শালিক_পাখির_অভিমান #পর্ব_২০,২১

0
368

#শালিক_পাখির_অভিমান
#পর্ব_২০,২১
#অধির_রায়
২০

আঁধারের ঘনঘটা কেটে ফুটে উঠে দিনের আলো৷ সূর্য্যি মামার সকাল বেলা বেশ প্রখর৷ ভ্যাপ্সা গরমে ভালো ঘুম আসছে না৷ এসির শীতল হাওয়ার একটু ঠান্ডা লাগছিল৷ এসি বন্ধ করে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি জানা নেই? ইহান আমাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে আছেন৷ আমি ছোট বাচ্চার মতো গুটিশুটি হয়ে উনার বুকে শুয়ে আছি৷ উনার হৃৎপিণ্ড প্রতিটি কম্পন কানে আসছে৷ হারিয়ে যেতে ইচ্ছা করছে উনার প্রতিটি নিশ্বাসে। উনাকে হালকা করে ধাক্কা দিলাম৷ কোন কাজ হলো না৷ আমাকে আরও জোরে চেপে ধরেন। মন বলছে সারাক্ষণ এভাবে শুয়ে থাকতে৷ এভাবে শুয়ে থাকলে মায়া ফুপির উপর অনেক চাপ যাবে৷ বৃদ্ধ মানুষটি আর নিতে পারছেন না। বয়সের ভারে বৃদ্ধ হলেও এখনও আগের মতে কাজ করতে চান৷ পেটে শুরশুড়ি দিয়ে মায়া ভরা কন্ঠে বললাম,

“এই যে শুনছেন! আমাকে ছেড়ে দেন। অনেক বেলা হয়ে গেছে৷ এতো বেলা অব্ধি ঘুমাতে পারব না৷ আপনার জন্য এমনি আমার কুরআন শরীফ তেলওয়াত করতে পারিনি৷ এভাবে কাউকে জড়িয়ে ধরে ঘামায়৷ আমি কোথাও হারিয়ে যাব না৷”

আমার কথা ইহানের কান অব্ধি পৌঁছাল না৷ ইহান এক ধ্যানে শুয়ে আছেন৷ একটু জোরেই করে ধাক্কা দিলাম৷ পিনপিন আঁখি মেলে তাকান৷ ঘুম ঘুম চোখে নেশা ভরা চোখে বলল,

“বিরক্ত করো না৷ আমাকে একটু ঘুমাতে দাও৷ চোখের পাতায় অনেক ঘুম জমে আছে। শুক্রবারটা আমার মতো করে ঘুমাতে দাও। বাকী ছয় দিন আমার কথা শুনে চলব৷”

চড়া গম্ভীর কন্ঠে বললাম,

“আপনাকে ঘুমাতে মানা করছে কে? আমাকে উঠতে দেন৷ আমার অনেক কাজ আছে৷ আমাকে জড়িয়ে ধরে আছেন কেন? লজ্জা করে না একজন অসহায় মেয়ের ঘুমের সুযোগ নিতে৷ আমি কিন্তু আপনাকে এখনও স্বামীর অধিকার দেয়নি৷”

চোখ মেলে তাকিয়ে দেখেন উনার দুই বাহুর মাঝে আমি শুয়ে আছি৷
জড়িয়ে ধরার দৃশ্য উনার চোখে পড়তেই উনি লাফ দিয়ে উঠেন৷ উনার এমন কান্ডে আমি ভীষণ ভয় পেয়ে যাই৷ এলোমেলো চোখে উনার দিকে তাকালাম৷ উনি অসহায় মুখ করে বলল,

“আমি বুঝতে পারিনি৷ আমাকে ক্ষমা করে দাও৷ অজান্তেই এমন হয়ে গেছে৷ ঘুমের মাঝে তোমাকে পাশবালিশ মনে করে জড়িয়ে ধরে ছিলাম৷ আমার মনে খারাপ কোন চিন্তা ছিল৷ আমাকে বিশ্বাস করো৷”

উনার অপরাধী মুখ দেখে ভীষণ হাসি পাচ্ছে৷ উনার কথা বলার ধরণ হাতে নাতে চো*র ধরার মতো অবস্থা। হেঁসে গেলেই ফেসে যাবো৷ ঠোঁট কামড়ে হাসি আটকানোর চেষ্টা করলাম৷ গম্ভীর্যভাব নিয়ে,

“প্রথম বারের মতো ক্ষমা করে দিলাম৷ এরপর এমন কাজ করলে কখনও ক্ষমা পাবেন না৷ কান ধরে ওঠবস করতে হবে৷ ভুলেও আমার ঘুমের সুযোগ নিবেন না৷”

