শালিক_পাখির_অভিমান #পর্ব_১৮,১৯

0
443

#শালিক_পাখির_অভিমান
#পর্ব_১৮,১৯
#অধির_রায়
১৮

চোখ মেলে তাকাতেই নিজেকে আবিষ্কার করলাম বিছানায়৷ সামনে বিচলিত চোখে দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে আছেন ইহান ভাইয়া৷ চোখে মুখে প্রশ্নের আভাস হানা দিচ্ছে৷ সমস্ত দেহ কম্পন শুরু হলো৷ আমার কাছে রুমটা অচেনা অচেনা লাগছে৷ কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,

“আপনাদের বাড়ি টিনের বাড়িতে পরিণত কিভাবে হলো? আমি তো বাসে ঘুমিয়ে পড়ছিলাম৷ আমি কিভাবে রুমে আসলাম?”

আমার কথা ইহান ভাইয়ার চোখ সরু হয়ে যায়৷ তিনি ভু*ত দেখার মতো আমার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন৷ সরু কন্ঠে বলল,

“আমরা আনন্দপুরে আছি৷ তোমাকে অনেকক্ষণ থেকে ডেকে যাচ্ছি৷ তুমি কোন সাড়া দিলে না৷ আমি অনেক ভয় পেয়ে গেছিলাম৷ পা’গ’লের মতো কি যেন বলছিলে? তুমি কোনদিন নামাজ কাযা করো না৷ সবার আগে উঠে সালাত আদায় করো৷ মধুর কন্ঠে কুরআন শরীফ তেলওয়াত করো৷ আজ এতো বেলা হয়ে গেলে তুমি ঘুম থেকে উঠ নি। তোমার কি শরীর খারাপ?”

ইহান ভাইয়ার কথা শুনে আমি চমকে উঠি৷ আমরা তো ঢাকা ফিরে গেছিলাম৷ আমি বাসে ইহান ভাইয়ার কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ি৷ রাতের ঘটনা মনে পড়ল। আমি বড় খালাকে কু*পি*য়ে হত্যা করছি৷ বড় খালার বুক ফা’টা’নো চিৎকার কানে আসতেই ইহান ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরি৷ উত্তেজিত কন্ঠে বললাম,

“আমি এখানে এক মুহুর্তও থাকব না৷ আমি ঢাকায় যাবো। এখানে থাকলে আমাকে ওঁরা মেরে ফেলবে৷”

ইহান ভাইয়াও আমাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরল৷ কোমল গলায় বলল,

“আমি থাকতে কোন বিপদ তোমার ধারের কাছেও আসতে দিব না৷ আমি বেঁচে থাকতে তোমার গায় ফুলের টুকাও দিতে পারবে না৷ কে তোমাকে মা’র’তে চায়?”

আমি হাউমাউ করে কান্না করতে থাকলাম৷ ভেজা গলায় বললাম,

“আমি কাউকে খু’ন করিনি৷ আমাকে পুলিশ দিবেন না৷”

মনের মাঝে অস্থিরতা কাজ করছে৷ কম্পন কিছুতেই কমছে না৷ আমি গুটিশুটি হয়ে ইহান ভাইয়ার বুকে মুখ লুকিয়ে বসে আছি৷ ইহান ভাইয়া শান্ত গলায় বলল,

“তুমি খারাপ স্বপ্ন দেখছো! দুই রাকাত সালাত আদায় করে নাও। মাথা থেকে সব চিন্তা দূর হয়ে যাবে৷ আল্লাহর এবাদতের মাধ্যমে নিজেকে শান্ত করতে পারবে৷ তুমি নিজেকে শক্ত করো৷ আমি তোমার এমন দুর্বল চেহারা দেখতে পাব না৷”

ইহান ভাইয়া আমার কপালে ভালোবাসার পরশ একে দিল৷ স্বপ্ন ভেবে নিজেকে একটু শান্ত রাখার চেষ্টা করলাম৷ কিন্তু মাথায় খু’ন করার ভাবনা চেপে বসে আছে৷ সালাত শেষ হতেই ছুঁটে গেলাম শাকিলার কাছে৷ হন্তদন্ত হয়ে রাগী স্বরে বললাম,

“সাদাফ ভাইয়া তোকে যৌতুকের জন্য প্রতিদিন মা’রে। যৌতুক দেওয়া নেওয়া দণ্ডনীয় অপরাধ। তুই পুলিশকে জানাতে পারিস না৷ আমি বড় খালাকে কিছুতেই ছাড়ব না৷ আমার আদরের বোনের গায়ে হাত তুলার সাহস কোথা থেকে পেল? আমি বড় খালার হাত কে*টে নিব৷”

