#ঝিলের_ওপারে_পদ্মফুল,০২,০৩
তন্বী ইসলাম
০২
এরপর তিনি পদ্ম’র দিকে তাকান। সামান্য ভারী গলায় বললেন
“ঘরে আয় পদ্ম।
শ্রাবণ পদ্মের দিকে তাকায়। মৃদু গলায় বলে
“চাচী ডাকছে তোকে, যা ঘরে যা।
পদ্ম আর কোনো কথা না বলে আলেয়া বেগমের পিছু পিছু হাঁটে। ঘরে ঢুকতেই আলেয়া চোখ রাঙ্গিয়ে তাকায় পদ্মর দিকে। চাপা স্বরে আস্তে করে বলে
“শ্রাবণের হাত ধইরা হাটতেছিলি কেন?
পদ্ম মুখ বাকালো, বললো
“আমি কেন ধরতে যামু মা, শ্রাবণ ভাই নিজেই তো ধরলো।
আলেয়া বেগম কিছু বলতে যাবেন তার আগেই শাপলা এসে ঢুকলো ঘরে। মা বোনকে এভাবে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললো
“তোমরা এভাবে দাঁড়াইয়া আছো কেন মা?
আলেয়া শাপলার দিকে তাকিয়ে চাপা গলায় বললো
“তোর বোইনেরে বইলা দিস, শ্রাবণ ওর চাচাতো ভাই হয়, মায়ের পেটের আপন ভাই না। যখন তখন হাত ধরাধরি যানি না করে।
শাপলার মাথার উপর দিয়ে গেলো কথাটা৷ আলেয়া সেখান থেকে চলে যাবার পর পদ্মর ঠিক সামনে গিয়ে দাঁড়ায় শাপলা। ফিসফিস করে পদ্মকে প্রশ্ন করে
“কি’রে! আম্মা এমন রাইগা আছে কেন?
পদ্ম ঘর থেকে বের হতে হতে দায়সারাভাবে বললো
“কি জানি। আম্মা’রে গিয়া জিগা, আমি কিছু জানি না।
পদ্ম’র এহেন কান্ডে শাপলার খানিক রাগ হয়। তবুও নিজেকে সংযত করে পদ্ম’র পিছু হাঁটে সে। পদ্ম’র ঠিক কাছাকাছি গিয়ে ওর হাত ধরতেই পদ্ম থমকে দাঁড়ায়। রাগী চোখে বোনের দিকে তাকিয়ে বললো
“আমার হাত ধরলি কেন?
“কই যাস তুইই?
“আমি জলপাই খাবো, হাত ছাড়।
শাপলা খানিক বিস্ময় নিয়ে বললো
“কিছুক্ষণ আগে না খাইলি। আমি নিজেই তো লবণ মরিচ মাখাইয়া দিলাম।
পদ্ম চোখ বড় বড় করে বললো
“তুই মাখাইয়া দিছিলি?
“হ্যাঁ।
“তাইতো বলি এতো মজা লাগে কেন। আরেকটু মাখাইয়া দে না আপা। শাপলার দুহাত চেপে ধরে বললো পদ্ম।
শাপলা হাত ছাড়িয়ে বললো
“বেশি ঝাল টক খাইলে পেট খারাপ করবে।
“বেশি কই, তখন তো শ্রাবণ ভাইয়ের লাইগা খাইতেই পারলাম না। সবটা ফালাই দিছে, আমি মাচার উপর গেলাম, জলপাই পেরে রাখবো। তুই লবণ মরিচ নিয়া আয়।
আর কোনো কথা না বলে এক দৌড়ে জলপাই গাছের নিচে চলে গেলো পদ্ম। শাপলা আপন যায়গায় দাঁড়িয়ে মুচকি হাসছে। একা একা বিড়বিড় করে বলছে
“আহ! আমার পাগলী বোন, এখনো বড় হইলো না।
মাচার উপর বসে দুবোন মিলে আয়েশ করে জলপাই খাচ্ছে। সামনে ঝিলের পানি টলমল করছে, বেশ সুন্দর লাগছে দেখতে। শাপলা ঝিলটার দিকে তাকিয়ে জলপাই খেতে খেতে পদ্মকে প্রশ্ন করলো
“আম্মা চেতছিলো কেন?
“শ্রাবণ ভাই আমার হাত ধরছিলো তাই। স্বাভাবিক গলায় উত্তর দিলো পদ্ম। শাপলা চোখ বড় বড় করে পদ্ম’র দিকে তাকালো। অবাক হয়ে বললো
“শ্রাবণ ভাই তোর হাত ধরলো কেন?
পদ্ম খানিক রেগে বললো
“ধরছে তো কি হইছে? হে তো প্রায়ই আমার হাত ধরে।
“শোন পদ্ম, শ্রাবণ ভাই আমাগো ভাই হইতে পারে, কিন্তু আপন ভাই না। যখন তখন হাত ধরতে মানা করবি। কেউ দেখলে কিন্তু বদনাম হইবো।।
শাপলার কথায় কোনো সাড়া দিলো না পদ্ম। এমন ভাবে সে জলপাই খাওয়ায় মনোযোগ দিয়েছে যেনো শাপলার বলা কথাগুলো তার কান অব্দি গিয়ে পৌছায় নি। শাপলা নিজেও এবার জলপাইয়ে কামড় বসালো।
“কাল স্কুলে যাবি না?