উনি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানান। এমম ভুল দ্বিতীয় বার করবেন না৷ আমি ঠোঁট কামড়ে ওয়াসরুমে চলে আসি৷ শ্রুতির ভাবীর সাথে রাতে কথা শেষ করে তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করি৷ টানা চল্লিশ দিন তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করলে মহান আল্লাহ তায়ালা বান্দার সকল ইচ্ছা পূরণ করেন৷ অঝোরে কান্না করে আল্লাহর দরবারে কিছু চাইলে আল্লাহ কখনও আমাদের ফিরিয়ে দেননা৷ ধৈর্যশীল সাথে কখনও অন্যায় করেন না৷ ইহান উবুড় হয়ে আগের মতো পাশবালিশ নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে৷ আলতো করে স্পর্শ করতে মন বলছে৷ উনার ঘুম ভাঙাতে ইচ্ছা করছে৷ মায়ামাখা মুখ দেখে নিজের ইচ্ছাকে কুরবানি দিয়ে রান্না ঘরে চলে আসি৷ রাতে দেরি করে ঘুমানোর জন্য শ্রুতি ভাবী এখনও ঘুম থেকে উঠেননি৷ আমি মায়া ফুপিকে নিজের রুমে পাঠিয়ে দিলাম। নিজ হাতে সবার জন্য রান্না শুরু করলাম৷ একটু পর শুরু হবে বিশাল রান্নার আয়োজন। প্রতি শুক্রবারে হয়ে থাকে৷ শরীফ চৌধুরী প্রতি শুক্রবারে জুম্মার নামাজ পড়ে এসে সবাইকে এক সাথে নিয়ে খান৷ উনার চোখে শুক্রবারের দিনে সবাই সমান৷ আজ ইমন ভাইয়াও ফিরে আসবেন। উনাকে সব কর্মের শাস্তি দিব৷ শ্রুতি ভাবীর জন্য খুব খারাপ লাগছে৷ আমার সাথে কতো খারাপ ব্যবহার করেছে তবুও উনার জন্য খারাপ লাগছে৷ কেন উনার জন্য এতো খারাপ লাগছে? ভাবনার মাঝে বাড়ির মালকিন আফসানা চৌধুরী রান্না ঘরে আসেন৷ চাপা স্বরে গম্ভীর কন্ঠে বলল,

“ইহান তোমাকে নিয়ে কোথায় গেছিল? গত দুইদিন বাড়ি ছিলে না৷ আমাদের তো চিন্তা হয়৷ ফোন করলে ফোনও ধরো না৷ বেশি সাহস হয়ে গেছে৷ আর একবার বাড়ির বাহিরে পা রাখলে পা ভে*ঙে দিব৷”

উনা কথা গায়ে মাখলাম না৷ মা হিসাবে একটু বকা দিতেই পারেন৷ না শোনার ভান করে কাজ করে যাচ্ছি৷ আফসানা চৌধুরী পুনরায় আমাকে একই প্রশ্ন করলেন৷ আমি নড়েচড়ে বললাম,

“ইহান আমাকে আমাদের গ্রামের বাড়িতে ঘুরতে নিয়ে গেছিলেন। আমার বাবা খুব অসুস্থ। আমরা উনাকে দেখতে গিয়েছিলাম৷ এখন উনি সুস্থ আছেন।”

আমার কথা শুনে আফসানা চৌধুরী কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেন৷ মুখে হাত দিয়ে এক কদম পিছিয়ে যান৷ আমি ইচ্ছা করেই নিজ থেকেই সত্য কথা বলেছি৷ সত্য কখনও চাপা থাকে না৷ দিনের আলোর মতো একদিন ভেসে উঠবে৷ পরবর্তী আ’শ’ঙ্কা থেকে বাঁচার জন্য এখনই বলা উচিত। চকিত হয়ে বলল,

“তোমার বাবা বেঁচে আছেন? তুমি তো আমাদের একদিনও বলোনি৷ আমরা তোমাকে এতিম ভেবেই এসেছি৷ আমাদের ঠকিয়ে তুমি এ বাড়িতে প্রবেশ করেছো৷ তোমাকে সত্যবাদী ভাবতাম৷ তুমি মিথ্যার আশ্রয় নিবে কল্পনাও করতে পারিনা৷”

উনার কথা শুনে চোখের কোণে জল এসে পড়ে৷ এতিম ভেবে আমাকে এতোদিন মায়া দেখিয়েছেন৷ আগে জানলে কখনও আমাকে এ বাড়িতে ঢুকতে দিতেন না৷ মলিন কন্ঠে,

“আমার মা বাবা, ভাই বোব সবাই বেঁচে আছেন৷ আল্লাহর রহমতে সবাই ভালো আছেন৷ আপনাদের কাজ থেকে সত্য লুকিয়ে রাখার জন্য ক্ষমা করে দিবেন৷ আমি আপনাকে অনেক চেষ্টা করেছি বলার। কিন্তু ভয়ে বলতে পারিনি৷ আজ বলতে কোন ভয় নেই৷ আজ আমার সাথে আমার স্বামী আছে৷”