শাকিলা আমার কথা শুনে রেগে যায়৷ চোখে মুখে নেমে আসে এক আকাশ বিরক্তি৷ অসহায় দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকায়৷ বিচলিত কন্ঠে বলল,

“পা*গ*ল হয়ে গেছিস শালিক৷ আমাকে বড় খালাকে কখনও মা’রে’ন না৷ আমাকে নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসেন৷ আমাকে কোন কাজই করতে দেন না৷ বড় খালা শুধু তোকেই দেখতে পারে না৷ উপর থেকে শক্ত মনের মানুষ কিন্তু ভিতর থেকে কোমল হৃদয়ের অধিকারী।”

উঁচু গলায় বললাম,

“আমি বড় খালার কুটনীতি বুদ্ধির সাথে জড়িত৷ সিরাজের বড় খালা যেমন ঘষেটি বেগম ঠিক আমাদের বড় খালা৷ সিরাজ মা*রার জন্য দিনরাত এক করেছিল বড় খালাও আমাদের ক্ষতি করার জন্য দিনরাত এক করেছে৷ আমার সাথে যেসব অন্যায় করেছে তার শাস্তি উনাকে পেতেই হবে৷ আমি উনাকে পুলিশে দিব৷”

কথা না বাড়িয়ে হনহন করে বেরিয়ে আসি৷ নিজেকে ঠিক রাখতে পারছি না৷ বড় খালাকে আমি শাস্তি না দিলে আমার দাদী আর ফুপির আত্মা শান্তি হবে না৷ আমি আরাফ ভাইয়াকে নিয়ে থানায় চলে আসলাম৷ তারপর পুলিশকে সকল ঘটনা খুলে বললাম৷ খালার জন্য সু’ই’সা’ই’ড করতে বাধ্য হয়েছে আমার ফুপি আর দাদী৷ গ্রামের সবাই সাক্ষী দিবে বড় খালা আমাদের ফাঁসিয়ে আমার জীবন নষ্ট করেছেন। আমি উনার শাস্তি চাই৷ দুপুরের দিকে পুলিশ সাথে নিয়ে বাড়িতে আসি৷ সোজা বড় খালাদের বাসায় চলে যায়৷ বড় খালা আমাকে দেখে কাঁপতে থাকে৷ বিনয় স্বরে বলল,

“শালিক আমার কোন ক্ষতি করিস না৷ আমি বুঝতে পারিনি তোর ফুপি আর দাদী মা*রা যাবেন৷ আমি শুধু তোদের বাড়ি থেকে বের করতে চেয়েছিলাম।”

হুংকার দিয়ে বললাম,

“ক্ষমা করা মহৎ গুণ৷ আপনাকে ক্ষমা করলে আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করবেন না৷ আমার ফুপি, আমার দাদী কবরে অনেক কষ্টে আছেন৷ আ*ত্ন*হ*ত্যা মহাপাপ জেনেও উনারা আ’ত্ম’হ’ত্যা করেছেন৷ এজন্য আপনি দায়ী৷ আপনার মতো কিছু মানুষ আছে বলেই আজ আমরা এতো অবহেলিত। আমার সাথে পুলিশ এসেছে৷ আজ আপনার পাপ পরিপূর্ণ হয়ে গেছে কেউ আপনাকে বাঁচাতে পারবে না৷”

খালা আমার সামনে হাত জোর করে বলল,

“শালিক আমাকে এতো বড় শাস্তি দিবি না৷ আমার উপর একটু দয়া কর৷ আমি আর কোনদিন খারাপ কাজ করব না৷ আমি কাউকে কোনদিন অপমান করব না৷”

ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে বললাম,

“ভাইয়া বড় খালাকে নিয়ে যেতে বল৷ আমি উদার মনের মানুষ নয়৷ কেউ দোষ করলে তাকে শাস্তি পেতেই হবে৷”

চোখে আগুন মনে কষ্টের পাহাড় জমে আছে৷ নিজের সিদ্ধান্ত থেকে আমি ইঞ্চিও ছাড় দিলাম না৷ নিজের সিদ্ধান্তে অটুট থাকলাম৷ পুলিশ বড় খালাকে ধরে নিয়ে গেলেন৷ আমি বাড়িতে চলে আসলাম৷ আমি আর আনন্দপুরে এক সেকেন্ডও থাকব না৷

ইহান ভাইয়া নদীর তীরে বসে ছিপ ফেলে মাছ ধরছেন৷ খুব আনন্দের সাথে কাজ করছেন৷ উনাকে দেখে মনে হচ্ছে উনি গ্রামে এসে খুব খুশি৷ আমি উনার পাশে বসলাম৷ মুচকি হেঁসে বললাম,

” আপনি সকালে খাবার খাননি কেন?”

