শুরুটা_অন্যরকম #পর্ব_১৩,১৪

0
436

#শুরুটা_অন্যরকম
#পর্ব_১৩,১৪
#অধির_রায়
১৩

নির্বণের মায়ের মা আষাঢ়ের ঘনঘটা আকাশের মতো মুখ কালো করে ফেলে।।মুখে স্পর্শ ফুটে উঠে চিন্তার ছাপ।

–মা আপনি এভাবে মুখ ভার করলেন কেন? আমি কিছু ভুল বলেছি। প্লিজ মন খারাপ করবেন না৷ আমি কিছু জানতে চাইনা৷

— নির্বণের মা কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে উঠেন, ” না নিয়তি তুমি কোন ভুল বলনি৷ তোমার সবকিছু জানার অধিকার আছে৷”
আমাকে একটা কাজ করে দিবে।

— বলেন কি কাজ? আমি আপনার সব কাজ করে দিব? শুধু আপনি আমাকে বলেন?

— দেয়ালের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে উঠেন, ” দেয়াল থেকে নির্বণের বাবার পিকটা একটু এনে দাও৷ ”

নিয়তি নির্বণের মায়ের কথামতো পিকটা এনে দেয়। নির্বণের মা পিকটা পরম যত্নে একটা উম্মা দেয়৷ পিকটা এমনভাবে টার্চ করছে দেখে বুঝা যাচ্ছে যে, “কোন নবজাতক শিশুর এইমাত্র জন্ম হলো।” নিয়তিকে পাশে বসায়৷

— জানো মা নির্বণ কেন নিচে সবার সাথে বসে খায়না? কারণ তার বাবা গত হওয়াকে নির্বণ মেনে নিতে পারেনি৷ নির্বণ তার বাবার সাথে মোকাবেলা করে খাবার খেত৷ কত দুষ্টামি করত। কিন্তু গত হবার পর নির্বণ সেই টেবিলে আর খাবার খায়নি৷ এখন কেন খায়না জানি না?

— নিয়তি নির্বণের মায়ের চোখের জল মুছে দিয়ে, ” মা আপনি মন খারাপ করবেন না। সব ঠিক হয়ে যাবে৷ আপনার ছেলের মুখে হাসি ফিরিয়ে নিয়ে আসার দায়িত্ব আমার নিজের। ”
সে আবার আগের মতো সবার সাথে নিচে বসে খাবে।

— কোমল কন্ঠে, ” এইতো আমার সোনা মায়ের মতো কথা। আমি জানি তুমি ঠিক পারবে। আমার আশীর্বাদ রইল।”

— হ্যাঁ আপনার আশীর্বাদ আমার মাথার উপর থাকলে কোন কাজই আমার কাছে অসাধ্য নয়৷

মুচকি হেঁসে নিয়তির মাথায় হাত বুলিয়ে দেন৷ নিয়তি নির্বণের মায়ের হাত ধরে হাটানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন৷ গতকালের থেকে এখন মা অনেকটা শক্তি পাচ্ছে পায়ে।
___________

— “এভাবে মন খারাপ করে বসো আছো কেন?” নির্বণ রুমে প্রবেশ করতে করতে বলে উঠে।

— কই না তো। আমি কেন মন খারাপ করব? আমার মন বলতে কিছুই আছে নাকি৷

— তোমার মন নেই৷ একদম ঠিক কথা বলেছো। তোমার মন বলতে কিছু নেই৷ তবে অভিনয় ভালো করতে পার।

— আমারও মন আছে। আমার মা আজ বেঁচে থাকলে মনে হয় আমি এই মিথ্যা সম্পর্কে জড়িয়ে পড়তাম না৷ আমার মা কখনো এমন হতে দিত না৷ আমার মন খারাপ হচ্ছে এটা ভেবে যে, ” ১২ দিন পর যখন এই বাড়ি থেকে চলে যাব তখন মায়ের রিয়েক্ট কেমন হবে? মা যদি জানতে পারে তখন কতটা কষ্ট পাবে।” বলতে নিয়েই চোখে জল এসে পড়ল৷

— ভাঙা গলায় বলে উঠে, ” তোমাকে এই সব নিয়ে ভাবতে হবে না৷ আমি সময় বুঝে মাকে সব বলে দিব৷ আমি বলে দিব আমরা বিবাহিত নয়৷”

— আপনি তো সারাদিন অফিসে থাকেন৷ আপনি আমাকে কাজ করতে মানা করছেন। কিন্তু মা ভেবে নিয়েছে অন্যটা৷

— আমি এইজন্য মানা করেছি, যেন তুমি মায়ের সাথে বেশি সময় কাটাতে পারো। তবে মা কি কোন সন্দেহ করেছে?

