#বৃষ্টিময়_প্রেম
#পর্বঃ৫,০৬
#লেখনীতে- তাসফিয়া হাসান তুরফা
০৫
“এই মেঘলা দিনে একলা
ঘরে থাকেনা তো মন।
কাছে যাবো কবে পাবো
ওগো তোমার নিমন্ত্রণ!”
রেডিওতে গান শুনছেন দাদি। টিপটিপ বৃষ্টিতে মুড়িমাখা খেতে খেতে গানটা শুনতে বেশ লাগছে!এর মধ্যেই আন্টির ফোনের কর্কশ আওয়াজ সবার মুড নস্ট করে দিলো। দাদি বিরক্ত হয়ে বললেন,
—মরার ফোনডা আসার আর টাইম পাইলোনা।
ফোনের ডায়ালে নাম দেখেই আন্টি রেডিও বন্ধ করতে বললেন তাকে কারণ প্রান্ত ভাইয়ার মা ফোন দিয়েছেন। আন্টির বলতে দেরি, দাদির রেডিও অফ করতে দেরি হলোনা! ছেলেপক্ষের সব বিষয়েই তিনি প্রচন্ড সচেতন বলা যায়। ফোন রিসিভ করে আন্টি কুশল বিনিময় করে হু-হা করলেন কিছুক্ষণ, তার মুখ দেখে মনে হলো সিরিয়াস কোন বিষয়ে কথা হচ্ছে। একটু পর ফোন রেখে আমাদের দিকে তাকালেন। সবাই উৎসুক দৃষ্টিতে চেয়ে আছি তার থেকে ঘটনা কি শুনার জন্য।
—ওরা কয়েকদিনের মধ্যেই ইনগেজমেন্ট করে রাখতে চায়। সামনের সপ্তাহে নাকি ব্যবসার কাজে বাবার সাথে বিদেশ যাবে দুই ভাই৷ বেশ কিছুদিন সেখানে থাকতে হবে। তারপর দেশে ফিরে একবারে বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করবে। তাই আগেভাগেই বাগদান সেড়ে নিতে চাচ্ছে ওরা।
সব শুনে দাদি ও আংকেল রাজি হয়ে গেলেন। রাইসার থেকে জিজ্ঞেস করলেন তাড়াতাড়ি ইংগেজমেন্ট হওয়ায় ওর কোন আপত্তি আছে কি না। কিন্তু তারা জানেন না যে ওর কাছে এটা যেন মেঘ না চাইতেই বৃষ্টির মতো। তাই সে লাজুক মুখে বিনাবাক্য ব্যয়ে রাজি হয়ে গেলো। কনে রাজি হওয়ার পর আন্টি ফোন দিয়ে জানালেন বেয়াইনদের। দুইপক্ষ মিলে ঠিক করা হলো তিনদিন পর আংটি পড়ানো হবে।
সিদ্ধান্ত ফাইনাল হওয়ার পর বড়রা চিন্তায় পড়ে গেলো এই অল্পদিনে কি কি আয়োজন করবে আর আমরা ছোটরা প্ল্যান করতে লাগলাম কিভাবে মজা করা যায়। তার মধ্যে আমার খুশি যেন একটু বেশিই! কারণ এই প্রথম আমার কাছের কোন মানুষের বিয়ে খাবো। সেই যে ছোটবেলায় আন্টির সাথে এখানে চলে এসেছি তারপর থেকে তো নিজের কোন আত্মীয়র সাথে কোনধরনের যোগাযোগই নেই বলতে গেলে আমার। তারা কে কোথায় আছে, কেমন আছে, আমাকে আদৌ মনে রেখেছে কি না আমি তার কিছুই জানিনা! এই জীবনে কোনোদিন জানবোও কি না কে জানে!
দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবলাম।
________
আংটির দোকানে এসেছি বরের জন্য আংটি কিনতে। আন্টি এসব ক্ষেত্রে ভালোই শৌখিন বলা চলে তাই তো নিজের মেয়েকেও সাথে এনেছেন তার জামাইয়ের জন্য আংটি পছন্দ করতে। কয়েক মিনিট ধরে খুটিয়ে খুটিয়ে ডিজাইন দেখছিলাম আমি আর রাইসা। কোন ডিজাইনই তেমন একটা পছন্দ হচ্ছিলো না! যেটা একটু ভাল্লাগছে রাইসা আন্টির চোখ ফাকি দিয়ে ছবি তুলে পাঠাচ্ছে প্রান্ত ভাইয়াকে। তবে রাইসার রিয়াকশন দেখে বুঝা গেলো আংটিগুলো ভাইয়ারও পছন্দ হচ্ছেনা। হতাশ হয়ে আমরা পুনরায় আংটি খুজার মিশন শুরু করলাম। খুজতে খুজতেই দোকানদারের পিছনের ডিসপ্লে তে রাখা একটি মাঝারি সাইজের সলিড আংটি আমার মনে ধরলো। সিম্পল আছে,পড়লে স্মার্টও লাগবে। রাইসাকে গুতা দিয়ে ওই আংটিটা দেখালাম, ও সায় জানিয়ে দোকানদারকে ওটা নামিয়ে দিতে বললো। তারপর এই আংটির ছবি তুলে প্রান্ত ভাইয়াকে পাঠানো হলো। উনি মেসেজের রিপ্লাই না দিয়ে
হঠাত ফোন দিলেন। তার কল দেওয়া দেখে ভড়কে গেলাম আমরা দুজন কারণ পাশেই আন্টি বসে আছেন। কল কেটে দিয়ে কোনরকম ওয়াশরুমে যাওয়ার বাহানা দিয়ে দোকানের বাইরে আসলাম আমরা। রাইসা কলব্যাক করতেই ফোন ধরলেন ভাইয়া। ওর একদম কাছে দাঁড়িয়ে থাকায় ফোন থেকে প্রান্ত ভাইয়ার কন্ঠ শুনতে পেলাম আমি।
—এইবারের আংটিটা ভালো। আমার পছন্দ হয়েছে। ভাইয়ারও ভালো লেগেছে ডিজাইন। এটাই সিলেক্ট করতে বললো ও আমায়। যাক একটা সুন্দর আংটি পছন্দ করেছো অবশেষে!
—তোমার পছন্দ হয়েছে শুনে শান্তি পেলাম। তবে তোমার পছন্দ না হলেও আমি এটাই নিতাম, কারণ এতক্ষণ ধরে খুজতে খুজতে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছি।
(ক্লান্ত স্বরে বললো রাইসা)
—হুম, এটাই নেও। আমার ভাইয়ের মতো চুজি মানুষের পছন্দ হয়েছে তাহলে বুঝতে হবে জিনিসটা আসলেই ভালো। গুড জব রাইসা।
—থ্যাংকিউ। তবে এই আংটি পছন্দ করার ক্ষেত্রে আমার চেয়ে তুরফার হাত বেশি। ওই খুজে বের করেছে এই ডিজাইন। (হেসে বললো রাইসা)
—ওহ তাই বলো! এজন্যই আমি ভাবছিলাম তোমার চয়েস এত ভালো হলো কবে থেকে? তুরফাকে থ্যাংকস দিও আমার পক্ষ থেকে এই সুন্দর আংটি খুজে বের করার জন্য!
রাইসাকে ক্ষেপানোর জন্য বললেন প্রান্ত ভাইয়া। তার কথা শুনে হাসি পেলো আমার। আমার হাসি দেখে রাইসা চোখ পাকিয়ে তাকালো।
—তাই না? এখন তো আমার চয়েস খারাপই লাগবে তোমার। অবশ্য ঠিকি বলেছো আমার চয়েস খারাপ না হলে তোমাকেই বা কেন পছন্দ করতাম?
ব্যস শুরু হয়ে গেলো ওদের খুনসুটি। আমি তাকিয়ে হাসলাম ওদের দিকে।
আংটি কিনে বাসায় যেয়ে জোরেশোরে শুরু করলাম সবাই মিলে ইংগেজমেন্টের প্রস্তুতি।
_________
অবশেষে আজকে সন্ধ্যায় ওদের আংটি পড়ানো হবে। গত দুইদিন সবার উপর দিয়ে বেশ ধকল গিয়েছে। প্রচুর কাজ করেছি সবাই মিলে, একসাথে রান্না করেছি আরও কত কি! আজ সকাল থেকেই বাসায় মেহমান আসতে শুরু করেছে, রাইসার আত্মীয়স্বজনরা আসছেন এক এক করে। একসাথে ছোট-বড়-সমবয়সী কাজিনদের পেয়ে আমাদের আড্ডা জমে ক্ষীর! বেশ হৈ-হুল্লোর করছি সবাই একসাথে। দুপুর পার হতেই আন্টি মেয়েদের রেডি হওয়ার জন্য তাড়া দিলেন। রাইসাকে সাজানোর জন্য পার্লার থেকে মেয়ে এসেছে। আমরা বাকি মেয়েরাও নিজের মতো করে একসাথে রেডি হবো। রাইসা লেহেঙ্গা পড়বে আর আমরা মেয়ে কাজিনরা সবাই শারারা পড়বো ঠিক করেছি।
সবার রেডি হতে হতেই বিকেল পার হয়ে গেলো। এতক্ষণে পুরো বাড়ি মেহমানে গিজগিজ করছে। আমি রেডি হয়ে রুম থেকে বের হলাম রাইসাকে দেখতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। যাওয়ার পথে একটা লোক ফুলের ডালা নিয়ে যাচ্ছিলো। ডালায় এতগুলো ফুল যে তার চেহারাই দেখা যাচ্ছেনা। তাকে সাইড দেওয়ার জন্য আমি যেদিক দিয়ে যেতে ধরি লোকটিও সেদিকেই যায়! আমি বামে গেলে উনিও বামে যাচ্ছেন, ডানে গেলে উনিও ডানে যাচ্ছিলেন। যদিও ভুলবশত তার সাথে আমার দিক মিলে যাচ্ছিলো তবুও বেশ বিরক্ত লাগলো আমার!
