বৃষ্টিময়_প্রেম #পর্বঃ৩,০৪

0
1293

#বৃষ্টিময়_প্রেম
#পর্বঃ৩,০৪
#লেখনীতে- তাসফিয়া হাসান তুরফা
০৩

বিছানায় বসে বসে রাইসার বকবক শুনছি। কালকে রেস্টুরেন্ট যাওয়ার প্ল্যান ক্যান্সেল হয়েছে শুনার পর থেকেই সে ভীষণ রেগে আছে। তবে এই রাগটা প্রান্তের উপর না, তার ভাইয়ের উপর মানে পূর্ণ ভাইয়ার উপর। কেন তাকে কালকেই মিটিং করতে হবে এটা ভেবেই ফুসছে আর একটু পরপর বকা দিচ্ছে পূর্ণ ভাইয়াকে।

— ভাসুরও পাচ্ছি একটা বটে! নিজে তো আনরোমান্টিক ব্যাটা, এখন আমার প্রান্তকেও আনরোমান্টিক বানিয়ে ফেলতে চাচ্ছে।

রাইসার কথা শুনে আমি অবাক হয়ে গেলাম! একদিনের পরিচয়েই প্রান্তকে “আমার প্রান্ত” বলছে! আবার ও কিভাবে বুঝলো প্রান্ত রোমান্টিক আর পূর্ণ ভাইয়া আনরোমান্টিক? এটা আমি বুঝলাম না। তাই গোলগোল চোখে ওকে প্রশ্ন করলাম,

— একদিনের মধ্যেই “আমার প্রান্ত”? বাব্বাহ! একটু বেশিই ফাস্ট যাচ্ছিস না তুই? তাছাড়াও তুই কিভাবে জানলি প্রান্ত ভাইয়া রোমান্টিক? আর পূর্ণ ভাইয়া যে আনরোমান্টিক এটাও বা কি করে জানলি? (ভ্রু কুচকে)

আমার কথা শুনে রাইসা হঠাৎ করে চুপ হয়ে গেলো। ধরা পড়া চোরের মতো ভেটকি হেসে ঢোক গিললো। ওর মুখ দেখেই আমি বুঝতে পাচ্ছি এর মধ্যে অন্য কোন কাহিনি আছে। তাই চুপচাপ উঠে দরজা লাগিয়ে দিয়ে একদম ওর সামনে হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলাম,

— দরজা লাগিয়ে দিয়েছি, বাসার কেউ শুনবেনা।
আসল কাহিনি কি তুই আমাকে খুলে বলতে পারিস।

— ক-কাহিনি? কিসের কাহিনি? আমি তো কোন কাহিনি করিনি। (ভয় পেয়ে)

— আমি কি বলেছি তুই নিজে কাহিনি করেছিস? তুই তো নিজ মুখেই স্বীকার করলি তোর মনের কথা। এখন সত্যি সত্যি আমায় বল আসল কথা। আমার কিন্তু আর তর সইছেনা। তুই না বললে আমি যেয়ে আন্টিকে বলে দিবো।

আন্টির কথা দেখে রাইসার মুখ চুপসে গেলো। বুঝলাম তীর সঠিক নিশানায় লেগেছে। এইবার ওর থেকে সবকিছু শুনা যাবে! যা ভাবনা সেই কাজ।
ও প্রথমে কিছুটা ইতস্তত করলেও পরে সবকিছু খুলে বললো আমায়। ওর কথা শুনে যা বুঝলাম তা হলো ও আর প্রান্ত ভাইয়া একি ভার্সিটিতে ছিলো। সেখানেই তাদের দেখা-পরিচয়। ভাইয়া ওদের সিনিয়র, এইবার ভার্সিটি থেকে বের হয়েছেন। আর রাইসা বয়সে আমার প্রায় সমবয়সী হলেও ক্লাসের দিক দিয়ে আমার এক ক্লাস বড়। আমি এইবার ভার্সিটিতে ঢুকবো আর ও অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে উঠবে!

সে যাই হোক, বাড়ির মেয়ে সবার নাকের নিচ দিয়ে এতদিন চুটিয়ে প্রেম করলো আর আমরা কেউ জানতেও পারলাম না! আমার তো ভাবতেই অবাক লাগছে এতদিন কারও ওর উপর বিন্দুমাত্র সন্দেহ হয়নি আর ও প্রেম করে নিজের বিয়ে পর্যন্ত ঠিক করে ফেললো!! সাংঘাতিক ব্যাপার।

আমাকে অবাক হতে দেখে রাইসা দাত কেলিয়ে হাসলো। ভাবটা এমন যেন বলতে চাইছে “কি চান্দু? চমকে দিলাম তো?”
হঠাৎ রোমান্টিকতার কথা মাথায় আসতেই দুষ্টুমি খেলে গেলো আমার মাথায়। শয়তানি হেসে প্রশ্ন ছুড়লাম ওর দিকে,

— প্রান্ত ভাইয়া যে রোমান্টিক সেটা তুই কেমন করে জানিস, বোন? কি রোমান্টিকতা করেছে ভাইয়া তোর সাথে? (বাকা হেসে)

