#ঝিলের_ওপারে_পদ্মফুল,০৬,০৭
তন্বী ইসলাম
০৬
শ্রাবণ হাসলো। ধীরপায়ে এগিয়ে এলো পদ্ম’র কাছে। পদ্ম’র দিকে কিছুটা ঝুঁকে কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো
“আমাকে দেখিস না রে পদ্মফুল? আমিই তো তোর সেই প্রিয় জিনিস।
পদ্ম বিস্মিত নয়নে তাকালো শ্রাবণের দিকে। ভাবি আর সেলিম ভাই কেমন করে যেনো তাকাচ্ছে এবার। অবস্থা বেগতিক দেখে শ্রাবণ সরে গেলো সেখান থেকে।
সে সিএনজির পেছন দিয়ে ঘুরে সেলিমের কাছে গেলো। নরম গলায় বললো
“বের হো।
সেলিম অবাক হয়ে বললো
“বাইর হমু মানে?
“তুই সামনে গিয়া বস।
“নাহ! আমি আমার বউ এর কাছে বসমু। তুই সামনে যা।
শ্রাবণ আর কোনো কথা না বলে সেলিমকে টানতে লাগলো। সেলিম শ্রাবণকে টানতে বাধা দিচ্ছে, তবে শ্রাবণ নিজের কাজে মগ্ন। অবশেষে শ্রাবণের টানাটানিতে বাধ্য হয়ে সেলিমকে নামতে হলো। গাড়ির পাশে মুখ ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সেলিম। শ্রাবণ আসমার দিকে তাকিয়ে বললো
“তুমি একসাইডে আসো ভাবি।
শ্রাবণের কথামতো আসমা একপাশে আসলো। এরপর পদ্ম’র দিকে তাকিয়ে মৃদু গলায় বলে
“তুই মাঝখানে আয় পদ্মফুল।
পদ্ম’ও আর কোনো কথা না বাড়িয়ে মাঝখানে এসে বসলো। এবার শ্রাবণ গিয়ে বসলো পদ্ম’র পাশে। সেলিম এখনো বাইরে দাঁড়ানো। শ্রাবণ হেসে বললো
“তুই যাবিনা?
“আমি গিয়ে কি করমু, তুইই যা।
শ্রাবণ হেসে বললো
“আরে উঠে পর, দুদিন বেড়িয়ে আয়।
সেলিম সামনে উঠলো। সে উঠার সাথে সাথেই গাড়ি চলতে শুরু করলো। সেলিম মাথা ঘুরিয়ে পেছনে তাকালো। আসমাকে বললো
“তোমার কোনো সমস্যা হইতাছে না তো?
আসমা মাথা নাড়িয়ে বললো
“নাহ।
সেলিম এবারে শ্রাবণের দিকে তাকালো। চাপা স্বরে বলল
“আমারে এখান থেকে সরাই দিলি কেন?
“মহিলা মানুষের সাথে বসে রাস্তা দিয়ে যাবি, লোকে কি বলবে?
শ্রাবণের কথা শুনে কান্না পেলো সেলিমের। গাল ফুলিয়ে বললো
“মহিলা মানুষ তো কি হইছে, সে তো আমার বউ হয়।
শ্রাবণ হেসে বললো
“লোকে তো আর জানেনা সে তোর বউ হয়।
সেলিমের ইচ্ছে হলো নিজের কপালে নিজে বারি দেক। সে আবারও শ্রাবণকে প্রশ্ন করলো
“তয় তুই পদ্ম’র পাশে গিয়া বসলি কেন? হেও তো মাইয়া মানুষ।
শ্রাবণ আবেশে পদ্ম’র দিকে তাকালো। বললো
“ও’তো আমার কাজিন।
” লোকে তো হেইডাও জানেনা।
“যে জানেনা তারে জানানোরও দরকার নাই। আর তাছাড়া লোকে জানলো কি জানলো সেইটা দিয়ে আমি কি করবো, লোকেরে জানানোর কোনো ঠ্যাকা পরে নাই আমার।
“নিজের বেলায় ষোলো আনা, আর আমার বেলায় আটি?
