#বৃষ্টিময়_প্রেম
#পর্বঃ২১,২২
#লেখনীতে-তাসফিয়া হাসান তুরফা
২১
রান্নাঘরের দরজায় উকি দিতেই চোখে পড়লো কাজ করছেন বড়াম্মু। উনার কাজে টুকিটাকি সাহায্য করছে রাইসা, আমি এগিয়ে গিয়ে যোগ দিলাম তাদের সাথে। আমাকে দেখে দুইজনই হাসিমুখে তাকালেন। আমিও হেসে বললাম,
—কি করছো তোমরা, বড়াম্মু?
—এইতো সকালবেলা বাড়ির মেয়েদের যা কাজ হয়। রান্না বসিয়ে দিলাম চুলায়। না খেয়ে তো অফিস যাবেনা কেউ।
—আমিও কিছু করি? আমি কিন্তু রান্না পারি।
ভাব নিয়ে বললাম আমি। আমার কথা শুনে রাইসা মাথা নাড়িয়ে সায় দিয়ে জানালো। এরপর বললো,
—হ্যাঁ, মা। ও ঠিক বলছে। তুরফার রান্না বেশ মজার। স্পেশালি ওর হাতের পায়েস। উফফ। তোমরা যেদিন আমাকে দেখতে এসেছিলে সেইদিনকার খাবারও আসলে তুরফাই বানিয়েছিলো। দাদি অযথা আমার নাম দিয়েছিল।
মাথা চুলকে বললো রাইসা। বুঝা গেলো নিজ দাদির কর্মকাণ্ডে ও বেশ লজ্জিত! ওর মুখ দেখে বেশ হাসি পেলো আমার, একিসাথে হাসি পেলো বড়াম্মুরও। আমরা দুজনেই একসাথে হেসে উঠলাম তাড়স্বরে!! আমাদের দুজনের হাসি দেখে ওই-ও হেসে ফেললো। হাসতে হাসতেই বড়াম্মু বললেন,
—তবে আর যাই বলিস না কেন, পায়েসটা দারুন মজার হয়েছিলো। খাবার শেষে এমন ডেজার্ট পেলে আর কি লাগে? আমার পূর্ণর মতো মানুষ খেয়ে বাসায় এসে প্রশংসা করেছিলো, তাহলে মানতেই হবে তুরফার রান্নার হাত চমৎকার!
বড়াম্মুর কথা শুনে চমকে গেলাম আমি! পূর্ণ ভাইয়া আমার রান্নার প্রশংসা করেছিলেন? ইশ মিস করে ফেলেছি আমি!! আজকেও আমি রান্না করলে কি তবে উনি প্রশংসা করবেন? মনে মনে ভাবলাম আমি। অতঃপর গল্পগুজব করতে করতেই আমরা তিনজন মিলেমিশে রান্না শেষ করলাম!!
_______________
খাবার টেবিলে বসে আছেন সবাই। আমি আর রাইসা মিলে সবাইকে খাবার সার্ভ করছি। একদিকে আন্টি আর প্রিয়া কথা বলছেন, অন্যদিকে বড়াব্বু আর পূর্ণ অফিসের কাজ নিয়ে আলোচনা করছেন, কাল একদিন বিয়ের জন্য অফিস মিস যাওয়ায় কি কি কাজ হয়েছে, কি বাকি আছে সেগুলো শুনে নিচ্ছেন পূর্ণ ভাইয়া। লোকটার সবকিছুতেই এত সিরিয়াসনেস দেখতে দেখতে মেজাজ খারাপ হচ্ছে আমার। আর প্রান্ত ভাইয়া বসে বসে বাবা-বড়ভাই এর আলোচনা শুনছেন। উনি নতুন নতুন জয়েন করেছেন অফিসে তাই উনাকে নিয়মিত অফিস যাওয়ার জন্য, কাজ করার জন্য নির্দেশ দিচ্ছেন পূর্ণ। প্রান্ত ভাইয়া বেচারা কোন উপায় না পেয়ে চুপচাপ মাথা নাড়ছেন উনার কথায়।
আমি আর রাইসা আড়চোখে একে-অপরের দিকে চেয়ে আছি উনাদের কথা শুনে। রাইসা ঠিকি বলেছিলো পূর্ণ সত্যিই প্রান্ত ভাইয়াকেও নিজের মতো সিরিয়াস বানানোর ধান্দায় আছেন! আমি চোখের ইশারায় সান্তনা দিলাম বেচারিকে, ওই-ও চোখের ইশারায় আমাকে সান্তনা দিলো এমন বোরিং সিরিয়াস জামাই পাওয়ার জন্য!