নদীর স্রোতের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,

“তুমি সকাল বেলা কোথায় চলে গেলে? তুমি বাড়িতে নেই সেজন্য খাইনি৷ তোমাকে রেখে আমি খেতে পারব না৷”

“আপনাকে শাকিলা অনেকবার খাবার খেতে ডেকেছে৷ আপনি খাননি কেন? আপনি খাননি বলে সবাই ভাবছে আপনি তাদের অপমান করছেন৷ এখানে এসে অনেক কষ্ট করছেন৷ আপনাকে এখানে থাকতে হবে না৷ আজ রাতেই আমরা ঢাকা চলে যাব৷”

শান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আমার দিকে তাকায়৷ আমি গরম চোখে উনার দিকে তাকিয়ে আছি৷ চোখের দৃষ্টি নিচে রেখে অসহায় কন্ঠে বলল,

“তোমাদের গ্রাম দেখাবে না আমায়৷ আমি কোনদিন গ্রাম দেখিনি৷ প্রথমবার গ্রামে আসলাম৷ ছোট থেকে বেড়ে উঠা ঢাকা শহরে৷ খোলা আকাশের নিচে সবুজে ঘেরা গ্রামটা দেখে খুব ভালো লেগেছে৷”

বিচলিত মায়া কন্ঠে বললাম,

“আমরা আজ রাতেই ঢাকা ফিরব৷ পরের বার আপনাকে নিয়ে এসে গ্রাম ঘুরে ঘুরে দেখাব৷”

আমার কথায় উনার মুখ কালো হয়ে গেল৷ মলিন হাসার চেষ্টা করল৷ আমার মন কিছুতেই এখানে টিকছে না৷ উনাকে খুশীকে প্রাধান্য দিতে পারলাম না৷ যে মানুষটা আমার জন্য সবার সাথে যুদ্ধ করছেন তাকে একটু সময় দিতে পারলাম না৷ হাত কাচুমাচু করে বললাম,

“এখনও উদরে কিছু পড়েনি৷ আমার উদরে ইঁদুর দৌড়াদৌড়ি করছে৷ চলেন একসাথে খাব৷ আর মাছ ধরতে হবে না৷”
_____
চলে যাওয়ার কথা শুনে সকলের মুখ কালো হয়ে গেল৷ আরাফ ভাই অপরাধীর মতো বলল,

“শালিক আর একটা রাত থেকে যাহ৷ আমাদের জন্য হলেও আর একটা রাত থেকে যাহ৷ সকালে ভোরের আলো ফুটতেই চলে যাবি৷ কেউ তোদের বাঁধা দিবে না৷”

আমি বিরক্তি নিয়ে বললাম,

“সকালে যাওয়া যাবে না৷ কলেজে অনেক কাজ আছে৷ সকালে বাস ধরলে জ্যামে পড়তে হবে৷ রাতের বাসে কোন জ্যাম পুহাতে হবে না৷”

সকলের কথা উপেক্ষা করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লাম৷ মা রান্নার ঘরের কপাট ধরে শাড়ির আঁচল টেনে কান্না করছেন৷ আমার মা লাজুক স্বভাবের৷ উনার কাছে পুরুষ জাতিই সব৷ পুরুষেরা সত্য বললে সত্য, মিথ্যা বললে মিথ্যা৷ নিজের বুদ্ধি খাঁটিয়ে কোন কিছু করতে পারেন না৷ আমাদের পিছন পিছন আসল আরাফ ভাই, আমার বাবা সাদমান আহমেদ৷ বাসে উঠার আগে আমার বাবার ইহান ভাইয়ার হাত ধরে বলল,

“বাবা আমাকে দেখে রেখো৷ আমার মেয়েকে কোন কষ্ট দিও না৷ ছোট থেকে অবহেলায় বড় হয়েছে৷ মানুষ বুঝতে চাইনা কালো না থাকলে সাদার কোন মূল্য নেই। আজ অন্ধকার আছে বলেই দিনের এতো কদর৷ মানুষের সাথে সাথে আমিও অনেক ভুল করেছি৷”

ইহান ভাইয়া বাবার হাতের উপর হাত রেখে আশ্বাস দিয়ে বলল,

“কোন চিন্তা করবেন না৷ সকল বিপদ থেকে রক্ষা করব৷ তার কাছে কোন বিপদ আসার আগে আমি তার সাথে মো’কা’বে’লা করব৷ আমি আমার স্ত্রীর মাথা কখনও নিচু হতে দিব না৷ তাকে এমনভাবে গড়ে তুলব সবাই তাকে দেখে সালাম দিবে৷ আমাদের জন্য দোয়া করবেন৷”