“হু। ছোট্র করে বললো পদ্ম।
“আমিও কলেজ যাবো কাল।
পদ্ম হেসে বললো
“তাইলে তো আমরা একসাথেই যাইতে পারমু আপা।
শাপলা হেসে বললো
“আমার আগে যাওয়া লাগবো, তোর সাথে গেলে ক্লাসে ঢুকতে দেরি হইয়া যাইবো।।
“ও!
দুপুর নাগাদ নতুন বউ কি করছে সেটা আরেক নজর দেখার জন্য চাচার ঘরে গেলো পদ্ম। নতুন বউ মানে ভাবীকে আলাদা রুমে দেওয়া হয়েছে। পদ্ম সে রুমে গিয়ে দেখতে পেলো সেলিম ভাই বিছানার এক প্রান্তে গুটিশুটি মেরে ঘুমোচ্ছে আর ভাবী তার বরের অন্যপ্রান্তে বড় ঘোমটা টেনে বসে আছে। পদ্ম হেসে ভাবীর পাশে গিয়ে বসলো, মিষ্টি গলায় বললো
“কি করেন ভাবী?
ভাবী হাসিমুখে উত্তর দিলো
“কিছুই না।
” খাইছেন?
ভাবি দুদিকে মাথা নাড়িয়ে জানান দিলো এখনো খাওয়া হয় নি। পদ্ম বিস্ময়ে বললো
“ওমা! কি কন? দুপুর পার হইয়া গেলো, এখনো খান না কেন?
নতুন বউ কিছু না বলে চুপটি করে বসে রইলো, ঠোঁটের কোনে বিন্দুমাত্র হাসি তার। মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে খুব খিদে পেয়েছে। পদ্ম বুঝতে পেরে উঠে দাঁড়ালো। গলা ফাটিয়ে ডাক দিলো
“চাচী, ও চাচী…
পদ্ম’র ডাকে কেউ একজন সাড়া দিলো বটে, তবে সে তার চাচী নয়, চাচীর ছোট ছেলে শ্রাবণ।
ঠোঁটে হাসি টেনে ভাবীর রুমে এগিয়ে এলো সে। পদ্ম’কে এক নজর দেখে ভাবীর দিকে তাকালো। বললো
“তোমার এই মিষ্টি ননদী মিষ্টি করে আমার মাকে কেন ডাকে ভাবী?
শ্রাবণের কথা শুনে ওর দিকে ফিরে তাকালো পদ্ম। খানিক তেজ দেখিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে কোমড়ে হাত দিয়ে শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে বললো
“ভাবীরে এখনো খাওয়াও নাই কেন তোমরা?
“তুই খাওয়া, তুই আছিস তো এখানেই।
“আমি কেন খাওয়ামু। তোমরা ঘরের মানুষ, ঘরের মানুষের খবর ঘরের মানুষেরই রাখা লাগে শ্রাবণ ভাই৷
শ্রাবণ পদ্ম’র কাছে এগিয়ে এলো। সামান্য ঝুঁকে পদ্ম’র মুখের সামনে মুখ এনে ফিসফিস করে বললো
“তুই কি ঘরের মানুষ না পদ্মফুল?
পদ্ম সামান্য পিছিয়ে ধীর গলায় বললো
“আমি’তো অন্য ঘরের।
শ্রাবণ আবারও মুচকি হাসলো। পদ্ম’র মাথার সামনের দিকে ছোট ছোট কয়েকটা চুল চোখের সামনে পরে আছে। শ্রাবণ সে চুলগুলোতে ফুঁ দিতেই চুলগুলো পেছন দিকে চলে গেলো। তবে পদ্ম যেনো খানিক কেপে উঠলো। শ্বাসপ্রশ্বাস উঠানামা করছে খুব। নিজেকে ধাতস্থ করতেও পারছেনা বেচারি৷ হঠাৎ এমন কেন হচ্ছে এটাই তার মাথাতে আসছে না। শ্রাবণ আবারও তার ঘায়েল করা কন্ঠে পদ্ম’কে বললো
“তাহলে নাহয় তোকে এ ঘরের মানুষ করার ব্যবস্থা আমিই করবো।
পদ্ম অবাক হয়ে বললো
“কেমনে?