সবাইকে সার্ভ করা শেষে আমরা দুজনও বসে পড়লাম টেবিলে। খাওয়া-দাওয়া শুরু হতেই সবাই রান্নার প্রশংসা করলো। আজকের রান্নাগুলো আসলেই খুব মজা হয়েছে। বড়াব্বু, প্রান্ত ভাইয়া খুব প্রশংসা করলেন খাবারের৷ এদিকে আমি যার প্রশংসা শুনার জন্য কস্ট করে রান্না করলাম উনার কোন খবরই নেই! জনাব একমনে এমনভাবে খাচ্ছেন যেন দশদিন ধরে অনশনে আছেন!! এদিকে খাওয়া প্রায় শেষের দিকে উনার। তার মানে প্রশংসা করার মুডে নেই উনি আজ! উনাকে দেখে হতাশ হয়ে নিজের খাওয়ায় মনোযোগ দিলাম আমি! তখনি শুনলাম পূর্ণ মুখ খুললেন।
—বাহ, রান্নাগুলো বেশ ভালো হয়েছে! এটা ওই পায়েস না যেটা সেদিন খেয়েছিলাম রাইসাদের বাসায়? তারপর রাইসার দিকে চেয়ে বললেন, আজকেও খুব ভালো হয়েছে পায়েসটা। গুড জব, রাইসা। তোমার রান্না আমার পছন্দ হয়েছে। ভালোই রাধতে জানো। ভাসুর হিসেবে নতুন বউকে তো আর খালি মুখে প্রশংসা তো করতে পারিনা৷ কি গিফট চাই বলো??
পূর্ণর কথা শুনে যেমন ভালো লাগলো তেমনি কস্টও লাগলো। ভালো লাগলো কারণ উনি বাহিরে থেকে কঠোর হলেও ভেতর থেকে আন্তরিক। নতুন বউকে খালি হাতে প্রশংসা করতে হয়না গিফট দিতে চাইছেন এটা উনার থেকে আশা করিনি আমি। ভালো লাগলো কথাটা উনার মুখ থেকে শুনে।
কিন্তু কস্ট লাগলো এটা ভেবে যে উনি একটা নতুন বউয়ের প্রশংসা করলেন ঠিক আছে, তবে বাসায় যে আরও একটা নতুন বউ আছে সেটা কি মাথায় নেই উনার? উনার নিজের বউও তো আছে এখানে। আমার কি প্রশংসা শুনতে ইচ্ছে হয়না? এসব ভেবে মনটা ছোট হয়ে গেলো আমার।
রাইসা গিফটের কথা শুনে খুশি হয়ে বললো,
—ধন্যবাদ ভাইয়া। আপনি বড় ভাই হিসেবে যে গিফটই দিবেন না কেন সেটাই চলবে আমার। তবে ভাইয়া আরেকটা কথা বলার ছিল।
—কি কথা? বলো।
ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলেন পূর্ণ।
—আজকের রান্নাটা আমি আর তুরফা দুজন মিলেই করেছি। সবজিটা আমি রান্না করেছি আর আপনি যে পায়েসের কথা বললেন ওটা তুরফা বানিয়েছে।
রাইসার কথা শুনে পূর্ণ ভাইয়া এক মুহুর্তের জন্য থমকে গেলেন। পায়েসটার শেষ অংশটুকু খাচ্ছিলেন উনি। কোনমতে চুপচাপ গিললেন সেটুক। উনার মুখ দেখে হাসি পেলো আমার। ভাবলাম এবার আমার প্রশংসা না করে কই যাবে চান্দু? এখন তো বুঝলেন যে না বুঝেই এই তুরফার প্রশংসা করেছেন একটু আগে। তাই এবার সরাসরি উনার প্রশংসা শুনার আশায় আড়চোখে তাকালাম উনার দিকে। উনি এক পলক আমার দিকে তাকালেন কোমল দৃষ্টিতে, যে দৃষ্টির ভাষা আমি ঠিক পড়তে পারলাম নাহ! তবে আমার আশায় এক বালতি পানি ঢেলে দিয়ে উনি কথা ঘুরিয়ে বড়ব্বুর সাথে পুনরায় অফিসের আলোচনা করতে লাগলেন, বড়াম্মুর কোন ওষুধ লাগবে কি না সেটাও জিজ্ঞেস করলেন।