বাবা, আরাফ ভাই আমাদের বিদায় দিলেন৷ আজ তাদের ছেড়ে যেতে অনেক কষ্ট হচ্ছে৷ উনাদের সাথে অভিমান করেই কতো কষ্ট দিয়েছি৷ আজ নিজেকে দোষী মনে হচ্ছে৷ আজও চোখের সামনে ভেসে উঠে সে ভ*য়া*ব*হ সময়। বড় খালার সেই অগ্নিমূর্তির ন্যায় রুপ৷

চৌধুরী ভিলাই পৌঁছাতে পৌঁছাতে সকাল হয়ে যায়৷ মায়া ফুপি সদর দরজা খুলে দেন৷ আমাকে দেখে মায়া ফুপির মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠে৷ আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেন৷ উনার ভালোবাসায় কোন খাঁচ নেই৷ একদম খাঁটি ভালোবাসা। আমার চোখ থেকেও দুই ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল। আমাদের পাশ কাটিয়ে চলে গেলেন শরীফ চৌধুরী। উনার প্রতিদিনের কাজ সকাল বেলা দিশ মিনিটের মতো হাঁটা। এক পলক আমার দিকে তাকিয়ে অসন্তুষ্ট হলেন৷ তিনি ভাবতে পারেননি আমাকে সকাল সকাল দেখবেন৷ মানুষটা তেমন কথা বলেন না৷ প্রয়োজন ছাড়া একটা বাড়তি কথা বলতে শুনি নি৷ মায়া ফুপি বলল,

“অনেকটা পথ জার্নি করে এসেছিস৷ রুমে গিয়ে রেস্ট কর৷”

আমার সাথে ইহান ভাইয়াও দাঁড়িয়ে ছিল৷ ধীর পায়ে ইহান ভাইয়ার রুমে প্রবেশ করে৷ রুমে শ্রুতি এলোমেলো হয়ে শুয়ে আছে৷ মুখটা একদম মলিন হয়ে আছে৷ ইহান ভাইয়া, শ্রুতি ভাবীকে দেখেই রেগে যান৷ চিৎকার করে ডাকতে গেলে মানা করলাম৷ উনার হাত ধরে বেলকনিতে নিয়ে গেলাম। রাগী গলায় বলল,

“শ্রুতি ভাবীর সাহস কি করে হয় আমাদের রুমে আসার? শ্রুতি ভাবীর একদিন কি আমার একদিন! আজ অপমানের সকল বদলা নিব৷”

আমি ইহান ভাইয়ার হাত ধরে আটকালাম৷ আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। উনার অগ্নি দৃষ্টিতে আমাকে জ্বালিয়ে দিবেন মনে হচ্ছে। ভয়ে ভয়ে উনার চোখে চোখ রাখলাম৷

“দয়া করে ভাইয়া এমন করবেন না। শ্রুতি ভাবী আমার বলা কথা নিয়ে খুব চিন্তিত৷ শ্রুতি ভাবী আমাকে সহ্য করতে পারেন না। কিন্তু আমার কথা ফেলতে পারেনি৷ আমরা এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ইমন ভাইয়াকে শাস্তি দিব৷ ইমন ভাইয়ার অপরাধ ক্ষমার অযোগ্য। শ্রুতি ভাবীর চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিব৷”

ইহান ভাইয়া চোখ বন্ধ করে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করলেন। পিনপিন আঁখি মেলে আমার দিকে তাকান৷ অসহায় কন্ঠে বলল,

“বউয়ের মুখ থেকে ভাইয়া ডাক শুনতে ভালোই লাগে৷ লোকে মুখে শুনতে ভালোই লাগবে ‘কেমন ভাইয়া যার সাথে বাসর করা যায়?’ ঠিক আছে আপু৷ আমি আপনার কথা মেনে নিচ্ছি৷”

লজ্জায় মুখ নিচু করে ফেললাম৷ ইহান ভাইয়ার মুখে আপু ডাক শুনে লজ্জার সীমা থাকল না৷ ইচ্ছে হচ্ছে মাটি ফাঁক করে পাতালে চলে যেতে৷ মানুষটা আমাকে সব সময় লজ্জা দিতে জানেন৷ কিছু হলো না বাসর অব্দি টেনে এনেছেন৷ আমতা আমতা করে বললাম,

“আপনাকে আগে থেকে ভাইয়া বলে ডাকতাম৷ এখনও ভাইয়া ডাকটা মুখে রয়ে গেছে৷ আমি অন্যদের মতো ওগো, শুনছো, এসব ডাকতে পারব না৷”

“আমার একটা নাম আছে৷ আমার নাম ধরে ডাকবে৷ ইহান বলে ডাকবে৷ এরপর এমন ভুল হলে আমি তোমার মুখ থেকে স্বামী ডাক বের করব৷ কাউকে ভাইয়া ডাকতেও দুইবার ভাববে৷”

কোন কথা না বাড়িয়ে হনহন করে ওয়াসরুমে চলে যান৷ আমি বেলকনিতে দাঁড়িয়ে ভোরের আলো দেখছি৷ মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে শ্রুতি ভাবীর কথা৷ শ্রুতি ভাবী কিছু জানতে পারেননি তো৷

চলবে….