—এক মিনিট দাড়ান, হয় আমি আগে যাই নাহয় আপনি আগে যান। নয়তো আমাদের কারোই যাওয়া হবেনা। (ইতস্তত হেসে বললাম আমি)
আমার কথা শুনে লোকটা ডালা সরালেন তার মুখের সামনে থেকে। তাকে দেখে অবাক হয়ে গেলাম আমি! রায়হান ভাইয়া? অর্থাৎ রাইসার আপন ভাই যে কিনা অফিসের কাজে ঢাকার বাহিরে থাকেন বেশিরভাগ সময়। বুঝলাম আজ বোনের ইংগেজমেন্ট উপলক্ষে এসেছেন বাসায়।
—আরে তুরফা, তুমি? কেমন আছো? অনেকদিন পর দেখলাম তোমায়। (উজ্জ্বল হেসে বললেন)
—আমি ভালো আছি ভাইয়া। আপনি কেমন আছেন আর বাসায় কখন আসলেন? (অবাক হয়ে)
—আর বলো না, আসছি ঘন্টা দুয়েক হলো। কিন্তু এসে যে রেস্ট নিবো তার উপায় নাই! কনের ভাই বলে কথা। বাসায় আসতেই কাজে লাগিয়ে দিয়েছে মা আমায়। (হতাশ মুখে বললেন)
তার মুখের অভিভংগি দেখে আমার খুব হাসি পেলো। মুখ টিপে হাসলাম আমি। খেয়াল করলাম উনি আপাদমস্তক দেখলেন একবার আমায়।
—বাহ! রেডি হয়েও গেছো তুমি? ভালো করেছো। এই ড্রেসে খুব সুন্দর লাগছে তোমাকে। (ধীর গলায়)
উনি একদৃষ্টিতে চেয়ে রইলেন কিছুক্ষণ আমার দিকে। তার এভাবে তাকিয়ে থাকায় কিছুটা অসস্তি লাগছিলো আমার, তাই কোনরকম তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় নিলাম তার থেকে। চলে এলাম রাইসার রুমে। ওকে দেখে আমার চোখ জুড়িয়ে গেলো! মাশাল্লাহ! কি সুন্দর লাগছে আমার বোনটাকে। আমাকে দেখে লাজুক হাসলো ও।
—আজকে তো মনে হচ্ছে দুলাভাইয়ের মাথা হ্যাং হয়ে যাবে! তোকে দেখার পর বিয়ের ডেট এগিয়ে আনলেও আমি অবাক হবোনা। (ওকে জড়িয়ে ধরে)
—তাইনা? শুধু আমাকে দেখেই সবার মাথা হ্যাং হয়ে যাবে? তাহলে তোকে দেখে ছেলেরা কি করবে? এই হালকা সাজেই তোকে যা মারাত্মক লাগছে বোন, কেউ যদি আজ তোর জন্য বিয়ের প্রস্তাব দেয় তাতে আমিও অবাক হবো না।
আমার দিকে চোখ টিপ মেরে বললো। ওর কথা শুনে আমি চোখ পাকিয়ে তাকালাম তারপর কিছু বলার আগেই আন্টি এলেন রুমে। আমাদের রেডি দেখে প্রসন্নচিত্তে হেসে মাশাল্লাহ বললেন। আন্টির থেকে জানলাম ছেলেপক্ষ এসেছে। বাইরে তাদের আপ্যায়ন চলছে এখন। একটু পর আমাদের ডাকলে যেন আমরা সব কাজিনরা মিলে রাইসাকে নিয়ে বাহিরে যাই। আন্টি রুম থেকে বের হতেই বাকি কাজিনরা এসে ঢুকলো। সবাই সমস্বরে উল্লাস করলো আর ক্ষেপাতে লাগলো রাইসাকে। সেইসাথে ছেলেপক্ষের মধ্যে কোন ক্রাশ খাওয়ার উপযোগী ছেলে পাওয়া গেলে তাকে কিভাবে পটাতে হবে এটা নিয়েও আলোচনা চলছিলো সিনিয়র কিছু আপুর মধ্যে! তাদের প্ল্যানিং দেখে যেমন অবাক হচ্ছিলাম আমি তেমনিভাবে মজাও লাগছিলো শুনতে!