“আমি ইহানের অন্যত্র বিয়ের ব্যবস্থা করব৷ তোমার মতো মিথ্যাবাদী মেয়ের সাথে কখনও আমার ছেলেকে মানায় না৷ দেখতে একদম কালো তুমি৷ আমার ছেলের পাশে তোমাকে কোনদিন মানায় না৷”

“ভালোবাসা হয় মন থেকে৷ গায়ের রং যেমনই হোক না কেন? পবিত্র বন্ধন কখনও ভাঙতে পারবেন না৷ আমি ইহানের চোখে আমার জন্য ভালোবাসা দেখেছি৷ সত্যি বলছি ইহানের চোখে ভালোবাসা না দেখলে আমি নিজ থেকে ইহানের জীবন থেকে চলে যেতাম৷ কখনো উনার মনে কষ্ট দিতাম না৷ এই বাড়িতে একমাত্র উনিই আমার সঙ্গী ছিল৷”

আমার কথা শুনে আফসানা চৌধুরীর প্রতিটি রগে রগে রাগ চলে যায়৷ অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন আমার উপর৷ দেখে মনে হচ্ছে এখনই আমাকে চোখের অগ্নিতে জ্বালিয়ে দিবেন৷ রাগী ভাব নিয়ে চলে যেতে নিলেই বললাম,

“আমি কেন পরিচয় গোপন করেছি জানতে চাইলেন না? এখন তো আমি চৌধুরী বাড়ির ছোট বউ৷ আমার বিষয়ে সব জানার আপনার অধিকার আছে৷”

রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ক্ষোভ নিয়ে বলল,

“তোমার অতীত নিয়ে জানার আমার কোন আগ্রহ নেই৷ তোমাকে দেখলে আমার মাথায় একটা কথা ঘুরে তুমি কালো জাদুকর।”

আফসানা চৌধুরীর কথা শুনে হেঁসে দিলাম৷ আমার ঠোঁট প্রসারিত হওয়ায় উনার রাগ আরও বেড়ে যায়৷ ঠোঁট কামড়ে হাসি আটকিয়ে বললাম,

“কালো জাদুকর হলে এতোদিনে আপনার মন জয় করতে পারলাম৷ আমাকেও মায়ের আদর দিতেন৷ আমার একটাই আফসোস। আপনি শিক্ষিত মানুষ হয়ে কেন অশিক্ষিতদের মতো কথা বলেন?”

রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,

“শালিক তুমি সীমা অতিক্রম করে ফেলছো৷ তুমি ভুলে যাচ্ছো, কার সম্মুখে কথা বলছো? এ বাড়িতে আমার কথাই শেষ কথা৷”

“আমি নিজের সীমার মাঝে কথা বলছি৷ এমন কোন কাজ করবেন না যাতে ইহান মায়ের আদর থেকে বঞ্চিত হয়৷ আমাকে আপনি পছন্দ করেন না৷ আমার জায়গায় আপনি অন্য কাউকে দেখতে চান৷ সে কি আপনার ছেলেকে ভালো রাখতে পারবে৷ তার কোন নিশ্চয়তা আছে আপনার কাছে৷ নিশ্চয়তা দিতে পারলে আমি ছেড়ে চলে যাব৷ আলোর আঁধার হয়ে কখনও ইহানের জীবনে অন্ধকার হয়ে থাকব না৷”

আফসানা চৌধুরী কোন কথা না বলে চলে যান৷ আমার কথাগুলো উনাকে অনেকনার ভাবাবে৷ প্রতিটি সম্পর্কই পবিত্র বন্ধন৷ তৃতীয় ব্যক্তির কারণে সম্পর্ক নষ্ট হয়৷ আমি কিছুতেই আমাদের মাঝে তৃতীয় ব্যক্তিকে আসতে দিব না৷ নিজের মাঝে সমস্ত ভালোবাসা যত্ন করে রাখব৷ কাউকে ইহানের কাছাকাছি আসতে দিব না৷
______

দুপুরের খাওয়ার পর সকলে নিন্দায় আচ্ছন্ন৷ শ্রুতির ভাবীর কথা মনে নাড়া দিচ্ছে৷ কিছুতেই আমার ঘুম আসছে না৷ আমি শ্রুতি ভাবীর রুমে উঁকি দিয়ে দেখি ভাবী ঘুমাচ্ছেন৷ কিন্তু ইমন ভাইয়া রুমে নেই৷ জুম্মার সালাত আদায়ের পর সকলে এক সাথে বসে খেয়েছেন৷ ইমন ভাইয়া কোথায় গেল? আমি বেলকনিতে থেকে নজর রেখেছিলাম গেইটের দিকে৷ ইমন ভাইয়া বাহিরে বের হয়নি৷ নিশ্চয় ইমন ভাইয়া ছাঁদে আছেন৷ ধীর পায়ে ছাঁদে চলে গেলাম৷ ইমন ভাইয়া আকাশের দিকে নিকোটিনের ধোঁয়া বাতাসে ছাড়ছে৷ নিজেকে ধ্বংস করার পাশাপাশি পৃথিবীকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে৷ বায়ু দূষণের কারণে প্রতিবছর হাজার হাজার লোক শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হচ্ছে৷ সিগারেট শেষ হওয়া অব্দি দূরে দাঁড়িয়ে থাকলাম৷ শেষ হওয়ার পর ইমন ভাইয়াকে পিছন থেকে বললাম,

