শালিক_পাখির_অভিমান #পর্ব_১৬,১৭

0
459

#শালিক_পাখির_অভিমান
#পর্ব_১৬,১৭
#অধির_রায়
১৬

অতিবাহিত হচ্ছে এক একটা মুহুর্ত এক একটা দিন৷ শত্রুতার রুপ দৃঢ়তা হচ্ছে৷ চেনা মুশকিল হয়ে পড়ছে কে শত্রু? কে মিত্র? উপরে সবার ভালো৷ ভালোর আড়ালে লুকিয়ে আছে প্রতিটি মানুষের অভদ্রতার মুখোশ। ছাঁদে বসে প্রহর গুনছি কখন একটু শান্তি পাবো? আফসানা চৌধুরী ছাঁদে আসেন৷ দোলনায় বসে আনমনে পা দোলাচ্ছিলাম৷ আমাকে দোলনায় দেখে আফসানা চৌধুরী রেগে যান৷ তেড়ে এসে আমার গালে কষিয়ে থা*প্প*ড় বসান৷ মন খারাপের মাঝে হঠাৎ করেই গালে থা*প্প*ড় খেয়ে রাগী দৃষ্টিতে আফসানা চৌধুরীর দিকে তাকালাম৷ আফসানা চৌধুরী দ্বিগুণ তীব্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে৷ দৃষ্টি সরিয়ে নিলাম। গম্ভীর কন্ঠে বলল,

“তোর সাহস দেখে আমি সপ্তাম আকাশের চূড়ায় পৌঁছে যাচ্ছি৷ তুই কোন সাহসে দোলনায় বসেছিস? এটা তোর বাপের তৈরি দোলনা নয়৷ তোর মতো মেয়েকে কেন বিশ্বাস করে বাড়িতে তুলছিলাম? আগের জন্মে কোন পাপ কাজ করেছিলাম৷ আল্লাহ সেজন্য আমাকে এমন শাস্তি স্বরুপ তোকে পাঠিয়েছেন।”

চোখ বন্ধ করে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করলাম৷ রাগে দেহের সমস্ত রগ ফুলে গেছে যেন৷ ইচ্ছা করছে কয়েকটা কড়া জবাব দিতে৷ মলিন কন্ঠ বললাম,

“শ্বাশুড়ি মা এটা আমার স্বামীর বাড়ি৷ এই বাড়িতে আপনার যতটুকু আপনার অধিকার আছে আমারও ঠিক ততটুকু অধিকার আছে৷ আমাকে চোখ রাঙাবেন না৷ ভালোবাসার সাথে কথা বলবেন৷”

আফসানা চৌধুরী অট্টহাসি দিয়ে বলল,

“তোর মতো মেয়েকে একবার ভালোবাসে ভুল করেছি৷ আমি জেনে শুনে পঁচা শামুকে পা কা*ট*তে চাইনা৷”

“বাহ বাহ। আপনি বাংলা ছন্দগুলো ভালোভাবে আয়ত্ত করেছেন৷ আপনার প্রশংসা করতে হয়৷ তবে আমার কাছে এসব জারিজুরি খাটবে না৷ এতোদিনে বুঝে গেছেন আমি সহজে হার মানার মেয়ে নয়৷”

“বুঝতে পারছি তুই ভালো কথার মেয়ে না৷ আমি এবার আমার অন্য রুপ তোকে দেখাব৷ তুই যদি বোনু ওল হো’স আমি পাকা তেঁতুল।”

আফসানা চৌধুরী আমার হাত ধরে দোলনা থেকে তুলে দেন৷ নিজে পা তুলে সমস্ত দোলনা দখল করেন৷ রানীর মতো হুকুম দিলেন,

“শালিক আমার পা টিপে দে৷ আমার বাড়িতে খেতে হলে আমার টিপে খেতে হবে৷ এখন আর ইহানের দিকে তাকাবো না৷ ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিব৷ আমি আমার বাড়িতে কাকে রাখব? সেটা একান্ত আমার বিষয়।”

আমি পা টিপ দেওয়ার পরিবর্তে দোলনায় অনেক জোরে দোল দিতে লাগলাম৷ নিজের ভর নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলেন না৷ ধপাস করে ছাঁদে পড়ে গেলেন৷ মুচকি হেঁসে জবাব দিলাম,