আমি ভালো মানুষ। আমি নিজেও খু’ন করব না। অন্য কেউ দিয়ে খু’ন করাব না৷ বানানা ভুল হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন৷

#শালিক_পাখির_অভিমান
#পর্ব_১৯
#অধির_রায়

উদাসীন মন নিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস নিলাম৷ এলোমেলো হেঁটে রুমে প্রবেশ করলাম৷ শ্রুতি ভাবীর মাথার পাশে বসে ঘুম ভাঙার জন্য অপেক্ষা করছি৷ সকাল এগারোটার দিকে শ্রুতি ভাবী পিনপিন করে আঁখি মেলে৷ ঘুমের মাঝে কতোই মায়াবী লাগছিল৷ ঘুম থেকে উঠে ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলল,

“আমি কতোদিন না করছি আমার রুমে আসবি না৷ তোর কালো মুখ দেখলে আমার দিন ভালো যাইনা৷ ইহানের বউ বলে তোকে ছেড়ে দিব ভাবিস না৷ তুই আমার চোখে কাজের মেয়ে ছিলি আজও কাজের মেয়ে হয়ে থাকবি৷”

শ্রুতি ভাবীর কথা শুনে ভীষণ হাসি পাচ্ছে৷ ঠোঁট কা**ম*ড়ে হাসি আটকানোর চেষ্টা করলাম৷ আমার ঠোঁট প্রসারিত দেখে শ্রুতি ভাবী তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে৷ রাগী স্বরে বলল,

“শ্রুতি একদম হাসবি না৷ আমার রাগ উঠাবি না সকাল বেলা৷ আমার রাগ উঠলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না৷”

আমি মুচকি হেঁসে বললাম,

” একবার ঘরের চারদিকে তাকাও৷ আমি তোমার রুমে যাইনি৷ তুমি আমাদের রুমে আসছো৷ তোমার ভাগ্য ভালো ইহান কিছু করেনি৷ আমি ইহানকে আটকিয়ে রেখেছিলাম৷ ইহান আজ সকল অপমানের প্রতিশোধ নিত।”

শ্রুতি ভাবী মাথা নিচু কোমল গলায় বলল,

“সরি শালিক! আমি রাতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি জানা নেই? আমি বুঝাতে পারিনি এটা তোমাদের ঘর৷”

শ্রুতি ভাবী মুখটা মুহুর্তের মাঝেই উদাসীন হয়ে যায়৷ চোখ দু’টো গোল হয়ে গেছে৷ দেখে মনে হচ্ছে নাকের ডগায় রাগ৷ ফর্সা চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। শ্রুতি ভাবী তড়িঘড়ি করে চলে যেতে নিলেই আমি গম্ভীর গলায় প্রশ্ন করলাম,

“কি খুঁজতে আমাদের রুমে এসেছেন? আমাদের বিয়ে ভাঙার জন্য কাবিনমানা নাকি অন্য কিছু৷ আমাদের অনুপস্থিতে কিসের সুযোগ নিতে চাও? ”

আমার কথাগুলো উনার বুকে তীরের মাতো লাগল৷ পিছনে ঘুরে আমার দিকে আহত দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন৷ কোলম মলিন কন্ঠে বলল,

“কারোর জীবন থেকে সুখ কেঁড়ে নেওয়ার অধিকার আমার নেই৷ আমি তোমাদের সংসার ভাঙতে আসিনি৷ না জেনে কাউকে কিছু বলবে না৷”

“চো*রে*র মতো পালিয়ে যাচ্ছেন কেন? আপনি ভুল না করলে আপনার উত্তর সহজ সরল হতো৷ আমি আপনাকে বিশ্বাস করিনা৷ আপনি সব সময় আমার ক্ষতি করতে চেয়েছেন৷ হতেও তো পারে এখানে টাকা গহনা লুকিয়ে রেখে আমাকে চো*র বানাবেন৷”

শ্রুতি ভাবীর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল৷ আমি এমন চড়া কথা বলব তিনি ভাবতেই পারেননি৷ আমার কথা শুনে উনার চোখে অশ্রু চিকচিক করে৷ এমন অবস্থায় বুকের মাঝে সূক্ষ্ম ব্যথা অনুভব করলাম৷ কেন জানি শ্রুতি ভাবীর জন্য কষ্ট হচ্ছে? আমার সাথে এতো খারাপ ব্যবহার করার পরও উনার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ছি৷ নিজের চোখ বুঝে নিলাম৷ শ্রুতি ভাবী ভেজা গলায় বলল,