শ্রাবণ সোজা হয়ে দাড়ালো এবার। ভাবীর দিকে তাকিয়ে দেখলো তিনি আড়চোখে তাদের দেখছে আর হাসছে। শ্রাবণও হাসলো। এরপর পদ্ম’র দিকে তাকিয়ে বললো
“যখন করবো তখনই নাহয় জানবি৷ আগে আগে জেনে কাজ নেই।
পদ্ম আর কোনো কথা বললো না। বেশ অস্বস্তি লাগছে তার। ভাবীর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে এক দৌড়ে সেখান থেকে বেরিয়ে আসলো সে। পেছন থেকে শ্রাবণ সবটাই খেয়াল করলো, ঠোঁটের কোনে তার কিঞ্চিৎ হাসি। পদ্ম কিছুটা এগিয়ে গিয়েও আবার থেমে গেলো। নিজ যায়গাতে দাঁড়িয়ে সে পেছনে ঘুরে আবারও শ্রাবণের দিকে তাকালো। ওর তাকানোর সাথে সাথেই শ্রাবণ পদ্ম’র দিকে তাকিয়ে তার বুকের বাম পাশে হাত রাখলো। পদ্ম এবারে আরও বেশি লজ্জা পেলো, লজ্জায় সে ভোঁ দৌড়। এবার জোরে হেসে উঠলো শ্রাবণ, নিজ মনে বলতে লাগলো
“পাগলী আমার।
দুপুরের পর ঘুমানোর অভ্যাস সেই ছোটবেলা থেকেই। যে সময়টাতে না ঘুমালে যেনো শান্তিই লাগে না পদ্ম’র। মাথাটাও ব্যাথা করে বেশ। গেলো দু’তিন দিন বিয়ের আমেজে দিনের বেলা ঘুমানোর কথা মাথাতেও আসে নি। আসলেও আমেজের ভীড়ে সেটাকে কাছে ভীড়তে দেয় নি পদ্ম। তবে আজ আর চলছে না। এবার ঘুমোতেই হবে। কোনো রকমে খেয়ে বিছানায় গিয়ে উপুর হয়ে শুয়ে পরে পদ্ম। শাপলা সবেমাত্র খেয়ে উঠেছে। কিছুক্ষণ আগে গোসল করায় মাথার চুল বেয়ে এখনো টপটপ করে পানি পরছে। বেশ লম্বা চুল তার, ঘনও ভীষণ। চুল শুকোতে বেশ টাইম লেগে যায়। পদ্ম’র পাশে গিয়ে বসে ফ্যানের নিচে চুলটা মেলে দেয় সে। যার দরুন চুলের পানির ছিটা গিয়ে পদ্মের গায়ে পরে। সবেমাত্র চোখটা লেগে এসেছিলো তার। পানির ছোয়া লাগা মাত্রই ধরফরিয়ে উঠে বসে পদ্ম। শাপলাকে দেখেই বুঝতে পারে এটা তার মাথার চুলের পানি। খানিক রেগে পদ্ম বলে উঠলো
“এই তোর চুল কাটবি নাকি এখান থেকে যাবি?
“আমি কেন আমার চুল কাটতে যাবো!
“না কাটতে পারলে ভেজা চুল নিয়ে আমার সামনে আসিস না, দিলি তো আমার ঘুমটা নষ্ট করে।।
“এত ঘুমিয়ে কি মজা পাস শুনি?
পদ্ম ঠোঁট উল্টিয়ে আবারও শুয়ে পরলো, বললো
“তুই কেমনে বুঝবি এর মজা। একবার দিনের বেলায় ঘুমিয়েই দেখ না।
শাপলা হেসে বললো
“আমার এতো মজার দরকার নাই, তুইই ঘুমা।
পদ্ম’র চোখে ততক্ষণে আবারও ঘুম ঘুম ভাব চলে এসেছে। সে ঘুমঘুম কন্ঠে বললো
“আরেকবার আমার গায়ে পানির ছিটা আইলে কিন্তু তোরে উস্টা মাইরা ঝিলের মধ্যে ফালাই দিমু মনে রাখিস।
শাপলা হেসে বললো
“তাইলে তো আরো বেশি বেশি পানি ছিটানো লাগবে। কথাটা বলেই চুলগুলো হাতে ধরে ইচ্ছে করে পদ্ম’র গায়ে ছেটাতে লাগলো। শাপলা খিলখিল করে হাসছে, ওদিকে পদ্ম বেশ রেগেমেগে উঠে বসেছে। পদ্মকে অতিরিক্ত রাগতে দেখে শাপলা হাসি থামিয়ে বললো
“আচ্ছা এবার তুই ঘুমা, আমি একটু তানি’দের বাড়ি গেলাম।
“ওদের বাড়ি কেন?
“কাল কলেজ যাবো, ওকে জানিয়ে দিয়ে আসি।
পদ্ম আবারও শুয়ে পরলো, শাপলা ঘর থেকে বেরোনোর আগ মুহূর্তে পদ্ম বললো
“আম্মা কই আপা? অনেক্ষন দেখি না।
যেতে যেতে শাপলা বললো
“আম্মা তো মামা’গো বাড়ি গেছে, মামীর শরীরডা নাকি ভালো না।
“ওহ! পদ্ম আর মাথা না ঘামিয়ে আবারও ঘুমে মনোযোগ দিলো।
যখন তখন মামাদের বাড়ি যাওয়া তার মায়ের নিত্যকার অভ্যাস। মামা বাড়িটা তাদের বাড়ি থেকে কাছেই৷ কয়েকটা বাড়ি পেরিয়েই তার মামার বাড়ি। একই গ্রামের বাসিন্দা আর মা আর বাবা। যদিও পদ্ম’র বাবা মারা গিয়েছে বেশ কয়েক বছর হয়ে গেছে।
তানি হচ্ছে শাপলাদের প্রতিবেশী। সেই সাথে বান্ধবীও বটে। সেই ছোটবেলা থেকেই একসাথে বেড়ে উঠা, একসাথে স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে কলেজে যাওয়া। শাপলাকে কোথাও যেতে দেখে শ্রাবণ বললো
“কোথায় যাস শাপলা?