আমার প্রশ্ন শুনে রাইসার হাসি উড়ে গেলো। লজ্জায় লালচে আভা ধারণ করেছে বেচারির মুখ। ওর মুখ দেখে আমার হাসি পেলেও ওর সাথে কিছুক্ষণ গুতাগুতি করলাম ওকে ক্ষেপানোর জন্য! পরে ও প্রসংগ বদলে হঠাৎ বলে উঠলো,

—জানিস তুরফা, প্রান্ত যেইরকম প্রানোচ্ছল পূর্ণ ভাইয়া ঠিক তার বিপরীত। উনি কেমন জানি গম্ভীর স্বভাবের এক মানুষ! হাসিঠাট্টার সাথে তার যেন লেনদেনই নাই। অনেক বিয়ের প্রপোজাল নাকি এসেছে উনার জন্য কিন্তু উনি নাকি এখনও বিয়ের জন্য প্রস্তুত নন! সারাদিন শুধু কাজ আর কাজ! প্রান্তের থেকে শুনেছি সবাই যখন সকালবেলা ঘুমে কাদা হয়ে থাকবে তিনি সেখানে ভোরে উঠে জগিং করতে যাবেন, রাতে সবাই যখন ঘুমাতে যায় উনি তখন অফিস থেকে আসেন। আবার পরিবারের সবাই যখন আড্ডা দেয় উনি সেখানেও অফিসের লোকদের সাথে কথা বলবেন ফোনে। এটা কি স্বাভাবিক মানুষের মতো আচরণ হলো বল? তার সবকিছুই খুব অদ্ভুত। একদিন নাকি প্রান্তকে বকাও দিয়েছেন রাত জেগে আমার সাথে কথা বলার জন্য। আসলে উনি কি মানুষ না রোবট আমি না ঠিক বুঝতে পারিনা জানিস!!

বিরক্তির সাথে বললো রাইসা। ওর মুখ দেখে হাসি পেলো আমার। মুখ টিপে হাসলাম আমি। আমাকে হাসতে দেখে ও বললো,

— তুই হাসছিস, তুর? জানিস আমার না মাঝেমধ্যে মনে হয় না জানে কে সেই হতভাগী যার কপালে তিনি আছেন! তার মতো আনরোমান্টিক, বোরিং, রাগী লোকের বউ হওয়ার মতো কস্ট এই দুনিয়ায় আর কি হতে পারে!! (হতাশ গলায়)

আমিও ওর কথায় সায় দিয়ে মাথা নাড়লাম। আসলেই তো! এইরকম লোকের সাথে সংসার করা যায় নাকি? না না, তার প্রতি আমার মনকে কোনভাবেই গলতে দেওয়া যাবেনা। আমি ভুলেও সেই হতভাগী হতে চাইনা, এমনিতেই আমার জীবনে অনেক দুঃখ, সেটাকে আর বাড়াতে চাইনা বাবা!!
আমি এসব ভাবছিলাম আর রাইসা ফোন টিপছিলো। হঠাৎ করে ওর হালকা স্বরে উচ্ছ্বাস শুনতে পেলাম আমি। ওর দিকে তাকাতেই মনে হলো যেন ফোনে কাউকে দেখে এইরকম রিয়াকশন দিয়েছে!

আমি ওর দিকে একটু এগিয়ে গিয়ে ওর ফোনের স্ক্রিনে তাকাতেই আমারও চোখ বড় হয়ে গেলো। একি? এটা তো পূর্ণ ভাইয়া! নতুন ছবি আপলোড দিয়েছেন মনে হয়। ব্লু স্যুটের সাথে ব্ল্যাক সানগ্লাস পড়ে রীতিমতো নায়কদের মতো লুক! কি যে মারাত্মক লাগছে তাকে দেখতে! রাইসার দিকে তাকিয়ে দেখি ও এখনও রীতিমতো হা করে দেখছে তার ছবি!! ওর চাহনি দেখে বোকা বনে গেলাম।

একটু আগেই সে যার বদনাম করে কুল পেলোনা, তার ছবি এইভাবে দেখার কোন মানে খুজে পেলাম না!! তাই ওর মাথায় চটকানি মেরে চোখের ইশারায় জিজ্ঞেস করলাম, ও ধরা পড়ে ভেটকি মার্কা হাসি দিয়ে মাথা চুলকাতে লাগলো। তারপর বললো,

—দেখ, পূর্ণ ভাইয়ার নামে আমি যতই কিছু বলিনা কেন এইটা তো মানতেই হবে যে তিনি দেখতে কতটা হ্যান্ডসাম!! যদি আমি প্রান্তকে না ভালোবাসতাম আর পূর্ণ ভাইয়া এতটা বেরসিক না হতেন তবে এতদিনে অবশ্যই উনাকে পটিয়ে বিয়ে করতাম আমি! (হাসতে হাসতে বললো)

ওর কথা শুনে আমি ভ্রু কুচকে বললাম,
—ছি!! নিজের হবু ভাসুরের সম্পর্কে এমন কথা বলতে পারলি তুই? দাড়া, প্রান্ত ভাইয়াকে বলে দিব?

আমার কথা শুনে রাইসা মুখ বাকালো। তারপর ফোন নিয়ে আমার পাশে বসে বললো,

—আরে ধুর, শুধু আমিই না, যাস্ট দেখ তার ছবিতে কত্তগুলা কমেন্ট! বেশিরভাগই মেয়েদের। লুচু মেয়েরা যতসব, সুন্দর ছেলের ছবি দেখলেই হা করে তাকিয়ে থাকে!!
ওর কথা শুনে খুব হাসি পেলো আমার। ও নিজেও তো এতক্ষন একি কাজই করলো। এখন আবার মেয়েগুলোকে বকছে!!