— হ্যাঁ মা শুধু সন্দেহ না, বলেও দিয়েছেন৷ তাঁর ধারণা আমি মা হতে চলছি৷ আপনি কেন বলেছেন আমাকে, যেন কাজ করতে না দেওয়া হয়?

— কি! তোমার মাথা ঠিক আছে৷ তোমার সাথে আমার এখনো শারীরিক সম্পর্ক হয়নি৷ আর তুমি কিনা..

— স্যার আমি কিছু করিনি৷ যা করেছেন আপনি করেছেন? আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিছি৷

— কি সিদ্ধান্ত? আমি কি জানতে পারি?

— হুম আপনাকে কিভাবে জানাব ভেবে পাচ্ছি না?

— হেয়ালি না করে বলে ফেলো? যদি টাকা লাগে নিয়ে নিও আলমারি থেকে। আমি তোমার কাছে অনেক খুশি৷ তুমি যা চাইবে আমি তাই দিব৷

— টাকার পরিবর্তে যদি আমি আপনাকে চাই৷

— মুচকি হেঁসে, ” হাস্যকর৷ তোমার মাথাটা সত্যিই গেছে৷

নির্বণ তাওয়াল নিয়ে ওয়াসরুমে চলে যায় স্নান করতে৷ নিয়তি বিছানায় ধপাস করে বসে পড়ে। নিয়তি চোখে জল এসে পড়ে৷

— নিয়তি মনে মনে বলে উঠ, ” স্যার আমি সত্যি বলছি। আমি কখন কোন সময় আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি জানি না৷ কিন্তু আমি গরীর। আমি আপনাকে ভালোবাসতে পারব না৷ আমার অবুঝ মন শুধু আপনাকে কাছে পেতে চাই৷ আমার অবুঝ মন কেন যে, আপনার মতো গোমড়া মুখুকে লাইক করে বসল? আমি নিজেই জানি না৷ আমি আপনার সামনে ভালোবাসা কখনো প্রকাশ করব না৷

নির্বণ স্নান করে এসে দেখে নিয়তি সেই আগের মতো বসে আছে৷ নিয়তিকে বিরক্ত না করে নিয়তির সামনে খাবার নিয়ে বলে উঠে, ” মিস নিয়তি খাবার খেয়ে নাও৷ ”

— আসলে আমার খেতে ইচ্ছা করছে না৷ আপনি খেয়ে নেন৷

— ক্ষেপে বলে উঠে, ” মিস নিয়তি তুমি তাহলে কেন খাবার খাওনি? প্রতিদিন কেন খাবার নিয়ে বসে থাকো আমার জন্য। ”

— স্যার আসলে আমার খেতে মন চাইছে না৷ আমি সন্ধ্যার দিকে খেয়ে নিয়েছি৷ আপনি খাবার খেয়ে নেন৷

নির্বণ রাগ করে বিছানার এক পাশে শুয়ে পড়ে। নিয়তিও না খেয়ে শুয়ে পড়ে৷

মাঝ রাতে নির্বণের ঘুম ভেঙে যায়৷ নিয়তি সেই ছোট বাচ্ছার মতো মুখে বৃদ্ধা আঙ্গুল দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। নির্বণ নিয়তিকে এভাবে ঘুমাতে দেখে মুচকি হাসে। নিয়তি ঘাড়ের কালো তিলটা নির্বণকে নিয়তির দিকে টানছে৷ কিন্তু নির্বণ কিছু সময়ের মাঝেই নিজেকে সংযত করে নেয়৷ নির্বণের সামনে ভেসে উঠে ছোঁয়ার ছবি৷