শাপলা শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে হেসে বললো
“এই’তো শ্রাবণ ভাই, তানিদের বাড়িতে যাই। কাল কলেজ যাবো, ওরে জানাইয়া দিয়া আসি।
“ওহ! শাপলার কাছে এগিয়ে এলো শ্রাবণ। ফিসফিস গলায় বললো
“চাচী কই রে শাপলা?
“আম্মা’তো মামাগো বাড়ি গেছে। কেন?
শ্রাবণ লম্বা নিশ্বাস ছেড়ে বললো
“আহ বাচঁলাম।
শাপলা ভ্রু বাকালো। বললো
“বাঁচলা মানে?
সাথে সাথেই কথা ঘুরালো শ্রাবণ। বললো
“আরে কিছু না। তোর সাথে কথা বলছি দেখলে তো রাগ করতো বোধহয়।
“তুমি আম্মারে অনেক ভয় পাও, তাই না শ্রাবণের ভাই।
শাপলার কথায় মৃদু হাসলো শ্রাবণ। বললো
“তাতো একটু পায়ই, সেই ছোট বেলা থেকেই দেখছি উনি কিছুটা রাগী কিনা।
শাপলা হাসলো।
“আচ্ছা, আমি গেলাম শ্রাবণ ভাই। পদ্ম ঘরে একলা আছে, আবার তারাতাড়ি আসা লাগবো।
শাপলা আর দাঁড়ালো না, দ্রুতপায়ে এগিয়ে গেলো তানিদের বাড়ির দিকে। শাপলার মুখে পদ্ম নামটা শুনতে পেয়ে ঠোঁটের কোনে কিঞ্চিৎ হাসি দেখা দিলো শ্রাবণের। সে ফিরে এলো বাড়ির দিকে।
_________
কপালে কোনোকিছুর উষ্ণ ছোয়ায় নড়েচড়ে উঠলো পদ্ম। দ্বিতীয় বার আবারও সেই ছোয়াটা অনুভব করতেই চোখ মেলে তাকালো পদ্ম। চোখের সামনে শ্রাবণ ভাইকে দেখেও তেমন অবাক হলো না সে। ঘুমের ঘোরে স্বপ্ন দেখছে ভেবে আবারও ঘুমাতে নিলে শ্রাবণ ডেকে উঠলো
“পদ্মফুল।
এবার ঘুম যেনো উধাও হয়ে গেলো পদ্ম’র। চোখ বড় বড় করে তাকালো সামনে। শ্রাবণ এক ধ্যানে ওর দিকে তাকিয়ে আছে, ঠোঁটের কোনে হাসির ঝিলিক। তরিঘরি করে উঠে বসলাও পদ্ম। জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে নিতে পদ্ম বললো
“শ্রাবণ ভাই, তুমি এইখানে কি করো?
শ্রাবণ সবকটি দাঁত বের করে হেসে বললো
“মশা মারি।
পদ্ম ভ্রু বাকায়। বলে
“এই দিনের বেলা মশা পাইলা কই শ্রাবণ ভাই?
শ্রাবণ কিছু বলতে যাবে তার আগে কিছু মনে পরে যায় পদ্ম’র। কপালে কিঞ্চিৎ ভাজ পরে তার। সন্দিহান চোখে শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে সে বলে
“আমার কপালে কিছু একটার স্পর্শ অনুভব করছিলাম শ্রাবণ ভাই। তুমি’তো এখানেই ছিলা, কিসের স্পর্শ কও তো।
শ্রাবণ আবারও দাঁতপাটি বের করে বললো
“বলছি না মশা মারছি, তারই স্পর্শ পাইছিস পদ্মফুল।
পদ্ম’র কাছে কথাটা বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় না। তাও সে আর কথা বাড়ায় না। শ্রাবণ নিজে থেকেই বলে উঠলো
“পদ্মফুল।
পদ্ম ফিরে তাকায় শ্রাবণের দিকে। আবারও শ্রাবণের সেই ঘায়েল করা কন্ঠস্বর, চুম্বকীয় দৃষ্টি। সে দৃষ্টিতে হারিয়ে যেতে লাগলো পদ্ম। শ্রাবণ বললো
“ঘুমের মধ্যে তোকে খুব সুন্দর লাগছিলো রে পদ্মফুল। নিজেকে সামলানো দায় হয়ে গিয়েছিলো।
পদ্ম বোকার মতো তাকিয়ে রইলো শ্রাবণ ভাইয়ের দিকে। শ্রাবণ আবারও কিছু বলতে যাবে তার আগেই বাইরে থেকে জোরেশোরে কন্ঠস্বর ভেসে আসলো
“পদ্ম রে, এ পদ্ম, শাপলা.. তোরা কই গেলি সব? কোনো আওয়াজ পাই না কেন?