রাইসার চোখ ফাকি দিয়ে আড়চোখে উনার ছবি আরেকবার দেখে নিলাম আমি! অজান্তেই ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি চলে এলো আমার। কিন্তু পরক্ষণেই তার কঠোর ব্যক্তিত্বের কথা মনে হতেই ভয়ে আমার ভালোলাগা জানালা দিয়ে পালালো!
না বাবা! কিছুতেই তারদিকে তাকানো যাবেনা আর। তিনি শুধু আমার বোনের হবু ভাসুর ছাড়া কিছুই নন। আর তাছাড়াও তার মতো প্রতিষ্ঠিত-যোগ্য ছেলে অবশ্যই তার মতোই একটা যোগ্য মেয়ে ডিজার্ভ করেন। যেখানে তার ধারেকাছেও আমি নেই, সেখানে এক সামান্য বৃষ্টিময় মুহুর্তের কারণে তার প্রতি কোন দুর্বলতা আসতে দেওয়া যাবেনা আমার মনে!!

এসব ভেবে নিজের মনকে বুঝিয়ে নিজ রুমে পড়তে চলে এলাম আমি। রাত অনেক হয়েছে। কালকের দিনটা পুরোটাই ব্যস্ততায় কেটে যাবে আমার। পরীক্ষাও আছে আবার কলেজে। এমনিতেই এখন পড়ালেখায় ফোকাস করাটাই বেশি দরকার আমার। তাই অন্যকিছু ভাবার সময়ও নেই আর!
_______

ড্রয়িংরুমে বসে আছি। রাইসা ওর রুমে রেডি হচ্ছে সকাল থেকে। অবশেষে আজকে প্রান্ত ভাইয়ার সাথে দেখা করতে যাচ্ছে বেচারি। কালকের দিনটা খুব দ্রুত কেটেছে আর কাল পরীক্ষা হয়েছে বলে আজ কলেজও ছুটি দিয়েছে। বাইরে মেঘলা আকাশ, আন্টি খিচুড়ি রান্না করছেন। সেই খুশিতে আমি সোফায় বসে টিভি দেখছি।

অবশেষে রাইসা বের হয়ে আসলো রুম থেকে। আন্টিকে জানিয়ে বাসা থেকে বের হতে যাবে এমন সময় আন্টি রান্নাঘর থেকে এসে বললেন,

—কি রে, তুই একা বের হচ্ছিস কেন? তুরফা যাবেনা তোর সাথে??

আন্টির কথা শুনে আমরা দুইজনই বোকা বনে গেলাম! আমি কেন যাব ওর সাথে? তাই বিস্ময় চেপে না রাখতে পেরে জিজ্ঞেস করলাম,

—আমি কেন যাবো, আন্টি? ওরা দুইজন কথা বলবে, আমি সেখানে কাবাবে হাড্ডি হয়ে কি করবো? (দুষ্টু হেসে)

আন্টি আমার দিকে চোখ পাকিয়ে তাকাতেই আমার হাসি উড়ে গেলো। বুঝলাম আমার কথা তার পছন্দ হয়নি। তাই তিনি বললেন,

—এখনও ওদের বিয়েটা হয়নি। আর আজকেই যেহেতু প্রথম দেখা তাই রাইসাকে একা পাঠাতে ভরসা পাচ্ছিনা আমি। তুই যা না একটু ওর সাথে, মা। আমার মন টানছেনা ওকে একা পাঠাতে।

আন্টির কথা শুনে বুঝলাম উনি যেহেতু জানেন না রাইসার রিলেশনের কথা তাই ভাবছেন আজকেই প্রথম দেখা হবে ওদের। মায়ের মন বলে কথা, এইজন্যই একা পাঠাতে চাচ্ছেন না। রাইসার দিকে তাকিয়ে দেখি ও করুণ চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। বুঝলাম সে বেচারিও মাকে কিছু বলতে পাচ্ছেনা। আমাদের চাওয়া-চাওয়ির মাঝেই আন্টি আমাকে দ্রুত রেডি হয়ে আসার তাগিদ দিলেন।

—কি রে, তুর? দাঁড়িয়ে আছিস কেন? তাড়াতাড়ি যা রেডি হয়ে আয়। দেরি হয়ে যাবে আবার তোদের।

অতঃপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে চুপচাপ গেলাম রেডি হতে। তাড়াতাড়ি রেডি হয়েই বের হলাম রাইসার সাথে। দুজন রিকশায় উঠার পর ও কিছু বলার আগেই আমি বললাম,

—তুই চিন্তা করিস না। আমি তোদের কাবাবে হাড্ডি হবোনা। তোরা রেস্টুরেন্টে গল্প করিস, আমি না হয় কোন ফ্রেন্ডের বাসায় যাবোনি। আসার সময় একসাথে বাসায় যাবো আন্টি কিছু বুঝবেনা।

আমার কথায় রাইসা প্রথমে অবাক হয়ে গেলো তারপর হেসে মাথা নাড়লো। বুঝলাম আমার বুদ্ধি ওর পছন্দ হয়েছে। আমার হাতের উপর হাত রেখে ধন্যবাদ জানালো, আমিও হাসলাম ওর সাথে!
_______

রেস্টুরেন্টের ভেতর ঢুকতেই দেখি মানুষ গিজগিজ করছে। বসার জায়গা পাওয়া যাবেনা ভাবতে ভাবতেই প্রান্ত ভাইয়ার দেখা পাওয়া গেলো। আমাদের দেখে এগিয়ে এলেন তিনি। বলা বাহুল্য, আমাকে দেখে তিনি অবাক হলেন। তিনি ভাবেননি আমিও আসবো এখানে! ইতস্তত হেসে নিজের পরিচয় দিতে যেতেই উনি হালকা হেসে বললেন,

—তুমি তুরফা, রাইট?