“আপনি অনেক অন্যায় করতেছেন৷ আপনার অন্যায়ের কোন ক্ষমা হবে না৷ এখনও সময় আছে নিজের ভালোবাসার দিকে নজর দেন৷ শ্রুতি ভাবীই পারবে আপনাকে সকল অপরাধ থেকে মুক্ত রাখতে৷”

আমার কথা শুনে ইমন ভাইয়ার মাঝে কোন প্রতিক্রিয়া হলো না৷ এগুলো তার বাম হাতের খেলা৷ মুখের কোণে পি’চা’শে’র ন্যায় মুচকি হাসি। মুচকি হেঁসে বলল,

“আমি এক নারীতে আসক্ত নয়৷ পুরুষকে এক নারীতে আবদ্ধ করা সম্ভব নয়৷ যতদিন যৌবন আছে ততদিন এমন চলবে৷ আমার জীবন আমি কেমনভাবে উপভোগ করব সেটা তোমার কাছে জানতে চাইব না৷”

ইমন ভাইয়ার কথা শুনে ঘৃণায় সমস্ত শরীর রি রি করে উঠল৷ উনার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতেও ঘৃণা হচ্ছে৷ বিরক্ত সূচক মনোভাব নিয়ে বললাম,

“পরকীয়ার শাস্তি সর্বোচ্চ। আল্লাহকে ভয় করেন৷ আল্লাহর কাছে তওবা করে আলোর পথে ফিরে আসেন৷ জীবনকে ইসলামের দৃষ্টিতে একবার সাজিয়ে দেখেন৷ পরকালে জান্নাতের জন্য দুই হাত তুলে আল্লাহর কাছে কান্না করেন৷”

“বইয়ের দুইপাতা পড়ে নিজেকে জ্ঞানী ভাবছো৷ বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয়েছে উভয়ধর্মী এক অপরকে আকর্ষণ করে৷ বলে দেওয়া হয়নি নির্দিষ্ট কাউকে আকর্ষণ করতে৷ আমার চোখ সবার উপর পড়তেই পারি৷ তোমাকে অনেক ধন্যবাদ৷ আগে শ্রুতির আড়ালে সবকিছু করতে হতো৷ এখন শ্রুতির সামনেই সবকিছু করতে পারি৷ তোমাকে একটা কথা বলি তুমি দিয়া বাড়িতে যার সাথে আমাকে দেখেছিলে সে আমার প্রথম স্ত্রী। ওঁকে ভোগের জন্য ভার্সিটি লাইফে বিয়ে করি৷ আলো খুব জেদি মেয়ে৷ বিয়ে না করলে আমার সাথে বিছানা শেয়ার করবে না৷ সেজন্য একপ্রকার বাধ্য হয়ে ওঁকে বিয়ে করি৷ সে এখনও জানে না তাকে ছাড়া আমি শ্রুতিকে নিয়ে সংসার করছি৷ পারলে তুমি তাকে বলে দিও৷ দরকার পড়লে আমি তোমাকে ঠিকানাও দিয়ে দিব৷”

ইমন ভাইয়ার মনে কোন আফসোস নেই৷ উনার ভাব ভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে উনার কাছে এসব নিত্য দিনের কাজ৷ উনার চোখে মেয়েরা ভোগের সামগ্রী। চোখ টিপল দিয়ে নিচে চলে যান। ঘৃণায় গা রি রি করে উঠল৷ ইচ্ছা করছে উনাকে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে। এতো খারাপ মানুষ কি করে হয়? আমার চোখে সব চেয়ে খারাপ লোক ছিল আমার বড় খালা৷ বড় খালার থেকেও বেশি খারাপ ইমন ভাইয়া৷ ইমন ভাইয়ার পাশে আফসানা চৌধুরী আছেন৷ ছেলেকে এসব নোংরা কাজে উৎসাহিত করেন৷ দেখে মনে হয় আদর্শ মা৷ কিছুতেই উনাকে হারানো যাবে না৷ উনার বিরুদ্ধে যথেষ্ট প্রমাণ লাগবে৷

মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিছে৷ ধপাস করে ছাঁদের রেলিং ধরে বসে পড়লাম৷ নিজেকে মেধাশূন্য মানসিক পা*গ*ল মনে হচ্ছে৷ কোন উপায় খুঁজে পাচ্ছি না৷ শ্রুতি ভাবী ইমন ভাইয়াকে পা*গ*লে*র মতো ভালোবাসেন৷ শ্রুতি ভাবীর ভালোবাসা সত্য হলে আমরা ঠিক পথ পেয়ে যাব৷ আজ থেকে আমার একমাত্র উদ্দেশ্য হলো ইমন ভাইয়াকে চোখে চোখে রাখা৷ ইমন ভাইয়ার সকল খারাপ কাজ গোড়া থেকে উপড়ে ফেলব৷