চাচীর কথায় চমকে উঠলো শ্রাবণ। ভয়ার্ত চোখে তাকালো পদ্ম’র দিকে। শুকনো ঢোক গিলে কাঁদো কাঁদো ফেইস করে বললো
“আজ চাচী আমারে খাইছে রে পদ্মফুল।
চলবে…..
#ঝিলের_ওপারে_পদ্মফুল
তন্বী ইসলাম -০৩
চাচীর কথায় চমকে উঠলো শ্রাবণ। ভয়ার্ত চোখে তাকালো পদ্ম’র দিকে। শুকনো ঢোক গিলে কাঁদো কাঁদো ফেইস করে বললো
“আজ চাচী আমারে খাইছে রে পদ্মফুল।
শ্রাবণের এহেন রুপ দেখে পদ্ম’র হাসি পেলো খুব। হাসি চাপাতে না পেরে যখনই সে হাসতে যাবে ঠিক তখনই এক হাতে ওর মুখটা চেপে ধরলো শ্রাবণ। পদ্ম চমকে উঠলো। বিস্ময়ে তাকালো পদ্ম’র দিকে। পদ্ম’র এমন চাহনীতে ডুবে যেতে ইচ্ছে করছে শ্রাবণেরও। তবে এখন ডুবা যাবে না, ডুবতে গেলে চাচী এসে আরো চেপে ধরবে। শেষে ডুবন্ত অবস্থাতেই শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মরতে হবে। শ্রাবণ পদ্ম’র কানে কানে ফিসফিসিয়ে বললো
“এখন হাসিস না পদ্মফুল, চাচী আমায় আস্ত রাখবে না। কিভাবে চাচীর চোখে ধুলো দিয়ে বেরোতে পারবো সেই আইডিয়া দে।
পদ্ম শ্রাবণের হাতটা কোনোরকমে সরিয়ে আস্তে করে বললো
“তুমি খাটের নিচে ঢুকো শ্রাবণ ভাই।
শ্রাবণ অবাক হয়ে বললো
“কেন?
“আম্মা তাইলে তোমারে দেখতে পাবে না। আম্মা অন্যদিকে ফিরলে নাহয় বেরিয়ে যাইও। শ্রাবণ ভাবলো এখন এটাই করা উচিৎ। সে ঝট করে খাটের নিচে গিয়ে লুকিয়ে পরলো। পদ্ম খাটের উপর বসে থেকেই বার বার খাটের নিচ দিকে উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করছে সে ঠিকঠাক খাটের নিচে ঢুকতে পেরেছে কিনা। ওর উঁকিঝুঁকির সময়েই আলেয়া বেগম এসে ঢুকলো ঘরে। পদ্মকে উকিঁঝুকি করতে দেখে তিনি ভ্রু কুচকালেন। বললেন
“এমনে কি দেখোস পদ্ম?
পদ্ম মায়ের কন্ঠস্বর পেয়ে মুহুর্তেই স্থির হয়ে বসলো। মেকি হেসে বললো
“আম্মা ব্যায়াম করতাছি।
আলেয়া মুখ বাকিয়ে বললেন
“আইজ হঠাৎ ব্যায়াম করণের শখ জাগলো কেন? আর ব্যায়াম কি মাইনষে এমনে করে?
পদ্ম আবারও মেকি হেসে বললো
“এইটা নতুন সিস্টেমের ব্যায়াম আম্মা। আজকেই মার্কেটে নামছে।
কথাটা আলেয়ার মাথার উপর দিয়ে গেলো। এই ব্যাপারে সে আর মাথা না ঘামিয়ে বললো
“শাপলা কই?
“তানি আপাগো বাড়ি গেছে।
“এখন রান্দন বারনের সময় হে তানিগো বাড়ি কেন গেলো?
পদ্ম চট করে বললো
“তুমি গিয়া আপারে নিয়া আসো আম্মা।
আলেয়া সে কথাকে পাত্তা না দিয়ে বললেন
“তুই যা তো, ওরে ডাইকা নিয়া আয়৷ আমি খাটের নিচ থেইকা আলু বাইর কইরা কাইটা থুইতাছি। মায়ের কথা শুনে পদ্ম শুকনো ঢোক গিললো, শ্রাবণের কপালে ঘাম ঝরতে শুরু হয়েছে ততক্ষণে। আলেয়া যখনই খাটের নিচ দিকে ঝুকতে যাবে ঠিক তখনই পদ্ম এক লাফে বিছানা থেকে নেমে মায়ের সামনে দাঁড়ায়। আলেয়া সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে মেয়েকে প্রশ্ন করেন
“তুই আমার সামনে আসলি কেন?
“আমি বাইর করতেছি আলু, তুমি কেন কষ্ট করতে যাইবা খামোকা?