ছোঁয়ার ছবি ভেসে উঠাতে নির্বণ খুব রেগে যায়৷ নির্বণ ছোঁয়ার কোন স্মৃতি আর আগলে রাখতে চাইনা৷ নির্বণ ছোঁয়ার সকল চিরকুট, ছোঁয়ার দেওয়া সকল প্রকার গিফট একত্রে করে রুমের মাঝে আগুন লাগিয়ে দেয়৷ সমস্ত ঘর ধোঁয়ায় ঘেরে যায়৷

ধোঁয়া নিয়তি নাকে যেতেই নিয়তি উঠে পড়ে৷ নিয়তি কাঁশতে থাকে। নিয়তি মাঝ রাতে ঘুম থেকে উঠে দেখে নির্বণ একে একে কাগজ আগুনে ছুঁড়ে মারছে৷

— নিয়তি নির্বণের কাছে এসে নির্বণে কাঁধে হাত রেখে, ” কি করছেন এসব? আপনি রুমের ভিতরে আগুন লাগিয়েছেন কেন?”

— বুক ভরা কষ্ট নিয়ে বলে উঠে, ” যখন ভালোবাসা স্মৃতি হয়ে যায় তখন সেই স্মৃতি জড়িয়ে ধরে নিজেকে কষ্ট দিতে চাই না৷ সব সময় নিজেকে অপরাধী মনে হয়।” “কেন ভালোবাসতে গেলাম? ” আফসোস মাখা মুখ নিয়ে।

— নিয়তি মনে মনে বলে উঠে, ” স্যার আপনি নিজেও জানেন না, আপনি আমার কাজকে কতটা সহজ করে দিয়েছেন। আপনাকে এখন আমি নিজের মতো করে গড়ে তুলতে পারব৷”

— তুমি উঠে পড়লে যে৷ সকাল হতে অনেক দেরি আছে। ঘুমিয়ে নাও।

— আমার আর ঘুম আসবে না৷ আমি সবকিছু পরিষ্কার করে স্নান করে ফেলব৷

নির্বণের চোখে ঘুম নেই৷ শুধু ছোঁয়া প্রতারণা চোখে ভেসে উঠছে৷ নির্বণ সোফায় বসে মাথার চুল চেপে ধরে বসে আছে। হঠাৎ মাথায় কোমল হাতের স্পর্শ পেয়ে নির্বণ হাত সরিয়ে নেয়৷ নিয়তি পরম যত্নে নির্বণের মাথা মাসাজ করে দেয়৷ নির্বণ কখন ঘুমিয়ে পড়ে জানা নেই৷

_______

নিয়তির মন আজ খুব খুশি। নির্বণ নিজ থেকে ছোঁয়ার স্মৃতি মুছে ফেলেছে৷

নিয়তি আজ নির্বণের পছন্দের সাদা রঙের রেশমি শাড়ি পড়েছে৷ নিয়তি সাদা শাড়িতে সুন্দর মানিয়েছে। নির্বণ নিয়তির দিকে হা করে তাকিয়ে আছে৷ নির্বণ ধীরে ধীরে নিয়তির কাছে চলে যায়৷ পিছন থেকে নিয়তিকে জড়িয়ে ধরে৷ নির্বণের পরশ পেয়ে নিয়তি কেঁপে উঠে।

— নিয়তি কানে নেশা ভরা কন্ঠে বলে উঠে, ” তোমাকে আজ খুব সুন্দর লাগছে। আমি জানতাম ছোঁয়া তুমি ফিরে আসবে।”

ছোঁয়ার নাম শুনে নিয়তির সকল অনুভূতি নিমিষেই উড়ে যায়৷ নিয়তি ক্ষেপে বলে উঠে, ” স্যার আমাকে ছাড়েন৷ আমি আপনার ঘরের বউ নয়৷ এভাবে জড়িয়ে ধরার কিছু নেই৷”

নিয়তির কন্ঠ শুনে নির্বণের ঘোর কাটে৷ নির্বণ নিয়তিকে ছেড়ে দেয়৷

— নির্বণ ক্ষেপে বলে উঠে, ” মিস নিয়তি তুমি এই সাদা শাড়ি কোথায় পেলে? ”

— কোথায় পাবো মানে কি? এই শাড়ি তো আলমারিতে ছিল৷ শাড়িটা অনেক সুন্দর তাই পড়ে নিলাম।

— এই শাড়ি তুমি এখনই খুলে ফেলবে৷ আমি চাইনা তুমি এই শাড়ি পড়৷ আমি তো সব পুড়িয়ে দিয়েছি তাহলে এটা অবশিষ্ট রইল কিভাবে?