সেলিমের কথায় শ্রাবণ হাসলো। বললো
“আটিটা লাগাইয়া দিস। বড় হইলে বেঁচে ষোল আনা পূর্ণ করিস।
গাছপালা, রাস্তাঘাট, বাড়িঘর, দিগন্ত বিস্তৃত মাঠ সবকিছুকে পেছনে ফেলে সিএনজি এগিয়ে যাচ্ছে সামনে। পদ্ম নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে। অন্যদিকে শ্রাবণের হাত নিশপিশ করছে পদ্ম’র হাতে হাত রাখার জন্য। এক পর্যায়ে নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে পদ্ম’র হাতে হাত রাখার জন্য সে হাতটা বাড়িয়েই দিলো। কিন্তু কপালে ছিলো না বিধায় সব বিগড়ে গেলো। মুহুর্তেই পদ্ম হাতটা সরিয়ে নিলো। শ্রাবণ খানিক রাগ দেখিয়ে পদ্মকে ফিসফিস করে বললো
“হাত সরাইলি কেন পদ্মফুল? পদ্ম মৃদু হেসে বললো
“আমি তেলাপোকা ভয় পাই ভীষণ, তাই সরাইছি।
শ্রাবণের কপালে ভাজ পরলো। পদ্ম’র প্রতি অভিমান হলো ভীষণ রকমের। মুখ ফিরিয়ে বাইরের দিকে তাকালো শ্রাবণ। পদ্ম’ আঁড়চোখে একবার শ্রাবণ ভাইকে পরখ করলো। শ্রাবণ ভাইয়ের অভিমানী মুখটা দেখতে বেশ লাগছে।
কিছুক্ষণ পর শ্রাবণ আবারও পদ্ম’র দিকে তাকালো। বললো
“তুই জানিস আমি আগামীকাল চলে যাবো তাও কেন এমন করলি?
“আমি আবার কি করলাম শ্রাবণ ভাই?
“কি করিস নি? এই যে পুটলি গুটিয়ে নিয়ে বেরিয়ে পরেছিস বেড়াতে।
“ভাই ভাবিই তো কইলো তাগো সাথে আসার জন্য।
“ওরা বললো আর তুই চলে আসলি?
“হুম।
“একটাবার আমার কথা ভাবলি না পদ্মফুল.?
“তোমার কথা ভাবার জন্য তো চাচা চাচী আছে।
পদ্ম মুখ টিপে হাসছে, তবে রাগ লাগছে শ্রাবণের। এই মেয়েটা কি কিছুই বুঝে না নাকি। এবারে পদ্ম নিজ থেকে বললো
“তোমার না কালকে শহরে যাওয়া লাগবো, তয় এখানে আসলা কেন?
“তোর জন্যই তো আসতে হলো। অভিমানী গলায় বললো শ্রাবণ।
“আমি আবার কি করলাম?
“তুই কেন আসতে গেলি? তুই না আসলে আমিও আসতাম না।
পদ্ম হাসলো। মৃদু গলায় বললো
“তোমার লাইগা কি আমি বেড়ামু না?
“এইতো বেড়াচ্ছিস। আমার জন্য তো আর বসে থাকিস নি। শ্রাবণের কথায় স্পষ্ট অভিমান। পদ্ম বুঝতে পারলো সেটা।
প্রায় ঘন্টাখানেক পর আসমাদের বাড়ি পৌছে গেলো সবাই। অনেক বড় একটা বাড়ি আসমাদের। রঙ্গিন টিনের সাথে হাফ দেয়াল করা, ঘরের সামনে বিশাল বড় উঠোন। এক পাশে রান্নাঘর এবং আরেক পাশে গরু রাখার গোয়াল ঘর বাধা। ওরা যেতেই ঘরে নিয়ে বসালো আসমার বড় ভাইয়ের বউ। ভদ্রমহিলার অমায়িক ব্যবহার। মাথায় কাপড় দিয়ে নিজেকে বেশ শালীনভাবে সকলের সামনে উপস্থাপন করেছে। কুশলাদি শেষ করে প্রথমেই সবাইকে শরবত দিলেন উনি। এরপর মিষ্টি সাথে কিছু পিঠাও দেওয়া হলো। আসমার মা মুখের সামনে আচল গুজে এক পাশে দাঁড়িয়ে আছেন। দেখে বুঝা যাচ্ছে তিনি বেশ লজ্জা পাচ্ছেন, আগের মানুষ কিনা।
আসমার বড় ভাইও চলে এলো ততক্ষণে। কিছু দরকারে তিনি বাজারে গিয়েছিলেন। বাড়ি ফিরেই তিনি সবার সাথে দেখা করলেন। সন্ধ্যের আজান হবে হবে, পদ্ম’র বাথরুমে যাওয়া প্রয়োজন। আসমাকে ইশারায় বলতেই তিনি তার বড়বোন হাফসাকে ডাকলেন। হাফসা মোটামুটি মাঝবয়সী এক মহিলা। আসমার বোন হওয়া সত্বেও দু’বোনের মধ্যে কোনো মিল খুঁজে পাচ্ছেনা পদ্ম। চেহারা প্লাস বয়সের ব্যবধান অনেক। তিনি পদ্ম’কে নিয়ে গেলেন। ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে পদ্ম আর রুমে গেলো না। ঘরের ভেতর বসে থাকতে তার দম বন্ধ লাগছে। সে বারান্দার এক কোনায় গিয়ে দাঁড়ালো। ততক্ষণে অন্ধকার নেমে এসেছে। বাইরে ফুরফুরে বাতাস বইছে। খানিক দূরে রান্নাঘরে আসমার ভাবী আর বড় বোন হাফসাকে রান্না করতে দেখা গেলো। আসমার মাও রান্নায় হাত দিচ্ছে।
দূর থেকে এই বাতাসের মধ্যে দাঁড়িয়ে সেগুলো দেখতে ভালোই লাগছে পদ্ম’র কাছে। তাদের আতিথেয়তায় ঘাটতি নেই, ব্যাবহারও বেশ ভালো। এই প্রথমবার কোনো আত্মীয় বাড়ি এসে এবং তাদের ব্যাবহারে মুগ্ধ পদ্ম। কয়েকমিনিট বাদে বাড়ির দেউরি ভেদ করে একটা ছেলে এসে ঢুকে। ছেলেটা বাড়িতে ঢুকেই রান্নাঘরের দিকে যায়। মা বোনকে গিয়ে প্রশ্ন করে
“আপা দুলাভাই আইছে আম্মা?