“শ্বাশুড়ি মা আমাকে মেয়ে বলে কাছে টেনে নিলে পা টিপে দিতাম৷ পায়ে তেল মালিশ করে দিতাম৷ প্রতিদিন ভালো ভালো রান্না করে খাওয়াতাম। কিন্তু আপনি এসবের যোগ্য নয়৷ আপনি এতোটাই নিচ মানের মানুষ হয়ে গেছেন ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না৷ ইহানের দেওয়া সমস্ত কাঁচের চুড়ি ভেঙে ফেলছেন৷ কেন এমন করলেন? আপনি কখনও আপনার ছেলের ভালো চাননা৷ আপনাকে আমি খুব ভালোবাসতাম৷ আপনার জায়গা আমার হৃদয়ে ছিল৷ আপনি নিজেকে ঘৃণার স্থলে কেন নিয়ে আসলেন? আমার স্বামীর দেওয়া প্রথম উপহার আপনার সহ্য হলো না৷ আমি সেদিন কিছুই বলিনি৷ শুধু দেখে গেছি আপনার কর্মকাণ্ড। ইহানকে বলেছি হাত থেকে পড়ে সব ভেঙে গেছে৷ জানেন কতোটা কষ্ট পেয়েছে ইহান৷ কাকে কি বলছি? ভালোবাসার মানে কি বুঝেন? আপনি তো বুঝেন ভালোবাসা মানে টাকা৷ আমাকে পড়ানোর মূল কারণ হলো আমাকে মাসিক বেতন দিতে হবে না৷ গরুর মতো সারা দিন রাত খাটাতে পারবেন৷ আমি আপনাদের কথা শুনেও হজম করে ছিলাম৷ মায়া ফুপি না থাকলে আমি কখনও পড়তে পারতাম না৷ আমার জন্য মায়া ফুপি অনেক কাজ করেছে৷ রাতে আমাকে যে কাজ দিছেন সব কাজ মায়া ফুপি করে দিয়েছেন৷ ইহান ভাইয়ার কাছে পড়তে গেলে কতো কটু কথা বলেছেন৷ ২ ঘন্টার বেশি ভাইয়ার রুমে থাকতে পারিনি৷ আসলেই এটা কর ওটা কর৷”

আর বলতে পারলাম না৷ ইদানীং আমার চোখের জন আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করছে৷ না চাওয়া সত্ত্বেও চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়বে৷ কথাগুলো টানা বলে রুমে চলে আসলাম৷ সেখানে দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি পাচ্ছি না৷ হাত পা অবশ হয়ে গেছে৷ ভাবতেই পারিনি এতো ভালো মানুষের মনেও কুৎসিত লুকিয়ে আছে৷ ভালোবাসার কিছু মুহুর্ত বার বার নাড়া দিচ্ছে৷ ইহান ভাইয়া আমার জন্য খাবার নিয়ে আসলেন। এখন আর নিচে বসে খাওয়া হয়না৷ ইহান ভাইয়ার চোখ চিকচিক করছে৷ ভাইয়া খাবার রেখে বলল,

“শালিক খেয়ে নাও৷ আমার খেতো ইচ্ছা করছে না৷ আমি অফিসে খেয়ে নিব৷ বলেই ফোন নিয়ে বেলকনিতে চলে গেলেন৷ কার সাথে কথা বলছে জানার ইচ্ছা নেই৷”

আমি খাবার যথা স্থানে নিচ তলায় এসে টেবিলে নজর দিলাম৷ সবাই হেঁসে হেঁসে খাবার খাচ্ছে৷ মায়া খালা সবার থালায় যথেষ্ট পরিমাণে খাবার দিচ্ছে৷ রেগুলার খাবার নষ্ট করা এই বংশের নিয়ম হয়ে গেছে৷ অল্প পরিমাণে খাবার দিলে রেগে কটমট করতে থাকে। মূল কথা হলো এদের চোখ ভরে না৷ আমি চেয়ার টেনে বসে বললাম,

“মায়া ফুপি আমাকে খাবার দেন৷ আজ থেকে আমিও এখানেই বসে খাবো৷”

খাবার টেবিলে আমি বসাতে সবার নজর আমার দিকে৷ আমাকে টেবিলে আশা করেনি৷ নিজের অধিকার বুঝে নেওয়ার জন্য নিজেকে একটু নিচু হতে হবে৷ শরীফ চৌধুরী গম্ভীর গলায় বলল,

“শত্রুর সাথে এক টেবিলে বসে কখন খাবার খাব না৷ মায়া আমার খাবার ঘরে দিয়ে আসবে।”

ইমম ভাইয়া রাগী গলায় বলল,

“বাবা তোমাকে কোথাও যেতে হবে না৷ এখান থেকে যাবে এই ছোটলোকের বাচ্চা৷ আমি তার জায়গায় বুঝিয়ে দিচ্ছি৷”

শ্রুতি ভাবী রাগে কটমট করে বলল,

“ভিক্ষারীর মুখে খারার ছুঁ*ড়ে মা*রে*ন৷ ভালো ভালো খাবার দেখে লোভ সামলাতে পারছে না৷ এই শয়তান মেয়ে আমার স্বামীর নামে বা’জে কথা বের করতে চেয়েছিল।

মাথা নিচু করে সকলের কথা হজম করে গেলাম৷ এখন আমার জবাবের পালা৷ ইহান ভাইয়া দ্রুত নিচে নামেন৷ কিছু বলার আগেই ইহান ভাইয়া আমার হাত ধরেন৷ ধমকের স্বরে বলল,