“এটা ভেবে নাও আমি তোমাকে চো*র প্রমাণ করতে আসিনি৷ তোমার আগে আমি এ বাড়িতে এসেছি৷ আমি কোথায় যাব? সে কৈফিয়ত তোমাকে দিব না৷”

শ্রুতি ভাবী চোখের জল মুখে ছু*টে পালিয়ে যান৷ আমি ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে দেখি ইহান একাধিক ফোন দিয়েছেন৷ ফোন সাইলেন্ট থাকার জন্য শুনতে পারিনি৷ আমি তড়িঘড়ি করে উনার ওখানে ফোন দিলাম৷ অপর পাশ থেকে উত্তেজিত কন্ঠে আওয়াজ আসল,

“শালিক তুমি ঠিক আছো? চিন্তায় আমি ম’রে যাচ্ছি। কি বলব ভেবে পাচ্ছি না? আমি তো বাড়ির দিকে ছুঁ*ট দিচ্ছিলাম৷”

উনার কথা শুনে চমকে উঠি। উনি এতো উত্তেজিত কেন? আমার জন্য কি উনার চিন্তা হচ্ছে? ভাবতেই মনের মাঝে শীতল হাওয়া বয়ে গেল৷ আমতা আমতা করে বললাম,

“আপনার কি হয়েছে? এভাবে হাঁপাচ্ছেন কেন? আপনি ঠিক আছেন তো!”

“আমার কিছু হয়নি৷ তুমি ফোন তোলনি কেন?”

“আমি ওয়াসরুমে ছিলাম৷ ওয়াসরুম থেকে এসে অনেকগুলো মিসকল দেখে আপনাকে ফোন দিলাম৷ আমার কিছু হয়নি৷”

“তোমাকে আজ কলেজে ভর্তি করে দিব৷ আমি মেসেজ করে ঠিকানা পাঠিয়ে দিচ্ছি চলে আসো৷”

ইহান কি যেন বলতে চেয়েও বলল না? মনের মাঝে রেখে দিল কথাগুলো৷ আমি মেসেজ দেখে যথাস্থানে যথা সময়ে চলে গেলাম৷ আমার জন্য উনি কলেজের সামনের অপেক্ষা করছেন৷ আমাকে দেখে উনার ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা ফুটে উঠে৷ আমাকে কলেজে ভর্তি করে দেন৷ ভর্তির পর উনার সাথে অন্য কোথাও ঘুরতে যাচ্ছে৷ আমাদের কোন গন্তব্য নেই৷ মন যেখানে যাবে আমরা সেখানেই যাব৷ দক্ষিণা বাতাসে আমার অবাধ্য কেশগুলো উঠছে। উনি বার বার লুকিং গ্লাসে আমাকে অপলক দৃষ্টিতে দেখছেন৷ বড় একটা নদীর তীরে আমাদের বাইক থামে৷ চারদিকে দেখে কৃতিম মনে হচ্ছে৷ সব মানুষের তৈরি। উনি গাড়ি পার্ক করে আসেন৷ আমার হাত ধরে পার্কের ভেতরে নিয়ে যান৷ উনার কাছ থেকে জানতে পারি এখানে মেলা বসে প্রতিবছর৷ বাহারী রকমের জিনিস নিয়ে বসে আছে। একদিকে শাড়ির দোকান৷ আমাকে নিয়ে তিনি শাড়ির দোকানে নিয়ে যান৷ বরাবর শাড়ি পরতে ভালো লাগে৷ উনার পছন্দমতো আমাকে তিনটি শাড়ি কিনে দিলেন৷ আমার চোখ চড়ুক গাছ৷ এতো দামী শাড়ি কিনল তাও তিনটা৷ ভারী গলায় বললাম,

“এতো টাকা খরচ করার কোন দরকার আছে! কম দামী অনেক শাড়ি
ছিল তো৷”

ইহান মুচকি হেঁসে বলল,

“তোমার মুখের হাসি আমার কাছে সব থেকে দামী৷ বাকি সবকিছু তুচ্ছ। তোমার মানুষের মুখের হাসি দেখার জন্য চাতক পাখির মতো চেয়ে থাকি৷”

উনার কথায় ভীষণ লজ্জা পেলাম৷ মাথা নিচু করে ফেললাম৷ মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছা করছে৷ উনি আমার হাত আলতো করে সামনে নিয়ে আসেন৷ বাহারি রকমের কাঁচের চুড়ি দেখে ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠে৷ উনি নিজ হাতে আমার হাতে সোনালী রঙের কাঁচের চুড়ি পড়ে দেন৷ উনার স্পর্শে প্রতিটি আমার মাঝে ভূমিকম্প নাড়া দেয়৷ চোখ বুঝে উনার স্পর্শ উপভোগ করতে থাকলাম৷ কাঁচের চুড়ি, বাহারি রকমের টিপ, লিপস্টিক কিনে দিলেন৷ সব শেষে কিনে দিলেন কাজল। মায়া ভরা কন্ঠে বলল,