“আইজ তোর কি হইছে পদ্ম?
“কিছুনা মা, কিছু না।
পদ্ম ঝট করে খাটের নিচে উঁকি দিলো। শ্রাবণ অসহায়ের মতো তাকিয়ে আছে ওর দিকে৷ ওর তাকানো দেখে হঠাৎ-ই পদ্মের হেঁচকি উঠলো। আলেয়া অবাক হয়ে বললো
“কি রে মা, কি হইলো আবার?
“কিছু না আম্মা।
“তাইলে এমন করলি কেন? কিছু আছে খাটের নিচে?
“আম্মা, খাটের নিচে ব্যাঙ! তাই হঠাৎ দেইখা এমন হইছে, অন্য কিছু না।
“ওহ আইচ্ছা।
আলুর ঝাপিটা মায়ের হাতে ধরিয়ে দিয়ে পদ্ম মাকে তাড়া দিয়ে বললো
“তুমি রান্নাঘরে যাও আম্মা, আমি আপারে ডাক দিতে যাইতেছি।
“আলেয়া কোনো কথা না বলে আলুর ঝাপি আর বটিটা নিয়ে বারান্দায় বসলো। পদ্ম পরলো মহাবিপদে। সে সামান্য বিরক্তি নিয়ে মাকে বললো
“ও আম্মা, তুই এইখানে কেন বইছো? রান্নাঘরে যাও না।
“রান্দনের সময় তো যামুই, কাটাবাছাটা এইখান থেইকাই কইরা যাই। তুই তারাতাড়ি যা, শাপলারে ডাইকা নিয়া আয়। পদ্মের এবার কান্না পাচ্ছে। সেই সাথে শ্রাবণ ভাইয়ের উপরও বেশ রাগ লাগছে তার। জানে আম্মা তাকে তার মেয়েদের আশেপাশে দেখতে পছন্দ করেনা, তাও সে আসবেই। পদ্ম নাক ফুলিয়ে ঘরে ঢুকলো। আলেয়া মেয়েকে ঘরে ঢুকতে দেখে বললেন
“তোরে কইছি শাপলারে ডাকতে, তুই ঘরে যাস কেন পদ্ম?
নাক ফুলানো অবস্থাতেই পদ্ম উত্তর দিলো
“তুমি কাটাবাছা করো তো আম্মা, আমি যাইতেছি।
বিছানার কাছে এসে সে চুপিসারে খাটের নিচে উঁকি দিলো, আহা শ্রাবণ ভাই কি অসহায়ের মতোই না তার দিকে তাকিয়ে আছে। ইশারায় মাকে এখান থেকে সরানোর জন্য বার বার পদ্মকে অনুরোধ করছে সে। পদ্ম কপাল বাকালো৷ ফিসফিস গলায় বললো
“থাকো তুমি এইখানে। আইলা কেন, এখন শাস্তি ভোগ করো। আমি গেলাম আপারে ডাকতে।
পদ্ম হনহন করে বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে। বেশ খানিকক্ষণ পর শাপলাকে ডেকে নিয়ে এসে দেখলো মা বারান্দায় নেই। রান্নাঘরে ঢুকে গেছে। পদ্ম জলদি করে বিছানার কাছে এলো, খাটের নিচে উঁকি দিয়ে দেখলো শ্রাবণ নেই। একটা স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়লো সে। শাপলা বোনের এমন কার্যকলাপ দেখে অবাক হয়ে বললো
“কিরে, তুই খাটের নিচে কি দেখোস?
পদ্ম শাপলার দিকে তাকিয়ে সামান্য রাগী গলায় বললো
“একটা ব্যাঙ ছিলো খাটের নিচে, ওইটাই দেখতে আইছিলাম। তুই যা তো, মায়ের কাছে যা। তারাতাড়ি রান্না কর গিয়া, আমার খিদা লাগছে।
শাপলাকে আর কোনো কথা বলতে না দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো পদ্ম।। ততক্ষণে সন্ধ্যে হয়ে এসেছে। পদ্ম এদিক ওদিক না তাকিয়ে সোজা ঝিলের কাছে চলে গেলো। সন্ধ্যের আবছা আলোতে দূর থেকেই দেখা যাচ্ছে ঝিলের সামনে মাচার উপর কেউ বসে আছে। পদ্ম ভাবলো এখন আবার এখানে কে? এই সময়ে এখানে তো কারো থাকার কথা না।
পদ্ম মাচার কাছে যেতে লাগলো। বুঝতে পারলো এটা শ্রাবণ ভাই। অবাক হলো বেশ, শ্রাবণ ভাই এখানে কি করছে?
“শ্রাবণ ভাই!
পদ্মের ডাকে মাথা ঘুরিয়ে পেছনে ফিরে তাকালো শ্রাবণ। ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠলো তার। আবেগমিশ্রিত কন্ঠে সে বললো
“এসেছিস পদ্মফুল!
“তুমি জানতে আমি এখন এখানে আসবো?