“শালিক! আমি কোন অশান্তি চাইনা৷ আমার সাথে চুপচাপ রুমে যাবে। তোমার সাথে আমার অনেক কথা আছে৷”

আজ এদের অপমানের যোগ্য জবাব না দিলে মাথায় উঠে বসবে৷ আমি এখন আর কাউকে ছাড় দিব না৷ আমি আমার অধিকার নিজে ছিনিয়ে নিব৷ আমি ইহানের ভাইয়ার কথা উপেক্ষা করে চোখ রাঙিয়ে বললাম,

“আজ থেকে আমি এই টেবিলে বসেই খাবার খাব৷ আমার সাথে বসে আপনারা খাবার খাবেন৷ আমার কথার অন্যত্র হলে বউ নির্যাতনের মামলায় সবাইকে জেলে যেতে হবে৷”

শ্বাশুড়ি মা এখানে টাকা দিয়ে আপনার আদরের ছেলে ইমনকে ছাড়িয়ে আনতে পারবেন না৷ আফসানা চৌধুরীকে উদ্দেশ্য করে বললাম। তিনি রাগী চোখে আমার দিকে তাকান৷ উনার দৃষ্টি উপেক্ষা করে শ্রুতি ভাবীর উদ্দেশ্যে বললাম,

” শ্রুতি ভাবী যাকে তুমি অন্ধের মতো ভালোবাসো সে তোমাকে কি ভালোবাসে? যার জন্য তুমি তোমার ছেলে বন্ধুদের সাথে সম্পর্ক খারাপ করছে সে কতটা ভালো তুমি যাচাই করে দেখছো? দিয়া বাড়িতে তুমি তোমার ছেলে বন্ধুসহ আরও অনেক মেয়ে বন্ধুর সাথে ঘুরতে গিয়েছিলে, সেদিন আমাকে দেখেছো দিয়া বাড়িতে৷ আমি ছাড়া আরও একজন ছিল সেখানে৷ তাকে তোমার নজরে পড়েনি৷ আমাকে নজরে ঠিকই পড়েছিল৷ আমি সেদিন তোমার নামে কোন নালিশ করিনি৷ যা বলার অন্য কেউ বলেছে।

ইমন ভাইয়া হুংকার দিয়ে বলল,

“শালিক তুই আমার সম্পর্কে কতোটুকু জানিস৷ আমার গায়ে ক’ল’ঙ্কে’র কালি লাগাতে চাস৷ ছি! তোর চেহারা যেমন তোর মনোভাবও তেমন৷ শ্রুতি তুমি তার কথা বিশ্বাস করবে না৷ আমাদের মাঝে ভাঙন সৃষ্টি করতে আসছে৷”

শ্রুতি ভাবির মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম তিনি বেশ চিন্তিত৷ তিনি জানেন আমি মিথ্যা কথা বলিনা৷ শ্রুতি ভাবীর নেত্রদ্বয় চিকচিক করছে৷ ভাঙা গলায় বলল,

“শালিক তুই আমার স্বামীর নামে একটাও বা*জে কথা বলবি না৷ তোর কাছে কি প্রমাণ আছে? তুই অন্যের গায়ে ক*ল*ঙ্কে*র কালি কখনও লাগাতে পারবি না৷”

ইহান ভাইয়া বিরক্ত স্বরে বলল,

“আহ শালিক! কি শুরু করলে৷ তোমার বলা কথা একজনের গায়ে লাগছে৷ সবার মাঝে পড়ল কথা চো*র বলে খাইনি কিছু। চল রুমে তোমার সাথে আমার অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে৷”

আমি যেতে না চাইলে ইহান ভাইয়া আমাকে পাঁজা কোলা করে রুমে নিয়ে আসেন৷ আহত কন্ঠে বলল,

“তোমার বাবার অবস্থা খুব খারাপ৷ তোমাকে এক নজর দেখার জন্য হাসফাস করছে৷ মান অভিমান ভুলে একবার তোমার বাবার সাথে দেখা করে আসো৷ মালী কাকার ফোনে প্রতিদিন ফোন দেয়৷ তোমাকে বলার সাহস পাচ্ছে না মালী কাকা৷ তোমার সামনে তোমার বাবা সাদমানের কথা তুলতেই তুমি মালী কাকার উপর রেগে ছিলে৷ তোমার বাবার অবস্থা গুরুত্বর৷ তিনি মা*রাও যেতে পারেন৷”

নিজেকে আটকিয়ে রাখতে পারলাম না৷ বুক ফেটে কান্না চলে আসো৷ সেদিন রাতের ঘটনা খুব মনে পড়ছে৷ ‘মা তুই গ্রাম থেকে পালিশে যা৷ গ্রামের মানুষ তোকে বাঁচতে দিবে না৷ বাবা সেদিন আমাকে নতুন জীবন দিয়েছেন।’ ভেজা গলায় বললাম,

“আমি আজই গ্রামে যাব৷ আমার সাথে আপনিও গ্রামে যাবেন৷ আমি একা কিছুতেই গ্রামে যেতে পারব না৷”
________