অভিমানী দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকিয়ে থাকলাম আমি। সবারই খেয়াল আছে উনার, শুধু আমারটাই নেই। যদি এমনই করা লাগতো তবে কেন বিয়ে করতে রাজি হয়েছিলেন আমাকে? অযথা এভাবে ইগ্নোর করে মানুষকে কস্ট দেওয়ার তো কোন মানে হয়না! সত্যিই উনার সাথে আর কথা বলার ইচ্ছা হলোনা আমার। যদি উনি আমাকে সবার সামনে এভাবে ইগ্নোর করতে পারেন তবে আমিও উনাকে ইগ্নোর করতে পারবো। কি মনে করেন উনি নিজেকে? অভিমানে গ/জগজ করতে করতে নিজ মনে এসব ভাবলাম আমি। তারপর সবার সাথে খাওয়া শেষ করে চলে গেলাম রুমে।
_______________
চুপচাপ সোফায় বসে ফোন টিপছি রুমে বসে। পূর্ণ রুমে এসে রেডি হলেন, ল্যাপটপের ব্যাগ নিয়ে চলেও গেলেন। আমি একটাবারও তাকাইনি উনার দিকে। যেন উনি এই রুমে আসেনই নি এমনটা ভাব ধরে ফোন টিপেছি সারাটা সময়। উনাকে ইগ্নোর করে খুব শান্তি লাগছে এখন। অন্তরে এক প্রকার পৈ/শা/চিক আনন্দ লাভ করলাম যেন! এবার বুঝুক উনি কেউ ইগ্নোর করলে কেমন লাগে? হুহ!!
উনি অফিস চলে গেলে বড়াম্মু আর রাইসার সাথে গল্প করার জন্য বের হলাম রুম থেকে। এখন একটু ভালো লাগছে, গল্প করতে মজা লাগবে!
________________
সারাটা দিন গল্প-গুজব করে ফুরফুরে মনে সন্ধ্যায় ঘরে ফিরলাম আমি! রুমে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই সাইড টেবিলে চোখ গেলো আমার। একটা বক্স রাখা ওখানে। ভ্রু কুচকে সেদিকে তাকালাম আমি। এটা আবার কখন এলো এখানে? কে-ই বা রাখলো? ভাবতে ভাবতেই খুলে ফেললাম বক্সটা। রেশমি চুড়ির রিনিঝিনি আওয়াজে থমকে গেলো মন! ঠোঁটের কোণে বিস্তৃত হলো প্রশস্ত হাসি! চুড়ির প্রতি দূর্বলতা আমার ছোটবেলা থেকেই আছে! লাল টুকটুকে কাচের চুড়ি ছুয়ে দিতেই মনটা ভালো হয়ে গেলো আমার। তবে এটা কে এনেছে সেই প্রশ্ন এলো মনে। রুমে আমি আর পূর্ণ ছাড়া তো কেউ আসেনা তেমন। তবে কি পূর্ণ এনেছেন আমার জন্য? উনি আমার জন্য চুড়ি এনেছেন ভাবতেই মন প্রফুল্ল হয়ে গেলো আমার! প্রায় সাথে সাথেই উনার শান্ত গলার আওয়াজ কানে এলো,
—যার রান্না সারাজীবনই খাবো তার প্রশংসা একদিন করে কি লাভ? ওটা না হয় অন্য কোনদিনের জন্য তোলা থাক!
পিছন ফিরতেই দেখি ওয়াশরুমের গেটের কাছে দাঁড়িয়ে আছেন উনি। মাত্র ফ্রেশ হয়ে বের হলেন! অতঃপর আমায় কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই হাত-মুখ মুছতে চলে গেলেন বারান্দায়। এদিকে উনার কথা শুনে রীতিমতো হার্টবিট বেড়ে গেছে আমার! লোকটার আচরণ বড়ই অদ্ভুত! উনাকে বুঝতেই পারিনা ঠিকভাবে আমি!
“এই ভালো এই খারাপ” উক্তিটা যেন উনাকে উদ্দেশ্য করেই লিখা হয়েছিলো..!!