চলবে…

#শালিক_পাখির_অভিমান
#পর্ব_২১
#অধির_রায়

সময় ও স্রোত কারোর জন্য অপেক্ষা করে না৷ অনেক চেষ্টা করেও ইমন ভাইয়ার বিরুদ্ধে কোন প্রমাণ পেলাম না৷ শ্রুতি ভাবীর মুখের দিকে তাকানো যায়না৷ উদাসীন মন নিয়ে বসে থাকে সারাক্ষণ। ক্লাস শেষ করে বাড়ি ফিরছি। মুষলধারে বৃষ্টিতে বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছি৷
মনটা ভীষণ খচখচ করছে৷ বৃষ্টি আমার কখনও ভালো লাগে না৷ গ্রামে বৃষ্টি হলে আমার চরম রাগ হতো৷ বৃষ্টির পর পথ ঘাট পিচ্ছিল হয়ে যায়৷ চোখের সামনে ভেসে উঠে আনন্দপুরের ঘটনা৷

বৃষ্টির পর আমি আর শাকিলা স্কুল থেকে ফিরছিলাম৷ শাকিলা আমার হাত চেপে ধরে ধীর পায়ে এগিয়ে আসছে৷ পথ ঘাট পিচ্ছিল। পা বারং বার স্লিপ করে পড়ে যাচ্ছিলাম৷ নিজেকে নিয়ন্ত্রণের রেখেছি অনেক কষ্টে৷ কাঁদার উপর দিয়ে হাঁটছি আর মনে মনে এভারেস্ট জয় করছি৷ শাকিলা বিরক্তি নিয়ে বলল,

“আপু আমি কাল থেকে স্কুলে যাব না৷ আমি কাঁদার মাঝে কখনও স্কুলে যাব না৷ এই রাস্তার সমস্যা কি?”

চোখ ছোট করে শাকিলার দিকে তাকালাম। প্রশ্নসূচক দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম,

“রাস্তা তোর সাথে কি করল? তুই রাস্তার সমস্যা কোথায় পেলি? রাস্তা তোকে স্কুলে আসতে জোর করেছে৷”

“হ্যাঁ রাস্তারই সমস্যা। গরমের মাঝে থাকে বালুময়। বৃষ্টির মাঝে হয় কাঁদাময়৷”

শাকিলার বোকা বোকা কথা শুনে ভীষণ হাসি পাচ্ছে৷ নিজের হাসি আটকানোর জন্য ঠোঁট কামড়ে ধরে আছি৷ তবুও অট্টহাসি দিয়েই দিলাম। শাকিলা আমার দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করল৷ চিৎকার করে বলল,

“কু*ত্তী তুই হাসছিস কেন? তোকে আমি … ”

আমার দিকে তেড়ে আসতেই শাকিলা ধপাস করে কাঁদায় পড়ে যায়৷ আমার কি আনন্দ হচ্ছিল বলে বুঝানো যাবে না? শাকিলার চিৎকারে আমার আনন্দ চুপসে গেলাম। আমি তড়িঘড়ি করে বললাম,

“কি হয়েছে শাকিলা? তুই উঠতে পারছিস না কেন?”

শাকিলা ভেজা কন্ঠে বলল,

“আপু আমি উঠতে পারছি না৷ আমার পা মনে হয় ভেঙে গেছে৷ আমি উঠতে পারব না৷ ব্যথায় ম*রে যাচ্ছি৷”

আমি শাকিলাকে তুলে বসালাম৷ শাকিলার ফর্সা পা লাল হয়ে গেছে৷ ফুলে যাচ্ছে দ্রুত গতিতে। পায়ের সেন্ডেল কাঁদার মাঝে আটকে পড়েছে৷ রাস্তায় কাউকে দেখতে পাচ্ছি না৷ কিভাবে বাড়িতে যাব? আমি শাকিলার হাত ধরে দাঁড় করালাম৷ শাকিলা চিৎকার করে বলল,

“আপু আমি পারছি না৷ আমার পায়ে ভীষণ ব্যথা করছে৷ আমি হাঁটতে পারব না৷ আমি এখানেই বসে থাকি৷ তুই বাড়িতে গিয়ে কাউকে নিয়ে আয়। আমার লক্ষী বোন৷ আমি তোর সাথে আর কখনও খারাপ ব্যবহার করবো না৷”