আমি অবাক হলাম তার কথা শুনে। মাথা নাড়লাম হালকা হেসে। ভাবতে লাগলাম তিনি কিভাবে জানলেন আমি কে? আমার মুখ দেখে তিনি হয়তো বুঝলেন আমি কি ভাবছি। তাই বললেন,

—কি ভাবছো আমি কিভাবে তোমায় চিনলাম? আরে তোমার বোনের কাছেই শুনেছি। ও যেরকম বর্ণনা দিয়েছিল তুমি আসলেই ঠিক তেমন। আর তোমাদের বাসায় কে আছে না আছে ও সব বলেছে আমায়। তাইতো কাল ফোনে প্রথমবার তোমার কন্ঠ শুনেই আমি ভাইয়াকে বলছিলাম এটা রাইসা নয়, নিশ্চয়ই তুমি হবে।

প্রান্ত ভাইয়ার কথা শুনে আমার মাথা ঘুরা শুরু হলো। কাল কন্ঠ শুনেই বুঝলো ওটা আমি আবার আজ প্রথমবার দেখেই চিনে ফেললো। এরা মানুষ না জাসুস? বাপরে!!

আমার চিন্তাভাবনার মধ্যেই ওরা দুইজন হাটা শুরু করলো রেস্টুরেন্টের দিকে। তাদের অনুসরণ করে আমিও গেলাম পিছু পিছু। গিয়ে দেখি রেস্টুরেন্টের ভিতরে সুন্দর এক কর্ণারে দুইজনের বসার ব্যবস্থা করা আছে। এই জায়গাটায় ভীড় নেই বললেই চলে! বেছে বেছে ভালো জায়গাই চয়েস করেছেন ভাইয়া!

কিন্তু একি! তাদের চেয়ারে এক লোক বসে আছে কেন? বসে থেকে খুব মনোযোগ দিয়ে ম্যাগাজিন পড়ছে। আমি ভ্রু কুচকে সেদিক তাকিয়ে থাকলাম। প্রান্ত ভাইয়া এগিয়ে যেয়ে “ভাইয়া” বলে ডাকতেই লোকটি আমাদের দিকে তাকালো। তাকে দেখে চমকে গেলাম আমি, আমার সাথে অবাক হলো রাইসাও! আশ্চর্য!! পূর্ণ ভাইয়া এখানে? উনি আবার কি করতে এসেছেন রেস্টুরেন্টে??

আমাদের দেখে ম্যাগাজিন টেবিলে রেখে এদিকে এগিয়ে আসতে লাগলেন তিনি। তার গম্ভীর মুখ দেখে তার ভিতরের রিয়াকশন কি আমি বুঝতে পারলাম না। কিন্তু উনার এগিয়ে আসা প্রত্যেকটি কদমের সাথে তালে তালে আমার হৃদস্পন্দনের উঠা-নামা করাটা ঠিকই টের পেলাম আমি!!

#চলবে

#বৃষ্টিময়_প্রেম
#পর্বঃ৪
#লেখনীতে- তাসফিয়া হাসান তুরফা

আমাদের থেকে কয়েক হাত দূরে এসে দাড়ালেন পূর্ণ ভাইয়া। চোখে সানগ্লাস থাকায় তার দৃষ্টি কোনদিকে বুঝা মুশকিল। এই মেঘলা দিনে সানগ্লাস পড়ে বের হওয়ার লজিক কি হতে পারে আমি বুঝলাম না! ঢং যত্তসব!! উনি চোখ থেকে গ্লাস খুলে রাইসার দিকে তাকিয়ে বললেন,

—কেমন আছো? আশা করি সেদিন প্ল্যান ক্যান্সেল করার জন্য মাইন্ড করোনি। ইম্পর্ট্যান্ট মিটিং ছিলো।

উনার কথা শুনে রাইসা মুখে জোরপূর্বক হাসি ফুটিয়ে মাথা নেড়ে সায় দিলো যে ও একদম কিছু মনে করেনি! ওর রিয়াকশন দেখে আমি আড়চোখে ওর দিকে তাকালাম আর সেদিনের পূর্ণ ভাইয়াকে বকা দেওয়ার কথাগুলো মনে করে মুখ টিপে আলতো হাসলাম। আহা বেচারি!

হঠাৎ পূর্ণ ভাইয়া আমার দিকে তাকালেন। নিজের উপর তার দৃষ্টি উপলব্ধি করতেই আমার হাসি আপনাআপনিই মিলিয়ে গেলো। উনি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। তার চাহনি দেখে আমিও ভ্রু কুচকে তাকালাম। এভাবে দেখছেন কেন? উনার কি মনে পড়ছে সেই বৃষ্টির দিনের কথা?