#চলবে
#বৃষ্টিময়_প্রেম
#পর্বঃ২২
#লেখনীতে-তাসফিয়া হাসান তুরফা
দূর আকাশে চাঁদ উঠেছে, তার সৌন্দর্যের আলো ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে। বারান্দার এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছেন পূর্ণ, উনার থেকে খানিকটা দূরত্ব রেখে অপর পাশে দাঁড়িয়ে আছি আমি। চাঁদের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি আমি। নিজের উপর কারও দৃষ্টি অনুভব হতেই দ্রুত পাশ ফিরে তাকালাম। আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন পূর্ণ৷ আমি তাকাতেই চোখ পুনরায় চাঁদের দিকে ফেরালেন উনি! ভ্রু কুচকে গেলো আমার! আড়ালে যখন তাকিয়েই ছিলেন তখন আমি তাকানোর পর দৃষ্টি ফেরানোর মানে কি? অদ্ভুত লোক একটা!!
বেশ কিছুক্ষণ অতিবাহিত হলো, দুজনের মধ্যে কোন কথা নেই। নীরবতাটাই যেন আমাদের মধ্যে দেয়াল হয়ে দাড়িয়েছে৷ তবে কি কথা দিয়ে শুরু করবো আমি নিজেও ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম নাহ! হঠাৎ মাথায় এলো চুড়িগুলোর জন্য ধন্যবাদ বলবো উনাকে। যেই ভাবা সেই কাজ। কিন্তু উনাকে থ্যাংকস বলার জন্য মুখ খুলতেই মাঝখান থেকে ডিস্টার্ব দিলো আমার ফোন!! কর্কশ শব্দে কেপে উঠলো ফোনটা আমার হাতের মুঠোয়। সেই শব্দ শুনে পূর্ণও এতক্ষণে ঘুরে তাকিয়েছেন আমার দিকে। স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখি আমার বেস্টু বুশরা ফোন দিয়েছে! ওর নাম দেখেই কোনমতে বারান্দা থেকে বেরিয়ে এলাম আমি। কারণ পূর্ণর সামনে ওর সাথে কথা বলা যাবেনা! আর যাই হোক, দুই বান্ধবী একসাথে কথা বললে যে কি কি গল্প হয় তা আর অন্য কারও সামনে করা যায় নাকি?!
____________
রুমের বাহিরে গিয়ে কথা বলতে এসেছি বুশরার সাথে। ফোন ধরতেই শুনা গেলো ওর উত্তেজিত কণ্ঠ,
—হ্যালো তুর, শয়তান মাইয়া। বিয়ে করে তো ভুলেই গেছিস আমাকে।
—তোর মতো শেওড়াগাছের পেত্নীকে কি আর ভুলা যায় বল? মাঝেমধ্যে তো তোকে স্বপ্নে দেখে আমার ঘুমই ভেঙে যায় মাঝরাতে!! (শয়তানি হেসে)
—ধুর, ফাজিল মাইয়া। সবকিছুতেই ফাইজলামি তোর! রাখ এসব এখন!! এই সন্ধ্যাবেলা হঠাৎ কেন তোরে ফোন দিসি সেটা শুনবিনা?
—ও হ্যাঁ, তাই তো! এটাই আগে বল। জানিস, উনার সাথে কথা বলতে ধরেছিলাম ঠিক ওই টাইমে কল দিছোস তুই। আর টাইমিং পাইলিনা ভাই!!
—ওহহো এখন দেখি এসবও চলে!! পুরা বউদের মতো ডায়লগ দেওয়া শুরু করেছিস দেখছি!! যাই হোক, সরি দোস্ত। না জেনেশুনে তোদের কাবাবে হাড্ডি হওয়ার জন্য। তবে যেই কথাটা এখন বলবো ওটা শুনে তোরও মাথা ঘুরবে নিশ্চিত!!
—কি হয়েছে?? তাড়াতাড়ি বল!! তোর কথা শুনেই আমার টেনশন শুরু হইছে!!
—যাক এবার আসলি লাইনে! যেটা বলছিলাম সেটা হলো আমাদের এইচএসসির রেসাল্ট দিবে নাকি খুব তাড়াতাড়িই। শুনেই তো আমার ভয় লাগতেছে দোস্ত!! আব্বু তো বলে দিছে রেসাল্ট খারাপ হলে আমাকে রিকশাওয়ালার সাথে বিয়ে দিবে!! (কাদো কাদো গলায়)
ওর কথা শুনে এই টেনশনের মধ্যেও খুব হাসি পেলো আমার। তবুও বেস্টু বলে কথা। সান্তনা তো দিতেই হবে! তাই ওকে বললাম,
—আচ্ছা চিন্তা করিস না, আমাদের রেজাল্ট ভালোই হবে ইন শা আল্লাহ। তবে এইদিক দিয়ে আমি বেচে গেছি দোস্ত!!