শাকিলার কথা মনে পড়তেই চোখের কোণে পানি জমে উঠল। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। বৃষ্টি থামার কোন নামগন্ধ নেই৷ শাকিলা ফোন করে জানিয়ে দিয়েছে পাশের নদী পানিতে ভরপুর। বন্যার পানিতে রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে৷ আউশধান পানির নিচে আটকে পড়েছে৷ কৃষকের অনেক ক্ষতি হচ্ছে৷ বন্যায় প্রতিবছর নদী ভাঙলে লক্ষ লক্ষ মানুষ ভূমিহীন হয়৷
কোন রিক্সাও পাওয়া যাচ্ছে না৷ সন্ধ্যার পর বাহিরে থাকা সম্পন্ন নিষেধ করেছেন আফসানা চৌধুরী। বৃষ্টিতে মাঝে হেঁটে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম৷ হঠাৎ চোখ পড়ল ইমন ভাইয়ার দিকে৷ ইমন ভাইয়া বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে একটা বাড়িতে ঢুকল৷ আমি ইমন ভাইয়ার পিছু নিয়ে সেই বাড়িতে ঢুকলাম৷ ইমন ভাইয়া ভিজে একাকার হয়ে গেছেন।ভেজা শরীর নিয়ে ইমন ভাইয়া মধ্য বয়স্ক এক মহিলার পা ছুঁয়ে সালাম করল৷ ইমন ভাইয়ার এমন ব্যবহারে চমকে উঠলাম৷ মাথা নত করে সালাম করা গুন্নাহ৷ আল্লাহ ছাড়া অন্য কারোর সামনে মাথা নত করা শীরক৷ শীরককারীদের আল্লাহ তায়ালা কখনও ক্ষমা করেন না৷ আল্লাহর বান্দা কখনও অন্যের কাছে মাথা নত করে না৷

ইমন ভাইয়া বলল,

“কেমন আছেন মা? আপনার শরীর ভালো আছে?”

ভদ্রমহিলাটি বলল,

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি৷ তুমি কেমন আছো বাবা?”

ইমন ভাইয়া মুচকি হেঁসে জবাব দিল,

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো।”

“তুমি তো ভিজে একাকার হয়ে গেছাে? নীলা নিজের রুমেই আছে৷ তুমি নীলার রুমে গিয়ে চেঞ্জ করে নাও। বৃষ্টিতে কেউ ভিজে জ্বর পা’গ’ল। জ্বর আসতে পারে রাতে৷ তাড়াতাড়ি চেঞ্জ করে নাও৷”

আমি নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছি না৷ একটা ছেলেকে বিনা বাঁধায় মেয়ে মানুষের ঘরে পাঠাল৷ ইমন ভাইয়ার দৃষ্টি এতো খারাপ উনার চোখে পড়ল না৷ ইমন ভাইয়া সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতেই আমি ভদ্রমহিলার সামনে দাঁড়ালাম৷ ভদ্রতার সহিত সালাম দিলাম,

“আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন আন্টি৷?”

ভদ্রমহিলা মুচকি হেঁসে সালামের জবাব দেন৷ ❝ ওলাইকুম আসসালাম.❞ চিন্তিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন আমার উপর৷ মিহি কন্ঠে বলল,

“তোমাকে ঠিক চিনতে পারলাম না৷ তুমি কে?”

“আন্টি আমাকে আপনি চিনতে পারবেন না৷ ভিজে একটা ছেলে আপনাদের বাসায় প্রবেশ করল ;সে কি আপনার ছেলে?”

ভদ্রমহিলা মুচকি হেঁসে জবাব দিল,

“আমার ছেলের মতোই৷ সে তো নীলার হাসবেন্ড। জানো তারা অনেক বড়লোক! তার মা বাবা কানাডায় থাকেন৷ সামনের মাসে তার মা বাবা বাংলাদেশে আসবেন তখন ধুমধাম করে আমার মেয়েকে তাদের বাড়িতে নিয়ে যাবেন৷ আমি ভাগ্য করে এমন জামাতা পেয়েছি৷”

“আন্টি আপনি আমার মায়ের মতো৷ আমার পরিচয় আপনার কাছে লুকাবো না৷ আমি সিভিল পুলিশ অফিসার। আপনাকে আমার সাথে একদিন চৌধুরী ভিলায় যেতে হবে৷”

ভদ্রমহিলা চিন্তিত কন্ঠে বলল,

“আমি কেন চৌধুরী ভিলাই যাব? আমি তো কোন অন্যায় করেনি৷”

“আমরা জানি আপনি কোন অন্যায় করেননি৷ আমরা সবাই চৌধুরী ভিলাতে থাকি৷ আপনাকে আমাদের দরকর৷ আপনি আমাদের কাছে সাহায্য করবেন৷”

ভদ্রমহিলা চকিত হয়ে বলল,

“আমি! আমি তোমাদের কিভাবে সাহায্য করব? আমি একজন সাধারণ মানুষ৷”

“আপনি আমাদের সাহায্য করবেন আপনার বুদ্ধি দিয়ে৷ আর হ্যাঁ আপনার ফোন নাম্বার দেন। ফোন করার সাথে সাথে চলে আসবোন৷ আরও একটি কথা মাথায় রাখবেন আমাদের মাঝে যে কথা হয়েছে তৃতীয় কোন ব্যক্তি জানতে পারলে আপনার মেয়ের হাসবেন্ডকে উপরে পাঠিয়ে দিব৷”