“ঘরে গিয়া দেখ। আরো মেহমান আইছে।
ছেলেটি উচ্ছ্বসিত হয়ে এগিয়ে এলো ঘরের দিকে। বারান্দার কাছে এসে পদ্ম’কে দেখতে পেয়েই সে থেমে গেলো। পদ্ম’র দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ ভাবতে লাগলো মেয়েটি কে হতে পারে। পরক্ষণে হেসে বললো
“তুমি কি আমার বোনের ননদ?
পদ্ম মৃদুস্বরে বললো
“হুহ।
ছেলেটি এবার হাসিমুখে এগিয়ে এলো পদ্ম’র দিকে। বললো
“আমি আশিক, আসমা আপার ছোট ভাই।
“ওহ।
পদ্ম’র সাথে ভাব জমানোর চেষ্টা করলো আশিক। কিছুক্ষণ পর সে বললো
“তোমার নাম কি?
“পদ্ম।
“খুব সুন্দর নাম। আমি ক্লাস টেনে পড়ি। তুমি কিসে পড়?
পদ্ম হেসে বললো
“আমিও।
ছেলেটি উচ্ছ্বসিত হয়ে বললো
“ওমা! আমাগো দুইজনের মধ্যে দেখি অনেক মিল।
ছেলেটির কথায় হাসলো পদ্ম। তবে মনে মনে বেশ বোরিং হচ্ছে সে।
অনেক্ষন হয়েছে পদ্ম বাইরে গিয়েছে, এখনো ফিরে আসার কোনো নাম নেই, কপালে চিন্তার ভাজ পরলো শ্রাবণের। সেলিম তার বউকে নিয়ে মনের সুখে গল্প করছে, শ্রাবণের মন টিকছে না সেখানে। পদ্ম’কে ছাড়া তার বেশ একাকিত্ব লাগছে। শ্রাবণ বিছানা ছেড়ে নেমে পরলো। ওকে নামতে দেখে সেলিম বললো
“যাস কোথায়?
“তোদের প্রাইভেসি দিতে আমি চলে যাচ্ছি এখান থেকে।
শ্রাবণের কথায় লাজুক হাসি হাসলো আসমা। ঘর থেকে বেরিয়ে বারান্দায় আসতেই পদ্মকে দেখা গেলো কোনো এক ছেলের সাথে কথা বলতে। শ্রাবণের রাগ হলো। একটা অচেনা যায়গায় এসে অচেনা অজানা ছেলের সাথে দাঁড়িয়ে এভাবে কথা বলার মানে কি!
শ্রাবণ হনহন করে এগিয়ে গেলো পদ্ম’র দিকে। কড়া গলায় বললো
“এখানে কি পদ্ম?
হঠাৎ শ্রাবণের কন্ঠস্বর শুনতে পেয়ে চমকে উঠলো পদ্ম। পরক্ষণে নিজেকে ধাতস্থ করে শ্রাবণের দিকে তাকালো সে। মৃদু গলায় বললো
“ঘরে ভাল্লাগতাসেনা শ্রাবণ ভাই, তাই এইখানে দাঁড়াইয়া আছি।
শ্রাবণ এবার আশিকের দিকে তাকালো। আশিক হেসে বললো
“ভালো আছেন শ্রাবণ ভাই?
শ্রাবণ রাগীস্বরে উত্তর দিলো
“হু ভালো।
আশিক নামের ছেলেটি আরো কিছু বলতে যাচ্ছিলো, তবে শ্রাবণের জন্য কোনো সুযোগ হয়ে উঠলো না। সে পদ্মকে টেনে নিয়ে গেলো বাড়ির বাইরের দিকে। দেউড়ি পেরিয়ে ছোট্র একটা যায়গা আছে, অনেক গাছগাছালির মেলা সেখানে। পদ্ম’কে নিয়ে সেখানে দাঁড়ালো শ্রাবণ। তার চোখমুখে স্পষ্ট রাগ। পদ্ম বিস্ময়ে তাকালো শ্রাবণের দিকে। শ্রাবণের দৃষ্টি তখন সামনের দিকে দিগন্ত বিস্তৃত আকাশ পানে। পদ্ম খানিক চুপ থেকে বললো
“আমারে এইখানে নিয়া আইলা কেন শ্রাবণ ভাই?