গ্রীষ্মের দুপুরে ছুঁ’ড়ে চললাম গ্রামের বাড়িতে৷ আনন্দপুর গ্রামে অনেক দিন পর পা রাখবো। ভাবতেই একটা ভালো লাগা কাজ করল৷ সাথে মনটা ভীষণ ভারী হলো৷ প্রায় আড়াই বছর হলো চো*রের অপবাদ নিয়ে গ্রাম ছেড়েছি। আজও কি আমাকে চো*র বলে সবাই আখ্যায়িত করবে৷ মনে মনে তীব্র প্রতিজ্ঞা নিলাম আমার নামে যে চো*রের অপবাদ দিয়েছেন তাকে চিরতরে শেষ করে দিব৷ হোক আমার বড় খালা৷ মনের মাঝে প্রতিশোধের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে৷

আনন্দপুর আসতে আসতে সন্ধ্যা হয়ে গেল৷ আকাঁবাকাঁ মেঠো পথ ধরে হেঁটে যাচ্ছি আমরা দুইজন৷ ইহান ভাইয়া হাঁটতে পারছেন না৷ বার বার হাঁপিয়ে যাচ্ছেন৷ আমারও পা চলছে না৷ মন বলছে এখানে বসে একটু জিরিয়ে নিতে৷ গ্রামের রাস্তা ভালো না৷ অন্ধকার হওয়ার আগেই বাড়ি যেতে হবে৷ মাগরিবের আযান পড়ে গেল৷ তখন একটা ভ্যান গাড়ি পেলাম৷ ভ্যান গাড়িওয়ালা আমার নাম জানাতে চাইলে নাম বললাম না৷ হিজাবের কারণে শুধু চোখ দুটো দেখা যাচ্ছে৷ মনে হয় আমাকে চিনে ফেলেছেন৷ ভ্যানওয়ালা আমাদের বাড়ির পাশেই থাকে। আবারও প্রশ্ন করল,

“সাদমান আহমেদ তোমার কি হয়? তাদের বাড়িতে তোমরা কেন যাচ্ছো? তোমাদের আগে আনন্দপুর দেখিনি৷”

কাশি দিয়ে গলা পরিষ্কার করলাম৷ নরম স্বরে বললাম,

“চাচা আমরা শালিকের মা বাবার সাথে দেখা করতে যাচ্ছি৷ শালিক আমাদের এই গ্রামে পাঠিয়েছে। তার বাবা মায়ের একটু খোঁজ করতে৷ মেয়েটা ভীষণ ভালো৷ এতো দূরে থেকেও মা বাবাকে ভুলেনি৷

ভ্যানওয়ালা রাগী স্বরে বলল,

“ওই অপয়ার নাম বলবেন না৷ অপয়া মেয়ে আমাদের গ্রাম থেকে যাওয়ার পর আমাদের গ্রামে শান্তি স্থাপিত হয়েছে৷ অপয়ার মুখ দেখলে কারোর ভালো হতো না৷ কি কালার কালা?”

“শালিককে কি গ্রাম থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে? আপনার কথা বলার ধরণ দেখে বুঝা যাচ্ছে।”

“সাদমান সবাইকে বলছে বাড়ির পাশের নদীতে ঝাপ দিয়ে মা*রা গেছে৷ কিন্তু আপনাদের কথা শুনে বুঝলাম অপয়া মেয়েটা এখনও বেঁচে আছে?”

“শালিকের জীবনে কি হয়েছিল?”

“শালিল একটা লোভী মেয়ে ছিল৷ নিজের বোন শাকিলার বিয়ের গহনা চুরি করছে৷ তার ফুপি আর দাদীকে বি*ষ দিয়ে মেরে ফেলেছে৷ এমন খু*নী মেয়ে আমি কোনদিন দেখিনি৷”

শালিক ভ্যানওয়ালার কথা শুনে বুঝতে পারল তার কথা মানুষের মনে এখন গেঁথে আছে৷ তাই সে ঠিক করল এবার নিজেকে নিঃদোষ প্রমাণ করতে৷

চলবে….

#শালিক_পাখির_অভিমান
#পর্ব_১৭
#অধির_রায়

বাড়িতে কান্নার রোল পড়ে গেল৷ কখনও আশা করেনি আমাকে৷ সবাই ভেবে নিয়েছে আমি মা*রা গেছি৷ শাকিলা এতোটা জোরে চেপে ধরে আছে শ্বাস নিতে পারছি না৷ অপর প্রান্তে অপরাধী চোখ মেলে তাকিয়ে আছেন আমার ভাই আরাফ৷ চোখ ভেজা মুখে উজ্জ্বল হাসি৷ প্রিয় জিনিস বহু বছর পর ফিরে পেয়েছেন৷ বাবা ধীর পায়ে আমার সামনে আসেন৷ আমাকে এক পলক দেখে বলল,

