#শুরুটা_অন্যরকম
#পর্ব_০৫,০৬
#অধির_রায়
০৫
নিয়তির ব্যথার জন্য পা ফেলতে পারছে না৷ তবুও কষ্ট করে পা ফেলার চেষ্টা করছে। ধীর পায়ে ওয়াসরুমের দিকে পা বাড়াতেই নিয়তি শূন্যে ভাসতে থাকে।
— নিয়তি চিৎকার করতে নিলেই নির্বণ বলে উঠে, “স্টপ! একটা কথাও বলবে না৷ হাঁটতে পারছে না মহারানী তাও হাঁটার চেষ্টা করছে৷ ”
— আপনি এখনো জেগে আছেন। আর আপনি হুট করেই ভুতের মতো আমাকে কোলে তুলে নিলেন কেন?
— হাঁটতে পারছো না সেদিকে তোমার কি কোন খেয়াল আছে? নিজের দিকে এভার একটু খেয়াল রাখো।
— আমাকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে না৷ আমার কিছু হবে না৷ এর থেকে কত বড় আঘাত পেয়েছি তখন কিছু হয়নি৷ এখন আবার কি হবে?
— কথায় আছে না ” ভাঙবে ঠিক মচকাবে না৷” আমি তোমাকে ওয়াসরুমে দিয়ে আসছি৷
— এই এই না৷ নামান আমাকে। আপনি আমার ওয়াসরুমে যাবেন৷ আমি ওয়াসরুমে যাব না৷ আপনিই যান ওয়াসরুমে।
— ওকে ফাইন৷ আমারও কোন ইচ্ছা তোমার মতো মোটুকে কোলে তুলে নিতে।
— আপনার উপর চাঁদ ভেঙে পড়বে৷ আমার ভর মাত্র ৫৬ কেজি৷ আমাকে মোটু বানিয়ে দিলেন৷ আমি এখনো একটা নিষ্পাপ শিশু।
— চোখ বড় করে, ” তুমি শিশু৷ মিস নিয়তি তুমি শিশু নয়৷ তোমাকে বুড়ী শিশু বলতে হবে।”
— নিয়তি নির্বণের বুকে কামড়ে দিয়ে ” ওই ব্যাটা আপনাকে আমি কোলে নিতে বলেছি৷ নামান আমাকে৷”
— নির্বণ ক্ষেপে বলে উঠে, ” তোমার মতো মেয়েদের সাহায্য করাটাই আমার ভুল।”
নির্বণ নিয়তিকে ছেড়ে দেয়৷ সাথে সাথে নিয়তি ফ্লোরে পড়ে যায়। নিয়তি ভাবতে পারেনি নির্বণ তাকে ফেলে দিবে৷
— নিয়তি কোমরে হাত দিয়ে, “ও মাগো ও বাবা গো আমার কোমর ভেঙে গেছে৷ তোমাদের মেয়ে পঙ্গুত্ব হয়ে গেছে৷ আর কেউ তোমাদের মেয়েকে বিয়ে করবে না৷”
— চেঁচিয়ে বলে উঠে, “সাট আপ। এত রাতে তোমার নাটক না করলে হয় না৷” সব সময় ড্রামা নিয়ে থাকে৷ একটা ড্রামাবাজ মেয়ে।
— আপনি জানেন, “আমার কোমর ভেঙে গেছে৷” একে তো আমি ঠিকভাবে হাঁটতে পারছি না৷ তার উপর কোমরে ভেঙে গেছে৷
নির্বণ নিয়তি কোমরে হাত রেখে দেখার চেষ্টা করে৷ নিয়তি কোমরে ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পেয়ে নির্বণের শার্ট খাঁমচে ধরে। নির্বণ নিয়তির কোমরে হাত দিয়ে নিয়তিকে কোলে তুলে নেয়৷ নিয়তি চোখ বন্ধ করে নির্বণের গলা জড়িয়ে ধরে৷ এটা ভেবে যে আবার ফেলে দিবে না তো।
নির্বণ নিয়তিকে কোলে করে ওয়াসরুমে নামিয়ে দিয়ে আসে৷ আসার সময় নিয়তি ওয়াসরুমের দরজা বন্ধ করতে নিলেই নির্বণ পা দিয়ে তা আটকাতে বাঁধা দেয়৷
— নিয়তি শুকনো গলায় বলে উঠে, “আপনি দরজা বন্ধ করতে দেন না কেন? আপনার সমস্যা কি?”