সেদিনের কথা মনে হতেই আমার গাল গরম হয়ে গেলো। নিজের অস্বস্তি ঢাকতে কাশতে শুরু করলাম আমি। তা দেখে পানি এগিয়ে দিলেন প্রান্ত ভাইয়া। পানি খেয়ে আড়চোখে তাকিয়ে দেখি পূর্ণ ভাইয়া এখনও একিভাবেই ভ্রু তুলে তাকিয়ে আছেন। আজব তো! সমস্যা কি উনার বুঝলাম না।

—ওকে, তোমরা থাকো। ইনজয় করো। আমি চলে যাই এখন। অফিস থেকে আসার পথে গাড়ি নস্ট হয়ে গিয়েছিল তাই প্রান্তর সাথে বসে ছিলাম এখানে। গাড়ি রিপেয়ারিং এ পাঠিয়েছি। এতক্ষণে ঠিক হয়ে যাওয়ার কথা, আমি আসি তাহলে।

রাইসা আর প্রান্ত ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললেন উনি এসব কথা৷ আর আমাকে এমনভাবে ইগ্নোর করলেন যেন আমি নেই এখানে। তারপর সানগ্লাস পড়ে পকেট থেকে ফোন বের করে কানে ধরে বের হয়ে গেলেন রেস্টুরেন্ট থেকে। তার ভাব নেওয়া দেখে তাজ্জব হয়ে গেলাম!! ছেলেমানুষেরও এত ভাব হয়!

ওরা দুইজন চেয়ারে বসতেই আমি যাওয়ার জন্য ইতস্তত করতে লাগলাম। চোখ দিয়ে রাইসাকে ইশারা করতেই ও বুঝলো কি বলতে চাইছি তাই প্রান্ত ভাইয়াকে খুলে বললো আমার আসার কারণ। শুনে ভাইয়া আমাকে ধন্যবাদ দিলেন তাদের সাপোর্ট করার জন্য। প্রান্ত ভাইয়ার থেকে জানতে পারলাম তার ফ্যামিলির সবাই জানতো তাদের প্রেমের কথা, তখন বুঝলাম শুধু রাইসাই এতদিন বাসায় বলেনি ভয়ে। এইজন্য এরেঞ্জ ম্যারিজের মতো পরিকল্পনা করেছেন তারা! যাই হোক, ওদের রেখে আমিও চলে আসলাম রেস্টুরেন্টের বাইরে। ভাইয়া যদিও কয়েকবার বললেন তাদের সাথে বসতে, তাদের কোন প্রব্লেম নেই আমি থাকায়। কিন্তু আমি তাও চলে আসলাম। কারও কাবাবে হাড্ডি হওয়ার সত্যিই কোন ইচ্ছা নেই আমার!

বের হয়ে আমার সময় দোয়া করলাম যেন পূর্ণ ভাইয়ার সামনে না পরি আর! উনার ভাব দেখে এমনিতেই মেজাজ খারাপ হয়েছে আমার, আর দেখতে চাইনা তাকে। বাইরে বের হয়ে তাকে দেখতে না পেয়ে মনে মনে খুশিই হলাম। আকাশটাও গুড়গুড় করা শুরু করেছে এতক্ষণে!

রিকশা নেওয়ার জন্য তাড়াতাড়ি মেইনরোডের দিকে এগিয়ে গেলাম আমি। এমনিতেই ছাতা নিয়ে বের হইনি, তার মধ্যে আমি একা বৃষ্টিতে ভিজলে বাসায় যেয়ে আন্টিকে জবাব দিতে হবে! তাই আশেপাশে তাকিয়ে রিকশা খুজছিলাম আর দোয়া করছিলাম যেন বৃষ্টি না আসে! কিন্তু ত্রিসীমানায় রিকশার টিকিটাও খুজে পেলাম না! মামারা সব মনে হয় নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছে বাসায় আকাশে মেঘ দেখে! হাতের উপর দুই-এক ফোটা পানি পড়তেই আমার ভাবনায় ছেদ পড়লো। সেড়েছে আজ! বৃষ্টি পড়া শুরুও হয়ে গেছে! আশেপাশে তাকালাম, তেমন দোকান চোখে পড়লোনা এদিকটায় আশ্রয় নেওয়ার মতো। একটা দোকানের শাটার লাগানো তবে বাইরে ছাউনির মতো কিছুটা জায়গা আছে দাঁড়ানোর!