পদ্ম’র কথা শুনে যেনো শ্রাবণের রাগ পূর্বের তুলনায় আরো বেড়ে গেলো। আত্মীয় বাড়ি আছে বিধায় খুব কষ্টে সে নিজেকে সংযত করে ক্ষীণ গলায় বললো
“ঘর থেকে বেরিয়ে যার তার সাথে আড্ডা দিতে ভালোই লাগে।
পদ্ম অবাক হলো। বললো
“যার তার সাথে বলছো কেন, সে তো ভাবির ভাই হয়।
“ভাবির ভাই হয়, তোর তো আর কিছু হয় না। কেন কথা বলতে হবে তার সাথে? বোন হলেও মেনে নিতাম, কিন্তু ভাই। শ্রাবণ নিজের কপালে নিজেই চেপে ধরলো, চোখ খিচে রইলো কিছুটা সময়। এসব দেখে পদ্ম’র মন খারাপ হলো খুব। শ্রাবণ ভাইয়ের এ পাগলামোর মানেটা তার মাথায় ঢুকছে না।
রাতের খাওয়া শেষ করে উঠোনে গেলো পদ্ম। খাওয়ার পর খানিক সময় হাঁটাহাঁটি করা তার পুরোনো অভ্যাস কিনা। হাঁটাহাঁটির এক পর্যায়ে শ্রাবণ উপস্থিত হলো সেখানে। পদ্ম খেয়াল করে নি তাকে। শ্রাবণ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে পদ্ম’র পায়চারি দেখতে লাগলো। হঠাৎ পদ্ম’র নজরে এলো সেটা। সে দাঁড়িয়ে থেকে শ্রাবণের দিকে ফিরলো। বললো
“শ্রাবণ ভাই!
শ্রাবণ এগিয়ে গেলো পদ্ম’র কাছে। আবেশি গলায় বললো
“তখন আমার কথায় কষ্ট পেয়েছিস পদ্মফুল?
পদ্ম মিহি কন্ঠে বললো
“নাহ।।
শ্রাবণ পদ্মের হাত ধরলো। হঠাৎ এক অজানা শীতল ধারা পদ্মের পা থেকে মাথা পর্যন্ত শিহরণ তুললো। অজানা ঘোরের মধ্যে হারিয়ে যেতে লাগলো সে। শ্রাবণ একটু একটু করে পদ্মকে নিজের কাছে টানতে লাগলো৷ ওদের মাঝখানে কয়েক ইঞ্চির ব্যবধান, এই ব্যবধানটাও অতি শীঘ্রই কমে আসবে সেই আশা নিয়ে শ্রাবণ পদ্মকে আরেকটু কাছে টানতে যাবে ঠিক সেই সময় কানে এলো কারো কন্ঠ..
“পদ্ম..
আশিকের কথায় চমকে উঠলো দুজনেই। ছিটকে দুজন দু মাথায় গিয়ে দাঁড়ালো। রাত থাকায় এদের দুজনকে এতটা কাছে আসতে খেয়াল করেনি আশিক, তবে বুঝতে পেরেছে পদ্ম এখানেই আছে।
এমন একটা মুহূর্তে আশিকের বেগড়া দেওয়ার কারণে খুব রাগ হলো শ্রাবণের। ইচ্ছে করলো গিয়ে কষিয়ে দুটো চর দিয়ে আসুক। পদ্ম জোরপূর্বক মুখে হাসি টেনে বললো
“আরে আশিক তুমি…
আশিক তার ফোনের ফ্ল্যাশ টা জ্বালানো। এরপর এগিয়ে এলো পদ্ম’র দিকে। হেসে হেসে একটা ভরা পলি পদ্ম’র হাতে তুলে দিয়ে বললো
“এইটার ভেতর চিপস আছে, চকলেট আছে, চানাচুর আছে, আরো কিছু খাবারের প্যাকেট আছে। রাতে খিদা লাগলে খাইও পদ্ম।
পদ্ম ভয়ে ভয়ে শ্রাবণের দিকে তাকালো। শ্রাবণের কপালের রগ ফুলছে তরতর করে। পদ্ম আবারও জোরপূর্বক হেসে বললো
“এগুলোর কি দরকার ছিলো বলো তো।
“আরে, তাতে কি হইছে। তুমি এইগুলা সব খাইবা কিন্তু। আর কিছু লাগলে আমারে বইলো হ্যাঁ।
পদ্ম মাথা নাড়ালো। শ্রাবণের আর সহ্য হচ্ছেনা। সে এবার নিজেকে সংযত করতে না পেরেই আশিককে বললো
“আমি আমার কাজিনের সাথে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতেছি, তুমি একটু পরে আসো ছোট ভাই৷
আশিক যেতে যেতে পদ্মকে আবারও বললো
“সবগুলা খাইবা কিন্তু।
আশিক চলে যেতেই পদ্ম’র হাত থেকে খাবার ভর্তি পলিটা খপ করে নিয়ে নিলো শ্রাবণ। দুরের একটা নর্দমার মধ্যে সেটা ফেলে দিয়ে পদ্ম’র দিকে রাগী চোখে তাকালো। চাপা আক্রোশে বললো
“খুব মজা লাগছে তাইনা?