— ব্রু নাচিয়ে বলে উঠে, ” আমি বাহিরে আছি৷ দরজা বন্ধ করতে হবে না৷ তোমার কাজ শেষ না হওয়া অব্দি আমি এখানেই আছি৷ ভিতরে যাব না৷ এইজন্য তোমাকে আমি আটকাচ্ছি যেন কোন সমস্যা হলে সাহায্য করতে পারি৷”
নিয়তি বাধ্য মেয়ের মতো নির্বণের কথা মেনে নেয়। নির্বণ ওয়াসরুমের বাহিরে নিয়তির জন্য অপেক্ষা করছে৷ নিয়তি ভাবতেই পারছে না নির্বণ তার জন্য এত কিছু করবে। নিয়তি ভেবে নিয়েছিল নির্বণ বাহিরে নেই৷ হেঁটে চলে যেতে নিলেই নির্বণ চোখ পাকিয়ে সামনে দাঁড়ায়।
— ক্ষেপে বলে উঠে, ” এই মেয়ে তুমি কি একবার কিছু বললে বুঝতে পার না৷ আমি কতবার বললাম আমি বাহিরে তোমার জন্য ওয়েট করছি৷”
— আসলে স্যার আমি বুঝতে পারিনি৷ আমি ভেবেছিলাম আপনি চলে এসেছেন৷
নিয়তির উপর রাগ দেখিয়ে নিয়তিকে কোলে তুলে নেয় নির্বণ। নিয়তিকে বিছানায় শুয়ে দেয়৷ নিয়তির গায়ের উপর কম্বল দিয়ে দেয়।
— নিয়তি কিছু বলতে নিলেই নির্বণ থামিয়ে বলে উঠে, “যদি মুখ থেকে একটা কথা বের হয় কোমর যতটা ভালো আছে ততটাও ভালো থাকবে না৷”
নিয়তি ভয় পেয়ে কম্বল চোখে মুখে দিয়ে শুয়ে পড়ে৷ নির্বণ সোফায় এসে নিয়তির দিকে মুখ করে শুয়ে পড়ে৷ নিয়তি চোখ মুখ থেকে কম্বল সরিয়ে নিয়ে ভাবতে শুরু করে।
” স্যার আপনি সব সময় মানুষের ভালো চেয়ে এসেছেন৷ কিন্তু নিজের দিকটা একবারও ভেবে দেখেছেন৷ নিজের কষ্ট কাউকে বুঝতে দেন না৷ আপনি সব সময় অন্যের খেয়াল রাখেন৷ অন্যের চাওয়া পাওয়া গুরুত্ব দেন৷ আপনার মনটা ভীষণ ভালো।
নিয়তি ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়ে জানা নেই৷ সকাল বেলা ঘুম ভাঙে নির্বণের ডাকে৷ নির্বণ নিয়তির জন্য চা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
— নিয়তি হতদন্ড হয়ে উঠতে নিলে নির্বণ বলে উঠে, ” একদম উঠতে হবে না৷ আমি তোমার জন্য চা করে নিয়ে এসেছি৷ নিজ হাতে চা করে এনেছি।”
— আপনি আমার জন্য চা করে এনেছেন৷ আই কান্ড বিলিভ দিস।
— কেন আমি চা বানাতে পারি না৷ আমি অনেক ভালো চা বানাতে পারি৷ খেয়ে দেখতে পারো৷ আর হ্যাঁ তোমার বিছানা থেকে আজ উঠতে হবে না৷ তোমার সব কাজ আমি করে দিব৷ চা খেয়ে নাও ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে৷
নিয়তি কোন কথা না বাড়িয়ে চা নিয়ে খেতে শুরু করে৷ চা মুখে দিয়েই ফেলে দিতে চাই৷ কিন্তু কি মনে করে ফেলে দেয় না৷ চায়ে চিনির পরিবর্তে লবণ দেওয়া হয়েছে৷ লবন চা বলতে নিয়েও বলল না৷
— নিয়তি কোমল কন্ঠে বলে উঠে, ” স্যার প্লিজ একবার দেখে আসেন মা ঘুম থেকে উঠছে কি না৷”
