফিসারকে মিথ্যে গল্প শোনানো এত সহজ?
মিনা কানের ভেতর আঙুল ঢুকিয়ে সুড়সুড়ি দিতে দিতে বলল

এই আর্মি গাঁধা।

তানজীব সাথেসাথে চোখ খুললো।

আর্মি কখনো গাঁধা হয় না।

আচ্ছা আর্মিরা হয় সিংহ। ঠিক আছে?

তানজীব মাথা দুলালো। বলল

ওই বাড়িতে যে আসবে আসুক। মন্ত্রী আসলেও যেতে পারবিনা। ঘুমোতে দে।

মিনা নাকিসুরে কেঁদে কামড় বসালো তানজীবের হাতের কব্জিতে। তানজীব চিল্লিয়ে উঠে বলল

রাহান তোর রাক্ষসী বৌয়ের কান্ড দেখ।

রাহান এমনিতেই আসছিল। ঘুম ঘুম চোখে ঘরে ঢুকে তানজীবের পাশে শুয়ে পড়ে বলল

ভাই তোর বোন আমারেও শান্তি দেয় নাই। সানজুনি কানটা ফাটিয়ে দিল। বেয়াদব দুটো। উঠবো না আমরা। আরও ঘুম। টা টা মিনি।

মিনা মাথার বালিশ টেনে নিয়ে দু’জনকে মারতে মারতে বলল

ইননা। উঠো। মিথ্যেবাদী।

দুজনেই মার খেল। হাসলো। কিন্তু উঠলো না। তানজীব তার শেষমেশ হাতদুটো বড় রুমালটা দিয়ে বেঁধে দিয়ে বলল

রাহান ভালো করলাম না?

রাহান ফিক করে হেসে বলে উঠলো, ফাটিয়ে দিয়েছিস। বিবি সাহেবান এবার কি করবেন?

মিনা ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলল

আপনার মাথা ফাটিয়ে দেব।

তানজীব গলার ভেতর আওয়াজ করে হেসে উঠে বালিশে মুখ লুকিয়ে রাহানের গায়ের উপর পা তুলে ঘুমোতে ঘুমোতে বলল

সো স্যাড রাহান। তোর বিবি তোর মাথা ফাটায় দিবে।

মিনা ফোঁপাতে ফোঁপাতে চলে গেল।

__________________

মিষ্টির কার্টুন, নাশতার বড় বড় বক্স, পানসুপারির প্যাকেট, আর নানান মিষ্টান্নের প্যাকেটগুলো গাড়িতে তোলা হচ্ছে। সাথে ভাত মাছ মাংসের বড় বড় এলুমিনিয়াম সসপ্যানগুলোও। বিশাল আয়োজন করে মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে যাচ্ছেন আমজাদ কবির। কোনোকিছু কমতি রেখেছে কেউ যাতে তা বলতে না পারে।

সবাই সেজেগুজে ইতোমধ্যে প্রস্তুত। নাইরা গুটিগুটি পায়ে দাঁড়িয়ে হাঁটার চেষ্টা করছে এক পা এক পা করে। কয়েক পা হেঁটে ধপাস করে আবারও পড়ে যাচ্ছে। কাকাতুয়া পাখিটা উড়ছে তার আশেপাশে।
চেয়ারম্যান সাহেব সেটিকে ধরে খাঁচায় বন্দি করে নাইরাকে কোলে তুলে নিল। আদর করে বলল

দাদুমণি ফুপুর কাছে যাবে?

নাইরা দাঁড়ি টেনে দিয়ে চিকন গলায় বলল

নুলাআ ফিপপি?

হ্যা, নুলা ফিপপি আর কি।

রাহা ছুটে ফোন হাতে নিয়ে। বলল

মা আসেন। ফিপপি ফোন দিয়েছে। কথা বলেন।

রাহা তাকে কোলে নিয়ে চলে গেল। নাইরা ফোনটা দু’হাতে ধরে কানের নিচে চেপে ধরে বলল

ফিপপি…

নোরাহ ওপাশ থেকে হাসলো। বলল

কেমন আছে আমার মা’টা?

ওততো ফিপপি, আম্মা আব্বুই..

আরও কত কথা বলে ফেলল সে। নাইরার সাথে কথা বলা শেষে নোরাহ শাড়িটা সামলে সোফা থেকে উঠে দাঁড়ালো। ফুপুদের বলল

ওখানে আছি।

তারা সায় দিল।

নোরাহ হেঁটে রাহার সাথে কথা বলতে বলতে কিছুদূর যেতেই পেছন থেকে পরিচিত একটা গলার আওয়াজ ভেসে এল।

মন্ত্রী ব্যারিস্টার আসছে। আর আমাকে উপস্থিত থাকতে হবে। চট্টগ্রাম ছেড়ে চলে আসতে হলো বিয়েতে। এখন ঘুম রেখে এখানে। মানে শান্তি নেই। মিনি দেখ কামড়ে কি অবস্থা করেছে। মন্ত্রী ব্যারিস্টারদের সাথে তার দেখা করা চাই। চাচ্চুদের ধমকাধমকি কে শোনে? কোথায় তুই?

অধীর হেসে বলল

আসছি। দাঁড়া একটু।

নোরা পেছনে ফিরে তানজীবকে দেখে হা করে চাইলো। কান থেকে ফোন নামিয়ে নিল ততক্ষণে। তানজীব ও চমকে গিয়েছে তাকে দেখে। তবে চেহারায় তা না ফুঁটিয়ে ভুরু উঁচিয়ে জানতে চাইলো

কি অবস্থা?

নোরাহ মিষ্টি হেসে মাথা দুলালো। বলল

ভালো। আপনি কি চলে যাবেন?

হ্যা যেতেই হবে। কাজ আছে।

তানজীব চলেই যাচ্ছিল।

নোরাহ ডাক দিল।

ভাইয়া!

তানজীব ঘাড় ঘুরিয়ে চাইলো।

বলো।

একটা অনুরোধ করি?

হুহ।

আজকে থাকেন। অনুরোধ। যাবেন না প্লিজ। যদি চলে যান তাহলে ভেবে নেব…..

দেখি। চেষ্টা করব।

বলেই তানজীব উল্টোপথে চলে গেল। নোরাহ হেসে ফোন কানে দিল। রাহা বলল

আপা মন্ত্রী ব্যারিস্টার কি আমাদের বললো নাকি?

হুমম। তা তো দেখছি।

চরম অসভ্য লোকটা।

নোরাহ হেসে উঠলো।

চলবে……

রিচেক করা হয়নি….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here