_________
রাইসাকে নিয়ে প্রান্ত ভাইয়ার পাশে স্টেজে বসিয়ে দিলাম আমরা। ছাদে খুব সুন্দর আয়োজন করা হয়েছে আংটি বদলের জন্য। তারমধ্যে আজকে আকাশ পরিষ্কার হওয়ায় সবাই চিন্তামুক্ত। উপস্থিত সবাই ওদের জুটির প্রশংসা করলো। একসাথে ভালো মানিয়েছে ওদেরকে।
আন্টি একাহাতে সব কাজ সামলাচ্ছিলেন দেখে আমি কাজিনদের কাছ থেকে সরে তার কাছে গেলাম। আন্টিকে কিছু বলার আগেই প্রান্ত ভাইয়ার মা-বাবা এলেন তার সাথে কথা বলতে। তাদের দেখে বুঝলাম দুই ছেলে কেন এত সুন্দর। এই বয়সেই বাবা-মা এত স্মার্ট! এজন্যই বোধ হয় ছেলেগুলোও একদম ওইরকমই হয়েছে তাদের।
—আরে বেয়াইন, কি দরকার ছিলো এত কস্ট করে সব আয়োজন করার জন্য? আমরা কমিউনিটি সেন্টারেই করতে পারতাম অনুষ্ঠান।
—না নাহ, কোন অসুবিধা হয়নি আমাদের। বরং আমরা উলটো খুশি হয়েছি নিজের মেয়ের জন্য নিজহাতে সব কাজ করতে পেরে। হাসিমুখ বললেন আন্টি।
“আচ্ছা আপনার বড় ছেলে যে এলোনা বেয়াইন, ও কখন আসবে?” প্রসংগ পালটে পূর্ণ ভাইয়ার কথা জিজ্ঞেস করলেন আন্টি।
—পূর্ণ অফিস থেকে ফেরার পথে আমাদের ছোটমেয়েকে পার্লার থেকে নিয়ে আসবে। ওরা কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসবে! এই ছেলেটা আমাদের কাজপাগল বুঝলেন, ভাবি। সারাদিন অফিসের কাজেই ব্যস্ত থাকে, বিয়ের জন্য রাজিও হয়না। ওকে নিয়ে যে কি করবো আমি!
পূর্ণ ভাইয়ার মায়ের কথা শুনে অবাক হলাম আমি। তাদের একটি মেয়েও আছে? এটা তো বলেনি রাইসা! যাই হোক, ওর ননদ থাকতেই পারে। আমার কি! হঠাৎ দেখি প্রান্ত ভাইয়ার বাবা আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। মনে হয় কিছু বলবেন। আমার ধারণাকে ঠিক প্রমাণ করে কিছুক্ষণ পর তিনি আন্টিকে বললেন,
—এই মেয়েটা কে, ভাবী? আপনাদের আত্মীয়? সেদিন আপনাদের বাসায় এসে তো দেখিনি।
আংকেলের প্রশ্ন শুনে আমি অস্বস্তিতে পড়ে গেলাম। যখনি কেউ আন্টিদের কাছে আমার পরিচয় জিজ্ঞেস করে তখন আমার খুব খারাপ লাগে। আন্টি যদিও খুব সুন্দর করে আমাকে তাদের মেয়ে পরিচয় দেন তবুও আমার খারাপ লাগে। আলাদাভাবে কি কোনদিন নিজের আসল পরিচয় হবে আমার?
আন্টি কিছু বলার আগেই হইচই শুনতে পেলাম আমরা। এগিয়ে যেয়ে দেখি পূর্ণ ভাইয়া এসেছেন। অফিস থেকে আসলেন সেটা তার ফর্মাল গেটাপ দেখে বুঝাই যাচ্ছে, পাশে দাঁড়িয়ে একটি সুন্দর মেয়ে। বয়স বেশিনা, আমার চেয়ে ছোট হওয়ার কথা। বুঝলাম এটা উনার বোন হবে।
আমি এগিয়ে রাইসার কাজিনদের সাথে যোগ দিলাম। ফিসফিস শুনলাম দুই আপুর মধ্যে,
—এই তোরা কেউ নজর দিবিনা, বুঝেছিস? এই হ্যান্ডসাম এখন আমার ক্রাশ।
পূর্ণ ভাইয়ার দিকে ইশারা করে ছোটদের হুশিয়ার করে দিলেন কাজিনদলের সিনিয়র, সামা আপু।
—এটা ঠিক না আপু, এইরকম কিছু তো আমাদের প্ল্যানে ছিলোনা। (অভিযোগ করলো ছোটরা)
—ছিলো না তো কি হয়েছে? এখন তাকে দেখে আমি প্ল্যান চেঞ্জ করেছি। সবার আগে তার নাম জানতে হবে তারপর কথা বলার চেস্টা করতে হবে। কিন্তু কিভাবে নাম জানবো বুঝতে পাচ্ছিনা।
—পূর্ণ। (আস্তে করে বললাম আমি)
আমার কথা শুনে সবাই চমকে আমার দিকে তাকালো। আমি তাকে চিনি কি না জিজ্ঞেস করতে লাগলো, আমি মাথা নাড়তেই ঘিরে ধরলো ওরা আমায়। তবে আমি বেশিকিছু বললাম না, শুধু এইটুক বললাম যে উনি পাত্রের বড় ভাই, তাই নাম শুনেছি। সামা আপু আমার উপর খুব খুশি হলেন। এখন পূর্ণ ভাইয়ার সাথে কোন বাহানায় কথা বলবেন ভাবতে লাগলেন। তাদের প্ল্যান শুনতে শুনতেই আন্টির গলা শুনলাম। অর্থাৎ আমার ডাক পড়লো কাজের জন্য তাই পূর্ণ ভাইয়াকে আপু কিভাবে পটাবে না শুনেই যেতে হলো!!