— ওকে আমি দেখে আসছি। তুমি চা খেয়ে কাপ হাতেই রাখবে। একদম নিচে নামার চেষ্টা করবে না৷
নিয়তি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানিয়ে দেয়৷ সে মাটিতে পা ফেলবে না৷ নির্বণ রুম থেকে চলে যেতেই নিয়তি চা বেসিনে ফেলে দিয়ে আসে৷ নির্বণ এসে দেখে নিয়তি একই ভাবে আধ অবস্থায় শুয়ে আছে৷
— নিয়তি বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উল্টিয়ে বলে উঠে, ” প্লিজ স্যার আমাকে মাটিতে নামার অনুমতি দেন৷ আমি মার কাছে যাব৷ মার কাছে না গেলে মা কি ভাববে বলেন না৷”
নির্বণ নিয়তির দিকে একবার তাকিয়ে নিয়তির হাত থেকে চায়ের কাপ নিয়ে রুমের বাহিরে চলে আসে৷ নিয়তি মন খারাপ করে বিছানা থেকে উঠে পড়ে৷
— নিয়তি জোরে জোরে বলে উঠে, ” আমিও দেখে নিব নিয়তিকে আটকায় কে? নিয়তি কারো উপদেশ মানে না৷ নিয়তি একাই একশো দোকানে তিনশো। সরি দু’শো।
_________
— নির্বণের মা চিন্তিত কন্ঠে বলে উঠে, ” একি নিয়তির কি হয়েছে? এভাবে তুমি কোলে নিয়ে আসলে যে।”
— নির্বণ শান্ত গলায় বলে উঠে, ” উনি তো নিয়তি। উনার আবার কি হবে? রাখে কখনো নিজের খেয়াল। গতকাল রাতে চা ফেলে দিয়েছে নিজের পায়ে।”
— একি কিভাবে? এমন একটা ঘটনা ঘটে গেছে আর তুমি আমাকে এখন জানাচ্ছো?
— কি করব আর? তোমাকে টেনশনে রাখতে চাইনি৷ আমি তুফান মেইলকে বলেছি যে, ” আজ রুমে বসে বিশ্বাম নাও৷ কে শুনে কার কথা? উনি তো এখানেই এসেই ছাড়বে। (নির্বণ)
— নির্বণের মা মুচকি হেঁসে, ” আমার সোনা মা আমাকে বুঝি মিস করছিলে৷” আমি জানতাম আমার সোনা মা আমাকে খুব মিস করে৷
— নির্বণ দৌড়ে দাঁড়িয়ে মনে মনে বলে উঠে, ” ড্রামাবাজ মেয়ের ড্রামা শেষ হয় না৷ কত ড্রামা করতে পারে। ভাবা যায়৷ একে না দেখলে জানতেই পারতাম না। ”
— নিয়তি নির্বণকে ভেংচি কেটে বলে উঠে, ” আমি অন্যদের কি মতো গোমড়া মুখু? আমি সবাইকে মিস করি৷ আপনাকে না দেখলে আমার দিন যে যায় না৷”
— কিন্তু মা তুমি তো আজ অসুস্থ। তুমি বরং রেস্ট নাও৷ আমি একদম ঠিক আছে৷ আমার জন্য অনেক সার্ভেন্ট আছে।
— মা সার্ভেন্টরা কি কোন কাজ নিজের মনে করে করে? তারা তো লোভ দেখানোর জন্য কাজ করে৷ আমি আপনাকে কথা দিয়েছি তো আপনার সব কাজ আমি করব৷ আর আপনাকে সুস্থ করে তুলবো আমি। আর হ্যাঁ থেরাপি রেগুলার দিতে হয়৷ না হলে সমস্যা হতে পারে৷
— নির্বণ চোখ পাকিয়ে, “এই মেয়ে স্টপ।” মায়ের দিকে তাকিয়ে নরম স্বরে বলে উঠে, ” মা তুমি কোন চিন্তা কর না। নিয়তির সব কাজ আজ আমি করে দিব৷ ”
— কি আপনি আমার কাজ করতে পারবেন? আপনি তো একটা কাজ করতে পারেন না৷ করেছেন কোনদিন এসব কাজ?