—মানে? রেজাল্টের আগেই কিভাবে বেচে গেলি?
—আরে গাধি, ভুলে গেছিস আমার বিয়ে হয়ে গেছে!! তাই আর রিকশাওয়ালার সাথে বিয়ে হবে কি না এই চিন্তা করতে হচ্ছেনা, শুধু রেজাল্টের চিন্তা করলেই হচ্ছে আমার!
দাত কেলিয়ে বললাম আমি।
—ইশ দোস্ত, আজ প্রথমবার তোর উপর হিংসা হচ্ছে আমার। আসলেই মারাত্মক একটা জামাই পেয়েছিস। আমি তো রাইসার আইডিতে উনার ছবি দেখেই ক্রাশ খেয়ে ফেলেছি! এত্ত হ্যান্ডসাম ছেলেকে দুলাভাই ডাকতে হবে ভেবেই আমার মনটা ভেঙে গেছে!! (দুঃখী গলায়)
—ছি ছি! আমার জামাইয়ের উপর নজর দিস। লুচু মাইয়া কোথাকার!! দুলাভাই হয় তোর!
—বাপরে! বিয়ে না হতেই “আমার জামাই” বলা শুরু করেছিস?? তুই তো দেখি অলরেডি দুলাভাইয়ের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিস!!
বুশরার কথায় লজ্জা পেলাম আমি। হঠাৎ করেই কিভাবে রিয়েক্ট করে ফেলেছি ভাবতেই লজ্জা লাগছে এখন! যদিও একটু জেলাস ফিল হয়েছিলো ও পূর্ণ ভাইয়ার প্রশংসা করায়, কিন্তু তাও এমন রিয়েকশন দিবো সেটা বুঝিনি আমি। মুখ ফসকে বলে দিয়েছি কথাটা!! যাই হোক, বুশরার সাথে আরও কিছুক্ষণ কথা বলে, গল্পগুজব করে পরে ফিরে চলে আসছিলাম রুমে!
পথিমধ্যে দেখা হলো রাইসার সাথে। ও আমার দিকেই আসছিলো, আমাকে দেখেই বললো,
—কি রে তুরফা, তোর নাকি রেজাল্ট দিবে কয়দিন পর। জানিস কিছু??
—হ্যাঁ রে, শুনেছি। বুশরা ফোন দিয়েছিলো এজন্য এখনি। ওর থেকেই শুনলাম।
চিন্তিত মুখে বললাম।
—টেনশন হচ্ছে তোর?? (আমার গালে হাত রেখে)
—হবেনা আবার? যদিও আমি পরীক্ষা ভালোই দিয়েছি তবুও সত্যি বলতে খুব টেনশন হচ্ছে আমার।
—কিসের টেনশন হচ্ছে আমার মেয়েটার??
হঠাৎ করেই বড়াম্মুর কথা শুনে আমরা দুজন পিছন ফিরে তাকালাম। বড়াম্মু আমাদের দিকে এগিয়ে এলেন। তাকে দেখে বললাম,
—আমার এইচএসসির রেজাল্ট দিবে কয়দিন পর বড়াম্মু৷ খুব টেনশনে আছি আর বলোনা।
—এই পাগলি, এত টেনশনের কি আছে? আমি জানি তুই অনেক ভালো রেজাল্ট করবি! যা হওয়ার দেখা যাবে! একদম চিন্তা করিস নাহ!
—নাহ বড়াম্মু, তুমি জানোনা পরীক্ষার আগে টেনশনে আমার কি হাল হয়। আমার মন অন্য কোন দিকে ডাইভার্ট করতে হবে এখন! নয়তো সারাদিনই টেনশন করবো। আমাকে কোন কাজ দেও তো, বড়াম্মু!!
—আচ্ছা, তুই রুমে যেয়ে রেস্ট নে এখন। আমি ভেবে দেখছি তোকে কি কাজ দেওয়া যায় কাল!!