— স্যার মাথা ঠান্ডা করেন৷ আপনি এই মাত্র অফিস থেকে আসলেন। আপনার মাথা অনেক গরম৷ আমার শাড়িটা অনেক পছন্দ হয়েছে, দেখেন কত সুন্দর কারুকাজ। তাই আমি পড়ে নিয়েছি৷ এতে সিনক্রিয়েট করার কি দরকার?

— “না তুমি এই শাড়ি পড়বে না৷ আমি কাল তোমাকে এই রকম হাজারটা শাড়ি কিনে দিব৷ এই মুহুর্তে এই শাড়ি খুলে ফেল।” চোখ রাঙিয়ে চিৎকার করে বলে উঠে।

নিয়তি নির্বণের চিৎকারে ভয় পেয়ে যায়৷ নিয়তি ওয়াসরুম থেকে শাড়ি পাল্টিয়ে আসে৷ নির্বণের হাতে কিছুটা রেগেই শাড়িটা ছুঁড়ে মারে। নির্বণ শাড়িটা নিয়ে আগুন লাগিয়ে দেয়৷

— নিয়তি অসহায়ের মতো বলে উঠে, ” এত সুন্দর শাড়িটা এভাবে নষ্ট না করলেও পারতেন৷”

নির্বণ রাগে গজগজ করতে করতে ওয়াসরুমে চলে যায়। নির্বণ অফিস থেকে ফিরেছে সেজন্য অরিন খাবার নিয়ে রুমে আসছিল৷ কিন্তু নির্বণ আর নিয়তি ঝগড়া দেখে থেমে যায়। অরিন সব জেনে যায়। নির্বণ আর নিয়তি নাটক করছে।

নিয়তি দগ্ধ হয়ে যাওয়া শাড়ির দিকে একবার তাকিয়ে মনে মনে বলে উঠে, ” নিয়তি তুই এত বড় ভুল কিভাবে করতে পারলি? তুই তো ওই মানুষটাকে ভালোবেসে ফেলেছিস৷ কিন্তু তুই তাকে কষ্ট দিলি।”

— অরিন দরজায় নক করে, ” ছোট ম্যাম, ভিতরে আসব।”

অরিনের কন্ঠ শুনে নিয়তি চোখের জল মুছে বলে উঠে, ” আসো। ”

— অরিন না জানার ভান করে, ” আল্লাহ গো৷ আপনাদের ঘরে আগুন কেন? কি হয়েছে? ”

— কিছুনা৷ আসলে অফিস থেকে কিছু রিজেক্ট করা কাগজ পুড়িয়ে দিলাম।

— অরিন শয়তানি হাসি দিয়ে, ” অ আচ্ছা। আমার প্রচুর ঘুম পাচ্ছে । আমি কাল সকালে প্লেটগুলো নিয়ে যাব৷”

— তুমি ঘুমিয়ে নাও। আমি রেখে আসব।

________

— নির্বণের মা অবাক হয়ে, ” অরিন তুই এভাবে চুরের মতো আমার রুমে ঢুকছিস কেন!”

অরিন রুমের দরজা বন্ধ করে খুব ধীরে৷ যেন কোন শব্দ না হয়৷ ধীর পায়ে নির্বণের মায়ের পাশে এসে বসে।

— নির্বণের মায়ের হাত ধরে, “ম্যাম। আপনি আপনাদের নুন খেয়েছি৷ তাই আপনাদের সাথে বেইমানি করতে পারব না৷”

— কিছুটা হন্তদন্ত হয়ে, আরে তুই কি করলি আবার! তুই তো খুব ভালো।”

— ম্যাম আমি কিছু করিনি৷ যা করেছে ছোট ম্যাম নিয়তি৷

— অবাক চোখে তাকিয়ে বলে উঠে, ” তুই কি বলছিস! কার সম্পর্কে কথা বলছিস জানিস?”