— নিয়তি তুমি ভুলে যেওনা নির্বণ কেন চ্যালেঞ্জ হারে নি৷ আর কোনদিন হারবে না৷
— ওকে দেখা যাক। পারলে মাকে উঠিয়ে বসান৷
নির্বণ নিয়তির রাগি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে মার দিকে এগিয়ে আসে৷ মাকে কোলে তুলে নিয়ে হুইলচেয়ার বসিয়ে দেয়৷
নিয়তি নির্বণের এমন সাহসিকতা দেখে খুশী হয়ে যায়৷ নিয়তি ভেবে নিয়ে ছিল মাকে বিছানায় হেলান দিয়ে বসিয়ে দিবে।
— নিয়তি বলে উঠে, ” এভার মায়ের পা মালিশ করে দেন৷ দেখি মালিশ করতে পারেন কিনা ?”
নির্বণ তার মায়ের পায়ে ঠান্ডা তেল লাগাতে নিলেই নিয়তি বলে উঠে, ” কথায় আছে না ছাগল দিয়ে হাল চাষ করানো যায় না৷”
— নির্বণ ক্ষেপে বলে উঠে, ” কি বললে তুমি? আমি ছাগল? ”
— আপনি শুধু ছাগলই নয়৷ আপনি একটা গাধা।
— আর একবার বলে দেখো আমাকে গাধা। তোমার কি অবস্থা করি তুমি নিজেও জানতে পারবে না?
— আপনি গাধার মতো কাজ করবেন৷ আর আপনাকে গাধা বলা যাবে না৷
— আমি গাধার মতো কি কাজ করলাম?
— আপনি কি কচি খোকা। কিছুই জানেন না৷ মালিশ করতে হলে তেলটা হালকা গরম করে নিতে হয়৷ যারা এমন ভুল করে তাদেরকে বলা হয় মাথা মোটা, গাধা।
নির্বণ রেগে গজগজ করতে করতে তেল গরম করতে চলে যায়৷ এই দিকে নির্বণের মা আর হাসি আটকে রাখতে পারছে না। তিনি অট্টহাসি দিয়ে উঠেন৷ নির্বণ এসে দেখে তারা হাসছে।
— নির্বণ হুংকার দিয়ে বলে উঠে, “তোমাদের হাসার পর্ব শেষ হলে কাজটা করতে দাও৷”
নির্বণ খুব যত্ন সহকারে পা মালিশ করে দেয়৷ নির্বণের মাও নির্বণের প্রতি খুব খুশি হয়৷ এভাবে নিয়তির পাশে দাঁড়ানোর জন্য৷
_______________
সন্ধ্যার দিকে নিয়তি মুখ গোমড়া করে বসে আছে৷ প্রতিদিন সে তার বাবার সাথে এই সময়ে দেখা করতে যায়৷ কিন্তু আজ যেতে পারছে না৷ কাউকে কিছু বলতে পারছে না৷
নির্বণ নিয়তির সমস্যা বুঝতে পারে৷ নিয়তির দিকে একটা শাড়ি বাড়িয়ে দিয়ে বলে উঠে, ” শাড়িটা পড়ে নাও৷”
— কেন? আমি এই শাড়িতেই ভালো আছি৷ আমি এখন শাড়ি পাল্টাতে পারব না৷
— গতকাল থেকে এক শাড়ি তোমার গায়ে। মা পাল্টাতে বলেছে। আমি চাইনা এই নিয়ে কোন কথা হোক।
— ওকে.. কিন্তু।
— আমি বাহিরে আছি। সমস্যা নেই৷ দরকার পড়লে ডাক দিও৷
নিয়তি শাড়ি পড়ার পর সোফায় বসে আছে। নির্বণ হুট করেই তেড়ে আসে। নিয়তি তো ভয় পেয়ে সোফায় পা তুলে বসে৷ নিয়তিকে কোলে নিয়ে হাঁটতে শুরু করে। নিয়তি কিছু বলতে নিলেই ঝাঁকি দেয়৷ পড়ে যাওয়ার ভয়ে নিয়তি নির্বণের গলা জড়িয়ে ধরে।
নিয়তি ভাবতেও পারেনি নির্বণ তার জন্য এত কিছু করবে৷
চলবে……
#শুরুটা_অন্যরকম
#পর্ব_০৬
#অধির_রায়
নিয়তি ভাবতেও পারেনি নির্বণ তার জন্য এত কিছু করবে৷ নিয়তি চিন্তা ধারনার বাহিরে কাজ করে যাচ্ছে নির্বণ চৌধুরী। নিয়তি মুগ্ধ নয়নে নির্বণের দিকে তাকিয়ে আছে৷ নির্বণের কাঁশিতে নিয়তি বাস্তবে ফিরে আসে৷
— নির্বণ ব্রু কুঁচকে বলে উঠে, ” মিস নিয়তি। তুমি এভাবে কার দিকে তাকিয়ে আছো?” এতো মনোযোগ সহকারে তাকিয়ে থাকার মানে কি?