শ্রাবণ হাসলো। বললো
“আসবি কিনা জানতাম না, তবে তোর জন্যই এখানে অপেক্ষা করছিলাম।
পদ্ম উল্টোদিকে ঘুরে শ্রাবণের দিকে গেলো। মাচার অন্যপ্রান্তে বসে বললো
“বের হইলা কেমনে ঘর থেইকা?
“চাচী রান্নাঘরে গেলে সেই সুযোগে বের হইছি।
“আইচ্ছা শ্রাবণ ভাই, তুমি আম্মারে এতো ডরাও কেন?
“আমি যদি শুধুই তোর কাজিন হতাম, তাহলে বোধহয় এতো ভয় পেতাম না রে পদ্মফুল।
“তুমি তো আমার কাজিনই।
পদ্মের কথা শোনে ওর দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকালো শ্রাবণ। কিছু সময় এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে মুচকি হাসলো। বললো
“আমি শুধুই তোর কাজিন?
“তো আর কি?
শ্রাবণ সামনের দিকে তাকালো। সন্ধ্যের আকাশটা বেশ সুন্দর। আকাশের এক পাশে লাল আভার মতো ভেসেছে। সেই লাল আভা ঝিলের স্বচ্ছ পানিতে পরে পানিটাও লাল বর্ণ ধারণ করেছে। সুন্দর লাগছে দেখতে। পদ্ম মনোযোগ সহকারে উপভোগ করছে সবটা। এর মাঝে শ্রাবণ আবারও পদ্ম’র দিকে তাকালো। বললো
“আমি দুদিন পর চলে যাবো রে পদ্মফুল।
“কই যাইবা?
“যেখানে থাকি।
“তোমার ভার্সিটি নাকি বন্ধ বলছিলা।
“বন্ধ ছিলো, দুদিন পর খোলা হবে।
“ওহ।
“তোর খারাপ লাগবে না পদ্মফুল?
“কেন খারাপ লাগবো শ্রাবণ ভাই?
“আম চলে গেলে তোর খারাপ লাগবে না? শ্রাবণ আবেগি নয়নে তাকাল পদ্ম’র দিকে। পদ্ম বললো
“সেতো তুমি সবসময়ই শহরে থাকো। আমার খারাপ কেন লাগবে তার জন্য।
শ্রাবণ লম্বা নিশ্বাস ছাড়লো। কিছুটা সময় আবারও দুজন নিরব৷ এবারেও নিরবতা ভেঙ্গে শ্রাবণ বললো
“একটা কথা বলবি পদ্মফুল?
“কি কথা শ্রাবণ ভাই?
শ্রাবণ পদ্ম’র দিকে তাকাতে আবারও দেখতে পেলো সেই ছোট ছোট চুলগুলো আবারও পদ্ম’র চোখের সামনে এসে পরেছে। এক দুই না ভেবে শ্রাবণ সেই চোখে আবারও ফুঁ দিলো। পদ্ম’র আবারও কেমন যেনো লাগলো। সে শ্রাবণের দিকে লজ্জিত চোখে তাকিয়ে বললো
“তুমি সবসময় আমার চুলে ফুঁ দেও কেন শ্রাবণ ভাই?
“আমি ফুঁ দিলে তোর ভালো লাগে না?
“আমার লজ্জা লাগে।
শ্রাবণ হাসলো পদ্ম’র কথা শুনে। খানিক বাদে শ্রাবণ বললো
“আমার প্রতি তোর কোনো ফিলিংস আসে না পদ্মফুল?
শ্রাবণের কথায় অবাক হয়ে তাকালো পদ্ম। বললো
“কিসের ফিলিংস?
“এই ধর…
কথাটা শেষ হবার আগেই আলেয়ার কন্ঠস্বর ভেসে আসলো। তিনি জোর গলায় পদ্মকে ডেকে বলছেন
“কি রে পদ্ম, এই সন্ধ্যার সময় গেলি কই? পড়ালেখা কি করন লাগবো না?
পদ্ম শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে মৃদু গলায় বললো
“আম্মা ডাকে শ্রাবণ ভাই। আমি গেলাম, যদি আমি যাইতে দেরি করি তাইলে তোমারে আর আমারে এক সাথে দেইখা রাগ হইবো।
শ্রাবণ কিছু বললো না। সে লম্বা নিশ্বাস ছেড়ে সামনে থাকা ঝিলের দিকে তাকিয়ে রইলো অপলকভাবে।
বই নিয়ে ঘাটাঘাটি করছে পদ্ম। শাপলা মনোযোগ দিয়ে পড়লেও পদ্ম’র পড়ার প্রতি অমনোযোগী সে ঠিকই খেয়াল করছে সবটা। এক পর্যায়ে বই বন্ধ করে সে পদ্ম’র দিকে তাকালো। বললো
“এমন করতেছিস কেন পদ্ম? পড়বি না?
পদ্ম শাপলার দিকে তাকালো। কিছুক্ষণ কি যেনো ভেবে বললো
“একটা কথা বলি আপা?