বৃষ্টির বেগ বাড়ছে দেখে সাত-পাঁচ না ভেবে দৌড় লাগালাম সেদিকে। জীর্ণশীর্ণ ছাউনির নিচে আটসাট হয়ে দাঁড়িয়ে আছি আমি। এমনিতেই চিপা জায়গা, বেশি স্পেস নেই তারমধ্যে জনমানবশূন্য চারদিকে। এইদিকে বৃষ্টি যে শুরু হলো মনে হচ্ছে সহজে থামবেনা,বরং সময়ের সাথে সাথে বেড়েই চলেছে যেন! এমন গা ছমছম করা পরিবেশে আমার ধীরে ধীরে ভয় লাগতে শুরু করলো। আশেপাশে তাকিয়ে দোয়াদরুদ পড়তে লাগলাম আর বৃষ্টি থামার জন্য দোয়া করতে লাগলাম। এমন সময় দূর থেকে এক পুরুষের কন্ঠস্বর ভেসে আসতেই ভয়ে আমার হাত-পা কাপতে আরম্ভ করলো। কে কথা বলছে আর এদিকেই বা কেন আসছে? যদি আমাকে একা পেয়ে আমার সাথে কিছু করার চেস্টা করে? বিশ্রী সব উল্টাপালটা চিন্তায় মাথা পুরা হ্যাং হয়ে গেলো আমার! দরদর করে ঘামতে লাগলাম আমি।

—হ্যালো,, হ্যাঁ, আপনি শুনতে পাচ্ছেন?? আমি মেইনরোডের আশেপাশেই আছি। এখানে একটা ছাউনি দেখতে পাচ্ছি। আপনি এদিকেই গাড়ি নিয়ে আসুন, রাস্তা থেকেই দেখতে পাবেন আমায়। ওকে? কাম ফাস্ট!!

পরিচিত কন্ঠ শুনেই চমকে উঠে ছাউনি থেকে উকি দিলাম আমি! আরেহ এটা তো পূর্ণ ভাইয়া। বৃষ্টিতে ভিজে জবুথবু হয়ে আছেন! কালো শার্ট শরীরের সাথে লেপ্টে আছে, এক হাতে স্যুট ঝুলিয়ে রেখেছেন ও আরেকহাতে ফোন। মুখে প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে রাস্তায় পড়ে থাকা একটুকরো ইটকে লাথি মেরে ছাউনির দিকে এগিয়ে আসতে লাগলেন উনি। উনাকে এদিকে আসতে দেখেই আমি তড়িঘড়ি করে মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিক হয়ে দাড়ালাম।

—“তুমি??”

উনার বিস্ময়মিশ্রিত কণ্ঠ শুনে আস্তে করে ঘাড় ফিরিয়ে দেখি উনি এতক্ষণে ছাউনির ভেতর এসে দাঁড়িয়েছেন। আমাকে এখানে দেখে যেন আকাশ থেকে পড়েছেন এইভাবে তাকিয়ে আছেন! তার দৃষ্টিকে পাত্তা না দিয়ে ছোট্ট করে “হুম” বলেই অন্যদিক তাকালাম আমি। ভাব কি তিনি একাই দেখাতে পারেন? আমিও পারি! হুহ!!

উনার কাছে থেকেও আর কিছু শুনা গেলোনা। যাক ভালো হয়েছে! আড়চোখে দেখলাম রুমাল দিয়ে ফোন মুছে হাত এদিক-সেদিক করে সিগনাল পাওয়ার ট্রাই করছেন তিনি। তার থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে মনে দোয়া পড়া চালিয়ে গেলাম বৃষ্টি থামার জন্য। এখন বৃষ্টির চেয়ে উনার সাথে এইরকম অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে থাকতে বেশি বিরক্ত লাগছে আমার!
হালকা রঙের জামা পড়েছি বিধায় বৃষ্টিতে ভিজতে পাচ্ছিনা নয়তো এতক্ষণে ভিজে ভিজেই বাসায় চলে যেতাম এই বৃষ্টির মধ্যেই! আমার ভাবনা শেষ না হতেই প্রচন্ড জোরে বিদ্যুৎ চমকে উঠলো আকাশে৷ হঠাৎ করে শব্দ হওয়ায় বেশ জোরেশোরেই কেপে উঠলাম আমি। চোখবন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস নিলাম কিছুক্ষণ! এক চোখ খুলে আকাশের দিক তাকিয়ে দেখি এখনও আলোর ঝলকানি দেখা যাচ্ছে, যেটা দেখে আরও বেশি ভয় লাগলো আমার! মনে হচ্ছে এই যেন বিদ্যুৎ এসে ঝলসে দিয়ে যাবে আমাকে। উনার দিকে তাকিয়ে দেখি তিনি একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন আকাশের দিকে। উনার কি ভয়-ডর লাগেনা নাকি? আল্লাহই জানে!

পুনরায় চোখ বন্ধ করে আবারো মেঘের বিশাল গর্জন শুনার প্রস্তুতি নিতে থাকলাম মনে মনে। একটু পর আকাশের গর্জন শুনে কেপে উঠে আবারও ভয়ে ভয়ে চোখ খুলতেই চোখের সামনে অন্ধকার দেখলাম! আরেহ! আকাশ দেখা যাচ্ছেনা কেন?

ভালোকরে খেয়াল করে বুঝলাম আমার সামনে পূর্ণ ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছেন। তার বিশালাকৃতির দেহের জন্যই আমি আকাশ দেখতে পাচ্ছিনা! উনি আবার সামনে কখন আসলেন? আর কেনই বা আসলেন? ভাবতে ভাবতেই পাশ থেকে উকি দিতে যাচ্ছিলাম তার মতিগতি বুঝার জন্য এমন সময় উনি হঠাৎ পিছন ফিরলেন। তার পেছন ফেরা আমি আশা করিনি তাই ভ্যাবাচেকা খেয়ে পড়ে যেতে নিচ্ছিলাম, কি করবো বুঝতে না পেরে কোনমতে তার শার্ট আকড়ে ধরে নিজেকে পড়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করলাম আমি! সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে দেখি উনি তখনকার ন্যায় এখনও ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছেন।

—তুমি কি কোন চুক্তি করে এসেছো যে বৃষ্টির দিনে আমার সাথেই তোমার ধাক্কা খেয়ে পড়ে যেতে হবে?