— না এমনি৷ আমি একটা বিষয় নিয়ে ভাবছিলাম। কারো দিকে তাকাই নি৷ আমার কোন ইন্টারেস্ট নেই ছেলেদের দিকে তাকিয়ে থাকার।
— গুড। এখন আমরা হসপিটালে যেতে পারি৷ তোমার তো ২ ঘন্টা সময় হসপিটালের জন্য বরাদ্দ করা।
নিয়তি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়৷ নির্বণ নিয়তির হাত ধরে হসপিটালের ভিতরে নিয়ে যায়৷ নিয়তি নির্বণের হাতে ভর করে হসপিটালে আসে তার বাবার সাথে দেখা করতে যায়৷ নিয়তির বাবা নির্বণকে দেখে খুশি হয়ে যায়৷ নিয়তির বাবা জানে নির্বণ সত্যি সত্যি নিয়তিকে বিয়ে করেছে৷
— নিয়তির বাবা নির্বণকে পাশে বসিয়ে, ” বাবা জীবন ; আমার মেয়েটাকে কষ্ট দিও না৷ সে ছোট থেকে অনেক কষ্ট পেয়ে যাচ্ছে৷ ”
নির্বণ কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না? নিয়তির চোখ টলমল করছে। বৃদ্ধ লোককে মিথ্যাও বলতে পারছে না৷ নির্বণ কোন উপায় না পেয়ে বলে উঠে, ” কোন চিন্তা করতে হবে না৷ আমি সব সময় খেয়াল রাখবো।” নিয়তিকে উদ্দেশ্য করে, “আমার অফিসে অনেক কাজ আছে৷ আমাকে অফিসে যেতে হবে৷”
নির্বণ নিয়তিকে চোখ দিয়ে ইশারা করে বাহিরে চলে আসে। নিয়তির তার বাবার সাথে কথা বলে৷ ডাক্তারের সাথে কথা বলে তার অবস্থা বর্তমানে কেমন৷ কবে তার বাবাকে বাড়িতে নিয়ে যেতে পারবে? নিয়তির বাবার দেখাশোনা নিয়তির বড় বোন করছে৷ সেজন্য নিয়তিকে হসপিটালে থাকতে হয় না৷
___________
দেখতে দেখতে এক সপ্তাহ পার হয়ে যায়৷ নিয়তির পা শুকিয়ে গেছে৷ সে আগের মতো হাঁটাচলা করতে পারে। নিয়তি নির্বণের মায়ের সাথে বিভিন্ন ধরনের কথা শেয়ার করছে৷
— মা আপনাকে আগামী কাল থেকে হাঁটতে হবে৷ আপনার পা বর্তমানে যথেষ্ট পরিমাণ স্টং।
— নির্বণের মা ইতস্তত বিক্ষিপ্ত সুপ্ত কন্ঠে বলে উঠে, ” সোনা মা৷ আমার পায়ে ভীষণ ব্যথা করে। আমি হাঁটতে পারব না৷”
— তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, ” আমি কোন কথা শুনতে চাই না৷ আপনি আমার কথা মতো চলবেন৷ ব্যাস আমি আর কিছু জানি না৷”
— দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলে উঠে, ” ওকে তুমি যা বলবে তাই হবে৷”
— এখন অনেক রাত হয়ে গেছে । আপনি ঘুমিয়ে পড়েন৷ আমি আবার এসে দেখে যাব আপনি ঘুমিয়ে আছেন কিনা৷
নির্বণের মা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়। নিয়তি নির্বণের মায়ের গায়ে কম্বল দিয়ে এয়ারকন্ডিশন অন করে চলে আসে৷
____________
— “স্যার আপনার চা। আমি নিজ হাতে আপনার জন্য চা করে এনেছি৷” উচ্ছাসের সহিত বলে উঠে।
— ফাইলের দিকে মুখে রেখেই, ” বাড়িতে কি সার্ভেন্টের অভাব পড়েছে? তোমাকে চা বানাতে হচ্ছে। আর তুমি কিভাবে ভাবলে তোমার হাতের চা আমি খাবো?”