“তোমার কাজল কালো ডাগর আঁখি আমি বারংবার প্রেমে পড়ি৷ তোমার চোখের মায়ায় পড়ে যায়৷ মন আমার কেন তোমাকে এতো ভালোবাসে জানি না? আমি নিজেকে অনেক নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করেছি৷ আমি পারিরি৷ আমার মাঝে এক অদ্ভুত আকর্ষণ তোমার মাঝে কাজ করে৷”

আমি মুচকি হেঁসে উনার কথার জবাব দিলাম৷ বিকেলটা এতো সুন্দর হবে ভাবতেও পারিনি৷ অফিসের ফাঁকে ফাঁকে উনি আমাকে নিয়ে ঘুরে বেড়ান৷ উনাকে ভালো না বেসে থাকা যাইনা৷ আমিও উনার ভালোবাসা মুগ্ধ। নয়ন ভরে উনাকে আমি লুকিয়ে লুকিয়ে দেখি৷ কখনও বুঝতে দেয়নি আমার ভালোবাসা।
____
ঘুমন্ত ইাহনকে দেখে খুব হিংসা হচ্ছে৷ উনার ঠোঁট আমাকে বারবার আকর্ষণ করে৷ আলতো করে উনার ঠোঁটে ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছা করছে। ঘুমালে মানুষকে এতো সুন্দর লাগে আগে কখনও দেখিনি৷ নাকি ভালোবাসার মানুষের সবকিছু সুন্দর লাগে৷ ঘুম আসছে না কিছুতেই। একঘেঁয়েমি কাজ করছে৷ ধীর পায়ে ছাঁদে চলে আসলাম৷ এখন ইমন ভাইয়াকে তেমন ভয় পাইনা৷ ছাঁদে বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে রাখা আছে নানা রকম লাঠি৷ নিজের আত্মরক্ষার জন্য সব প্রস্তুতি রেখেছি৷ ছাঁদে আসতেই কানে আসে কান্নার শব্দ। প্রথমে ভয় পেয়ে যায়৷ এতো রাতে কান্নার শব্দ আসছে কেন? ভু’ত পে’তা’ত্মা হতে পারে৷ আয়াতুল কুরসি তেলাওয়াত করতে থাকলাম৷ বুকের মাঝে ফু দিয়ে নিচে চলে আসতে নিয়েও আসলাম না৷ কান্নার রহস্য ভেদ করার জন্য ছাঁদে পা রাখি৷ চাঁদের কিরণ শেষের দিকে। ঝাপসা আলোয় কাউকে দেখতে পেলাম৷ আকাশ প্রাণে দাঁড়িয়ে থেকে কান্না করে যাচ্ছে৷ দূর থেকে চিনতে পারলাম না৷ কাছে এসে শ্রুতি ভাবীকে দেখে বুকের মাঝে চিনচিন করে ব্যথা শুরু হলো৷ উনার কাঁধে হাত রাখতেই উনি কেঁপে উঠল৷ চোখের অশ্রু মুছে বলল,

“কে?”

পিছন ঘুরে ভুত দেখার মতো করে বলল,

“শালিক এতো রাতে এখানে কি করছো? তুমি কখন ছাঁদে আসলে?”

“আমারও একই প্রশ্ন! আপনি ছাঁদে আকাশপ্রাণে চেয়ে কান্না করছেন কেন? কি হয়েছে? ইমন ভাইয়ার আপনার সাথে কিছু করেছে!”

বুকে কষ্ট চেপে রেখে নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করল৷ মুচকি হেঁসে বলল,

“না তেমন কিছুই না৷ মায়ের জন্য মন খারাপ করছিল৷ আমাকে ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন৷ মায়ের ভালোবাসার কথা মনে পড়লে কষ্ট হয়৷ অনেক রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পড়৷”

শ্রুতি ভাবী পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলেই বললাম,

“আড়াল করে লাভ নেই৷ আমি সব জেনে গেছি৷ সবাইকে অন্ধকারে রাখলেও আমাকে রাখতে পারবেন না৷”

শ্রুতি ভাবী হুট করেই আমাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দিল৷ এমন ঘটনায় ভে’বা’চে’কা খেলাম৷ আমি তো কিছুই জানি না৷ কেন ভাবি এভাবে কাঁদছেন? উনার কান্না দেখে মনে হচ্ছে কাউকে খুব খুঁজে চলছে৷ মিনিট পাঁচেক পর উনি শান্ত হোন৷ শান্ত গলায় বললাম,

“ভাবী কান্না করবেন না৷ সব ঠিক হয়ে যাবে৷ ইমন ভাইয়া কোথায়? উনাকে আসার পর দেখতে পেলাম না৷ আমি চলে যাওয়ার দুইদিনের মাঝে কি হয়েছে?”