উনার কথা শুনে লজ্জায়-অপমানে আমার নাক লাল হয়ে গেলো! দুইবার মাত্র পড়ে যেতে ধরেছি বলে এই কথা বলবেন আমায়?? কিন্তু আমিও কম যাইনা। নাক ফুলিয়ে উত্তর দিলাম তাকে,

—তাহলে আপনিও নিশ্চয়ই চুক্তি করে এসেছেন যে বৃষ্টির দিনে আমার সামনেই এসে দাঁড়াবেন যাতে আমি ধাক্কা খেয়ে পড়ে যাই বারবার? (দাতে দাত চেপে বললাম)

আমার কথা শুনে উনি এক ভ্রু উঁচিয়ে তাকালেন যেন পাত্তাই দিলেন না আমার কথাকে তিনি!

—তোমার কি মনে হয় তোমার সামনে দাড়ানোর জন্য আমি বসে আছি? আমার লাইফে আরও অনেক ইম্পর্ট্যান্ট কাজ আছে। তোমার মতো পিচ্চির সাথে টাইমপাস করার মতো টাইম নাই আমার হাতে। (তাচ্ছিল্যের সুরে)

উনার কথা শুনে রাগে আমার মাথায় আগুন জ্বলে উঠলো। একেতো আমাকে টাইমপাস বলে ইনসাল্ট করছেন তার উপর আবার পিচ্চি বলছেন? আজ হাইটে উনার মতো পাহাড় হইনি বলে পিচ্চি বলবেন নাকি! যত্তসব!! উনার থেকে কয়েক কদম দূরে সরে গিয়ে বললাম,

—তবে আমার সামনে দাঁড়িয়েছিলেন কেন একটু আগে? আমি কি বলেছিলাম দাড়াতে? আপনি তো নিজে থেকেই এসেছিলেন।

—লিসেন, আমি শখ করে তোমার সামনে দাড়াইনি, বুঝেছো? আমি এসেছিলাম ফোনের সিগনাল খুজতে। আর আনফরচুনেটলি তোমার সামনে দাঁড়িয়েই সিগনালটা পেয়েছি তাই আর কোন উপায় ছিলোনা আমার কাছে।
বলেই তিনি ফোন কানে দিয়ে ছাউনির অন্যদিকে যেয়ে কথা বলতে লাগলেন কারও সাথে।

গোলগোল চোখে তার দিকে তাকিয়ে থাকলাম আমি! নাহ! আর থাকাই যাচ্ছেনা এখানে। উনি নাকি কথাই বলেন না তেমন তাহলে এভাবে কোমর বেঁধে ঝগড়া করলেন কিভাবে আমার সাথে? বাইরে থেকে গম্ভীর হলেও ভেতরে ভেতরে ভালোই ধান্দাবাজ লোক উনি যা বুঝলাম! হুহ!! ফালতু লোক একটা!

দূর থেকে উনাকে মুখ ভেঙচিয়ে রাগের চোটে বৃষ্টির মধ্যেই হাটা শুরু করে দিলাম আমি। যদিও বৃষ্টির বেগ অনেকটাই কমে এসেছে এতক্ষণে। হঠাৎ করেই সামনে একটা গাড়ি আসতে চিল্লিয়ে সরে গেলাম আমি! পিছনে ফিরে দেখি গাড়িটা ব্রেক করে ঠিক ছাউনির সামনে গিয়ে দাড়ালো। ড্রাইভার ভেতর থেকে ছাতা বের করে পূর্ণ ভাইয়াকে গাড়িতে উঠতে বলছেন। তবে উনি দেখি ছাতা নিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসছেন। ভাবলাম হয়তো বৃষ্টির জন্য তার গাড়িতে লিফট দিতে চাইবেন আমায়। মনে মনে তাকে ভাব দেখিয়ে মানা করার প্রস্তুতি নিতেই উনি আমার ধারণাকে সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণিত করে দিয়ে বললেন,

—আমি যেহেতু গাড়িতেই যাচ্ছি, তাই এটা আমার লাগবেনা। ছাতাটা বরং তুমিই নেও, এটা তোমার কাজে আসবে।

ছাতা এগিয়ে ধরে বাকা হেসে বলা তার কথাগুলো বৃষ্টির মধ্যেও আমার মাথায় আগুন ধরিয়ে দিলো। উনার আদিখ্যেতা আমার সহ্য হলো না!
লিফট দিতে পারবেনা আবার ছাতা দিতে এসেছে! বাপরে, ভাব দেখে বাচিনা! নিবোনা আমি আপনার ছাতা! যে আমাকে কথায় কথায় অপদস্ত করছে তার থেকে উপকার নিতে আমার প্রেস্টিজে বাধবে!! তাই ছাতা না নিয়েই চুপচাপ হনহন করে চলে যাচ্ছিলাম।