“আমি কি করলাম শ্রাবণ ভাই? আমি কি উনারে বলে দিছি নাকি এইসব আনার জন্য।
শ্রাবণ সে কথাকে পাত্তা না দিয়ে বললো
“আজকের রাতটা অপেক্ষা কর পদ্মফুল, সকালেই তোরে এখান থেকে নিয়ে বাড়ি যাবার ব্যবস্থা করতেছি আমি।
চলবে….
#ঝিলের_ওপারে_পদ্মফুল
তন্বী ইসলাম -০৭
“আজকের রাতটা অপেক্ষা কর পদ্মফুল, সকালেই তোরে এখান থেকে নিয়ে বাড়ি যাবার ব্যবস্থা করতেছি আমি।
পদ্ম খানিক বিস্ময়ে তাকালো শ্রাবণের দিকে। আবছা আলোতে বুঝাই যাচ্ছে সে অনেক রেগে আছে৷ পদ্ম বুঝতে পারলো না এখন তার কি করা উচিৎ।
সারাটা রাত নির্ঘুম কাটালো শ্রাবণ। সারাক্ষণই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিলো কখন সে পদ্ম’কে নিয়ে এখান থেকে যাবে। পদ্ম’র সামনে আশিকের উপস্থিতি বড্ড জ্বালাচ্ছে তাকে। যদিও আশিক তেমন কিছুই করেনি, তবে যতটুকু করেছে সেটাও মানতে কষ্ট হচ্ছে। শ্রাবণের বেশ অস্বস্তি লাগছে। অনেক চেষ্টার পরেও তার ঘুম আসেনি। যখনই একটু চোখ লেগে এসেছে, তখনই আশিকের এমন ষাড়ের মতো নাক ডাকার কারণে ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছিলো। দুর্ভাগ্যবশত আশিকের বিছানাতেই তার শোবার জায়গা হয়েছিলো কিনা।
শেষ রাতের দিকে ঘুমানোর কারণে সকাল সকাল উঠতে পারেনি শ্রাবণ। প্রায় ন’টার দিকে আসমার ডাকে ঘুম ভাংগে শ্রাবণের। চোখ ডলতে ডলতে সে উঠে বসে। বালিশের পাশ থেকে ফোন হাতে নিয়ে টাইম দেখতেই চোখ কপালে উঠে যায় তার। রাতে পরিকল্পনা করেছিলো এই সময়ের আগেই সে পদ্ম’কে নিয়ে বাড়ি চলে যাবে। কিন্তু এখন তো এই টাইমে সে ঘুমোতেই ব্যস্ত।
শ্রাবণ ঝটপট বিছানা ছেড়ে নামে। ব্যাগের পকেট থেকে ব্রাশ টা হাতে নিয়ে বেরিয়ে পরে রুম থেকে। উঠোনে গিয়ে আরেক দফা মেজাজ বিগড়ে যায় তার। পদ্ম চেয়ারে বসে আছে, আর আশিক তার চারপাশে নানান বাহানায় ঘোরাঘুরি করছে। যদিও পদ্ম’কে দেখে মনে হলো না সে আশিককে তেমন পাত্তা দিচ্ছে। তবুও ব্যাপারটা হজম হচ্ছেনা শ্রাবণের। মনের মধ্যে প্রবল রাগ জমে থাকা স্বত্বেও নিজেকে যথেষ্ট স্বাভাবিক রেখে সে পদ্ম’র কাছে গেলো। শ্রাবণকে দেখে আশিক দাঁত বের করে হেসে হেসে বললো
“ভাই ঘুম ভাংছে?
শ্রাবণ গম্ভীর গলায় বললো
“হুম।
আশিক আবারও দাঁত কেলালো। বললো
“আমি কিন্তু অনেক ভোরে উঠছি। এতো বেলা অব্দি ঘুমানো কোনো ভালা মাইমষের কাম না। কি কও পদ্ম? পদ্ম’র দিকে তাকিয়ে শেষের কথাটা বললো।আশিক।
এবার খানিক রেগে গিয়ে শ্রাবণ বলল
“তাহলে কি আমি ভালো মানুষ না?