— আমি ভুল কিছু বলিনি৷ আপনি কি জানেন, আমাদের নির্বণ স্যার নিয়তিকে বিয়ে করেনি?

— হোয়াট! বিয়ে করেনি অথচও তারা এক রুমে রাত কাটাচ্ছে। আমি বিশ্বাস করিনা৷ তাদের দেখে মনে হয় একে অপরকে কত ভালোবাসে।

— ভালোবাসে না ছাই। সব লোভ দেখানো ভালোবাসা। আমি জানতাম আপনি আমার কথা বিশ্বাস করবেন না৷

— যদি তুই কোন প্রমাণ দেখাতে পারিস, তাহলে আমি তোর কথা বিশ্বাস করব৷

— প্রমাণ আমার নিজের কান৷ আমি নিজে তাদের রুমের বাহির থেকে তাদের কথা শুনেছি৷ আমি সত্যি বলছি তারা অবিবাহিত৷ আমি আপনাকে মিথ্যা বলতে যাব কেন? তাছাড়া ছোট ম্যাম আমাদের কত ভালোবাসে।

— তুই এখন ঘুমাতে যায়৷ তাদের শাস্তি কাল সকালে দিব৷ দেখ আমি তাদের এমন শাস্তি দিব যে, তারা কল্পনাও করতে পারবে না৷”

চলবে…..

#শুরুটা_অন্যরকম
#পর্ব_১৪
#অধির_রায়

অপরাধীর মতো দাঁড়িয়ে আছে নিয়তি আর নির্বণ৷ একে অপরকে দিকে আড় চোখাচোখি করছি৷ কেউ কিছু বুঝে উঠতে পারছে না, কেন তাদের দু’জনকে এক সাথে ডাকা হয়েছে? নির্বণের মাকে দেখে বুঝা যাচ্ছে খুব রেগে আছে৷

— তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে নির্বণের মা বলে উঠেন, ” নিয়তি দরজাটা ভালো করে লাগিয়ে দাও৷”

— নিয়তি ভয়ে ভয়ে কোমল স্বরে, ” আচ্ছা মা৷” কিন্তু দরজা লাগানোর কোন দরকার আছে৷

— দরজা লাগানোর দরকার আছে৷ আমি চাই আমাদের কথা ঘরের বাহিরে না যাক।

নিয়তি নির্বণের মায়ের এমন এমন অগ্নিমূর্তি ধারণ করাতে নিয়তি খুব ভয় পেয়ে যায়৷ নিয়তি নির্বণের মায়ের দিকে একবার ছোট করে তাকিয়ে ধীর পায়ে দরজার কাছে আসে। কাঁপা কাঁপা হাতে দরজা লাগিয়ে দেয়৷

— গম্ভীর কণ্ঠে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, ” তোমরা আমার কাছ থেকে কি কি লুকিয়েছ? আজ আমি তোমাদের কাছ থেকে সত্য ঘটনা জানতে চাই৷”

— নিয়তি একবার নির্বণের দিকে তাকিয়ে, ” মা আমরা আপনার কাছ থেকে কি লুকাবো? সত্যি বলছি আমরা কিছু লুকিয়ে রাখিনি৷”

— হুংকার দিয়ে “জাস্ট সাট আপ!” তোমরা কি ভেবেছো, আমি কিছু জানি না? আমার চোখ ফাঁকি দিতে পারবে তোমরা৷”

নিয়তি নির্বণের মায়ের হুংকার শুনে শুকনো ঢুক গিলে। মুখটা একদম ছোট হয়ে যায়৷ নির্বণের হাসি পায় নিয়তির এমন অবস্থা দেখে। কিন্তু মায়ের সামনে হাসতে পারছে না৷

— মির্বণ তার মাকে শান্ত করার জন্য, ” মা এমন কি হয়েছে? যার জন্য তুমি নিয়তিকে বকাবকি করছো।” মা নিয়তি খুব ভালো মেয়ে৷ সে কখনো অন্যায় কাজ করে না৷