_________
আন্টিকে হেল্প করে হেলেদুলে ছাদের দিকে আসছিলাম আমি। হঠাৎ ওড়নায় টান পড়ায় সিড়ি থেকে পড়ে যেতে ধরলাম আমি। রেলিং ধরে কোনমতে নিজেকে বাচিয়ে পিছনে ফিরে দেখি আমার ওড়নার উপর পা দিয়ে আটকে রেখেছেন পূর্ণ ভাইয়া। উনাকে দেখে মেজাজটা তিড়তিড় করে বেড়ে গেলো আমার! আবারও তার জন্যই পড়ে যেতে ধরেছিলাম আমি! কিন্তু উনি ড্যাম কেয়ার ভাব নিয়ে তাকিয়ে আছেন অন্যদিকে যেন কিছু জানেনই না কি হচ্ছে এখানে।
উনার ভাব দেখে কিছু না বলেই ওড়না টান দিয়ে উপরে উঠতে যাচ্ছিলাম কিন্তু আশ্চর্য! ওড়নার উপর থেকে পা-ই সরাচ্ছেন না উনি! ভারী বেয়াদব তো লোকটা! উনাকে ভালো-মন্দ শুনাতেই হবে আজকে! মনে মনে এসব ভাবতেই দেখি আমার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছেন উনি। তার চাহনি দেখে আমি অবাক হলাম। এভাবে রেগে তাকিয়ে আছেন কেন?
আজব তো! কি করেছি আমি?
#চলবে
#বৃষ্টিময়_প্রেম
#পর্বঃ৬
#লেখনীতে- তাসফিয়া হাসান তুরফা
ভ্রু কুচকে পূর্ণ ভাইয়ার সামনে দাঁড়িয়ে আছি। কিছু না বলেই অযথা আটকে রেখেছেন তিনি! এর মধ্যেই খেয়াল করলাম উনি আস্তে করে পা সরালেন আমার ওড়নার উপর থেকে। এতক্ষণ ধরে এটারই অপেক্ষায় ছিলাম আমি! তাই দ্রুতবেগে মাটি থেকে ওড়নার অংশ তুলে নিয়ে চলে যেতেই উনি তড়িৎ গতিতে আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন। হঠাৎ করে তাকে নিজের সামনে দেখে ভয় পেয়ে আমি রেলিং এর দাড় ঘেঁষে দাড়ালাম। উনার রাগভরা মুখ যেন আমাকে সিগনাল দিচ্ছে তার সামনে থেকে পালানোর জন্য!
সাইড দিয়ে পালানোর চেস্টা করতেই উনি হাত ধরে আটকালেন আমায়। তার শক্ত মুঠোয় ছটফট করতে লাগলো আমার ছোট্ট হাত। কিন্তু উনি সেদিক ভ্রুক্ষেপ না করে চোখ রাঙিয়ে থামালেন আমায়, তারপর আস্তে করে হাত ছেড়ে দিলেন। হাফ ছেড়ে বাচলাম যেন আমি! তবুও শান্তি পেলাম না কারণ আমি না পারছি পালাতে, না পারছি নড়তে। কি বিশ্রি একটা অবস্থায় ফেসে গেছি এই লোকটার সাথে! হঠাৎ আমার মনে চিন্তা হলো কেউ যদি আমাদের এইভাবে দেখে তবে কি মনে করবে? আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম, না কেউ নেই এদিকটায়। সবাই হয় ছাদে না হয় নিচে ব্যস্ত যে যার মতো!
যদিও আমাদের মধ্যে যথেষ্ট দুরত্ব রেখেই দাড়িয়েছেন উনি কিন্তু তাও এভাবে দুজন মানুষকে একাকী দেখলে স্বাভাবিকভাবেই উল্টাপালটা ভাবতে পারে মানুষ। আমি তো তাহলে ভরাসন্ধ্যায় বিয়েবাড়িতে বদনাম হয়ে যাবো!! হায় হায়!!
—সমস্যা কি তোমার?
আমার ভাবনার মাঝেই রাগী গলায় দাতে দাত চেপে জিজ্ঞেস করলেন উনি। তার প্রশ্ন শুনে তাজ্জব বনে গেলাম। নিজেই আমাকে অযথ রাগ দেখিয়ে আটকে রেখে আবার নিজেই জানতে চাচ্ছে সমস্যা কি। মনে প্রশ্ন উকি দিলো,আচ্ছা উনার কি মাথার তার ছিড়া আছে নাকি দুই-একটা?
—কথা বলছোনা কেন, স্টুপিড? কি সমস্যা তোমার আমাকে বলো!!