আশিক জিভে কামড় বসালো। বললো
“কি কন ভাই। আমি হেই কথা কইছি নি। আপনি তো আমাগো বাড়ির অতিথি। অতিথিরা বেশি সময় ঘুমাইলেও দোষের কিছু না। কি কও পদ্ম?
আবারও পদ্মকে প্রশ্ন করে কথা বলায় মেজাজ মাথায় গিয়ে ঠেকলো শ্রাবণের। সে পদ্ম’র হাত টেনে বললো
“এখনো বসে আছিস কেন। তারাতারি গিয়ে রেডি হো। আমাদেরকে এক্ষুনি বেরোতে হবে।
পদ্ম বিস্ময়ে তাকালো শ্রাবণের দিকে। কিছু প্রশ্ন করতে গিয়েও করলো না। কারণ আশিক আছে এখানে, কিছু উল্টাপাল্টা বললে পরে হয়তো এটার কারণে শ্রাবণ ভাইয়ের কাছে বকা শুনতে হবে। পদ্ম নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো শ্রাবণ ভাইয়ের পাশে। অন্যদিকে আশিক যেনো কিছুটা অবাকই হলো। সে শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে বললো
“রেডি হইবো মানে! কই যাইবেন আপনেরা?
“বাড়ি যাবো। আবারও গম্ভীরমুখে বললো শ্রাবণ।
এবার আশিকের মুখটা চুপসে গেলো। সে পদ্ম’র দিকে তাকিয়ে বললো
“হঠাৎ বাড়ি যাইবেন! তুমিও চইলা যাইবা পদ্ম?
“ওকে নিয়েই তো যাবো। যাবার দরকারটা ওর, আমার না।
“কি দরকার?
“এতোকিছু তোমাকে কেন বলতে যাবো?
শ্রাবণ আর কোনো কথা না বাড়িয়ে পদ্ম’কে টানতে টানতে সোজা ঘরের দিকে গেলো। সেলিম বসে আছে একা। আসমা বাকিদের সাথে রান্নাঘরে হাত লাগিয়েছে। শ্রাবণ সেলিমের কাছে গিয়ে ভারী গলায় বললো
“ভাবী’কে ডাক দে তো ভাই।
“কেন?
“পদ্ম’কে বাড়ি যেতে হবে। ও তো আর একা যেতে পারবে না, আমাকেই নিয়ে যেতে হবে। ভাবিকে ডেকে বল আমরা এখনই বেরোবো।
সেলিম অবাক হলো। পদ্ম’র দিকে তাকিয়ে বললো
“হঠাৎ তোর কি এমন দরকার পরলো বাড়িতে?
পদ্ম অসহায় ভাবে তাকালো শ্রাবণের দিকে। পদ্ম কিছু উল্টাপাল্টা বলে দেয় কিনা সে ভয় থেকেই আগ বাড়িয়ে শ্রাবণ বললো
“ওর স্কুলে ডাক পরেছে। আজ যেতেই হবে, না গেলে ঝামেলা আছে।
পদ্ম শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুনছে ওদের কথা, মুখে যেনো কুলুপ এঁটে আছে। কুলুপ খুলে মুখ দিয়ে কোনো কথা বের করলেই তো শ্রাবণ ভাইয়ের ঝাড়ি শুনতে হবে।
সেলিম আসমাকে আনলো। শ্রাবণ আর পদ্ম’র যাওয়ার কথাটা বলায় তিনিও বেশ অবাক হলেন। অনকে বার সাধলেন আজকের দিনটা থাকার জন্য। তবে শ্রাবণকে কোনোভাবের রাজি করানো গেলো না। শেষে অনুরোধ করলেন অন্তত নাস্তাটা যেনো করে যায়, কিন্তু তাও না। শ্রাবণের এক কথা, তাকে এই মুহুর্তেই পদ্ম’কে নিয়ে বেরোতে হবে।।
উপায়ন্তর না পেয়ে শেষে সবাইকে রাজি হতে হলো। না খেয়েই বেরিয়ে পরলো তারা। বাড়ির দেউড়ি পার হতেই দেখা হলো একটা বড় পলি হাতে দাঁড়িয়ে আছে আশিক। মুখটা তার চুপসে আছে, দেখে বুঝায় যাচ্ছে বেচারার মন খারাপ। শ্রাবণ তাকে এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করলেও কোনো লাভ হলো না। সে ধীরপায়ে এগিয়ে এলো পদ্ম’র কাছে। মৃদু গলায় বললো
“পদ্ম।
পদ্ম আশিকের দিকে না তাকিয়ে ভয়ে ভয়ে শ্রাবণের দিকে তাকালো। শ্রাবণের দৃষ্টি সামনে, তবে চোখেমুখে তার আগুন স্পষ্ট। পদ্ম আশিকের দিকে তাকালো। আশিক মলিন গলায় বললো
“তুমি তো না খেয়েই চলে যাইতেছো পদ্ম, এই নাও… এতে কিছু চকোলেট, চিপস জাতীয় খাবার আছে। রাস্তায় খিদা লাগলে খেয়ে নিও।
পদ্ম শ্রাবণের দিকে তাকাতেই শ্রাবণ বিষাদ গলায় আবারও বললো
“আবারও এইসব?