“কি কথা? প্রশ্নবোধক চাহনিতে তাকিয়ে রইলো শাপলা৷
“আইচ্ছা, কারো প্রতি ফিলিংস কেমনে আসে? আর আসলেও মানুষ বুঝে কেমনে?
শাপলা ভ্রু বাকায়। বলে
“হঠাৎ এই কথা কস কেন পদ্ম? কারো প্রেমে টেমে পরলি নাকি?
পদ্ম বোনের কথা শুনে লজ্জা পায়। লজ্জিত গলায় সে বলে
“যাহ! এইসব কি কস তুই?
শাপলা হাসে। পদ্ম আবারও বোনকে তাড়া দিয়ে বলে
“বল না আপা।
শাপলা কিছুক্ষণ কি যেনো ভেবে বলে
“এই ধর, যার প্রতি তোর ফিলিংস কাজ করবে তারে দেখলেও ভাল্লাগবে। তার কথা ভাবতেও ভাল্লাগবে। যদি সে চোখের সামনে না থাকে তাহলে অস্থির অস্থির লাগবে, মনের মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়ে যাবে। তাকে এক নজর দেখার জন্য মন আনচান আনচান করবে। মোটকথা, সে যা করবে তাই ভাল্লাগবে। কথাটা শেষ করে শাপলা বোনের দিকে তাকালো। দুষ্টুমি করে বললো
“এমন কেউ আছে নাকি তোর?
পদ্ম আবারও লজ্জা পেয়ে বললো
“তুইও না..
দু বোন হাসাহাসি তে মেতে উঠলো। ওপাশের রুম থেকে মায়ের ডাক এলো এবার। কড়া গলায় উনি বললেন
“পড়ালেখা বাদ দিয়া দুই বোইন আড্ডা জমাইছিস! লাঠি নিয়া আসমু আমি?
দুবোন আবারও পড়ায় মন দিলো, মাকে কিছুটা ভয়ও পায় তারা। কিছুটা সময় পড়ার পরে পদ্ম’র মাথায় কিছু প্রশ্ন উঁকিঝুঁকি মারে। শাপলা প্রশ্ন করে
“পড়া বাদ দিয়া আবার কি ভাবিস?
“তুই তো আমারে বললি কারো প্রতি ফিলিংস আসলে এমন এমন লাগে নাকি।
“হ্যাঁ, তো কি হইছে?
“তুই জানলি কেমনে?
পদ্ম’র কথায় ভ্রু বাকালো শাপলা। কথাটাক এড়িয়ে সে বললো
“বাজে কথা বাদ দিয়া পড় দেখি পদ্ম। না হইলে আমি আম্মারে ডাক দিমু।
“তুই না বললে আমিও আম্মারে বইলা দিমু তুই প্রেম করিস।
শাপলা খানিক রেগে গিয়ে পদ্ম’র মাথায় আলতো করে চর দিলো। বললো
“আমি তোর বড় বোন হই পদ্ম। আমার সাথে বেশি বাড়াবাড়ি করিস না বললাম। পড়তে বলছি পড়।
পদ্ম আর কথা বাড়ায় না। সে আবারও নিজের পড়ায় মনোযোগ দেয়।
পড়া শেষ করে রাতের খাওয়া দাওয়া করে নেয় পদ্ম। আলেয়া বেগমের কোমড়ে ব্যাথা থাকায় তিনি খাওয়ার পরপরই বিছানায় গা এলিয়ে দেন। দুই মেয়েকে বলেন যেন পড়া শেষ করে তারপর ঘুমায়। এর আগে শোয়া নিষেধ। দুইবোনও মাথা পেতে সেটা মেনে নেয়। তবে পদ্মের এক নাগারে পড়া ভালো লাগে না। প্রতি রাতেই খাওয়া শেষে সে উঠোনে গিয়ে কিছু সময় হাটাহাটি করে। এতে শরীরে এনার্জি পায় সে। হালকা লাগে খুব। যদিও শাপলার এই অভ্যাসটা নেই। আজ চাঁদ উঠেছে। চাঁদের আলোয় উঠোনটা একদম পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। ভালোই লাগছে হাটাহাটি করতে।
পদ্ম উঠোনের এ মাথা ও মাথা করে হাঁটছে। বিয়ে থাকায় দু/তিনদিন স্কুলে যাওয়া হয়নি। আগামীকাল সে আবারও স্কুলে যাবে, সব বান্ধবীদের সাথে দেখা হবে, ভাবতেই মনটা আনন্দে নেচে উঠছে তার। পদ্ম যখন উঠোনের ও মাথা থেকে ঘুরে এ মাথায় আসতে চাইলো ঠিক তখনই সে থমকে গেলো। কেউ একজন পেছন থেকে দুহাতে তাকে আঁকড়ে ধরেছে। খানিক সময়ের জন্য ভয় পেয়ে গেলো পদ্ম। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলো তার। ভয়ের চোটে কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে গেছে ততক্ষণে। কিন্তু সমস্ত ভয় এক নিমিষেই উধাও হয়ে গেলো তার, যখন সেই ঘায়েল করা কন্ঠস্বর তার কানে এলো।
“পদ্মফুল…
চলবে…..