তার কথা শুনে রেগে গেলাম আমি।
— প্রথমত আমাকে স্টুপিড বললে আমি কোন কথাই বলবোনা। আর দ্বিতীয়ত আপনি কিসের সমস্যার কথা বলছেন আমি কিছুই বুঝতে পাচ্ছিনা! সমস্যাটা তো আপনার মাথায় আছে বলেই মনে হচ্ছে আমার। নয়তো আমাকে অযথা আটকে রাখবেন কেন এইভাবে??
—শাট আপ। তোমাকে শখ করে আটকে রাখার প্রতি কোন ইন্টারেস্ট নেই আমার বুঝেছো? তোমার জন্য যে একটু আগে আমার হয়রানি হতে হলো সেটার দায়ভার তুমি ছাড়া আর কে নিবে বলো??
উনার কথা শুনে আমি আকাশ থেকে পড়লাম! আমার জন্য উনার হয়রানি হয়েছে? মানেটা কি? আমি তো কিছুই করিনি! কিন্তু উনার ভাবভঙ্গি দেখে তো মনে হচ্ছে সত্যি কথাই বলছেন তিনি। তাই গোলগোল চোখে অবাক হয়ে উনাকে জিজ্ঞেস করলাম,
—আমি না সত্যিই বুঝতে পাচ্ছিনা আপনি কিসের কথা বলছেন। আর কিছু হলেও আই প্রমিস আমি কিছুই জানিনা আর আমি ইচ্ছা করে কিছুই করিনি। (ভয়ে ভয়ে)
—যাক, ফাইনালি লাইনে এসেছো। তবে কাজটা তুমি ঠিক করোনি। ছোটমানুষ আছো, ছোটমানুষের মতোই থাকবে। যাকে তাকে আমার ইনফরমেশন দেওয়ার চেস্টা করবেনা আর কখনও, বুঝেছো? (কড়া চোখে ধমক দিলেন আমায়)
চোখ পিটপিটিয়ে তাকিয়ে রইলাম উনার দিকে। আমি আবার কাকে তার ইনফরমেশন দিয়েছি। কয়েক মুহূর্ত মাথা খাটাতেই মনে হলো সামা আপুর কথা। হ্যাঁ, আমি তো উনাকে বলেছিলাম পূর্ণ ভাইয়ার কথা! তার মানে নিশ্চয় উনিই বলে দিয়েছেন! ধুর!! কাজটা মোটেও ঠিক করলো না আপু! পূর্ণ ভাইয়াকে পটাতে পারলেন না বুঝলাম, তাই বলে আমাকে এভাবে ফাসিয়ে দেওয়ার কোন মানে হয়??
ধরা পড়া চোরের মতো মাথা চুলকে ইতস্তত হাসলাম তার সামনে। কিন্তু আমার হাসি তার গম্ভীর ভাবমূর্তির বিন্দুমাত্র পরিবর্তন ঘটালো না। উনি একিভাবে চোখ পাকিয়ে আছেন আমার দিকে। তবে আমার মনে চলছে অন্য কথা। সামা আপু ঠিক কি করেছেন যার কারণে পূর্ণ ভাইয়াকে হয়রানি হতে হলো? জানার লোভ সামলাতে পাচ্ছিনা আবার ভয়ে তাকে কিছু জিজ্ঞেসও করতে পাচ্ছিনা। এমনিতেই রেগে আছেন না জানি আবার কখন ধমক দেন! তবে বেশিক্ষণ চুপ থাকতে পারলাম না আমি। কৌতুহলের বশে চকচকে দৃষ্টিতে এক পর্যায়ে জিজ্ঞেস করেই ফেললাম আপু কি করেছে উনার সাথে৷ ভেবেছিলাম হয়তো বলবেন না আমায়, নাহয় রেগে কিছু শুনাবেন কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে উনি বলতে শুরু করলেন,
—আমার ভাইবোনদের সাথে কথা বলছিলাম স্টেজের পাশে। তখন তোমার ওই গুণধর কাজিন এসে গায়েপড়ে কথা বলতে শুরু করলো আমার সাথে। প্রথমে ভাবলাম বিয়েবাড়িতে খোজখবর অনেকেই নেয় তাই ভদ্রভাবে এড়িয়ে যাচ্ছিলাম ওকে। সারা না কি যেন নাম ছিলো ওর।
—সামা।
আমি শুধরে দিলাম উনাকে কিন্তু বিনিময়ে উনার তীক্ষ্ণ রাগী দৃষ্টি ছাড়া কিছুই পেলাম না!
—হ্যাঁ, সামা। নাম যাই হোক কিন্তু মেয়েটা খুব নাছোড়বান্দা! তুমি ওকে আমার কথা বলে একদম ঠিক করোনি। আমি বরের বড় ভাই হয়েও কেন এখনও বিয়ে করিনি, আবার আমি কাউকে ভালোবাসি কি না, ওকে দেখতে ভালো লাগছে কি না, ওর সাথে প্রেম করবো কি না এগুলো পর্যন্ত জিজ্ঞেস করছিলো আমাকে। সোজা কথায় যাকে ফ্লার্টিং বলে! ভাবা যায়? উফ, ডিজগাসটিং!!