ভদ্রমহিলাটি আমার কথায় অনেক ভয় পেয়ে যান। এই মুহুর্তে নিজেকে গোয়েন্দা মনে হচ্ছে৷ ফোন নাম্বার পেয়ে এক মুহুর্তও না দাঁড়িয়ে ছুটে চলে আসলাম৷
__________

ঘুমের মাঝে পেটে কারোর হাতের স্পর্শ পেয়ে ঘুম ভেঙে যায়৷ ইহান মুচকি মুচকি হাসছে আর পেটে শুরশুরী দিয়ে যাচ্ছেন৷ ঠোঁটের কোণে জমে আছে দু*ষ্টা*মি৷ উনার হাত চেপে ধরে উনার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালাম৷ কর্কশ কন্ঠে বললাম,

“আমাকে স্পর্শ করার অধিকার আপনাকে দেওয়া হয়নি৷ আপনি আমার সাথে অসভ্যতামি করার চেষ্টা করছেন কেন?”

আমার রাগী কন্ঠ শুয়ে ইহান খুব ভয় পেয়ে যান। তবুও ইহান ভাইয়ার ঠোঁটে শয়তানি হাসি৷ ইহান ভাইয়া আমাকে নিজের কাছে টেনে নেন৷ আমার নাকের সাথে নিজের নাক ঘেঁষে বলল,

“আমার শ্যাম সুন্দরী বউ আমাকে সহ্য করতো পারে না কেন? আমাকে তো একটু ভালোবাসতে পারো৷”

আমি রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে সমস্ত জোর দিয়ে উনাকে ধাক্কা দিয়ে বিছানা থেকে ফেলে দিলাম৷ আমার এতো শক্তি কবে থেকে হলো? নিজেকে বাহুবলী মনে হচ্ছে৷ আমি হুংকার দিয়ে বললাম,

“আমার কাছে আসার চেষ্টাও করবেন না৷ আমার মতো কালো কেন বিয়ে করেছেন? আমি কিছুই জানি না৷ আমি অবুঝ শিশু নয়৷ আমি সবকিছু বুঝতে পারি৷”

আমাকে অগ্নি মূর্তির ন্যায় দেখে ইহান খুব ভয় পেয়ে যান৷ তিনি কিছুই বুঝতে পারছেন না৷ আমি কেন উনার সাথে এমন আচরণ করছি? উনি অবাক নয়নে আমার দিকে দৃষ্টি দেন৷ বুকভাঙা কষ্ট নিয়ে বলল,

“শালিক আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি। আমার ভালোবাসা হারাতে পারব না বলেই আমি তোমাকে বিয়ে করেছি৷ তোমাকে নিয়ে আমি কোন রিস্ক নিতে চাইনা৷ যখন ইমন ভাইয়া তোমার বিয়ে ঠিক করেন তখন আমি নিজের মাঝে ছিলাম না৷ ইচ্ছা করছিল নিজেকে শেষ করে দিতে। সবকিছু ভেঙে তছনছ করে দিতে৷ তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা কখন জন্মায় আমি নিজেও জানি না৷”

আমি ইহানের থেকে কিছুটা দূরত্ব রেখে বললাম,

” আপনাদের কাছে ভালোবাসা একটা পুতুল খেলা৷ ইমন ভাইয়া নীলা নামে একটা মেয়েকে বিয়ে করেছেন৷ স্যারের কথামতো শ্রুতি ভাবীকে বিয়ে করেন। শ্রুতি ভাবী ইমন ভাইয়াকে নিজের জীবনের থেকে বেশি ভালোবাসেন। শ্রুতি ভাবীর মুখের দিকে তাকানো যায় না৷ আপনি তো ইমনের ভাই৷ তাদের বংশের রক্ত বয়ছে আপনার দেহে৷ আপনি এমন হবেন না তার কোন নিশ্চয়তা আছে৷ আমাকে কালো দেখে এক সময় রক্ত কথা বলবে৷”

আমার কথাগুলো ইহানের মনে তীরের মতো লাগল৷ চোখ থেকে বন্যার ফোয়ারা বয়ে যাচ্ছে অনবরত। মুহুর্তের মাঝে নিজেকে গুটিয়ে নিলেন৷ অশ্রু ভরা কন্ঠে বলল,

“আমি তোমাকে ভালোবাসেছি৷ ভালোবাসায় কোন বর্ণ থাকে না৷ ভালোবাসার বর্ণ থাকলে কখনও আঁধার থাকত না৷ আজ সাদার কদর আছে পৃথিবীতে কালোর অস্তিত্ব আছে বলে৷ তুমি আমার অস্তিত্ব। আমার চোখে তুমি সবচেয়ে শ্যাম সুন্দরী। যার মুখের দিকে তাকালে কবিরা মুগ্ধ হয়ে ছন্দ ভুলে যান৷”

“আমি আপনার কথা সব মেনে নিব৷ তার আগে আমাকে কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে৷”

ইহান আহত কন্ঠে বলল,

“আমি তোমার জন্য সব রকম পরীক্ষা দিতে রাজি৷ আমার ভালোবাসা খাঁটি হলে সকল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবো৷”

“আপনি আমাকে সহ্য করতে পারেননি৷ আমাকে দেখলে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠতেন৷ আজ কেন আমার প্রতি আপনার এতো ভালোবাসা?”