— নিয়তি অবাক চোখে তাকিয়ে, ” আমি কি করেছি? আমার হাতের চা খেতে কোন সমস্যা নেই তো? আপনার পছন্দের দার্জিলিং চা নিয়ে এসেছি৷ বেশি করে ফ্লেভার দেওয়া৷”
— জাস্ট সাট আপ। আমার সামনে অভিনয় করতে আসবে না৷ এতদিন তুমি অসুস্থ ছিলে সে জন্য তোমাকে সাহায্য করেছি৷ ইট’স বেরি সিম্পল। ভেবে নিও না আমি তোমার প্রেমে পড়ে গিয়েছে।
— নিয়তি কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে উঠে, ” আমি তেমনটা মিন করিনি স্যার৷ আই অ্যাম সরি৷ আমি বুঝতে পারিনি৷”
— মিস নিয়তি একটা কথা কান খুলে শুনে রাখ৷ তুমি এখানে এসেছো এক মাসের জন্য৷ সো, আমার আছে আসার চেষ্টা করবে না৷ তোমাকে যে কাজের জন্য এখানে নিয়ে আসা হয়েছে, সে কাজ মন দিয়ে কর?
— ধন্যবাদ স্যার৷ আমার জায়গা দেখিয়ে দেওয়ার জন্য। আমি ভুলেই গিয়েছিলাম সেগুলো আপনার মানবিকতা ছিল।
— এখন কথা বলা শেষ হলে নিজের কাজে যাও৷ আমাকে আমার কাজ করতে দাও৷ তুমি ভালো করেই জানো আমি কাজের টাইমে ডিস্টার্ব একদম পছন্দ করি না৷
নিয়তি চোখের জল মুছে চা নিয়ে বাহিরে চলে যায়। নিয়তি সব সময় ভুল করে বসে৷ সবাইকে অল্পতেই আপন ভেবে নেয়৷ কেউ তার আপন নয়, সে কেন বুঝতে পারে না?
__________
নিয়তি রুমে এসে দেখতে পাই নির্বণ এখনো কাজ করছে৷ খাবারগুলো ঢাকা পড়ে আছে৷ এখনো ডিনার করে নি৷ য়তি নির্বণের সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছে৷ নিয়তি শুধু হাত কাচুমাচু করছে।
— নিয়তির এমন অবস্থা দেখে, ” কিছু বলবে মিস নিয়তি?”
— আসলে স্যার একটা কথা বলার ছিল৷ অনুমতি যদি দেন তাহলে বলতে পারি৷
— কি কথা? কথা বলার জন্য হাত কাচুমাচু করছো?
— আসলে স্যার কিভাবে বলবো বুঝে উঠতে পারছি না৷ বলার সাহসও পাচ্ছি না৷
— কর্কট কন্ঠে বলে উঠে, ” মিস নিয়তি আমি একদম ন্যাকামি পছন্দ করি না৷ বলতে না পারলে বলতে এসেছো কেন? রাতের রাত হয়েছে ঘুমাতে পারো।”
— নিয়তি ভয়ে ভয়ে বলে উঠে, ” স্যার আমার কিছু টাকার দরকার ছিল৷ আপনার দেওয়া পুরো টাকা শেষ হয়ে গেছে৷ এখন বাবাকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷ বাবার মেডিসিনের জন্য কিছু টাকা লাগবে৷”
নিয়তির কথা শুনে নির্বণ নিয়তির দিকে চোখ ছোট করে তাকায়। চোখ দেখে বুঝা যাচ্ছে, কিছু একটা প্রশ্ন জুড়ে রয়েছে চোখে।
— নিয়তি কোমল কন্ঠে বলে উঠে, ” স্যার আমার কাছে দিনে দুই ঘন্টা সময় ছিল৷ আমি এখন থেকে ২৪ ঘন্টাই এই বাড়িতে থাকবো। প্লিজ আমার টাকাটা খুব দরকার।”
— নির্বণ ফাইল বাঁধতে বাঁধতে বলে উঠে, ” কত টাকা লাগবে? আর টাকা কখন লাগবে?”