— নিয়তি কেমন তা জানা আছে৷ আর আমার ছেলে কেমন তাও আমার জানা আছে৷ তোমাদের স্বভাব এত নিচে নেমে যাবে আমি কখনও ভাবতেই পারি নি৷

— মা আমরা কি করেছি? আমার জানামতে আমরা কোন অন্যায় কাজ করিনি৷
নিয়তির দিকে তাকিয়ে, ” বল নিয়তি, আমরা কি কোন অন্যায় কাজ করেছি?

— ব্যাস আমার সামনে নাটক করতে হবে না৷ তোমরা তাহলে স্বীকার করলে না তোমরা অন্যায় করেছো? আমি ভেবেছিলাম তোমরা সব কিছু নিজের মুখে স্বীকার করবে৷ কিন্তু না। সেজন্য তোমাদের শাস্তি পেতে হবেই৷

— নিয়তি নির্বণের মায়ের হাত ধরে, ” প্লিজ মা আপনি শান্ত হন৷ আপনার কোথাও বুঝতে ভুল হচ্ছে। আমরা কোন অন্যায় কাজ করিনি৷ আর আপনার ছেলেও খুব ভালো কারো সাথে কখনো অন্যায় হতে দেয় না৷

— হাত ঝাঁকি দিয়ে সরিয়ে, ” আমার কাছে তোমরা একে অপরের সাফাই শুনালে আমি গলে যাব৷ তোমাদের ধারণা ভুল৷”
তোমরা যা অন্যায় করেছ তার কোন ক্ষমা হয় না৷ সমাজে তোমাদের নিয়ে ছি ছি করবে৷ আমরা মানুষ, আমাদের সমাজ নিয়ে চলতে হয়৷

— মা আপনি কি বুঝাতে চেয়েছেন? প্লিজ মা! আমরা আপনার ধাঁধা বুঝতে পারছি না৷। একটু খোলে বলেন? (নিয়তি)

— তোমরা আগে বল তোমরা কি বিবাহিত?

বিবাহিত কথাটি শুনতেই নিয়তি নির্বণ দুই জনের মাথার উপর ছাঁদ ভেঙে পড়ে। তারা বুঝতে পারছে না কি বলবে? তারা তো কাউকে এসব কিছু বলেনি৷

— নির্বণ হাসিমুখে বলে উঠে, ” মা আমরা তো বিবাহিত। নিয়তিকে দেখে কি মনে হয়, নিয়তি বিবাহিত নয়?

— জাস্ট সাট আপ নির্বণ৷ আমার কাছে আবারও মিথ্যা কথা বলছো৷ আমি জানি নিয়তির মাথায় সিঁদুর নেই৷ সেটা রং। আমাকে কি তোমার বোকা মনে হয়৷
নিয়তি আমি কি মিথ্যা বলছি৷

— নিয়তি কাচুমাচু করে কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে উঠে, ” মা আসলে আমরা দুই জনেই এমন পরিস্থিতির স্বীকার।”

— বাহ তোমরা পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে এমন কাজ করেছ। বিবাহ না করেই এক ঘরে রাত কাটাও৷ তোমাদের কোন তুলনা হয় না৷ সমাজে তোমার কতটা সম্মান হানী হবে সেটা তুমি জানো।

— মা আমার কাছে অন্য কোন উপায় ছিল না৷ আমি বাধ্য হয়ে স্যারের সাথে এমন কাজে জড়িত হয়েছি৷

— ছেড়ে দিলাম আমি আমার ছেলের কথা৷ তুমি তে মেয়ে তোমাকে কে মেনে নিবে৷ তুমি কিভাবে দাঁড়াবে সমাজে। যখন লোকজন বলবে তুমি একজন পতিতা৷

— ক্ষেপে বলে উঠে, ” মা তুমি এই কথা কিভাবে বলতে পারলে নিয়তিকে। তুমি তো নিয়তি খুব ভালোবাসো। তাহলে তুমি কিভাবে তাকে পতিতা উপাধি দিলে৷