প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে শেষ করলেন পূর্ণ ভাইয়া। উনার মুখ দেখে আর সামা আপুর কর্মকাণ্ড কল্পনা করে আমার ভেতর হাসির বন্যা বয়ে যাচ্ছিলো। অনেক কস্টে ঠোঁট টিপে নিজেকে সামলানোর চেস্টা করছিলাম কিন্তু তার চোখ এড়াতে পারলাম নাহ! চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে থাকলেন উনি আমার দিকে।
—স্টপ লাফিং! এখানে হাসার মতো কিছু বলিনি আমি তোমায়! তুমি জানো আমার কাজিনরা আমাকে কতটা সম্মান করে? ওদের সামনে কখনো এইরকম লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে পড়তে হয়নি আমায়। আর আজ তোমার জন্য ওরা আমাকে ক্ষেপানোর সুযোগ পাচ্ছে, আমাকে দেখতেই হাসাহাসি করছে। এটাকে কোনদিক দিয়ে ফানি মনে হচ্ছে তোমার কাছে?? (রেগে)
তার কথা শুনে আমার আরও বেশি হাসি পেলো কিন্তু তার সামনে সেটা প্রকাশ করলাম না! আরে বাবা কাজিনরা ক্ষেপাতেই পারে, রাগাতেই পারে। এটাই তো কাজিনধর্ম। কিন্তু এই সামান্য বিষয় নিয়ে লোকটা এত রেগে যাবে আমি ভাবতেও পারিনি! এত গম্ভীর কি কেউ হয়? পূর্ণ ভাইয়া পারেনও বটে।
তবে যাই হোক, আর বেশিক্ষণ এখানে থাকা যাবেনা উনার সাথে। যেকোন মুহুর্তে কেউ আসতে পারে আর দেখে ফেলতে পারে আমাদের। তাই আমি কিছু বুঝে উঠার সুযোগ না দিয়েই হঠাৎ করে ধাক্কা দিলাম তাকে। যদিও তার বিশাল দেহে আমার ছোট্ট ধাক্কায় তেমন একটা প্রভাব পড়লো না তবুও খানিকটা অবাক হয়ে কিঞ্চিৎ দূরে সরে গেলেন তিনি। আর এই সুযোগে আমি এক দৌড়ে সিড়ি বেয়ে ছাদে উঠে গেলাম!
তাড়াহুড়ো করে ছাদে উঠতেই রায়হান ভাইয়ার সামনে পড়লাম। তার হাতে খাবারের ট্রে ছিলো। হঠাৎ করে নিজের গতি সামলাতে না পারলেও কোনমতে তাকে পাশ কাটিয়ে নিজেদের ধাক্কা লাগা থেকে রক্ষা করলাম আমি। কিন্তু উনার হাতে থাকা ট্রের সাথে বারি ঠিকই খেলাম হাতে। ট্রের সুচারু কোণ হাতে লাগতেই নিজ থেকেই আহসূচক ধ্বনি বের হলো আমার মুখ দিয়ে! আড়চোখে হাতের দিক তাকিয়ে দেখি ছিলে গিয়েছে কনুই এর নিচের অংশটা, খানিকটা রক্তও বের হচ্ছে ওখান থেকে! এদিকে ঘটনার আকস্মিকতায় হকচকিয়ে গেলেন রায়হান ভাইয়া। পাশের টেবিলে ট্রে-টা রেখে আমার দিকে এগিয়ে এলেন তিনি।
—তুরফা, হাতে কোথায় ব্যাথা পেয়েছো তুমি? দেখি একটু। বেশি লেগেছে কি তোমার?