“শাকিলা ওকে আমার সামনে থেকে চলে যেতে বল! আমি তার মুখও দেখতে চাইনা৷ আমার এক মেয়ে এক ছেলে৷ তার কোন জায়গায় নেই এ বাড়িতে৷”

বাবার রাগ হওয়াটা স্বাভাবিক। শুধু একবার কথা বলার জন্য কতোই না ছটফট করছেন৷ মালী কাকা বাবার প্রসঙ্গ তুললেই ভীষণ রেগে যেতাম৷ আমার মনে এতোটাই অভিমান জমেছে আমার মায়ের সাথেও একবার কথা বলিনি৷ যদিও মা এসব কিছু জানতেন না৷ তিনিও সকলের মতো জানেন আনন্দপুরে শালিক নামে কেউ নেই৷ শালিক দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছে৷ মা আঁচলে মুখ ঢেকে কান্না করছেন৷ আমার পাশে বিরক্তি হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন ইহান ভাইয়া। তার দিকে কারো নজর নেই৷ শালিকা নজর পড়ল ইহান ভাইয়ার উপর৷ শাকিলা ভেজা কান্না জনিত কন্ঠে প্রশ্ন করল,

“আপু তোমার পাশে সুন্দর ছেলেটা কে? তোমার সাথে এখানে এসেছে কেন?”

“উনার নাম ইহান। উনার সাথে কিছুদিন আগে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছি৷”

কথা শেষ করার আগেই শাকিলা ওড়না ঠিক করে ঘরের দৌড় দেয়৷ শাকিলার এমন কান্ডে ঘাবড়ে গেলাম কিছু মুহুর্তের জন্য। দৌড়ে চেয়ার নিয়ে আসে ইহান ভাইয়ার জন্য৷ মুচকি হেঁসে বলল,

“দুলাভাই আপনি খুব সুন্দর। আমার একটা প্রশ্ন ছিল আপনার কাছে?”

ইহান ভাইয়ার আমার দিকে তাকান৷ তিনি কিছুই বুঝতে পারছেন না৷ আমি আশ্বাস দিয়ে চোখের ইশারায় বললাম,

“আমার বোন শাকিলা৷ একটু চঞ্চল টাইপের মেয়ে৷ মনটা খুব ভালো৷”

ইহান ভাইয়া মুচকি হেঁসে বলল,

“কি জানতে চাও?”

শালিকা নিজেকে আটকিয়ে রাখতে পারল না৷ আনন্দে উচ্ছাসে বলল,

“আপনি দেখতে অনেক সুন্দর। সেটা ঠিক আছে৷ কিন্তু আপনার মাথার চু*ল লাল কেন? আপনি কি ১৯৭১ সালের পাক সেনাবাহিনী। দাদীর কাছে শুনেছি তাদের চুল লাল ছিল৷”

এমন প্রশ্নে ইহান ভাইয়া ভালোভাবে ভ্যাবাচেকা খান৷ তিনি অহেতুক এমন প্রশ্নের কখনও সম্মুখীন হননি৷ কি উত্তর দিবে ভেবে পাছে না? বড় খালা দৌড়ে চিৎকার করতে করতে আসেন৷ উনার মুখে এখনও সেই ত্যাজ৷ আমাকে অগ্নি দৃষ্টিতে প্রখর করছেন৷ যেন এখনই জ্বা’লি’য়ে পু*ড়ি*য়ে মা*র*বে৷ হুংকার দিয়ে বলল,

“আপয়া শালিককে এই বাড়িতে ঢুকতে দিল? আরও একবার সোনা চু*রি করতে এসেছে৷ তোরা কেউ অপয়াকে বাড়ি থেকে বের করতে পারবি না৷ আমি নিজেই একে বাড়ি থেকে বের করছি৷ এমন শাস্তি দিব জীবনেও ভুলতে পারবে না৷”

বড় খালার হুংকারে বাড়িতে কোলাহলের রোল পড়ে গেল৷ আমি এখানে আসছি বিশ মিনিটও হয়নি। বড় খালাকে খরব কে দিল? আর যেই বড় খালাকে খরব দেখ খবর দিয়ে ভালোই করছে। আজ আমি বড় খালাকে ছাড়ব না৷ আমি বুঝিয়ে দিব আমি কে? বড় খালা আমার গায়ে থা*প্প*ড় মারার জন্য হাত তুলতেই আমি হাত ধরে ফেলি৷ উল্টো দুইটা থা*প্প*ড় বড় খালার গালে বসিয়ে দেয়৷ লোকজন আমার দিকে তেড়ে আসতে নিলেই পাশে রাখা দা নিয়ে বড় খালার গলায় ধরি৷ চিৎকার করে বললাম,

“আমি আমার নিজের ভাগ্য লিখতে জানি৷ আমার কি হবে আমি জানি না? যে আমার গায়ে হাত তুলার চেষ্টা করবে তাকে আমি দুনিয়া থেকে বিদায় করে দিব৷”

নিজেকে নিঃদোষ প্রমাণ করার জন্য এ সুযোগ কাজে লাগালাম। আহ্লাদী স্বরে বললাম,

“খালা ও খালা৷ সেদিন আমার ড্রয়ারে আর ফুপির ব্যাগে সোনা কে রাখছিল?”