— আমি যুক্তি দিয়েই কথা বলছি৷ তুমি এখানে আমার মুখ বন্ধ করতে পারবে। কিন্তু সমাজের মুখ কিভাবে বন্ধ করবে? তারা কি মেনে নিবে নিয়তিকে৷ তারা তো ভাববে নিয়তি পতিতা না হলে এমন কাজ করতে পারত না৷

নিয়তি নির্বণের মায়ের কথা শুনে দূরে দাঁড়িয়ে থেকে কান্না করে যাচ্ছে। নিয়তি তো সত্যিই অনেক বড় ভুল করে ফেলেছে৷ নিয়তিকে কি সমাজ মেনে নিবে না৷ কিভাবে সে সমাজে মাথা দেখাবে?

— মা বিশ্বাস কর, আমি নিয়তিকে একটু টার্চ করিনি৷ নিয়তি এখনো ততটাই পবিত্র যতটা পবিত্র মা দূর্গা।

— নিয়তি এখানে আসো৷ নির্বণ আমি চাই তোমরা যেহেতু ভুল করে ফেলেছো তার একটা উপায় বের করতে হবে৷ এসব কথা যেন বাহিরে না পৌঁছায়।

— নির্বণ তার মায়ের হাত ধরে , ” মা আমরা কথা দিচ্ছি কাউকে এসব কথা বলবো না৷”

— হাত সরিয়ে নিয়ে, ” তুমি মা ডাকার অধিকার হারিয়ে ফেলেছ। এত বড় অন্যায় করেছ তার কোন অনুশোচনা হচ্ছে না তোমার৷ তুমি তাকে বাধ্য করেছ চুক্তি নামায় সাইন করতে। ”

চুক্তি নামার কথা শুনে নির্বণ মাথা নিচু করে ফেলে৷ নির্বণ তো তার মায়ের মুখের হাসির জন্য এমন অন্যায় কাজ করেছে।

— মা আমি চাইনি বিবাহ বন্ধনে নিজেকে জড়াতে। আমি তোমার মুখের হাসি ফিরিয়ে আনার জন্য এমন অন্যায় কাজ করেছি৷

— আমার মুখের হাসি৷ আমার মুখের হাসি দিয়ে কি হবে? মারা যাওয়া ভালো ছিল তোমাদের অন্যায় দেখার আগে৷ তাহলে তো মানুষের চোখে ছোট হতে হত না৷

— নির্বণ তার মায়ের মুখে হাত দিয়ে, ” প্লিজ মা বাজে কথা বলবে না৷ তুমিই আমার পৃথিবী৷ তোমার হাসির জন্য এমন আরও হাজারটা অন্যায় কাজ করতে রাজি৷

নির্বণের ভালোবাসা দেখে নির্বণের মা মনে মনে খুশি হলেও বাস্তবে খুশি নয়৷ নির্বণের গালে ঠাস করে কষিয়ে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেন।

— লজ্জা করে না মেয়েদের নিয়ে খেলা করতে৷ তাদের কি তোমার কাছে খেলার পুতুল মনে হয়৷ তোমার দিকে তো আঙ্গুল তুলবে না৷ তুলবে মেয়েটার দিকে। কারণ নিয়তি একজন মেয়ে। তোমার মতো ছেলে নয়৷

নির্বণ গালে হাত দিয়ে মার দিকে তাকিয়ে চোখের জল ফেলে যাচ্ছে। আজ চোখ থেকে নির্বণ নিয়তির জলের ধারা বয়ে যাচ্ছে।

— তোমরা যেহেতু অন্যায় করেছ৷ তোমাদের দু’জনকেই শাস্তি পেতে হবে।

নির্বণের মা বালিশের নিচ থেকে একটা সিঁদুর কোটা আর মঙ্গল সূত্র নিয়ে বলে উঠে, ” নিয়তি গরিব কিনা ধনী আমার কোন জানার বিষয় নেই৷ আমার চোখে নিয়তি একজন নারী৷ আমি কিছুতেই তার সাথে অন্যায় হতে দিতে পারি না৷ ”
নির্বণ তোমাকে একটা শর্তেই ক্ষমা করতে পারি। যদি তুমি আজ আমার সামনে নিয়তির সিঁথিতে সিঁদুর দিয়ে ভরিয়ে দাও৷