চিন্তিত মুখে প্রশ্ন করলেন উনি। তার মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে বেচারা গিলটি ফিল করছেন তার হাতে রাখা ট্রে দিয়ে আমি আঘাত পেয়েছি বলে। তাই ছিলে যাওয়া অংশের উপর ওড়না দিয়ে ঢেকে ব্যাথা পাওয়া সত্বেও আমি মুখে ছোট হাসি টেনে বললাম,
—আরেহ না, ভাইয়া। আমি একদম ঠিক আছি। এইসব ছোট-মোট ব্যাথায় তুরফার কিছু হয়না।
খানিকটা ভাব নিয়ে বললাম তাকে হালকা করার জন্য। আমার কথা শুনে উনি হাসলেও যেন পুরোপুরি সন্দেহমুক্ত হলেন না।
—তুমি সত্যি বলছো তো? দেখো তুরফা, আঘাত পেলে লুকিয়ো না। নিচে চলো, মলম দিচ্ছি। ওটা লাগালেই ঠিক হয়ে যাবে।
আমি উনাকে আবারও মানা করলাম যে কিছু লাগবেনা, আমি ঠিক আছি। বলার মাঝেই খেয়াল করলাম উনার দৃষ্টি আমার থেকে সরে আমার পেছনে গিয়ে ঠেকলো। উৎসুক চোখে পেছনে ফিরে পূর্ণ ভাইয়াকে দেখলাম। উনিও ছাদে এসে গেছেন এতক্ষণে। কেমন যেন একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন আমাদের দিকে। তবে আমায় বিশেষ পাত্তা দিলেন না উনি। আমাকে পাশ কাটিয়ে সরাসরি রায়হান ভাইয়ার সামনে গিয়ে দাড়ালেন। তাকে দেখে রায়হান ভাইয়া হাত বাড়ালো হ্যান্ডশেক করার উদ্দেশ্যে, প্রত্যুত্তরে উনিও করলেন দেখলাম। ওনারা নিজেদের মধ্যে পরিচয়-বিনিময় করতে লাগলেন। তাই আমিও আর কিছু না বলে চলে গেলাম ছাদের অন্য পাশে।
___________
প্রান্ত-রাইসার আংটি বদল সম্পন্ন হলো সুন্দরভাবে। বর-বউ এর বেশ কিছু সুন্দর ছবিও তুলা হলো। মেহমানরা ছবি তুলে খেতে গেলেন নিচে। ওখানেই খাবারের আয়োজন করা হয়েছে। নিচে আংকেল-আন্টি মেহমানদের আপ্যায়নে ব্যস্ত, উপরে আমরা ছোটরা ছবি তুলছি এই সুযোগে!
এতক্ষণ সবার সাথে হৈ-হুল্লোড়ের মধ্যে থাকায় ব্যাথার কথা ভুলেই গিয়েছিলাম আমি। বাকি কাজিনদের ছবি তুলতে ব্যস্ত দেখে একা একা একটি টেবিলে গিয়ে বসলাম আমি। হাতের উপর থেকে ওড়না সরিয়ে দেখি রক্ত শুকিয়ে গেছে এতক্ষণে। চামড়ায় টান লাগায় ব্যাথায় চিনচিন করছে জায়গাটা। হয়তো তখন মলম লাগানোই উচিত ছিলো তাহলে এত জ্বলতো না। ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফোন টিপতে লাগলাম আমি!
একটু পরেই নিচ থেকে আন্টি ডাকলেন আমায়। মনে হয় কোন সাহায্য দরকার তাই টেবিলের উপর ফোন রেখেই তাড়াতাড়ি করে নিচে চলে গেলাম আমি! মিনিট পাঁচেক মেহমান আপ্যায়ন করে ক্লান্ত হয়ে ছাদে ফিরলাম। ফোনের কথা মাথায় আসতেই টেবিলের কাছে গেলাম।
ক্লান্ত গায়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে টেবিল থেকে ফোন তুলতেই তার পাশে একটি প্যাকেট চোখে পড়লো আমার। ভ্রু কুচকে ভাবলাম এটা আবার কে রেখে গেছে এখানে? একটু আগে তো ছিলোনা! কৌতুহলবশত প্যাকেটটি খুলেই চমকে গেলাম আমি। ওর ভেতরে একটা মলম রাখা, সাথে ব্যাথানাশক ওষুধও আছে! এটা আবার কে আনলো? রায়াহান ভাইয়া?? কারণ উনি ছাড়া তো আর কেউই জানতো না আমার ব্যথার কথা! আর ভাইয়া নিজেই তখন মলমের কথা বলেছিলেন। তাহলে উনিই হবেন! বিস্মিত হলেও মনে মনে রায়হান ভাইয়ার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলাম আমার কথা চিন্তা করার জন্য।
হাতে মলম লাগিয়ে হাত ধুয়ে এসে ছাদের কোণে এসে দাড়ালাম। এই জায়গা থেকে পুরো রাস্তা দেখতে পাওয়া যায়! খুব সুন্দর লাগে দাড়ালেই। চুপচাপ দাড়িয়ে বাতাস উপভোগ করছি এমন সময় রাস্তা দিয়ে রায়হান ভাইয়াকে যেতে দেখলাম। উনাকে দেখে আপনাআপনিই ভ্রু কুচকে গেলো আমার। এতটুকু সময়ে ছাদে মলম রেখে আবার রাস্তা পর্যন্ত কিভাবে পৌঁছে গেলেন উনি? মাথায় খেললোনা ব্যাপারটা!
নাহ! এত তাড়াতাড়ি এতখানি পথ যাওয়া-আসি করা তো সম্ভব নয়। তাহলে কিভাবে কি হলো? হঠাৎ করেই অবচেতন মনে প্রশ্ন উঠলো, মলমটা অন্য কেউ রাখেনি তো? কিন্তু রাখলেও বা কে রাখবে। রায়হান ভাইয়া ছাড়া তো আমার ব্যাথার কথা কেউ জানেনা!! চোখ-মুখ কুচকে ভাবতে লাগলাম আমি মলমদাতার কথা! কে হতে পারে? তিনি কি আদৌ রায়হান ভাইয়া ছিলেন নাকি অন্য কেউ??
#চলবে