শ্রুতি ভাবি আমার হাত ধরে নিজের রুমে নিয়ে যান। রুমে ইমন ভাইয়া নেই৷ বুঝতে বাকী রইল না তাদের মাঝে ঝগড়া হয়েছে৷ আমি শ্রুতি ভাবীকে বললাম,

“সেদিন ইমন ভাইয়া আপনাকে কিছু বলছে! আমি জানি ভাইয়ার আরও একটা রুপ আছে৷ আমি উনার রুপ জেনে গেছি৷”

উত্তেজিত কন্ঠে বলল,

“তুমি ইমনকে বা*জে ছেলে বলেছিলে তার কোন প্রমাণ আছে৷ ইমন আমাকে হুমকি দিয়েছে তার বিরুদ্ধে প্রমাণ দেখাতে না পারলে আমাকে ডিভোর্স দিবেন। আমি ইমনকে খুব ভালোবাসি। উনাকে ছাড়া আমি এক মুর্হুতও চিন্তা করতে পারি না৷ উনি রাগ করে বাড়ি থেকে চলে গেছেন৷ এখনও বাড়ি ফিরেন নি৷ মায়ের কাছ থেকে জানার চেষ্টা করছি উনি কোথায়? মা সব সময় বলেছেন ‘ইমনের খবর একমাত্র শালিক জানে।’ আমার ইমনকে আমার কাছে ফিরিয়ে দাও৷”

“আপনার ইমন আপনার কাছে ফিরে আসবে৷ তার আগে আপনাকে একটা কথা দিতে হবে৷”

ভাবুক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকান৷ মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানান। তিনি আমার কথা মেনে নেন৷ আমার শর্তে শ্রুতি ভাবী রাজি৷

“ইমন ভাইয়ার খবর ম্যাডাম জানেন৷ আর ইমন ভাইয়া অনেক রানীর প্রতি আসক্ত। আমি শুনেছি উনি আরও একটা বিয়ে করেছেন৷ আপনি যখন বাড়িতে চলে যান তখন তিনি উনাদের বাসায় থাকেন৷ মা সবকিছু জানেন৷ তবুও না জানার ভান করে থাকেন৷”

শ্রুতির ভাবীর পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যায়৷ শ্রুতি ভাবীর একটা স*তি*ন আছে৷ অঝোরে কান্না করতে থাকেন৷ হাতে উপর হাত রেখে বললাম,

“নিজেকে শান্ত করেন৷ ইমন ভাইয়াকে আপনি শাস্তি দিবেন৷ আপনার সাথে অনেক অন্যায় করেছে৷ আপনাকে দিনের পর দিন অবহেলা করেছে৷ সমাজে এমন কিছু মানুষের জন্য পুরো পুরুষজাতিকে খারাপ ভাবে। আপনি মেয়ে বলে আপনার সাথে অন্যায় করবে৷ মেয়ে বলে আপনার আত্মসম্মান নেই৷ আপনাকে ঘুরে দাঁড়াতেই হবে৷”

শ্রুতি ভাবী ভেজা গলায় বলল,

“আমি উনাকে শাস্তি দিতে পারব না৷ না পারব উনাকে ছেড়ে থাকতে৷ উনাকে শাস্তি দেওয়া মানে আমার নিজের কলিজাকে শাস্তি দেওয়া৷”

“ভাবী আপনার কোন বোনের সাথে এমন অন্যায় হলে আপনি বসে থাকতে পারতেন? আপনার বোন কারো কাছে ধ’*র্ষি*’ত হলে আপনি তাকে ছেড়ে দিতেন! যেসব মেয়ে ইমম ভাইয়ার কাছে ধ’র্ষি’ত হয়েছে তারা কারোর না কারো বোন৷ তাদের কথা ভেবে ইমন ভাইয়া শাস্তি দেন৷ একদম বিশুদ্ধ মন নিয়ে ইমন ভাইয়া আপনার কাছে ফিরে আসবে৷”

শ্রুতি ভাবী চোখে রাগ নিয়ে বলল,

“আমি আর পাপীর জন্য চোখের পানি ফেলব না৷ আমিও উনার শাস্তি কামনা করি৷ তুমি উনাকে কঠিন থেকে কঠিনতম শাস্তি দাও৷ আমি তোমাকে সব বিষয়ে সাহায্য করব৷ আমার স্বামী বলে অন্যায় করে পার পাবে না৷ অন্যায় করলে শাস্তি পেতেই হবে৷”

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here