— নিয়তি বলে উঠে, ” না মা এমন কাজ করবেন না৷ আপনি যেহেতু জেনে গেছেন সেহেতু আর এমন কাজ করার দরকার নেই৷ আমি মিডিল ক্লাসের মেয়ে৷ আমি স্যারের জন্য উপযুক্ত নয়৷”

— যখন নাটক করছিলে তখন মনে ছিল না৷ আমি তোমাদের কোন কথা শুনতে চাই না। আমার কথা শেষ কথা৷
“নির্বণ কি হলো সিঁদুর পড়িয়ে দাও? ” হংকং করে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে।

নির্বণ ধীর পায়ে সিঁদুর নিয়ে নিয়তির দিকে আসে৷ কাঁপা কাঁপা হাতে সিঁদুর নিয়ে নিয়তির সিঁথির কাছে হাত নিতেই নিয়তি হাত ধরে ফেলে৷ কিন্তু হাত ধরতে সামান্য দেরি হয়ে যায়৷ হাত ধরার সময়ই নির্বণ নিয়তির সিঁথিতে সিঁদুর পড়িয়ে দেয়৷

পাতা উল্টে দেখো একটা গল্প লেখা।
একটু জানা কাহিনি কিছু অজানা।
একটা গোধুলি বেলা কনে দেখা আলোতে।
একটু উলো সানাই এ সাত পাকে বাঁধে যে। (২)
“””সাত পাকে বাঁধা “””
______________

— “মার কথা বিবেচনা করে আমি তোমাকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছি৷ তোমাকে বিয়ে করেছি বলেই, তোমাকে স্ত্রীর মর্যাদা দিব এটা কল্পনাও করবে না৷” নরম স্বরে নির্বণ নিয়তিকে বলে উঠে।

— কিন্তু স্যার আমি তো…

— কোন কিন্তু নয়৷ আমি তোমার ভরণ পোষণের সব দায়িত্ব নিব৷ আমি আমার কর্তব্য থেকে কখন পিছপা হব না৷ নির্বণ চৌধুরী কখনও কর্তব্য থেকে পিছপা হয় না৷

— স্যার আমি সেটা বলতে চাইনি৷ আমি বলতে চাচ্ছি, মা আমাদের কথা কিভাবে জানতে পারলেন?

— নিয়তির হাত চেপে ধরে, ” আর কত নাটক করবে নিয়তি ? তুমি এত নাটক করতে পার আমার জানা ছিল না। তুমি ছাড়া এই রচনা রটানো কারো সম্ভব নয়৷ ”

— স্যার আমি কেন মাকে এসব বলতে যাব? আমার মাথা খারাপ হয়েছে কি? আমি মাকে এসব বলে মাকে ডিপ্রেশনে ফেলব।

— তুমি বলতে চাইছো তুমি কিছু বলনি৷ তাহলে মা কিভাবে জানতে পারল? মা তো মনোবিজ্ঞানী নয় যে আমাদের মনের কথা জেনে যাবে৷ আর হ্যাঁ মনোবিজ্ঞানীরাও মনের কথা জানে না৷ তুমি সব সময় মার কাছে থাকো৷ তুমি হুট করেই মাকে এসব কথা বলে দিয়েছো।

— “স্যার প্লিজ আমাকে ছেড়ে দেন৷ লাগছে আমার৷” নিয়তি টলমল চোখে বলে উঠে।

— তোমার জন্য আজ আমার দিনটাই খারাপ হয়ে গেল। যতসব আজাইরা পাবলিক।

নির্বণ নিয়তিকে ধাক্কা দিয়ে চলে যায়৷ নিয়তি নিজেকে সামলাতে না পেয়ে আলমারির সাথে ধাক্কা খায়৷ মাথায় প্রচুর আঘাত লাগায় নিয়তি জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।

চলবে…

সরি কাউকে বিয়েতে ইনভাইট করতে পারিনি৷ তবে কোন একদিন রিসিপশনে সবাইকে ইনভাইট করব৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here