বড়াম্মুর কথায় মাথা নাড়লাম আমি। নিজ রুমে চলে এলাম, সাথে রাইসাও চলে গেলো ওর রুমে।
______________
সেই কখন থেকে একা একা বসে আছি রুমে। প্রচুর বোর হচ্ছি অনেকক্ষণ থেকেই। পূর্ণটা যে কই গেছেন এই রাতের বেলা আল্লাহ মালুম! মন চাইছে নিজেও রুমের বাইরে যাই কিন্তু এতক্ষণ রুমের বাইরেই ছিলাম তাই আর যেতে মন চাচ্ছেনা!
কিন্তু রুমে বসে একা একা মশাকে রক্তদান করা ছাড়া আর কোন কাজও পাচ্ছিনা আমি! রাইসার সাথে যে গল্প করব তারও সুযোগ নেই কারণ প্রান্ত ভাইয়া আছে ওর সাথে এখন। আমার নিজের বর না হয় টাইম দেয়না তাই বলে অন্যদের যেয়ে ডিস্টার্ব করব এটা মোটেও ঠিক হবেনা! ভাবলাম আমি!
উফফ,,একটা মশা বেশ অনেকক্ষণ ধরে একটু বেশিই বিরক্ত করছে। নাহ,এটাকে তো মারতেই হবে!! আমি ধরব ওটাকে কিন্তু মেইন টাইমে শয়তান মশাটা উড়ে গেলো, আমিও খুব মনোযোগের সাথে ওর পিছে পিছে ওকে মা/রতে গেলাম আর তখনি মশাটা সামনেই কিছু একটার উপর উড়ে গিয়ে বসলো। আমিও সুযোগ মতো মেরে দিলাম এক চ/ড়! যাক, এতগুলো র/ক্ত খাওয়ার পর অবশেষে মশাটা ইন্তি/কাল করলো ভেবে দাত কেলিয়ে সেই একটা হাসি দিলাম আমি!
আর তখনি হঠাৎ পূর্ণর চিৎকার শুনে আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম। সামনে উনি রক্তচক্ষু নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন কিন্তু আমি তৎক্ষণাৎ উনার এমন রাগ করার মতো কি করলাম বুঝতে পারলাম নাহ। একটা মশাই তো মে/রেছি, এর জন্য এভাবে চিল্লাতে হবে নাকি? আমি অবাক হয়ে বললাম,
–কি হয়েছে? এভাবে ষাড়ের মতো চিল্লাচ্ছেন কেন?? (ভ্রু কুচকে)
–হোয়াট দ্যা হেল? তুমি কি অন্ধ?? আমাকে মা/রলে কেন তুমি আবার এখন ষাড় বলছো?? তোমার সাহস তো খুব বেশি হয়ে গেছে দেখছি!! (চিল্লিয়ে)
–কিহ!! আজব তো। আপনাকে কখন মা/রলাম আমি? আমি তো স্রেফ ওই মশাকে মে/রেছি!
(অবাক হয়ে)
–আচ্ছা তাই? তো মিস স্টুপিড, মশাটা কোথায় বসেছে সেটা না দেখেই মে/রে দিয়েছো নাকি?
(দাতে দাত চেপে)
আমি এবার ভালো করে তাকিয়ে লক্ষ্য করলাম। উনার বাম গালের একটু নিচ বরাবর মশার র/ক্ত লেগে আছে। এটা দেখেই ভয়ে জানপাখি উড়ে গেলো আমার!! ইশরে,,তার মানে আমি বেচারার গাল বরাবর মে/রে দিয়েছি তাই বলে? এজন্যই এত রেগেছেন উনি! আল্লাহ!! হয়তো মা/রটা একটু জোরেই মেরেছিলাম মশার জন্য, তাই তো উনার ফর্সা গালের ওই জায়গাটা খানিকটা লালচে হয়ে আছে!! সেটা দেখে খুব আফসোস হলো আমার!! নিজের উপর নিজেরি রাগ হলো খুব! পূর্ণ ঠিকি বলে। আমিও আসলেই একটা স্টুপিড! কি থেকে কি করে ফেলি নিজেও বুঝিনা!!
এখন কি করবি তুই, তুরফা? আরও মশা মা/র বেশি করে!! স্টুপিড কোথাকার!!
নিজ মনেই ভেবে নিজেকে বকা দিলাম আমি। এদিকে পূর্ণ এখনও আমার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছেন। উনার রাগ তো ভাঙাতে হবে। আর কিভাবে এ কাজ করবো সেটা ভাবতে লাগলাম আমি!!
#চলবে