ইহান ভেজা গলায় বলল,

“স্থান কাল পাত্র দেখে ভালোবাসা হয়না৷ আমি তোমার প্রেমে কখন পড়ি আমার জানা নেই৷ প্রথমে তোমাকে দেখলে আমার খুব মায়া হতো৷ আমি ভাবতাম তুমি সমাজের চোখে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে না৷ তোমার প্রতি করুনা থেকে তোমাকে স্কুলে ভর্তি করি৷ তোমাকে গাইট করি৷ তোমার সরলতা, ডাগর চোখ, পাতলা ঠোঁটের মিহি হাসি আমার মন কখন কেঁড়ে নিয়েছে জানি না৷ ধীরে ধীরে তোমার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ি৷ আমার মনের কথা জানানোর জন্য তোমাকে কতোবার দিয়া বাড়িতে নিয়ে গেলাম৷ এটা ভেবেই বলতে পারিনি যদি তুমি আমাকে ফিরিয়ে দাও৷ নির্জন রাস্তায় পাশাপাশি তোমার সাথে হেঁটেও মনের কথাগুলো বলতে পারিনি তোমার সামনে প্রকাশ করতে পারিনি আবেগময় অনুভূতি। আমাকে একটা বার ভালোবাসার সুযোগ দাও৷ আমি তোমাকে কখনও ছেড়ে যাবো না৷”

ইহানের ভালোবাসার দেখে আমি মুগ্ধ। আমি কখনও বুঝতে পারিনি আমাকে কেউ এতো ভালোবাসবে৷ আমার চোখ থেকে দুই ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ল৷ ইহান নিজের জিহ্বা দিয়ে চোখের পানি খেয়ে নিল৷ সমস্ত দেহে কম্পন শুরু হল৷ হাত পা অনবরত কাঁপছে। ইহানের স্পর্শ অনেক ছন্দময় হয়৷ মলিন আহত কন্ঠে বলল,

“তুমি না ভাসলেও আমি ভাসি৷ তুমি কাছে না আসলেও আমি আসব৷ তোমার চোখের নোনা জল আমি নিয়ে নিব৷ তোমার চোখে জল নয় ভালোবাসা ফুটাব আমি৷ মুগ্ধ দুই নয়নে তোমাকে দেখব দিনভর৷ তবুও দেখার তৃষ্ণা নাহি মেটে৷”

ইহানের কথাগুলো আমার কানে প্রতিধ্বনি হচ্ছে৷ বারবার নাড়া দিচ্ছে একটি কথা৷ আমি অনেক ভালোবাসি ইহানকে৷ আর ইহানকে কষ্ট দিতে পারব না৷ আমার ভয়াবহ অতীত জেনেই আমাকে বিয়ে করেছে৷
কাউকে এতো ভালো না বাসলে কেউ এমন করতো না৷ আমি ইহানকে জড়িয়ে ধরে বললাম,

“আমিও আপনাকে খুব ভালোবাসি। আপনাকে ছাড়া আমি একটা মুহুর্তও থাকতে পারব না৷ আপনার প্রতি আমার অবহেলা প্রতিক্ষণে আমাকে দুর্বিষহ করে তুলে৷ আমাকে ক্ষমা দেন৷ আমাকে আপনার পায়ে একটু ভালোবাসার জায়গা দেন৷”

ইহান আমাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে বলল,

“তোমার জায়গা আমার বুকের বা পাঁজরে। তোমাকে জড়িয়ে ধরতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। আমার বা পাঁজরের হার্ড খুশিতে আত্মহারা হয়ে উঠে৷ কখনও ভাবিনি তুমি আমার হৃদপিণ্ডর প্রতিটি স্পন্দনে মিশে যাবে৷ তোমাকে ছাড়া আমার নিঃশ্বাস নেওয়া কষ্টকর৷”

আমি উনার বুকে মুখ লুকালাম৷ লজ্জায় উনার দিকে তাকাতে পারছি না৷ উনি আমাকে পাঁজাকোলা করে বিছানায় শুয়ে দিলেন৷ আমি সাথে সাথে দুই হাত দিয়ে নিজের মুখ ডেকে ফেললাম। কেন ভীষণ লজ্জা হচ্ছে? পাতালে চলে যেতে ইচ্ছা করছে৷ উনি রুমের লাইট বন্ধ করে দিলেন৷

চলবে….
কেমন লাগছে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here