— নিয়তি প্রফুল্লের সাথে বলে উঠে, “তেমন লাগবে না৷ হাজার বিশ হলেই চলে যাবে৷”
— নির্বণ সোফায় টাকা ছুঁড়ে মেরে বলে উঠে, ” এখানে পঞ্চাশ হাজার টাকা আছে। আশা করি, এই পঞ্চাশ হাজার টাকা দিয়ে চলে যাবে। আরও লাগলে বলতে পারো৷”
— না স্যার আর লাগবে না৷ এতেই হয়ে যাবে৷
নিয়তি মনে মনে বলে উঠে, ” আপনার টাকা আছে বলে, আজ গরিবের দিকে এভাবে টাকা ছুঁড়ে মারেন৷ স্যার অহংকার থাকা ভালো। তবে অতি অহংকার ভালো না৷” আপনি মনে হয় ভুলে যান৷ “অহংকার পতনের মূল।”
— নিয়তি চোখের সামনে হাত নাড়িয়ে, ” মিস নিয়তি টাকাটা তুলে নাও৷ নাকি আমি সেটাও করে দিব৷ আর দাঁড়িয়ে থেকে আকাশ পাতাল ভাবতে হবে না৷”
— নিয়তি অপ্রস্তুতভাবে বলে উঠে, ” এভাবে ছুঁড়ে মারা টাকা না নেওয়াই ভালো৷ আমাদের কি মানুষ মনে হয় না? ”
— নির্বণ ক্ষেপে বলে উঠে, “হোয়াট ডু ইউ মিন”
নিয়তি বুঝতে পারে ফুস করে সত্য কথা বলে দিয়েছে৷ এখন তো নিয়তির ১২ টা বাজিয়ে ছাড়াবে।
— নিয়তি শুকনো ঢোক গিলে, ” আসলে স্যার কিছু না৷ এমনি বলে ফেলেছি৷ প্লিজ ফরগেভ মি৷”
নিয়তি টাকাটা নিয়ে নিজের আলমারিতে রেখে দেয়৷ নিয়তি আসার পর নির্বণ নিয়তির জন্য আলাদা একটা আলমারি নিয়ে এসেছে। যেন নিয়তির কোন সমস্যা না হয়৷
— নির্বণ সোফায় শুয়ে মনে মনে ভাবতে থাকে, ” মিস নিয়তি আমার সাথে উঁচু গলায় কথা বললে তার শাস্তি পেতে হবে৷ তো তুমি শাস্তি থেকে বঞ্চিত হবে এটা মানা যায় না৷ শাস্তির জন্য প্রস্তুত হয়ে নাও।
–নিয়তি টাকা রেখে শুতে যাবে তখনই নির্বণ বলে উঠে, ” আউচ, পা’টা ভীষণ ব্যথা করছে। নিয়তি একটু হ্যাল্প করবে?”
— কি সাহায্য করতে হবে স্যার?