পিছন থেকে হাতে টান পড়তেই চোখ বড় হয়ে গেলো আমার! কিন্তু আমাকে পেছনে ঘুরার সুযোগই দিলেন না তিনি। পেছন থেকেই আমার হাতে ছাতা ধরিয়ে দিয়ে ধীর আওয়াজে বললেন,

—আমাকে ভাব দেখাতে গিয়ে ছাতা না নিলে লসটা তোমারই হবে পিচ্চি! আর যে কাপড় পড়ে এসেছো তাতে এখন তোমার ঢেকে থাকাটাই বেশি দরকার। রাস্তাঘাটের সবাই তো আর আমার মতো অনুভুতিহীন হবেনা।

এক বাক্যে কথাগুলো বলে আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই গাড়ি নিয়ে উধাও হয়ে গেলেন তিনি। কয়েক মিনিট লাগলো আমার উপলব্ধি করতে তার কথা! নিজের দিকে তাকিয়ে তার বলা কথার মর্ম বুঝতে পেরে লজ্জায় লাল-নীল-বেগুনি হয়ে গেলাম আমি! রাগের মাথায় এতক্ষণ ধরে বৃষ্টিতে ভিজে ড্রেসের কি অবস্থা হয়েছে তা তো মাথায়ই আসেনি আমার!! ছিহ!!

ওড়না দিয়ে গা ভালো করে ঢেকে ছাতা মাথায় রিকশার খোঁজে এগিয়ে গেলাম আমি। আল্লাহর কাছে রিকশার জন্য দোয়া করতে করতেই ভাগ্যক্রমে একটা রিকশার দেখা পেয়ে উঠে পড়লাম ঝটপট। পথে যেতে যেতে রাইসার সাথে যোগাযোগ করলাম আমি বাসার সামনে দাঁড়িয়ে থাকবো, আর বললাম ও আগে পৌঁছালেও যেন গেটের কাছেই থাকে।

বাসার সামনে পৌঁছিয়েই রাইসার সাথে দেখা হলো। বেচারি নাকি আমি ভিজেছি শুনে আগেভাগেই চলে এসেছে নিজের ডেইট ছেড়ে। বাসায় ঢুকেই রুমে গিয়ে ড্রেসচেঞ্জ করে আসলাম আমি। তারপর চুল মুছতে মুছতে দেখি রাইসা রুমে এসে বসলো। হয়তো কিছু চিন্তা করছে ওর মুখ দেখে মনে হলো।

—আচ্ছা তুরফা,পূর্ণ ভাইয়া এদিকে কি করতে
আসতে পারে কোন আইডিয়া আছে তোর?

হঠাৎ করে পূর্ণ ভাইয়ার আসার কথা শুনে আমার হাত থেকে টাওয়াল পড়ে গেলো। উনি এখানে আসবেন মানে? কিছু বুঝতে না পেরে মাটি থেকে টাওয়াল তুলে আবার চুল মুছতে মুছতে রাইসাকে জিজ্ঞেস করলাম,

—মানে? পূর্ণ ভাইয়া আবার কই থেকে আসবেন? তুই কি বলতে চাইছিস কিছুই বুঝিনি আমি।

—আরে বলিস না, আমার কেন জানি মনে হচ্ছে তোর সাথে বাসায় ঢুকার সময় আমি পূর্ণ ভাইয়াদের গাড়ি দেখেছি বাসার এদিকে। গাড়ি চেনার কারণ প্রান্ত প্রায়ই ওই গাড়ি নিয়ে দেখা করতে আসতো আমার সাথে। আজকে যেহেতু ও আমার সাথে রিকশায় করে এসেছে বাসা পর্যন্ত তাহলে গাড়িতে তো পূর্ণ ভাইয়ারই থাকার কথা। কিন্তু উনি কেন এই বৃষ্টির মধ্যে অযথা এইদিকে আসবেন বুঝলাম না!

রাইসার কথা শুনে আমি ভ্রু কুচকে তাকালাম। সত্যিই কি পূর্ণ ভাইয়া এসেছিলেন এইদিকে? কিন্তু উনি কেন এদিকে আসবেন? আর যদি আসতেই হতো তবে কি আমাকে লিফট দিতে পারতেন না উনি? অমানবিক পাষাণ লোক কোথাকার!
বৃষ্টির মধ্যে একটা মেয়েকে যে মানুষ সামান্য লিফট দেওয়ার কথা বলতে পারেনা সে আবার কোন আদিখ্যেতা দেখাতে বাসা পর্যন্ত আসবে!! অবশ্যই অন্য কারও গাড়িই দেখেছে রাইসা।
তাচ্ছিল্যের সাথে ভাবলাম আমি।

—শোন, ওইরকম হাজারটা গাড়ি আছে ঢাকা শহরে। উনার এইদিকে আসার তো কোন কারণ দেখিনা আমি। আর আসলেও বা কি হবে? তার যা করার করুক, আমাদের কি! এইসব আজগুবি চিন্তাভাবনা করা বাদ দে, ক্ষুধা লেগেছে আমার। চুল শুকিয়ে খেতে যাই চল।

গটগট করে কথাগুলো বলে চুল ঝাড়তে মনোযোগ দিলাম আমি। উনার কথা আর ভাবতেও মন চাচ্ছেনা। মনে হলেই মেজাজ খারাপ হচ্ছে। অসহ্য লোক একটা! জিলাপির চেয়েও বেশি প্যাচ তার আচরণের মধ্যে।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here