আশিক হেসে বললো
“না খেয়ে বের হইছে, পদ্ম’র কষ্ট হইবো তো।।
শ্রাবণ আশিকের ঘাড়ে হাত দিয়ে বললো
“কষ্ট লাঘব করেছো তো, এবার আমাদের যেতে দাও। দেরি হয়ে যাচ্ছে।
আশিক পথ ছেড়ে দিতেই ওরা চলে গেলো। রাস্তায় উঠতেই তারা সিএনজি পেয়ে গেলো। সিএনজি ছুটে চলেছে সরু রাস্তা বেয়ে। অনেকটা দুর এগিয়ে গেলে শ্রাবণ পদ্ম’র দিকে তাকায়। পদ্ম মুখভার করে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। অতিথি বাড়ি আশিকের যন্ত্রণায় পদ্ম’র সাথে শক্ত গলায় কথা বললেও এবার সে বেশ নরম হয়ে গেলো। মৃদু গলায় পদ্ম’কে ডেকে বললো
“পদ্মফুল, রেগে আছিস আমার উপর?
পদ্ম বেশ অভিমান নিয়ে তাকালো শ্রাবণের দিকে। কাঁদো কাঁদো হয়ে বললো
“জীবনের প্রথম বার বেড়ানোর সুযোগ পাইছিলাম শ্রাবণ ভাই। মায়েরে অনেক কষ্টে রাজি করাইছে আপা। আর তুমি কিনা আমার সেই বেড়ানো থেকে বঞ্চিত করলা।।
“আশিক তোর সাথে ভাব জমানোর ট্রাই করছিলো পদ্ম’ফুল।।
“তাতে তোমার কি হইছে?
কথাটা বলেই জিভে কামড় দিলো পদ্ম। সে অবস্থাতেই শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে দেখলো শ্রাবণ কিঞ্চিৎ রাগীচোখে তাকিয়ে আছে পদ্ম’র দিকে। পদ্ম শুকনো ঢোক গিলে বললো
“না মানে, সে ভাব জমাইতে চাইলেও আমি তো আর ভাব জমাইতেছিলাম না।।
“তোর যা নরম মন, মনে হয় না ভাব জমাইতে বেশি সময় নিতিশ।
শ্রাবণের কথায় আবারও মুখ ভার করে তাকালো পদ্ম। শ্রাবণের বেশ হাসি পেলো এবার। তবে অনেক কষ্টে হাসিটাকে চেপে রাখলো সে। আরো কিছুটা সময় বাদে পদ্ম পলি থেকে একটা চিপ্সের প্যাকেট বের করলো খাওয়ার জন্য। শ্রাবণ আঁড়চোখে তাকালো পদ্ম’র দিকে। বিস্ময়ে বললো
“এটা বের করলি কেন?
“আমার খিদা লাগছে, ওইখানে তো খাইয়া আসার সময়টাও আমারে দেও নাই।
শ্রাবণ খপ করে পদ্ম’র হাত থেকে চিপ্সের প্যাকেট টা নিলো। পরক্ষণে প্যাকেটভর্তি পুরো পলিটাও নিলো। পদ্ম হা করে তাকিয়ে রইলো শ্রাবণের দিকে। চিপ্সের প্যাকেট টা খুলে যখন একটা একটা করে চিপ্স শ্রাবণ মুখে দিতে লাগলো তখন পদ্ম খানিক রেগে বললো
“এইটা কি হইলো শ্রাবণ ভাই?
শ্রাবণ খেতে খেতে বললো
“কি হইছে?
“আমার চিপ্স তুমি খাও কেন?
“এইগুলার একটাও তোকে খেতে দিবো না পদ্মফুল। বলা তো যায় না, ঐ ছেলে কি জাদুমন্ত্র করে এগুলো তোরে দিছে। শেষে এগুলো খেয়ে তুই যদি ঐ ছেলের জন্য দিওয়ানা হয়ে যাস।।
“এবার কিন্তু তুমি বেশি বেশি করতাছো শ্রাবণ ভাই। আমার খিদা লাগছে কইলাম তো।
শ্রাবণ মৃদু হেসে বললো
“সামনে একটা বাজারে নেমে তোকে খাওয়াবো পদ্ম।
পদ্ম মুখ ভার করেই অন্যদিকে তাকালো। কিছুটা সামনে যেতেই একটা বাজারে গিয়ে ঢুকলো সিএনজি। শ্রাবণ ড্রাইভারকে বলে গাড়ি দাঁড় করালো। সেখানেই ভাড়া মিটিয়ে পদ্ম’কে নিয়ে নেমে পরলো সে। পদ্ম অবাক হয়ে বললো
“ভাড়া মিটাইলা কেন শ্রাবণ ভাই? আমরা কি বাড়ি যামু না?