— আমার পা গুলো ভীষণ ব্যথা করছে৷ আমি ঘুমাতে পারছি না৷ যদি তুমি পা গুলো একটু টিপে দিতে ভালো হতো৷ আসলে সোফায় ভালোভাবে পা রেখে ঘুমানো যায় না। সেজন্য মেবি ব্যথা করছে।
— মিয়তি আবাক চোখে তাকিয়ে, ” কি আমি পা টিপে দিব? আমি আপনার পা ধরতে পারব না৷ আমার একটা মূল্যবোধ আছে।”
— চোখ বন্ধ করে, ” আমি কি তোমাকে পা ধরে ক্ষমা চাইতে বলেছি৷ আমি তো বলেছি আমার পা একটু টিপে দিতে৷ মানবতার খাতিরে তো এমন কাজ করতে পারো৷”
— “সালা শয়তান পোলা, আপনি আমাকে দিয়ে পা টিপানোর জন্য এমন নাটক করছেন৷ আর আমাকে বলে আমি ড্রামাবাজ৷ নিজে একটা মস্ত বড় ড্রামাবাজ সেদিকে কোন খেয়াল নেই৷” নিয়তি মনে মনে বলে উঠে।
— নির্বণ পা সোজা করতে নিয়ে, ” আহ্ পারছি না৷ পা ছিঁড়ে যাচ্ছে। প্লিজ নিয়তি এত নিষ্ঠুরতম মনোভাব পোষণ করবে না৷”
— নিয়তি বিরক্তের সাথে বলে উঠে, ” ওকে আমি পা টিপে দিচ্ছি।”
নির্বণ সাথে সাথে পা সোজা করে সোফার উপর রাতে৷ নিয়তি বাধ্য হয়ে পা টিপ যাচ্ছে।
— আহ্ নিয়তি প্রচুর ব্যথা। তোমাকে বলে বুঝাতে পারব না৷ প্লিজ আস্তে আস্তে একটু টিপে দাও৷
— স্যার আপনি বরং বিছানায় শুয়ে পড়েন। আমি আপনার পা টিপে দিচ্ছি৷ এখানে তো পা সম্পুর্ন সোফায় পড়ে না৷
— আচ্ছা নিয়তি৷
নির্বণ সোফা থেকে উঠে পা ফেলতে নিবে। কিন্তু পা ফেলছে না৷ নির্বণ মনে মনে ভাবছে, ” মিস নিয়তি তুমি যদি পাতায় পাতায় ঘোর আমি ঢালে ঢালে৷ আমি পা ফেললে বলতে পারবে পা ঠিক আছে। দেখাচ্ছি মজা৷”
— নির্বণ এক পা ফেলে বলে উঠে, ” নিয়তি পারছি না৷ প্লিজ আমাকে একটু ধর৷ পড়ে যাব এখনই৷ আমি এই বয়সে কোমরটা ভাঙতে চাই না৷”
নিয়তি নির্বণের কথা বিশ্বাস করে দৌড়ে নির্বণকে ধরে। নির্বণের হাত কাঁধে ঝুলিয়ে নিয়তি নির্বণকে বিছানায় নিয়ে যায়৷ বিছানায় শুয়ে দিয়ে নির্বণের পা টিপতে থাকে।
— নিয়তি আস্তে আস্তে বলে উঠে, ” মন বলছে আপনার গলা টিপে দিতে৷ একদম ভেজাল শেষ হয়ে যেত৷”
— নিয়তি কিছু বললে? আমি ঠিক শুনতে পারলাম না৷
— না.. না.. স্যার। কিছু বলিনি৷ আপনি কি কিছু শুনেছেন?
— না কিছু শুনতে পাইনি৷ তুমি বরং তোমার কাছে মন দাও৷ আমি একটু ঘুমানোর চেষ্টা করি।
নির্বন চোখ বন্ধ করে মনে মনে বলে উঠে, ” কমপক্ষে তোমাকে দিয়ে আমি দুই ঘন্টা পা টিপাবো। তোমাকে দিয়ে আমি দুই ঘন্টা পা টিপাতে না পারলে আমিও নির্বণ চৌধুরী নয়৷”
আধ ঘন্টার পর নিয়তি দেখে নির্বণ চোখ বন্ধ করে আছে৷ নিয়তি পায়ে আস্তে করে একটা চিমটি কাটে৷ কিন্তু নির্বণ চোখ মেলে তাকায় না৷ নিয়তি শিউর হওয়ার জন্য নির্বণে কাছে আসে। নির্বণের সামনে হাত নাড়িয়ে বুঝতে পারে নির্বণ ঘুমিয়ে গেছে।
নিয়তি চলে আসতে নিলেই নির্বণ নিয়তির হাত ধরে হেঁচকা টান দেয়। নিয়তি হেঁচকা টানে নির্বণের উপর গিয়ে পড়ে৷ নিয়তির খোলা কেশগুলো নির্বণের সারা মুখে ছড়িয়ে যায়৷ নিয়তির মাথা সরাতে নিলে নিয়তির ঠোঁট জোড়া নির্বণের ঠোঁটের সাথে লেগে যায়৷ দু’জনের চোখ কলকাতার রসে গোল্লায় পরিণত হয়৷
চলবে……
নির্বণকে সেই রাগী বদমেজাজিতে ফিরিয়ে আনা হলো৷ নির্বণ আর নিয়তি কাছাকাছি আসবে নির্বণের মায়ের মাধ্যমে। নির্বণের মায়ের মাধ্যমে আসলেই তো খুশি৷