বড় খালা আমতা আমতা করে বলল,

“আমি জানি না৷ তোর ফুপির সাথে নাকি তুইও সেদিন চু*রি করছিলি৷”

চিৎকার চেঁচামেচিতে সাদাফ ভাইয়া দৌড়ে আসে৷ হুংকার দিয়ে বলল,

“শালিক আমার মাকে ছেড়ে দে৷ আমার মায়ের কিছু হলে তোকে আমি খু’ন করে ফেলব৷”

আমার দিকে তেড়ে আসতেই ইহান ভাইয়া সাদাফ ভাইয়াকে পা বাজিয়ে ফেলে দেন৷ ইহান ভাইয়া শান্ত গলায় হুমকি দিয়ে বলল,

“আমার স্ত্রীর সাথে উঁচু গলায় কথা বললে আমি সব তছনছ করে দিব৷ শ্বাস নেওয়ার মতো কেউ বেঁচে থাকবি না৷ শালিক তুমি তোমার কাজ চালিয়ে যাও৷ নিজেকে আজই নিঃদোষ প্রমাণ করো।”

আমি একটু জোরে চেপে ধরি৷ খালার গলার চামড়া কেটে যায়৷ রাগী গলায় বললাম,

“সত্যি বলবি নাকি তোকে মে*রে ফেলব৷”

খালা কান্না করতে করতে বলল,

“আমি সত্যি কথা বলছি৷ আমাকে মে*রো না৷ সেদিন আমিই ড্রয়ারে আর ব্যাগে সোনা রাখছি৷ তোকে গ্রাম থেকে বের করে দেওয়ার জন্য আমিই সবাইকে বলছি পাথর নিক্ষেপ করতে৷”

মায়ের এমন কথা শুনে সাদাফ ভাইয়া চমকে যায়৷ তিনি নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না৷ দুই কদম পিছিয়ে যান শাকিলা দৌড়ে সাদাফ ভাইয়া ধরে৷ আমি লাথি দিয়ে বড় খালাকে উঠানে ফেলে দিলাম৷ আমি কখন অমানুষ হয়ে গেছি জানা নেই । সকলের উদ্দেশ্য বললাম,

“আসল চো*র আপনাদের সামনে৷ আমার কাছে আমার খালা সেদিন মা*রা গেছে যেদিন আমাকে মে*রে ফেলার জন্য নদীতে ফেলে দিয়েছিল৷ সেজন্য উনার প্রতি কঠোর হতে আমার একটুও ভয় করল না৷ আমি আগের ভীতু শালিক নয়৷ আমার সাথে উঁচু গলায় কথা বললে তার জিহ্ব কে*টে দিব৷”

হনহন করে আমি আমার স্মৃতিময় দাদীর ঘরে চলে আসলাম। এখনো সেই চৌকি অযত্নে পড়ে আছে৷ বুক ফেটে কান্না আসল৷ ওদিকে ওদিক তাকিয়ে নিজের কান্না থামানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছি৷ কিছুই চোখ থেকে জল পড়া বন্ধ হচ্ছে না৷ ইহান ভাইয়া আমার কাঁধে হাত রাখেন৷ চকিত হয়ে উনার দিকে তাকায়। আহত কন্ঠে বলল,

“আল্লাহর কাছে দোয়া করো তাদের জন্য৷ আল্লাহ তাদের জান্নাত দান করবেন৷”

নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না৷ উনাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না শুরু করে দিলাম৷ ইহান ভাইয়ার বুকটা আমার কাছে সবথেকে বড় আশ্রয়ের স্থান মনে হলো৷ ইহান ভাইয়া আমার মাথায় বিলি দিয়ে বলল,

“আমি তোমাকে একটা কথা বলতে চাই৷ রাখবে আমার কথা?”

আমি ভেজা চোখে ইহান ভাইয়ার মায়াভরা মুখটার দিকে তাকালাম৷ ভেজা গলায় বললাম,

“আপনার কথা আমি অক্ষরে অক্ষরে পালন করব৷”

“তোমাকে যে বাড়িতে অপমানিত হতে হয়েছে আমি তোমাকে সেই বাড়িতে আর রাখতে চাইনা৷ দিনের আলো ফুটতেই আমরা গ্রাম ছেড়ে ঢাকা চলে যাব৷”

ইহান ভাইয়ার কথায় বুকটা ধুমরে মুচড়ে উঠল৷ নিজের জন্মস্থান ছেড়ে যেতে কেমন জানি ভয় হলো৷ বুকের কোণে সূক্ষ্ম ব্যথা অনুভব করলাম। তবুও মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলাম৷ শাকিলা রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলল,