শ্রাবণ পদ্ম’র মুখের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো
“বাড়ি গেলে তো চাচীর জন্য তোর সাথে ভালো করে দু’টো কথাও বলতে পারিনা। আজ নাহয় মন ভরেই কিছু কথা বলে যাই। কাল তো আবার চলেই যাবো।
পদ্ম মুখ বাকিয়ে বললো
“তোমার তো আজকে যাওয়ার ডেট, তো কাল যাইবা কেন?
“আজ তো অতিথি বাড়ি ছিলাম।
“এখন তো সেইখান থেইকা আইসাই পরছো শ্রাবণ ভাই।
“এখন তো তোর সাথে আছি, তোর সাথে সময় কাটানোর সুযোগ টা মিস করবো নাকি পাগলী।
ভরা বাজারে পদ্ম’র হাতটা শক্ত করে ধরলো শ্রাবণ। সারা গায়ে শিহরণ বয়ে গেলো পদ্ম’র। নির্বাক দৃষ্টিতে তাকালো শ্রাবণের দিকে। শ্রাবণের ঠোঁটের কোনে হাসি, দৃষ্টি সামনে। সে পদ্ম’র হাতটা ধরে সামনে এগিয়েই যাচ্ছে। পদ্ম একদৃষ্টিতে দেখছে তার শ্রাবণ ভাইকে। সামনে একটা বড় হোটেল। পদ্ম’কে নিয়ে সে হোটেলে ঢুকলো শ্রাবণ। খাওয়া দাওয়া শেষ করে ওরা বেরিয়ে পরলো বাজার থেকে। হেঁটেই যাচ্ছে তারা। গন্তব্য কোথায় তা পদ্ম’র অজানা। সে বিস্ময়ে শ্রাবণ কে পশ্ন করলো
“আমরা কই যাইতেছি শ্রাবণ ভাই?
“গেলেই দেখতে পাবি।
পদ্ম আর কোনো কথা বাড়ালো না। শ্রাবণের সাথেই হাঁটতে লাগলো। কিছুটা দূরে গিয়ে একটা জনমানবহীন যায়গায় চলে এলো তারা। শ্রাবণের ঠোঁটের কোনে এখনো সেই হাসি। জনমানবহীন সেই যায়গাটা অতিক্রম করতেই দূরে একটা বড় মাঠ দেখা গেলো। মাঠ পেরিয়ে একটা ছোট নদী। বাতাসের বেগে নদীর পানিতে ঢেউ খেলছে। দেখতে ভালোই লাগছে তার। পদ্ম সেই মনোমুগ্ধকর দৃশ্যটা দেখতে দেখতেই সামনে এগুচ্ছে।
নদীর একদম কাছাকাছি গিয়ে একটা শুকনো যায়গায় ঘাসের উপর গিয়ে বসলো তারা। বাতাসে পদ্ম’র মাথার চুলগুলো উড়ে এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। শ্রাবণ অপলক নয়নে তা দেখছে। পদ্ম’ও তাকালো শ্রাবণের দিকে। হেসে বললো
“এতো সুন্দর যায়গার খোঁজ কোথা থেকে পাইলা শ্রাবণ ভাই?
“এর আগে একবার বন্ধুদের নিয়ে আসছিলাম এখানে।
“ঘুরতে?
শ্রাবণ দুষ্ট হেসে বললো
“তা নয়তো কি প্রেম করতে?
পদ্ম হাসলো। দূরে একটা নৌকা বাধা দেখা যাচ্ছে, আশেপাশে কোনো মাঝি দেখতে পাচ্ছেনা সে। শ্রাবণকে উদ্দেশ্য করে পদ্ম বললো
“এই ঘাটে কোনো মাঝি নাই কেন শ্রাবণ ভাই?
“মাঝি দিয়ে কি করবি?
“নৌকায় উঠতে ইচ্ছা করতাছে। মাঝি থাকলে উঠতে পারতাম।
“আমি চালাবো নৌকা?
“নৌকা চালাইতে মাঝি লাগে শ্রাবণ ভাই। তুমি কি মাঝি নাকি?
শ্রাবণ হাসলো। আবেশে তাকালো পদ্ম’র দিকে। মৃদুস্বরে বললো
“আজ নাহয় তোর জন্য আমি মাঝিই হলাম। আল্লাহ সহায় হলে শুধু নৌকার মাঝি না, তোর জীবনের মাঝিও আমিই হবো।
চলবে…….