“আপু তোমাদের খাবারের জন্য ডাকছেন৷ বাবা বসে আছে তোমাদের জন্য৷ ডাক্তার উনাকে ঠিক সময়ে খাবার খেতে বলছে৷”

আমি ইহান ভাইয়ার হাত ধরে ভাইয়ার ঘরে নিয়ে গেলাম৷ ভাইয়ার ঘরে টেবিলে খাবারের ব্যবস্থা করেছে৷ খাওয়া শেষ করে আমাদের ঘুমাতে দেওয়া হলো ভাইয়ার ঘরে৷ হাঁটতে হাঁটতে ইহান ভাইয়া ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন৷ উনি বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই ঘুমিয়ে পড়েছেন৷ ঘুম নেই চোখের পাতায়৷ আমি নদীর ঘাটে এসে বসলাম৷ এতো গরমে ইহান ভাইয়া কিভাবে ঘুমাল? নদীর ঘাটে শীতল হাওয়া বইছে৷ এক মনে বয়ে চলা নদীর পানি দেখছিলাম৷ শালিকা আমার ঘা ঘেঁষে বসল৷ আগের মতো চঞ্চল নেই শালিকা৷ মুখে নেমে এসেছে মলিনতা৷ হাসতে ভুলে গেছে৷ মলিন কন্ঠে বলল,

“আপু তোকে আমি খুব মিস করি৷ তোর শূন্যতা বারবার চোখে পড়ে৷ তুই চলে আয় গ্রামে৷ তোকে ছাড়া আমি ভালো নেই৷”

আমি শালিকার গায়ে আলতো করে হাত রাখতেই শাকিলা “আউচ” করে উঠল৷ সন্ধ্যায় বেলা অভিমানে বোনটাকে জড়িয়ে ধরতে পারিনি৷ ব্যস্ত গলায় বললাম,

“কি হয়েছে তোর পীঠে৷ এমন চিৎকার করে উঠলি কেন?”

শালিকা আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিল৷ ভেজা গলায় বলল,

“বড় খালা গরম পানি পীঠে ঢেলে দিয়েছে৷ বাবার কাছে সব সময় যৌতুকের টাকা চান৷ বাবা যৌতুকে টাকা দিতে না পারায় আমাকে উঠতে বসতে কথা শুনান৷ কথায় কথায় মা*রে*ন৷ বাড়ির সমস্ত কাজ আমাকে দিয়ে করান৷ তবুও বড় খালার মন জয় করতে পারলাম না৷ সাদাফ ভাইয়া কিছুই বলে না৷ আমাকে বলে ‘মা বললে আরও একটা বিয়ে করব।’ আমি সাদাফ ভাইয়াকে খুব ভালোবাসি। আমি উনাকে ছাড়া বাঁচবো না৷ সেদিন মা ছেলে মিলে পাত্রী দেখতে গিয়েছিল৷ দুই লক্ষ টাকা যৌতুক চেয়েছেন৷”

শালিকার আমাকে জড়িয়ে ধরে বাচ্চাদের মতো কান্না করছেন৷ আমার চোখ থেকে রক্তের বন্যা বয়ে গেল৷ আমি প্রতিজ্ঞা করলাম বড় খালাকে নিজের হাতে খু’ন করব৷ নদীতে ভাসিয়ে দিব৷ কোন প্রমাণ থাকবে না৷ শালিককে জড়িয়ে ধরতেও পারলাম না৷ অগ্নি মূর্তি ধারণ করে বললাম,

“তুই ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়৷ আমি তোর সাথে সকালে কথা বলব৷ ইহান ঘুম থেকে উঠে আমাকে না দেখলে ভয় পাবে৷

আমি রুমে এসে ভাইয়ার সারাঘর তন্নতন্ন করে খুঁজতে লাগলাম৷ একসময় পেয়ে গেলাম রাম দা৷ আমার কথা না ভেবে রাম দা বেরিয়ে পড়লাম খালার বাড়ির উদ্দেশ্য। খালা উঠানে মাদুর বিছিয়ে ঘুমাচ্ছেন। ফিসফিসে খালার ঘুম ভাঙালাম। লোভ দেখিয়ে খালাকে নদীর ঘাটের দিকে নিয়ে আসলাম৷ এখানে লুকিয়ে রাখা হয়েছে রামদা৷ খালার হাতে দশ হাজারের মতো টাকা দিয়ে করুন স্বরে বললাম,

“খালা শাকিলাকে আর মে*রো না৷ আমি তোমাকে প্রতিমাসে টাকা পাঠাবো৷”

খালা কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলে৷ চাঁদের আলোয় টাকাগুলো দেখতে থাকে৷ সুযোগ বুঝে রাম দা দিয়ে খালাকে কু*পা*নো শুরু করলাম৷ খালা অনেক জোরে চিৎকার করল৷ খালাকে নদীতে ধাক্কা দিয়ে সেখান থেকে দৌড়ে চলে আসি৷ রামদা ভালোভাবে ধৌত করে যথাস্থানে রেখে দিলাম৷ সারা দেহে কম্পন শুরু হয়ে গেছে৷ আমি এ কি করলাম? বারবার নদীতে গোসল করছি৷ একের পর এক ঢোপ দিচ্ছি।

জামা পাল্টিয়ে শুয়ে পড়লাম৷ আর ঘুম হলো না৷ সকালে খবর এলো কে যেন খালাকে কু*পি*য়ে হত্যা করেছে? স্বাভাবিক ভাবেই আমার বুক কাঁপতেছে৷ কান্না করে যাচ্ছে সবাই৷ আমার চোখে বিন্দুমাত্র পানি নেই৷ সবাই খালাকে দেখতে গেছে৷ আমি রয়ে গেছি একা৷ আশেপাশে টাকা পড়ে থাকার জন্য কেউ কেউ বলছেন ডা*কা’তদের কাজ এটা৷ টাকা দেননি বলে এমন কাজ করেছে৷ সবার চোখ ফাঁকি দিতে পারলেও ইহান ভাইয়া বুঝে গেছেন এটা আমি কারছি৷ আমার হাত শক্ত করে চেপে ধরেন৷ আমাকে টেনে রুমে নিয়ে আসেন৷ কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বলল,

“বোরকা পড়ে নাও৷ আমরা এখনই চলে যাব। আমি তোমার বাবার সাথে কথা বলে নিচ্ছি৷”

বাবা সকালে উঠেই বাজারে চলে গেছেন৷ যতই আমাকে অপমান করেন আমার জন্য উনার মন কাঁদে৷ এই মাত্র বাজার থেকে মাছ কিনে বাড়ি ফিরলেন৷ তিনি রাস্তায় এসে জানতে পারেন৷ ইহান ভাইয়াকে বাবাকে বলল,

“আমরা ঢাকা ফিরে যেতে চাই৷ কাল থেকে শালিকের পরীক্ষা। আপনার শরীর খারাপের কথা শুনে শালিক এসেছে৷ না হলে শালিক কোনদিনও বাড়িতে আসতো না৷”

বাবার মুখ শুকিয়ে গেল৷ মলিন কন্ঠে বলল,

“তোমরা খেয়ে যাবে না৷ সকাল বেলা না খেয়েই চলে যাবে৷”

“আমাদের ট্রেনের টিকেট কাটা হয়ে গেছে অনেক আগেই৷ দেরি হলে ট্রেন মিস করব৷ শালিকের পরীক্ষা শেষ হলে আমরা আসবো৷ তখন অনেক দিন থাকব৷”

আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে সব কথা শুনছিলাম৷ আমারও খুব ভয় হচ্ছে৷ পুলিশ যদি আমাকে ধরে নিয়ে যান৷ আমি গলা বাড়িয়ে ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললাম,

“আপনি চলে আসেন৷ আমি কাউকে বলতে বলছি, আমরা চলে যাব। আমি জানতাম সাদমান আহমেদ মা*রা গেছেন৷ উনাকে মাটি দিতে আসছিলাম। মাটি দেওয়া শেষ৷ এখন আমরা চলে যাব৷”

আমার কথা বাবা ভীষণ কষ্ট পেল৷ চোখ দুটো চিকচিক করে উঠল৷ উনাকে উপেক্ষা না করে ইহান ভাইয়ার হাত ধরে বাহিরে চলে আসলাম৷ রাস্তায় বের হতেই ভ্যান পেয়ে গেলাম৷ ভ্যানে করে বড় সড়কের উদ্দেশ্য রওনা দিলাম৷ পিছন থেকে মা ডেকে যাচ্ছেন কিন্তু কান অব্ধি পৌঁছাল না। শাকিলা ওঁ বাড়িতে চলে গেছে৷ ভ্যানের গতি দ্রুত করায় আমরা কোথাও বিলীন হয়ে গেলাম৷ বাসে উঠতেই মাথা থেকে বুঝা সরে গেল। ইহান ভাইয়ার কাঁধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করলাম৷ বাসের জানালা দিয়ে হাওয়া বইয়ে৷ তবুও ঘেমে একাকার হয়ে যাচ্ছি৷ অস্থিরতা কাজ করছে৷ কখন ইহান ভাইয়া কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছি জানা নেই৷ চোখ মেলে নিজেকে ভাইয়ার রুমে আবিষ্কার করলাম৷ সারা রাত ঘুম হয়নি সেজন্য কিছুই জানতে পারিনি৷ ভাইয়া আমার ঘুম ভাঙায় নি৷ দুইটা গাড়ি পাল্টাতে হয় চৌধুরী ভিলায় আসতে।

চলবে….

শালিক নিজ হাতে শাস্তি দিয়েছে ইহান ছাড়া অন্য কেউ কি জানতে পারবে? জানতে পারলে আইন শালিককে শাস্তি দিতে পারে৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here